প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বইয়ের খবর

অগাস্ট ৩০, ২০১৬

 

প্রীতম বসু-র 'ছিরিছাঁদ'

পাঠ-প্রতিক্রিয়া - সূর্যনাথ ভট্টাচার্য

বইয়ের নাম: 'ছিরিছাঁদ'
লেখক: প্রীতম বসু
প্রাপ্তিস্থান/যোগাযোগ - গৌতম বসু, কলকাতা, ৮৫৮৪৯৩৩৮৫৮ (বিকাল ৬টার পর)
প্রথম প্রকাশ- লক্ষীপূজা ২০১৩
হার্ড কভার, ১২০ পাতা
দাম: ১৭৫/-

স্ত্রীভূমিকা-বর্জিত একটা উপন্যাস। মাত্র তিনটি মূল চরিত্র - এক পত্রিকা সম্পাদক, তার এক কর্মচারী সাংবাদিক ও এক বিক্ষিপ্ত ছন্দকার। পার্শ্বচরিত্রে কয়েকটি হতচ্ছাড়া ছাত্র, আর এক কবি, পুলিশ ইত্যাদি। উপজীব্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। শুধু বাংলা সাহিত্যও নয়, বাংলায় ছন্দের ব্যাকরণ ও ক্রমবিকাশের সুগভীর তত্ত্ব! খুব ঔৎসুক্য বোধ করছেন কি?

জানি অনেকেই আগ্রহ দেখাবেন না। কিন্তু যদি বলি, লেখকের নামটা প্রীতম বসু, তাহলে 'পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল' যাঁরা পড়েছেন তাঁদের নিশ্চয়ই আর বলতে হবেনা, তখনই পড়তে চাইবেন।

যাঁরা সেটা পড়েননি, তাঁদেরও বলবো এই বইটা পড়তে। ইতিহাস নিয়ে সমকালীন প্রেক্ষাপটে এমন অভিনব ও আকর্ষণীয় বই খুব কম আছে।

প্রীতমবাবু পেশায় ইঞ্জিনীয়ার কিন্তু প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নেশা। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে গুরুত্বপূর্ণ পদভার সামলেও সপ্তাহান্তে তিনি ডুবে যান পড়াশোনায়। এই বইগুলি সেই গবেষণার ফসল। পড়লেই বোঝা যায় শুধু শৌখিন অবসর যাপন নয়, একান্ত নিষ্ঠায় তিনি বাংলা ভাষার বিবর্তনের ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করতে চান। আপন মনের তাগিদে। কিন্তু যেহেতু মানুষটি রসিক, কবি এবং তাঁর কলমটি চলে সরস মসৃণতায়, তাই আমরা শুষ্ক রিসার্চ পেপারের জায়গায় পেয়ে যাই 'ছিরিছাঁদ' এর মতো অতীব সুখপাঠ্য এক সৃষ্টি।

প্রণবেশ রায়, ওরফে পানু তাচ্ছিল্যে পেনো, চাপরাশি হয়ে পত্রিকার অফিসে ঢুকেছিল। পত্রিকার তৎকালীন কর্ণধারের দাক্ষিণ্যে সে সাংবাদিক বনে। পানু রিপোর্টার। কিন্তু স্নেহপরায়ণ মালিকের পুত্রের আমলে সে আর তেমন কল্কে পায় না। বর্তমান মালিক হাঁদু চক্কোত্তি তাকে একরকম বলেই দিয়েছে, যে ভাবেই হোক পত্রিকায় রকমারি ছন্দের কবিতা দিয়ে সে যদি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পত্রিকাটিকে পরাস্ত না করে তাহলে তাকে এই সাধের চাকরিটির মায়া কাটাতে হবে।

হাঁদু চক্কোত্তি আবার ছন্দরসিক। কোত্থেকে একটা পুরনো বাংলা পুঁথি যোগাড় করেছে। তাতে আছে অজ্ঞাত কবিদের লেখা নানান ছন্দের কবিতা। পানুর ওপর ভার পড়ে সেই সব প্রাচীন কবিদের কুলুজী খুঁজে বার করার।
সেই কাজেই পানুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এক মাথা পাগলা কিন্তু মস্ত গুণী কবির। চরিত্রটি সরাসরি যেন উঠে এসেছে হ-য-ব-র-ল থেকে। তাই সে কখন পেটুক রামু, কখনও ছাপোষা কেরানি, কখনও বা বার্নার্ড পঞ্চাশ, অসিতবরণ, ভোলা নর্তক কিংবা বীরপুরুষ সাহা। অন্তিম অবতারে সে নিত্য গোঁসাই। একই অঙ্গে এতো রূপ! তুখোড় ছান্দসিক ও ছড়াকার।

আসলে কে সে? সেটাই রহস্য। সেটাই ইতিহাস। সেই নিয়েই গল্প। পঞ্চাননমঙ্গলের মতো রুদ্ধশ্বাস না হলেও কাহিনীতে মজা আছে। সম্যক জানতে হলে বইটা পড়া দরকার।

শেষে যা হয় হোক, এই উপন্যাসে প্রাপ্তি শুধু সেটাই নয়। কাহিনী ছাড়াও পুরো আখ্যান জুড়ে এর ছড়িয়ে আছে অজস্র ছড়া। অসম্ভব নিপুণতায় ছড়াগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন ছন্দে। ছন্দের দৃষ্টান্তরূপে গদ্যের মাঝে এলেও ছড়াগুলো কোথাও আরোপিত লাগে না। আর এগুলোকে মূলত ছড়া বললেও তার মাঝেই লেখক রেখে দিয়েছেন রামায়ণ, গীতগোবিন্দ, মেঘনাদবধ কাব্যের কিছু কিছু বাংলা ছন্দরূপ! যা অন্যান্য ছড়াগুলোর লঘুতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আছে দৃষ্টান্ত দিয়ে ছন্দের প্রকরণ বোঝানো। অবশ্যই গল্পের মধ্যে, অ্যাকাডেমিক ক্লিষ্টটা নেই তাতে। অথচ গঠন দেখে বোঝা যায় তার পিছনে রয়েছে বিস্তর অধ্যয়ন। পণ্ডিত লোক পাঠ করলে নিশ্চয়ই বুঝবেন। ভুলভ্রান্তি আছে কিনা তাঁরাই বলতে পারবেন। আমার মতো ছন্দের ব্যাকরণে আনাড়ি ব্যক্তির কাছে তো পরম উপভোগ্য লেগেছে।

আর আছে ইতিহাস! সহজ সরল ভাষায় এক হাজার বছর আগের একটা বিশ্বাসযোগ্য ছবি। কাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা ও উপস্থাপনার গুণে পঠনসুখ একটুও ব্যাহত হয় না।

তবে আমার ধারণা সেলফোন-দুরস্ত নব্য যুবগোষ্ঠীর মধ্যে ছিরিছাঁদ জনপ্রিয় হবার সম্ভাবনা কম। গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিকের কাছেও এর স্বাদ কেমন লাগবে সে বিষয়ে নিঃসংশয় নই। কিন্তু প্রাপ্তমনস্ক ইতিহাস সচেতন সরস ব্যক্তিদের কাছে অসম্ভব ভালো লাগার কথা। তবু এ বইয়ের সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করবো না। কেননা রাবড়ি পছন্দ নয় এমন মানুষও এ জগতে আছে!

প্রীতমবাবু নিজের বিপদ নিজেই সৃষ্টি করছেন। পরের বইটার জন্যে প্রত্যাশার পারা কিন্তু আরও একদাগ চড়ে গেল।

 


লেখক পরিচিতি - অধীত বিদ্যা বিদ্যুৎ-প্রযুক্তি, পেশা সরকারি চাকরি। বাংলার বাইরে বিশ বছরের প্রবাসজীবন। যাদবপুরের স্নাতক, খড়গপুরে স্নাতকোত্তরণ। আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো একটা এম-বি-এ ডিগ্রীও আছে। ছোটবেলা থেকে গল্প পড়তে ভাললাগা। বই পড়া ছাড়া প্রিয় অবসর (কোথায়?) বিনোদন ইতিহাস আর অঙ্কে। লেখালিখিটা সম্পূর্ণ শখের, মনের কথা সাদামাটা ভাবে বলার একটা তাগিদ থেকেই এই মতিভ্রম। ছন্দ মেলাতে অক্ষম। মনেপ্রাণে সাবেকী। গদ্যেও প্রাচীনপন্থী, বিমূর্ত আধুনিকতা পছন্দ নয়, আসেও না।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।