সৃষ্টিতত্ত্ব ও সাংখ্য দর্শন

সৃষ্টিতত্ত্ব ও সাংখ্য দর্শন

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। সে অনেককাল আগেকার কথা। দেশ ভ্রমণ করতে করতে দুই পণ্ডিতের হঠাৎ দেখা হল হিমালয়ের কোলে এক গ্রামে। জায়গাটি ভালো লেগে গেল, দুজনে ঠিক করলেন সেখানেই রাত কাটাবেন। অতিথি হলেন এক সজ্জন দরিদ্র কৃষকের। বাড়িতে থাকার জায়গা কম, তাই দুই পণ্ডিত রাতের আশ্রয় নিলেন গোয়াল ঘরের সংলগ্ন একটি ঘরে। মাঝ রাতে কৃষকের ঘুম ভেঙ্গে গেল চেঁচামেচির আওয়াজে। লন্ঠন নিয়ে বেরিয়ে দেখেন পণ্ডিতদের ঘর থেকে বিশাল তর্ক-বিতর্কের আওয়াজ আর সেই আওয়াজে গোয়ালের সব গরুগুলো পালিয়েছে। আর তাদের দরজার বাইরে আরো দুজন মানুষ কম্বল মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে। কৃষক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার বলুন তো, কারা আপনারা? আর ভেতরের দুই পণ্ডিতই বা কারা?’ কম্বল-মানুষ দু’জন বললেন, ‘ভেতরে দুই পণ্ডিত যারা তর্ক করছেন, তাঁরা হচ্ছেন দুই দার্শনিক, মীমাংসা আর বেদান্ত। আর আমরা দু’জন হচ্ছি ন্যায়-বৈশেষিক, দরজায় একটু ফাঁক পেলেই টুক করে ভেতরে ঢুকে পড়ব। আর ঐ দেখুন আরো দু’জন গুটি গুটি পায়ে এদিক পানে আসছেন। ওঁরা হচ্ছেন সাংখ্য ও যোগ।’ এক রাতেই কৃষক আদ্যোপান্ত ষড়দর্শনের মহিমা বুঝে গেলেন। তবে কৃষকের গরুগুলো ফিরে এসেছিল কিনা জানা নেই। ষড়দর্শনের অনুসারীদের মধ্যে তর্ক কিন্তু নিছক গল্প নয়। একসময়ে তর্কের মাধ্যমেই দর্শনের পণ্ডিতেরা নিজেদের মতবাদ প্রচার করতেন। এইরকম তর্কের একটি উদাহরণ হচ্ছে অদ্বৈত বেদান্তবাদী আচার্য শঙ্কর ও মীমাংসা দর্শনের মহাপণ্ডিত কুমারিল ভট্টের শিষ্য মণ্ডন মিশ্রের বিতর্ক সভা।

প্রাচীন কালের কথা। বৈদিক সভ্যতায় যাগ-যজ্ঞের প্রভাব তখন স্তিমিত হয়ে এসেছে এবং প্রাচীন ঋষিদের বহুমুখী চিন্তাধারা ভিন্ন ভিন্ন শাখায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে। ঋষি ও তাঁদের শিষ্যদের অনুসন্ধিৎসু মন জানতে চাইত এই দৃশ্যমান জগত ও তার পরপারের কথা, অসীম আকাশের দিকে তাকিয়ে তাঁরা ভাবতেন এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের শুরু ও শেষ কোথায়। মনে সদা জাগরূক হয়ে থাকত আত্মজিজ্ঞাসা – ‘আমি কে’ ও ‘আমার সাথে এই জগতের সম্পর্ক কী?’ ‘সত্য কী?’ ‘প্রকৃত জ্ঞান কী?’ কালক্রমে ঋষিদের চিন্তাধারাগুলি ছটি দার্শনিক মতবাদে দানা বাঁধে, যাদের একসাথে ষড়দর্শন বলা হয়। প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাধারায় চরম উৎকর্ষ এই ছয় দার্শনিক মতবাদ – সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, পূর্ব-মীমাংসা, এবং বেদান্ত (বা উত্তর মীমাংসা)। এই ছয় দর্শনের প্রতি ছত্রে প্রাচীন, ভারতীয় ঋষিরা তাঁদের গভীর চিন্তাশক্তি, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণের পরিচয় রেখে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে পূর্ব-মীমাংসা বেদের যাজ্ঞিক কর্মকাণ্ডের ওপর আধারিত। বেদান্ত দর্শনের চিন্তাধারার বীজ ঋগ্বেদের কিছু জায়গায় (বিশেষত দশম মণ্ডলে) নিহিত থাকলেও এর বিস্তার ও উৎকর্ষ এসেছে উপনিষদগুলিতে। অনুমান করা হয় ছয় দর্শনের আলাদা আলাদা ভাবে বিবর্তন ও প্রকাশের কাল খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী ও তার পরে। একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, প্রায় একই সময়ে গ্রিস দেশেও বিভিন্ন দার্শনিকগণ প্রায় একই ধরণের প্রশ্নগুলি নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। ভারতীয় দর্শন ও গ্রিক দর্শন, এরা সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে বেড়ে উঠেছিল কি না, কিংবা এদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল কি না, অথবা এরা একে অপরকে প্রভাবিত করেছিল কি না, এই বিতর্ক বর্তমান প্রবন্ধের সীমার বাইরে। তবে প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়া মাইনর বা এজিয়ান সাগর অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।

