অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


বইয়ের খবর

জুন ৩০, ২০১৭

 

ফ্যান্টাসি ও কল্পবিজ্ঞান

ঋজু গাঙ্গুলী


বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের অনুরাগী পাঠকের কাছে এ বড়ো সুখের সময়।

প্রায় সবক’টি প্রধান ওয়েবজিন তো বটেই, বাজারে চলতি তথাকথিত মূলধারার পত্রপত্রিকায় এখন নিয়মিত বা অনিয়মিত ব্যবধানে প্রকাশিত হচ্ছে কল্পবিজ্ঞান সংখ্যা। হ্যাঁ, একথা ঠিক যে সেইসব সংখ্যায় অনেক সময় কল্পবিজ্ঞান চাপা পড়ে যাচ্ছে ফ্যান্টাসি বা অপবিজ্ঞানের আড়ালে। অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক সাহিত্যের নামে বিদেশি লেখাজোখার অক্ষম অনুকরণ বা হনুকরণ-ই লাঞ্ছিত করছে পাঠকের মনকে।

তবু, অনেক-অনেক দিন পর বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞান চর্চা এক বিরাট সংখ্যক লেখক, পাঠক, ও রসবেত্তার কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু, কয়েকজন মানুষের শ্রম, মেধা, ও অকৃপণ ভালোবাসার ভিতের ওপর গড়ে ওঠা সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করার জন্য আজকের পাঠকের কাছে ঠিক কেমন লেখা পৌঁছচ্ছে?

বা, আরো কর্কশ ভাবে বলতে গেলে, কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের জন্য পাঠকের মনে তৈরি হওয়া এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে, বড়োবাজারি ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই সমীকরণ অনুযায়ী বাজারে ঠিক কী প্রোডাক্ট সরবরাহ করা হচ্ছে?

আজকের ‘বইয়ের খবর’ তেমনই দুটি প্রোডাক্টের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিতে চায়, যারা আজকের, তুলনামূলকভাবে সচেতন, এবং ফ্যান্টাসি ও কল্পবিজ্ঞানের তফাৎ জানা পাঠকের জন্য বাজারে এসেছে।

আগে আসা যাক ‘পত্র ভারতী’ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৭-য় প্রকাশিত ১৫২ পৃষ্ঠার হার্ডকভার, পবিত্র আচার্য-র বই “সংকীর্ণ পালানোর পথ”-এর কথায়।

বইটির বিষয়বস্তু কী?
চল্লিশ থেকে ষাটের দশকের পৃথিবী জুড়ে ব্যাপ্ত এই বই। এতে, কোল্ড ওয়ার এবং আসন্ন নানা ভূ-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংসের মুখোমুখি মানবজাতিকে নতুন করে সব শুরু করার একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য জেমস লঙ নামক এক বিজ্ঞানী খুঁজে বের করলেন মনুষ্য বসবাসোপযোগী অন্য এক গ্রহ। সেই গ্রহে সত্যিই মানুষ বাঁচতে পারে কি না, তা জানার জন্য তিনি সেখানে টেলিপোর্ট (??!!) করলেন নিজের কুকুরকে, এবং এক বাঙালি সুপারম্যানকে। রুদ্র নামের সেই সুপারম্যানটি সফরের আগে নিজের গ্রামের সার্কাসের তাঁবু থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের এক জনজাতি-অধ্যুষিত গ্রামে, এবং সফরের পরে সেই গ্রহে গিয়ে কী ধরণের অ্যাডভেঞ্চার করল, ইতিমধ্যে কে যেন কাকে কেন খুন করে ফেলল, কারা যেন সমানে কফি খেল আর অসংলগ্ন ভঙ্গিতে মিটিং করল, এবং শেষে আক্ষরিক অর্থে “কী হইতে কী হইয়া গেল”, এই নিয়ে রচিত হয়েছে এই উপন্যাসটি।
কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান পরে হবে, আগে বরং লেখকের সৃষ্ট কেন্দ্রীয় চরিত্র রুদ্রের সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দেওয়া যাক:

