প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বইয়ের খবর - সৈকত মুখোপাধ্যায়ের 'নাইটির প্রতি বারমুডা'

মার্চ ১, ২০১৬


"প্রাপ্তমনস্ক হাসির গল্প পড়তে চাইলে অবিলম্বে এই বইটি যোগাড় করুন, আর জাস্ট মজে যান এর রসে।,..."



আলোচনা - ঋজু গাঙ্গুলি

  • বইয়ের নাম: নাইটির প্রতি বারমুডা
  • লেখক: সৈকত মুখোপাধ্যায়
  • প্রকাশক: পত্র ভারতী (জানুয়ারি ২০১৫)
  • হার্ডকভার, পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪
  • ISBN: 978-81-8374-337-2

ফাল্গুন মাস পড়ে গেছে। শহরে এখনও যে ক’টা গাছ আছে তাদের কোনটার ডালে বসে হয়তো প্রাণপণে চেঁচাচ্ছে একটা কোকিল। কিন্তু ফুরফুরে হাওয়ায় হালকা মনে যেই আপনি “কে তুমি, নন্দিনী” গাইবেন বলে ভেবেছেন, ঠিক তক্ষুণি চোখ আর কানের ভেতর দিয়ে মরমে পশিবে বাজেট, নির্বাচন, দাঙ্গা, ইয়ার-এন্ডিং, সব্জির দাম, ইত্যাদি। আপনিও দাঁতমুখ খিঁচিয়ে “এ জীবন লইয়া কী করিব”-র বিভিন্ন চলিত ও প্রাকৃত রূপ আওড়াতে-আওড়াতে নিজের দশচক্রে ফেঁসে যাবেন। এই সাংঘাতিক চক্কর থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে আপনার দরকার প্রাণখোলা হাসির।

হাসতে গেলে কী কী করতে হয়? উপায় অনেক, কিন্তু প্রতিটির সঙ্গেই আছে কিছু-না-কিছু চাপ। লাফিং ক্লাবে যেতে গেলে সকালে উঠতে হবে। বাজারে যেসব জোকস-এর বই পাওয়া যায় সেগুলো পরবর্তী প্রজন্ম উপভোগ করলেও আপনি হয়তো তাদের পড়তে গিয়ে একটু লজ্জাই পাবেন, বা হতাশ হবেন। বিদেশি সিট্কম-গুলোর আনুনাসিক ইংরেজি বুঝতে গেলে সাবটাইটেল লাগবে। স্বদেশি ‘হাসির’ সিনেমা-সিরিয়াল দেখতে গেলে কেঁদে ফেলার প্রভূত সম্ভাবনা। তাহলে কি আমরা প্রাণখুলে হাসতেই পারব না? এই কঠিন সমস্যার সমাধান করার জন্যে আজ ‘হার মানা হার’ সিনেমায় উত্তম কুমারের মতো করে “এসেছি আমি এসেছি” একটি বইয়ের সন্ধান দিতে, যা এই বাজারেও বিদ্রূপ নয়, pun-দিয়ে নয়, বরং সত্যিকারের হাসির সন্ধান দিতে পারবে, যে হাসি হাসতে-হাসতে তলপেটে খিঁচ ধরে!

বইটির নাম “নাইটির প্রতি বারমুডা”। লেখক শ্রী সৈকত মুখোপাধ্যায়,  যাঁর কলম/কিবোর্ড এই সময়ে বাংলা ভাষার কিছু শ্রেষ্ঠ গল্প-উপন্যাস আমাদের উপহার দিয়েছে ইতিমধ্যেই। একটি সংক্ষিপ্ত অথচ মর্মস্পর্শী ভূমিকার পর এই বই-এ যেসব গল্প আছে তাদের অতি-অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলাম: -

(১) মানভঞ্জন: এলাকার সবচেয়ে শান্ত, ভালো, আর সুবোধ ছেলে অমলকান্তিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে রেপ কেসে। কেন?

(২) মীনচক্ষুর বিকল্প: চন্দনার প্রেমে পাগল তরুণ আর অর্ঘ্য, আর চন্দনাও দুজনকেই পছন্দ করে। তাহলে কীভাবে চন্দনা বেছে নেবে তার ‘পাত্র’?

(৩) অপহরণের অ আ ক খ: লিপি-জ্যোতিষী সুরেশচন্দ্র দত্তবণিকের মেয়ে শর্মির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে মৃদুল, কিন্তু করালবদন বাপের ঘেরাটোপ থেকে তাঁর মেয়েকে সে কীভাবে উদ্ধার করবে?

(৪) প্যাশন ফ্রুট: বই পড়ে শুভায়ুর মাথায় ঢুকেছে একটা তত্ত্ব, যার ফলে প্রেম-প্রীতি সবই তার চোখে হয়ে উঠেছে আমাদের শাখামৃগ পূর্বপুরুষদের বংশবিস্তারের ছলাকলার পড়ে থাকা ভাগশেষ। শাক্য কি পারবেন শুভায়ুর হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক মনকে ফিরিয়ে আনতে?

(৫) কুন্তীমন্ত্র: বিলাসপুরের ভৌমিক পরিবারের প্রত্যেক প্রজন্মে একটি করে ক্ষণজন্মা প্রতিভার উন্মেষ ঘটছে, কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে আলাদা ক্ষেত্রে যশস্বী। কীভাবে?

(৬) গ্যাস্ট্রোলীলা: ডাক্তার অনুপম জালানের প্রতি মাত্সর্য্য এবং নিজের স্ত্রী দীপার প্রতি ক্রোধ: এই দুই রিপুর শরে জর্জরিত হয়ে ডাক্তার নয়ন মিত্র অনুপমের বউ রুক্মিণীর দিকে এগিয়েই গেলেন শেষ অবধি। তারপর কী হল?

(৭) মাতা নিম্বুপানি: এই গল্পটি নিয়ে আমি কিচ্ছু বলব না। এটি একটি ক্লাসিক, যা নিয়ে আমি কিছু লিখলে তা হবে স্রেফ প্যাচাল পাড়া।

(৮) তালোত্তম সম্ভব কাব্য: মেয়েরা কী চায় তাদের ‘আদর্শ’ পুরুষের মধ্যে? তেমন সব ভালো জিনিস তাল-তাল করে নিয়ে বানালে কি সুন্দ-উপসুন্দ যেমন তিলোত্তমা-র জন্যে লড়ে গেছিল, তেমনই লড়াই বাঁধবে মেয়েদের মধ্যে?

(৯) এক্সচেঞ্জ অফার: পার্টি থেকে সমাবেশ, সবরকম অনুষ্ঠানে সেলিব্রিটি যোগান দেওয়ার কাজ করে মেসার্স সেলিবসাপ্লাই। কিন্তু শেষ অবধি অমন মহাবিপর্যয় কেন ঘটল সেই সংস্থায়?

(১০) ক্লিওপেট্রার ক্লোনিং: গল্পের নামেই মালুম হবে, এ গল্প কী, বা কাকে নিয়ে। আমার দুর্বল ভাষ্য এর দাপট বোঝাতে অক্ষম, তাই এটিও আপনাকে পড়ে নিতে হবে।

(১১) একটি ঐতিহাসিক ভুল: এই গল্পটা মনে পড়া মাত্রই সোডার বোতলের ঢাকনা খুললে ভসভসিয়ে উঠে আসা বুজকুড়ির মতো করে হাসি উঠে আসে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে, স্থান-কাল-পাত্রের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে। তাকে নিয়ে আমি আর কীই বা লিখতে পারি?

(১২) নাইটির প্রতি বারমুডা: এটি একটি প্রেমপত্র, যা নাগরিক বাঙালির অতি প্রিয় দুটি বসনের সূত্র ধরে লেখা একটি চরমপত্রও বটে।

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, হিমানীশ গোস্বামী, আর তারাপদ রায়ের পর রসিক বাঙালি এমন লেখাই খুঁজেছেন হন্যে হয়ে, যা পড়ে মাথার ভেতরের কালিঝুলি সাফ হয়ে যায়, ফুসফুসে আসে একটু বেশি করে বাতাস নেওয়ার জোর। কিন্তু সত্যিকারের হাসির গল্প লেখা যে কী অমানুষিক রকমের কঠিন কাজ তা আমরা সকলেই অল্পবিস্তর জানি। সেই কঠিন কাজটি এমন নিপুণতার সঙ্গে সমকালীন লেখকদের মধ্যে বোধহয় একমাত্র সৈকত মুখোপাধ্যায়-ই করতে পারতেন। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার বিনীত নিবেদন, প্রাপ্তমনস্ক হাসির গল্প পড়তে চাইলে অবিলম্বে এই বইটি যোগাড় করুন, আর জাস্ট মজে যান এর রসে। সত্যি বলছি, এই দগ্ধ ফাল্গুনও রঙিন হয়ে উঠতে পারে এর সৌজন্যে।




আলোচক পরিচিতি - আলোচক এক উদ্যমী পাঠক, যিনি বিপ্লব, চোখের জল, মানবচরিত্রের অতলস্পর্শী গভীরতা, সিন্ডিকেট, সারদা, ধোনি, ইত্যাদি তাবড় বিষয় থেকে দূরে, স্রেফ বেঁচে থাকার গল্প পড়তে চান। নিজের ভালবাসা থেকেই দীর্ঘদিন বইয়ের রিভিউ করছেন।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2015 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।