সাধারণ ভাবে ছয় দর্শনের রচয়িতা হিসেবে যে ছয় ঋষির নাম করা হয় তাঁরা হচ্ছেন, গৌতম – ন্যায়, কণাদ – বৈশেষিক, কপিল – সাংখ্য, পতঞ্জলি – যোগ, জৈমিনী – পূর্ব মীমাংসা, বাদরায়ণ – বেদান্ত বা উত্তর মীমাংসা। এই ছয় দর্শনের মধ্যে আপাত-অমিলের যে খোলসটি আছে, তাকে খুঁটলেই দেখা যায় একটু গভীরে অন্তঃসলিলা ফল্গুর মতো মিলের ধারাটি বয়ে চলেছে। এদের মধ্যে প্রথম মিল হচ্ছে যে এরা সকলেই বেদের প্রামাণ্যে বিশ্বাসী। কিন্তু বৌদ্ধ, জৈন, ও চার্বাক দর্শন বেদের প্রামাণ্যে অবিশ্বাসী, তাই এদের ষড়দর্শনের থেকে আলাদা ধরা হয়। অন্যান্য মিলগুলি এই প্রবন্ধের মধ্যে আলোচনা করব।

সাংখ্যদর্শনের পরিধি বিশাল। এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু কেবল সাংখ্যের সৃষ্টিতত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা মূল সাংখ্যকারিকার তিন-চারটি শ্লোকের ওপর আধারিত। এই ধরণের প্রবন্ধ লিখতে গেলে সাধারণত সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃতির প্রবণতা থাকে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাঁর Brief History of Time বইয়ের ভূমিকায় লিখেছিলেন, ‘বইয়ের মধ্যে অংকের সমীকরণের আঁকিবুকি থাকলে, বইয়ের পাঠক (এবং বিক্রি) অর্ধেক করে দেয়।’ তাই মহাজনের পথ মেনেই বর্তমান প্রবন্ধে সংস্কৃত শ্লোক, ভাষ্য, বা উদ্ধৃতি বাদ দিয়ে যথাসম্ভব সরল ভাবে সাংখ্যদর্শন আলোচনার চেষ্টা করব।

কপিলের সাংখ্য দর্শনে কোনো এক সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করার কথা নেই। বরং লেখা আছে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই আর সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজনই নেই। ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে সাংখ্যমতে সৃষ্টির যে পর্যায়গুলি দেওয়া সেগুলি দেখে বর্তমানের বিজ্ঞানীরাও আশ্চর্য বোধ করবেন। কিন্তু সেই আলোচনার আগে, আমরা সাংখ্যের ভাষ্য ও তার বিবর্তনে একবার চোখ বুলিয়ে নিই।

