অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


বইয়ের খবর

জুলাই ১৫, ২০১৭

 

রহস্যের সন্ধানে: “ব্যক্তিগত শত্রু” এবং “হেমকান্ত মীন”

ঋজু গাঙ্গুলী


অবশেষে বর্ষা তার প্যাচপেচে এবং কর্দমাক্ত উপস্থিতি নিয়ে হাজির হয়েছে কল্লোলিনীতে। আমাদের মতো হতভাগ্য চাকুরে এই তথ্য বুঝেছে রোজ দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া বিবাদী বাগ দেখে “সাগরে ঢেউ উঠেছে” মনে হওয়ায়, গিন্নির তরফে অকস্মাৎ ১২০০ টাকা কিলোর ইলিশের জন্য প্রবল দাবি কীভাবে সামলানো যায় সেই চিন্তায়, এবং নোংরা জলে ভেজা মোজা খুলতে-খুলতেও হাতে ধরা পত্রিকাটার ভূত বা রহস্য সংখ্যার দিকে নজর পড়ায়। ভাবলাম, “অবসর”-এর যে পাঠকেরা আমার পাক্ষিক গ্যাজর-গ্যাজর পড়তে বাধ্য হন, তাঁদের কাছেও কি মেঘদূত এইসব বার্তাই বয়ে আনে? আর কিছু তো পাঠাতে পারব না এই অবিশ্বাস আর আমরা-ওরা-য় দীর্ণ বঙ্গভূমি থেকে, বরং সম্প্রতি পড়া দু’খানা গোয়েন্দা গল্পের বই পড়ে মনে হওয়া কথাগুলোই তাঁদের সামনে পেশ করা যাক।

বইয়ের নাম:ব্যক্তিগত শত্রু
লেখক : দীপিকা মজুমদার
প্রকাশক : দ্য কাফে টেবল
প্রচ্ছদ : রাহুল মজুমদার ও পার্থ মুখোপাধ্যায়
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১৭
বিবরণ : পেপারব্যাক, ১৫৯ পৃষ্ঠা, ১৫০ টাকা

প্রথমে আসি “ব্যক্তিগত শত্রু” প্রসঙ্গে।

সোশ্যাল মিডিয়া, এবং পত্রিকায় প্রকাশিত চারটি কাহিনি স্থান পেয়েছে এই বইয়ে। প্রতিটি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রাইভেট ডিটেকটিভ অরূণাভ দত্ত। তাঁর সঙ্গে সহায়ক হিসেবে এসেছেন তাঁর সহধর্মিনী ক্রাইম রিপোর্টার অদিতি বসু। লেখক অত্যন্ত সচেতনভাবে, মূলত একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভের আইনি সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে, অরুণাভর সাহায্যকারী, এবং ক্ষেত্রবিশেষে সাহায্যপ্রার্থী হিসেবে এনেছেন লালবাজারের পুলিশ অফিসার ত্রিদিব দাশগুপ্তকে। আলোচ্য বইয়ের চারটি গল্পে কী ধরণের রহস্যভেদ করলেন এঁরা?

(১) রাধামাধব রহস্য: সম্ভবত লেখকের প্রথম রহস্যকাহিনি এটিই। ফলে, ভাষাগত অপরিণতির চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে এই লেখার সর্বাঙ্গে, যেমন “শ্বশুর মশাই দর্পনারায়ণ একজন অতি বিচক্ষণ ব্যবসায়ী ছিলেন, ওনার শখের মধ্যে ছিল বিভিন্ন অ্যান্টিক জিনিস সংরক্ষণ করা। ওনার একটি সংরক্ষণের মধ্যে অন্যতম ছিল আমাদের অন্দরমহলের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বেলেপাথরের তৈরি প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো (বানান অপরিবর্তিত) রাধামাধবের মূর্তি”। ‘ওঁর’-এর বদলে ‘ওনার’-এর মতো প্রচলিত-অথচ-ভুল অভিব্যক্তি, ‘সংরক্ষণ’ শব্দের ভুল প্রয়োগ, পাল বা সেন যুগকে পাঁচশো বছর আগের অধ্যায় বলে পরিচয় করানো, ইত্যাদি সমস্যা এই লেখায় প্রকট। মূলত শিশু-কিশোর সাহিত্যে বহুব্যবহৃত গুপ্তধন উদ্ধারের প্লট, সত্যজিৎ থেকে শীর্ষেন্দু সবার লেখায় দেখে-দেখে হেজে যাওয়া ভিলেইন, এবং ভীষণ রকম সরলরৈখিক ন্যারেটিভ এই গল্পটিকে অত্যন্ত দুর্বল করে দিয়েছে। একরকম জোর করে কাহিনিটিকে প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের জন্য সাজাতে গিয়ে এতে যেভাবে কিছু জিনিস যোগ করা হয়েছে সেটিও মূল কাহিনির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ না হয়ে দস্তুরমতো প্রক্ষিপ্ত ঠেকেছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রথম গল্পটি হতাশই করেছে।

