অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা

কয়েকমাস আগের থেকেই তার প্রস্তুতি চলছিল বলা যায়। তবে ঠিক ঠিক ভাবে বলতে গেলে ২০২০ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু হল এক বিশ্বযুদ্ধ। হ্যাঁ, একটা বিশ্বযুদ্ধ তো বটেই, যেখানে গোটা পৃথিবী একদিকে, আর, এক অভূতপূর্ব শক্তি আরেকদিকে, যাকে কেউ চোখে দেখতে পেল না। সেই অদৃশ্য শত্রুর নাম করোনা ভাইরাস। দুটি বিশ্বযুদ্ধ আমরা পার করে এসেছি, যেখানে চিহ্নিত করা গিয়েছিল দুই পক্ষকে, কিন্তু এবার যে-যুদ্ধটা শুরু হল এবং এখনও হয়ে চলেছে, যেখানে সেই অদেখা শত্রুর উপস্থিতি টের পাওয়া গেল দলে দলে মানুষের অসুস্থতা এবং মৃত্যু-মিছিলের মধ্য দিয়ে। মানবজাতির ইতিহাসে এরকম ভয়ঙ্কর ঘটনা আর ঘটেনি, বোধহয় নির্দ্বিধায় কথাটা বলা যেতে পারে। এর ফলে দেশ-বিদেশ নির্বিশেষে ভয়ঙ্কর রকম ক্ষতিগ্রস্ত হল জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মজীবন, এককথায় বলতে গেলে মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি ক্ষেত্র। রাতারাতি যানবাহন স্তব্ধ হয়ে যাওয়াতে প্রকৃতিতে এল এক বিরাট পরিবর্তন। যে দূষণে ভয়াবহ রকম  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল গোটা পৃথিবী, তা’ দূর হল অনেকাংশে। এমন কী, পালটে গেল এবং ক্রমশ পালটে চলেছে মানুষের প্রতি মানুষের আচার-ব্যবহার, তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক, প্রাত্যহিক জীবনযাপন পর্যন্ত। “নিউ নর্ম্যাল” শব্দবন্ধটি আজ আমাদের মুখে মুখে ফিরছে, যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা প্রতিনিয়ত সচেষ্ট হচ্ছি, আগামী দিনগুলো কীভাবে সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন নিয়ে কাটাবো, তার যথাযথ উপায় খুঁজে বার করার ক্ষেত্রে।

আমাদের আলোচ্য বিষয় হল অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা। যে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আমরা আজন্মকাল পরিচিত, অর্থাৎ স্কুল-কলেজে যাওয়া,  নিরাপত্তার কারণে করোনার ভয়ঙ্কর দাপটে সেসব আগের মত চালু রাখা আর সম্ভব হল না। ২০২০ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কলকাতার ছোট-বড় সমস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল রাতারাতি। কিছুদিন পর লকডাউন। আমাদের জানার অভিধানে নতুন এই শব্দটি তখন শিখলাম। সমস্তকিছু বন্ধ। মানুষ হল গৃহবন্দি। শুধুমাত্র খেয়ে-পরে কোনোমতে বেঁচে থাকাটাই হল মানুষের একমাত্র অভীষ্ট লক্ষ্য। সেই আদিম যুগে ফিরে যাওয়া! ঠিক তা নয়। তফাত তো কিছু আছেই। তবে  নতুন করে আবার শুরু করতে হবে সবকিছু! “নিউ নর্ম্যাল” অবস্থার / পরিস্থিতির  সূচনা বোধহয় একেই বলে!

অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি                     

করোনার তান্ডবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। চলতি শিক্ষা-ব্যবস্থার ওপরে সেই ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলকভাবে সম্ভবত ভয়ঙ্কর বেশি। লকডাউনের জেরে রাতারাতি যখন সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে গেল, সবাই কার্যত গৃহবন্দি হয়ে গেল নিমেষে, তখন সকলের মত ছাত্রসমাজ, শিক্ষক সমাজ, ছাত্রদের বাবা-মায়েরা বিস্মিত, নির্বাক – কী হবে তাঁদের ছেলেমেয়েদের, তাঁদের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের! কিছুদিন পর কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষকরা তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীদের ইমেইল/হোয়াটস্যাপ করে প্রয়োজনীয় পড়াশুনার জিনিসপত্র পাঠাতে লাগলেন। প্রয়োজনে কনফারেন্স কল করে শিক্ষাব্যবস্থা যতটা সম্ভব চালু রাখার ব্যবস্থা হল। তখনও গুগল মিট কিংবা জুম ব্যবস্থা চালু হয়নি। ধীরে ধীরে সেসব চালু হয়ে গেল। করোনা বা কোভিড-১৯ সবাইকে ঘরবন্দি করে রেখেছিল ঠিকই, কিন্তু গুগল মিট কিংবা জুম পদ্ধতিতে ছাত্র-শিক্ষক ভারচুয়ালি কাছাকাছি আসতে সক্ষম হল। শুরু হয়ে গেল ভিডিও ব্যবস্থার মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষাদান।         

এবার অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে। এটি একটি ডিজিটাল শিক্ষাপদ্ধতি যার জন্য দরকার  কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন (অবশ্যই স্মার্ট ফোন) কিংবা ওই জাতীয় কোন ডিভাইস। এর সঙ্গে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ-ব্যবস্থা, যা হতে পারে ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড কিংবা অন্য কোনো নেট কানেকশন। সেইসঙ্গে গুগল মিট কিংবা জুম ব্যবস্থা, যেসব সুবিধা মোবাইল কিংবা কমপিউটার/ল্যাপটপ, সবেতেই মেলে।  এই শিক্ষামাধ্যমটির জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট কিছু আচরণ বা শিষ্টাচার বিধি। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে আবদ্ধ না থেকে বাইরে যে কোনো সুবিধাজনক জায়গা থেকে শিক্ষাদান করতে পারেন এবং ছাত্রছাত্রীরা তাদের  নিজের নিজের বাড়ি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে ও পারস্পরিক মতবিনিময় করতে পারে। এই পদ্ধতিতে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্ত থেকেই শিক্ষার আদানপ্রদান সম্ভব।  

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধা —

১) তথ্য প্রযুক্তির সার্থক ব্যবহার

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা একটি উন্নত শিক্ষাপদ্ধতি যেখানে সর্বক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার আমাদের দেশে সেরকমভাবে ছিল না। এখন ধীরে ধীরে তার ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বলা যেতে পারে, এটা করোনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, যেমন কোনো দরকারি বই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনা যেতে পারে কিংবা সংশ্লিষ্ট পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করা যেতে পারে।

২) সুযোগমতন শেখা (শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ)

এটা একটা মস্ত বড় সুবিধা। শিক্ষক তাঁর সুবিধামতন সময়ে ইউটিউব কিংবা অন্যন্য যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর লেকচার নোটস রেখে দিতে পারেন এবং শিক্ষার্থী তার সুবিধামতন সময়ে সেসব আহরণ করতে পারে। অফলাইন বা ট্র্যাডিশনাল শিক্ষাব্যবস্থায় সেটা মোটেই সম্ভব নয়, যেখানে শিক্ষার্থী ক্লাস চলাকালীন অনুপস্থিত থাকলে সে ক্লাস-লেকচার মিস করবে। এই পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সুবিধামতন ক্লাস লেকচার তাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে সেভ করে রাখতে পারে, যেটা অফলাইন বা ট্র্যাডিশনাল শিক্ষাব্যবস্থায় কোনোমতেই সম্ভব নয়।  

৩) সময় বাঁচে

যেহেতু শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে কোনো বিশেষ জায়গায় বিশেষ সময়ে সরাসরি হাজির হতে হচ্ছে না, বাড়িতে বসেই কাজ চালিয়ে নিতে পারে, সেক্ষেত্রে সময় অনেকটাই বেঁচে যায়। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকটা সময় হাতে পেয়ে যায়, যার ফলে তারা অন্যান্য আরও পড়াশুনার কাজ করতে পারে তাদের সুবিধামতন।