সাংখ্যমত অতি প্রাচীন। কপিল রচিত মূল সাংখ্য দর্শন আজ হারিয়ে গেছে। কপিল (ইনি গঙ্গাসাগরের কপিল মুনি নন) আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর মানুষ। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে ঈশ্বরকৃষ্ণ রচিত সাংখ্যকারিকা বর্তমানে প্রাচীনতম ও প্রামাণ্য সাংখ্যমত বলে ধরা হয়। সম্ভবত ঈশ্বরকৃষ্ণ রচিত সাংখ্যকারিকার আগেও সাংখ্য সম্বন্ধে অন্যান্য মত প্রচলিত ছিল, কিন্তু সেগুলি আজ আর পাওয়া যায় না। আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রের কত মণিমাণিকই তো এভাবে হারিয়ে গেছে। সাংখ্যকারিকার বিভিন্ন ভাষ্যের মধ্যে অষ্টম শতাব্দীতে গৌড়পাদ, নবম শতাব্দীতে বাচস্পতি মিশ্র, ও চতুর্দশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানভিক্ষুর সাংখ্যকারিকা ভাষ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এঁদের ভাষ্যের ওপর আবার অনেক পণ্ডিত বহুবিধ ভাষ্য রচনা করেছেন। সাংখ্যমত দ্বৈত, অর্থাৎ যে দুটো প্রধান জিনিসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তারা হচ্ছে প্রকৃতি ও পুরুষ। সাধারণত প্রকৃতি-পুরুষ বললে অনেকের কাছে রাধা-কৃষ্ণ বোঝায়। পরে এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব পুরাণকারগণ প্রাচীন সাংখ্যমতকে বেশ কিছুটা অদল-বদল করে কীভাবে রাধা-কৃষ্ণ বা পার্বতী-শিব করে নিয়েছেন। সাংখ্যের প্রকৃতি হচ্ছেন জড়, বিশ্বের সমস্ত পদার্থ ও অফুরন্ত শক্তির আধার। কিন্তু প্রকৃতির নিজের চৈতন্য নেই, সে অচৈতন্য। বিশ্বের প্রতিটি পদার্থ দেশ ও কালের সীমার মধ্যে বাঁধা, কিন্তু প্রকৃতি নিজে অনন্ত, এর শুরু বা শেষ নেই। সত্ত্ব, রজঃ, ও তমঃ, এই তিন গুণ প্রকৃতির মধ্যে প্রকাশিত। এই তিন গুণ জগতের আদি কারণ, আদি দ্রব্য বা পদার্থ। প্রকৃতি এই ত্রিগুণ দ্বারা সমস্ত জগত বেঁধে রেখেছেন। সত্ত্ব শব্দটি এসেছে ‘সৎ’ থেকে যার অর্থ অস্তিত্ব (real or existent)। সত্ত্বগুণ লঘু, প্রীতিদায়ক, আনন্দময়, ত্রুটিহীন ও সমস্ত কিছুর প্রকাশক। রজোগুণ গতি, ক্রিয়াকলাপ (Action), উদ্যোগের পরিচায়ক এবং বেদনার উৎস। তমোগুণের প্রভাব হচ্ছে জড়তা (Intertia), অজ্ঞান, ও নিদ্রা। এই তিন গুণ সর্বদা একসাথে থাকে এবং সময় ও অবস্থা বিশেষে কোনো এক গুণ অন্যকে ছাপিয়ে যায়। গীতার চতুর্দশ অধ্যায়ে এই তিন গুণের সুন্দর বর্ণনা দেওয়া আছে।

সাংখ্যমতে সৃষ্টির শুরুতে, যখন বিশ্বজগত ছিল না, তখন এই ত্রিগুণ প্রকৃতির মধ্যে সম্পূর্ণ সাম্যাবস্থায় ছিল, কেউ কাউকে ছাপিয়ে যায়নি। সেই অবস্থায় প্রকৃতি স্থির, অচৈতন্য, জগত-সংসার তখন ভবিষ্যতের গর্ভে। ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্তে (দশম মণ্ডল, ১২৯ সূক্ত) বিশ্বজগত সৃষ্টির এক সুন্দর কাব্যিক বর্ণনা আছে, যেখানে সৃষ্টির শুরুতে অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব, জীবন-মৃত্যু কিছুই ছিল না, কেবল ‘সেই একজন’ ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। যদিও এই বর্ণনার সাথে সাংখ্যের থেকে বেদান্তের বর্ণনা বেশি মেলে। প্রকৃতির এই ত্রিগুণাত্মিকা সাম্যাবস্থায় টানাপোড়েন শুরু হয় হয় ও গুণবৈষম্য দেখা দেয় যখন ‘পুরুষ’ প্রকৃতির ওপর তার প্রভাব ফেলে (transcendental influence)। পুরুষের সান্নিধ্যে প্রকৃতির তিন গুণের সাম্যাবস্থা বদলে যাবার সাথে সাথে শুরু হয় বিশ্বজগত সৃষ্টির প্রথম পদক্ষেপ।

