প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বইয়ের খবর

জুলাই ৩০, ২০১৬

বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ ত্রয়ী

আলোচনা - ঋজু গাঙ্গুলি

রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের কদর্য ফাঁসে শ্বাসরুদ্ধ আজকের বিশ্বভারতী পশ্চিমবঙ্গের আর পাঁচটা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটিতে পরিণত হলেও মাঝেমধ্যে, যখন ওই প্রতিষ্ঠানের পুরনো মহাফেজখানা ঘেঁটে পাওয়া সোনাদানা বই আকারে আমাদের কাছে আসে, তখন স্তম্ভিত হতে হয় এই ভেবে যে সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এমন একটি সংস্থাকেও কী নিপুণ দক্ষতায় আমরা বরবাদ করে ফেলেছি! তেমনই তিনটি বই সম্প্রতি পড়ার সৌভাগ্য হল। সেই পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই আজকের লেখা।

বাংলায় ‘বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ’ গ্রন্থমালার ভাবনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “প্রবাসী” মাসিক পত্রিকার শ্রাবণ ১৩২৪ সংখ্যায়, একটি বিজ্ঞপ্তি আকারে। তাতেই বলা হয়েছিল এই যুগন্ধর কথাটিঃ “জ্ঞানই শক্তি। সেই শক্তি সরল মাতৃভাষায় রচিত সদ্গ্রন্থের দ্বারা ভারতময় সঞ্চারিত করিতে হইবে। জাতীয় মুক্তি এই পথে”। ওই বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয় বাংলায় ও পরে অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ‘বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ’ নামে এক গ্রন্থমালা প্রকাশের কথা। প্রতিটি গ্রন্থের পৃষ্ঠাসংখ্যা, আকার, ফন্ট (সেযুগের ভাষায় ‘টাইপের মাপ’), দাম, ভাষা, বিদেশি শব্দের বঙ্গীকরণের নীতিঃ এই ধরনের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিধিনির্দেশ তো তাতে ছিলই, সঙ্গে ছিল বিভিন্ন বিষয়ের সম্পাদকের নাম, যা আমি নিচে তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ

১. দর্শনে ডাক্তার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল এবং ডাক্তার নরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত;
২. বিজ্ঞানে শ্রীযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী এবং ডাক্তার প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীস;
৩. ইতিহাস, ভূগোল, এবং অর্থনীতিতে শ্রী যদুনাথ সরকার;
৪. সাহিত্য, সাহিত্যের ইতিহাস, এবং ভাষায় শ্রী প্রমথ চৌধুরী;
৫. কলায় শ্রী অর্ধেন্দ্রকুমার গাঙ্গুলী এবং শ্রী সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর;
৬. শিক্ষা-বিজ্ঞানের অস্থায়ী সম্পাদক স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!

সম্ভাব্য লেখক তালিকা, যা সেই বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছিল, তা দিতে গেলে সেই সময়ের বাংলার গোটা ‘হু’জ হু’ তুলে দিতে হবে, তাই সেই চেষ্টা করছি না।

পরিকল্পনার পাক্কা ২৬ বছর পর ১৩৫০-এর বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সাহিত্যের স্বরূপ” দিয়ে ‘বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ’ গ্রন্থমালার সূচনা হল। মোট ১৩৫টি বই প্রকাশিত হয় এই সিরিজে, যার শেষটি ছিল ১৯৮১-তে প্রকাশিত “বিজ্ঞানসাধনার ধারায় সত্যেন্দ্রনাথ বসু”।

২০১২-য় বিশ্বভারতী থেকে এই বইগুলো বিষয়-ভিত্তিক ২০-২৫টি খণ্ডে বানান ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে সমতা এনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার প্রথম ফসল হল আলোচ্য তিনটি বই।

(১) গণিতবিদ্যাঃ

আই.এস.বি.এনঃ 978-81-7522-631-9

অংককে ভয় পায় না এমন কেউ যদি পাঠকদের মধ্যে থেকে থাকেন, তবে তিনি নাহয় এই বই নিয়ে আলোচনাটা শেষে পড়বেন। আমি বরং উচ্ছে বা করলার মতো করে ওই বইটা নিয়ে যা বলার তা তড়িঘড়ি বলে দিই।