  • শঙ্করের রাজ সংস্করণ রুদ্র ঘাসের গায়ে পরম আদরে হাত বোলায়,
  • আশেপাশের গ্রামের সবক’টা স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করে,
  • ‘হাতের কাজ’ হিসেবে নক্ষত্রের কোরনা ধরে শক্তি উৎপাদন করে,
  • প্রায় সমস্ত রকমের খেলাধুলোয় চ্যাম্পিয়ন,
  • নিজের বানানো টর্চের আলো সার্কাসের খাঁচা থেকে বেরোনো বাঘের চোখে ফেলে বাঘকে শান্ত করে,
  • অ্যাডভেঞ্চার করার জন্য যেতে চায় “কোনো অজ্ঞাত স্থানের অজানা রহস্যের মধ্যে”,
  • নিজে পদার্থবিদ্যার ছাত্র হয়েও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব বিভাগীয় প্রধানের একটি অত্যন্ত সরল চিঠি পেয়ে উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমোতে পারে না,
  • অক্টোবর মাসে জলপাইগুড়ির বনাঞ্চলে পাহাড়ি পাতার পোশাক পরা ‘খোলামেলা’ মেয়েদের সঙ্গে কাঁচা শালপাতার চুরুট আর মহুয়া সহযোগে নৃত্যগীত আদি উপভোগ করে,
  • পিস্তলের গুলি করে এমন এক নেকড়েকে তাড়ায় যে নাকি ওই গ্রামে এসে নীলগাই মেরে গেছে ক’দিন আগে,
  • জল ছাড়া মরুভূমিতে পাঁচ দিন ঘুরে বেড়ায়,
  • সুপারম্যান হয়ে যায় (ব্যাখ্যাটা সরাসরি লেখকের ভাষাতেই দিলাম: “বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আবিষ্কার করল সে দৌড়তে পারছে অসম্ভব জোরে। প্রফেসরের যন্ত্রে অবনির্মিত হওয়ার অন্তিম পর্যায়ে শক্তির ভরে রূপান্তরের সময়ে গঠনগত ত্রুটির জন্যে রুদ্রর শরীরে দানবিক শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। হাত-পা সব ধাতব-শক্ত হয়ে গেছে। শরীরে দানবিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি বেড়ে গেছে কয়েক লক্ষ গুণ। … ওর দূরদৃষ্টি এখন মরুভূমি ছাড়িয়ে নিকটবর্তী জনপদের দিকে”, ইত্যাদি-ইত্যাদি।

এই ভয়াবহ ভাষায়, যে জিনিস এক পাতায় বলা যায় তাকে পনেরো পাতা জুড়ে ফেনিয়ে, এলিয়েন-এর ফেসহাগার আর টি-রেক্সের কম্বো অফার টাইপের ভিনগ্রহী দানব বানিয়ে, জেমস প্যাট্রিক কেলি-র “থিংক লাইক আ ডাইনোসর” থেকে টেলিপোর্টেশনের তত্ত্ব নিয়ে তাতে অকৃপণ গঞ্জিকাধূম্র প্রয়োগ করে, বিজ্ঞানের জগতে রাজনীতি আর কূটনীতির পাশাখেলা দেখানোর জন্য সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর একের পর এক অধ্যায়ের অবতারণা করে, উইকিপিডিয়া থেকে তোলা তথ্য যেখানে-সেখানে পূতিগন্ধময় বর্জ্যের মতো নিক্ষেপ করে, গল্পের মাথামুণ্ডু লোপ করে, কখনও ম্যালথুসের জনবিস্ফোরণ তত্ত্ব, কখনও বিগ ব্যাং, কখনও বিগ ক্রাঞ্চ, কখনও মিটিওরাইট ইমপ্যাক্টের ডুমসডে থিওরি আউড়ে লেখক যা বানিয়েছেন তা যে কতটা হাস্যকর, ক্লান্তিকর, এবং কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের অনুরাগী কোনো পাঠকের কাছে কতটা যন্ত্রণাদায়ক, তা একমাত্র এই বইয়ের হতভাগ্য পাঠকই বুঝবেন।