কিন্তু কে এই পুরুষ যার প্রভাবে প্রকৃতির সাম্যাবস্থা বদলে যায়? সাংখ্যমতে পুরুষ পূর্ণ চৈতন্য (pure consciousness), অনন্ত, ত্রিগুণরহিত, পরিবর্তনহীন, দ্রষ্টা, ও পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী। জগতের যাবতীয় চেতনা ও জ্ঞানের উৎস পুরুষ। তিনি নিজে তিন গুণের ওপারে থেকেও, তাঁর আনন্দের জন্য (ভোক্তৃভাব), বিশ্বজগতকে উদ্দেশ্য দেবার নিমিত্তে, তাঁর চেতনা প্রকৃতির ওপর বিস্তার করেন, ও সৃষ্টির বীজ রোপণ করেন। “তাঁরই চেতনার রঙে পান্না হয় সবুজ আর চুনী রাঙা হয়ে ওঠে।” এতকিছুর পরেও কিন্তু পুরুষ নিজে সদা সর্বদা অবিকৃত থাকেন, তাই তিনি ‘অবিকার।’ সাংখ্যমতে পুরুষ এক নয়, একাধিকও হতে পারে।

পুরুষের প্রভাবে প্রকৃতির মধ্যে যে গুণবৈষম্য ও বিশ্বজগত সৃষ্টির সূত্রপাত, তা একঝটকায় হয়ে যায়নি, তার বিবর্তনের নির্দিষ্ট পর্যায় আছে, যদিও সেই বিশেষ পর্যায়গুলি কেন হয়েছে, তার কারণ জানা নেই। ত্রিগুণ থেকে জগত সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছিল ‘মহৎ’ বা মহৎ-তত্ত্ব । ‘মহৎ’ এবং বুদ্ধি সমগোত্রীয়, মহৎ-তত্ত্ব প্রধানত সাত্ত্বিক গুণময় এবং জগত-বীজ। এর মধ্যে যাবতীয় স্মৃতি ও সংস্কার সঞ্চিত থাকে। পুরুষের সান্নিধ্যে প্রকৃতির মহৎ-ভাব ও বুদ্ধিবৃত্তির ওপর পুরুষের চেতনার প্রতিফলন হয় ও প্রকৃতির অচেতন সমুদ্রে প্রথম চেতনার তরঙ্গ ওঠে। ভবিষ্যতে যখন আমরা বেদান্ত দর্শন আলোচনা করব, তখন দেখব বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত মতে, অব্যক্ত প্রকৃতি ও মহৎ তত্ত্বের মাঝে আরো একটি পর্যায় আছে যার নাম ‘প্রজ্ঞা-প্রকৃতি।’

প্রকৃতির সৃষ্টি-বিবর্তনের পরের পর্যায়ে আসে ‘অহং-তত্ত্ব’ বা অহংকার। এতক্ষণ প্রকৃতির মধ্যে ‘আমি’ ভাব জন্মায়নি, অহং-তত্ত্বের ফলে প্রকৃতির মধ্যে আমিত্ব বা অভিমান অভিব্যক্ত হল। বুদ্ধিকে বাদ দিয়ে অহংকারের প্রকাশ নেই, তাই বুদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকেই অহং-তত্ত্বের অভিব্যক্তি। অহংবুদ্ধির ফলস্বরূপ জীবের ‘আমি কর্তা’ এই ভ্রান্তির উদয় হয়। অহংকারের মধ্যেও সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ এই তিন আদি গুণ নিহিত থাকে। সাত্ত্বিক অহংকার থেকে এগারোটি ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তি – পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক), পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় (বাক, পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ), ও মন। কিন্তু যেহেতু ক্রিয়া (Action) ছাড়া এদের উৎপত্তি সম্ভব নয়, তাই রাজসিক অহংকার একাদশ ইন্দ্রিয় সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ।

এখানে বলে রাখি যে মন, বুদ্ধি, ও অহংকার কিন্তু দাগ কেটে কেটে আলাদা করা বা তিন কামরায় বন্ধ করা আলাদা জিনিস নয়। শাস্ত্রকাররা বলেন এই তিন হচ্ছে ‘অন্তঃকরণ’-এর তিন অবস্থা। কিন্তু এর বিশদ আলোচনায় এখন যাচ্ছি না।