(২) সোনালী (বানান অপরিবর্তিত) কাঁটা: এক নায়িকার অপহরণ ও মৃত্যুর রহস্যভেদের এই কাহিনিটি কিন্তু তুলনামূলক ভাবে দক্ষ হাতের রচনা! লেখাটির উদ্দিষ্ট পাঠককুল যে প্রাপ্তবয়স্ক সেবিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকার ফলেই হয়তো লেখক কুশলী ভঙ্গিতে বিভিন্ন চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন, নিহত নায়িকার অতীত ও বর্তমানের ওপর থেকে একের পর এক পর্দা সরিয়ে নেওয়ার সময় আসল ক্লু-র পাশাপাশি আমাদের উদ্দেশে ছুঁড়েছেন দেদার রেড হেরিং, এবং শেষ অবধি পাঠক মনে-মনে যাকে অপরাধী বলে চিহ্নিত করে রেখেছে তারই গলায় মালা, থুড়ি হাতে বালা পরিয়েছেন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে, এই লেখাটিকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্রাউড-প্লিজিং করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন লেখক।

(৩) পুতুল খেলা: গল্পটা ভালো। প্রেডিক্টেবল ধরন, এবং চরিত্রগুলোতে স্টিরিওটাইপিং অত্যন্ত বেশি রকম মোটা দাগের হলেও, লেখার গুণে, এবং বাস্তব পরিস্থিতির চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে নৈপুণ্যের জন্য গল্পটাকে ভালো বলতেই হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, বইয়ের পেছনে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিতে গিয়ে গল্পটার যে টিজার দেওয়া হয়েছে, তাতেই গল্পের সাসপেন্সের সাড়ে সর্বনাশ করে দেওয়া হয়েছে। লেখক কি এই মারাত্মক ত্রুটিটা লক্ষ্য করেননি? আর প্রকাশকেরই বা কেমন আক্কেল, যে একটা গোয়েন্দা গল্পের আসল সূত্রটাই বলে দেওয়া হয় তার টিজারে!

(৪) ব্যক্তিগত শত্রু: বইয়ের এই গল্পটিই সবচেয়ে বেশি করে পাঠকের মস্তিষ্ককে ব্যায়াম করিয়েছে। রেড হেরিং-এর পরিমিত প্রয়োগ, ধাঁধার মাধ্যমে গোয়েন্দার সঙ্গে পাঠকের উদ্দেশেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া, এবং গোয়েন্দা ও পুলিশের সঙ্গে পাঠককেও এক সিরিয়াল কিলারের মন বোঝার চেষ্টা করার পাশাপাশি তাকে ধরার জন্য ধাওয়া করানোয় এই গল্পটা রহস্য গল্প হিসেবে সফল হয়েছে।

সব মিলিয়ে এটাই বলার যে দীপিকা মজুমদারের লেখায়, বিশেষত ভাষায়, প্রাথমিক অবশ্যম্ভাবী আড়ষ্টতাটুকু থাকলেও তাঁর লেখার হাত ক্রমেই ‘খুলেছে’ ও খুলে চলেছে। প্লট-সর্বস্ব গল্পের তুলনায় সমাজের বিভিন্ন চোরাস্রোত এবং মানবমনের আলো-আধাঁরিও ক্রমেই তাঁর গল্পের মুখ্য নিয়ামক হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় আশা করাই যায় যে বাংলায় প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের জন্য তাঁর কাছ থেকে আমরা আরো বেশি, এবং আরো ভালো রহস্যকাহিনি পাব। তবে এই বইয়ের আগামী সংস্করণ প্রকাশিত হলে বানান এবং সামগ্রিক ভাবে মুদ্রণের বেশ কিছু দিক নিয়ে প্রকাশককে কিন্তু সচেতন হতেই হবে।

