প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

অগাস্ট ৩০, ২০১৬

 

তালকাহন

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


বর্ষাকালে বাঙালির অনেক প্রেমের মধ্যে "তাল প্রেম'ও উথলে ওঠে।  এ তাল তালবাদ্যের সাথে যুক্ত নয় । দাদরা, কাহারবা, ঝাঁপতাল কিম্বা ত্রিতালের সাথে এর দোস্তি নেই কিন্তু  মাধ্যাকর্ষণের সূত্র মেনে গাছে পেকে গেলেই তার মুক্তছন্দে পতনের শব্দ যারা পেয়েছে তারা আশাকরি বুঝবে যে  তাল পড়ার সে শব্দটা ঠিক কেমন। যাদের তাল গাছ আছে তারা খুব হুঁশিয়ার সে পতনের ব্যাপারে। কারণ সাথেসাথে "ওরে গিয়ে দ্যাখ টাইপ অবস্থা', কারণ তাল কুড়োতে হয় নয়ত তালরসে বঞ্চিত হতে হয়।  যারা এই তালের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা তাদের অবস্থা খুব সঙ্গীন। যেন ইঁদুর কিম্বা ছুঁচো মরেছে টাইপের। তারা বলবে, কি এমন ফল একটা! তোমরা বাপু তিলকে তাল করতে ওস্তাদ।

আমজাম বাকী ফল গেল রসাতলে
তোমরা বাপু মজতে পারো
প্রেম দেখাতে তালে!

আমি বলি নিন্দুকে যা বলছে বলুক ! তাতে তোমার কি আর আমার কি ?  আপরুচি খানা।

এই একটা পামজাতীয় গাছের কিছুই যায়না ফেলা- ঠিক এ সংসারের মত।  তার রাজকীয় পাতা দিয়ে হাতপাখা থেকে তার ফল শুরুর আগে মুচি পড়ার পরেই তালশাঁস,  ফল পেকে গেলে  মুখোরুচির তালফুলুরি  তো ফলের আঁটি শুকিয়ে অঙ্কুরোদ্গম অবধি অপেক্ষা করলে তালের ফোঁপল। আবার তালের গুঁড়ির রস থেকে তাড়ি কিম্বা তালমিছরি। জ্যৈষ্ঠে তালের মুচি পড়ার পরেই কেটে নিয়ে তুলতুলে, জলভরা থলথলে তালশাঁস জামাইষষ্ঠীতে পাঁচটি ফলের সঙ্গে অবশ্য দেও। কারণ সময়ের ফল। আর সবশেষে কার্তিকে আঁটি থেকে অঙ্কুরিত ফোঁপলটি কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেও মাস্ট। মধ্যবর্তী পর্যায়ে শ্রাবণ-ভাদ্রে দেখা পাওয়া যায় এই তাল নামক সুস্বাদু বর্ষাকালীন ফলটি। যার নধর অন্তর, গোলগাল বাহির। যেন টোকা মাথায় কেলে, হোঁদকা এক মনিষ্যি। এবার তাকে বুঝতে যাও, তোমাকে পেরোতে হবে শ্বশ্রুগুম্ফ সম্বলিত এক সত্ত্বা। তালের বৈশিষ্ট্য এইটাই। বাইরে গোবেচারা ভেতরে সন্ন্যাসী। গেরুয়া তার বসন। সেই জটাজুটসমাযুক্তকে বসন শূন্য করতে যাওয়াটাই হল একটা প্রজেক্ট। যত খোলো তত সুতো। যেন চরকার সব সুতোর প্রলেপ তার শরীরে। মনে মনে গেয়ে উঠি  "তারে বহু বাসনায় স্ট্রিপ করে যাই, তবুও আঁটির নাগাল না পাই' 

