প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬

 

ফুচুদা

সৌরভ দত্ত


‘মাংসের কচুরি’ নিয়ে যত গোল।

একটি করুণ কাহিনি লিখেছিলেন নাড়ু। দিনাজপুর স্কুলের ছাত্র। পাঠ শুনতে শুনতে বোনেদের চোখ আর্দ্র। আচমকা রসাভাস!

গল্পে উল্লিখিত ঐ খাদ্যদ্রব্যের নাম শুনে অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন এক সাহেবি কেতার ভদ্রলোক, মহেন্দ্রবাবু। নাড়ু-র পিসতুতো ভাই।

- মাংসের কচুরি ? তাও কি হয় ? রাবিশ!

ভীষণ আঘাত পেলেন কাহিনিকার। লেখা ছিঁড়ে একেবারে কুটিকুটি।

বড় হয়ে কিশোরদের জন্য কলম ধরলেন সেদিনের ছোট্ট নাড়ু। কয়েকটি রোমাঞ্চকর আখ্যান। তারপর এল হাসির গল্প লেখার অনুরোধ। নিজের ছেলেবেলায় ফিরে গেল মন।

মহেন্দ্রবাবুর ডাকনাম ছিল ফুচু। ঐ নামটুকু ধার নিলেন লেখক। তৈরি হল ছোটদের সাহিত্যের এক চিরস্মরণীয় চরিত্র। প্যালারাম-এর পিসতুতো ভাই, ফুচুদা।

সেই গল্পের নাম ? ‘অথ নিমন্ত্রণ ভোজন’।

আর স্রষ্টা ? নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ।



‘অথ নিমন্ত্রণ ভোজন’ (১৩৫৩) গল্পে ফুচুদা-র প্রথম আবির্ভাব, ‘ঝিকিমিকি’ (বার্ষিকী) ।

ঐ ১৩৫৩ সনেই স্বনামধন্য টেনিদা-র প্রথম আবির্ভাব। তবু ফিকে হয়নি ফুচুদা-র আকর্ষণ। মানুষটি যে বিচিত্র !
স্রেফ দু’খানি কিসসায় তিনি স্বয়ং উপস্থিত। সেখানে তিনি ব্যায়াম-বিশারদ, উদরপরায়ণ, রাম গোঁয়ার।

কিন্তু আরও খান তিনেক গল্পে তাঁর প্রসঙ্গ এসেছে। তাতে সম্পূর্ণ বিপরীত রূপ ফুচুদা-র। তিনি পদ্য-প্রেমী। ধোপার খাতা অবলম্বন করে বিকশিত হয় তাঁর প্রতিভা।

সেই কবিতা পড়ে অবশ্য প্যালা-র পিসিমা তাড়া করেন ফুচুদা-কে, চালকুমড়ো হাতে। আর পিসেমশাই করান ডন-বৈঠক।

‘মাংসের কচুরি’ যেন সোনার-পাথরবাটি। মহেন্দ্রবাবু-র সেই ঠাট্টা ভোলেননি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। তাই ‘দুর্ধর্ষ মোটর সাইকেল’-এর গোড়াতেই দেখি খিচুড়ি-শব্দের প্রতি প্যালারাম-এর প্রবল অনাস্থা। আবার যেমন, কাঠবেড়ালি। না কাঠ, না মার্জার। কিংবা, আলুবখরা , আলু নয়। বিনামূল্যে তার বখরাও মেলে না।

একই যুক্তিতে মোটরসাইকেল বস্তুটিও অতি সন্দেহজনক। তাই, না-মোটর, না-সাইকেল এই যানে চেপে, জান যাবার জোগাড় হয় ফুচুদা-র।

‘অথ নিমন্ত্রণ ভোজন’ এর প্রকাশ সাল ১৩৫৩। ‘দুর্ধর্ষ মোটর সাইকেল’ (১৩৫৯) ।

এই জোড়া কাহিনি ছাড়াও কবি ফুচুদা-র উল্লেখ রয়েছে বলটুদা-সিরিজের ‘কবিতার জন্ম’ (১৩৭২) গল্পে। টেনিদা-কেন্দ্রিক ‘ঢাউস’ (১৩৬৪) এবং ‘চার মূর্তির অভিযান’ (১৩৬৫ – ১৩৬৭)-এ। এমন নজির আরও থাকাও বিচিত্র নয় ।

আর একটি ইউনিক কাহিনির কথা বলে থামব। ‘গজকেষ্ট বাবুর হাসি’, প্রকাশ ১৩৬৭। এখানে লাইন বেঁধে হাজির নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-সৃষ্ট একরাশ মার্কামারা চরিত্র । প্যালা, হাবুল, ক্যাবলা, বলটুদা আর খোদ টেনিদা। অথচ সবারই উপস্থিতি অতি-সংক্ষিপ্ত, যেন অতিথি শিল্পী।

আর হ্যাঁ, সেই গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স-তালিকায় ফুচুদা-ও উপস্থিত ।

শেষবারের জন্য সশরীরে ।
------------------------------------------------------------------------------------------

তথ্যসূত্র :
- ‘আমার কথা’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, ‘সমগ্র কিশোর-সাহিত্য’, প্রথম খণ্ড, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৭৮
- ভূমিকা, ‘ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, অন্নপূর্ণা পাবলিশিং হাউস, ১৯৭৪
- ‘নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়’, সরোজ দত্ত, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ১৯৯৬
- ‘প্যালারামচরিত’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ২০১২


লেখক পরিচিতি:প্রাক্তন অভিনেতা । ঘনাদা ও টেনিদা-র অলংকরণ নিয়ে 'ঘনাদা গ্যালারি' এবং 'টেনিদা ট্রেজারি' সাজাচ্ছেন অন্তর্জালে।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।