যে সময়ে ‘অ্যারাইভাল’-এর মতো গভীর চিন্তনের পরিচায়ক সিনেমা এই কলকাতাতেও দর্শকের দ্বারা সমাদৃত হচ্ছে, সেখানে এমন একটি বস্তুর উৎপাদন ও পরিবেশন থেকে আশঙ্কা হয়, লেখকের মতে বাঙালি পাঠকের পিটুলিগোলাই প্রাপ্য, দুধ নয়।

বহু মানুষের শ্রমে ও তিতিক্ষায়, অবশেষে যখন বাংলায় কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যকে পাঠক সিরিয়াসলি নিতে শুরু করেছেন, তখন এই সম্পূর্ণ অপাঠ্য লেখাটি প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে মাথায় পড়া বিষ্ঠাবৎ ঠেকল।

যদি একান্তই ম্যাসোকিস্টিক প্রবণতার দ্বারা তাড়িত হন, তাহলেই দেড়শো টাকা গাঁটগচ্চা দিয়ে এই বইখানা পড়বেন, নইলে নয়!

তিন দিন ধরে রিসাইকল হওয়া বাসি তেলে ভাজা শিঙারাও ঠাণ্ডা করে খেলে যেমন অবস্থা হয়, উপরোক্ত বইটি পাঠান্তে আমার মানসিক অবস্থা তেমনই হয়েছিল। রাগে যখন বাংলা কল্পবিজ্ঞান রচয়িতাদের নিয়ে মাথায় রীতিমতো নিহিলিস্ট গোছের ভাবনা আসছে, তখন আর একটি নাতিস্থূল, এবং একেবারে সাম্প্রতিক বইয়ের সন্ধান পেলাম নিজের বুকশেলফে। পরবর্তী গ্যাজর-গ্যাজর সেটি নিয়েই।

‘বৈভাষিক’ নামক প্রকাশনা থেকে, অভীক কুমার মৈত্রের চমৎকার প্রচ্ছদে শোভিত হয়ে, মে ২০১৭-য় প্রকাশিত হয়েছে ১২৮ পৃষ্ঠার এই হার্ডকভারটি।

ইতিপূর্বে আলোচিত বইটির লেখকের মতো এই বইয়ের লেখক, অর্থাৎ শ্রী সেনগুপ্ত-ও পেশাদার লেখক নন। মূল উপন্যাস শুরুর আগে অভিজিৎ গুপ্ত কর্তৃক লিখিত একটি অমূল্য ‘অবতরণিকা’, এবং উপন্যাসের শেষে লেখকের সৎ ও আন্তরিক ‘উত্তরকথা’, এই দুটি অংশই প্রমাণ করে দেয়: এই বই ব্যবসায়িক প্রেরণা, বা লেখক হিসেবে নাম কেনার অপচেষ্টা-সঞ্জাত নয়, বরং কল্পবিজ্ঞান তথা জঁর ফিকশনের প্রতি ভালোবাসা, এবং মাংসের বদলে মস্তিষ্কের কাছে আবেদন করার তাগিদ, এই দুই আবেগানুভূতির ফলেই চলচ্চিত্র বিভাগের অধ্যাপক শ্রী সেনগুপ্ত এই উপন্যাসটি লিখেছেন।

কথাটা একই সঙ্গে আনন্দের, ও ভয়ের।

আনন্দের, কারণ কল্পবিজ্ঞান চর্চাকে ‘ধূম মচিয়েছে’ বা ‘কেন কী’ স্তরের লঘু গদ্য, এবং কাকাবাবুর ছেঁড়া স্যুটকেসে টাইম ট্র্যাভেলের চাবিকাঠি খুঁজে পাওয়ার প্লটের থেকে ওপরে তুলতে গেলে প্রয়োজন উচ্চ মেধা, এবং অধীত প্রজ্ঞা ও সচেতনতার লজ্জাহীন বৌদ্ধিক উন্মেষ। কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যকে ফ্যান্টাসির সঙ্গে একাকার করে দিয়ে তাকে বালখিল্য স্তরে নামানো, যাতে মুড়ি ও মিছরি দুজনেরই দর সেই হাটে এক হয়, বাংলা সাহিত্যকে ইতিমধ্যেই নীরক্ত করে দিয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন এক নিপাট “অয়ম অহম ভোঃ” শুনলে আশা জাগে বইকি।

