প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বইয়ের খবর

অক্টোবর ৩০, ২০১৬

স্মরণজিৎ চক্রবর্তী-র “অদম্য ২”

আলোচনা - ঋজু গাঙ্গুলি



গত দু’বছরে এপার বাংলায় রহস্যরোমাঞ্চ কাহিনির চাহিদা যেভাবে বেড়েছে, তা সম্ভবত নজিরবিহীন। এর কারণ কী হতে পারে, তা বলবেন সমাজতত্ত্ব ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কঠোর বাস্তব এটাই যে তথাকথিত মূলধারার সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নিয়ে মগ্ন পেশাদার মানুষেরাও ইদানিং নিবিষ্ট হয়েছেন সাহিত্যের এই শাখাটির প্রতি, যাকে এতদিন জঁর ফিকশনের অন্যান্য বিভাগের মতোই দুয়োরানির সন্তান হিসেবে দেখা হত।

 বইয়ের নামঃ অদম্য ২  লেখকঃ স্মরণজিৎ চক্রবর্তী  প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স  হার্ডকভার, ২২৩ পৃষ্ঠা, এপ্রিল ২০১৬-য় প্রকাশিত প্রথম সংস্করণের মূল্য ২০০/- টাকা  আই.এস.বি.এনঃ 978-93-5040-682-3

বাংলায় টিন-এজ রোমান্সের অঘোষিত সম্রাট স্মরণজিৎ চক্রবর্তীও তাঁর অপেক্ষাকৃত স্বল্পালোচিত অ্যান্টি-হিরো অদম্য সেন তথা অ্যাডাম-কে ফিরিয়ে এনেছেন তাকে নিয়ে প্রকাশিত এই দ্বিতীয় সংকলনটিতে।
কিন্তু প্রথম সংকলনের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশিত এই দ্বিতীয় সংকলন কি পারে প্রথম সংকলনের বড়ো ও ছোটোগল্পগুলোর মাধ্যমে স্থাপিত গুণমান বজায় রাখতে?

এই বইয়ের প্রথম উপন্যাসঃ অন্ধকারের রাজপুত্র।

কর্পোরেট দুনিয়ার রেষারেষির রেশে কলকাতায় হানা দেয় এক ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী। সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করার পাশাপাশি সে চাইছে এক অমূল্য সম্পদ, সঙ্গে চাইছে অদম্যকে জড়িয়ে দিতে এই অপরাধের সঙ্গে। সরকার তার বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিল মার্কোজ-এর কম্যান্ডো আদিলকে। কিন্তু অন্ধকারে কে বন্ধু, কে শত্রু চেনা দায়। আদিল কি পারবে সন্ত্রাসবাদীকে থামাতে? অদম্য কি পারবে পর্দার আড়ালে থাকা শয়তানকে সনাক্ত করতে?

এই বইয়ের দ্বিতীয় উপন্যাসঃ আলোর প্রতিদ্বন্দ্বী।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে তৈরি ডার্টি বম্বের মাধ্যমে কলকাতায় আতংক ছড়ায় ‘ভ্লাদ’ নামের এক সন্ত্রাসবাদী। তার আসল উদ্দেশ্য কী? আদিল হঠাৎ কিডন্যাপ হল কেন? মুখোশের আড়ালে থাকা কোন শয়তান ভ্লাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে? সবচেয়ে বড়ো কথা, তারা কি অদম্যকে ইচ্ছে করেই টেনে আনছে কলকাতায়?

এই বইয়ের তৃতীয় উপন্যাসঃ অদৃশ্য যুবরাজ।

গ্রাফিন নিয়ে গবেষণারত দলের বিজ্ঞানীদের নাম জেনে ফেলেছে রাশিয়ান মাফিয়া। এক বিজ্ঞানী বাঙালি, যিনি আবার কুড়ি বছর পর কলকাতায় ফিরছেন পুজো দেখতে, অপহৃত হন। সেই একই সময়ে কলকাতা ও উপকন্ঠে বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে এক বিশেষ কোম্পানির কারখানাগুলোয়, যারা গ্রাফিন-প্রস্তুতকারক কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আদিল কি পারবে এই বোমারু সন্ত্রাসবাদীদের থামাতে, এবং একই সঙ্গে অপহৃত বিজ্ঞানীকে উদ্ধার করতে?

বুঝতেই পারছেন, তিনটি উপন্যাসই পড়া শুরু করলে জাস্ট থামা যায় না। কিন্তু তারপর....
স্মার্ট গদ্য, অসাধারণ কিছু বর্ণনা, আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে জ্বলন্ত সমস্যা, দুর্দান্ত কিছু আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটঃ এসব থাকা সত্বেও লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হল, যেন কোনো সুবেশ-সুদর্শন মানুষ মুখ খোলার পর পানের দাগ লাগা দাঁতের পাটি দেখছি!

কেন? কারণ তিনটে গল্পেরই মূল কাঠামো হুবহু এক।

এক সেটিং, এক রকমের বিপদ (কলকাতায় সন্ত্রাসবাদী হামলা), এক রকম মোকাবিলা করার পদ্ধতি (লালবাজারে বৈঠক, সম্মুখ সমরে আদিল এবং পেছনে অদম্য-র ফিল্ডে নামা), এক চরিত্র, এক রকমের ভিলেইন (যাদের শনাক্ত করতে আপনার দশ মিনিটও লাগবে না), এক রকমের ক্লাইম্যাক্স, এবং এক রকমের পে-ব্যাক!
আরো সঠিক ভাবে বলতে গেলে, তিনটে উপন্যাসই “বিস্ফোরণের উৎসবে”-র ক্লোন মাত্র।

এবছরের শারদীয়া ‘এবেলা’-তেও অদম্য সেন ফিরেছেন, এবং আমার আশংকা হচ্ছে, আমরা আবার এই একই জিনিস পাব।

হে লেখক, আপনার কাছে আমার দুটি বিনীত আবেদন আছে।

(১) এমন অসাধারণ অ্যান্টি-হিরোটিকে যদি তৈরিই করে থাকেন, তবে তার গ্রে শেডস-গুলো আমাদের দেখার সুযোগ করে দিন প্লিজ। কারণ বন্যেরা বনে সুন্দর, থ্রিলারের প্রটাগনিস্ট সুন্দর সাদা আর কালোর মাঝে ধূসর জায়গাটায়।
(২) অদম্যকে দয়া করে নিয়ে যান অন্য ময়দানে, অন্য রকম পরিবেশে। সি.এম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, এবং অন্যান্য মন্ত্রী-সান্ত্রীদের একঘেয়ে সংলাপ পড়তে পড়তে, ফ্র্যাংকলি স্পিকিং, বোর হয়ে গেছি।


আলোচক পরিচিতি - আলোচক এক উদ্যমী পাঠক, যিনি বিপ্লব, চোখের জল, মানবচরিত্রের অতলস্পর্শী গভীরতা, সিন্ডিকেট, সারদা, ধোনি, ইত্যাদি তাবড় বিষয় থেকে দূরে, স্রেফ বেঁচে থাকার গল্প পড়তে চান। নিজের ভালবাসা থেকেই দীর্ঘদিন বইয়ের রিভিউ করছেন।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2015 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।