এইবার দেখে নেব সাংখ্যমতে তামসিক অহংকার থেকে কিভাবে বিশ্বের জড়জগতের বিবর্তন ও উৎপত্তি হয়েছে। যেহেতু তমোগুণ জড়ের গুণ, তাই বিশ্বের যাবতীয় জড়ের কেন্দ্রে আছে তমোগুণের প্রভাব। তামসিক অহংকার থেকে প্রথমে উৎপত্তি হল ‘ভূতাদি,’ যাকে বলা যায় ‘আদি ভূত।’ এই আদি ভূত হচ্ছে সৃষ্টির সর্বপ্রথম পদার্থ, যা আদিম ও অনন্ত (primordial, infinitesimal mass)। সৃষ্টির আদি মুহূর্তে ভূতাদির কোনো ভৌতিক (physical) বা রাসায়নিক (chemical) বৈশিষ্ট্য ছিল না, তাই এর কোনো বর্ণনা দেওয়া যায় না। ভূতাদির থেকে সৃষ্টি হল ‘পঞ্চ তন্মাত্র’ – শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, ও গন্ধ। এই পাঁচ তন্মাত্র কিন্তু সাধারণ প্রচলিত অর্থে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি নয়। এদের মধ্যে অভিব্যক্তিহীন ও অতিসূক্ষ্ম ভাবে নিহিত থাকে ভবিষ্যতের পঞ্চ মহাভূত: ক্ষিতি (মাটি), অপ্‌ (জল), তেজ (অগ্নি), মরুৎ (বায়ু), ব্যোম (আকাশ)।

সাংখ্যমতে পঞ্চ মহাভূত জগতের আদিম উপাদান, প্রতিটি পদার্থের মধ্যে আছে পঞ্চ মহাভূত। বোঝবার সুবিধের জন্য পঞ্চ তন্মাত্রকে Sub-Atomic particles এর সাথে ও পঞ্চ মহাভূত Basic elements তুলনা করা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে বলি, প্রাক-সক্রেটিস গ্রিক দার্শনিকরা মাটি, জল, আগুন, বাতাস, এই চার Basic Elements এর কথা বলেছেন। আসলে গ্রিক দার্শনিকরা এই চারটিকে জীবন, তথা বেঁচে থাকার মূল উপাদান হিসেবে কল্পনা করেছেন। এখানে ভারতীয় সাংখ্যকারগণ একটি অতিরিক্ত উপাদান ‘ব্যোম’ (Space) অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের গভীরতার পরিচয় দিয়েছেন।

এবারে আমরা পঞ্চ তন্মাত্র ও পঞ্চ মহাভূতের উৎপত্তি আলোচনা করব। আলোচনার সময় কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক তুলনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যদিও এই উপমা বা তুলনাগুলির সাদৃশ্য কেবলই রূপক বা Metaphysical.
পঞ্চ তন্মাত্রের মধ্যে সর্ব প্রথম উৎপত্তি ‘শব্দ তন্মাত্র’ বা ‘পরিস্পন্দ’ (Vibrations), অর্থাৎ আদিম বিশ্বজগতের বুক জুড়ে বেজে ওঠা প্রথম স্পন্দন। এই স্পন্দনের সাথে String Theory-র একটা তুলনা দেওয়া যেতে পারে। শব্দ তন্মাত্র থেকে পঞ্চ মহাভূতের প্রথম মহাভূত আকাশের উৎপত্তি। আকাশ মহাভূত হচ্ছে মহাশূন্য বা Space, তাই সাংখ্যমতে সৃষ্টির শুরুতে এক স্পন্দনশীল মহাশূন্যের (Space filled with vibrations) কল্পনা করা হয়েছে।
শব্দ তন্মাত্রের পরে সৃষ্টি হল ‘স্পর্শ তন্মাত্র’ ও তার থেকে উৎপত্তি ‘মরুৎ’ বা বায়ু মহাভূত। স্পর্শ তন্মাত্রের বিশেষত্ব হচ্ছে একে ছোঁয়া যায় অর্থাৎ চাপ (mechanical pressure) সৃষ্টি করতে পারে। এর সাথে Atomic motion বা Energy of atomic impact এর তুলনা করা যেতে পারে।

স্পর্শ তন্মাত্রের পরে সৃষ্টি হল ‘রূপ তন্মাত্র’ ও তার থেকে উৎপত্তি ‘তেজ’ বা অগ্নি মহাভূতের। রূপ তন্মাত্র ইঙ্গিত করে সর্বপ্রথম দৃশ্যমান বা জগত তাই রূপ তন্মাত্রের প্রকাশ হল অগ্নি মহাভূত অর্থাৎ উত্তপ্ত ও বিকিরণশীল পদার্থ সমূহ (Hot radiating matters)। সৃষ্টি পর্যায়ের পরবর্তী সোপানে দেখা দেয় ‘রস তন্মাত্র’ এবং তার থেকে জন্ম নেয় ‘অপ্‌’ বা জল মহাভূত। জল মহাভূতের বৈশিষ্ট্য তা তরল বা গ্যাসের ছড়িয়ে পড়তে পারে ও এর আকর্ষণ ক্ষমতা আছে। এর সাথে Electromagnetic Field এর তুলনা করা যেতে পারে।