তাকে বাড়িতে নিয়ে এলে গৃহিণীর দু’নয়নে তখন শাওনভাদো। অবস্থা কাঁদো কাঁদো। সে এক মহা হ্যাপা যে!  গিন্নির হুকুমে আনতে হবে আরো কিছু। চাই নতুন ঝুড়ি। চাই চাঁপা কলা, নারকোল আর দুধ। তখন  অবিশ্যি বাড়ির মেয়েরাই তাল ছাঁকত নতুন ঝুড়িতে। এখন ছাঁকে কাজের মাসি। সে এক পর্ব। তালগোলে উতরেও দিত তারা সেই তাল জজ্ঞ্যি। আর ফাঁকতালে কর্তারা তাদের গ্যস্ট্রনামিক পূর্তিতে ভরপুর হয়ে রাতের বেলায় শুধু তালের পিঠে খেয়েই কাটিয়ে দিতেন। বর্ষার সে সন্ধ্যেয় জমে যেত তাস আর তাল।

ঘষতি ঘষতি অঙ্গ, পুনঃ তায় দিয়ে পানি,
কাজের মাসি ভাবে বসে...
কখন যে বাপু নিজের ঘরে তাল ছাঁকব তা জানি ? 

সেই তালরস ছাঁকা হচ্ছে আর ছোট্ট আমি কাজের মাসির আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম তালের নুটি পাবার আশায় । সেই নুটি যেন একটা গেরুয়া লাড্ডু। মুখে দিলেই তালের রস চুঁইয়ে পড়ছে গালের পাশ দিয়ে আর খাচ্ছি তো খাচ্ছি। কন্টিনেন্টাল স্মুদি যেন! মুখে দিলে মিলে যায়।  যত চাপ দিচ্ছি আখের মত রস বেরুচ্ছে। কি স্বাদ তার!  উনুনে বসেছে দুধের ক্ষীর। মা মাঝেমাঝে হাতা  দিয়ে নেড়ে দিচ্ছে যাতে না দুধের তলা লেগে যায়। মাসির তাল ছাঁকা হলে ঘন দুধের ক্ষীরে সেই তালরস পড়বে। নাড়া হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দুধের সাথে তাল রস মিলে মিশে একটাই রঙ হয়। । তার পরেই বাতাসা দিয়ে নামানো হবে সেই অমৃতসমান তালক্ষীর। বেশী ফোটালেই দুধ যাবে ফেটে। ঠান্ডা হলে তাজা নারকোল কোরা ছড়িয়ে, কাজু-কিসমিস দিয়ে পরিবেশিত হবে সেই সুইটডিশ। আলপনাও দিতে পারও মানে যাকে এখন বলে গারনিশিং। বিকেলের জলখাবারে মুচমুচে পরোটা দিয়ে সেই তালক্ষীর। আহা! যেন অমৃত ! এখনকার বাচ্চারা খাবে? বলবে হাইক্যাল। বলবে অফুল স্মেল। তারা স্মুদি খেতে ওস্তাদ। কিন্তু তালের নাম শুনলেই যেন মুখটা বেঁকিয়ে বসে।

মা  বাড়িতে আগত অতিথিকে পরিবেশন করত এইভাবে... সুদৃশ্য কাঁচের প্লেটে একটি কলাপাতা পেতে  তার ওপরে কাঁচের বাটিতে গেরুয়া তালক্ষীর। তার চারপাশ দিয়ে ফুলকো চারটি লুচি। ক্ষীরের মধ্যিখানে একটি আমন্ড বাদাম আর তার চারপাশে দুধসাদা নারকোল কোরা। আমার দেশের ত্রিরঙা ঐতিহ্যকে রেপ্রেসেন্ট করতে এর চেয়ে ভাল আর কি হয়? রীতিমত তাক লেগে যাবে প্রেজেন্টেশানে।

বর্ষাকালে নাকি ক্ষুধামান্দ্যের এক অপূর্ব ওষুধ এই তাল। ভিটামিনে ভরা এই তালরস নাকি বাচ্চা বুড়ো সকলের পক্ষে অতীব সহজপাচ্য আহার। 

