অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


মতামত

অক্টোবর ১, ২০১৭

জাতীয়তাবাদী জোলাপ ও এক বাঙালির প্রলাপ

পৃথু হালদার

আজকাল অদ্ভুত এক বর্গীকরণ চলছে গোটা দেশে। জাতীয়তাবাদের মাত্রা মাপতে নাকি তৈরী হয়েছে অত্যাশ্চর্য এক স্কেল। কে সেই স্কেল তৈরী করেছে,কিসের ভিত্তিতেই বা করেছে তা কেউ জানে না। অথচ সে স্কেল বহাল তবিয়তে বহাল আছে। আছে ঠিক রবীন্দ্রনাথের ‘কর্তার ভূত’-এর মতো। তার দাগ মেপেই নাকি বলে দেওয়া যাচ্ছে কে কতটা স্বদেশী আর কতটা সন্ত্রাসী।

এই মওকায় কিছু স্বঘোষিত জাতীয়তাবাদী আবার সেই স্কেল নিয়ে বসেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে বাঙালির ভারতীয়ত্ব নির্ণয়ে। ইউটিউবে বেশ কয়েকটা ভিডিওতে দেখলাম বাংলাকে ‘ভারতের পাকিস্তান’ বলে আখ্যায়িত পর্যন্ত করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, বাঙালি হিসেবে এই নব অভিধা শুনতে মোটেই গৌরব বোধ করি নি। অতঃকিম, এই প্রলাপ ভাষণ।

প্রথমেই একটা ভাষাতাত্ত্বিক গোলমালের কথা মনে পড়ছে। ‘Why India is the Most Interesting Country’ শীর্ষক আলোচনায় প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ এক মজাদার ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন:

‘...পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে হিন্দিভাষী চরমপন্থীরা উত্তর ভারতে একটা আন্দোলন করে ইংরেজির বিলোপসাধনের জন্য। তাদের দাবী, এটা বিদেশী ভাষা। ইউরোপীয় জাতীয়তার অর্থ বুঝে বা না বুঝে তারাও চায়, প্রত্যেক ভারতবাসী একই ভাষায় কথা বলুক। আর তাতে, হিন্দিই হতে পারে ভারতের জাতীয় ভাষা, কারণ ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩৫% হিন্দিভাষী।

বোধ্য কারণেই, এই বিষয়টা ভীষণভাবে ভুল বুঝল দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তার উপর আবার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রীকে একটা চিঠি লিখলেন হিন্দিতে। উত্তর ফেরৎ এল তামিলে। তা আরো বেশী ভুল বুঝলেন হিন্দিভাষী মুখ্যমন্ত্রী। পরের সপ্তাহে, তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী আরেকটা চিঠি পাঠালেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে। তাতে লেখা,

‘আপনি বলছেন ইংরেজি বিদেশী ভাষা। কিন্তু আমাদের শাস্ত্র যে শেখায় দেবী সরস্বতীই সব ভাষার সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ ইংরেজিটাও তাঁরই সৃষ্টি এবং এটাও ততটাই ভারতীয় যতটা হিন্দি!”

বক্তৃতাটা কয়েক বছর আগের হলে কি হবে, এরকম ঘটনা ও মতবিরোধের বীজ স্বাধীনতার সময় থেকেই ভারতে ছিল। আজ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই বীজ মহীরূহের আকার ধারণ করতে চাইছে। ফলে ভারতবর্ষের মানচিত্রে পাল্লা দিয়ে আমাদের (অর্থাৎ যাদের জাতীয় পরিচিতির পাশাপাশি একটা ভিন্ন আঞ্চলিক পরিচিতিও আছে) পরিচিতি নির্ধারণের তাগিদও বাড়ছে। পূর্বোল্লিখিত ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, লড়াই জমেছে ভাষাকে কেন্দ্র করে -দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে;এর কারণটাও আমরা সাধারণ বুদ্ধিতেই বুঝতে পারি পরিচিতি নির্মাণের জন্য যেসব উপাদানগুলো প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে, তাদের মধ্যে ভাষা একটি। ফলে, যখন সেখানে আঘাত লাগে, তখন পরিচিতির ভিত্তিমূলটি যায় নড়ে।

রাজভাষা ইংরেজি ভারতীয়দের মজ্জায় ২০০ বছর ধরে প্রবেশ করেছে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে শিক্ষিত হওয়ার অন্যতম শর্তরূপে। এবার পরবর্তী সংযোজন – হিন্দি। এটি ভারতীয় হওয়ার শর্ত। এদিকে আবার বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের বাঙালিকরণের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ভাষাকে এরাজ্যের পড়ুয়াদের পাঠ্যসূচীতে বাধ্যতামূলক করতে চাইছেন। অতয়েব, হাঁসজারু বাঙালি মস্তিষ্ক এখন ত্রিভাষা সংগম।

