প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বইয়ের খবর

অগাস্ট ৩০, ২০১৫

"প্রবন্ধের বিষয়বস্তুকে লঘু না করেও প্রবন্ধগুলিকে বেশ সরসভাবে পেশ করার প্রচেষ্টা..."

আলোচনা - ভাস্কর বসু

  • বইয়ের নাম: চাপড়ঘন্ট
  • লেখক: রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
  • প্রকাশক: সৃষ্টিসুখ
  • ISBN: 978-93-5040-277-1
  • ৯৬ পাতা
  • তৃতীয় সংস্করণ

সাম্প্রতিক কালে প্রবন্ধের যে বইগুলি লেখা হয় তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বল্পসংখ্যক পাঠকের জন্য যাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত। সম্প্রতি হাতে এলো একটি নূতন ধরনের বই, ‘চাপড়ঘন্ট’ যেখানে প্রবন্ধের বিষয়বস্তুকে লঘু না করেও প্রবন্ধগুলিকে বেশ সরসভাবে পেশ করার প্রচেষ্টা দেখা গেছে প্রাবন্ধিকের মধ্যে। লেখক সম্ভবত: তাঁর অভীষ্ট পাঠকমণ্ডলী (Target Audience) কে বেছে নিয়েছেন সাধারণ পাঠকের দরবার থেকেই।

প্রাবন্ধিকের নাম শ্রীরামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। বইটির প্রকাশনা সংস্থা সৃষ্টিসুখ। ক্ষীণ কলেবর (৯৬ পাতা) বইটিতে মাত্র ১১টি প্রবন্ধের সংকলন। কিন্তু এরই মধ্যে বিষয় বৈচিত্র্যের দিকে লেখক ও প্রকাশক বেশ খেয়াল রেখেছেন। যাদের সম্বন্ধে প্রবন্ধগুলি, তাঁরা হলেন - সাহিত্য ও সাহিত্যিক (বাংলা, রাজশেখর, সৈয়দ মুজতবা আলী), ইতিহাস (ঠাকুর বংশ, প্রাচীন ভারত, নালন্দা)। এছাড়া আছে ভাষাতত্ব ও ভাষাপ্রেমিকদের আখ্যান (পাণিনি, শহীদুল্লাহ)। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে কিছু বিচিত্র বিষয় (কলকাতা, খাদ্যপ্রেম, দাদাঠাকুর) নিয়ে খুব সরস প্রবন্ধ।

লেখক লেখাতেই কবুল করেছেন তাঁর প্রগাঢ় অনুপ্রেরণা সৈয়দ মুজতবা আলী। তাই প্রবন্ধগুলি লিখতে গিয়ে তিনি সতর্ক থেকেছেন যাতে পাঠককে কোনমতেই তথ্য ও বিশ্লেষণের ভারে অতিমাত্রায় ভারাক্রান্ত না হতে হয়। সেই প্রচেষ্টাতে তিনি রীতিমতো সফল। উদাহরণস্বরূপ ধরা যেতে পারে ‘কুশারী থেকে ঠাকুর’ প্রবন্ধটি।
যে কোন প্রাবন্ধিকের কাছেই রবীন্দ্রনাথ খুব আকর্ষণীয় বিষয়। কিন্তু এখানে লেখক বেছেছেন তাঁদের পরিবারের ইতিবৃত্ত, ‘ঠাকুর’ হয়ে ওঠার কাহিনী। সবিস্তারে, বেশ সরস ভঙ্গিমাতে তিনি এই কাহিনীটি বিধৃত করছেন। খুব বেশী বিস্তার থেকে তিনি সংযত থেকেছেন কারণ তাঁর মনে হয়েছে, ‘না হলে কলেবর বৃদ্ধি পাবে, আর পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে’।

তাঁর এই সংযমকে সাধুবাদ জানাতে হয় কারণ যদি পাঠক আরো বেশী জানতে চান, তার পথনির্দেশ তিনি করেই রেখেছেন। আর যে পাঠকের চাহিদা পর্যাপ্ত, তাঁদের জন্য ‘অলমিতি’!

ডক্টর মহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পর্কে প্রবন্ধটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ঘোর দুর্দিনে তাঁর প্রতি তাঁর হিন্দু ব্রাহ্মণ শিক্ষক স্যার আশুতোষের গভীর অনুরাগ অনেককে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করবে।
মুজতবা ও রাজশেখরের ওপর প্রবন্ধ দুখানি তাঁদের সরস রচনার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। একই কথা প্রযোজ্য দাদাঠাকুর সম্পর্কিত প্রবন্ধটি সম্পর্কেও। তবে আমার মতে সংকলনের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রবন্ধটি ‘পাণিনি ও অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ’।

এই বিষয়টি নিয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যে খুব বেশী চর্চা চোখে পড়েনি অথচ পাণিনি এমন একজন মানুষ যাঁকে প্রখ্যাত মার্কিন ভাষাতত্ববিদ নোয়াম চমস্কি ও তাঁর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বিস্তারিত ভাবে পাণিনির জীবন ও কাজ তুলে ধরেছেন লেখক। পাণিনি পরবর্তী ভাষাতাত্বিক কাজ নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন। এই একটি ব্যাপারে, অর্থাৎ ভারতীয় ব্যাকরণ কিন্তু সারা পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, আজ যাঁরা ভারতের ‘জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন’ এর কথা সদম্ভে ঘোষণা করেন, তাঁরা এই বিষয়টি সম্পর্কে একেবারে অচেতন। আশা করি রামকৃষ্ণবাবুর সহজ সরল ভাষায় লেখা এই প্রবন্ধটি কিছু মাত্রায় হলেও তাঁদের মধ্যে কৌতূহলের সঞ্চার করবে।

বইটি সম্পর্কে আমার একটি অনুযোগ, লেখকের কাছে নয়, - প্রকাশনা সংস্থার কাছে।
প্রথমত:, এই ধরণের বইতে একটি ভূমিকা থাকা খুব প্রয়োজন। তার মাধ্যমে লেখক বা প্রকাশক তাঁদের এই প্রবন্ধগুচ্ছের সম্পর্কে ভাবী পাঠককে আলোকিত করতে পারেন। দ্বিতীয়ত:, বইটির মুদ্রণ কিন্তু আরো অনেক ভালো হতে পারত। সৃষ্টিসুখের পরবর্তী যে বই গুলি, (যেমন, - ঠিক যেন ক্যালেইডোস্কোপ) হাতে এসেছে সেগুলি কিন্তু এদিক থেকে অনেক উন্নত। অক্ষরের মাপ ও বিন্যাস, মুদ্রণের পারিপাট্য, অনুচ্ছেদ গুলির মধ্যে সুষম ব্যবধান – সব দিকেই উন্নতির প্রভূত অবকাশ আছে। বিশেষত:, কয়েকটি যুক্তাক্ষর, যেমন ণ্ড বা ঙ্গ বা ঙ্ক এর অন্যপ্রকার মুদ্রণ খুবই চক্ষুপীড়ার কারণ। উদ্ধৃতিগুলিও আরো একটু মনোযোগের দাবী রাখে।

ব্যাক-কভারের লেখাটি মনোগ্রাহী কিন্তু পড়তে বেশ কষ্ট করতে হয়, অথচ এইটিই বইটির মূল বিজ্ঞাপন। তুলনাতে সেইখানেই লেখক-প্রকাশক- প্রচ্ছদ শিল্পী- মূল্য জ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তিটি (ছবি দ্রষ্টব্য) র মুদ্রণ বেশ সুষ্ঠু।
আমি যে বইটি পেয়েছি তা তৃতীয় সংস্করণ। কাজেই বইটি পাঠক সমাদৃত।

প্রকাশকদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, বইটির মুদ্রণে আরো একটু যত্নবান হতে পারেন তাহলে এরকম সরস প্রবন্ধের বইটি আরো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে। এই ধরনের প্রবন্ধের বইয়ের পাঠকেরা কিন্তু এইসব ব্যাপারে বেশ সতর্ক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।


আলোচক পরিচিতি - জন্ম কলকাতায়, বেড়ে ওঠা দক্ষিণ চব্বিশ-পরগনার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলে। ১৯৮৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং পাস করে কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে। শখের মধ্যে অল্প-বিস্তর বাংলাতে লেখা - অল্প কিছু লেখা রবিবাসরীয় আনন্দবাজার, উনিশ-কুড়ি, নির্ণয়, দেশ, ইত্যাদি পত্রিকায় এবং বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিন (সৃষ্টি, অবসর, ইত্যাদিতে) প্রকাশিত।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2015 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।