পৌষ ১৪২২-এ প্রকাশিত, রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সুশ্রী প্রচ্ছদে সমৃদ্ধ এই ২৪০ পৃষ্ঠার হার্ডকভারটি অংক, বা আরও সঠিক ভাবে বলতে গেলে উচ্চতর গণিতের তিনটি দিক নিয়ে হওয়া বিস্তৃত আলোচনা, তথা তিনটি আলাদা বইয়ের সংকলন।

বইয়ের শুরুতেই আছে রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি ভূমিকা, যাতে তিনি আলোচ্য বই তিনটি রচনার পরিপ্রেক্ষিত, এবং আজকের তাদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, অন্তত আমার কাছে বইটির দুর্বলতম লেখা এটিই ঠেকেছে, কারণ পরিভাষার ব্যবহার থেকে শুরু করে ভাষার আড়ষ্টতাঃ মোটামুটি সব বিষয়েই ভূমিকাটি কখনও বিরক্তিকর, এবং বেশির ভাগ সময় নিদ্রাকর্ষক বলে প্রতিভাত হয়েছে। তাই একটি বিনীত অনুরোধ, এই অংশটা বাদ দিয়ে বরং মূল লেখাগুলোয় ঢুকে পড়ুন।

(ক) গগনবিহারী বন্দোপাধ্যায়-এর লেখা গণিতের রাজ্য” (প্রথম প্রকাশঃ ১৩৫৭ পৌষ): ম্যাট্রিক্স অ্যালজেব্রা, রীমানীয় জ্যামিতি, এবং ক্যালকুলাসঃ উচ্চতর গণিত তথা পদার্থবিদ্যা নিয়ে এগোতে গেলে যে তিনটি বিষয় আয়ত্তে আনা অত্যাবশ্যক, তাদের মূল কথাগুলো খুব সহজে, এবং পাঠকের বোঝার ক্ষমতার প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখিয়ে লেখা এই প্রবন্ধটি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে একটি সম্পদ, এবং অবশ্যপাঠ্য।

(খ) পূর্ণেন্দুকুমার বসু-র লেখা “রাশিবিজ্ঞানের কথা” (প্রথম প্রকাশঃ ১৩৬৩ আশ্বিন): রাশিবিজ্ঞান শব্দটা আজ থেকে পঁচিশ বছর আগেও প্রচলিত ছিল না। রাশি বলতে আমরা তুলা বা মকর, এসবই বুঝতাম। তাই, বাংলা মাধ্যমের ছাত্র হলেও স্ট্যাটিস্টিক্স-এর যতটুকু আমরা শিখেছিলাম সেখানে মিন, মোড, মিডিয়ান, স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশনঃ এসব শব্দ মাথায় গেঁথে গেছিল অনায়াসেই। কিন্তু দুর্বোধ্য পরিভাষায় ন্যুব্জ এই লেখাটি পড়তে গিয়ে আমার মনে হল, এইসব ভাষায় বিষয়টা পড়তে হলে নির্ঘাত ফেল করতাম। একটা নমুনা দিই?

“সহগাংক +১ থেকে -১ পর্যন্ত হতে পারে, +১ মানে উচ্চ সদৃশ সহগতি, -১ মানে উচ্চ বিপরীত সহগতি, এবং ০ মানে কোন সহগতি নেই। বিক্ষেপণ চিত্রে যা দেখানো হয়েছে সেইটাই সংখ্যার সাহায্যে পরিমাপ করা হয় সহগাংকে”।

কিছু বুঝলেন?
এই লেখাটা বরং টপকে যান, নইলে মাথা গরম হয়ে যেতে পারে।

(গ) অতীন্দ্রমোহন গুণ-এর লেখা “ সম্ভাবনাতত্ত্ব ” (প্রথম প্রকাশঃ ১৩৮০ কার্তিক):

যেসব অধ্যায় দিয়ে বইটিকে সাজানো হয়েছে তারা হলঃ –

১. আলোচনার বিষয়বস্তু
২. সম্ভাবনার সংজ্ঞা
৩. স্বীকার্যমূলক আলোচনায় মৌল উপপাদ্য ও তাদের প্রয়োগ
৪. শর্তাধীন সম্ভাবনা ও একাধিক ঘটনার পারস্পরিক স্বাতন্ত্র্য
৫. সম্ভাবনাশ্রয়ী চলক ও তার সম্ভাবনা-বিভাজন
৬. প্রত্যাশিত মান, সমক পার্থক্য ও সহগাংক
৭. প্রত্যাশিত মান, সমক পার্থক্য ও সহগাংক প্রসঙ্গে কয়েকটি উপপাদ্য
৮. সম্ভাবনাতত্ত্বের উপযোগিতা
৯. সম্ভাবনা প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা

পরিভাষার ক্লিষ্টতা এই লেখাটিকেও ভারাক্রান্ত করেছে, তবে লেখক একেবারে নিঃসংকোচে প্রোব্যাবিলিটির শক্ত থেকে রামশক্ত অংক কষেছেন এখানে হাতে-কলমে। আমি সম্ভব-অসম্ভবের বিভেদ করতে প্রায়ই ব্যর্থ হই, তাই এইসব জটিল ব্যাপারের রসাস্বাদনে আমার অক্ষমতার বিস্তৃত খতিয়ান দিয়ে কাজ নেই। শুধু এটুকু বলি, যাঁরা উচ্চতর গণিত ভালোবাসেন তাঁদের কাছে এই লেখাটা আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে।

সব মিলিয়ে, অংক ভালোবাসলে, বা বাঙালির গণিতচর্চা নিয়ে জানতে উদ্যোগী হলে, এই বইটা অবশ্যপাঠ্য, শুধু মাঝের লেখাটা ‘টপকে যাওয়াই’ বাঞ্ছনীয়।

(২) জ্যোতির্বিজ্ঞানঃ

আই.এস.বি.এনঃ 978-81-7522-625-8

জনপ্রিয় বিজ্ঞান নিয়ে যত লেখাজোখা হয়, তার অধিকাংশই মহাকাশ ও তার নানা রহস্য নিয়ে। কারণটা সহজবোধ্যঃ চোখ তুললেই নীলিমার যে অনন্ত বিস্তার দিনে আমাদের মনে কবিতার জন্ম দেয়, রাতের অন্ধকারে তার গায়ে ফুটে ওঠা আলোর বিন্দুরা আমাদের মনে জাগায় অপার বিস্ময় আর কৌতূহল। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে তাই, বিজ্ঞানের প্রসার বোঝার সেরা পরিচায়ক হয়ে থেকেছে মানুষের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা। কিন্তু আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগেও এই বিশেষ বিদ্যা ও তাকে নিয়ে হয়ে চলা চর্চার বিবরণ সহজবোধ্য ভাবে সাধারণ পাঠকের কাছে পেশ করার মতো বইপত্রের সংখ্যা ছিল নেহাতই কম। বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহের এই ২৩৬ পৃষ্ঠার শক্তপোক্ত খণ্ডটির সূচনায় ঝরঝরে ভাষায় পলাশ বরন পাল সেই পটভূমি নিয়ে কিছু কথা বলেছেন, আলোচ্য বইগুলোর শক্তি ও দুর্বলতার দিকে ইংগিত করেছেন, এবং একেবারে মন খুলে এই সিরিজকে ঘিরে প্রত্যাশা পূরণ ও অপ্রাপ্তির কথা লিখেছেন। তারপর এসেছে মূল লেখাগুলো।

(ক) প্রমথনাথ সেনগুপ্ত-র লেখা নক্ষত্র-পরিচয়” (প্রথম প্রকাশ অগ্রহায়ণ ১৩৫০): চলিত ভাষায় লেখা এই সুখপাঠ্য, তথ্যসমৃদ্ধ, এবং কয়েকটি ফটোগ্রাফে সুসজ্জিত এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত, যথাঃ

১. গ্রন্থকারের নিবেদন
২. রাত্রির আকাশ
৩. দূরবীনদৃষ্টি ও নক্ষত্রলোক
৪. নক্ষত্র-পরিচয়
৫. নক্ষত্রের আভ্যন্তরিক অবস্থা ও মহাজগতীয় মেঘ

ডার্ক ম্যাটার, কৃষ্ণ গহ্বর (ব্ল্যাক হোল) এবং বিগ ব্যাং নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কোন আলোচনা নেই দেখে লেখাটা পড়তে গিয়ে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলাম বটে, কিন্তু এও মনে হল যে ফটোগ্রাফগুলো রঙিন হলে আজকের এই ইনফোটেইনমেন্টের ভরা মরসুমেও এই লেখাটা সদ্য স্কুলের সীমা পেরোনো ছাত্রদের পক্ষে দুর্দান্ত প্রাইমার হতে পারে।

(খ) সুকুমারচন্দ্র সরকার-এর “নভোরশ্মি” (প্রথম প্রকাশ কার্তিক ১৩৫৩)>: এই বইটি যেসব অধ্যায় দিয়ে সাজানো, তাদের দেখলেই লেখকের প্রতিপাদ্য এবং বলার পদ্ধতি স্পষ্ট হবেঃ –

১. গ্রন্থকারের নিবেদন;
২. অবতরণিকা
৩. নভোরশ্মির আবিষ্কার ও ধর্মনিরূপণ
৪. উইলসন কক্ষে নভোরশ্মির গমনপথের চিহ্ন
৫. পজিট্রনের আবিষ্কার
৬. মেসোট্রনের আবিষ্কার
৭. নভোরশ্মিজনিত বিস্ফোরণ ও দূরব্যাপী বর্ষণ
৮. নভোরশ্মির তড়িৎবিহীন অংশ
৯. নভোরশ্মির উৎপত্তিপ্রণালী সম্বন্ধে পরিকল্পনা

সাধু বাংলায় রচিত এই খটোমটো লেখাটির বিষয়বস্তু সরল, বলার পদ্ধতিটিও সরল, কিন্তু বাদ সেধেছে একেবারে ফিজিক্স-এর টেক্সট বই সুলভ ছবির প্রাচুর্য, আর ভাষা! কয়েকটা নমুনা দিলেই বুঝবেন কী বলতে চাইছি।

“বোটে ও কোলহোয়র্স্টার যুগপৎ দ্বিনলভেদন-গণক যন্ত্র ব্যবহার করিয়া লক্ষ করেন যে, নভোরশ্মির জন্যে ঐ যন্ত্রে মিনিটে কয়েকবার ক্রিয়া হয়। পরে ৪র্থ চিত্রে দর্শিত উক্ত যন্ত্রের তাম্রনল দুইটির মধ্যবর্তী স্থানে চিহ্নিত দেড় ইঞ্চি বেধ বিশিষ্ট একটি স্বর্ণপট্ট স্থাপন করায় যুগপৎ ভেদনের হার এক-চতুর্থাংশ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়”।

অথবা

“উক্ত কণার বেগজনিত শক্তি এক কোটি ইলেকট্রন-ভোল্টের অধিক হইলে সীসক ভেদনকালে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ব্যয়িত শক্তির পরিমাণ সংঘর্ষ দ্বারা পরমাণু হইতে ইলেকট্রন বহিষ্করণের প্রক্রিয়ায় ব্যয়িত শক্তির পরিমাণ অপেক্ষা অধিক হইবে”।

এবং এই জিনিস চলেছে পাতার পর পাতা জুড়ে। বিশাল-বিশাল বাক্য দিয়ে ভরা অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ এসেছে। জার্মান নামগুলো গাছ থেকে ডাবের মতো পড়েছে পাঠকের মাথায়। আর তৎসম শব্দের এমন বাণ ডেকেছে, যে মাঝে মধ্যে লেখক পরিচয় দেখে জানার চেষ্টা করেছি, ইনি প্ল্যানচেট করে বঙ্কিমকে নিজের কাঁধে চাপিয়েছিলেন কি না।

এর চাইতে সুধাংশু মাইতির পদার্থবিদ্যা বইয়ের চ্যাপ্টার পড়লেও বেশি রস পাওয়া যাবে! এটা পড়বেন না।

(গ) নিখিলরঞ্জন সেন-এর “সৌরজগৎ” (প্রথম প্রকাশ বৈশাখ ১৩৫৬): >সাধু ভাষায় লেখা, এবং অজস্র চিত্রশোভিত বইও যে কত সহজ এবং সুখপাঠ্য হতে পারে, তার একটি ক্লাসিক নিদর্শন এই লেখাটি।

যেসব অধ্যায় দিয়ে এই লেখাটিকে সাজানো হয়েছে তাদের তালিকা দেখলেই লেখার রূপরেখাটি স্পষ্ট হবেঃ –

১. জ্যোতিষ্ক ও তাহাদের গতি
২. জ্যোতির্বিজ্ঞানীর যন্ত্র
৩. পৃথিবীর কথা
৪. চন্দ্র
৫. সৌরজগৎ
৬. গ্রহ ও উপগ্রহ
৭. শুক্র
৮. মঙ্গল
৯. গ্রহকণিকা
১০. বৃহস্পতি
১১. শনি
১২. ইউরেনাস ও নেপচুন
১৩. সৌরজগতের উৎপত্তি
১৪. গ্রহের বায়ুমণ্ডল
১৫. সূর্য

আলোচিত তথ্য বেশ কিছু জায়গায় পুরনো হয়ে গেছে। কিছু-কিছু অধ্যায়, যেমন “জ্যোতির্বিজ্ঞানীর যন্ত্র” আজকের কম্পিউটার-অধ্যুষিত এবং জুনো-পরবর্তী সময়ে পুরোপুরি তামাদি। কিন্তু তবু, এই লেখায় বর্ণিত বেশির ভাগ তথ্য এবং অভিমত শুধু সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, এখনও কার্যকরী।

দুঃখ হয় এই ভেবে যে “নভোরশ্মি”-র লেখক তাঁর ক্লিষ্ট এবং কষ্টদায়ক লেখাটি রচনার আগে এই লেখাটি পড়লে বোধহয় বুঝতে পারতেন, সাধু ভাষাতেও তথ্যপূর্ণ অথচ মনোজ্ঞ লেখা কীভাবে লিখতে হয়।

(ঘ) ক্ষেত্রমোহন বসু-র “পঞ্জিকা-সংস্কার” (প্রথম প্রকাশ ফাল্গুন ১৩৬৩): এই বইয়ের, এবং বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহের সবথেকে মূল্যবান এই লেখাটি কেন যে রাজ্য সরকার, বা যুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে আগ্রহী বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে বহুল প্রচারিত হয়নি, তা ভেবে অবাক হতে হয়।

মানি বা না-মানি, পঞ্জিকা আমাদের জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পঞ্জিকায় দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নানা ধরনের সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতা নিয়ে বলাটা জ্যোতিষ, যেটা বিশ্বাস করা বা না-করা নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কিন্তু যেটা অবিসংবাদিত সেটা হলঃ পঞ্জিকার মূল ভিত্তি হল স্থানীয় মাণদণ্ডের ভিত্তিতে বছর গণনা, এবং তাকে সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্রের সঙ্গে যথাসাধ্য মেলানো, যাতে ব্যবহারবিধির সঙ্গে পরিবেশের বিবাদ না হয়।

ভারতে পঞ্জিকায় দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের বিবাদ একটা নিত্যকার ঘটনা, যেজন্যে প্রায়ই দেখা যায় দুর্গাপুজোর মতো সামাজিক উৎসব মাত্র তিন দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, যা কোন মতেই অভিপ্রেত নয়। বিভিন্ন ধার্মিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত তিথি একেবারে শেষ মুহূর্তে বদলে যাওয়ায় সমাজের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, এ ঘটনাও আকছার ঘটে এদেশে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুণিজন তাঁদের মতো করে পঞ্জিকা-সংস্কার করার চেষ্টা করেছেন। অবশেষে স্বাধীনতার পর ডক্টর মেঘনাদ সাহা-র নেতৃত্বে একটি কমিটি পঞ্জিকা-সংস্কার বিষয়ে বেশ কিছু মূল্যবান মতামত দেয়। দুর্ভাগ্যবশত সেই সুপারিশগুলোর বেশির ভাগই এখনও বাস্তবায়িত করা হয়নি, এবং আমরা সেই তিমিরেই রয়ে গেছি।

সেই পঞ্জিকা-সংস্কার সমিতির সুপারিশগুলো সর্বসাধারণের জন্যে সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই লেখাটিতে, নিম্নবর্ণিত অধ্যাগুলোর মাধ্যমেঃ -

১. নিবেদন
২. অবতরণিকা
৩. বিশ্বপঞ্জির পরিকল্পনা
৪. সপ্তাহচক্র
৫. রোমক ও গ্রেগরী পঞ্জি
৬. দিন মাস ও বৎসর
৭. নক্ষত্র বৎসর ও সূর্যের অয়নচলন
৮. মিটন-চক্র
৯. বারো মাসঃ সাতাশ নক্ষত্র
১০. তিথি করণ ও যোগ
১১. সৌরমাসঃ সংক্রান্তি
১২. অধিমাস মলমাস ও ক্ষয়মাস
১৩. হিন্দুর পঞ্জিকা
১৪. সংশোধিত ভারতীয় পঞ্জিকা
১৫. পঞ্জিকা-সংস্কার-কমিটির প্রস্তাব
১৬. উপসংহার

তথ্য, এবং প্রাসঙ্গিক যুক্তি দিয়ে সাজানো এই লেখাটি পড়তে ও বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় না, তবে খারাপ লাগে এই ভেবে যে ‘নিবেদন’ অধ্যায়ে অমন ঝরঝরে চলিত বাংলা যিনি লিখলেন, সেই লেখকই মূল অংশে এসে সাধু ও প্রায়শ খটোমটো ভাষায় লিখলেন কেন?

(৩) ভারত-সংস্কৃতিঃ

আই.এস.বি.এনঃ 978-81-7522-620-3

৪৩৮ পাতার, কিছু মুদ্রণ প্রমাদে চোট পাওয়া অথচ গুণমানের দিক দিয়ে সর্বার্থে বিস্ময়কর এই বইটা পড়তে গিয়ে দুটো কথা প্রথমেই মনে হলঃ
ক) আজকের এই অসহিষ্ণু সময়ে এমন একটা বই বাংলায় প্রকাশ করতে প্রচুর সাহস লাগে। প্রকাশকের, এবং আমাদের, পরম সৌভাগ্যবশত এই বইয়ে স্থান পাওয়া লেখকেরা সত্যিকারের বুদ্ধির ও জ্ঞানের চর্চাকে গুরুত্ব দিতেন বলে আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে এই লেখাগুলো লিখে গেছিলেন, আর সেজন্যেই এমন একটা সংকলন পাওয়া গেল।
খ) ইতিহাস, এবং সামগ্রিক ভাবে সংস্কৃতি চর্চায়, মার্ক্সিস্ট ঘরানার সর্বগ্রাসী প্রভাবজাত বীভৎস ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে ভারতীয়, বিশেষত বাঙালির মননে। সেই অবস্থায় একটা বইয়ে ‘হিন্দুসংগীত’ বা ‘হিন্দু সংস্কৃতির স্বরূপ’ নিয়ে কিছু পড়তে পাওয়া, যাতে আর.এস.এস বা গোলওয়ালকর-এর অন্তত একবার বাপান্ত করা হয়নি, একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।

“প্রকাশকের নিবেদন” এবং করুণাসিন্ধু দাস-এর মূল্যবান ও তথ্যসমৃদ্ধ ভূমিকার পর যেসব লেখা এই বইয়ে আছে তারা হলঃ

(ক) ক্ষিতিমোহন সেন-এর “ভারতের সংস্কৃতি”(প্রথম প্রকাশ আষাঢ় ১৩৫০): প্রকাশের পর থেকেই কার্যত ক্লাসিকের সম্মান পাওয়া এই বইটিতে যেসব অধ্যায় আছে, আমি শুধু তাদের নাম তুলে ধরছি, যাতে পাঠক বুঝে নিতে পারেন, ঠিক কেমন স্বর্ণখনির কথা বলছি আমিঃ

১. ভূমিকা
২. ভারতে সংস্কৃতির বৈচিত্র্য
৩. আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির অপূর্ব ফল
৪. সম্মিলনের অপূর্ব ফল
৫. শ্রাদ্ধোৎপত্তি
৬. বেদবাহ্য নানা আচার
৭. ভক্ত ও ভাগবতদের উদারতা
৮. পাহুড দোহা
৯. বৌদ্ধ দোহা
১০. ভাগবতদের মত
১১. বুদ্ধদেবের মৈত্রী
১২. উপনিষৎ ও সংহিতা
১৩. বৈদিক ও অবৈদিক ধারার যুক্তবেণী
১৪. ভারতে মুসলমান সাধনা
১৫. বাহ্য আচার ও ভাবভক্তি
১৬. রামানন্দ-ধারায় সমদৃষ্টি
১৭. প্রাচীন যুগের সমদৃষ্টি
১৮. সন্তদের মত

(খ) প্রমথ চৌধুরী ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী-র “হিন্দুসংগীত”(>প্রথম প্রকাশ বৈশাখ ১৩৫২): তিনটি অধ্যায় দিয়ে গড়ে উঠেছে এই অসামান্য লেখাটি, যা খাঁটি বৈঠকি চালে একটি সুবিশাল বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসু মনের ভয় ভাঙিয়ে তাকে ডেকে নিতে চেয়েছে সুরের আঙিনায়। এই অধ্যায়গুলো হলঃ

১. ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী-র “সংগীত পরিচয়”
২. প্রমথ চৌধুরী-র “হিন্দুসংগীত”
৩. বীরবল-এর “সুরের কথা”

(গ) অমিয়নাথ সান্যাল-এর “প্রাচীন ভারতের সংগীত-চিন্তা” (প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১৩৫২): এই তথ্যপূর্ণ অথচ তর্কের ভঙ্গিতে লেখা নিবন্ধটি অনুসরণ করা কিঞ্চিৎ কষ্টসাধ্য, তবে লেখকের হাত ধরে এই যাত্রাটি সম্পূর্ণ করতে পারলে যা-যা জানা যাবে, তাদের পরিচয় অধ্যায়শীর্ষক থেকেই মালুম হবেঃ –

১. জিজ্ঞাসা
২. আয়োজন
৩. উৎকর্ষ
৪. গীত
৫. বাদ্য
৬. নৃত্য
৭. তাল
৮. শিল্পী
৯. চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্য
১০. সংগীত-শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
১১. দার্শনিক ভিত্তি

(ঘ) মনোমোহন ঘোষ-এর “প্রাচীন ভারতের নাট্যকলা” (প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১৩৫২): এই পুস্তিকাটি পড়তে গিয়ে প্রথমেই যা ভেবে স্তম্ভিত হতে হয় তা হল, কতটা আত্মবিশ্বাসী হলে একজন লেখক মোটামুটি পঞ্চাশ পাতার মধ্যে এমন একটা বিষয়কে, তথ্যের ক্ষেত্রে কিছুমাত্র আপোষ না করে, পেশ করতে সচেষ্ট হন, যার খতিয়ান দিতে থান ইঁট সাইজের বইও হার মেনে যায়! লেখকের এই মিতায়তন অথচ অমিত প্রয়াসের বর্ণনা এই স্বল্প পরিসরে দিতে আমি অক্ষম, তাই আপনাদের জ্ঞাতার্থে শুধু সূচিপত্রটা তুলে দিলামঃ

১. মুখবন্ধ
২. ভারতীয় জীবনে শিল্পের স্থান
৩. দৃশ্যকাব্য, রূপক বা নাট্য
৪. দৃশ্যকাব্যের শ্রেণীবিভাগ
৫. নাটক ও প্রকরণের গঠন
৬. ভারতীয় নাট্যের উদ্দেশ্য – রস-উদ্বোধন
৭. রঙ্গমণ্ডপ, সূত্রধার ও নটনটী
৮. আহার্য অভিনয়
৯. বাচিক অভিনয়
১০. আঙ্গিক অভিনয়
১১. নৃত্য ও নৃত্ত
১২. গীত ও বাদ্য
১৩. নাট্যপ্রয়োগ ও সামাজিকবর্গ
১৪. নাট্যপ্রয়োগ সম্বন্ধে অন্যান্য তথ্য
১৫. ভারতীয় নাট্যের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
১৬. দেশ-বিদেশে ভারতীয় নাট্যকলা
১৭. প্রাচীন নাট্যকলা ও আধুনিক কাল

স্থানিক সীমাবদ্ধতার কারণে এর মধ্যে অনেক আলোচনাই ঠিক ততটা মনস্বী বা আকর্ষণীয় হয়নি যা হওয়া উচিত ছিল। তবু, এমন একটা প্রাইমার এখন ছায়া প্রকাশনী থেকে বেরোলেও আমার-আপনার জন্যে এই রকম বই বোধহয় আর পাওয়া যাবে না।

(ঙ) ক্ষিতিমোহন সেন-এর “হিন্দু সংস্কৃতির স্বরূপ” (>প্রথম প্রকাশ ভাদ্র ১৩৫৪): এই লেখাটি পড়তে গিয়ে আবারও মনে হয়, এ এমন এক আশ্চর্য সময়ের রচনা, যখন বিদ্যাচর্চায় রাজনীতির রং লাগেনি, আর শুধু সেই বিচারেই এই লেখাটা পাঠ্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। তারপর লেখাটার গভীরে যখন ঢুকি, তখন নতুন করে বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে ধর্মের এমন সরল ও মানবিক রূপটি এত সহজ ভাষায় সবার সামনে তুলে ধরতে যে গভীরতা ও মানবিকতা লাগে, তা আজ বিরল বলেই হয়তো এমন বই আর হয় না।

যেসব অধ্যায় দিয়ে এই বইটি সাজানো সেগুলো হলঃ –

১. শিবপূজা
২. অন্যান্য প্রমাণ
৩. পারস্পরিক প্রভাব
৪. দেশ-দেশান্তরে
৫. কাশী প্রদেশের ধর্মশাস্ত্র
৬. বাংলাদেশের ধর্মশাস্ত্র
৭. মিথিলার ধর্মশাস্ত্র
৮. বিহারের ধর্মশাস্ত্র
৯. আসাম-উড়িষ্যার ধর্মশাস্ত্র
১০. অন্ধ্রদেশের ধর্মশাস্ত্র
১১. মান্দ্রাজ প্রদেশের ধর্মশাস্ত্র
১২. কর্ণাটের ধর্মশাস্ত্র
১৩. মালাবারের ধর্মশাস্ত্র
১৪. তাঞ্জোরের ধর্মশাস্ত্র
১৫. মহারাষ্ট্রদেশের ধর্মশাস্ত্র
১৬. গুজরাটের ধর্মশাস্ত্র
১৭. কাশ্মীরের ধর্মশাস্ত্র
১৮. নেপালের ধর্মশাস্ত্র
১৯. সিন্ধু ও পঞ্চনদ প্রদেশের ধর্মশাস্ত্র
২০. অব্রাহ্মণদের রচিত ধর্মশাস্ত্র
২১. শেষকথা

(চ) ক্ষিতিমোহন সেন-এর “ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনা” (প্রথম প্রকাশ চৈত্র ১৩৫৬): সাম্প্রদায়িকতার বিষে নীল আজকের ভারতে এমন একটা বই সোজাসুজি সিলেবাসে ঢুকে গেলে যথাযথ হত। কেন? সূচিপত্র দ্রষ্টব্যঃ –

১. হিন্দুধর্মে উদারতার বাণী
২. মুসলমানধর্মে মহাবাণী
৩. মিলিত সাধনা
৪. চিত্রশিল্প
৫. স্থাপত্যশিল্প
৬. সাহিত্য
৭. সংগীত
৮. গণসাধনা ও গণসংগীত
৯. জ্যোতিষাদি শাস্ত্র
১০. পরিশিষ্ট (মালিক মহম্মদ জায়সী ও মহাবীর ভীষ্ম)

(ছ) বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য-র “বৈদিক দেবতা” (প্রথম প্রকাশ মাঘ ১৩৫৭): সমকালের নিরিখে যথেষ্ট তথ্যানুগ হলেও পরবর্তী যুগের ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণা এই লেখাটিকে অনেকটাই পুরনো করে দিয়েছে। তবু দেখে নেওয়া যাক, কী-কী স্থান পেয়েছে এই লেখায়ঃ –

১. অবতরণিকা
২. দেবতা-সংখ্যা
৩. দেবতাগণের আকৃতি
৪. দেবতাগণের নৈসর্গিক প্রতিমূর্তি
৫. প্রাগৈতিহাসিক দেবতা
৬. ইন্দো-ইরাণীয় দেবমণ্ডলী
৭. দ্যুলোকের দেবগণ
৮. অন্তরিক্ষের দেবতা
৯. পৃথিবীস্থ দেবগণ
১০. উপসংহার

সব মিলিয়ে শুধু একটাই কথা বলতে পারি। ক’দিন পরেই আসবে বাইশে শ্রাবণ। পঁচিশে বৈশাখ থেকে শুরু হওয়া নানা ‘জয়ন্তী’ আর ‘চর্চা’-ও থেমে আসবে তার পর। কিন্তু সেই মানুষটি অন্তরের শিক্ষা নিয়ে যে কথাগুলো ভেবেছিলেন, আর অন্যদের ভাবানোর বৃথা চেষ্টা করে গেছিলেন আমৃত্যু, সেই কথাগুলোর প্রতিধ্বনি যদি শুনতে চান, তবে এই বইগুলো পড়তে পারেন। অনেক দুর্বলতা নিয়েও এরা মাতৃভাষায় সুস্থ বিদ্যাচর্চার যে পথ গড়তে চেয়েছিল, তা পরের ষাট-পঁয়ষট্টি বছরে আগাছায় ঢাকা পড়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু শিক্ষার মজা তো এটাই যে সেটা যে কোন সময়ে, যে কোন বয়সে আবার শুরু করা যায়!

ভালো থাকুন।

 


আলোচক পরিচিতি - আলোচক এক উদ্যমী পাঠক, যিনি বিপ্লব, চোখের জল, মানবচরিত্রের অতলস্পর্শী গভীরতা, সিন্ডিকেট, সারদা, ধোনি, ইত্যাদি তাবড় বিষয় থেকে দূরে, স্রেফ বেঁচে থাকার গল্প পড়তে চান। নিজের ভালবাসা থেকেই দীর্ঘদিন বইয়ের রিভিউ করছেন।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2015 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।