জাঁক দেরিদা মৃত্যুর আগের শেষ সাক্ষাৎকারে বেয়ার্নবঁকে বলেছিলেন,

‘...আমার মনে হয়েছে ভাষা কারো পিতৃপ্রদত্ত সম্পত্তি হতে পারে না। ভাষা অর্জন করতে হয়। তবেই তা অঙ্গীভূত হয়, রক্তে তার আত্তীকরণ ঘটে।’

এই কারণেই বোধহয় জন্মগতভাবে তিনি ফ্রান্সের বাইরের লোক হলেও (জন্ম আলজেরিয়ায় এবং নিজেও তা স্বীকার করতেন) ‘Monolinguism of others’ গ্রন্থে খানিকটা শ্লেষের সঙ্গে এতদূরও বলেছেন যে তিনিই হলেন

“ফরাসি ভাষার অন্তিমতম রক্ষাকর্তা এবং দিকনির্দেশক।“

অর্থাৎ আমরা দেরিদার বক্তব্য অনুসারে দেখছি, বাঙালি হওয়ার জন্য বাংলায় জন্ম যেমন আবশ্যক নয়, ঠিক তেমনি বঙ্গসন্তান যতক্ষণ না ‘রক্তে’ ভাষার ‘আত্তীকরণ’ ঘটাচ্ছে ততক্ষণ সে ‘বাঙালি’ পদবাচ্যে ভূষিত হওয়ারও যোগ্য নয়। পরিচিতি নির্ধারণে ভাষার গুরুত্ব এতটাই মূল্যবান।

দেরিদা সৌভাগ্যবান। তাঁর জাতীয় ভাষার সঙ্গে মুখের ভাষা মিলে গেছে। কিন্তু আমাদের যে মেলে না। আমরা কি করি?

গোমাতা নিয়ে মাতামাতি এখন ভারতীয়ত্বের সংজ্ঞা নিরূপণের অন্যতম মাপকাঠি। অথচ এহেন আচরণ বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ কোনোকালে ছিল বলে মনেও তো পড়ে না। একবার মধ্যভারতের এক গো-রক্ষা কমিটির কর্তা স্বামী বিবেকানন্দের কাছে গোরুর পিঁজরাপোল স্থাপনের জন্য টাকা চাইতে এসে রীতিমতো অপমানিতই হন।

স্বামীজী তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘উত্তর ভারতে মহামারীতে যে হাজার হাজার লোক মারা গেল, তার জন্য কিছু করছেন কী আপনারা?’

ভদ্রলোক উত্তর দেন, ‘না, কারণ আমরা মনে করি, মানুষ তাদের কর্মফল ভোগ করছে।’

‘ওরকম বললে সবরকম চেষ্টাই বৃথা হয়ে যায়। তাতে আমিও বলতে পারি, আপনার গোমাতারাও তাঁদের কর্মফল ভোগ করছেন ও কসাইদের হাতে যাচ্ছেন।’

‘হ্যাঁ, তা ঠিক বটে। কিন্তু শাস্ত্রে যে বলে গোরু আমাদের মাতা...’

‘সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তা না হলে, কে আর এমন গুণধর পুত্র প্রসব করবে বলুন?”

ভদ্রলোক এই ভয়ানক ব্যঙ্গ তো বুঝলেনই না বরং আরো কয়েকবার অর্থের জন্য পীড়াপীড়ি করে শেষে চলে গেলেন। স্বামীজী জানান, যদি তাঁর হাতে কোনোদিন অর্থ আসে, তবে আগে সে টাকায় দেশের মানুষের সেবা করবেন। তারপরেও যদি কিছু উদ্বৃত্ত তাহলে ভাববেন অন্যকথা।

এখানেও দেখছি, সাম্প্রতিক মানদন্ডের নিরিখে ভারতীয় হিসেবে নিজের পরিচয় নির্মানে বাঙালি ফেল। সে যে গোমাতাদের যোগ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ!

ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত উদাহরণ দুটো একারণেই দিলাম যাতে একমাত্রিক জাতীয় পরিচিতির সাথে প্রাদেশিক পরিচিতির পার্থক্যটা বোঝা যায়। নয়তো, এসব মামুলি উদাহরণ দিয়ে বৃহত্তর ভারতীয় সংহতিতে চিড় ধরানোর ইচ্ছে মোটেই আমার নেই। আসলে, প্রবন্ধের শুরুতে উল্লিখিত জাতীয়তাবাদী স্কেলে কিছু সমস্যা আছে। আমার ধারণা, সেই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত হলে ভারতের ভাল হবে বই মন্দ হবে না।

সমস্যা কোথায় বলি। সমস্যা পরিচিতির ‘একমাত্রিক বর্গীকরণে’। অমর্ত্য সেন তাঁর বিখ্যাত বই, ‘পরিচিতি ও হিংসা’ তে এই সমস্যার সমাধান দিয়েছেন এক সার্বজনিক স্বীকৃত পদ্ধতিতে। তিনি লিখছেন, “ঐকান্তিক মনোভাব দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সকলকেই ভুল বোঝা যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিজদের অনেক সমষ্টির অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করি- আমরা প্রত্যেকটিরই সদস্য। কোনও বিরোধ ছাড়াই একই ব্যক্তি হতে পারেন আফ্রিকান বংশের ক্যারিবিয়ান মার্কিন নাগরিক, খ্রিস্টীয়, উদারনৈতিক, নারী, নিরামিষাশী, দূরপাল্লার দৌড়বাজ, ঐতিহাসিক, স্কুলের শিক্ষক, ঔপন্যাসিক, নারীবাদী, অসমকামী, সমকামী ,পুরুষ ও নারীর অধিকারে বিশ্বাসী, নাট্যপ্রেমী, পরিবেশরক্ষার কর্মী, টেনিসের ভক্ত, জ্যাজ সংগীতকার, যিনি একই সঙ্গে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে মহাশূন্যে বুদ্ধিমান প্রাণী আছে,যাদের সঙ্গে বাক্যালাপ করা জরুরি (এবং সেই কথোপকথন ইংরেজিতে হলেই ভালো একই ব্যক্তি একই সময়ে সমষ্টিগুলির প্রত্যেকটির অন্তর্ভুক্ত এবং প্রত্যেকটিই তাঁকে একই বিশিষ্ট পরিচয় দেয়। এর মধ্যে কোনটিই তাঁর একমাত্র পরিচয় বা একক সদস্যভুক্তির বর্গ বলে ধরা যাবে না। আমাদের অনিবার্যভাবে বহুমাত্রিক পরিচিতির ফলে যে কোনও বিশেষ প্রসঙ্গে আমাদের বিভিন্ন অনুষঙ্গ ও বন্ধনগুলির তুলনামূলক গুরুত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে আসতেই হবে।’ অর্থাৎ সোজা কথায়, আমি যতটা বাঙালি ততটাই ভারতীয়। আমার বাঙালীত্বকে মেরে যদি ভারতীয়ত্ব বের করতে চাও, তবে তা হবে জুলুম। শ্যামও যাবে, কূলও যাবে। তার চেয়ে বরং এটাও থাক, ওটাও থাক। দুটো পরিচয়ের মধ্যে তো কোনো বিরোধ নেই! সুভাষচন্দ্র, রাসবিহারী, চিত্তরঞ্জন, বাঘা যতীন বাঙালি ছিলেন বলে কী কম ভারতীয় ছিলেন?

যুগান্তর পত্রিকার সাথে যুক্ত, ১৯০৭ সালের আলিপুর বোমা মামলায় অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ ও আরো কিছু বিপ্লবীর সাথে ধরা পড়েন বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯০৯ সালে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। ১২ বছর কারাদণ্ড ভোগের পর মুক্তি পান এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ‘নারায়ণ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। জেলে বসেই উপেন্দ্রনাথ ‘উনপঞ্চাশী’ বলে একটা বই লেখেন। সেকালের বিখ্যাত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় এই বই সম্পর্কে লেখা হয়, ‘দেশের নানা গলদ তাঁহার মনে যে বেদনার সৃষ্টি করিয়াছে তাহাই তিনি বিদ্রুপের আকারে হাসিতে প্রকাশ করিয়াছেন’। দেশমাতৃকার চরণে সমর্পিত সেই বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথের বাঙালিয়ানার পরিচয় পাচ্ছি ‘উনপঞ্চাশী’ তে এইভাবে –

‘পণ্ডিতজী বল্‌লেন – “কি জানি দাদা,তাই তো বোঝবার চেষ্টা কর্‌ছি। পাঁচ-সাত জন বড় বড় স্বদেশী পণ্ডিত মিলে আবিষ্কার করেছেন যে,বাঙ্গালার ছেলেদের পেটে জাতীয়তা ঢোকাতে গেলে আগে তাদের শেখাতে হবে হিন্দুস্থানী। বাংলা বরং না শিখ্‌লেও চল্‌তে পারে, কিন্তু হিন্দুস্থানী শেখা চাইই চাই।”

পাশ থেকে একটি ছেলে ফোঁস করে বলে উঠ্‌ল। বল্‌লে – “দেখুন,ঐ narrowness টা আমাদের ছাড়তে হবে। আমি বাঙ্গালী,কি পাঞ্জাবী,কি মারাঠি - সে-কথা এখন ভুলে গিয়ে একটা All-India consciousness গড়তে হবে। আমরা এক না হলে যে কিছুই হবে না। এ সোজা কথাটা যে কেন ধর্‌তে পারেন না,তা ত বুঝিনে।”

পণ্ডিতজী বক্তৃতার অবসরে আর এক টিপ নস্য নিয়ে বল্‌লেন, “কি কর্‌বো বাবা,আর দিন কত আগে বল্‌লেও বা হতো । এখন এই পঞ্চাশ বছর ভাত খেয়ে খেয়ে বুদ্ধিটা এমনি ভেতো মেরে গেছে যে,তার মধ্যে ছাতু প্রবেশ করান মুস্কিল।”

“ভাল কথা - ঐ All-India consciousness অর্থাৎ -”

পণ্ডিতজী ছেলেটির মুখের দিকে চেয়ে বল্‌লেন – “অর্থাৎ?” ছেলেটি একটু বিরক্ত হ'য়ে বল্‌লে,"অর্থাৎ আমরা বাংলারও নই,পাঞ্জাবেরও নই,মহারাষ্ট্রেরও নই,-আমরা সারা ভারতের।”

পণ্ডিতজী চক্ষু ছাড়িয়ে রসগোল্লার মত করে'বল্‌লেন, “ও! এই কথা! আমরা গোলাপও নই, টগোরও নই,জুঁইও নই,এমনকি ঘেঁটুও নই,আমরা শুধু ফুল । একেবারে আকাশ-কুসুম! কিন্তু আমি - আমি বাঙ্গালী,আমার চৌদ্দপুরুষ বাঙ্গালী । আমার রক্ত,মাংস,হাড় বাংলার মাটী থেকে গড়া,বাঙ্গালীর ভাবনা চিন্তা,সুখ-দুঃখ,হাসি কান্না,আশা-আকাঙ্ক্ষা আমার মনের পর্দ্দায় পর্দ্দায় জড়ানো । আমি তোমাদের সখের একতার খাতিরে ত নিজেকে তুলো-ধোনা করে'উড়িয়ে দিতে পারিনে । তোমরা যাকে একতা বল্‌চ,সেটা এক হয়ে বেঁচে থাকা নয়,সেটা হচ্চে এক শ্মশানে গিয়ে মরা। সেটা মুক্তি নয়, লয় ।"

পণ্ডিতজীর কথায় ছেলেটি যেন একটু হাঁপিয়ে উঠ্‌লো। কিছুক্ষণ চুপ করে'থেকে সে জিজ্ঞেস কর্‌লে – “আপনি কি বল্‌তে চান যে,আমরা বাঙ্গালী - এই সঙ্কীর্ণ ভাবটা গিয়ে যদি ‘আমরা ভারতীয়’ এই বড় ভাবটা আমাদের আসে,তা'হলে আমাদের মঙ্গল হবে না ?”

পণ্ডিতজী একটু হেসে বল্‌লেন... “বাংলা বড় কি ভারত বড়,এ কথার উত্তর গজকাটী দিয়ে মেপে বলে দেওয়া যেতে পারে;কিন্তু বাঙ্গালীত্ব বড় কি ভারতীয়ত্ব বড়,এ কথার উত্তর ও-রকম মেপেজুপে বলা চলে না । দুধ থেকে দই,ক্ষীর,ছানা,সর,মাখন হয়েছে বলে,এ কথা বলা চলে না যে,এগুলো সব দুধের চেয়ে ছোট বা সঙ্কীর্ণ । বাংলা,পাঞ্জাব,হিন্দুস্থান,মহারাষ্ট্র ইত্যাদি সব বাদ দিলে যেমন ভারতবর্ষ বলে'কিছু আর বাকি থাকে না তেমনি,হিন্দুস্থানীত্ব, পাঞ্জাবীত্ব, বাঙ্গালীত্ব;... এ সমস্তগুলো বাদ দিলে তোমার All-India consciousness টা অশ্বডিম্ব হয়ে দাঁড়ায়।”

অকাট্য যুক্তি। অর্থাৎ বিপ্লবীও মনে করেন দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা যেদিন পণ্য হিসেবে খোলা বাজারে বিক্রি হবে, শহীদের সম্মান যেদিন নিলামে চড়বে এবং জাতীয়তাবাদ নেশাখোরদের অন্যতম আমোদে পরিণত হবে, সেদিন বুঝতে হবে দেশের মৃত্যু হয়েছে। তার জন্য নতুন করে আর স্বতঃসিদ্ধ অনুঘটকের প্রয়োজন পড়বে না।


লেখক পরিচিতি:   শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ, পুরুলিয়ায়। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হলেও চর্চার বিষয় বাংলা ও বাঙালি। প্রকাশিত লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.