বিশেষ সংখ্যা প্রকাশে তৎপর সম্পাদকেরা আগামী দিনে লেখককে তথ্য-তত্ত্ব-চরিত্র ত্রিবেণীসঙ্গমে উৎকৃষ্ট রহস্যকাহিনি নির্মাণের আরো বেশি সুযোগ দেবেন, সেই আশা নিয়ে এই বইটির আলোচনায় ইতি টানছি।

এবার আসি “তিন এক্কে তিন - হেমকান্ত মীন” প্রসঙ্গে।

বইয়ের নাম : তিন এক্কে তিন - হেমকান্ত মীন
লেখক : কিশোর ঘোষাল
প্রকাশক : হযবরল (সৃষ্টিসুখ-এর শিশু-কিশোর সাহিত্য বিষয়ক ইমপ্রিন্ট)
প্রচ্ছদ : সুমিত রায়
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১৭
বিবরণ : পেপারব্যাক, ১৪৪ পৃষ্ঠা, ১৬০ টাকা

লেখকের অকপট ‘কিছু কথা’ পড়লে মূলত শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য রচিত এই গল্পগুলো লেখার উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট হবে:
“মূলত রহস্য গল্প সংকলন হলেও নিছক রহস্যের সমাধান আর দুষ্টলোকের দমন এই গল্পগুলির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং নানান মানুষের সম্পর্কের রহস্য, এই বাংলার লোপ লেতে থাকা সংস্কৃতি, ইতিহাস, প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনের প্রয়াসও এই গল্পগুলির অনন্য উদ্দেশ্য”।
গৃহবধূ শোভাময়ী সান্যাল এই গল্পগুলোর কেন্দ্রীয় চরিত্র। পর্যবেক্ষণ, যুক্তি, জ্ঞান, এবং নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি ছিন্ন করেন রহস্যের জটিল জাল, আর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে তাঁর ছেলে, তথা এই গল্পগুলোর কথক জ্যোতিষ্ক সান্যাল।
সুমিত রায়-এর ঝকঝকে প্রচ্ছদে শোভিত, এবং সুমুদ্রিত এই বইয়ে যে তিনটি গল্প আছে তারা হল:

[১] হেমকান্ত মীন: ‘জয়ঢাক’-এ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত এই কাহিনির মূল উদ্দেশ্য অত্যন্ত সরল: একটি বনেদি, এবং একদা অত্যন্ত সম্পন্ন পরিবারের নিজস্ব সম্পদ উদ্ধার করে দেওয়া, যাতে বাড়ি বিক্রির সময় অজান্তে সেই সম্পদটিও হাতছাড়া না হয়ে যায়। লেখাটা কৌতূহলোদ্দীপক লাগছিল তাতে গ্রাম বাংলার পারিবারিক দুর্গা পূজার বিবরণ, এবং সেই প্রসঙ্গে কিছু ঘরোয়া কথা থাকায়। কিন্তু ক্রমেই বুঝলাম, এই গল্পে বুদ্ধির ঝলকের তুলনায় বিস্তর হাবিজাবি কথা, সেন্টিমেন্টাল গ্যাদগ্যাদানি, এবং অপ্রাসঙ্গিক দীর্ঘসূত্রতাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। ৪৪ পাতার এই গল্পে মূল রহস্য, তথা মস্তিষ্কের পুষ্টির পক্ষে উপযোগী বস্তু আছে সাকুল্যে পাতা দেড়েক। তাই, গল্পটা পড়তে গিয়ে সিরিয়াসলি অধৈর্য, এবং শেষে সরলীকৃত সমাধানটি পড়ে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এর তুলনায় ‘জয়ঢাক’-এর চেহারাটায় অন্তত আজাইরা প্যাচাল অনেকটাই কম ছিল!

[২] সর্বনেশে নেশা: এক প্রবল প্রতাপশালী পরিবারের সদস্যের কাছে কোনোভাবে পৌঁছে যাচ্ছে নেশার বস্তু। কিন্তু কীভাবে? এই গল্পের সমাধানটিও এতটাই শিশুসুলভ যে শরদিন্দুর ‘মাকড়সার রস’ এবং গোয়েন্দা হুকাকাশির অ্যাডভেঞ্চার সম্বন্ধে ন্যূনতম জ্ঞান রাখা পাঠকই সেটির সমাধান করে ফেলবেন গল্প শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই। তবে রহস্যের রক্তাল্পতা নয়, এই গল্পেও মূল ট্র্যাজেডি হল এর অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা, এবং সম্পূর্ণ অকারণে সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়ার প্রবণতা। একটা নির্মেদ, তথ্যসমৃদ্ধ, এবং স্মার্ট রহস্যকাহিনি রচনা যে লেখকের সাধ্যের বাইরে, এমন ধারণাই জোরালো হয় এই গল্পটা পড়লে।

[৩] মূর্তি রহস্য: দুঃখের সঙ্গেই জানাতে হচ্ছে, গুপ্তধন উদ্ধারের উদ্দেশ্য নিয়ে রহস্যভেদীর সাহায্য চাওয়ার যে বস্তাপচা ছকটা বিভিন্ন শিশু-কিশোর সাহিত্যিক ব্যবহার করে-করে জীবনানন্দীয় ভাষায় ‘শুয়োরের মাংস’ করে দিয়েছেন, আবার সেটাই ফিরে এসেছে এই গল্পে। আশায় ছিলাম, লেখকের ঘোষিত উদ্দেশ্য যেহেতু রহস্য কাহিনির আদলে বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ও প্রত্নসম্পদের ওপর আলোকপাত করা,  হয়তো চিত্রা দেব-এর অসামান্য “সিদ্ধিদাতার অন্তর্ধান”-এর মতো একটা কাহিনি পাব। পোড়া কপাল! একটি শিশু-সুলভ রহস্যকে ৬৫ পাতা ধরে ভ্যাজর-ভ্যাজর করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় কথা, ফালতু চরিত্র, এবং বালতি-বালতি সেন্টিমেন্ট দিয়ে।

এই অখাদ্য লেখাগুলো পড়ে মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে গেল, কারণ এর তুলনায় ‘জয়ঢাক’-এ প্রকাশিত লেখকের মজা আর রোমাঞ্চ মেশানো গল্পগুলো দু’মলাটের মধ্যে পড়তে পেলে অনেক ভালো লাগত। সামগ্রিকভাবে এটাই বলার যে আজকের ঝকঝকে বুদ্ধিমান কিশোর-কিশোরীদের কাছে ইনফোটেইনমেন্ট বা তথ্যনিষ্ঠ বিনোদন পৌঁছে দেওয়ার জন্য যদি এই ধরনের বইয়ের বা লেখার ওপরেই নির্ভর করতে হয়, তাহলে “আজকের ছেলেমেয়েরা বাংলা পড়ে না” জাতীয় হাহাকার করার কোনো মানেই হয় না, কারণ আমরা জেনেশুনে তাদের কাছে দুধের নামে পিটুলিগোলা তুলে দিচ্ছি!

রহস্যভেদ মানে যে আসলে মাংস নয়, মস্তিষ্কের প্রতি আবেদন জানানো, একথা শুধুমাত্র বিপত্তারণ রহস্যভেদীর দরজায় দাঁড়ানো ক্লায়েন্টরা নন, পাঠকেরাও জানেন। আগামী দিনে আমরা ছোটো বা বড়ো পাঠকদের জন্য যেসব বই পাব, তাদের রচয়িতারা এই সত্যটির যথাযোগ্য সমাদর করবেন, এই আশা নিয়েই আজকের ‘বইয়ের খবর’ শেষ করছি।


লেখক পরিচিতি: এক উদ্যমী পাঠক, যিনি বিপ্লব, চোখের জল, মানবচরিত্রের অতলস্পর্শী গভীরতা, সিন্ডিকেট, সারদা, ধোনি, ইত্যাদি তাবড় বিষয় থেকে দূরে, স্রেফ বেঁচে থাকার গল্প পড়তে চান। নিজের ভালবাসা থেকেই দীর্ঘদিন বইয়ের রিভিউ করছেন।                   

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.