৪) সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা

এই পদ্ধতিতে ছাত্ররা খুব সহজেই শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং সেটা সম্ভব বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে উপস্থিত থেকেই। আর শুধুমাত্র ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মাধ্যমেই নয়, ছাত্ররাও পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করে তাদের পড়াশুনা সংক্রান্ত অনেক কঠিন বিষয়ের সমাধান তারা নিজেরাই করে ফেলতে পারে খুব সহজেই।

৫) কম খরচে শিক্ষাদান

যদিও এই পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু রাখার কাজে অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য, তবুও অন্যান্য খাতে অর্থের অপচয় অনেকটাই ঠেকানো যায়। কারণ, অল্প জনবল এবং কম প্রাতিষ্ঠানিক খরচে এই ব্যবস্থা সুচারুভাবে চালু রাখা সম্ভব। তাছাড়া, সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সামগ্রী কেনাকাটি করতে অনিবার্যভাবে যে খরচ হয়, সেটারও প্রয়োজন এই পদ্ধতিতে আর থাকবে না।

৬)  গুণগত মানের দিক থেকে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থার চাইতে অনেক বেশি কার্যকরী

ট্র্যাডিশনাল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনলাইন শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ইমেজ লাইব্রেরি এবং গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকরা ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করে লাইভ ক্লাসও করেন। যদি ফেসবুকের মাধ্যমে ক্লাস হয় তবে সেটা হারিয়ে যায় না, ফেসবুক পেজে জমা থাকে এবং অফলাইন ক্লাসের মত এখানেও প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে, যেখানে পরবর্তী কালে দরকার মতন শিক্ষক সেইসব প্রশ্নের (কমেন্ট হিসেবে পেজে দেওয়া হলে) উত্তর দিতে পারেন তাঁর সুবিধামত। তাছাড়া অনলাইন ব্যবস্থায় নির্ধারিত লেকচারের ভিডিও আপলোড করেও খুব দ্রুত এবং সহজে শিক্ষাদান সম্ভব।

৭) কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা 

কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে ট্র্যাডিশনাল শিক্ষাব্যবস্থার চাইতে তুলনামূলকভাবে অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেক দৃঢ় হয়, যা বিশেষভাবে দরকার কর্মজীবনে সফলতা অর্জনের জন্য।

৮)  শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ সম্ভব

এই ব্যবস্থায় কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যার জন্য উন্নত মানের ইমেজ লাইব্রেরি এবং গ্রাফিক্স ব্যবহার করা সম্ভব। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয় এবং শিক্ষার্থীদের কারুর কারুর মধ্যে সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটা কিছুমাত্র অসম্ভব নয়।       

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার অসুবিধা —

১) এই শিক্ষাব্যবস্থার একটা বড় অসুবিধা হল, নেটওয়ার্ক সমস্যা। ঠিক ঠিক শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ তখনই সম্ভব, যদি ইন্টারনেট যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন থাকে। বিভিন্ন কারণে নেটওয়ার্ক বিভ্রাট ঘটতে পারে।

২) এই ব্যবস্থায় শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না থাকার কারণে যেসব ছাত্রছাত্রী শিক্ষাগ্রহণ করতে একটু ধীরগতির হয়, তারা খুব মুশকিলে পড়ে। ফলে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩) শিক্ষার্থীদের একটি অংশের ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। স্প্লিট স্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীদের এই অংশ ক্লাসে থাকছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে অন্য অ্যাপ ব্যবহার করে তারা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে কিংবা গেমস খেলে।

৪) এই পদ্ধতিতে একটানা শিক্ষাদানের ফলে অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে বেশ একাগ্রতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের চোখের সমস্যা হতে পারে।          

৫) একটানা ঘরবন্দি থেকে শিক্ষাগ্রহণ এবং বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কম হওয়া কিংবা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা জন্মানোর একটা সম্ভাবনা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর ফল খুব মারাত্নক হতে পারে।