ভয়ের, কারণ বিদেশি সিনেমার ভাষায় দীক্ষিত অধিকাংশ বাঙালির মতোই শ্রী সেনগুপ্ত বাংলা লেখেন ইংরেজিতে। নমুনা পেশ করা যাক কয়েক পিস:

“আমার ইচ্ছের বা সম্মতির কোনো সুযোগ ছিল না বলাই বাহুল্য, কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশীদার যে সামাজিক রেপেল্যান্ট আমি, তার কাছে চয়েস বলে বাহুল্যটি থাকে না খুব একটা”,

বা,

“এই নির্বাসনের বিকল্পে মঙ্গলের কারাগারে যে নির্বাসন আমার কপালে ছিল তা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক হত সেই নিয়ে চিফ কমান্ডার যখন জ্ঞানগুলি দিচ্ছিলেন সেই বক্তৃতাকে আমার খ্রিশ্চান সারমনের নরকদশা সম্পর্কিত হুমকির মতোই শুনতে লাগছিল”,

এবং,

“পরবর্তী চাঞ্চল্য ও রহস্য সমাধানের গল্প উহ্য রেখে বলা যায় যে এই নিশ্চিত তথ্যে পৌঁছোনো গিয়েছিল যে বুধের অদূরবর্তী একটি স্থানে ভয়েজার - ৩ একটি ওয়ার্মহোলের সম্মুখীন হয়েছিল - … -যে সুড়ঙ্গমুখ থেকে বেরিয়ে ভয়েজার – ৩ মানুষকে একটি টাটকা নতুন তারকামণ্ডলের খবর পাঠাতে আরম্ভ করেছিল”।

এই বাক্যগুলো পড়ে আপনি যদি শিবনেত্র হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। তবে আমি কেসটা বুঝেছিলাম। মাথার মধ্যে ভাবনাগুলো ইংরেজিতে এলে বাক্যগুলোও ফিউচার ইনডেফিনিট আর স্প্লিট ইনফিনিটিভ হয়ে যায়, ফলে কথাগুলো বেরোয় আমাদের চেনাজানা কলা বা আপেলের বদলে ডুরিয়ান হয়ে। তবে এই ‘ইংলা’-তে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে, এবং লেখকের নিজের ভাষাটাও সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে অনেকটা বাংলা হয়ে এলে আপনি যে কাহিনির মধ্যে প্রবেশ করবেন তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আক্ষরিক অর্থে অভূতপূর্ব, এবং অসমসাহসিক এক প্রয়াস।

হ্যাঁ, এতেও আছে পৃথিবী থেকে ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরের এক মনুষ্য বসবাসোপযোগী গ্রহ ‘করোনা’-তে বৈজ্ঞানিকদের পাঠিয়ে প্রথমে গবেষণা, এবং পরে তার সম্পদ আহরণের পরিকল্পনা। কিন্তু তা বাদে এই গল্প বাংলা ভাষায় ভিনগ্রহ ও ভিনগ্রহীদের নিয়ে লেখা যেকোনো তথাকথিত অ্যাডভেঞ্চারের থেকে আলোকবর্ষ দূরে দাঁড়িয়ে আছে, সগর্বে।

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরের যে ডিস্টোপিয়ান পৃথিবীর বুকে এই ঘটনা ঘটেছে তার কাল্পনিক, অথচ যেকোনো সংবেদী মানুষের রক্তকণিকায় আতঙ্কের কাঁপন তোলা বিবরণ এখানে এসেছে নায়ক দারিয়াস মজুমদারের টুকরো-টুকরো কথা আর স্মৃতির মাধ্যমে। সেই বিবরণ কাল্পনিক হয়েও কোথায় যেন ভয়ঙ্কর রকম সত্য, কারণ ‘আমাদের’ সময়ের ঘটমান বর্তমান থেকে সেই অনাগত ভবিষ্যতের মাঝের পথটার যে ছবি অল্প আঁচড়ে এঁকেছেন লেখক, তার সর্বাঙ্গে অনুরণিত হচ্ছে কালের যাত্রার ধ্বনি।

সেই পৃথিবীতে, যার সিংহভাগ ৮টি যুযুধান কর্পোরেশনের দখলে, কর্পোরেশনের চোখে অ্যানার্কিস্ট অ্যাক্টিভিস্ট এক দুর্ধর্ষ হ্যাকার হল দারিয়াস মজুমদার। মঙ্গলের জেলে পচার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একটা পথ হঠাৎ করে তার সামনে খুলে গেল, যখন একটি কর্পোরেশন তাকে নির্বাচিত করল একটি মিশনের জন্য।
যে-সে মিশন নয়, রীতিমতো সত্যানুসন্ধান, এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করে নিকেশ করার মিশন নিয়ে দারিয়াস রওনা হল করোনা গ্রহের দিকে, যেখানে পাঠানো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে যাচ্ছেন হঠাৎ করেই, আর তারপর মারা যাচ্ছেন।

দারিয়াসকে বের করতে হবে, কী ঘটছে ওই গ্রহে?

আজীবন কর্পোররেশনের দানবিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে লড়ে চলা দারিয়াস কি পারবে এই গ্রহের, তথা বিজ্ঞানীদের এই অদ্ভুত পরিবর্তনের রহস্যভেদ করতে?
ঠিক কী জানতে পারবে সে নিজের অনুসন্ধিৎসা, শ্রম, ভালোবাসা, এবং জীবন দিয়ে?

রং চড়ানো ফ্যান্টাসি নয়, বরং জীবন, শরীর, ও অস্তিত্বের অনুসন্ধানের এই গভীর, বহুমাত্রিক, এবং হু/হোয়াই/হাউ-ডান-ইট ছাপানো কাহিনিটি রচিত হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক তথা প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের কথা মাথায় রেখেই, যা বাংলা ভাষায় বিরল, কারণ জঁর ফিকশন, বিশেষত কল্পবিজ্ঞান এখানে এখনও ‘ছোটোদের’ জন্যই সংরক্ষিত।
১৮০/- টাকা দামটা বেশি লাগছে ভেবে এই বইটি যদি না পড়েন, তাহলে শুধু যে বাংলায় মৌলিক কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শনটিকে পড়া থেকে বঞ্চিত হবেন তাই নয়, আমের বদলে মাকাল ফলে বাজার ভরার পথটিও কিন্তু অপ্রত্যক্ষ ভাবে প্রশস্ত করবেন।

অতঃপর সুধীজন, ‘টগবগ’-এর কল্পবিজ্ঞান সংখ্যাটি হাতে এসে পৌঁছোনোর আগেই সত্যিকারের মৌলিক, এবং উৎকৃষ্ট কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য পড়তে যদি উন্মুখ হন, তাহলে আমার এই চেঁচামেচি আপনাকে ঠিক বইটির সন্ধান দিতে পারল কি?

‘হ্যাঁ’ আশা করে, রথ ও ইদের বিলম্বিত শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে, আজকের মতো থামলাম।

পাঠ আনন্দময় হোক।


লেখক পরিচিতি: এক উদ্যমী পাঠক, যিনি বিপ্লব, চোখের জল, মানবচরিত্রের অতলস্পর্শী গভীরতা, সিন্ডিকেট, সারদা, ধোনি, ইত্যাদি তাবড় বিষয় থেকে দূরে, স্রেফ বেঁচে থাকার গল্প পড়তে চান। নিজের ভালবাসা থেকেই দীর্ঘদিন বইয়ের রিভিউ করছেন।                   

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.