সব শেষে সৃষ্টি ‘গন্ধ তন্মাত্র’ ও তার সাথে ‘ক্ষিতি’ বা মাটি মহাভূতের উৎপত্তি। ক্ষিতি মহাভূত কঠিন পদার্থ বা Solid Matters, যাকে পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা যায় এবং এর মধ্যে অন্য চার তন্মাত্র নিহিত থাকে। সাংখ্যমতে প্রতিটি তন্মাত্র জগতের প্রত্যেক পদার্থের মধ্যে নিহিত আছে ও তাদের সাথে আমাদের জ্ঞান ও কর্মেন্দ্রিয়গুলির যোগাযোগ হলে পদার্থের গুণাবলী আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়। পঞ্চভূত ও পঞ্চতন্মাত্রের বিভিন্ন প্রকার মিলন ও গঠনের বৈচিত্র্যে জগতের সমস্ত পদার্থের উৎপত্তি ও প্রকাশ। বৈশেষিক দর্শন আলোচনার সময় আমরা দেখবো কীভাবে সৃষ্টির এই পর্যায়গুলি পরমাণু তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কিন্তু এতকিছুর উৎপত্তি ও বিবর্তন এলো কোথা থেকে? এবারে আমরা সাংখ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অভিমত আলোচনা করব যার নাম ‘সৎকার্যবাদ।’ সাংখ্যমতে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব উৎপন্ন হতে পারে না ও সেই রকম ভাবেই যার অস্তিত্ব আছে তাকে হঠাৎ করে ভ্যানিস করে দেওয়া যায় না। সাংখ্যদর্শনে জগতের প্রচ্ছন্ন অবস্থা থেকে প্রকট হওয়াকেই বলে সৃষ্টি। সাংখ্যমতে কার্য সর্বদা কারণের মধ্যে নিহিত থাকে। ক্রিয়া কেবলমাত্র কারণকে অভিব্যক্ত করে। তাই মাখন পেতে হলে আমাদের দুধ থেকে শুরু করতে হয়, জলের কুঁজো পেতে গেলে মাটি থেকে, পাথরের মূর্তি পেতে গেলে পাথর থেকে শুরু করতে হয়। মাখন, জলের কুঁজো, বা পাথরের মূর্তির মধ্যেও কিন্তু তাদের মূল উপাদানগুলি উপস্থিত থাকে। তাই ক্রিয়া বা কাজ শুরুর আগেও তা কারণের মধ্যে নিহিত ছিল (Effect pre-exists the cause), ক্রিয়া কেবল অভিব্যক্তির পরিবর্তন ঘটায়। সাংখ্যমতে এর নাম ‘সৎকার্যবাদ’ বা ‘পরিণামবাদ।’

প্রবন্ধের শুরুতে আমরা ছয় দর্শনের আপাত অমিলের মধ্যেও সামঞ্জস্যের কথা উল্লেখ করেছি। এখানে তার কয়েকটি উদাহরণ দেব। পতঞ্জলির যোগ দর্শন সাংখ্যের মূল চিন্তাধারাগুলি প্রায় সবই গ্রহণ করে। কিন্তু যেহেতু সাংখ্য নিরীশ্বর এবং যোগ দর্শন সেশ্বর, সুতরাং যোগ দর্শনে ঈশ্বরের উল্লেখ আছে। একটি উদাহরণ দিলে এই ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে। সাংখ্যদর্শনের মূলে আছে চতুর্বিংশতি বা চব্বিশটি তত্ত্ব – পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচ কর্মেন্দ্রিয়, পাঁচ তন্মাত্র, পাঁচ মহাভূত, মন, বুদ্ধি, অহংকার ও প্রকৃতি। যোগ দর্শনে চতুর্বিংশতি তত্ত্বের সাথে ঈশ্বরকে যোগ করে পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব বলা আছে। মন, বুদ্ধি, অহংকার এই তত্ত্বগুলি বেদান্তের ভিত্তি স্বরূপ। বেদান্ত মতে প্রকৃতি হচ্ছেন মায়াধীশ সগুণ ব্রহ্ম যাঁকে আমরা সাকার দেবতা জ্ঞানে পুজো করি। অদ্বৈত বেদান্তে পুরুষের স্থানে আছেন এক ও অদ্বিতীয় পূর্ণ চৈতন্যস্বরূপ নির্গুণ অক্ষর ব্রহ্ম। তবে বেদান্তের সঙ্গে সাংখ্যের মূল ফারাক হচ্ছে, সাংখ্যে পুরুষ একাধিক হতে পারে (সাংখ্যকারিকা-১৮), কিন্তু বেদান্তে ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। সৃষ্টিতত্ত্ব বেদান্তের মূল বিষয় এক। উপনিষদগুলি বেদান্তের ভিত্তিস্বরূপ হলেও এদের মধ্যে (যেমন শ্বেতাশ্বতর- চতুর্থ অধ্যায়, ছান্দোগ্য – ষষ্ঠ অধ্যায়) সাংখ্যের বীজ নিহিত আছে। গীতায় বিভিন্ন অধ্যায়ে অনেকবার পুরুষ ও প্রকৃতির উল্লেখ আছে, যেমন সপ্তম অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, ‘পঞ্চভূত এবং মন, বুদ্ধি ও অহংকার আমার অপরা (অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট) প্রকৃতি। কিন্তু আমি স্বয়ং জীবভূত চৈতন্য স্বরূপ।’ বৈশেষিক দর্শনেও আমরা জগত সৃষ্টি ও বিবর্তনে পঞ্চ তন্মাত্র, পঞ্চ ভূতের ভূমিকা উল্লেখ পাই – পরমাণু তত্ত্বের সাহায্যে।

