পাশে আছে জুড়িদার, ‘হবে জয়’
অনীশ মুখোপাধ্যায়
(১)
দোসরা এপ্রিল, ২০১১। ওয়াংখেড়ের সেই অবিশ্বাস্য মায়াবী রাত। সদ্য দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতে উঠেছে ভারত। ঐ তো যুবরাজ,কোহলি,সহবাগরা বাঁধনছেঁড়া উল্লাসে মত্ত। ঐ যে ধোনি। একটু আগে একটা চরম আত্মবিশ্বাসে ভরা ম্যাচ উইনিং হেলিকপটার শট নিয়ে তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে মাঠ ছাড়লেন। আরো খানিক বাদে আরেকটি চিরকালীন দৃশ্যের জন্ম। জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে কোহলি এবং সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ প্রদক্ষিণ করছেন শচীন তেন্ডুলকর। কিন্তু তিনি কোথায়? ... ঐ যে। মাঠের মাঝ বরাবর খুব ধীরে ধীরে সে রাতের মতন ওয়াংখেড়ে ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন।একবার পেছন ফিরে দেখলেন কি? হ্যাঁ। একবারই। প্রায় নিজের হাতে গড়া ছেলেদের নিয়ে বানানো টিম। উচ্ছ্বাসে ফেটে যাওয়া একেকটা মুখ। আজকের বিজয়ী অধিনায়কও তো তাঁরই জমানায় তাঁরই সীলমোহরের ফলে সাত বছর আগে দলে ঢুকেছিলেন। অথচ আজ? কী আমূল পটবদল! আজ সেই তিনিই ড্রেসিংরুমে নেই। অথচ এই রাতটা আরো অনেক বেশী আবেগ নিয়ে তাঁর জীবনেও আসতে পারতো। ক্রিমরঙা স্যুট পরিহিত প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের ওই একবার পেছনে তাকিয়ে তারপর উদাস চোখে গ্যালারি দেখতে দেখতে ফেরাটা মনের মণিকোঠায় একটা চিরস্থায়ী স্ট্যাম্প ফেলে দিয়েছে। তার সঙ্গে ঐ প্রশ্নটাও।
এ রাতটা তো তাঁর জীবনেও —
রাজা রজার |
কাট টু লন্ডন, উইম্বলডন সেন্টার কোর্ট। ষোলোই জুলাই, ২০১৭। এইমাত্র অষ্টমবার উইম্বলডন জিতে উঠলেন রজার ফেডেরার। এটা যদি হলমার্ক দেওয়া অ্যাচিভমেন্ট না হয় তবে সেটা কাকে বলা যাবে? নাদাল, জকোভিচ, মারে - একে একে সব দেউটি নিভেছে। কিন্তু রজার রয়ে গেছেন।
এই যে ফাইনালে বিপক্ষকে দাঁড়াতে না দেওয়া। বয়স নামক বাধাকে টেমসের জলে হেলায় ছুঁড়ে ফেলা।আর তারপর এক অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা। দুনিয়ার সবাইকে লকার রুম দিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রায় শ-খানেক রথী মহারথীকে ফেডেরারের শ্রদ্ধার নডিং। আবেগাপ্লুত হয়ে এডবার্গ থেকে নিজের স্ত্রীকে আলিঙ্গন, চুম্বন - একেকটা দৃশ্য দেখতে দেখতে আবার মনে চলে এল দোসরা এপ্রিলের রাত। এখানে কোন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন না। তবু সেই পুরোনো কথাটাই ছয় বছর বাদে ফিরে এল অন্যভাবে। এই স্বর্ণালী সন্ধ্যা টেনিসে আমাদের দেশের কারুর কৃতিত্বের স্মারক হয়েও তো আসতে পারতো। ফেডেরার হয়ত একজনই হন। কিন্তু ভারত থেকে কেউ উইম্বলডন সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন হতেই তো পারতেন। তাহলে হয়ত এমনভাবেই আপামর ভারতবাসীর হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে উঠত। আর কতকাল বিদেশের সিঙ্গলস প্লেয়ারদের দেখে হাততালি দিতে হবে? বা ডাবলস এবং মিক্সড ডাবলস নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যেতে দেখতে হবে? কেন এত বড় দেশ থেকে একজনও বিশ্বমানের সিঙ্গলস প্লেয়ার গ্র্যান্ড-স্লামে নিজ রাজত্ব কায়েম করে রাখতে পারবেন না? সমস্যাটা ঠিক কোথায়? ফেডেরারের অষ্টম আশ্চর্যকীর্তি দেখে এটাই গত কয়েকদিন ধরে খুব ভাবাচ্ছে। এই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান সূত্রই বা কী হতে পারে? সেটাও খোঁজার চেষ্টা করে দেখা যাক।
(২)
প্রেমজিত লাল ও জয়দীপ মুখোপাধ্যায় |
বিখ্যাত টেনিস প্লেয়ারদের নাম করতে বললে প্রথমে সবাই সিঙ্গলস প্লেয়ারদেরই নাম বলে থাকেন। ঐতিহাসিকভাবে সেই রড লেভার বা তারও আগে থেকে ধরে আজকের রজার ফেডেরার বা মেয়েদের মধ্যে বিলি জিন কিং থেকে শুরু করে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা হয়ে স্টেফি গ্রাফ বা আজকের উইলিয়ামসন বোনেরা-সবাই মূলত সিঙ্গলস খেলেই বিখ্যাত হয়েছেন। নাম, যশ, অর্থ, প্রতিষ্ঠা কুড়িয়েছেন। ভারতীয় টেনিসের ইতিহাস ঘাঁটলে যে কয়েকজন বিখ্যাত সিঙ্গলস প্লেয়ারের নাম একবারে মনে আসে তাঁরা হলেন রমানাথন কৃষ্ণন, প্রেমজিত লাল, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, বিজয় অমৃতরাজ, রমেশ কৃষ্ণনরা। এঁরা ছাড়া লিয়েন্ডার পেজ, সানিয়া মির্জা, সোমদেব দেববর্মনরা বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সাফল্য পেয়েছেন।
লিয়েন্ডার ১৯৯৬-এর অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাইরে আর বড় নাম পাওয়া যাবে না। গ্র্যান্ড-স্লামে ফাইনালে ওঠা বা সেমিফাইনাল অবধি নিয়মিতভাবে যাওয়া-এসব এদেশে একা কোর্টে নামা খেলোয়াড়দের জন্য বিরল ঘটনা। ডাবলসে লিয়েন্ডার পেজকে ৪২ বছর বয়সে দেখে অনেকে আশ্চর্য হন। ডাবলসে লিয়েন্ডারের রেকর্ড ঈর্ষা করবার মতন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। সানিয়াও তাই। মিক্সড ডাবলস জিতেছেন উইম্বলডনে। কিন্তু কোথাও একা একা নিজেকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি। তাই যে কোন গ্র্যান্ড-স্লামে ডাবলসে কে কেমন করবেন আমাদের সেদিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। অতএব এটা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন কেন ভারতের টেনিস খেলোয়াড়েরা ডাবলসে বেশি সফল এবং সিঙ্গলসে নন। এর সঙ্গেই আরেকটি প্রশ্ন। অদূর ভবিষ্যতে ভারত থেকে ভাল সিঙ্গলস প্লেয়ার বিশ্বে দাপিয়ে খেলে যাচ্ছেন - এমন ছবিই বা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কতখানি। এ ব্যাপারে আগে একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক।
রমানাথন কৃষ্ণন - ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ সিঙ্গলস প্লেয়ার বলা হয় |
ষাটের দশকে টাচ টেনিসটা বেশি খেলা হত। রমানাথন কৃষ্ণন বা প্রেমজিত লালেরা কেউ পাওয়ার টেনিসের আদিপুরুষ বলে খ্যাত নন। কাছাকাছি সময়ের জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ও গায়ের জোরে ফোরহ্যান্ড আর ‘এস’ মেরে জিতে যেতেন এমন নয়। কিন্তু তাতে সাফল্য এসেছে। রমানাথন কৃষ্ণন উইম্বলডন সেমিফাইনাল খেলেছেন।
রড লেভার তাঁকে সেই ম্যাচে দাঁড়াতে দেননি সেটা অন্য কথা। কিন্তু হাঁটু গেড়ে স্কোয়ার কাট মারার মধ্যে যে শিল্প দেখা যেত (এখন অনেক কম দেখা যায়) তেমনি শুধু র্যাকেটের পেলব ছোঁয়ায় নেটের কাছে বল ফেলে বিপক্ষকে বিভ্রান্ত করা বা আলতো ড্রপ শটে পয়েন্ট কুড়িয়ে নেওয়া- এসব দিয়েই তখন প্রেমজিতরা খেলতেন। সেরা সময়ের বিজয় অমৃতরাজকে দেখেছি। তাঁর খেলার ধরনটাও খানিক তেমনি ছিল। পাঁচ সেটের খেলায় এভাবেই ওঁরা লড়তেন। এখন যারা ভারতের হয়ে খেলেন তাদের মধ্যে এই সৌন্দর্যটা নেই বলব না। তবে নিঃসন্দেহে অনেকাংশে কমে এসেছে। তার বদলে পাওয়ার টেনিসের প্রভাব বেশ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। কিন্তু এখান থেকে বোঝা যায় না কেন সিঙ্গলসে ভারতের পারফরম্যান্স বিশ্বব্যাপী এত খারাপ।
(৩)
ইন্টারনেট থেকে এই সমস্যার সম্ভাব্য কারণগুলি যে কেউ জেনে নিতে পারবেন। মূলতঃ সেখান থেকেই এক ধরনের লিটারেচার সার্ভে করে খুব সংক্ষেপে কারণগুলি বলার চেষ্টা করা হল।
টেনিসে একা খেলতে গেলে যে বৈশিষ্ট্যগুলি একজন খেলোয়াড়ের থাকা আবশ্যক তার মধ্যে স্ট্যামিনা আর ফিটনেস অতীব গুরুত্ববহনকারী বিষয়। তার সঙ্গে চাই ইস্পাত-কঠিন মানসিকতা।নিজেকে পাঁচ সেটের জন্য ফিট রাখাটা খুব দরকারি। প্রথম দুই সেট হেরেও বাকি তিন সেট জিতে ম্যাচ বের করতে গেলে এই সমস্ত গুণ খুব বেশি করে থাকা দরকার। দেখা যাচ্ছে ভারতীয় খেলোয়াড়দের পিছিয়ে পড়ার মূল জায়গা এটাই। আর সেজন্যই তারা ডাবলসে অনেক বেশি আগ্রহী। সেখানে সুবিধা হচ্ছে ‘লোড’ ভাগ করে নেওয়া যাবে। দম নেওয়ার সময় মিলবে। নিজের দুর্বল জায়গা থেকে উদ্ভূত ঘাটতি পার্টনার মিটিয়ে দেবে। ধরা যাক, আপনি ডানহাতি প্লেয়ার এবং আপনার ফোরহ্যান্ড সার্ভিস রিটার্ন ব্যাকহ্যান্ডের থেকে ভাল। সেই ক্ষেত্রে আপনি হয়ত নেটের দিকে মুখ করে ডানদিকের কোর্টে থাকতে চাইবেন যাকে ডিউস কোর্ট বলে। কারণ আপনি মনে করছেন বিপক্ষ যদি ওইদিকে সার্ভিস করেন তবে আপনাকে তার রিটার্ন দেওয়ার জন্য ডানদিকে বেরিয়ে গিয়ে (স্ট্রেচ করে) পজিশন নিতে হবে। এখানে আপনি স্বচ্ছন্দ। এটাই যদি আপনাকে এড কোর্টে অর্থাৎ বাঁদিকে গিয়ে স্ট্রেচ করতে হত তবে সেটা ব্যাকহ্যান্ডের ওপরে নির্ভর করে করতে হত। এখানে আপনি দুর্বল। ডাবলস হলে এটা আপনার পার্টনার সামলে দেবে। কিন্তু একা খেললে এই দুর্বলতাই বিপক্ষ চট করে বুঝে যাবে এবং আপনাকে পেড়ে ফেলবে। আপনি একবার ডিউস কোর্ট আর একবার অ্যাড কোর্ট – এই করতে গিয়ে ব্যালান্স হারিয়ে ফেলবেন। (www.quora.com)
এই প্রসঙ্গে আন্দ্রে আগাসী লিয়েন্ডার পেজকে ১৯৯৬-এর রিও অলিম্পিকে হারিয়ে বলেছিলেন-
এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে ডেভিস কাপে লিয়েন্ডারের রেকর্ড ডাবলস ছাড়াও সিঙ্গলসেও বেশ ভাল। জেতা হারার হিসেব ৪৮-২২ (www.daviscup.com)। এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কী? মূলতঃ এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মান প্রফেশনাল সার্কিটের চেয়ে ঢের খারাপ। কারণ অন্যথায় বড় টুর্নামেন্টের সিঙ্গলসেও তার প্রতিফলন থাকতো। এখানে ওঁর কয়েকটি স্মরণীয় জয় নিয়ে হয়ত দু'কথা আরো লেখাই যায়। সেটা আরো এইজন্য যে কিছু কঠিন ম্যাচ লিয়েন্ডারকে জিততে হয়েছে।
সবটাই একেবারে কেকওয়াক হয়নি। তবু একটা প্রশ্ন এখান থেকে উঠে আসছে, যার উত্তর অজানাই। ৪৮-২২ এর পাশের হিসেব যেখানে ৪২-১৩ আরো বেশি করে সেখান থেকেই জানার আগ্রহ জন্মায়। লিয়েন্ডারের ডাবলসের দিকে ক্রমশ: ঝুঁকে যাওয়ার কারণ কি সাপোর্ট বেস-এর অভাব? সেটা বাড়লে কি ১৯৯৬-এ ব্রোঞ্জের বদলে সোনা আসার সম্ভাবনা বাড়ত? তবে কি গ্র্যান্ডস্লামেও...? বলা কঠিন। যা হয়নি এবং হবেওনা – সেই চর্চায় বেশি সময় না থাকাই ভাল, যদি না এমন দুটি-একটি প্রসঙ্গ উঠে আসে। তবে লিয়েন্ডার রহস্য যদি ভেদ করাও যেত তবুও মনে হয় না বর্তমান লেখাটির মূল প্রতিপাদ্য খুব একটা এদিকওদিক হত।
এই ঘটনার তিন দশক আগে ফিরে যাওয়া যাক। প্রেমজিত লালের সঙ্গে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে খেলার সময় রড লেভার প্রথম দুই সেট পিছিয়ে পড়েন। তিন নম্বর সেটে ৩-৩ থেকে তিনি ৬-৩এ জিতে যান। বাকি দুটো সেটে লেভার প্রেমজিতকে একটাও গেম জিততে দেননি। যথেষ্ট ভাল শুরু করেও শেষরক্ষা করতে না পারার রোগ অতএব প্রাচীন। আর তার পেছনে স্কিলের অভাব যদিবা থেকেও থাকে তবুও সেটা গৌণ। যদি সেটাই মুখ্য হত তবে প্রেমজিতের প্রথম দুই সেট জিততে পারার কথা নয়। শারীরিক এবং মানসিক দুর্বলতা বা অতক্ষণ ধরে কাঠিন্য ধরে রাখার অক্ষমতাই মুখ্য কারণ। লেভার এই ব্যাপারে বলেছেন – প্রেমজিতের নার্ভাসনেসই হারের কারণ – অর্থাৎ সেই সময় শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক দৌর্বল্যই প্রধান কারণ (২০১৬)।
