বইয়ের খবর
অগাস্ট ১৫, ২০১৬
একুশ শতকের নোবেলজয়ী চিকিৎসাবিজ্ঞান
আলোচনা - কেয়া মুখোপাধ্যায়
বইয়ের নাম: একুশ শতকের নোবেলজয়ী চিকিৎসাবিজ্ঞান লেখক: মানস প্রতিম দাস
প্রকাশক: এভেনেল প্রেস
প্রচ্ছদ: বাবুল দে
ISBN: 978-93-80736-07-5
প্রকাশ: জানুয়ারি ২০১৬
পেপারব্যাক, ৯২ পৃষ্ঠা
দাম: ১৩৫ টাকা
|
প্রতি বছর অক্টোবর মাসে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা হয়। অন্য সব বিষয়ের পাশাপাশি খুব আগ্রহ থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার নিয়ে। ফ্রন্ট পেজ স্টোরি হয় কাগজে। বিজ্ঞানের খবরে আগ্রহীরা ছাড়াও বিশ্ববিজ্ঞানের হেঁশেলের খবর জানতে উৎসুক হয়ে থাকেন এমন অনেকে, যাঁদের দৈনন্দিন জীবনচর্চার সঙ্গে বিজ্ঞান সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের নাম আর পরিচয় বাদ দিয়ে, তাঁদের যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা সব পাঠকদের বোঝার মতো করে লেখা বড় সহজ কথা নয়।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানের জটিল তত্ত্ব আর দুরূহ তথ্যগুলোকে সহজ বাংলায় সকলের বোঝার মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন মানস প্রতিম দাস, তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রবন্ধে। 'উন্নয়নের নীল নকশা', 'জলবায়ু বিতর্ক', 'অনুপ্রেরণার নাম কালাম', 'রিমেম্বারিং রামানুজন', 'চন্দ্রযান ১- শুরু থেকে শেষ', 'ন্যানোটেকনোলজি' ইত্যাদি বইয়ের লেখক তিনি। শেষোক্ত বইটির জন্যে বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় বিজ্ঞান গ্রন্থ রচয়িতার স্বীকৃতিস্বরূপ সত্যেন্দ্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আকাশবাণী কলকাতার এফ এম রেনবো-তে তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় লাইভ অনুষ্ঠান 'বিজ্ঞান রসিকের দরবারে' চলছে দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে। এ থেকেই বোঝা যায়, সাধারণের উপযোগী করে বিজ্ঞানকে উপস্থাপনা করার ম্যাজিকটি তাঁর জানা।
এবার তিনি কলম ধরেছেন একুশ শতকের চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলি নোবেল পুরস্কার পেয়েছে - সেগুলো সহজ কথায় সকলের কাছে পৌঁছে দিতে। এ কাজ ইংরেজি ভাষায় করা যত সহজ, বাংলায় ততটা নয়। লেখকের মূল লক্ষ্য, 'বোধগম্য বাংলায়' এই বিশেষ গবেষণাগুলোর মূল নির্যাসটুকু তুলে ধরা, যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি এখন কোন পথে আর ফোকাস ঠিক কোথায় - সেটা পাঠকরা বুঝতে পারেন। লেখকের কথায়:
'নিজের শরীরকে মানুষ ভালবাসে সবথেকে বেশি। তাই নোবেল পুরস্কার যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত তখন আগ্রহ একটু বেশি হবে বৈকি!'
এখন 'বোধগম্য বাংলা' - এই বিশেষণটি বলে ফেলা সহজ। কিন্তু পৃথিবী জুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান বা সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের যে দুরন্ত অগ্রগতি হয়েছে, বাংলা পরিভাষা কিন্তু সেভাবে এগোয়নি। তাই লেখক বিশেষ সংক্ষিপ্ত পরিভাষা ব্যবহারের চেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন আবিষ্কারটির বিস্তারিত ব্যাখ্যায়। তার ফলে নিয়মিত বিজ্ঞানচর্চা যাঁরা করেন না - তাঁদের কাছেও বিষয়টা বোঝা সহজ হয়।
২০০১ থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নোবেল পুরস্কারজয়ী চিকিৎসাবিজ্ঞানের কথা ধরা আছে বইতে। প্রতিটি বছরে পুরস্কৃত বিজ্ঞানীদের ছবিসহ সংক্ষিপ্ত জীবনী আর তারপর সে বছরের গবেষণার বিষয়টির উপস্থাপনা - এ ভাবেই বইয়ের অধ্যায়গুলি সাজানো। নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্কও কম নেই। সংক্ষেপে সেদিকটাও উল্লেখ করেছেন লেখক। প্রোগ্রামড সেল ডেথ থেকে পেপটিক আলসারের জন্যে দায়ী হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি, এমব্রায়োনিক স্টেম সেল থেকে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন, এইচআইভি কিংবা সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের আবিষ্কার এই শতকেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।
গবেষণার বিষয় অংশে ভাষা আর আলোচনা এতটাই প্রাঞ্জল যে আফসোস হয়, স্কুলের জন্যে বিজ্ঞানের বই যাঁরা বাংলায় লেখেন - তাঁর কেন এমন ভাষা ব্যবহার করেন না! ছাত্ররা তাহলে সত্যিই উপকৃত হতেন!
আবিষ্কার সম্পর্কিত কিছু ছবিও আছে বইতে - আর্ট পেপারে। তবে সব ছবিগুলি একসঙ্গে এক ফর্মায় রাখা হয়েছে। বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ছবিগুলি একটু ছড়িয়ে রাখা গেলে ভাল হত। খুব ভাল হত ছবিগুলির মূল রেফারেন্স ছবির নিচে উল্লেখ করা থাকলে।
বইয়ের পেছনের ব্লার্বটিতে বই ও লেখক সম্পর্কে যে দু'চার কথা বলা আছে (সম্ভবত প্রকাশকের লেখা) - বইয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেটা আর একটু সহজ বাংলায় লেখা হলে ভাল হত। মূল বইতে মুদ্রণ প্রমাদ দেখিনি, ব্লার্বে কিন্তু ভুল বানান চোখে পড়ল। পরবর্তী সংস্করণে এটুকু সংশোধন করে নিলে ভাল হয়। বইয়ের পাতা ও মুদ্রণ উচ্চমানের। বাবুল দে-র করা প্রচ্ছদটিও উজ্জ্বল।
স্কুলে থাকতেই বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের প্রতি তুমুল আগ্রহ ছিল। কিন্তু ভাল করে বুঝতে পারতাম না সব। বইটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, এমন বই হাতের কাছে থাকলে খুব সুবিধে হত। সহজ বাংলায় সুলিখিত এই বইটি সাধারণ পাঠকদের কাছে সংগ্রহযোগ্য তো অবশ্যই, তাছাড়া প্রকাশক বইটি স্কুলের লাইব্রেরী বা সাধারণ লাইব্রেরীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে অনেকের কাছে সাধুবাদ পাবেন।
লেখক পরিচিতি - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এখন আমেরিকার স্যান অ্যান্টোনিওতে প্রবাস-জীবন। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। লেখালেখি শুরু স্কুল ম্যাগাজিন থেকে। কলেজ জীবন থেকে রেডিওর প্রতি ভালোবাসা। আকাশবাণী কলকাতাতে রেডিও জকি প্রায় এক দশক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখার পাশাপাশি বেড়ানো আর গান শোনায় কাটে ছুটির অবকাশ। মনের আনাচ-কানাচ থেকে কুড়িয়ে নেওয়া খেয়ালখুশির রঙচঙে টুকরো কাচের বর্ণময়তাকে অক্ষরে অক্ষরে ধরে রেখেছেন প্রথম বই ‘ঠিক যেন ক্যালেইডোস্কোপ’-এর পাতায়।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।