“বাঙ্গালীর
পুজো – গানে, পাঠে”!!
শিউলি মাখা পুজোর লেখা
কেয়া
মুখোপাধ্যায়
সেদিন
বিকেলে অফিস ছুটির পর ফেরার পথে সিগন্যালে আটকে, সামনে তাকিয়ে
দেখি অনেকটা দূরে পেঁজা তুলোর মত সাদা সাদা মেঘ
যেন
মাটিতে নেমে এসেছে! যেন এই রাস্তা ধরে সোজা এগোলেই পৌঁছে যাব মেঘের
বাড়ি! আকাশটা ঝকঝকে নীল। মায়াবি উজ্জ্বল রোদ। বুঝলাম শরৎ এসেছে।
শরতের একটা নিজস্ব রঙ আছে। রঙটা ঝলমলে সোনালি। এ রঙ আলোর রঙ, রোদ্দুরের
রঙ, উচ্ছ্বলতার রঙ। দুগ্গা ঠাকুরের পরনের সাজ আর মাথার মুকুটেও
আছে এই রঙ। শরতের এই রঙ অনাবিল আনন্দের।
শরৎ
মানেই শিউলির গন্ধ মাখা শিশিরভেজা ভোর, ঢাকের বাদ্যি, ধূপ, ধুনো
আর কর্পূরের গন্ধ, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো, একশো-আট গোলাপি পদ্ম কি
ঝলমলিয়ে ওঠা একশো আট প্রদীপের আলোর এক ম্যাজিক রিয়্যালিজম। শরৎ
মানেই উৎসব, আর উৎসব মানেই পুজো।
প্রতিবছরই
পুজো আসে। কিন্তু প্রতিবছরই যেন নতুন করে আসা। তাই পুজো এলেই মনের
ভেতরটা হৈহৈ করে ওঠে। প্রতিদিনের যাপন থেকে কোথাও যেন একটা মুক্তির
স্বাদ! সেইসঙ্গে পুজো মানে সর্বজনীনতার এক আশ্চর্য প্রকাশ। পুজো
মানে অনেক আনন্দ। সেই আনন্দেরই একটি ধারা পুজোর সাহিত্য।
কবে
প্রথম পুজোর আনন্দের সঙ্গে মিশে গেল সাহিত্যপাঠের অনাবিল আনন্দ,
সেই খোঁজ করতে গিয়ে দেখি সেখানেও উজ্জ্বল অবদান রবীন্দ্রনাথের।
বাঙালির হৃদয়ের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা মাখা শারদোৎসব দেখে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরই প্রথম ভেবেছিলেন পুজোর ছুটির অবকাশে বাঙালি পাঠকের হাতে
একখানি মোটাসোটা পত্রিকা তুলে দেবার কথা। ১২৯৮ সালের অগ্রহায়ণ
মাসে তাঁর নির্দেশনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘সাধনা’ পত্রিকার প্রথম
সংস্করণ। এই কাগজেরই ১২৯৯ সালে ভাদ্র-আশ্বিন যুগ্মসংখ্যা প্রকাশিত
হয়েছিল পুজোসংখ্যা হিসেবে। কলকাতায় এই পত্রিকার সম্পাদনার সহায়ক
ছিলেন বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ওই সংখ্যায় কবির ‘স্বর্ণমৃগ’ নামে একটি
দীর্ঘ গল্প ছিল। সেও শরতের গল্প।
“আশ্বিনমাসে
দুর্গোৎসব নিকটবর্তী হইল। চতুর্থীর দিন হইতে ঘাটে নৌকা আসিয়া
লাগিতে লাগিল। প্রবাসীরা দেশে ফিরিয়া আসিতেছে…...মেঘমুক্ত আকাশে
শরতের সূর্যকিরণ উৎবের হাস্যের মত ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে,
পক্কপ্রায় ধান্যক্ষেত্র থর থর করিয়া কাঁপিতেছে, বর্ষাধৌত সতেজ
তরুপল্লব নব শীতবায়ুতে শির শির করিয়া উঠিতেছে।”
আজও
বাংলা সাহিত্য প্রকাশনার অন্যতম বড় পর্ব শারদোৎসবকে ঘিরে। ছোটবেলার
পুজোর স্মৃতি জুড়ে আছে পুজোর বই। পুজোর
নতুন
জামা-জুতোর মতই পুজোর বাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল শারদীয়া পত্রিকা।
ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই হৈহৈ করে হাজির রঙবেরঙের শারদীয়া পুজোসংখ্যা।
এত টিভি চ্যানেল নেই, ইন্টারনেট আর সেলফোনও তখন বিরল। কিশোর-কিশোরী
থেকে শুরু করে বড়দের ছুটির বিনোদন বলতে ছিল কয়েকটি পুজোসংখ্যা
আর তাই নিয়ে কি কাড়াকাড়ি! লম্বা লাইন পড়ত আনন্দবাজার অফিসের
ঠিক উল্টোদিকে ওঁদের সেলস কাউন্টারে। আনন্দমেলা সারাবছরই আসত,
কিন্তু পুজোসংখ্যা মানে স্পেশ্যাল! তাই অধীর অপেক্ষা। সেখানে দেখা
হবে ফেলুদা, কাকাবাবু-সন্তু, প্রোফেসর শঙ্কু, কিকিরা, গোগোল, অর্জুন-
সব্বার সঙ্গে! থাকবে টিনটিন আর কুট্টুসও! আর সেইসঙ্গে সেইসব ঝকঝকে
রঙিন কিংবা সাদাকালো ছবি। কোন গল্পে সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, কোনটায়
বা সুধীর মৈত্র, কোথাও কৃষ্ণেন্দু চাকী কিংবা বিমল দাস, আবার কোনটায়
সমীর সরকার কি অনুপ রায়ের দুর্দান্ত সব ছবি। এইসব ছবির হাত ধরে,
গল্পের সঙ্গে সঙ্গে চলত কল্পনার জাল বোনা! অসামান্য কার্টুনের
সম্ভার নিয়ে থাকতেন রেবতীভূষণ, দেবাশিস দেব। শুকতারা আর কিশোরভারতীর
পুজোসংখ্যাও উপহার পেতাম। পুজোর ক’দিন পড়ার বইগুলো শিকেয় তোলা
থাকলেও সব পুজোবার্ষিকী পড়ে ফেলতে হবে হুড়মুড়িয়ে। সেটাই নিয়ম!
পুজোবার্ষিকী
পেলেই প্রথমে গোগ্রাসে পড়ে ফেলতাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে
গল্পটি। এখনও তাই। কত যে মণি-মুক্তো খুঁজে পেয়েছি এই অদ্ভুতুড়ে
সিরিজে! আচ্ছা বলুন তো, “হারিকেন” শুনলে কী কী মনে পড়ে? আলো?
ভয়াল ঝড়? নাহ, হল না। হারিকেন আসলে একটা গরু। আর গরুর নাম হারিকেন
যে বাড়ির লোক রাখতে পারে, সেই বাড়িটি যে অদ্ভুত হবে তাতে আর সন্দেহ
কি! মনোজদের বাড়ির মানুষগুলোও তাই বেশ অদ্ভুত। এই বয়সেও গুলতি
ছুড়ে বেল পাড়েন “সবার ঠাকুরঝি”; বাজারে গিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেন
ভজবাবু ; ধান আর গম মিশিয়ে ‘চাগম’ বানান হারাধন; উবু হয়ে বসতে
না পেরে দুঃখহরণবাবু “তখন হলঘর ভরে গিয়েছে” র ট্রান্সলেশন করেন,
“বাই দেন দা হলরুম ওয়াজ ফুলফিল্ড” ..আর এই অদ্ভুত মানুষগুলোর
উদ্ভট কাজেকর্মে “মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি” ছিল সে বছরের এক জমজমাট
উপন্যাস। হাস্যরস দিয়ে জটিলতাকেও সরস বানানোর কায়দাটাকে শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। গোঁসাইবাগানের
ভূত, পাগলাসাহেবের কবর, বনি, নবীগঞ্জের দৈত্য- কোনটা ছেড়ে কোনটার
কথা বলি। শারদীয়ায় আর এক প্রিয় উপন্যাস কথা, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের
‘ঝিলের ধারে বাড়ি’। সেই চিরন্তন শীর্ষেন্দু, অনাবিল হাসি, মজা
আর তার মধ্যেই আবার গা-ছমছম করা জমজমাট রহস্য। এই উপন্যাসে ভূত
নেই কিন্তু আছে অনু আর বিলুর মত ভাই-বোনের জুড়ি, আর নবীনের মত
একজন সাধারণ কিন্তু দারুণ বুদ্ধিমান নায়ক। আর অবশ্যই গুপ্তধন,
যা শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল ঝিলের নিচের মন্দির থেকে। সম্প্রতি,
১৪১৮ আর ১৪১৯-এ পরপর বেরিয়েছিল ‘গোলমেলে লোক’ আর ‘অষ্টপুরের বৃত্তান্ত।’
দুটোই অসাধারণ!
অদ্ভুতুড়ে
উপন্যাস শেষ করে একে একে অন্য গল্প পড়তাম। পুজোর আনন্দমেলাতেই
একবার পড়েছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রাজবাড়ির রহস্য।’ ভারি
সহজ-সরল ভাবে লেখা কিন্তু একই সঙ্গে চরম উত্তেজনা, সবসময় একটা
কি-হয় কি-হয় ব্যাপার! এটাই লেখাটাকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে।
গল্পের প্লটও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই গল্পের প্রথমদিকে সন্তু কিন্তু
ছিল না। শুধু কাকাবাবু আর দেবলীনা কেওনঝড়ের রাজবাড়ি গেছিল। জোজো
আর সন্তু কলেজের পরীক্ষা থাকায় গেছিল পরে। তখন অবশ্য রহস্য ঘনীভূত
এবং শুধু শেষের রহস্যোদ্ধার এবং দেবলীনা উদ্ধার পর্বেই কাকাবাবুর
সঙ্গী ছিল সন্তু আর জোজো। পরের দিকে কাকাবাবুর অ্যাডভেঞ্চার কখনো
কখনো সাদামাটা লাগলেও পুজোসংখ্যায় কাকাবাবুর উপস্থিতি না হলেই
নয়।
আগে
আনন্দমেলায় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ও লিখতেন মন ছুঁয়ে যাওয়া অসামান্য
কিছু উপন্যাস। সেরকমই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ঘরানার একটা উপন্যাস
ছিল একবার পুজোতে- ‘ইতি তোমার মা।’ অত্যন্ত আদর্শবাদী একটি পরিবার
এবং তাঁদের কাছের কিছু লোকজন আর তার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ কিছু
লোকের সংঘাত। শেষ অবধি শুভবোধের জয় আর অশুভের পরাজয়। খুবই প্রত্যাশিত,
সরলরেখায় এগোয় ঘটনাপ্রবাহ; কিন্তু শেষ করে খুব কষ্ট হয় আর সেই
রেশ থেকে যায় অনেকদিন।
শৈলেন
ঘোষের জাদু-কলমে রূপকথার গল্প পড়াও ছিল এক অসামান্য অভিজ্ঞতা।
বন-সবুজের দ্বীপে, সোনাঝরা গল্পের ইনকা, মা এক নির্ভীক সৈনিক,
গল্পের মিনারে পাখি- কত যে মন ভরানো লেখা! ‘সোনাঝরা গল্পের ইনকা’
আমার ছোটবেলায় পড়া এক অসাধারণ লেখা! ইনকাদের নিয়ে অনেক অলৌকিক
গল্প পড়েছি; কিন্তু এমন মন ভোলানো লেখা আর পড়িনি! শৈলেন ঘোষের
কলমের জাদুর সঙ্গে মিলত বিমল দাসের তুলির জাদু! আর তাতে ভর দিয়ে
উড়ে যেতাম কল্পনার রাজ্যে।
একবার
পুজো সংখ্যায় পড়লাম বানী বসুর ‘জেগে ওঠো।’ এক আশ্চর্য গল্প। সেই
গল্পে পৃথিবীর নানা প্রান্তের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কোন দুঃখের
বা হিংসার ঘটনা দেখলেই ঘুমিয়ে পড়ছিল চিরকালের জন্য। গল্পের শেষে
ছিল বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রনেতাদের প্রতিশ্রুতি,
“আমাদের
বড় প্রিয় খোকাখুকুরা, মন দিয়ে শোনো। কোনও বিশ্বযুদ্ধই আর
পৃথিবীতে হবে না। আমাদের ধনসম্পত্তি আমরা সব ভাগ-বাঁটোয়ারা
করে নিয়েছি। কোনও দেশ থেকে কোনও প্রদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আর
প্রশ্ন নেই। সমস্ত দেশের প্রতিনিধি দিয়ে আমরা বিশ্ব-রিপাবলিক
গড়েছি। আমাদের কোনও অভাব, কোনও অশান্তি নেই। ধর্ম নিয়েও আমরা
আর মারামারি করি না। কোনও কষ্টকর প্রতিযোগিতায় তোমাদের আর কোনওদিন
নামতে হবে না। যে কাজটা করতে সবচেয়ে ভালবাসো, সেটাই করতে দেওয়া
হবে তোমাদের। শুধু একবার জেগে ওঠো তোমরা, জেগে উঠে দ্যাখো, তোমাদের
চারপাশের পৃথিবীটা কত সুন্দর! কী বিশাল! কী মহান! স্বর্গ যদি
কোথাও থেকে থাকে, তো, খোকাখুকুরা, সে এখানেই, এইখানেই, এইখানেই...
।”
মন
ভরিয়ে দিয়েছিল সেই গল্প!
এ
তো গেল উপন্যাস আর গল্প! এর সঙ্গে থাকত শঙ্কু-কাহিনী, কয়েকটি কমিকস,
টিনটিন-সহ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, খেলা নিয়ে একাধিক লেখা এবং সব শেষে
সেই নিয়মিত ‘কী করে নম্বর বাড়াতে হয়।’ সব মিলিয়ে জমজমাট পুজোসংখ্যায়
ডুবে যেতাম! ঘুমোতে যাবার সময়েও সঙ্গী পুজোবার্ষিকী। পাশেই বালিশে
ঘুমোত বইগুলোও।
কাকাবাবুকে
আর পাওয়া যাবে না। আনন্দমেলাতেই আলাপ গোগোল, কর্ণেল আর ম্যাজিশিয়ান
কিকিরার সঙ্গে। প্রত্যেকেই দারুণ প্রিয়। একের পর এক হারিয়ে গেল
কিকিরা, প্রোফেসর শঙ্কু, কাকাবাবু, গোগোল। এখনও কি ভীষণ মিস করি
এই ভাল লাগার চরিত্রগুলিকে! কিশোর শারদসাহিত্যের আগের দিনের সে
স্বাদ এখন অনেক বদলে গেছে। বিষয় অনেক বিচিত্রগামী, আঙ্গিক ও দৃষ্টিভঙ্গিরও
রূপান্তর ঘটেছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কলমে এখনও অভিনবত্বের
স্ফূরণ দেখা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নেই। শৈলেন ঘোষ কি সঞ্জীব
চট্টোপাধ্যায় অনেক কম লেখেন এখন। সমরেশ মজুমদারের অর্জুনকেও পাই
না অনেক দিন। পুরনো আনন্দমেলার সংগ্রহ থেকে খুব সহজেই বুঝতে পারি
কিভাবে ৮০-আর -৯০এর দশকের দুর্লভ মণি-মুক্তোর সন্ধান পেতাম সেখানে!
খুব ভালো লাগে নতুন একদল প্রতিভাময় সাহিত্যিক সেই অভাব বোধ অনেকটা
পূর্ণ করছেন দেখে। সুনীল-শীর্ষেন্দু-সঞ্জীব-সমরেশ বসু-বিমল কর-সমরেশ
মজুমদার-পরবর্তী সময়ে মুগ্ধ হয়েছি বাণী বসু, সুচিত্রা ভট্টাচার্য,
হর্ষ দত্ত, সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, তিলোত্তমা মজুমদারের লেখনীতে।
এখন শারদসাহিত্যের বিকাশ হচ্ছে সৈকত মুখোপাধ্যায়, সৌরভ মুখোপাধ্যায়,
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী, হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত, অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী,
প্রচেত গুপ্ত, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কলমের ছোঁয়ায়। এখনকার
সাহিত্যিকদের উজ্জ্বল ব্যাতিক্রমী লেখা পড়ে আশা করতে ইচ্ছে করে
আবারও পুরনো মহিমা ফিরে আসবে কিশোর শারদসাহিত্য।
আমাদের
এই শারদোৎসব, এই দুর্গাপুজো কি পুরনো হবে কোনও দিন? যতই সোশ্যাল
মিডিয়া, আইফোন, ট্যাব, টিভির পর্দার ঝাঁ চকচকে রিয়্যালিটি শো-নিত্যনতুন
রূপে হাজির হোক, এখনও শরৎ-আকাশের সাদা মেঘ আর কাশফুলে দোলা দিয়ে
মা আসেন স্বমহিমায়। এখনও সিলেবাসের বাইরে খানিক অবকাশে ছোটরা
যাতে আনন্দ পায়, সেই আশায় ভারি যত্ন নিয়ে প্রকাশিত হয়ে চলেছে শারদসাহিত্য।
এই তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণের দিনেও ছাপা পত্রিকার চাহিদা একটুও
কমেনি। পাঠক আগের মতোই প্রতিবছর অপেক্ষা করে থাকেন শারদ সংখ্যাগুলি
প্রকাশের জন্য। আর প্রকাশিত হলেই তাঁরা সাগ্রহে সংগ্রহ করেন। শারদসাহিত্যকে
এই সময়ের এক টুকরো আয়না হিসেবে যদি ধরি, কিশোর-সাহিত্যের আগামী
দিনগুলো তো উজ্জ্বল বলেই মনে হয়!
সময়
পাল্টে গেছে। ভুবনীকরণের দুনিয়ায় বদলে গেছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা, স্মৃতি-জুড়ে থেকে যাওয়া কিছু ছবি পাল্টেছে,
কিছু ছবি আজও এক। শরতের সোনা-রঙা রোদ আর উপচে পড়া খুশি নিয়ে আমার
যে ছোটবেলার শরৎ ছিল, আজ নেই। কিন্তু এই দূর প্রবাসেও মায়াবি সোনালি
আলো মেখে শরৎ আসে। পুজোর ‘আনন্দ’-বার্ষিকী এখানে চাইলেই কেনা যায়
না। তবে এখন আমরা আন্তর্জাতিক, মাউস নাড়ালেই আন্তর্জালে এক নিমেষেই
মুঠোয় পছন্দের সব কিছু। তাই অনলাইন অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা। না’হলে
পিডিএফ কপি পড়া ট্যাবে বা ল্যাপটপের স্ক্রীনে। নতুন বই ছুঁয়ে দেখার
খুশি, নতুন বইয়ের গন্ধ পাবার আনন্দ তাতে নেই। তবু সব তো পড়া হয়ে
যাচ্ছে অনেক দূরে থেকেও! আর যত দূরেই থাকি, এভেবে আমার একান্ত
নিজস্ব বর্ণমালার নরম, উষ্ণ ছোঁয়ায় খুঁজে পাই ঘরে ফেরার স্বাদ।
এ ফেরা শারদ-সাহিত্যের হাত ধরে।
লেখক
পরিচিতি -
কলকাতা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী।বর্তমানে
আমেরিকার স্যান অ্যান্টোনিওতে প্রবাস-জীবন। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে
বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। লেখালেখি শুরু স্কুল ম্যাগাজিন থেকে।
কলেজ জীবন থেকে রেডিওর প্রতি ভালোবাসা ও আকাশবাণী কলকাতাতে রেডিও
জকি প্রায় এক দশক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখার পাশাপাশি
বেড়ানো আর গান শোনায় কাটে ছুটির অবকাশ।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর লেখাগুলোর
ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর
নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।