প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

অগাস্ট ৩০, ২০১৬

 

বেঙ্গল রেঁনেসা এবং সাত ফিরঙ্গির কীর্তিকলাপ

সোমেন দে


বাংলা ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব। তবে আমাদের এই ভাষা,সাহিত্য, সংস্কৃতির পথ চলা যে নিরবচ্ছিন্ন উত্থানের কাহিনি এমনটা নয়।  যে অসাধারণ পরম্পরা নিয়ে আমাদের জাত্যাভিমান তা সবসময় অবাধে এবং একই বেগে অগ্রসর হয় নি।  মাঝে মাঝে তমসায় আচ্ছন্ন হয়েছে, দৌরাত্ম্যে কবলিত হয়েছে আবার কখনো কিছু মানুষের চেষ্টায়, কিছু সৃজনপ্রতিভার উন্মেষে নূতন করে প্রাণময় হয়ে উঠেছে। বঙ্গসংস্কৃতি ঠিক কোথায় শুরু ইতিহাসের এই বিতর্কিত অধ্যায়ে আমরা প্রবেশ করছি না।  ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে পলাশীর যুদ্ধে এই বঙ্গদেশের একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।  তাঁর মত অনেক ঐতিহাসিকই পলাশীর মাঠে (১৭৫৭ )বঙ্গদেশের সাংস্কৃতিক জগতে এক নূতন যুগের সূচনা হয়েছিল বলে মনে করেন।  অনেকে আবার তার কিছুদিন পরে রামমোহনের ব্রাহ্মসমাজ সংস্থাপন এবং হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠার (১৮১৭) মধ্যে দিয়ে নব জাগরণের সূচনা হয়েছিল বলে মনে করেন। বঙ্কিমচন্দ্র অবশ্য বাংলার রেনেঁসার ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করতেন।  তাঁর মতে যখন ‘দর্শনে রঘুনাথ শিরোমণি, গদাধর, জগদীশ,স্মৃতিতে রহুনন্দন এবং তৎপরগামীগণ ’ – সেই সময়টাই ছিল বাংলার আসল রেনেঁসা।  বিনয় ঘোষ মশাই অবশ্য উনিশ শতকের নবজাগরণের দাবীকে প্রায় নস্যাৎ করে দিয়ে বলেছেন – 'কেবল টাকার ধান্দা, টাকা সম্পর্কে মুনাফালোভী মনোভাব যদি typical early stage of capitalism হয় (অবশ্য এটা capitalist mentality নিশ্চয়) তাহলে বাংলাদেশে ঊনিশ শতকে নিশ্চয় তার বিকাশ হয়েছিল বলতে হয়, এবং সেটা যে রেনেসাঁসের যুগের একটা ঐতিহাসিক লক্ষণ তাও অস্বীকার করা যায় না।  কিন্তু আমরা জানি প্রকৃত ‘রেনেসাঁস’ তা নয়। '

তবে এই সব তর্কের মধ্যে না ঢুকে এটা বলা যেতেই পারে এই উনিশ শতকের প্রথম এবং মধ্য ভাগে যে বঙ্গসংস্কৃতিতে যে একটা সার্বিক জোয়ার এসেছিল তাতে সন্দেহ নেই।  সাধারণ ভাবে এই বিষয়ে অনেকেই সহমত হন যে এই সময়ে বাংলায় একটা সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ এসেছিল।  ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় জীবন ও বিশ্বাসের নানা বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠে এবং প্রশ্ন তুলতে শেখে।  এই প্রশ্ন করতে শেখার দৃষ্টিভঙ্গি বাংলার তৎকালীন জীবনধারাকে খানিকটা হলেও পালটে দিয়েছিল।  ঠিক এই সময়ে যেমন কয়েকজন অনন্যসাধারণ বাঙ্গালি বাংলা সংস্কৃতিকে নূতন দিশা দেখিয়েছেন, ঋদ্ধ করেছেন সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারাকে, তেমনি কিছু বিদেশি এ দেশে এসে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির জন্যে অতি প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজ করেছিলেন।  যা অবশ্যই আমাদের নবজাগরণকে সার্থক রূপ দেওয়ার কাজে লেগেছিল।  