৬) ছাত্র-বয়সে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা চালিয়ে যাওয়া বিশেষ জরুরি, স্বাস্থ্যকরও বটে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে খেলাধূলা ব্যাপারটি বিশেষভাবে বিঘ্নিত হয়।       

৭) জীবনে নিয়মানুবর্তিতা, অর্থাৎ সময় ধরে সারাদিনের কাজ করে যাওয়াটা বিশেষ দরকারি। সরাসরি স্কুল বা কলেজে হাজিরা দেওয়ার ব্যাপারটা না থাকলে, এই নিয়মানুবর্তিতায় ঘাটতি থাকে, ফলে বিশৃঙ্খলা আসে জীবনে।

৮) এই শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কম্পিউটার / ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব পারদর্শী হয়ে যায়। ফলে খুব সহজেই তারা সস্তা বিনোদন জাতীয় বিষয়ে আসক্ত হয়ে পড়ে, যেটা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষভাবে ক্ষতিকার। সন্তানদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে অভিভাবকরা তখন চিন্তাগ্রস্ত এবং দিশাহারা হয়ে পড়েন।    

৯) শহরাঞ্চলে এই ব্যবস্থা যদিও কিছুটা কার্যকর, আর্থিক দুর্বলতার কারণে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশ এই অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্কুল স্তরেই পড়াশুনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অনেকেই।   

কেস স্টাডি

শুধুমাত্র তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সেই একই কথাই খাটে। বাস্তব জগতে সিনারিওটা ঠিক ঠিক কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, তার জন্য আমার বন্ধুবান্ধবের সূত্রে কিছু রিয়েল-লাইফ কেস স্টাডি করেছিলাম। সেটা লিপিবদ্ধ করছি।

ক) অনলের দুই নাতনি। একজনের বয়স এগারো, নাম পিয়ালী, ক্লাস সিক্সে পড়ে। অন্যজনের বয়স পাঁচ, নাম দিয়া, সবেমাত্র আপার কেজি। দুজনেই অনলাইনে ক্লাস করছে। পিয়ালীকে কিচ্ছু বলতে হয় না। ও ওর প্রতিদিনের ক্লাস-রুটিনটা বুঝে নিয়েছে, অর্থাৎ কখন কোন ক্লাস, সেসব ওর মুখস্থ। নির্ধারিত সময়ে ও নিজের পড়ার ঘরে ঢুকে যায়। কম্পিউটার নিজেই অন করে, তারপর লগ-ইন করে। শিক্ষকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা তাঁদের লেকচার বোঝা, এসব কোনও কিছুতেই ওর কিছুমাত্র অসুবিধা হয় না। এক ঘণ্টার ক্লাস। তারপর পনেরো মিনিটের বিরতি। এই সময়ে হয়ত ও মা কিংবা বাবার সঙ্গে কিছু কথা বলে, একটু হালকা খাওয়াদাওয়া করে, তারপর যথারীতি পরের ক্লাসের জন্য বসে যায় কম্পিউটারে। “কেমন ক্লাস হল”, জিজ্ঞেস করলেই বলে, “ভালোই।” ‘সব বুঝতে পেরেছিস’ বললে হেসে বলে, “হ্যাঁ।” এইভাবে সে ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠে গেল। পরীক্ষার সময়ে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে, যাতে বাইরের আওয়াজ একেবারেই কানে না আসে। প্রশ্নপত্র ভালো করে পড়ে, বুঝে, সঠিক সময়ে তার উত্তর দিয়ে আপলোড করে পাঠানোও ও একাই করে ফেলছে, কারুর সাহায্যের দরকার হয় না। বেশ ভালো ফল করেই সে সিক্সে উঠে গেল। এবার ক্লাস সেভেন হবে।

দিয়ার ব্যাপারটা একটু আলাদা। লগ-ইন ও নিজে করে উঠতে পারে না। বাড়ির কেউ করে দেয়। ব্যস, ওইটুকুই। ক্লাসের বাকিটা সে নিজেই সামলাতে পারে। তখন কাউকে দরকার হয় না। কোনো কিছু আপলোড করতে হলে মা কিংবা বাবার ডাক পড়ে। অন্য কোনো সময়ে ওর কাউকে দরকার হয় না।

