প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভ্রমণ কাহিনী

ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬

 

নৈনিতাল এবং...

সুবীর বোস


যতবার “নৈনিতাল” যাবার কথা ভেবেছি– “বাঘ এক্সপ্রেস”এ এসে থেমে গেছি। দুনিয়া ঘুরে, দু-রাত ট্রেনে কাটিয়ে আমার পক্ষে কোত্থাও যাওয়া সম্ভব না। একবার ভাবলাম প্লেনে দিল্লী গিয়ে সেখান থেকে ট্রেন ধরে কাঠগুদাম, অথবা “রাজধানী” ধরে দিল্লী– এবং ফের নিউ দিল্লী থেকে ভোর ছ’টায় দিল্লী-কাঠগুদাম শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরে সাড়ে পাঁচ ঘন্টায় কাঠগুদাম পৌঁছে যাব। কিন্তু কোনও প্ল্যানই ঠিকঠাক এগোচ্ছিল না। “ধুর ছাই– পরে দেখা যাবে” বলে ব্যাপারটা থেকে মুক্তি পাবার মুখেই টের পেলাম এক সহকর্মী ক’দিন আগেই নৈনিতাল ঘুরে এসেছে। ধরা হল তাকে। তার মুখেই প্রথম শুনলাম “লাল কুঁয়া এক্সপ্রেস”এর নাম।

লাল কুঁয়া এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন (শুক্রবার) সকাল ৮-১৫ নাগাদ হাওড়া থেকে ছেড়ে পরদিন সকাল ৮-৪৫ নাগাদ পৌঁছে যায় লাল কুঁয়া। তার মানে কাঠগুদাম পৌঁছতে মাঝে কেবল হলদিয়ানি স্টেশন। মনটা ভালো হয়ে গেল যখন শুনলাম ওই ট্রেন ফের শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ ছেড়ে হাওড়া পৌঁছায় পরদিন সন্ধ্যায়। লেগে পড়লাম টিকিট কাটা আর হোটেল বুকিংয়ের কাজে।

এক শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে উঠে পড়া গেল লাল কুঁয়া এক্সপ্রেসে। সেদিন ছিল হোলি (দোলের পরদিন)। খুব ছিমছাম ট্রেন এই লাল কুঁয়া এক্সপ্রেস। চলেও খুব ভালো। খুব কম স্টেশনে দাঁড়িয়ে, সবথেকে কম রাস্তা খরচ করে চব্বিশ ঘন্টা থেকে সামান্য বেশি সময় নিয়ে লাল কুঁয়া পৌঁছে দেয় এ ট্রেন। অসুবিধা একটাই– প্যান্ট্রি কার নেই। আর এই “নেই”টাই ভয়ানক অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের যাত্রায়।

পথে যেখান থেকে কিছু খাবার কিনে নেব ভেবেছিলাম সেই ধানবাদ স্টেশনে পৌঁছে দেখি প্রায় হকারবিহীন সে স্টেশনে মাত্র জনা বিশেক লোক স্টেশন আলো করে রেখেছে। হিন্দী বলয়ে “হোলি” কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এই ধানবাদ থেকেই টের পাওয়া শুরু করেছিলাম। কোনও রকমে দু’ প্যাকেট লুচি-তরকারি যোগাড় করতে পেরেছিলাম ধানবাদ স্টেশন থেকে। আশায় ছিলাম, মোগলসরাই অন্তত আমাদের বিমুখ করবে না। মোগলসরাই পৌঁছে দেখলাম– হ্যাঁ, এখানে লোক বেশি, ধানবাদ স্টেশনের থেকে জনা দশেক বেশি। এখানে রাতের খাবার কিনে রাখতে গিয়ে “আমার ট্রেন” আরেকটু হলে আমাকে না নিয়েই চলে যাচ্ছিল। মোগলসরাই স্টেশনে “এগ-বিরিয়ানি” নামক যে বস্তুটা কিনলাম– তা আসলে বিশুদ্ধ ভাত আর ডিমের ঝোল। মাইরি বলছি, সেই তথাকথিত এগ-বিরিয়ানি সে রাতে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বেনারস পৌঁছেও সেই একই অবস্থা। স্টেশনে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। দূর থেকে আলো জ্বলা বেনারসের ঘাট দেখতে দেখতে কেউ কেউ বলছিল, ওই তো দশাশ্বমেধ ঘাট। বেনারসে ট্রেন দাঁড়ায় প্রায় মিনিট পঁচিশেক। বাইরে উঁকি মেরে যতটা পারি “দশাশ্বমেধ” বুঝে নিতে নিতে ট্রেন ছেড়ে দিল।

পরদিন ঠিক ৮-৪০এ ট্রেন আমাদের লাল কুঁয়া নামিয়ে দিল। স্টেশনে নামা মাত্র সবাই দেখি আমাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে আমার “উনি”কে “বৌদি এদিকে, বৌদি এদিকে” বলে হাঁক পাড়ছে। তো তেমনি এক “দেওর”কে আমাদের পছন্দ হয়ে গেল। ছেলেটির নাম সুনীল কুমার। খুবই কম দরাদরি করে সুনীলের সঙ্গে রফা হল ৭০০ টাকায় সে আমাদের নৈনিতাল পৌঁছে দেবে। মার্চ মাস। অফ সীজন। ফলে সব কিছুতেই বেশ কিছুটা ছাড় পাচ্ছিলাম। সুনীল আমাদের “অত ঘুরে লাভ নেই” বলে দাঁড়িয়ে থাকা এক ট্রেনের পেটের ভিতর দিয়ে নিয়ে মিনিট খানেকের মধ্যেই রাস্তায় এনে ফেলল। গাড়িতে উঠেই ও এই “প্রায়” সিনিয়র সিটিজেনের ভালো লাগবে ধরে নিয়ে পুরোনো বেশ কিছু হিন্দী গান বাজাতে শুরু করল। মিথ্যে বলব না– পাহাড়ী রাস্তার বাঁকগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে গানগুলো শুনতে ভালোই লাগছিল।

পথে চা খেতে হবে বলে এক পাহাড়ি ধাবার সামনে থামলাম আমরা। এখানে চা আর পকোড়া খেতে খেতে সুনীলের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হল যে ও দিন প্রতি আমাদের থেকে ১,৫০০ টাকা করে নেবে আমাদের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। ওই যে বললাম, অফ সীজন! তা না হলে দিনপ্রতি আমাদের অন্তত ১,৮০০ টাকা করে গুনতে হত।



নৈনিতাল

নৈনিতালে মল রোডে ঢোকার মুখে আমাদের দিতে হল আরও পঞ্চাশ টাকা। হ্যাঁ, ওই রাস্তায় আপনি যতবার গাড়ি নিয়ে ঢুকবেন– দিতে হবে পঞ্চাশ টাকা। হেঁটে ঢুকলে বা রিক্সায় চেপে ঢুকলে কোনও পয়সা-কড়ির ব্যাপার নেই। আমাদের হোটেল মল রোডেই। নাম চান্নি রাজা। আগেই অন লাইন বুকিং ছিল। প্রায় হাফ দামে (২,৫০০/-) সুপার ডিল্যাক্স রুম পেয়েছিলাম। সমগ্র উত্তরাখণ্ডে কুমায়ুন মণ্ডলম বিকাশ নিগম (কে.এম.ভি.এন.)এর বেশ কিছু ভালো হোটেল আছে। নৈনিতালেও আছে। কিন্তু সে হোটেলের সব থেকে ভালো ঘরটাতে পৌঁছাতেও সত্তরটা মতো সিঁড়ি পেরতে হবে। হোটেল চান্নি রাজাই নৈনিতালের একমাত্র হোটেল যেটা প্যারালাল টু দ্য রোড। আপনাকে একটি সিঁড়িও বাড়তি খরচা করতে হবে না। আর লোকেশন– যাকে বলে ব্যাং অন মল রোড। হোটেলের বারান্দা থেকে দেখলাম সামনের রাস্তা পেরলেই নৈনিতালের বিখ্যাত নয়না দেবীর মন্দির, তিব্বতি বাজার। ডান দিকে চোখ ফেরালে রিক্সা স্ট্যান্ড, রোপ ওয়ে। মানে হাত বাড়ালেই বন্ধু।



রাতের নৈনিতাল

বন্ধু আরও ছিল– আছে। আমাদের হোটের প্রায় গা ঘেঁষেই আছে শ্রী মজুমদারের হোটেল। স্থানীয়দের কথায় অন্তত পঞ্চাশ বছর “পাপড় বেলে” মজুমদারবাবু আজ এখানে দারুণ এক থাকার এবং খাওয়ার হোটেলের মালিক। গেলাম ওঁর হোটেলে। খুব সাদামাটা হোটেল। কিন্তু খেতে বসে মনে হল বাড়িতে খাচ্ছি। খুবই কম দামে ভাত, ডাল, আলুভাজা, আলুপোস্ত, ডিমের অমলেট, মাছের ঝোল, মাংস সবই আমাদের জিভের সঙ্গে পরিচিত হবার পর মজুমদারবাবুকে বলে এসেছিলাম, আপনি মাইরি ভালো, খুব, খুব ভালো।



দিনের নৈনিতাল

নৈনিতালে সেদিনটা দুপুরের পর থেকে নয়না দেবীর মন্দির ঘুরে আর হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন – তিব্বতি মার্কেটে দরদাম করেই কেটে গেল। সৌজন্যে আমার “উনি”।

পরদিন সকালে সুনীল হাজির। উদ্দেশ্য স্থানীয় কিছু জায়গা মানে ভীম তাল...ইত্যাদি ভ্রমণ। এদিন ওই এক বেলার জন্য সুনীলকে দিতে হয়েছিল পাঁচশ’ টাকা। এদিন সুনীল অনেকগুলো জায়গার সঙ্গে একটা দারুণ জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। ম্যাঙ্গো শেপড লেক। পাহাড়ের উপর থেকে সে লেক সত্যি-সত্যিই মনে দাগ কেটে গেছিল। দুপুর পেরিয়ে হোটেলে ফেরার সময় সুনীল বলেছিল, মনে হচ্ছে আপনাদের কপাল ভালো। বরফের দেখা পেলেও পেতে পারেন। পেয়েছিলাম। হোটেলে ফিরেই টের পেলাম বাইরে হইচই। দৌড়ে জানালার কাছে এসে দেখলাম পেঁজা তুলোর মতো আকাশ থেকে নেমে আসছে “তারা”। “শীতের দাপট মানছি না, মানব না” বলে আমরাও এক দৌড়ে রাস্তায়। কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম আমার/আমাদের মাথা সাদা হয়ে গেছে। সাময়িক উত্তেজনা কমে গেলে বুঝতে পারছিলাম শীত ফিরে আসছে, প্রবল বেগে ফিরে আসছে।

পরের দিন কৌসানি। পথে রানিক্ষেতের বিখ্যাত গল্‌ফ গ্রাউন্ডের সঙ্গে দেখা হল। ফাঁকা মাঠে গোটা কয়েক ছবি তুলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি কৌসানির পথে যেতে যেতে শীত টের পাওয়া শুরু করলাম। কৌসানিতে হোটেল সান অ্যান্ড স্নোতে যখন পৌঁছলাম– তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবার পথে। হোটেলের খুব কাছেই গান্ধী অনাশক্তি আশ্রম। আশেপাশের হোটেলগুলোতে লোকজন প্রায় নেই। আমরা ওই বিকেলেই গান্ধী আশ্রমে ঢুঁ মেরে এলাম। জায়গাটা ফাঁকা বললে ভুল হবে। গোটা ত্রিশেক বাঁদরের দাপাদাপির পাশাপাশি আমরা তখন চারজন। আমি, আমার উনি, জনৈক চা-ওয়ালা ও তার বন্ধু। এখানেও চা শেষ করে পটাপট কিছু ছবি তুলে নেওয়া গেল। অন্ধকার নামার আগে আমরা শীতে কাঁপতে কাঁপতে ফের হোটেলের ঘরে।

এই হোটেলে আমাদের ঠিক পাশের ঘরে শুনেছিলাম এক নব-দম্পতি ঠাঁই নিয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন ওই দু-দিনে একবারের জন্যেও “উহাদের” সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি। সে যাক, দ্বিতীয় দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ দরজায় “ঠক-ঠক” শব্দ শুনে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতেই শুনলাম দরজার ওপাশ থেকে কেউ বলছে, স্যার, জানালা দিয়ে সান রাইজিংটা মিস করবেন না। মিস করিনি। এই হোটেলের প্রত্যেকটা জানালাই এমন ভাবে দাঁড় করানো আছে যে ডান পাশে তাকালে সূর্যোদয় আর তখনি বাঁ পাশে তাকালে পাহাড়ে জমে থাকা বরফে আলোর রিফ্লেকশন একটা অদ্ভুত মায়াবী বাতাবরণের সৃষ্টি করে। অমন স্বর্গীয় দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পেরে মনটা ভালো হয়ে গেছিল।



কৌসানি

হোটেল সান অ্যান্ড স্নোর বাইরে একটা ছোট বাগান আছে। ভীষণ সুন্দর সে জায়গা থেকে বিকেলে সূর্যাস্ত এবং আকাশের বলিরেখা দেখা যায়। হোটেল থেকে সামান্য এগোলেই বনের ভিতর একটা মন্দির আছে আর উল্টোদিকে কিছুটা পথ গেলেই একটা ছোট বাজার আছে। আমরা যতটা পেরেছি গায়ে শীত জড়িয়ে খুব, খুব উপভোগ করেছি কৌসানি। কৌসানি থেকে সকালে গাড়িতে ওঠার মুখে দেখলাম হোটেলের এক কর্মচারী একটানা মাথা নেড়ে যাচ্ছে আর উল্টোদিকে আমাদের ড্রাইভার সুনীল ওকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? সুনীল বলল, স্যার আমরা যে রাস্তায় যাব– ওর বাড়িও সে রাস্তায়। আমি বলছি উঠে পড় গাড়িতে– সাহেব কিছু মনে করবে না। তা, ও শুনছেই না। আমার প্রতি সুনীলের এই বিশ্বাস দেখে খুব ভালো লাগছিল। বললাম, চলে এস হে...।



আলমোড়া

এবারে গন্তব্য আলমোড়া। হোটেল শিবালিক। আলমোড়া বাজারের খুব কাছে এই হোটেল। আলমোড়া বাজার সত্যিই অসাধারণ। এখানে বাজারের ভিতরে দেখলাম এক বিরাট হাসপাতাল। দেখলাম বাজারের ভিতরে থাকা এ.টি.এ্ম. (প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাযুক্ত) আর দেখলাম এখানকার মানুষ-জনের ব্যবহার। আমার “উনি”, খুব স্বাভাবিক কলকাত্তাইয়া স্টাইলে দরদাম করছিলেন। দোকানদার একটুও উত্তেজিত না হয়ে হাসিমুখে বলে যাচ্ছিলেন, “জাগো, গ্রাহক জাগো”। এতে অবশ্যই গ্রাহক জেগেছিলেন এবং যা কিনেছিলেন সেগুলো নেবার জন্য আমাকে একটা ব্যাগ কিনতে হয়েছিল।

কলকাতায় আমার প্রতিবেশী গোবিন্দ সিং ভোরা আলমোড়ার লোক। তাঁকে ফোন লাগালাম, বললাম আলমোড়া ভালো লাগার কথা। ভোরা সাহেব বললেন, অবশ্যই চিতাই টেম্পল ঘুরে আসবেন। গেছিলাম। এই মন্দিরে গলু দেবতার অবস্থান। গলু দেবতাকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ বিচারক। সে জন্য এই মন্দিরের গায়ে হাজারে হাজারে কোর্ট পেপার ঝুলছে। মানে, ভক্তগণ রীতিমতো লিখিত অভিযোগ করেছেন দেবতার কাছে এবং হলফনামা জমা দিয়ে বলেছেন যে তাঁর/তাঁদের ইচ্ছে পূরণ হলে তিনি প্রতিদানে মন্দিরের গায়ে বড় ঘন্টা ঝুলিয়ে দেবেন। ফলে এই মন্দিরে ঢোকার মুখ থেকেই প্রচুর ঘন্টা ঝুলছে দেখা যায়। আর আছে প্রচুর বাঁদর। ভগবানের জন্য কেনা ডালি শাড়ির আঁচল বা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে না নিয়ে গেলে “ওগুলো” ভগবানের আগেই ওই বাঁদরকুলের ব্যবহারে লেগে যাবে – এটা নিশ্চিত।

চিতাই টেম্পল থেকে বেরনোর পর সুনীল বলল, চলুন স্যার যজ্ঞেশ্বর মন্দিরটা ঘুরে যাই। যজ্ঞেশ্বর মন্দিরেও বাঁদরকুলের উৎপাত আছে– তবে তুলনায় কম। আর আছে মন্দিরের খুব কাছে কে.এম.ভি.এন.এর হোটেল। “প্রায়” কোনও মন্দিরেই আমার ঢোকা হয় না। এই মন্দিরেও আমার “উনি” যথারীতি ডালি নিয়ে গটগট করে ঢুকে গেলেন। বেরলেন যখন– “তার” মুখ দেখলাম প্রশান্তিময়। জিজ্ঞেস করলাম, এত আনন্দ কীসের? উত্তর পেলাম, খুব ভালো পুজো দিতে পেরেছি...সে যাক...ও তুমি বুঝবে না।

সত্যিই হয়ত বুঝব না এসব আমি। যেমন বুঝতে পারিনি আলমোড়ার বিখ্যাত মিষ্টি “বাল মিঠাই” খোদ হোটেলের মালিক কেন আমার জন্য দু বাক্স কিনে এনে দিয়ে বলবেন, এটা আমার তরফ থেকে...।

আলমোড়াতে দু’ রাত কাটিয়ে ফের নৈনিতাল। এবারে অন্য হোটেল– নাম তার হোটেল হিমালয়। একদম লেকের গা ঘেঁষে আমাদের ঘর। সামনে পেতে রাখা চেয়ারে খুব সন্ধ্যায় নৈনিতাল লেক দেখা– সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

পরদিন সকালে আমাদের ঘরের ছাদে ধুপধাপ শব্দ। আমার “উনি” বললেন, “ওরা এসেছে”। দেখলাম ঠিকই জনা দশেক হনুমানের একটা গ্রুপ ঘরের বাইরে রাখা আমাদের চেয়ার-টেবিলে আমাদের আগেই এসে গেছে ডান হাতের কাজ সারতে। ওরা বেশ কিছুক্ষণ ছিল। হয়ত আরও কিছুক্ষণ থাকত। পারেনি– কারণ হোটেলের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরের দল এসে গিয়েছিল।

এবার ফেরার পালা। হোটেল হিমালয়ে এক রাত কাটিয়ে এবার আমরা ফের কলকাতা মুখী। দুপুর নাগাদ নৈনিতালকে “বিদায়” বলে ফের হাজির লাল কুঁয়াতে। ডাউন লাল কুঁয়া এক্সপ্রেস। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ এ গাড়ি ছেড়ে পরের দিন সন্ধ্যায় আমাদের পৌঁছে দিয়েছিল কলকাতা। এত অল্প সময়ে দেখা হল না মুন্সিয়ারি, দেখা হল না জিম করবেট ন্যাশানাল পার্ক। ঠিক আছে পরে কখনও...।


লেখক পরিচিতিঃ

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.

 


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।