এই নিবন্ধে এই রকম কিছু বিদেশীর সদর্থক উদ্যোগকে স্মরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।  

১৫৫০ সালে পর্তুগীজরা এ দেশে প্রথম ছাপাখানা শুরু করেন।  ১৬৬৪ সালে ইংরেজরা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।  ওঁরা অবশ্য এ কাজ করেছিলেন তাঁদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারের তাগিদে।  
জেমস অগাস্টাস হিকি নামের এক খেপাটে আইরিশ ভদ্রলোককে এ দেশে এসে দেনায় দায়ে দু বছর হাজতবাস করতে হয়েছিল।  বদমেজাজী হিকি জেল থেকে বেরিয়ে আবার একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস এর সাথে।  হেস্টিংস সাহেব মামলা করে দেন তার বিরুদ্ধে লেখার অভিযোগে। সে মামলায় হিকির আবার জেলে যাবার উপক্রম হলে হিকি ব্যারিস্টার উইলিয়াম হিকির কাছে কাতর আবেদন করেন তার হয়ে কোর্টে দাঁড়াবার জন্যে।  ব্যারিস্টার হিকি তাঁর হয়ে লড়ে তাঁকে জেল যাওয়া থেকে বাঁচান।  দু বছর জেলে কাটাবার সময়ে জেমস হিকি ছাপাখানা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে ফেলেন।  জেলখানা থেকে বেরিয়ে তাঁর সখ হয় কোলকাতায় একটা ছাপাখানা খুলে সেখান থেকে একটা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করা যে কাজটা তখন পর্যন্ত কেউ করেন নি।  কোলকাতায় তখন অবধি কোনো ছাপাখানা ছিল না।  ১৭৮০ সালের ২০ জানুয়ারী, শনিবার, কলকাতা থেকে ছেপে বেরোল জেমস হিকির সাপ্তাহিক সংবাদপত্র, "বেঙ্গল গেজেট" যার দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি আর প্রস্থ আট ইঞ্চি।  দুপাতার এই পত্রিকাটির প্রতিটি পাতায় ছিল তিনটি করে কলাম যার বেশীর ভাগ-ই ছিল বিজ্ঞাপন আর ফাঁকফোকরে থাকতো কলকাতা আর মফস্বলের চিঠিপত্র।  আর হিকির তাঁর নিজস্ব কলমে লিখতেন নানা রকমের ব্যঙ্গাত্মক রচনা।  সে সময়ের গণ্যমান্যদের নিয়ে তিনি স্যাটায়ার লিখতে ভালোবাসতেন।  জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস-এর পরিবার সম্বন্ধে আপত্তিকর সংবাদ পরিবেশন করায় দু'বছরের মধ্যেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।  



জেমস হিকির সাপ্তাহিক সংবাদপত্র, "বেঙ্গল গেজেট"


'সমাচার দর্পণ' পত্রের প্রথম সংখ্যার প্রথম পাতার প্রতিলিপি

ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত বেঙ্গল গেজেট বন্ধ হয়ে গেল ঠিকই।  কিন্তু এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে 'দিগ্দর্শন' নামে বাংলা অক্ষরে মুদ্রিত বাংলা ভাষায় প্রথম মাসিক পত্রিকা।  শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন থেকে জন ক্লার্ক মার্শম্যান এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন।  এর ঠিক পরে ঐ বছরেই ২৩শে মে মার্শম্যানেরই সম্পাদনায় মিশন থেকে প্রকাশ লাভ করে বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র ( সাপ্তাহিক ) 'সমাচার দর্পণ'।  বাংলা সংবাদপত্রের যাত্রা এখান থেকেই শুরু হল। যদিও সমাচার দর্পণ পত্রিকাটি মাত্র দেড় বছর চলে তারপর সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।  তবু এই প্রচেষ্টাটি বাংলা ভাষার ইতিহাসে চিরকালীন জায়গা করে নিয়েছে।  