প্রকৃতি-পুরুষের দ্বিত্ব (Duality) বার বার ফিরে আসে অন্যান্য দর্শনে। আগম বা তন্ত্র শাস্ত্র মতে প্রকৃতিই মহামায়া, যিনি মায়ারূপে বিশ্বজগত আবৃত করে রেখেছেন, তিনিই ঈশ্বরী ও জগন্মাতা, আর সদাশিব নিয়েছেন পুরুষের ভূমিকা। এই প্রকৃতিরূপা শক্তিকেই কমলাকান্ত বলেছেন ‘আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশী ভালী।’ বৈষ্ণবরা বলেন রাধা ও কৃষ্ণ হচ্ছেন সাংখ্যের প্রকৃতি ও পুরুষ। যেহেতু সাংখ্যমতে পুরুষ একাধিক হতে পারে, সেটি বৈষ্ণব কাব্যে সুন্দর ভাবে বোঝানো হয়েছে কৃষ্ণের লীলার মাধ্যমে, যেখানে গোপীদের কাছে প্রেমাস্পদ কৃষ্ণ একাধিক হয়ে ধরা দেন।

এখানে একটা প্রশ্ন আসে। পঞ্চেন্দ্রিয়, পঞ্চভূত, মন, বুদ্ধি, অহংকার এগুলো আছে তা আমরা জানি এবং তার প্রমাণ আছে। কিন্তু প্রকৃতি ও পুরুষ অপ্রত্যক্ষ, তাই এদের অস্তিত্ব কেমন ভাবে জানবো? এখানে সাংখ্যকার কোনো কিছু অপ্রত্যক্ষ হবার যে কারণগুলি দেখিয়েছেন সেগুলি হল, অতি দূরত্ব, অতি সামীপ্য, ইন্দ্রিয়ের অগোচর বা অভাব, অন্যমনস্কতা, অতিসূক্ষ্মতা, ব্যবধান, অত্যন্ত নিষ্প্রভ বা জ্যোতিহীন, তুল্য বস্তুর মধ্যে মিশে যাওয়া, ও অনুভবের সাহায্যে উপলব্ধির অক্ষমতা। প্রকৃতি ও পুরুষ অতিসূক্ষ্ম ও ইন্দ্রিয়ের অগোচর, সেহেতু অপ্রত্যক্ষ। সাংখ্য বলেন প্রমাণ তিন প্রকার, প্রত্যক্ষ বা দৃষ্ট (সরাসরি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণ), অনুমান (এক বা একাধিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে উপসংহারে পৌঁছোনো), এবং আপ্তবচন বা শব্দ (ঋষিবাক্য বা বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তির অভিমত)। (ন্যায়-বৈশেষিকে আরো একরকম প্রমাণের কথা আছে – উপমান বা তুলনা করে উপসংহারে পৌঁছোনো, কিন্তু সাংখ্যমতে উপমান আলাদা নয়, প্রত্যক্ষ বা অনুমানের অন্তর্ভুক্ত।) প্রকৃতির প্রমাণ অনুমানসিদ্ধ। পুরুষের অস্তিত্বের প্রমাণ একটু অন্যভাবে – বিশ্বসৃষ্টি অর্থহীন হতে পারে না এবং যেহেতু প্রকৃতি নিজে অচৈতন্য, তাই পরিপূরক ভূমিকায় পুরুষের প্রয়োজন (Teleological proof)। আরো, জীবের দুঃখ নিবৃত্তির জন্যেও অচেতন প্রকৃতির ওপরে কেউ আছেন, তিনি হচ্ছেন পুরুষ (Ontological proof).