খ) এবার শুভব্রত এবং দীপের কথা বলি। শুভব্রত বেশ বড়। এবার ক্লাস টেন থেকে ইলেভেনে উঠবে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফেলল, কারুর সাহায্য ছাড়াই। ভালোই করেছে। লগ-ইন করা কিংবা কোনো কিছু আপলোড করাতে ওর কোনো সমস্যা নেই।         

দীপের বয়স আট। খুব ছটফটে, একটু যেন ফাঁকিবাজ। ক্লাস চলাকালীন মাঝেমাঝেই পড়ার ঘর থেকে সে বেরিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়, হয়ত কিছু একটার অছিলায়। তারপর বাড়ির কারুর বকুনিতে আবার ফিরে গিয়ে কম্পিউটারে বসে। এইভাবেই চলে তার ক্লাস। পরীক্ষার সময় বেশ গণ্ডগোল। থেকে থেকেই এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে সে মা’র কাছে চলে যায় চুপিচুপি। মা হয়তো কিছু বলেন, কিংবা কিছু বলেন না বা জানেন না, তখন বলেন, “নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে করো।” একবার তো কুড়ি নম্বরের একটা পরীক্ষায়, দশ নম্বরের উত্তর করেই সে পরীক্ষা শেষ করল। আপলোড করার পর আবিষ্কার হল, দীপ দশ নম্বর মিস করে গেছে।

গ) এইবার যার কথা বলব সে আমার একজন ছোট্ট বন্ধু কয়েক বছর ধরেই। ওর সঙ্গে আমার নিত্য যোগাযোগ হয়। নাম রুমু। সবেমাত্র সাত পূর্ণ করে আট-এ পা দিয়েছে। কলকাতার একটি প্রতিষ্ঠিত নামী স্কুলে রুমু এখন ক্লাস টু’তে পড়ে। অনলাইন ক্লাসে ও এখন দারুণ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ক্লাস করা, পরীক্ষা দেওয়া কিংবা কোনো কিছু আপলোড করার ব্যাপারে রুমু এখন মাস্টার হয়ে গেছে। যখনই ক্লাস করে, দরজা বন্ধ করে ক্লাস করে। পরীক্ষার সময়ে তো কথাই নেই। শুধু ক্লাসের পড়াশুনাই নয়, রুমু কয়েকমাস হল প্রাইভেটলি ড্রয়িং-এর ক্লাস করছে অনলাইনের মাধ্যমে, সপ্তাহে একদিন করে। ওর আঁকার শিক্ষক একজন ম্যাডাম, পাঞ্জাবে থাকেন।

অনলাইন অফলাইন পড়াশুনার প্রসঙ্গে রুমুর সঙ্গে এক সন্ধেবেলায় সরাসরি কথা বললাম কিছুদিন আগে। সবেমাত্র কয়েকদিন হল, অনলাইনের পাশাপাশি ওর অফলাইন ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। ও ভীষণ ব্যস্ত মেয়ে এখন। পড়াশুনা এবং ছবি আঁকার পাশাপাশি সে গানও চালিয়ে যাচ্ছে সপ্তাহে একদিন করে। তবে সেটা অবশ্য অফলাইন। রাতের দিকে ওর মা কিংবা বাবা তাঁর মেয়ের খোঁজখবর নেন, সে সারাদিনে কী করল, সেই ব্যাপারে। রুমুর কাছ থেকে একদিন জানতে চাইলাম, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ওর অভিজ্ঞতার কথা। রুমুর সঙ্গে আমার সেই কথোপকথন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রায় হুবহু এখানে তুলে ধরছি —

“তোর তো এখন অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে অফলাইন ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে?”

“হ্যাঁ।”

“কোনটা ভালো লাগছে, অনলাইন না অফলাইন?”

“দুটোই।”

“কীভাবে চলছে দুটোই একসঙ্গে?”

“সপ্তাহে দুদিন অফলাইন ক্লাস, তিন দিন অনলাইন ক্লাস।”

“কোভিডের কড়াকড়ির মধ্যে, অনলাইনের সঙ্গে অফলাইন কীভাবে চলছে একটু বলবি?”

“দ্যাখো, আমাদের ক্লাসে আমরা সবসমেত সাতান্ন জন একসঙ্গে ক্লাস করতাম কোভিডের আগে।”

“বেশ।”

“কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব নয়। তাই দুটো গ্রুপ করা হয়েছে। গ্রুপ ওয়ান, গ্রুপ টু। ১ থেকে ৩১ গ্রুপ ওয়ান, ৩২ থেকে ৫৭ গ্রুপ টু।”

“আচ্ছা।”

“গ্রুপ ওয়ানের যেদিন অফলাইন ক্লাস থাকে, গ্রুপ টু’র সেদিন অফলাইন ক্লাস থাকে না। আবার, গ্রুপ টু’র যেদিন অফলাইন ক্লাস থাকে, গ্রুপ ওয়ানের সেদিন অফলাইন ক্লাস থাকে না।”

“আচ্ছা। তাহলে বেঞ্চিতে বসার ব্যাপারটা কীভাবে হয়?”

“যখন একসঙ্গে ক্লাস হত, একটা বেঞ্চিতে আমরা তিনজন বসতাম। এখন একটা বেঞ্চিতে একজন।”

“সপ্তাহে দিন ভাগ হয় কী করে?”

“গ্রুপ ওয়ানের সোমবার আর বৃহস্পতিবার অফলাইন ক্লাস থাকে, মানে দুদিন। ওই দুদিন গ্রুপ টু’র অনলাইন ক্লাস থাকে। তেমনই গ্রুপ টু’র  বুধ আর শুক্রবার অফলাইন ক্লাস থাকে। সেই দুদিন গ্রুপ ওয়ানের অনলাইন ক্লাস থাকে। আর, মঙ্গলবার সকলের অনলাইন ক্লাস। শনি, রবি ছুটি।”

“বাঃ! এই-যে  মেলানো-মেশানো অনলাইন অফলাইন ব্যাপারটা তোর ভালো লাগছে, নাকি পুরোটাই অনলাইন ভালো লাগছিল?”

“এই মিক্সড ব্যাপারটাই ভালো লাগছে।”

“কেন?”

“বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, ম্যাডামদের দেখতে পাচ্ছি, আগে তো স্কুলেই যেতে পারছিলাম না। সেটার থেকে এটা ভালো।”

রুমুর কথাতে পরিষ্কার, এই অনলাইন অফলাইন মেলানো মেশানো ব্যাপারটা ও ভালোই উপভোগ করছে। রুমু শহরে-থাকা মেয়ে। সুতরাং শহরাঞ্চলের স্কুলগুলো তাদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী এরকম ব্যবস্থা করতেই পারে। সম্ভবত করছেও কোথাও কোথাও এবং তাতে অসুবিধা হবে না শহরাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা কী করবে! তাদের তো নেটওয়ার্কের অবস্থা খুব খারাপ হয়, বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই অনলাইন শিক্ষা থেকে ভীষণরকম ভাবে বঞ্চিত। তাহলে অনলাইন ব্যবস্থায় শিক্ষার আলো কি সেখানে পৌঁছবে না?

করোনা আবহে অফলাইন প্রচেষ্টা

এবার অন্য একটা পরিবেশে আসা যাক। বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক। আম্ফান পরবর্তী ভয়ঙ্কর অবস্থায় করোনার কারণে সামাজিক অনুশাসনে আতঙ্কিত বিধ্বস্ত মানুষ ভাবতেই পারছিল না, শুধুমাত্র কষ্টেসৃষ্টে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছু সত্যিই করার থাকতে পারে! এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের কনকনগর এস ডি ইন্সটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী অনলাইন ক্লাসের কথা ভাবলেন। শহরাঞ্চলে তখন অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। পত্রিকা সূত্রের খবর (২৫-১-২০২২, আনন্দবাজার পত্রিকা), করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই ক্লাস ফাইভ থেকে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়ার জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রথমদিকে ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ুয়াদের মধ্যে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির হার ছিল ৯ শতাংশের মত। পরে তা কমে ৩ শতাংশে এসে পৌঁছয়। এর জন্য প্রধান দুটি কারণ অবশ্যই আর্থিক অসচ্ছলতা, গ্রামাঞ্চলে নেটওয়ার্ক পরিস্থিতির দুরবস্থা। শিক্ষকেরা যথারীতি উদ্বিগ্ন তাদের ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে। তারপরেই সিদ্ধান্ত হয়, কোভিড বিধি মেনে অফলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। স্কুলের কাছাকাছি তিনটি গ্রাম বাঁকড়া ডোবর, কনকনগর ফুটবল মাঠ এবং আট নম্বর গ্রামের মন্দিরের মাঠে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। নিরাপদ দূরত্ববিধি মেনে সকাল এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত প্রথম দিন ক্লাস হয় পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে। এদিন দুটি ক্লাসের মোট ২০০ জন পড়ুয়ার মধ্যে উপস্থিত ছিল ১১২ জন পড়ুয়া। ঘোষণা হল, সেই একই জায়গায় প্রত্যেক মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হবে এবং শুক্র ও শনিবার বিশেষ ক্লাস নেওয়া হবে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য। পাশাপাশি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইন ক্লাসও চলবে।

এই ব্যবস্থায় ছাত্রসমাজ এবং শিক্ষকেরা খুবই খুশি এবং উৎসাহিত হল। অভিভাবকরাও খুশি হয়ে এবং দারুণ উৎসাহিত হয়ে তাঁদের নিজেদের বাড়ি থেকে চেয়ার এনে দিলেন, ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তাঁদের নিজেদের বাড়িতেই রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।

কনকনগর এস ডি ইন্সটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরীর সঙ্গে খুব সম্প্রতি আমার মোবাইল মারফত কথাবার্তা হয়েছে এই সবকিছু নিয়ে। এই মুহূর্তে কোভিড বিধি মেনে অফলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গেছে ক্লাসরুমেই। পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসও চলছে সেইসব ছাত্রছাত্রীদের জন্য যারা অসুস্থ অথবা বিভিন্নরকম অনিবার্য কারণে যারা স্কুলে হাজির হতে পারছে না। ছেলেমেয়েদের মধ্যে এবং নিশ্চিতভাবে শিক্ষকদের মধ্যেও খুব স্বাভাবিক কারণেই খুশির আবহাওয়া।   

শুধু ক্লাসই নয়। এই স্কুলটির উদ্যোগে নবম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হল এক অভিনব উপায়ের মাধ্যমে। ঠিক হল, সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। কথা মতন পরীক্ষার দিন পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা স্কুলে এসে তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য  খামবন্দি প্রশ্নপত্র এবং তাঁদের নিজের নিজের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা উত্তরপত্রে স্কুলের স্ট্যাম্প মেরে নিয়ে গেলেন। অভিভাবকদের বলে দেওয়া হল, ঠিক বারোটায় পড়ুয়াদের হাতে যেন প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়, তিনটে বাজলেই সেই খাতা নিয়ে নিতে হবে, সাড়ে তিনটের মধ্যে সমস্ত উত্তরপত্র জমা দিতে হবে স্কুলে। সেইমতনই সব কাজ হল সুষ্ঠুভাবে। পরীক্ষা শুরুর দিন স্কুলের হেডমাস্টার পুলক রায়চৌধুরী নিজেই কনকনগর, সান্ডেলেরবিল, বাঁকড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে অনেক পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে সরেজমিনে দেখে এলেন, পরীক্ষার কাজ দেখতে। এই কাজে তাঁর সহকর্মীরা বিপুলভাবে সাহায্য করেছিলেন তাঁকে। সূত্রে প্রকাশ, ওই তিনটি ক্লাসের মোট ৯৩ শতাংশ  শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সুতারং সদিচ্ছা  এবং উদ্যোগ থাকলে সবই সম্ভব।    

       