***

ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড ইংল্যান্ডের এক সম্পন্ন পরিবারের সন্তান।  ভাষা এবং সাহিত্যে তাঁর খুব কম বয়স থেকেই বিশেষ আগ্রহ ছিল।  তাঁর ভারতে আসাটা নেহাতই এক ব্যাক্তিগত প্রেম ঘটিত কারণে।  একটি ত্রিভুজ প্রেমে জড়িয়ে পরে শেষ পর্যন্ত পিতার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে যায়।  তিনি সে সময় ভগ্ন হৃদয়ে হয়ত শান্তির সন্ধানেই চলে আসেন ভারতে।  সেটা ১৭৭২ সাল।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী জমিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেছে এ দেশে।  ওয়ারেন হেস্টিংস তখন গভর্নর হয়ে ভারতে ইংরেজদের ব্যবসা দেখছেন, এবং বণিকের মানদণ্ডকে রাজদণ্ডতে পরিণত করার পরিকল্পনা করছেন।  হ্যালহেড এবং হেস্টিংস দুজনেরই শরীরে নীল রক্ত এবং ইংল্যান্ডের পাব্লিক স্কুলের প্রোডাক্ট হওয়ার সুবাদে দুজনে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল।  দু জনেরই প্রাচ্যবিদ্যাতেও আগ্রহ ছিল।  হেস্টিংস হ্যালহেডকে প্রথমে দায়িত্ব দেন একটি হিন্দু আইন শাস্ত্রের বইয়ের ইংরাজী অনুবাদ করার।  তিনি তা সাফল্যের সঙ্গে করে ফেলেন।  এর পরে হেস্টিংস হ্যালহেডকে অনুরোধ করেন বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করার জন্যে।  প্রচুর খাটাখাটনি করে ১৭৭৮ সালে হ্যালহেড লিখে ফেলেন A Grammar of The Bengal Language।  তিনি এই বইটি যতটা বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে লেখেন তার চেয়ে বেশি লেখেন ইংরেজদের এ দেশে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করা সুবিধা মাথায় রেখে।  তবুও এই কাজটি নিঃসন্দেহে বাঙ্গালির জন্যে অতি প্রয়োজনীয় কাজ।  কারণ এর আগে বাংলা ভাষায় কোনো ব্যাকরণ ছিল না।  

অবশ্য বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত ব্যাকরণ ভোকাবুলারিও পর্তুগিজ ভাষায় রচিত ১৭৪৩ সালে।  কিন্তু হ্যালহেডের ব্যাকরণ ইংরেজিতে রচিত হয়েছিল এবং এতে বাংলায় প্রচুর উদাহরণ, উদ্ধৃতি ইত্যাদি দেওয়া হয়েছিল।  হ্যালহেড সম্বন্ধে একটি অভিযোগ আছে তিনি ভাল করে বাংলা ভাষা না জেনেই বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন।  সেটা হয়তো প্রয়োজনের তাগিদে।  তাই তাঁর এই প্রচেষ্টা পরবর্তী কালের বাংলা রচনাকারদের জন্যে ততটা কাজে লাগেনি।  তবু এর ঐতিহাসিক মূল্য কম নয় এবং বাংলা ভাষার আদি বৈয়াকরণ হিসেবে তাঁর নাম ইতিহাসে থেকেই যাবে।  

***

উইলিয়াম কেরি ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের জর্জ রাইল্যান্ডের কাছে ব্যাপটিস্ট হিসেবে দীক্ষিত হন এবং ধর্মযাজকের পেশা গ্রহণ করেন।  এর বছর দশেক পরে চিকিৎসক ও ধর্মপ্রচারক টমাস জোনসের সাথে উইলিয়ম কেরি সপরিবারে ভারতের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন।  কেরি সাহেব নিজের পেশা সম্বন্ধে এতটাই নিষ্ঠাবান ছিলেন যে ভারতে আসার সময়ে জাহাজে বসেই তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন।  ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর তাঁরা কলকাতা পৌঁছেন।  কলকাতায় পৌঁছে তিনি পরিবেশ ও স্থানীয় জনজীবন সম্পর্কে অবগত হবার জন্য বান্ডেল, নদীয়া, মানিকতলা ও সুন্দরবনসহ বঙ্গদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ান।  এরপর তিনি রামরাম বসুর নিকট বাংলা শিখতে শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে বাংলা ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন।  একই সাথে তিনি রামরাম বসুকে মুন্সি নিয়োগ করে তার সহায়তায় বাইবেলকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজ শুরু করে দেন।  