সাংখ্যের তিন গুণ, পুরুষ-প্রকৃতি, সৃষ্টির পর্যায়গুলি একের পর এক বর্ণনা, প্রমাণ, ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বিভিন্ন ভাবে অন্যান্য দর্শনগুলিতে ব্যবহৃত হলেও, কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে আমরা অনেক বেদান্তবাদী সাধু-মহাপুরুষদের নাম জানি। কই দেখাও তো একজন সাংখ্যবাদী সাধু? তাহলে আমরা বলব – নেই। সাংখ্যের তত্ত্ব সর্বত্র ছড়িয়ে থাকলেও, জীবনে সাংখ্য মেনে চলেন ও প্রচার করেন এমন সাধু পাওয়া যায় না। তার প্রধান কারণ সাংখ্য ঈশ্বর সম্বন্ধে নীরব। তবে সাংখ্য কিন্তু ধর্মাচরণ ও তার ফল সম্বন্ধে কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। সাংখ্য বলেন ‘ধর্মের ফল ঊর্ধ্বগতি ও অধর্মের ফল অধোগতি।’

সাংখ্যদর্শন আরো অনেক কঠিন প্রশ্নের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয়, যার একটা হচ্ছে, পুরুষের সান্নিধ্যে যদি প্রকৃতির মধ্যে চেতনার সঞ্চার হয়, তাহলে জগতে সবকিছুই চৈতন্যময় হওয়া উচিত, তাহলে জড়ের চৈতন্য নেই কেন? কিন্তু সাংখ্য ও বেদান্ত দুই-ই বলেন যে জড়েরও চৈতন্য আছে, তবে জড়চৈতন্য খুবই ক্ষীণ, তাই তা ধরা পড়ে না। জীবচৈতন্য অনেক শক্তিশালী, তাই বোঝা যায়।

আজকাল স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমের বাইরে দর্শন পড়ানো হয় না এবং বিজ্ঞানমনস্ক ছাত্ররা ভারতীয় দর্শনে অনাগ্রহী। সংস্কৃত কাব্যে একটা কথা আছে – দর্শনের থেকে কাব্য সুন্দর, কাব্যের থেকে গীত, গীতের থেকে সুন্দরী নারী, ও তার থেকে সুন্দর অন্নচিন্তা চমৎকারা। তাই শক্তিশালী অন্নচিন্তার কাছে দর্শন হেরে বসে আছে।

তথ্যসূত্র

1. S. Radhakrishnan, Indian Philosophy, Vol-II, George Allen & Unwin, London, 1948, pp. 248-335
2. Anima Sengupta, Classical Samkhya: A Critical Study, United Press, Patna, 1969
3. সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ভারতীয় দর্শনের ভূমিকা, মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, বাংলা ১৩৪৩ সন, পৃ ৪৭-৫৯
4. সাংখ্যদর্শনম্‌ – ঈশ্বরকৃষ্ণ প্রণীত কারিকাত্মকম্‌ (সংস্কৃত) – পঞ্চানন তর্করত্ন, কলিকাতা, বাংলা ১৩১০ সন।
5. Dilip Das, The Nāsadiya Śūkta of the Ṛg Veda – A Review from the Saṃkhya and Vedānta Perspectives, Ramakrishna Mission Institute of Culture Bulletin, Vol LXXI, No. 12, Dec 2020, pp. 11-15

 

 

 

তথ্যসূত্র

 

 

প্রাচীন ভারতের শাস্ত্র, দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ইত্যাদি সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। ‘অবসর’-এ নিয়মিত লেখেন। ‘দেশ’ ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশিত। বহু বছর ধরে আমেরিকার সেন্ট লুইস (মিসৌরী) শহরের প্রবাসী বাঙালী। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • আবু সালেহ মোঃ আরিফ , June 3, 2021 @ 3:45 pm

    দাদা ধন্যবাদ না দিয়ে সাধুবাদ জানাচ্ছি। কেননা সাধুভাব ছাড়া এমন জটিল ভাবের প্রকাশ ভংগি কেমনে সম্ভব? অনেক সমৃদ্ধ হলাম। জয় গুরু।

  • Dilip Das , June 7, 2021 @ 12:35 am

    আবু সালেহ ভাই, আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। আপনার মতো পাঠকদের জন্যই আমার রচনা।
    শুভেচ্ছা রইল। জয় গুরু।
    দিলীপ দাস

Leave a Reply to Anonymous Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *