প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

মে ৩০, ২০১৬

 

প্যালিনড্রোমের খোঁজে

সৌম্যকান্তি জানা

 

গোড়ার কথা:

১৯৮০ কি ১৯৮১ সাল হবে। আমি তখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি। একদিন ক্লাসে এসে দেখি আমাদের ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা ‘রমাকান্ত কামার’। এ নিয়ে দেখি আমার ক্লাসের দু’চারজন ছেলে চর্চাও শুরু করে দিয়েছে। আমাদের ক্লাসেরই কোনও এক ছাত্রের কাজ হবে। স্যারেদের ফেলে যাওয়া চকের টুকরো দিয়েই কেউ লিখেছে। কিন্তু এ কার নাম? এ নামে তো ক্লাসে কেউ নেই! এমনকি স্কুলেও কেউ আছে বলে জানি না। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার রমাকান্ত দেশাইয়ের নামটা শোনা ছিল। কিন্তু রমাকান্ত কামার নামে তো কোনও বিখ্যাত কোনও ব্যক্তি আছে বলে শুনিনি। কে তাহলে ইনি? ভাবতে ভাবতেই ক্লাস শুরু হয়ে গেল। বাংলার স্যার ক্লাসে এলেন। বোর্ডে ওই নামটা লেখা দেখে কে লিখেছে জিজ্ঞাসা করলেন। সম্ভবত: ভয়ে যে লিখেছে সে চুপ করে রইল। যাইহোক স্যার বোর্ড মোছার আগে বললেন, “নামটা যেই লিখুক নামটার মধ্যে কিন্তু একটা দারুণ মজা আছে। বলতে পারবে?” সবাই চুপ। হঠাৎ রঘু দেখি হাত তুলেছে! স্যার বললেন, “কী মজা বলতো?” রঘু উত্তর দিল, “পেছন দিক থেকে পড়লেও একই নাম হবে।” সত্যিই তো! আমরা তাজ্জব! স্যার মৃদু হেসে বললেন, “তুই এটা কার কাছ থেকে জেনে বোর্ডে লিখেছিস রঘু?” উৎসাহে উত্তর দিতে গিয়ে ধরা পড়ে রঘু তখন মার খাওয়ার ভয়ে রীতিমতো কাঁচুমাচু। প্রথম প্রথম সে বলতেই চাইছিল না। তারপর স্যারের কাছ থেকে মার না খাওয়ার অভয় পেয়ে বলল যে তার কলেজে পড়া দাদার কাছ থেকে জেনে লিখেছে। ক্লাসে এরপর ব্যাপারটা আর না এগোলেও আমার মাথায় কিন্তু ঘুরঘুর করতেই থাকল। বাড়ি ফিরে এমন নাম আরও বানানো যায় কিনা চেষ্টা করতে লাগলাম। বানিয়েও ফেললাম একটা- সুবর্ণ বসু। পরের দিন আরও দুটো- গবাই বাগ আর নারান রানা। তারপর আরও কয়েকটা নাম বানানোর চেষ্টায় কয়েকদিন ধরে মনের মধ্যে চিন্তার পাহাড় জমিয়ে তুললাম। কিন্তু চেষ্টাই সার। ব্যর্থ হয়ে দু’চার দিনের মধ্যে হাল ছেড়ে দিলাম। তারপর থেকে ধীরে ধীরে ঘটনাটার কথা মন থেকে প্রায় মুছেই গেল। এরপর কেটে গেল বেশ ক’টা বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জেনেটিক্সের ক্লাসে হঠাৎই একদিন শুনলাম ‘প্যালিনড্রোমিক সিকোয়েন্স’। স্যার ব্যাপারটা বোঝাতে গিয়ে বললেন, “ অ্যাডামকে দেখে ইভ যখন তার পরিচয় জানতে চাইল তখন অ্যাডাম উত্তর দিয়েছিল Madam, in Eden I’m Adam। আর নেপোলিয়ান বোনাপার্টের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, Able was I ere I saw Elba। এ দুটো বাক্য পেছন থেকে পড়ে দেখো, একই হবে। এটাই হল প্যালিনড্রোম।” আমার আবার রমাকান্ত কামার-কে মনে পড়ে গেল। শুরু করলাম প্যালিনড্রোম নিয়ে খোঁজখবর। মজাদার আর বিস্ময়কর সেই সব খবরের কিছু নমুনা তুলে ধরা যাক। • প্যালিনড্রোমের ইতিহাস ইংরেজি প্যালিনড্রোম (Palindrome) শব্দের উৎপত্তি দুটো গ্রিক শব্দ ‘প্যালিন’ (Palin)এবং ‘ড্রোমোস’ (Dromos) থেকে, যার অর্থ যথাক্রমে ‘পিছন’ ও ‘দিক’। যদিও গ্রিকদের কাছে এই রকম শব্দ ‘কারকিনিকে এপিগ্রাফে’ অর্থাৎ কাঁকড়া শব্দ নামে পরিচিত ছিল। প্যালিনড্রোমের আবিষ্কার কে করেছিলেন বা কবে করেছিলেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। জনশ্রুতি হল, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গ্রিক সম্রাট দ্বিতীয় টলেমির রাজত্বকালে (২৮৫-২৪৬ খ্রিঃ পূঃ) গ্রিক কবি সোতাদেস হলেন প্যালিনড্রোমের স্রষ্টা। সম্ভবত: এজন্যই গ্রিসে প্যালিনড্রোমকে ‘সোতাদিক কবিতা’ (Sotadic verses) বলা হত। তাঁর কবিতাগুলো ছিল মূলত: অশ্লীল। তিনি একবার রাজা দ্বিতীয় টলেমির সাথে তাঁর বোন দ্বিতীয় আরসিনো-র বিয়েকে কেন্দ্র করে এক বিদ্রুপাত্মক অশ্লীল কবিতা লেখেন। কবিতাটি রাজার নজরে এলে তিনি ক্ষেপে যান এবং সোতাদেসকে বন্দী করে আনার নির্দেশ দেন। বন্দী সোতাদেস একদিন প্রহরীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কাউনোস দ্বীপে পালান। কিন্তু তাঁকে আবার বন্দী করা হয়। এবার রাজার নির্দেশে তাঁকে সিসার তৈরি বাক্সে ভরে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হয়। মর্মান্তিক সমাপ্তি ঘটে পৃথিবীর প্রথম প্যালিনড্রোম স্রষ্টার। সামান্য কয়েকটি ছাড়া সোতাদেসের অধিকাংশ রচনা ধ্বংস হয়ে গেছে। পৃথিবীতে প্রাচীনতম যে প্যালিনড্রোমের নিদর্শন পাওয়া যায় তা খ্রিস্টীয় ৭৯ শতকের। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্গত সমৃদ্ধ শহর হারকিউলেনিয়াম ৭৯ শতকে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে ছাইয়ে ঢাকা পড়ে যায়। অসংখ্য মানুষ শহর ছেড়ে পালায়, আর যারা মাটির টানে থেকে যায় তারা প্রবল তাপে ও শ্বাসকষ্টে মারা যায়। এই ছাই চাপা হারকিউলেনিয়াম শহর ১৭৩৮ সালে পুনরাবিষ্কৃত হওয়ার পর সেখান থেকেই পাওয়া যায় প্রাচীনতম প্যালিনড্রোমিক শব্দ। শব্দটি হল: "Sator Arepo Tenet Opera Rotas" , ল্যাটিন শব্দে এই বাক্যের অর্থ হল বীজবপনকারী অ্যারিপো চেষ্টা করে চাকা ধরে আছে। উলটো দিক থেকে পড়ে গেলেও সেই একই বাক্য পঠিত হবে। শুধু এটুকুই নয়, এই বাক্যের গঠনে আছে আরও মজা ও বিস্ময়।

S              A             T              O             R
A             R             E              P             O
T              E              N             E              T
O             P             E              R             A
R             O             T              A             S

পাঁচ অক্ষরবিশিষ্ট পাঁচটি শব্দকে বর্গাকার শব্দছকে পর পর লিখলে ওপর থেকে নিচে, নিচে থেকে ওপরে, বামদিক থেকে ডানদিকে এবং ডানদিক থেকে বামদিকে পর পর পড়লে সেই একই শব্দ গঠিত হবে। একটি গ্র্যাফিটোতে (Graffito, কোনও প্রকাশ্য স্থানে কোনও অজানা ব্যক্তির লেখা ফলক) এই লেখা আবিষ্কৃত হয়। বিখ্যাত এই প্যালিনড্রোমের নাম ‘Sator square’। ল্যাটিন ভাষায় মথদের আচরণ নিয়ে আর একটি প্রাচীন প্যালিনড্রোম বেশ জনপ্রিয়- ‘In girum imus nocte et consumimur igni’। এর অর্থ হল, আমরা চক্রাকারে ঘুরি এবং আগুন আমাদের গ্রাস করে। প্রাচীন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে বহু জায়গায়, বিশেষত: ফোয়ারার গায়ে খোদিত আরও একটি প্যালিনড্রোম পাওয়া গেছে যার অর্থটি ভারি চমৎকার- শুধু মুখ নয় পাপকেও ধোও। আসল বাক্যটি হল, ΝΙΨΟΝ ΑΝΟΜΗΜΑΤΑ ΜΗ ΜΟΝΑΝ ΟΨΙΝ। এই প্যালিনড্রোমটি পরবর্তীকালে ইউরোপের নানা দেশে চার্চের সামনে লেখা হয়েছে এবং তা এখনও আছে।

ছবি - ক্রিস্টিনা কেকা, এথেন্স, গ্রীস। উইকিপেডিয়া।

প্যালিনড্রোম হাজির আরবি ভাষাতেও। আরবি ভাষায় কেবল ব্যঞ্জনধ্বনির বর্ণ আছে, স্বরধ্বনির কোনও বর্ণ নেই। সেই হিসেবে পবিত্র কোরানের ৭৪.৩ অনুচ্ছেদে লেখা ‘রব্বকা ফকাব্বর’ (RABBAKA FAKABBIR), যার অর্থ তোমার প্রভু মহিমান্বিত করে। ইংরেজিতে vowel বাদে কেবল consonant গুলো পড়ে গেলে এবং বাংলাতেও পড়লে এটি একটি প্যালিনড্রোম। কোরানে আরও এমন প্যালিনড্রোম অনেক দেখা যায়। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে ভুরি ভুরি প্যালিনড্রোমের দেখা পাওয়া যায়। অষ্টম শতাব্দীতে লেখা শিশুপালবধ কাব্যে অসাধারণ ও বিস্ময়কর একাধিক প্যালিনড্রোম দেখা যায় যার সাথে Sator Square তুলনীয়। এমনই একটি প্যালিনড্রোমিক কবিতা নীচে উল্লেখ করা হল যা নিচের ছক অনুযায়ী প্রতি লাইন সামনে থেকে পড়লে যা হবে, পেছন থেকে পড়লেও তা-ই হবে। কথাগুলো হল: সকরননরকসকাযসাদদসাযকা রসাহভাভাহসারনাদভাদদভাদনা। এবার দেখা যাক সেই বিন্যাস।

স - কা- র - না - না- র- কা - স
কা - য - সা - দ - দ- সা- য - কা
র - সা - হ - বা - বা - হ - সা- র
না - দ - বা - দ - দ - বা- দ - না

এই কবিতাটির অর্থ হল- সেই সৈন্য যুদ্ধ উপভোগ করে, যার মিত্র থাকে, যে সংগ্রামরত বিভিন্ন শত্রুর অশুভ লক্ষণ ও চলনভঙ্গীকে নামিয়ে আনে এবং এর মধ্যে সেরা অশ্বাদির চীৎকার বাদ্যযন্ত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে।

এমন প্যালিনড্রোমিক লেখা প্রাচীন ‘কিরাতার্জুনীয়’ কাব্যের বহু অনুচ্ছেদে দেখা যায়। এমনই একটি অনুচ্ছেদ হল-

সারস নয়না ঘন অঘ
নারচিত রতার কলিক হর সার রসা
সার রসাহর কলিকর
তারত চিরনাঘ অনঘ নায়ন সরসা  

চতুর্দশ শতকে দৈবজ্ঞ সূর্য পণ্ডিতের লেখা ‘রামকৃষ্ণ বিলোম কাব্যম’ নামে ৪০টি শ্লোকের যে বিখ্যাত কবিতা রয়েছে তার রচনাশৈলীও ভারি অদ্ভুত। প্রতিটি শ্লোকই এক-একটি প্যালিনড্রোম। আবার কবিতাটি সামনে থেকে পড়লে রাম ও রামায়ণের কাহিনি আর পেছন থেকে পড়লে কৃষ্ণ ও মহাভারতের কাহিনি। যেমন ৩ নং শ্লোকে রয়েছে “তামসীত্যসতি সত্যসীমতা মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা। মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা তামসীত্যসতি সত্যসীমতা।।”


ইংরেজি প্যালিনড্রোমঃ

ইংরেজিতে প্যালিনোড্রোমিক শব্দের সংখ্যা ভুরি-ভুরি- EYE, DEED, CIVIC, NUN, MOM, DAD, LEVEL, KAYAK, NOON, REFER, REVIVER, ROTOR, RADAR, TIT, TAT, WOW, PIP, POP, TOOT, MADAM, RACECAR  ইত্যাদি। তবে বহুল ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দের মধ্যে REDIVIDER শব্দটি হল দীর্ঘতম প্যালিনড্রোম। আবার ইংরেজিতে প্যালিনড্রোমিক নামের সংখ্যাও প্রচুর- Ada, Anna, Bob, Arora, Salas, Otto, Hannah, Eve ইত্যাদি। আমাদের মালয়ালম (Malayalam) শব্দটিও ইংরেজিতে প্যালিনড্রোম। কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী Lon Nol (১৯১৩-১৯৮৫) ছিলেন প্যালিনড্রোমিক নামের অধিকারী। জাপানের ঔপন্যাসিক Nisio Isin-এর নামটিও প্যালিনড্রোমিক। ফিনল্যান্ডের বেশিরভাগ মানুষের নাম অবিশ্বাস্যভাবে প্যালিনড্রোমিক। সবচেয়ে বড়ো প্যালিনড্রোমিক শব্দ রয়েছে ফিনিশ ভাষায়। ২৫ অক্ষরের সেই শব্দ হল SOLUTOMAATTIMITTAAMOTULOS যার অর্থ টমাটোর জন্য পরিমাপক গবেষণাগার থেকে প্রাপ্ত ফলাফল। ফিনিশ ভাষায় আরো একটি ২৫ শদের প্যালিনড্রোম আছে- SAIPPUAKUPPINIPPUKAUPPIAS। এর অর্থ হল সাবান রাখার কাপের ব্যবসায়ী। বাচ্চাদের কাছে খুব জনপ্রিয় কমিকস ‘পোকেমন’-এ চারটি চরিত্র আছে যাদের নাম প্যালিনড্রোমিক- Eevee, Girafarig, Ho-oh, Alomomola.

বিখ্যাত দুটি ইংরেজি প্যালিনড্রোমিক বাক্যের উদাহরণ আগেই উল্লেখ করেছি। এছাড়াও আরও কিছু অতি প্রচলিত ইংরেজি প্যালিনড্রোমিক বাক্য আছে। যেমন- ব্রিটিশ লেখক ও নামকরা প্যালিনড্রোমিস্ট লাই মার্শারের উদ্ধৃতি ‘A man, a plan, a canal – Panama.’ একটি বহুশ্রুত প্যালিনড্রোম। মার্শারের আরও কয়েকটি জনপ্রিয় প্যালিনড্রোম হল - Rats live on no evil star Do geese see God? A dog, a panic in a pagoda. No lemons, no melon. Was it a can on a cat I saw? Ten animals I slam in a net. Was it Eliot's toilet I saw?
ইত্যাদি। ‘দ্য ফল অফ ট্রয়’ নামে একটি ব্যান্ড তার টাইটেল সং-এ প্রথম লাইন হিসেবে এই বাক্যটি নির্বাচন করেছে। ইংরেজিতে মিউজিক অ্যালবামের নাম কিংবা গানের প্রথম লাইন হিসেবে প্রচুর প্যালিনড্রোমিক শব্দের উপস্থিতি দেখা যায়। ১৯৬৯ সালে ব্যান্ড ‘গ্রেটফুল ডেডস’ তাদের প্রথম মিউজিক অ্যালবামের নাম দেয় Axomoxoa, যা একটি প্যালিনড্রোমিক শব্দ। Aleka’s Attic নামে আর একটি ব্যান্ড তার প্রথম মিউজিক অ্যালবামের টাইটেল সং করে “Never odd or even.” যা আর একটি প্যালিনড্রোম। আটলান্টার নামী রক ও র‍্যাপ গায়ক শনলক ২০১১ সালে তাঁর একটি মিউজিক অ্যালবামের নাম দেন ওই একই নামে। আর এক মার্কিন ব্যান্ড ‘নাদা সার্ফ’ ২০১০ সালে তাদের একটা অ্যালবামের নাম দেয় “If I had a Hi-Fi”। বলাবাহুল্য, এটি প্যালিনড্রোম। আর এক মার্কিন ব্যান্ড D.R.U.G.S (Destroy Rebuild Until God Shows) তাদের নিজেদের নামেই যে মিউজিক অ্যালবাম বের করে তাতে দুটো গান ছিল প্যালিনড্রোমিক- Mr Owl ate my metal worm এবং Laminated E.T. Animal। আবার ইংরেজিতে মজাদার কিছু বাগধারা আছে যেগুলো চমৎকার প্যালিনড্রোম।

ইংরেজিতে প্যালিনড্রোমিক বাক্যের সংখ্যাও প্রচুর। Red Roses run no risk, sir, on nurses order; Noel sees Leon; No, it can assess an action; Too hot to hoot; No mists or frost, Simon; Evil is a name of a foeman, as I live; Live not on evil; Never odd or even; Leg for a jar of gel; Now I won; Star for a jar of rats; Step on no pets; Mad? Am I, madam?; Was it a cat I saw? Won't lovers revolt now? Was it a bar or a bat I saw? Niagara, O roar again! ইত্যাদি হল প্রচলিত প্যালিনড্রোম।  Rise to vote, Sir; Ten deer put up reed net; Top-part at a trap-pot; Name no one man; Draw pupil’s lip upward; No, it is opposition.- প্যালিনড্রোমিক বাক্যগুলো বেশ মজার খোরাক জোগায়। Do geese see God? Eva, can I stab bats in a cave? A nut for a jar of tuna. A Santa lived as a devil at NASA. - এসব কথা শুনে হাসতে হাসতে যদি কেউ বলে ‘Damm it, I’m mad’, ঘাবড়ে যাবেন না, এটিও একটি প্যালিনড্রোম। আর সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হল, এডওয়ার্ড বেনবো ৪০ হাজার শব্দবিশিষ্ট একটি উপন্যাস লিখেছেন যা পুরোটাই প্যালিনড্রোমিক। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এভাবে- ‘ANON NOW , EVEN ODDER I HAVE MADE LINES.’ আর লেখাটি শেষ হয়েছে এভাবে- ‘SENILE DAM. EVA HIRED DON. EVE WON NONA.’ ভাবা যায়!!!  

এসবই হল বর্ণভিত্তিক প্যালিনড্রোম। ইংরেজিতে কিন্তু শব্দভিত্তিক প্যালিনড্রোমও কম নেই। Women understand men, few men understand women – বাক্যটির শব্দগুলো সামনে থেকে বা পেছন থেকে পড়লে একই হয়। এমনই আরও কয়েকটি প্যালিনড্রোম হল - So patient a doctor to doctor a patient so. You can cage a swallow, can't you, but you can't swallow a cage, can you? Bores are people that say that people are bores. Girl, bathing on Bikini, eyeing boy, finds boy eyeing bikini on bathing-girl.


গণিতে প্যালিনড্রোমঃ

একজন কেক-প্রিয় গণিতজ্ঞকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘What will you prefer to eat?’ আর উত্তরে তিনি যদি মজা করে বলেন, ‘I prefer pi’ তবে এই বাক্যটি কিন্তু একটি প্যালিনড্রোম হয়ে যায়। গণিতজ্ঞরা যে ‘পাই’ (Pi)-কে পছন্দ করবেন তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল গণিতে প্যালিনড্রোমিক সংখ্যার অভাব নেই। সাধারণভাবে যে কেউ হাজার হাজার প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা তৈরি করতে পারবে, যেমন ১১, ২২, ১২১, ২৩২, ২৪৪২, ১২৩২১ ইত্যাদি। তবে সহজ অ্যালগোরিদম পদ্ধতিতে (নির্দেশমত সুনির্দিষ্ট ধাপে) যে কোনও অ-প্যালিনড্রোমিক সংখ্যাকে প্যালিনড্রোমিক সংখ্যায় পরিণত করা যায়। যেমন ধরা যাক, একটি সংখ্যা হল ৫৭ (দুই, তিন, চার বা তার বেশি অঙ্কের সংখ্যা ধরা যেতে পারে)। এবার সংখ্যাটিকে উল্টে দেওয়া হল। তাহলে সংখ্যাটি হল ৭৫। এবার এই দুটি সংখ্যা যোগ করা হল। তাহলে এবার সংখ্যাটি হল (৫৭+৭৫)=১৩২। একেও উল্টে দেওয়া হল। তাহলে সংখ্যাটি হল ২৩১। আবার এই দুটো সংখ্যা যোগ করা হল। যোগফল হল (১৩২+২৩১)=৩৬৩। এটি একটি প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা। তিন অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে দেখা যাক। ধরা যাক সংখ্যাটি ২৫৫। একই নিয়মে ২৫৫+৫৫২=৮০৭, ৮০৭+৭০৮=১৫১৫, ১৫১৫+৫১৫১=৬৬৬৬। তিন ধাপেই পাওয়া গেল প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা। এভাবেই যে কোনও সংখ্যাকেই এই নিয়মে পর পর যোগ করে গেলে একসময় প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা চলে আসবে। তবে এ যাবৎ সবচেয়ে দেরিতে যে সংখ্যাটির প্যালিনড্রোম তৈরি করা গেছে এই নিয়মে তা হল ১,১৮৬,০৬০,৩০৭,৮৯১,৯২৯,৯৯০ । ২৬১ ধাপের পর এটি প্যালিনড্রোমে পরিণত হয়। অঙ্কে এত রকমের প্যালিনড্রোমিক-মজা আছে যে তা বলে শেষ করা কার্যত: অসম্ভব। এমন কিছু মজার হদিস করা যাক। প্রথমেই বলি ৯ সংখ্যার এক জাদু প্যালিনড্রোম। ৯-এর সব গুণিতককে (যেমন ০,৯,১৮,২৭,.... ৯০) পর পর পাশাপাশি লিখলে তা কিন্তু লম্বা একটা প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা হয়ে যাবে। সংখ্যাটি হল- ০৯১৮২৭৩৬৪৫৫৪৬৩৭২৮১৯০ । এবার দেখা যাক ১ সংখ্যাটির এক প্যালিনড্রোমিক ম্যাজিক। ১ দিয়ে তৈরি সমসংখ্যক অঙ্কের দুটি সংখ্যার গুণফল সবসময় প্যালিনড্রোমিক হবে। যেমন- ১১x১১=১২১, ১১১x১১১=১২৩২১, ১১১১x১১১১=১২৩৪৩২১, ১১১১১x১১১১১=১২৩৪৫৪৩২১ ইত্যাদি। আবার প্যালিনড্রোমিক গুণফলগুলোর মধ্যে একটা সামঞ্জস্যও লক্ষণীয়। দুই অঙ্কের সংখ্যার গুণফলের মাঝের সংখ্যা ২, তিন অঙ্কের সংখ্যার গুণফলের মাঝের সংখ্যা ৩, চার অঙ্কের সংখ্যার গুণফলের মাঝের সংখ্যা ৪ ইত্যাদি। প্যালিনড্রম নয় এমন একটিই সংখ্যা পাওয়া গেছে যার ঘনফল হল একটি প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা। সংখ্যাটি হল ২২০১। অনেক সংখ্যা আছে যেগুলোর বর্গ হল প্যালিনড্রোম। যেমন- ১১-এর বর্গ ১২১, ২২-এর বর্গ ৪৮৪, ২৬-এর বর্গ ৬৭৬, ১০১-এর বর্গ ১০২০১, ১২১-এর বর্গ ১৪৬৪১ ইত্যাদি। একইভাবে ৭, ১১, ১০১ ও ১১১ সংখ্যাগুলির ঘনফল (Cube) যথাক্রমে ৩৪৩, ১৩৩১, ১০৩০৩০১ ও ১৩৬৭৬৩১ হল প্যালিনড্রোম। চতুর্থ পাওয়ারের প্যালিনড্রোমিক সংখ্যাও আছে, যেমন ১৪৬৪১, ১০৪০৬০৪০১, ১০০৪০০৬০০৪০০১ ইত্যাদি। কিন্তু পাঁচ পাওয়ারের প্যালিনড্রোমিক সংখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু মৌলিক সংখ্যা আছে যেগুলো প্যালিনড্রোম। তিন অঙ্কের সংখ্যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি সংখ্যা, যেমন ১০১, ১৩১, ১৫১, ১৮১, ১৯১, ৩১৩, ৩৫৩, ৩৭৩, ৩৮৩, ৭২৭, ৭৫৭, ৭৮৭, ৭৯৭, ৯১৯, ৯২৯। আবার পাঁচ অঙ্কের সংখ্যার মধ্যে রয়েছে ৯৩টি মৌলিক সংখ্যা। সাত অঙ্কের সংখ্যার মধ্যে রয়েছে ৬৬৮টি। দুটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফলের ক্ষেত্রে প্যালিনড্রোম সংখ্যা তৈরি হয় পাঁচটি ক্ষেত্রে। যেমন ১৬x১৭=২৭২, ৭৭x৭৮=৬০০৬, ৫৩৮x৫৩৯=২৮৯৯৮২, ১৬২১x১৬২২=২৬২৯২৬২, ২৪৫৭x২৪৫৮=৬০৩৯৩০৬। তিনটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফলের ক্ষেত্রে প্যালিনড্রোম হয় মাত্র একটি ক্ষেত্রে, ৭৭x৭৮x৭৯=৪৭৪৪৭৪ । আবার প্যালিনড্রোমে বিন্যস্ত দুটি সংখ্যার গুণফল হয় প্যালিনড্রোমে বিন্যস্ত অপর দুটি সংখ্যার গুণফল- এমন মজাদার সংখ্যাও নেহাত কম নেই। দু’চারটে নমুনা দেওয়া যাক- ১৪৪x৪৪১=২৫২x২৫২, ১২২৪x৪২২১=২১৪২x২৪১২, ১৩৩৪৪x৪৪৩৩১=২৩৩৫২x২৫৩৩২ ইত্যাদি। গত শতাব্দীর একমাত্র প্যালিনড্রোমিক বছর ছিল ১৯৯১ সাল। একবিংশ শতাব্দীতে ফেলে আসা ২০০২ সালটিই হল একমাত্র প্যালিনড্রোমিক সাল। আর পরের শতাব্দীতে ২১১২ হবে প্যালিনড্রোমিক বছর। আবার দিন, মাস ও সাল ধরে আট সংখ্যার তারিখ খুঁজে দেখলে বর্তমান শতাব্দীতে কুড়িটি প্যালিনড্রোমিক তারিখ পাওয়া যাবে, যেমন প্রথমটি ছিল ১০.০২.২০০১। তারপর চলে গেছে ২০.০২.২০০২, ১১.০২.২০১১ ও ২১.০২.২০১২। আর আসতে বাকি আছে ১২.০২.২০২১, ২২.০২.২০২২, ১৩.০২.২০৩১, ২৩.০২.২০৩২, ১৪.০২.২০৪১, ২৪.০২.২০৪২, ১৫.০২.২০৫১, ২৫.০২.২০৫২, ১৬.০২.২০৬১, ২৬.০২.২০৬২, ১৭.০২.২০৭১, ২৭.০২.২০৭২, ১৮.০২.২০৮১, ২৮.০২.২০৮২, ১৯.০২.২০৯১ এবং ২৯.০২.২০৯২। সুতরাং বলা যায় এই শতাব্দি হল আট সংখ্যার তারিখের ভিত্তিতে প্যালিনড্রোম সমৃদ্ধ। বিগত সহস্রাব্দে শেষ যে আট সংখ্যার তারিখটি আমরা প্যালিনড্রোম হিসেবে পেয়েছি তা দ্বাদশ শতাব্দীতে - ২৯.১১.১১৯২। প্যালিনড্রোমের প্রেক্ষিতে এদিক থেকে বর্তমানের আমরা বেশ ভাগ্যবান বলা যায়!


জৈবপ্রযুক্তিতে প্যালিনড্রোম

জৈবপ্রযুক্তিতে প্যালিনড্রোম কথাটি আজ খুব সুপরিচিত। প্রকৃতপক্ষে DNA তে যদি প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম না থাকত তবে বর্তমানে Recombinant DNA Technology নামক বিষয়টির আদৌ উদ্ভব হত কিনা সন্দেহ। আর এটা না হলে চিকিৎসা, কৃষি ও শিল্পে গত চার-পাঁচ দশকে বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় উন্নতি ঘটা সম্ভব হত না। DNA-র প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম বুঝতে গেলে আগে DNA-র গঠন একটু জানা দরকার। DNA হল ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা, নাইট্রোজেন ক্ষারক ও ফসফেট দ্বারা গঠিত বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক বস্তু। প্রতিটি জীবের প্রতিটি সজীব কোশে ক্রোমোজোমের মধ্যে এদের অবস্থান। DNA দেখতে ঠিক যেন পরস্পরকে পেঁচিয়ে থাকা দুটো ফিতে, আর ফিতে দুটোর প্যাঁচানোর অভিমুখ পরস্পরের বিপরীত (অভিমুখ 5` থেকে 3`)। প্রতিটি ফিতে তৈরি হয়েছে ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা, নাইট্রোজেন ক্ষারক ও ফসফেট (একত্রে এদের বলে নিউক্লিওটাইড) দিয়ে। DNA-তে নাইট্রোজেন ক্ষারক থাকে চার প্রকার, যথা অ্যাডেনিন(A), গুয়ানিন (G), থাইমিন (T) ও সাইটোসিন (C)। একটি ফিতের নাইট্রোজেন ক্ষারক অন্য ফিতের নাইট্রোজেন ক্ষারকের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। তবে যে কোনও নাইট্রোজেন ক্ষারক যে কোনও নাইট্রোজেন ক্ষারকের সাথে যুক্ত হতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট নিয়মে যুক্ত হয়। নিয়মটি হল অ্যাডেনিন যুক্ত হয় থাইমিনের সাথে দুটো হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা(A=T) আর গুয়ানিন যুক্ত হয় সাইটসিনের সাথে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা(G≡C)। এভাবেই DNA-র দুটো ফিতে পরস্পর যুক্ত থাকে। এবার প্যালিনড্রোমিক DNA সজ্জাক্রমের কথায় আসি। DNA-র একটা ফিতের নাইট্রোজেন ক্ষারকের বিন্যাস যদি ঠিক উল্টো দিকে থাকে অপর ফিতের নাইট্রোজেন ক্ষারকের বিন্যাসের সাথে হুবহু বিপরীত হয় তবে তা হল প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম। ধরা যাক, একটা ফিতের আংশিক সজ্জাক্রম 5` GAATTC 3`। অপর ফিতেয় ঠিক বিপরীত দিকে প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম হল- 3` CTTAAG 5`। Recombinant DNA Technology-তে কোনও একটি জীবের আকাঙ্ক্ষিত জিনকে (DNA-র অংশবিশেষ) একটি বাহক DNA-র সাহায্যে (একে vector বলে) অপর জীবের DNA-র সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। ব্যাপারটা এরকম- ধরা যাক, ‘ক’ জীব ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, কিন্তু ‘খ’ পারে না। আমরা চাই, ‘খ’ ইনসুলিন তৈরি করুক। তাহলে ‘ক’-এর নির্দিষ্ট জিন যা ইনসুলিন তৈরি করে তা কেটে নিয়ে প্রথমে ‘গ’ বাহকের DNA-র নির্দিষ্ট স্থানে জুড়ে দিতে হবে। তারপর ‘গ’-এর এই DNA (Recombinant DNA বলা হয়)-কে ‘খ’-এর দেহে পাঠিয়ে তার নিজস্ব DNA-র সাথে জুড়ে দিতে পারলেই ‘খ’ ইনসুলিন তৈরি করতে শুরু করবে। DNA-র এই কাটা-জোড়ার কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। DNA-র নির্দিষ্ট জায়গায় কেটে জিনকে বিচ্ছিন্ন করে বা নির্দিষ্ট জিনকে জুড়তে সাহায্য করে বিশেষ উৎসেচক যা Restriction Endonuclease নামে পরিচিত। বিভিন্ন Restriction Endonuclease নির্দিষ্ট প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রমকে শনাক্ত করে। যেমন, Eco RI শনাক্ত করে 5` GAATTC 3`, আবার HindIII শনাক্ত করে 5` AAGCTT 3`, BamH1 শনাক্ত করে 5` GGATCC 3` ইত্যাদি। একই প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম ওই ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ সবার DNA-তেই থাকতে হবে, নইলে নির্দিষ্ট Restriction Endonuclease দিয়ে এই কাটা-জোড়ার কাজ করাই যাবে না। নিচে দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম। 5' G A A T T C 3' 3' C T T A A G 5' এটি Eco RI শনাক্ত করে এবং DNA-এর দুটি ফিতেরই G ও A-এর মাঝে কেটে দেয়। 5' GGATCC 3` 3' CCTAGG 5` এটি BamH1 শনাক্ত করে এবং DNA-এর দুটি ফিতেরই G ও G-এর মাঝে কেটে দেয়। ভাগ্যিস DNA-তে প্যালিনড্রোমিক সজ্জাক্রম ছিল, নইলে মানবসভ্যতা আজ অনেকটাই পিছিয়ে থাকত।


বাংলায় প্যালিনড্রোম

বাংলায় প্যালিনড্রোমিক শব্দ অনেক থাকলেও প্যালিনড্রোমিক বাক্য খুব বিরল। কারণ বাংলায় যুক্তবর্ণ ও যুক্তাক্ষরের ব্যবহার প্রচুর। প্যালিনড্রোমিক শব্দের মধ্যে বহুশ্রুত দুই অক্ষরের শব্দ হল- বাবা, দাদা, মামা, কাকা, চাচা, নানা, লালা, চিঁচিঁ, হিহি, জুজু ইত্যাদি। তিন অক্ষরের প্যালিনড্রোমিক শব্দের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি, যেমন- মরম, মলম, দরদ, জলজ, যমজ, তফাত, মধ্যম, বাহবা, চামচা, সন্ন্যাস, সন্ত্রাস, সরেস, সমাস, সহিস, নতুন, নরুন, নরেন, নন্দন, নবীন, কালিকা ইত্যাদি। একটু বড় প্যালিনড্রোমিক শব্দ হল বনমানব, নবজীবন। প্যালিনড্রোমিক নামও বাংলায় আছে বেশ কিছু – মহিম, নরেন, নটেন, কনক, কটক ইত্যাদি। তবে রমাকান্ত কামার ছাড়াও সুবললাল বসু, সদানন দাস, রায়মনি ময়রা, হারান রাহা, নিধুরাম রাধুনি, দেবী দে ইত্যাদি পদবিসহ প্যালিনড্রোমিক নাম বিরল হলেও বাস্তবে থাকা অসম্ভব নয়।

বাংলায় অর্থপূর্ণ প্যালিনড্রোমিক বাক্য গঠন করা বেশ কষ্টসাধ্য। তবুও সরল কিছু শব্দ সহযোগে ছোট ছোটো প্যালিনড্রোমিক বাক্য গঠন করা যায়। বই চাইব। তুমি কি মিতু? বিকল্প কবি। ঘুরবে রঘু। সীমার মাসী। ইভার ভাই। নাম লেখালেম না। এগুলো প্রচলিত প্যালিনড্রোমিক ছোট্টো বাক্য।


এবং দাদাঠাকুর

বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে লিখলে দাদাঠাকুরকে বাদ দিয়ে আলোচনা করাই অসম্ভব। আর দাদাঠাকুরকে বাঙালি পাঠক চেনে না, এমন একজনও মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতই প্রথম বাঙালি যিনি বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে গভীরভাবে চর্চা করেছেন। দাদাঠাকুর সম্পাদিত ‘বিদূষক’ পত্রিকায় তিনি অনেক বাংলা প্যালিনড্রোম বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন। কাক কাঁদে কাক কাঁ; চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে; তাল বনে নেব লতা; মার কথা থাক রমা; রমা তো মামা তোমার; চার সের চা; বেনে তেল সলতে নেবে; ক্ষীর রস সর রক্ষী; কেবল ভুল বকে; দাস কোথা থাকো সদা? নিমাই খসে সেখ ইমানি; থাক রবি কবির কথা, বিরহে রাধা নয়ন ধারা হেরবি  – ইত্যাদি হল দাদাঠাকুর সৃষ্ট অমর প্যালিনড্রোম।

“রাধা নাচে অচেনা ধারা
রাজন্যগণ তরঙ্গরত, নগণ্য জরা
কীলক-সঙ্গ নয়নঙ্গ সকল কী?
কীর্তন মঞ্চ ‘পরে পঞ্চম নর্তকী”

দাদাঠাকুরের লেখা এই কবিতার প্রতিটি লাইনই এক একটি প্যালিনড্রোম। আর শেষ লাইনটি তো সম্ভবত: বাংলায় সৃষ্ট সবচেয়ে জটিল প্যালিনড্রোম।

শেষে আর একটা বিস্ময়কর তথ্য জানাই। দাদাঠাকুরের জন্ম ইংরেজি ১৮৮১ সালে। সালটা কিন্তু একটা প্যালিনড্রোমিক বছর। আর জন্ম তারিখ বাংলায় ১৩ বৈশাখ (১২৮৮ বঙ্গাব্দ)। ১৩ বৈশাখ সংখ্যায় লিখলে এভাবে লেখা হয় – ১৩/১। এটাও একটা প্যালিনড্রোম। আর দাদাঠাকুরের প্রয়াণ তারিখও জন্ম তারিখেই – ১৩ বৈশাখ। জীবন শুরু যে তারিখ দিয়ে, মৃত্যুও সেই তারিখে। দাদাঠাকুরের জীবৎকালও একটা প্যালিনড্রোম! 


লেখক পরিচিতি - বেড়ে ওঠা, স্কুলের পড়াশুনা কাকদ্বীপে। লেখালেখি,গানবাজনার চর্চা শৈশব থেকেই। ১৯৯২ সালে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বর্তমানে কাকদ্বীপের কাছে একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের একজন সক্রিয় সংগঠক। ছড়া, কবিতা, গল্প, নাটিকা, প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত প্রথম সারির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।