উইলিয়াম কেরি

১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি মালদহের মদনবাটি নীলকুঠিতে তত্ত্বাবধায়ক অফিসারের কাজ নেন।  সেখানে তিনি প্রজাদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।  যেসব ইংরেজরা এ দেশে এসে নানারকমের চাকরী করতে থাকেন তারা বাংলা ভাষা না জানায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে খুব অসুবিধা হত।  তাদের সুবিধার্থে তিনি বাংলা ভাষায় একটি শব্দকোষ প্রণয়ন করেন।  ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে কয়েকজন মিশনারির দল শ্রীরামপুরে আসেন একটি ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপনা করারা জন্য।  কেরি সাহেব তাদের সঙ্গে যোগ দেন।  ১৮০০ সালের জানুয়ারি মাসে এই মিশনের প্রতিষ্ঠা হয়।  এই মিশনে একটি প্রেসও স্থাপিত হয়।  এখান থেকে উইলিয়াম কেরি পঞ্চানন কর্মকার নামের এক ব্যাক্তির সহায়তায় বাইবেলের অংশ বিশেষ অনুবাদ করে ‘ম্যাথু লিখিত সুসমাচার’ এর প্রথম পত্র বাংলায় মুদ্রণ করেন।  ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে উইলিয়াম কেরির প্রচেষ্টায় প্রথম গদ্যগ্রন্থ ‘মথী রচিত মিশন সমাচার’ মুদ্রিত হয়।  

এর কিছুদিন পরে কোলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রধানত রাজ কর্মচারীদের বাংলা শেখাবার জন্যে এই কলেজে বাংলা বিভাগ খোলা হয়।  এই সময় বাংলা এবং সংস্কৃত দুই বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেরি সাহেবকে।  তাঁর অধীনে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ও রামনাথ বাচস্পতি নামক দুজনকে পণ্ডিত এবং শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়, আনন্দ চন্দ্র, রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়, কাশীনাথ, পদ্মলোচন চূড়ামণি ও রামরাম বসু, যিনি তাঁর মুন্সী ছিলেন, এঁদের ছয়জনকে সহকারী পণ্ডিত নিযুক্ত করা হয়।

এখান থেকেই কেরি সাহেব ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে ‘বাংলা ব্যাকরণ’ ও বাংলা গদ্যে ‘কথোপকথন’ গ্রন্থ প্রকাশ করেন।  ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।  উইলিয়াম কেরি যে শুধু মাত্র ইংরেজ কর্মচারীদের জন্যে এই বইগুলি লিখেছিলেন তা নয় বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর যে মমত্ববোধ জন্মে গেছলো বলে মনে হয়।  তাই বাঙ্গালিদের কাছে তাঁর বইগুলির ঐতিহাসিক মূল্য কোনোদিন কম হবে না।  ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন শ্রীরামপুরে উইলিয়াম কেরির মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বাংলা ভাষার উন্নতির জন্যে নানা রকমের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।  

***

সন ১৭৯৫ – কলকাতা পত্তনের বয়স তখন মাত্র ১০০ বছর হয়েছে। অজ পাড়াগাঁ থেকে একটু একটু করে কলিকাতায় নগরায়ন সবে শুরু হয়েছে। তখনো বিদ্যুতের আলো আসেনি, রাস্তা ঘাট মাটির, ছাপার যন্ত্রও আসেনি।  কিন্তু, সেই সময় বাংলা থিয়েটার এসে পড়েছিল এক বিদেশীর হাত ধরে। তাঁর নাম গেরেসিম স্তিফানোভিচ লেবেডফ।  অবশ্য ইংরেজরা তার আগেই তাদের নিজেদের বিনোদনের জন্য তৈরি করেছিল ‘চৌরঙ্গী থিয়েটার’।  কিন্তু বাংলা ভাষায় নাটক লেখা বা অভিনয় হয় না।  কারণ বাংলা নাটক তো দূরের কথা লিখিত বাংলা গদ্যের তখনও প্রচলন হয়নি !