শেষ কথা

তাই শেষ কথা এটাই। অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকুক, কিন্তু তার পাশাপাশি কোভিড-বিধি মেনে করোনাকে যথোচিত সম্মান জানিয়ে নিয়ম করে সপ্তাহে একদিন কিংবা দুদিন (প্রয়োজনে এবং সম্ভব হলে আরও বেশিদিন) অফলাইন শিক্ষাব্যবস্থাও চলতে থাকুক। কারণ, ছাত্র-শিক্ষক কাছাকাছি না এলে শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। পাশাপাশি যেসব জায়গায় নেটওয়ার্কের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, শিক্ষকেরা যদি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার বিষয়–সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট নেট থেকে ডাউনলোড করে অফলাইনে সেসব প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলেও গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ উপকার হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।           

তথ্যসূত্রঃ

২৫-১-২০২২, আনন্দবাজার পত্রিকা,

ব্যক্তিগত যোগাযোগ

৫ জানুয়ারী ১৯৫৩ কলকাতায় জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পাঁচ বছর পড়াশোনা। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে পি এইচ ডি। ১৯৯১ – ২০০২ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে তারাতলার ইন্সটিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টে অধ্যাপনা। ২০০২ – ২০১৩ কলকাতার নেতাজীনগর ডে কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপনা। তারপর প্রথাসম্মত অবসর। অবসরের পর পাঁচ বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট লেকচারার। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। প্রথমদিকে কবিতা, তারপর নিয়মিত গল্প লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, বইয়ের রিভিউ। এখন পুরো সময়টা কাটে সাহিত্য চর্চায়। ‘কণিকামাত্র’ এবং ‘অণুরেণু’ অণুগল্পের দু’টি সংকলন। ‘গল্প পঞ্চদশ’ পনেরোটি ছোটোগল্পের একটি সংকলন। এছাড়া খুব সম্প্রতি প্রকাশিত একটি উপন্যাস ‘কোভিডের দিনগুলি’।

5 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • subhasish , April 18, 2022 @ 4:38 am

    খুব ভালো লেখা। ধন্যবাদ লেখক কে, ও প্রকাশক কে।

  • Sujata Kar , April 18, 2022 @ 5:25 am

    ‘অবসর’এ প্রকাশিত তপন রায়চৌধুরী মহাশয়ের অন-লাইন শিক্ষার ওপর লেখা আলোচনাটি দৃষ্টি আকর্ষণ করল।এই নতুন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির ওপর মনোগ্রাহী একটি লেখা।অন-লাইন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা,কেস স্টাডি ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের সামনে বর্তমান শিক্ষাদানের পদ্ধতির পরিষ্কার একটি চিত্র তুলে ধরে ।আমরা যারা অনভিজ্ঞ তারা অন-লাইন শিক্ষা এবং অফ -লাইন শিক্ষার গুণগত মান এবং মূল পার্থক্য সম্পর্কে জ্ঞাত হই।গবেষণামূলক এই লেখাটি ছাত্র এবং অভিভাবক উভয়েরই অবশ্য পাঠ্য।তথ্যনিষ্ঠ এই লেখাটি ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে।

  • Subhamay Dutta , April 18, 2022 @ 7:02 am

    আমার একটি বক্তব্য লেখার মাধ্যমে অনেক বেশি retention হয়। সেটি online মাধ্যমে একটু কমে গেছে। ক্লাসে যে notes নিজের হাতে লেখে তার একটি উপকার আছে। Offline ক্লাসে হাতে লিখে অনেক notes নিতে হয়।

    • Subhamay Dutta , April 18, 2022 @ 7:04 am

      আমার একটি বক্তব্য লেখার মাধ্যমে অনেক বেশি retention হয়। সেটি online মাধ্যমে একটু কমে গেছে। ক্লাসে যে notes নিজের হাতে লেখে তার একটি উপকারিতা আছে। Offline ক্লাসে হাতে লিখে অনেক notes নিতে হয়।

  • Srijan Banerjee , April 20, 2022 @ 4:01 am

    খুব ভালো লাগলো পড়ে।লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply to subhasish Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *