প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৬

 

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে দুই নারী

খায়রুল আনাম


ঠিক যেমন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জীবনে দু’জন মহিলা অত্যন্ত গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করেছিলেন, তেমনই কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনেও দুই নারী অসাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। তফাৎ হল দুই নারীর মধ্যে মৃণালিনী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী ও কাদম্বরী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বৌদি। বৌদি হলেও বয়সে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে তিনি মাত্র দু’বছরের বড় ছিলেন ও তিনি প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথের কিশোরবেলার খেলার সাথী ছিলেন। একসঙ্গে বড় হতে থাকতে থাকতে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সব শাখায় যেমন প্রতিভা প্রস্ফুটিত হতে থাকে, তেমন কাদম্বরী দেবীও প্রচুর পড়াশুনা করে কবির রচনার প্রথম পাঠক ও প্রধান সমজদার হতে পেরেছিলেন। অনেকক্ষেত্রে তিনি ওই রচনাগুলোর পর্যালোচনা করে কিছু কিছু পরিমার্জন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতেও সাহায্য করেছেন। অন্যদিকে মৃণালিনী দেবীও অনেক পড়াশুনা করেছিলেন। কিন্তু অত অল্প সময়ের মধ্যে পাঁচ পাঁচটা সন্তান, তাদের লালন পালন ও অকাল মৃত্যু, বিরাট সংসারের রক্ষণাবেক্ষণ, অতগুলো লোকের রান্না বান্না - এসব নিয়ে তাঁকে সদাই ব্যস্ত থাকতে হতো বলে ওদিকটা অত এগুতে পারেনি। অপর পক্ষে নজরুলের জীবনের দুই নারীই তাঁর নিজের স্ত্রী ছিলেন। প্রথম জনের ডাক নাম ছিল নার্গিস। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কবির কখনো ঘর করা হয়ে ওঠে নি। দ্বিতীয় বিবাহিত স্ত্রীর ডাকনাম ছিল দুলী, ভাল নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলা। সেই বিয়েটা হয় প্রথম বিয়ের প্রায় তিন বছর পর। উভয় কনেই তখনকার বৃহত্তর ত্রিপুরার (এখন কুমিল্লা) মানুষ। দুই স্ত্রীই বিয়ের পরে অনেক পড়াশুনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বৌদি যেমন হঠাৎ আত্মহত্যা করে বসে রবীন্দ্রনাথের জীবন থেকে চলে যান, তেমন কেবলমাত্র বিয়ে টুকু ছাড়া, বিয়ের রাত থেকেই নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের আর কোন সম্পর্ক ছিল না। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী যেমন অসুস্থ হয়ে কবির অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন, নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা নজরুলও অসুস্থ হয়ে কবির আগে মারা গিয়েছিলেন। বিষয়বস্তু নজরুল, তাই রবীন্দ্রনাথ রেখে এখন নজরুলের বিষয়টির ওপর রেখাপাতের চেষ্টা করা হল। বিষয়টি ঠিক মতো অনুধাবন করতে হলে মনে হয় যতটা গোড়ার দিক থেকে শুরু করা যায়, ততই ভাল। চলুন শুরু করা যাক:

নজরুল

১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ইংরেজি ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দের ২৫শে মে, মঙ্গলবার, কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আট বছর বয়সে পিতা ফকির আহমদকে হারান। পয়সাকড়ির অভাবে লেখাপড়া করা যাচ্ছিল না। এদিকে গান বাজনায় ঝোঁক ছিল। তাই নামমাত্র লেখাপড়া করে স্থানীয় “লেটো” গানের দলে যোগ দেন। কিছুদিন গান করার পর তাঁর মনে হল, এরকম গান তো তিনি নিজেও বানাতে পারেন। তাই গান লেখা শুরু করলেন। ঐ অত অল্প বয়সের লেখা গানের কথা ও ভঙ্গি অনেকের নজর কেড়েছিল, তাদের মধ্যে বেশ একটা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। মুশকিল হল তার থেকে তেমন কোন আয় হচ্ছিল না। আর আয়ে কুলচ্ছিল না বলে ঐ বয়সেই তিনি গ্রামের হাজী পাহালওয়ান শাহের মসজিদে খাদেমগিরি শুরু করে দেন। ঐ কাজের মধ্যে পীর সাহেবের মাজারে সাঁঝের বাতি দেওয়ার কাজটাও করতে হতো। কিন্তু তাতেও সুবিধে হচ্ছিল না দেখে তিনি গিয়ে মিলিটারিতে যোগ দেন।

নজরুল মিলিটারি পোশাকে

সালটা ছিল ১৯১৭ আর ঐ ইউনিটটার নাম ছিল ৪৯ নং বাঙ্গালী পল্টন। ওখানে জয়েন করার পর কাজের দাবীতে তাঁকে করাচিতে চলে যেতে হয়। স্কুলের পড়াশুনার সুযোগ না হলেও, পড়াশুনা ও জ্ঞান আহরণের অদম্য ইচ্ছা কিন্তু তাঁর ছিল। তাই ঐ কাজের ফাঁকে খোঁজাখুঁজি করে সেখানে একজন জ্ঞানী পাঞ্জাবী মৌলভী সাহেবের সন্ধান পান। তাঁর কাছ থেকে “দেওয়ান-ই-হাফিজ” ও ফার্সি ভাষার আরো নানা মূল্যবান কাব্যগন্থের সংস্পর্শে আসেন। বিষয় গুলোর উপর শিক্ষালাভ করার বিরল সৌভাগ্য তিনি অর্জন করেন। এভাবেই তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রথম সারীর মহৎ সাহিত্যের সংস্পর্শে আসেন। তাঁর গভীর অনুসন্ধিৎসু মন, এই গভীর কাব্যদর্শনের অতল গভীরে ডুব দেবার সুযোগ পায়। তিনি মানব মহাজীবনের সন্ধানে ঢোকার সিঁড়ি ধাপে ধাপে পেয়ে যান। আরব সাগরের পাড়ে, সেই করাচী শহরে বসে তিনি “মুক্তি”, “কবিতা-সমাধি”, “রিক্তের বেদন”, “ব্যথার দান”, “হেনা” নামের ব্যতিক্রমধর্মী, অসাধারণ ও বিস্ময়কর কবিতা ও গল্প রচনা করতে থাকেন। সমজদার পাঠক মণ্ডলী বুঝতে পারছিলেন বাংলাসাহিত্যের আকাশে আর একটি অভাবনীয়, প্রবল শক্তিময় আলো ছড়ানো সূর্যের আবির্ভাবের আলামত পাওয়া যাচ্ছে।

নজরুল ও মোজাফফর আহমেদ (পেছনে দাঁড়িয়ে)

ইতিমধ্যে “বাঙ্গালী পল্টন” ভেঙ্গে দেওয়ার গুজব ওঠে। তা শুনে ভবিষ্যতে কি করা যায় চিন্তা করতে করতে তিনি দেশের বাড়ি চুরুলিয়ায় এসেছিলেন। ১৯২৯ সালে (বাংলা ১৩২৬ সালে) যখন সত্যি সত্যি পল্টন ভেঙ্গে দেওয়া হল, তখন তিনি এসে বর্ধমানের জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট-এর অধীনে সাব-রেজিস্ট্রার-এর পদের জন্য দরখাস্ত করেন। সেখানে সুবিধা না হওয়ায় তিনি চাকরীর খোঁজে কলকাতায় চলে যান। ওখানে পৌঁছে প্রথমে তিনি সতীর্থ ও বন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মেসে ওঠেন। পরে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজের সামনে ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটে অবস্থিত “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি”র কার্যালয়ে যান। সেখানে “বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা”র সম্পাদক, কমরেড মোজাফফর আহমেদ ও “মোসলেম ভারত” পত্রিকার কর্ণধার আফজালুল হক ও থাকতেন। এঁদের সঙ্গে আলাপ হবার পর ঐ ঠিকানাতেই নজরুলের থাকার ব্যবস্থা হয়। এর পাঁচ ছয় মাস পরে, কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ তিনি একদিন কুমিল্লা চলে যান। ব্যাপারটা আন্দাজ না করতে পেরে সবাই মিলে নজরুলের অন্তরঙ্গ গায়ক বন্ধু, শ্রী নলিনীকান্ত সরকারের শরণাপন্ন হন। নলিনীবাবুর ভাষ্য ছিল মোটামুটি এরকম, “নজরুলের প্রাত্যহিক গতিবিধি ও কার্য্যসূচীর সন্ধান আগে থেকেই আমার জানা থাকতো। একদিন সারা বিকেলটা নজরুলের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পরদিন সকাল বেলায় গিয়ে দেখি, নজরুল ঘরে নেই। তাঁর একজন সহকক্ষবাসী বন্ধু (মোসলেম-ভারতের কর্ণধার, আফজালুল হক) হাসতে হাসতে বললেন, ‘সে তো কাল রাত্তিরে কুমিল্লা চলে গেছে’। আমি বললাম, “কৈ, কাল তো কিছু বললে না”। সহকক্ষবাসী বন্ধু বললেন, “বলবে কি করে? কাল সন্ধ্যার পর এক ভদ্রলোক এসে কি সব কথাবার্তা ক’য়ে কুমিল্লা যাবার প্রস্তাব করলেন। প্রস্তাব, অনুমোদন, সমর্থন সব মুহূর্তের মধ্যে - সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালদহ ষ্টেশনে যাত্রা”। ঐ “এক ভদ্রলোক” এর নাম আসলে আলী আকবর খান, কুমিল্লার দৌলতপুর নিবাসী বিখ্যাত প্রকাশক।

দৌলতপুর যাবার পথে খান সাহেব নজরুলকে নিয়ে কয়েকদিন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে শ্রী ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে থেকে যান। ইন্দ্রকুমার বাবু কুমিল্লা বোর্ড অফ ওয়ার্ডস-এর ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। ইন্দ্রকুমারের ছেলে বীরেন্দ্রকুমার, কুমিল্লা জেলা স্কুলে পড়াশুনা করতেন। সে সময় আলি আকবর খানও সেখানে পড়তেন; তাই আলী আকবর বীরেন্দ্রকুমারের ক্লাসমেট ছিলেন। ক্লাসমেট থেকে তাঁরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। পরস্পরের বাড়ীতে যাতায়াত ছিল। বীরেন্দ্রকুমারের বাড়ীতে স্ত্রী, বোন, ছেলে ও বাবা মা ছাড়াও আরো থাকতেন বিধবা পিসী গিরিবালা দেবী ও তাঁর একমাত্র কন্যা প্রমীলা তথা আশালতা সেনগুপ্তা, যার ডাকনাম দুলী।
আশালতার স্বর্গীয় পিতা, শ্রী বসন্তকুমার সেনগুপ্তের আদি নিবাস ছিল মানিকগঞ্জের তেহুতা গ্রামে। তিনি ত্রিপুরা সরকারের নায়েবের পদে চাকুরী করতেন। পিতার মৃত্যুর পর প্রমীলারা কুমিল্লায় আত্মীয় বীরেন্দ্রকুমারদের বাড়ীতে এসে সেখানেই বসবাস করছিলেন।

কয়েকদিন থাকার পর নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে আলি আকবর সাহেব তাঁর নিজের দৌলতপুরের বাড়ীতে পৌঁছান। খান সাহেবের দু’জন বিধবা বোন ছিলেন। এক বোন তাঁর সংসারের সর্বময়ী কর্ত্রী ছিলেন। নজরুলের চেহারা ও আচার ব্যবহার দেখে তাঁর ভাল লাগে। তখন থেকে তিনি নজরুলকে মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে আদর যত্ন করতেন। অন্য বোনটি ঐ বাড়ীতে না থাকলেও কাছাকাছি থাকতেন। তাঁর একছেলে ও এক মেয়ে ছিল। মেয়েটি যুবতী ও বেশ সুন্দরী ছিল। নজরুল এ বাড়ীতে আসার পর তাদের যাতায়াত বেড়ে যেতে থাকল। সম্ভবত: নজরুলের বাঁশী ও মেয়েটির রূপ যৌবন পরস্পরকে আকৃষ্ট করেছিল। মেয়েটির নাম ছিল সায়ীদা খাতুন, ওরফে নার্গিস বেগম। এই ঘনিষ্ঠতা মোটামুটি পরিষ্কার হলে কিছুদিনের মধ্যে তাঁদের বিয়ের কথা পাকাপাকি হয় ও বিয়ের দিন ধার্য হয়। কুমিল্লার সেই পল্লীগ্রাম থেকে নজরুল ইসলাম ও খান সাহেব মিলে নজরুলের বিয়ের খবর জানিয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পাঠান। মুস্কিল হল, একদিকে ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে খান সাহেবের উপর অনেকেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। অন্যদিকে নজরুলের তখন উঠতি বয়স, মানুষটা খুবই সেন্টিমেন্টাল এবং সত্যিকারের কোন স্থিতিশীল আয় বা স্টেডি ইনকাম তখন তাঁর ছিল না। এমতাবস্থায় বিয়ে করার মতো একটা বিরাট দায়িত্ব নজরুল কেমন করে পালন করতে পারবেন, তা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও হিতৈষী মহলে দারুণ উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। অথচ কেউ যে এর বিরোধিতা করবে, সে সাহসও কারোর ছিল না।

পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ৫ইং জুন, ১৯২১ তারিখে, নজরুলের কুমিল্লা থেকে পাঠানো চিঠির জবাবে লেখেন,

“ভাই নুরু......, যখন তুই স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে তা’কে বরণ করে নিয়েছিস, তখন অবশ্য আমার কোন দুঃখ নেই। তবে একটা কথা, তোর বয়স আমাদের চাইতে ঢের কম, অভিজ্ঞতাও তদনুরূপ; feeling-এর দিকটা অসম্ভব রকম বেশী। কাজেই ভয় হয় যে, হয়তো বা দু’টা জীবনই ব্যর্থ হয়! এ বিষয়ে তুই যদি concious, তাহলে অবশ্য কোন কথা নেই। যৌবনের চাঞ্চল্যে আপাতমধুর মনে হলেও ভবিষ্যতে না পস্তাতে হয়। তুই নিজে যদি সব দিক ভেবে চিনতে বরণ করাই ঠিক করে থাকিস, তাহলে আমি সর্বান্তকরণে তোদের মঙ্গল কামনা করছি। ......লিখেছিস, “এক পল্লী-বালিকার কাছে এত বিব্রত আর অসাবধান হয়ে পড়েছি, যা কোন নারীর কাছে কখনো হইনি”। জেনে খুশী হলাম যে, তাঁর বাইরের ঐশ্বর্যও যথেষ্টই আছে।...তুই যে এরূপ আজগুবি একটা কাণ্ড বাধিয়ে বসবি, তা সকলে আমরা জানতুম......”।

১৩ইং জুন, ১৯২১ তারিখে কলকাতার “মোহাম্মদী” পত্রিকার অফিস থেকে সাহিত্যিক ওয়াজেদ আলী সাহেব লেখেন,

“ অভিন্ন হৃদয়েষু ভাই নজরুল, আপনার ৭ তারিখের স্নেহমাখা চিঠিখানি আজ বিকালে পেয়ে কয়েকবার পড়েছি, আর অশান্তির মধ্যেও খুব হেসেছি। পল্লীর যে কুটীরবাসিনীর (দৌলতপুরের দৌলতখানার শাহজাদী বলাই বোধ হয় ঠিক, না?) সাথে আপনার মনের মিল ও জীবনের যোগ হয়ে গেছে তাঁকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রীতিপূর্ণ আদাব জানাবেন। ......আমার বোধ হয় আপনার বন্ধুরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন একটা কারণে। আপনি “নারায়ণে”, “দহনমালা” লিখে নারীর কাছে ক্ষমা চাইলেন; তার পরেই এত সত্বর প্রেমের ফাঁদে ধরা পড়লেন! যৌবনের জোয়ার বড় সাংঘাতিক; তাকে ঠেলে রাখা বড় দায় – এ আমি স্বীকার করছি...”। এরপর ১৬ইং জুন তারিখে আবার লেখেন, “ভাই নজরুল, আপনার আগের চিঠির জবাব আগেই দিয়েছি।......আজ এই কতক্ষণ হল, রবিবারের চিঠিটাও পেলাম। ......আপনার বিয়ের খবরটা তাড়াতাড়ি এই সপ্তাহের কাগজে বের করে দিয়েছি। কিন্তু ভয় নেই, আপনার শ্রীমতীর কোন নামই কাগজে ছাপা হয়নি”।

১৯২১ সালের ২৫ শে জুন কলকাতা থেকে মুজফফর আহমেদ সাহেব লেখেন,

“ভাই কাজী সাহেব। ওয়াজেদ মিয়ার চিঠিতে জানলাম যে, ৩রা আষাঢ় তারিখেই আপনাদের বিবাহ হচ্ছে।... সময় খুব সংকীর্ণ...কাজেই আমার আর যাওয়া হচ্ছে না। তবে ভালয় ভালয় সব মিটে যাক, এ প্রার্থনা খোদার দরগাহে”।

পরের দিন খুব গোপনীয় একটা চিঠিতে লিখলেন,

“পরম প্রীতিভাজনেষু কাজী সাহেব, আপনার পত্রাদি যে আর মোটেই পাওয়া যাইতেছে না, তার কারণ কি?... খান সাহেবের নিমন্ত্রণপত্র পাইয়াছিলাম। পত্রখানা আপনারই মুসাবিদা করা দেখিলাম। পত্রের ভাষা দু’এক জায়গায় বড় অসংযত হইয়াছে। একটু যেন কেমন দাম্ভিকতা প্রকাশ পাইয়াছে। আপনার হাত দিয়া অমন লেখা বাহির হওয়া কিছুতেই ঠিক হয় নাই। আমার ভয় হইতেছে যে, খান সাহেবের সংশ্রবে থাকিয়া আপনি না শেষে দাম্ভিক হইয়া পড়েন। অন্যে বড় বলিলে গৌরবের কথা হয়, আর নিজেকে নিজে বড় বলিলে অগৌরবের মাত্রাই বাড়িয়া যায়। ‘মোহাম্মদী’ (পত্রিকা)-কে বিবাহের কথা ছাপিতে অনুরোধ করাটা ঠিক হইয়াছে কি? তাঁরা তো নিজ হইতেই ও-খবর ছাপিতে পারিতেন। ......বাস্তবিক আমার প্রাণে বড় লাগিয়াছে বলিয়া এত কথা বলিলাম। এই নিমন্ত্রণপত্র আবার “অপূর্ব নিমন্ত্রণপত্র” শিরনামে “বাঙালী” (পত্রিকা) তে মুদ্রিত হইয়াছে দেখিলাম। “বাঙালী”কে এই নিমন্ত্রণপত্র কে পাঠাইল? ......আপনার অঙ্কলক্ষ্মীকে এই অপরিচিতের বিনয়-সম্ভাষণ জানাইবেন”।

মুদ্রিত নিমন্ত্রণ-পত্রটিতে নজরুলের পিতা মরহুম কাজী ফকির আহমদ সাহেবের পরিচয় দেওয়া হয় চুরুলিয়ার “আয়মাদার” বলে। আর নজরুলকে বলা হয় “মুসলিম রবীন্দ্রনাথ”। সম্ভবত: এই দুটি কথা মুজফফর সাহেবকে ব্যথিত করেছিল। মুজফফর সাহেব ২১শে জুন নজরুলের মামাশ্বশুর, মানে আলী আকবর সাহেবকে লেখেন,

“খান সাহেব, বিবাহের নিমন্ত্রণপত্র পাইয়াছি, অবশ্য হইয়া যাওয়ার পরে। আগে পাওয়া গেলেও বোধ হয় স্ট্রাইকের জন্য যাওয়া তেমন সুসাধ্য হইত না।... যাহা হউক আশা করি ভালয় ভালয় শুভ কাজ শেষ হইয়া গিয়াছে”।

তিনি গোয়ালন্দ–চাঁদপুর স্টিমার ও আসাম–বেঙ্গল রেলওয়ে কর্মচারীদের স্ট্রাইকের কথাই বোঝাতে চাচ্ছিলেন।

যাই হোক, এত ঢক্কানিনাদ করে যে বিয়ে, সেটার অঙ্কুরেই বিনষ্টি ঘটে। দৌলতপুরে আলি আকবর খান সাহেবের কিছু কিছু ব্যবহার নজরুলকে মানসিক ভাবে আঘাত করে। হবু বধূর কিছু আচরণও তাঁর কাছে দুর্ব্যবহার বলে মনে হয়। অবস্থা সুবিধের নয় দেখে ও নিজের দোষ কাটাবার অভিপ্রায়ে খান সাহেব বিয়েটা ভেঙ্গে দেবার ফন্দি করেন। তিনি হঠাৎ একটা নতুন প্রস্তাব এনে বলেন, বিয়ের-পরে নজরুলকে দৌলতপুরেই থেকে যেতে হবে, যেটা নজরুলের পক্ষে কোনমতেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। নজরুলের বিশেষ আমন্ত্রণে
বিরজাসুন্দরী দেবী নৌকাযোগে দৌলতপুরের বিয়ে বাড়ীতে আসেন। সঙ্গে সেনগুপ্ত পরিবারের আরো ১০-১১ জন সদস্যও এসেছিলেন। নজরুল যখন তাঁর ঐসব অপমানের কথা বিরজাসুন্দরীকে জানান, তখন তিনি এ বিয়ে না করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু এ উপলক্ষে অত লোকজন অলরেডি তখন উপস্থিত হয়ে গেছে। তাই বিয়েটা ভেঙ্গে না দিয়ে যে ভাবেই হোক নজরুল ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলার মনস্থ করেন এবং বিয়েটা শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা হয়েছিল সত্য, কিন্তু ইসলামী মতে তা কনজুমেটেড হয়নি। অর্থাৎ তাঁদের দাম্পত্য মিলন সাধিত হয়নি। বিয়ের রাতেই সেই প্রচণ্ড ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেই নজরুল দৌলতপুর ত্যাগ করেন। মনে করা হয় তিনি সেনগুপ্ত পরিবারের সঙ্গে গিয়ে কান্দিরপাড়ে ওঠেন। সেই কান্দির পাড় থেকে তিনি দু’টী গুরুত্বপূর্ণ চিঠি লেখেন:

প্রথম চিঠিটি তিনি খান সাহেবকে “মামাশ্বশুর” না বলে “বাবা-শ্বশুর” বলে সম্বোধন করে লেখেন,

“ বাবা শ্বশুর! আপনাদের এই অসুর জামাই পশুর মতন ব্যবহার করে এসে যা কিছু কসুর করেছে, তা ক্ষমা করুন সকলে, অবশ্য যদি আমার ক্ষমা চাওয়ার অধিকার থাকে। এইটুকু মনে রাখবেন, আমার অন্তর-দেবতা নেহায়েত অসহ্য হয়ে না পড়লে, আমি কখনো কাউকে ব্যথা দিই না। ...আমিও আপনাদের মতো মানুষ। আমার গণ্ডারের চামড়া নয়, কেবল সহ্যগুণটা কিছু বেশী। আমার মান-অপমান সম্বন্ধে কাণ্ডজ্ঞান ছিল না বা “কেয়ার” করিনি বলে আমি কখনো এত-বড় অপমান সহ্য করিনি, যাতে আমার “ম্যানলিনেসে” বা পৌরুষে গিয়ে বাজে - যাতে আমাকে কেঊ কাপুরুষ, হীন ভাবতে পারে। আমি সাধ করে পথের ভিখারি সেজেছি বলে লোকের পদাঘাত সইবার মতন “ক্ষুদ্র আত্মা” অমানুষ হয়ে যাইনি। আপনজনের কাছ হতে পাওয়া অপ্রত্যাশিত এত হীন ঘৃণা, অবহেলা আমার বুক ভেঙ্গে দিয়েছে। বাবা! আমি মানুষের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। দোওয়া করবেন আমার এ ভুল যেন দুদিনেই ভেঙে যায়। .......বাড়ির সকলকে দস্তুরমতো সালাম-দোয়া জানাবেন...... তাকেও ক্ষমা করতে বলবেন, যদি এ ক্ষমা চাওয়া ধৃষ্টতা না হয়। আরজ-ইতি। চীর-সত্য স্নেহ-সিক্ত – নুরু।

দ্বিতীয় চিঠিটা তিনি কলকাতায় মুজফফর সাহেবকে লেখেন। সেই চিঠি পেয়ে মুজফফর আহমেদ অনেক কষ্ট করে কুমিল্লা এসে (তখন রেল ধর্মঘট চলছিল) নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা ফেরত যান। এর অল্পদিন পর ৩/১ সি তালতলা লেনে মুজাফফর সাহেবের বাড়ীতে থাকা অবস্থায় নজরুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর নজরুল প্রায় তিন বছর ধরে কয়েকবার কান্দির পাড় গিয়েছেন। শেষমেশ ১৯২৪ সালের ২৪শে এপ্রিল, কলকাতার ৬ নম্বর হাজি লেনে, আশালতা সেনগুপ্তা, ওরফে প্রমীলার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে ঝক্কি ছিল।

নজরুল ও তাঁর স্ত্রী প্রমীলা

কনের বয়েস ১৮ বছরের বেশ কম ছিল বলে অফিসিয়ালি হিন্দু-মুসলমানের বিয়ে, অর্থাৎ সিভিল ম্যারেজ হতে পারেনি। অগত্যা ইসলামী মতেই বিয়েটি হয়। এ জটিলতায় হিন্দু, মুসলনমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা চটে যান। আশালতার ডাকনাম ছিল”দোলনা দেবী”, সংক্ষেপে “দুলী”। দোলনার গায়ের রঙ চাঁপাকলির মতো ছিল বলে নজরুল তাঁর দ্বিতীয় কাব্যের নাম দিয়েছিলেন “দোলন চাঁপা”। দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেবার পর থেকে প্রমীলা দেবী পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। কবি প্রায় তাঁর সর্বস্ব দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে থাকেন।

দুর্ভাগ্যবশত: অল্পদিনের মধ্যে দারুণ অসুস্থ হয়ে তিনি নিজেও শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৩৮ বছর সংসার করার পর, ১৯৬২ সালের ৩০শে জুন, শনিবার, মাত্র ৫২ বছর বয়সে প্রমীলা দেবী তাঁর কলকাতার পাইকপাড়ার বাসাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সে সময় কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রীটে নজরুল পাঠাগার ছিল। সেখানে বাৎসরিক নজরুল জয়ন্তী হতো। ফাংশান শেষে দলবল মিলে পাইক পাড়ায় গিয়ে কাজী সাহেবদের দেখে আসার একটা অলিখিত রেওয়াজ ছিল। প্রমীলা দেবীর মৃত্যুর ঠিক আগের বছর, ১৯৬১ সালের নজরুল জয়ন্তীর পর দলের সাথে গিয়ে পাইকপাড়ায় বাসায় নজরুল দম্পতীকে পাশাপাশি খাটে শোওয়া অবস্থায়
(নজরুল বসে ছিলেন কিনা মনে নেই) দেখার বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছে (আমি তখন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রথম বর্ষের ছাত্র)।

অসুস্থ স্ত্রীর পাশে নজরুল

পরের দিন রবিবার, কবির অনেকদিনের অভিলাষ অনুযায়ী কবিপত্নীর মৃতদেহটি কলকাতা থেকে চুরুলিয়া নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেই হাজী পাহালোয়ানের দরগার পাশে কবরস্থ করা হয়। প্রমীলা দেবী বাল্যকাল থেকেই সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভীষণ অনুরক্ত ছিলেন। তাঁর কিছু কবিতা মাসিক “সওগাত” ও দ্বিমাসিক “সাম্যবাসী” তে ছাপা হয়। যতদিন পেরেছেন, ঐ অচল অবস্থাতেও তিনি নিজ হাতে স্বামীকে খাইয়ে দিয়েছেন। কবির ভক্ত ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তিনি একান্ত আপনজনের মতো ব্যবহার করতেন। সাংসারিক অসচ্ছলতার মধ্যেও তিনি কাউকে অভুক্ত অবস্থায় ফেরত দেননি। কখনও বিমর্ষ থাকেন নি বা কোন অভিযোগ করেন নি।

প্রথমা স্ত্রী নার্গিস খানের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও নজরুল তাঁকে কখনও ভুলতে পারেন নি। অত অল্প বয়েসে ভদ্রমহিলা “শ্যাম রাখি না কূল রাখি”র মতো বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে, স্বামীর সঙ্গে ঔ রাত্রেই বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেন, না পিতৃকুলের সম্মান রক্ষা করবেন, বুঝে উঠতে পারেন নি। কিন্ত তিনি কখনো হাল ছাড়েন নি। নিজেকে প্রস্তুত করতে তিনি ঢাকায় গিয়ে কামরুন্নেছা গার্লস কলেজে পড়াশুনা করেন। তিনি “তাহমিনা”, “ধুমকেতু” ও “পথিক হাওয়া” নামে তিনটি উপন্যাস ও কয়েকটি টেক্সট বুক লেখেন। “তাহমিনা “সোহরাব রুস্তম” উপন্যাসের অনুকরণে লেখা হয়েছিল। তাহমিনাকে রেখে রুস্তম যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান। দেখানো হয়েছে ঠিক তেমনই নজরুল নার্গিসকে রেখে চলে গিয়েছিলেন। নার্গিসের জীবন যেন তাহমিনার অনন্ত দুঃখ দুর্দশা ও বঞ্চনার ইতিহাস। তাঁর সব কটা উপন্যাসই ছিল নজরুলকে ঘিরে।

দীর্ঘ ১৬ বছর প্রতীক্ষার পর ১৯৩৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর নার্গিস তাঁর মামার বন্ধু, ময়মনসিংহবাসী প্রফেসর হেলালুদ্দিন ও মামাতো ভাই নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার শিয়ালদহ হোটেলে নজরুলের সাথে শেষ সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে মিঃ ওয়াজেদ আলীও উপস্থিত ছিলেন। অতর্কিতে এঁদেরকে দেখে নজরুল ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। প্রথমে দু’জনের কেউ কোন কথা বলতে পারেন নি। পরে একটু ধাতস্থ হয়ে নজরুল নার্গিসকে বলেন, “তুমি ঢাকা ফিরে যাও। আমি খুব সত্বর ঢাকায় আসছি, সেখানেই এর একটা সমাধান করবো”। তিনি সাংসারিক নানা অসচ্ছলতার কথা এবং দুঃখ দুর্দশাময় ভবিষ্যতের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, প্রমীলা ও তার মা সংসারে নার্গিসকে বরদাস্ত করবেন না। অবশ্য নার্গিসের ভাষায়, “সেই সত্বর আর কখনো আসেনি”। পরবর্তীকালে নার্গিস, নজরুলের অনুরক্ত ও ঘনিষ্ঠ কবি আজিজুল হাকিমকে বিয়ে করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে, প্রায় ৮১ বছর বয়সে আমেরিকার এক ছোট শহরে মারা যান।

আর কখনও দেখা না হলেও নজরুল তাঁর পরিত্যক্ত পত্নীকে এক অবিস্মরণীয় পত্র লেখেন। তার কিছুটা অংশ নীচে দেওয়া হলোঃ

“কল্যাণীয়েষু, তোমার পত্র পেয়েছি - সেদিন নববর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। পনর বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল – তা তুমিও হয়তো স্মরণ করতে পারো। ...এই আষাঢ় আমার কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক, তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই।......তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না – এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি অসীম বেদনা! কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি - তা দিয়ে তোমাকে দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশ-মাণিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না – আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না। তোমার যে কল্যাণরূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথমে দেখেছিলাম, যে রূপকে আমার জীবনের সর্বপ্রথম ভালবাসার অঞ্জলী দিয়েছিলাম, সে রূপ আজও স্বর্গের পারিজাত-মন্দারের মতো চির- অম্লান হয়েই আছে আমার বক্ষে। অন্তরের আগুন বাইরের সেই ফুলহারকে স্পর্শ করতে পারেনি। ......আজ চলেছি জীবনের অস্তমান দিনের শেষ রশ্মি ধরে, ভাটার স্রোতে। ...... তোমাকে লেখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক। যেখানেই থাকি, বিশ্বাস করো, আমার অক্ষয় আশীর্বাদ কবচ তোমায় ঘিরে থাকবে। তুমি সুখী হও, শান্তি পাও- এই প্রার্থনা। আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস কর, আমি তত মন্দ নই-এই আমার শেষ কৈফিয়ত।
ইতি।
নিত্যশুভার্থী,
নজরুল ইসলাম।

 

১) কৃতজ্ঞতা স্বীকার: বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
২) বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার: আব্দুল কাদির সম্পাদিত “নজরুল রচনা সম্ভার”।


লেখক পরিচিতি: লেখক শিকাগো নিবাসী প্রবাসী বাঙ্গালী। পেশায় প্রকৌশলী। নেশা সাহিত্যচর্চা। নিয়মিত দেশ বিদেশের পত্র পত্রিকায় লেখেন। একটি ছোটগল্প ও একটি পাঁচমিশালী বিষয় নিয়ে দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এমাসেই প্রবন্ধের বইটি বের হচ্ছে। ভ্রমণ কাহিনী ও ছোটগল্প নিয়ে আরও দুটি বই ২০১৭ সালের বইমেলাতে বাজারে আসছে। পাশাপাশি উপন্যাস লেখার প্রস্তুতিও চলছে।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।