সুদূর রাশিয়া থেকে আসা এই রুশ যুবক গেরেসিম লেবেডফ এ দেশে শুধু বেড়াতে অথবা ভাগ্যান্বেষণে এসে পড়েছিলেন।  তিনি এ দেশে থাকতে থাকতে বাংলাভাষার প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। সম্ভবত তাঁর নাটক অভিনয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল।  একটি ইংরাজি নাটক ‘দি ডিসগাইস’ বাংলায় অনুবাদ করে বাঙালি অভিনেতা অভিনেত্রীদের দিয়ে মঞ্চস্থ করার মত দুরূহ কাজটি তিনি করে উঠেছিলেন।

লেবেডফের ভাষা-শিক্ষক গোলকনাথ দাস কলকাতার বারাঙ্গনা পল্লী থেকে অভিনেত্রী সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন।  লেবেডফের থিয়েটার সম্পর্কে আর বেশি কিছু জানা যায় না।  কারা ছিলেন প্রথম বাংলা নাট্যাভিনয়ের অভিনেতা-অভিনেত্রী? কোনো ঐতিহাসিক তা তা লিপিবদ্ধ করেননি।  জানা যায় লেবেডফের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ইংরাজরা তার থিয়েটারে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দেয়, আইনের জালে জড়িয়ে দেউলিয়া করে তাকে ভারত থেকে বহিষ্কার করে।  কিন্ত তবু ইতিহাসকে মুছে দিতে পারেনি তারা।  

কেমন ছিল বাঙালির সেই প্রথম অভিনয় সে সম্বন্ধে আজ আর জানার কোন উপায় নেই।  তবে আমরা জানতে পারি যে, সর্বস্বান্ত হয়ে ভারত থেকে বিতাড়িত হবার পর বন্ধু সাম্বারাস্কিকে একটা চিঠিতে লেবেডফ লিখেছিলেন “আমার বহুবিধ পরিশ্রমের মধ্যেও আমি নিরুৎসাহী ভণ্ড ও বন্য প্রকৃতির বাঙালিদের হাস্যরসাত্মক অভিনয় শিক্ষার আয়োজন করিয়াছিলাম। ... দর্শকবৃন্দ অকপটভাবে ইহাতে পরিতৃপ্তি পাইয়াছিল...”।

৩৮ বছর অবধি বাংলা নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায় না। আমরা জানতে পারি ১৮৩৫এর ৬ই অক্টোবর শ্যামবাজারের জমিদার নবীনচন্দ্র বসুর বাড়িতে ‘বিদ্যাসুন্দর’ নাট্যাভিনয় আয়োজিত হয়।  নবীনচন্দ্র লেবেডফের মতই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে বারাঙ্গনা পল্লী থেকে নারী চরিত্রের অভিনেত্রী সংগ্রহ করেছিলেন।  বারাঙ্গনা মেয়েদের নাট্যাভিনয়ে সুযোগ দেওয়ায় তখনকার রক্ষণশীল সমাজে নিন্দামন্দের ঝড় উঠলো, প্রবল আক্রমণাত্মক সমালোচনায় বিদ্ধ হলেন বাবু নবীনচন্দ্র।  কিন্তু এর মধ্যে দিয়েই বাংলা নাটকের যাত্রা শুরু হল।  

রাশিয়া থেকে আসা এই যুবক গেরেসিম লেবেডফ আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেলেন যে বাংলা নাটকের পিতৃপুরুষ বলতে তাঁর নামটাই চিরকালের জন্যে লেখা হয়ে গেল।  