রড লেভার |
রড লেভার সম্পর্কে বলা হত পাঁচ সেটের ম্যাচ কখনো হারেন না। এর পেছনে রহস্য কী তা জানতে চাওয়ায় লেভার ২০১৬-এর শেষের দিকে এক সাক্ষাৎকারে জানান “ইয়েস, ফিফথ সেটে আমি নিজেকে ভেতর থেকে বলতাম, এতক্ষণ সময় যখন কোর্টে নষ্ট করলে তখন জিতে বার হওয়া ছাড়া তোমার কোনও গতি নেই। ইট ইজ নন নেগোশিয়েবল।” সাংবাদিক যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে এটা বলা সহজ হলেও করে দেখানো ততটাই কঠিন নয় কিনা, তাতে লেভার হ্যারি হপম্যানের নাম করে বলেন যে হপম্যান বলেছিলেন, - “তোমার ফার্স্ট সেট খেলার সময় ফিটনেস যে অবস্থায় সেটা যদি ফিফথ সেটে ধরে রাখতে পারো, তা হলে তোমার মোটামুটি বেসিক খেলাটা ধরে রাখলেই জিতবে।” প্রেমজিত লালকে দুই সেট পিছিয়েও কেমন করে হারাতে পেরেছিলেন সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন লেভার। তিনি বলছেন, “বেশ কয়েকটা নেগেটিভ পয়েন্ট সে দিন আমি উইনার মারতে গিয়ে দিই যা দেওয়ার কথা নয়। থার্ড সেটে তাই নিজেকে বলতে বাধ্য হই কোর্টে বল রাখো, বল রাখো। ওকে ভুল করতে দাও। ওকে র্যালি করাও”(ভট্টাচার্য-২০১৬)।
লেভারের কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে লম্বা সময় ধরে খেলতে হলে র্যালি বানাতে হবে। সেই র্যালি যত বেশি সময় ধরে চলে ততই বিপক্ষের ভুলের সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু তার জন্য অসামান্য অ্যাথলিট হতে হবে। রজার ফেডেরারের উইম্বলডনে টানা ষষ্ঠবার জেতার স্বপ্ন ২০০৮-এ চুরমার করে দেন রাফায়েল নাদাল। বলা হয়, এমন ফাইনাল সেন্টার কোর্ট আর কখনো দেখেনি। অমন যে বর্গ বনাম ম্যাকেনরো ফাইনাল যা কিনা সেই যুগে (১৯৮০) টেনিস দুনিয়াকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল, সেটাও রজার-রাফার অমানুষিক লড়াইয়ের কাছে ফিকে হয়ে যেতে বাধ্য। সেই ফাইনাল চলেছিল পাঁচ ঘন্টা ধরে। খেলা শেষ হওয়ার পরে নাদাল ক্লান্তির চোটে সেন্টার কোর্টে শুয়ে পড়েন।
উইম্বলডন-২০০৮ ফাইনালের একটি মুহূর্ত |
এমন শরীর এবং মন নিঙড়ানো খেলায় জিততে গেলে সেই স্তরে এই দুইয়ের সক্ষমতা লাগে। সিঙ্গলস খেলায় সাফল্য পেতে হলে ‘সিঙ্গেল-মাইন্ডেড’ হওয়াও বাঞ্ছনীয়। কারণ খেলার এই ফরম্যাটের বৈশিষ্ট্যই সেটা। আপনি কোর্টে নিজের ক্ষমতায় নিজের দুর্বলতা ঢেকে যুদ্ধে নেমেছেন। পাশে কেউ থাকবে কী থাকবে না - এটা নিয়ে ভাবারই জায়গা নেই। কিন্তু ব্যাপার হল একার ক্ষমতায় দুনিয়াদারী করতে গেলে সর্বোচ্চ স্তরে এই লড়াই আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা লড়ে যেতে হবে। মানসিক কাঠিন্যের চরম পরীক্ষা যদি এর জন্য দিতে না হয় তবে কীসের জন্য দিতে হবে? অন্য কোন খেলায় নার্ভ, স্কিল আর একাকীত্বের এমন মিশ্রণ দেখা যায় না। জিমি কোনর্স তাঁর অটোবায়োগ্রাফি ‘আউটসাইডার’-এ লিখেছেন,
বরিস বেকার আবার মনে করেন যে ভারতীয়রা দলগত খেলায়, বিশেষ করে ক্রিকেট এবং ডাবলস টেনিসে যে সাফল্য পেয়ে থাকেন সেটা মূলতঃ তাদের ট্যালেন্ট আর স্কিলের জন্য। কিন্তু যেখানে একা নিজেকে লড়ে জিততে হবে এমন খেলায় এ দেশের খেলোয়াড়েরা পিছিয়ে যান। তার একটা বড় কারণ দুর্বল মানসিকতা (মাইন্ডসেট)। বেকার বলছেন,
এই প্রসঙ্গে প্রকাশ পাড়ুকোন, সাইনা নেহওয়াল বা পিভি সিন্ধুদের নাম কেউ তুলতেই পারেন। এঁরা প্রত্যেকেই ব্যাডমিন্টন সিঙ্গলসে কিছুদূর অবধি সফল এবং সেটাও সর্বোচ্চ স্তরেই। এর পেছনে কারণ কী? মানসিক দৃঢ়তা? গোপীচন্দের মত শিক্ষক? অন্যদিকে টেনিসে ব্যর্থতার একটা কারণ কি ভারতীয় কোচের অভাব? ভাবার দরকার আছে। কিন্তু এই ব্যাপারে একটা পাল্টা যুক্তি দেওয়া যায়। ব্যাডমিন্টনে যা কোর্টের মাপ আর টেনিসে যা কোর্টের মাপ দুটো কি সমান? বোধহয় না। তদুপরি ফেদার হিটিং আর টেনিস বল হিটিং - দুটোতে কি সমান পরিশ্রম হবে? তাও নয়। এবং এরপরেও কিছু বিশ্লেষণের অবকাশ থেকে যাচ্ছে। প্রকাশ পাড়ুকোনের একটি অল ইংল্যান্ড খেতাব, গোপীচন্দেরও তাই, সাইনার একটি অলিম্পিক পদক ওয়াকওভারে প্রাপ্ত। সাঁধু রূপো জিতেছেন একবারই। সব ক'টিই কৃতিত্বের সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রথম বৈশ্বিক একক চ্যাম্পিয়নদের ধারাবাহিক সাফল্যের তুলনায় কোনো পর্যায়ে পড়ে কি? মাইকেল ফেরিরাও দীর্ঘকাল ওয়ার্ল্ড বিলিয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, বিশ্বনাথ আনন্দকেও ভুললে চলে না। কিন্তু কথাটা হচ্ছে, যে পদ্ধতি থেকে একের পর এক চ্যাম্পিয়ন বেরিয়ে আসে, সেটা ভারতের টেনিসে আজও অনুপস্থিত।
ক্রিকেট বাদে, বাকি যে ক'টা খেলার উল্লেখ এখানে করা হল, তার সব ক'টি ও জিমন্যাস্টিকস, অ্যাথলেটিক্স ও ফিল্ড ইভেন্টগুলোর সম্পর্কেও একই কথা খাটে। কিন্তু এরও একটা বিপরীত যুক্তি অবশ্য স্বীকার্য। যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করলে সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন উঠে আসেন তবে সেই প্রশ্নটাই আসবে। সুইডেন থেকে বা অস্ট্রেলিয়া থেকে একসময় পরপর সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন বেরিয়েছে। এখন কিন্তু সেই দেশগুলিতে টেনিসে সাফল্য সেরকম নয়। তবে কি সেখানে এখন ভুল পদ্ধতি মেনে এগোন হচ্ছে? অন্যদিকে স্পেন থেকে একজন চ্যাম্পিয়ন টেনিস খেলোয়াড় উঠে এসেছেন – রাফায়েল নাদাল! নাদালের মতন খেলোয়াড় যে দেশ থেকে উঠে আসেন তার পদ্ধতিকে তবে কি ভুল বলবেন? খুব মুশকিলের কথা। জানার আগ্রহ জন্মায় যে এই দেশগুলিতে সফল খেলোয়াড় উঠে আসার পদ্ধতি কি প্রায় এক? আলোচনাটা যেহেতু ভারতকে নিয়ে চলছে তাই আবারো সেখানে ফিরে আসি। কোথাও মনে হয় যে তাহলে পাড়ুকোন, সাইনা, সিন্ধুরা নিয়মের ব্যতিক্রম নয় তো? বা গোপীচন্দ আজ আছেন। তাঁর অবদান একটা বড় কারণ অবশ্যই। কিন্তু টেনিসে ভারতীয় কোচ নেই এটা দিয়ে কতটা ব্যাখ্যা করা যাবে? কাজেই বরিসের বক্তব্য অতএব একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতন নয়। আবার সেটা নিয়ে কিছু প্রশ্নও থেকেই যাচ্ছে।
(৪)
এবারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে চোখ রাখা যাক।
শুধু মানসিক আর শারীরিক দৌর্বল্য এবং অক্ষমতাই কি ভারত থেকে যথেষ্ট উপযুক্ত মানের সিঙ্গলস প্লেয়ার না আসার একমাত্র কারণ? না। এর বাইরে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল আর্থিক সমস্যা। কয়েক মাস আগে ইকনমিক টাইমসে অক্ষয় সাওয়াইয়ের (২০১৭) একটি লেখা থেকে এই বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য উঠে আসছে। ডেভিস কাপে ভারতের সাম্প্রতিক সাফল্যের পেছনে এবারে রামকুমার রমানাথনের অসামান্য ভূমিকা ছিল। জানা যাচ্ছে যে তাঁর বার্ষিক খরচ আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে এই টাকাটা তিনি কেমনভাবে পাচ্ছেন? এ প্রসঙ্গে একটা ব্যাপার সহজেই অনুমেয়। যে দেশে ক্রিকেটকে বলা হয় ধর্ম সে দেশে কর্পোরেটরা টেনিসে বিনিয়োগে উদ্যোগী হবেন - এমন ভাবার মতন কোন ঘটনাই ঘটেনি। এর বাইরে থাকে সরকারী অনুদান। সেটাই বা কত হতে পারে? সাওয়াইয়ের লেখা পড়লে জানা যাবে এখনো অবধি রামকুমারকে আর্থিক সাহায্য যারা করেছেন তাদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (আইএমজি) এবং তামিলনাড়ু টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (টিএনটিএ)। এর বাইরে আছে অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (এআইটিএ)। এবার তবে জানা যাক টিএনটিএ আর এআইটিএ কতটা কী করেছে।
রামকুমার রমানাথন |
সাওয়াই বলছেন, ২০১০-১১ সালে রামকুমার বার্সিলোনার একাডেমিতে প্রায় এগারো মাস প্র্যাকটিসের জন্য ছিলেন। এর জন্য আনুমানিক ৩০,০০০ ডলার খরচ করে টিএনটিএ। রামকুমার সেটা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু টিএনটিএ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্তি চিদাম্বরম মনে করেন এআইটিএ-এর ভূমিকা মোটেও প্রশংসনীয় নয়। যুকি ভামরির মতন প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়কে আরো অনেক বেশি আর্থিক সাহায্য করা যেত। যুকি জুনিয়র টেনিসে এক নম্বর স্থানাধিকারী ছিলেন। জুনিয়র অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।
কার্তি বলেছেন অন্য যে কোন দেশ হলে যুকিকে ডেকে বলে দিত যাকে ইচ্ছে তাকে কোচ হিসেবে নিযুক্ত করে প্রস্তুতি নাও। আমরা তার পেমেন্টের ব্যবস্থা করবো। এআইটিএ সেখানে প্রতিভাকে বেড়ে ওঠার জন্য প্রায় কিছুই করেনি। সাওয়াইয়ের প্রবন্ধটি থেকে দেখা যায় যে এআইটিএ-এর অনারারি সেক্রেটারি জেনারেল হিরণ্ময় চ্যাটার্জী অবশ্য এর ঠিক উলটো সুরে গেয়েছেন। তাঁর এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এআইটিএ অফিসিয়ালের বক্তব্যকে জুড়লে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে - রামকুমাররা কোন সাহায্য পাননি এটা ঠিক নয়। এআইটিএ-এর মূল কাজ হল, টেনিসের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি এবং সেইসঙ্গে কিছু টুর্নামেন্টের আয়োজন করা। মোটেও গুচ্ছের টাকা অনুদান দেওয়া নয়। এই বছরে সরকার আরো টাকা দেবেন যার সাহায্যে দেশেই বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যাবে। তাই পয়েন্ট আনার জন্য বিদেশে খেলোয়াড়দের বেশি যেতে হবে না। ২০১৫ সালে সারা দেশে এমন গোটা বিশেক টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এসব টুর্নামেন্টে খেলেই রামকুমাররা আজকের জায়গাতে এসেছেন। এখন তাঁরা অকৃতজ্ঞ হয়ে যদি ভুলে যান কিছু করার নেই। ব্যাপার হল এতেও সমস্যা মিটছে না। এই যে যুকির মতন খেলোয়াড় হারিয়ে যাচ্ছেন।মনে প্রশ্ন আসে, যুকির নিজের সমস্যা নেই তো? যদি থেকে থাকে তবে সেটা কোথায়? তার প্রশিক্ষক কি সে ব্যাপারে অবহিত? এটা এইজন্য বলতে হচ্ছে যে যুকির হারিয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ ও তজ্জনিত ক্ষতি - এই দুই ব্যাপারেই আলোকপাত হওয়া জরুরি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের বা সাফল্যের জন্য দরকার আত্মবিশ্বাস ও কঠোর মনোভাব। সেটা যে ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের মধ্যে কম এ তো বলাই হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে কোন কারণ নেই তো?
যুকি ভামরি |
সোমদেবরা প্রত্যাশিত মানের ধারে কাছেও আসতে পারছেন না। বিশেষত: গ্র্যান্ড স্লামে। এর পেছনে খরচের একটা অনটন থেকেই যাচ্ছে। বিদেশে ট্র্যাভেল কস্ট, ফিজিও, ট্রেনার, কোচ, থাকা-খাওয়ার পেছনে খরচ, আধুনিক মানের জিমে গিয়ে ফিটনেস চর্চা, এবং খেলার জন্য দামি সমস্ত উপাদান-এর পেছনে সারাবছর যা খরচ করা আবশ্যক তার বড়জোর ৩০-৪০ শতাংশ এই দেশের টেনিস সংস্থা দিয়ে থাকেন। বা দিতে পারবেন। বাকিটা কোথা থেকে আসবে? খেলোয়াড়রা নিজেরাই বা কতটা টানবেন? ফেডেরারের মানের সমতুল প্র্যাকটিসের আয়োজন করতে গেলে যে বিপুল অর্থানুকূল্যের যোগান জরুরি তা একমাত্র বেসরকারি উদ্যোগপতিরাই দিতে পারেন। কিন্তু ক্রিকেট সর্বস্ব দেশে কোন এক অজানা মায়াংক আগারওয়ালও আইপিএল টিমে থেকে যা রোজগার করে থাকেন তা যুকিদের কাছে এখনো অধরাই আছে। থাকবেও। কারণ আইপিএল-টিমে থাকা মানে তার নিজের দাম ছাড়াও স্পনসরশিপ আছে। আছে বিভিন্ন পার্ক্স। চোদ্দটা ম্যাচের চারটেতেও মাঝারিমানের কিছু পারফরমেন্স দেখাতে পারলে সব-পেয়েছির দুনিয়া হাতের মুঠোয়। সাওয়াইয়ের প্রবন্ধে একটা হিসেব দেখছিলাম। রামকুমার গত বছর ছয়েক খেলে ১.৩৫ কোটির কাছে আয় করেছেন। আর সমস্ত আবশ্যিক উপাদান ও সাপোর্ট স্টাফসহ বছরে অন্তত এক কোটি টাকা খরচ করতে পারলে ভাল হয়। এই খবর এই লেখাটা লিখতে না বসলে আমার জানাই হত না। ভরসা রাখি আমার পাশে অন্তত এই ব্যাপারে প্রচুর মানুষ দাঁড়াবেন এবং বলবেন যে তারাও জানতেন না। কিন্তু ইউসুফ পাঠান কেকেআরে বছরের পর বছর প্রায় কিচ্ছু না করেও কত টাকা পেয়ে থাকেন সে হিসেব অনেকেই রাখি। কাজেই যুকি হারিয়ে যাবেন, রামকুমারের র্যাংক ২৬৪ থাকবে, সোমদেব প্রথম ৩০-এ আসতে পারবেন না - এগুলি খুব প্রত্যাশিত ছবি। আর সেই কারণেই লিয়েন্ডার, সানিয়া, ভূপতিরা ডাবলস বা মিক্সড ডাবলসের মোলায়েম কুশন ছেড়ে বেরোবেন না। এটা ভেবে স্বস্তি পাবেন যে পাশে কেউ আছেন। জিতলে প্রাইজ মানি ভাল। সেলেব্রিটি হয়ে থেকে যাওয়া যাবে আজীবন। আর কে না জানে এদেশে বিদ্বান নয় সেলেব্রিটিরাই সর্বত্র পুজ্যতে!
লিয়েন্ডার পেজ |
অতএব ওয়াংখেড়ের যে মায়াবী রাতের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই রাত বা লন্ডনের ষোলোই জুলাইয়ের সন্ধ্যার মতন আরো অগুনতি সন্ধ্যা আসবে এবং যাবে। কিন্তু এদেশে টেনিস বিপ্লব আসবে এবং কেউ উইম্বলডনের নক-আউট ম্যাচে আবার সেন্টার কোর্টে নেমে বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে শেষ পয়েন্ট অবধি লড়ে ম্যাচ বের করে নেবেন - এই ফেয়ারি টেইল নতুন কোন ক্রীড়াসাহিত্যেই একমাত্র পড়া সম্ভবপর হতে পারে।
সম্ভাব্য সমাধান সূত্র কি তবে একেবারেই নেই?
এই প্রশ্নের দু’রকম উত্তর দিয়ে লেখার সমাপ্তি টানা যেতে পারে। প্রথম, যদি লিয়েন্ডার পেজ নিজে গোপীনাথের পথে হাঁটতে শুরু করেন। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেছেন,
সেটা অবশ্যই হতে পারে। তাতে শুধু ডাবলস কেন, হয়তো ভাল সিঙ্গলস প্লেয়ারের উঠে আসা সুগম হলেও হতে পারে।কা রণ লিয়েন্ডার মূলত ডাবলস প্লেয়ার হিসেবে সফল হলেও দীর্ঘদিন সার্কিটে থাকবার কারণে ভাল সিঙ্গলস প্লেয়ার হয়ে উঠতে কী কী গুণাবলীর বিকাশ প্রয়োজন সেটা নিশ্চয় জানেন অন্যদের তুলনায় ভাল। এটা একটা পদ্ধতির সৃষ্টি করতে পারে। কপিলের পরে পেসার তৈরীর মত। এটা হল একেবারেই খেলার মধ্যেকার দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান সূত্র পাওয়ার চেষ্টা।
আর, দুই নম্বর - এবার তবে কোর্টের বাইরে থেকে দেখা যাক। টেনিসে যদি কোন প্রশাসনিক যুগপুরুষ অদূর ভবিষ্যতে এসে একের পর এক ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড আর ‘এস’ মেরে বর্তমান কর্তাদের বিরুদ্ধে লাভ-এ সেট জিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেন। ক্রিকেট নয়, টেনিসকে কেরিয়ার করার সাহস এবং স্বপ্ন দুটোই ছয় বছরের শিশুটির মনে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। ষাট-সত্তর-আশির দশকের তুলনায় বহু বাপ-মায়েরা আজ যেমন পুত্রের ক্রিকেট কিট বয়ে কোচিং সেন্টারে পৌঁছে দেন উৎসাহভরে, যার ফলে ক্রিকেটটা আর শুধুমাত্র রাজরাজড়া বা বিত্তশালীর উঠোনে চর্চিত হ’বার জন্য পড়ে নেই, ঝাড়খণ্ড থেকে উঠে আসতে পারেন সর্বকালের সফলতম ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক; আজ এই রকম কিছু ঘটলে টেনিসেও হয়ত সেই একই চিত্র দেখা যেতে পারে এক-দেড় দশক পরে।
এই দুটি সম্ভাবনার অন্তত একটি অথবা দু’টিই ঘটলে হয়ত সেদিন ভারতীয় টেনিসে ‘দিগভ্রষ্ট’ সূর্যোদয় দেখা যাবে।
তথ্যসূত্রঃ
ভট্টাচার্য গৌতম(২০১৬): “হঠাৎ আবিষ্কার করি প্রেমজিত নিজেই নার্ভাস”, আনন্দবাজার পত্রিকা -১ ডিসেম্বর.
মুখোপাধ্যায় জয়দীপ ( ২০১৭): “বিশ্বরেকর্ড অধরা দেশের জার্সিটা এ বার তুলে রাখুক লিয়েন্ডার”, ৫ ফেব্রুয়ারি.
Nandwani Abhishek (2016): “Why India Can't Produce Singles Tennis Stars? Questions Vijay Amritraj”, www.news.18.com,24th June.
Martin Dave(2015):“Reliving Wimbledon 2008 Final: The Greatest Match Ever”, www.theepochtimes.com, 30th August.
Sawai Akshay (2017): “The economics of an Indian tennis player: Rs 20 lakh on coach, Rs 5 lakh on travel, and trainer” Economic Times,10th February
চিত্রসূত্রঃ ইন্টারনেট
লেখক পরিচিত - পেশায় অর্থনীতির অধ্যাপক। ন'হাটা কলেজে কর্মরত। লেখালেখি নিয়ে চিন্তাভাবনার শুরু ২০১০-এ। প্রথম উপন্যাস 'জগতরত্ন রক্তনীল' আনন্দমেলায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ২০১৪-২০১৫ সালে। শারদীয় আনন্দমেলায় ওঁর সাম্প্রতিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী। ফেসবুকে এ ব্যাপারে নিজস্ব পেজ 'বাইশ গজের ডাইরি'তে নিয়মিত লিখে থাকেন।
(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।
Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.