***

ইংরেজরা এদেশে এদেশে ব্যবসা করতে এসে দেশটাকেই দখল করে নিল এতো আমাদের জানা।  সেই সঙ্গে তাদের আর একটা কাজও তারা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে করতে লেগেছিল সেটা হল ধর্মান্তকরণ।  এই কাজে তারা দেশ থেকে নিয়ে আসতে লাগলো মিশনারিদের।  সেই কাজেই উনিশ শতকে এই মিশনারিদের দলে একজন ছিলেন রেভারেন্ড জেমস লং।  জেমস লং ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।  তিনি পড়াশনা করেছিলেন চার্চ মিশনারি সোসাইটির লন্ডনস্থ আইলিংটন কলেজে।  ১৮৩৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের গির্জার ‘ডিকন’ এবং পরের বছরই যাজক পদে অভিষিক্ত হন।  লং ১৮৩৯ সালে যাজকরূপে কলকাতায় আসেন।  কলকাতার দক্ষিণে ঠাকুরপুকুর গ্রাম ছিল তাঁর কাজের জায়গা। ১৮৫০ সালে সেখানে তিনি একটি প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করেন। বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের রীতি তিনি শুধু গ্রহণই করেন নি,মাতৃভাষাই শিক্ষার এই মতের তিনি গোঁড়া সমর্থক ছিলেন।  বাংলা ভাষায় লাইব্রেরি গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন।  এই সময় তিনি মাঝে মাঝে বাংলায় প্রবন্ধ লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করতেন।  যে সব লেখা আসতো তিনি সে সব খুব খুঁটিয়ে পড়তেন। যে সব প্রবন্ধ পছন্দ হত সেগুলি নিজের উদ্যোগে ছেপে প্রচারের ব্যাবস্থা করতেন। সেই সঙ্গে চালিয়ে যেতেন বাংলা ভাষা নিয়ে নানা রকমের গবেষণা।  ১৮৫২ সালে তিনি তখন পর্যন্ত প্রকাশিত বাংলা বইয়ের একটি তালিকা বার করেন গ্রন্থাবলী নাম দিয়ে।  এখানে তিনি ১০৪৬ টি বাংলা বইয়ের উল্লেখ করেন।  পরে আরো নির্দিষ্ট ভাবে ১৮৫২ থেকে ১৮৬৭ সময়কালে প্রকাশিত বইয়ের সাতটি আলাদা তালিকা প্রস্তুত করেন। আজও উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাদের কাছে এই তালিকার মূল্য অপরিসীম।

বাংলা বই এর তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন এ দেশে অশ্লীল বইএর একটি রমরমা বাজার চালু আছে। তিনি বুঝতে পারেন এই নোংরামো বন্ধ না করতে পারলে সুস্থ সাহিত্য মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।  প্রধানত তাঁরই উদ্যোগে বাংলা অশ্লীল এবং আদি রসাত্মক লেখা বই ছাপানো আটকানোর জন্যে সরকারকে দিয়ে ১৮৫৬ সালে একটি আইন প্রণয়ন হয়।  

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জেমস লং বাংলা প্রবাদ সংগ্রহে মন দেন। নবীন চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় আর রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় মুখে মুখে প্রচলিত প্রবাদ সযত্নে সংগ্রহ করে তা তিন খন্ডে প্রকাশিত করেন। যা বাংলা প্রবাদের উপর আজও একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ।  বাংলা সমাজবিজ্ঞানের চর্চায়ও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন।  ১৮৫৭ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজের ছাত্রদের দ্বারা যে ফ্যামিলি লিটারারি ক্লাবের শুরু হয় তাতে লং এর বিশেষ ভূমিকা ছিল। সে সময়ের বাংলা সাহিত্যের প্রতি তিনি প্রবল শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।  মধুসূদন দত্ত, টেকচাঁদ ঠাকুর, কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখার তিনি বিশেষ ভক্ত ছিলেন।  নীলচাষীদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন।  ১৮৬১ সালে নীলদর্পণ নাটকটি অনুবাদের অপরাধে তাঁর জেল ও জরিমানা হয়। এই জরিমানার টাকা মিটিয়ে দেন কালীপ্রসন্ন সিংহ মশাই।  বাঙ্গালি সমাজের কাছে তিনি এতটাই কাছের লোক হয়ে উঠেছিলেন যে তাঁর এই শাস্তি পাওয়াতে সমাজে শোকের ছায়া নেমে আসে।  

***

১৭৭৫ সালে ডেভিড হেয়ারের জন্ম স্কটল্যান্ডে।  ঘড়ি তৈরি করা ছিল হেয়ারের পরিবারের ব্যবসা।  ১৮০০ সালে ২৫ বছরের যুবক ডেভিড হেয়ার কোলকাতায় আসেন জীবিকার সন্ধানে। এ দেশে এসে সেই ঘড়ির ব্যবসাই আরম্ভ করেন।  ব্যবসা জমিয়ে ফেললেন।  টাকা পয়সাও করলেন।  তবে সেই সঙ্গে এই বাংলাকেও ভালোবেসে ফেললেন।  ধুতি পাঞ্জাবি পরা শিখলেন, দেশি খাবার খাওয়া শিখলেন।  এ সময় তাঁর মনে হয়েছিল বাঙ্গালিকে আর একটু সভ্য করতে হলে চাই শিক্ষার প্রসার।  কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন হিন্দু কালেজ।  ১৮৫৫ সালে হিন্দু কালেজের নাম হয় প্রেসিডেন্সি কলেজ। প্রেসিডেন্সি কলেজ শুধু কলেজই নয় হয়ে উঠলো মুক্ত চিন্তার আঁতুড় ঘর।  এই সময়টাতেই রামমোহন রায় নেমেছেন তাঁর সমাজ সংস্কারের কাজে।  তাঁর সঙ্গে হেয়ারের গড়ে উঠলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।  সে সময়ে বৃটিশ সরকারের কিছু আইন ছিল যা ছিল নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং উৎপীড়নমূলক।  বঙ্গবাসীর স্বার্থে এই সব কলোনিয়াল আইনগুলির সংস্কারের জন্যে ব্যাপক প্রচার আরম্ভ করেন।  ১৮৪০ সালে তাঁকে কলকাতার শেরিফ নিযুক্ত করা হয়।  ১৮৪২ সালে তিনি কলেরায় মারা যান।  

***

উৎপল দত্ত ডিরোজিও কে নিয়ে একটি নাটক লিখেছিলেন, তার নাম দিয়েছিলেন ‘ঝড়’।  সেই সময়ের কুসংসারচ্ছন্ন স্থবির সমাজটাকে নাড়া দিতে সত্যিই এক প্রবল ঝড় তুলেছিলেন তিনি।  জন্মসূত্রে বাঙালি না হলেও বাঙালি সমাজ সংস্কৃতির সঙ্গে মনে প্রাণে জড়িয়ে ছিলেন তিনি।  চেয়েছিলেন বাংলার বহু যুগের কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে।  সেকেলে রক্ষণশীল বাঙালি ব্যঙ্গ করে তাঁর নাম দিয়েছিল ‘দ্রজু ফিরিঙ্গি’। ডিরোজিও কে অবশ্য খাঁটি ইউরোপিয়ান বলা যায় না।  হেনরির জন্ম ১৮০৯-এর ১৮ এপ্রিল কলকাতার মৌলালি অঞ্চলে এক ইউরেশীয় পরিবারে।  সে সময় ইংরেজরা ইউরেশীয়দের খুব সম্মানের চোখে দেখতো না।  বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিল তাদের ঘিরে। এমনকি সরকারি স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ মিলত না এই সম্প্রদায়ের মানুষের।  অসাধারণ মেধা সম্পন্ন ডিরোজিওকে মাত্র ১৪ বছর বয়সে শিক্ষা জীবন শেষ করে উচ্চতর বিদ্যার্জনে না গিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়।  

১৮২৬ সালে তিনি কলকাতায় দু’টি চাকরি পেয়েছিলেন।  প্রথমটি ‘দ্য ইন্ডিয়া গ্যাজেটে’-এর সহ সম্পাদক হিসেবে, দ্বিতীয়টি হিন্দু কলেজে শিক্ষকতার।  কারও কারও মতে তিনি দুটি চাকরি এক সঙ্গে কিছুদিন করেছিলেন।  ডিরোজিও যে সময় হিন্দু কলেজে যোগদান করেন সেই সময়টা ছিল কলেজের সমৃদ্ধিও সচ্ছলতার সময়।  তাঁর পাণ্ডিত্য ও মেধার জন্যই কলেজের খ্যাতি ও গৌরব বেড়েছিল।  সাংবাদিক রূপেও ডিরোজিওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।  

ডিরোজিও

সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছিল পাশ্চাত্য ভাবধারার সঙ্গে হিন্দু রক্ষণশীলতার বিরোধ।  একজন ইয়োরেশীয়ান হওয়ার ফলে ভারতীয় হয়েও তিনি রক্ষণশীল হিন্দুর কাছে বিধর্মী ছিলেন অন্য দিকে খ্রিস্টান হয়েও জন্য শাসকগোষ্ঠীর সাহায্য পাননি।  কিন্তু তিনি দমে যাননি।

প্যারীচাঁদ মিত্র ও ডেভিড হেয়ারের লেখাতে উল্লেখ মেলে যে, ক্লাসে ডিরোজিও ছকে বাঁধা পাঠক্রমের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকতেন না।  তিনি ছাত্রদের বিতর্কসভা ও পত্রিকা পরিচালনায় উৎসাহ দিতেন।  

মাত্র সতেরো বছর বয়সে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন বলে ডিরোজিওর ছাত্রদের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান ছিল খুব কম।  কেউ কেউ ছিলেন তাঁর সমবয়সী।  তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রাধানাথ শিকদার, রামতনু লাহিড়ী, শিবচন্দ্র দেব, দিগম্বর মিত্র, গোবিন্দচন্দ্র বসাক।  তেমনই হরচন্দ্র ঘোষ, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রসিককৃষ্ণ মল্লিক ছিলেন তাঁর ভাবশিষ্য।  আমরা জানি এঁদের মধ্যে অনেকেই বাংলার নবজাগরণ আন্দোলনের পুরোধা হয়ে উঠেছিলেন।  পরে হিন্দু কলেজে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিলেও থেমে যায়নি তার জীবন সংগ্রাম।  এ সবের মাঝেই চলতে লাগলো ‘ইস্ট ইন্ডিয়া’ পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।  থেমে যায়নি ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখালেখি।  ১৮৩১-এর ২৬ ডিসেম্বর কলেরা রোগে ডিরোজিওর মৃত্যু হয়।  সাউথ পার্কস্ট্রিট সিমেট্রিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

***

বাংলার নবজাগরণ এই সাতজন বিদেশীদের উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব ছিল না এটা একেবারেই বলা যাবেনা।  তবে তাঁরা যে কাজগুলি করেছিলেন তাকে বেঙ্গল রেনেঁসার প্রদীপদানিটিতে আগুন জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর মত প্রয়োজনীয় কাজ অবশ্যই বলা যেতে পারে।  

ইংরেজদের বঙ্গদেশে জমিয়ে বসার পরে যে শিক্ষিত বাঙালিদের মনে একটা পরিবর্তনের উন্মেষ হয়, বাঙ্গালির মধ্যে যে আত্মসচেতনা, আত্মমর্যাদাবোধ ও স্বাতন্ত্র্যবোধ জাগ্রত হওয়ার শুরু হয়।  তার প্রভাবেই শেষ পর্যন্ত এ দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রাথমিক ভিত রচিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত বাঙালিকে তথা ভারতীয়দের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দেয়।  

অন্যদিকে এই সময়ে প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা-সংস্কৃতি, সাহিত্য, সামাজিক রীতি-নীতি ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের চিন্তার বিপ্লব সূচিত হয়।  এ ভাবেই বাংলায় ‘রেনেসাঁ’ বা নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটে।  

 


লেখক পরিচিতি - চাকুরী জীবন বেসরকারি এবং আধা সরকারি কর্পোরেট জগতের বিভিন্ন পদে। এখন অবসরপ্রাপ্ত। লেখেন নেহাতই মনের খিদে মেটাতে। লেখেন নানান বিষয় নিয়ে। তবে যাই লেখেন বিষয় নির্বাচনে কিছু অভিনবত্ব থাকে। গান , চলচ্চিত্র, ভ্রমণ, দিন বদলের ছবি, বাঙ্গালিয়ানা এ রকম আরও অনেক বিষয় এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। তথ্যকে কৌতুকের মোড়কে এবং ভাবনা কে স্বচ্ছতার আবরণে পরিবেশন করতে চেষ্টা করেন। বিষয় যাই হোক ভাষা সব সময়েই ঝরঝরে, রসস্নিগ্ধ এবং মনোগ্রাহী। বেশ কয়েকটি ওয়েব পত্রিকাতে লেখেন। দেশ বিদেশে অনেক গুণগ্রাহী পাঠক আছেন।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।