 তালশাঁসের আইডিয়াটা নিয়ে কেমন জলভরা বানিয়ে সন্দেশওলারা আজকে তাক লাগিয়েছে। জলভরা তালশাঁস সন্দেশ আজ বাঙালির সন্দেশের একটা বিশ্বজোড়া ব্র্যান্ড।

তালগাছ বিবর্জিত শহরে রবিঠাকুর যদি বেঁচে থাকতেন তবে নিশ্চয় তালগাছ নিয়ে তাঁর কবিতার আবেগ চাপা পড়ে যেত। অথবা ছেলের সম্বন্ধ করতে গিয়ে ঠাকুমা দিদিমারা বলতেন না "নামেই তালপুকুর, ঘটি ডোবেনা' । এখন নেই সেই তালগাছ অথবা তালপুকুরো। তখন পুকুরের ধারে একটি তালগাছ কেউ লাগাত। কিম্বা আঁটি ফেলায় আপনিই বেরুত চারা।  এরপর সেই পুকুরে তাল পড়ত আর সেই তাল ভাসতে ভাসতে ডাঙার কাছাকাছি গিয়ে অঙ্কুরিত হত  যথাসময়। আর স্নানের সময় কেউ বুঝিবা গিয়ে পুকুরের চারিপাশ দিয়ে তালগাছের চারাগুলিকে আবার পুঁতে দিতেন। তাই তৈরী হত তালপুকুর। গ্রামবাংলার বুকে এমন তালপুকুর এখনো অনেক দেখতে পাই। রবিঠাকুর এমন কোনও তালদীঘিতেই বুঝি কেয়াপাতার নৌকো ভাসানোর গান লিখেছিলেন। 

প্রাচীনযুগের মুনিঋষিরা লিখতেন তালপাতায়।  ভোজগাছের পাতা বা ভূর্জপত্রের পুঁথির মত আমাদের তালপাতারও পুঁথি হত একসময়। খাগের কলম কালিতে ডুবিয়ে লেখা হত। সেই চর্যাপদের আমল থেকে এই তালপাতার পুঁথির কথা আমরা শুনেছি। প্রাচীন মুনিঋষি, কবি সকলের কাছেই তাঁদের সাহিত্যসৃষ্টির হার্ডকপি ছিল এই ভূর্জ্যপত্র। 

সেযুগে তাল পাকত ভাদ্রমাসে। এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের দাপটে শ্রাবণেই তাল পেকে যায়। আম কাঁঠাল বিদায় নেয়। তাল অবতীর্ণ হয়। সকলেই হলুদ, এ ভিটামিন, ক্যারটিনে ভরা ।

ভাদ্রমাসে শুক্লা নবমী তিথিতে অনেক মহিলাকে "তালনবমী' ব্রত করতে শুনেছি । এটি মূলত লক্ষ্মী নারায়ণের পুজো আর তাল ফলটি নারায়ণকে দান করে তবেই খাওয়ার রীতি। তালের পিঠে, তালক্ষীর ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। এই তালনবমীর ব্রতকথা যেন আজকের দিনের টেলিভিশনের মেগা সিরিয়ালের মত‌ই । শুধু কুশীলব হলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ আর তাঁর দুই প্রিয়তমা সপত্নী...সত্যভামা ও রুক্মিণী। দুই সতীনের মন কষাকষি, স্বামীকে একান্তে না পাওয়া নিয়ে। কৃষ্ণের প্রতি কার অধিকার বেশী তাই নিয়ে। অবশেষে এক ঋষির পরামর্শে সেই সতীন কাঁটা দূর করে এই তাল নামক ফলটি। ঋষির আদেশ মাথায় নিয়ে সত্যভামা পরপর ন'টা বছর ধরে এই তালনবমী ব্রত পালন করে স্বামীকে পেয়েছিলেন নিজের করে। মানে আর কি তালের রসে বশীকরণ ।  স্বামীকে নিজের হাতে তালের পিঠে ইত্যাদি সুস্বাদু রেঁধে খাইয়ে তবে বশ করতে হয়েছিল বলে এই ব্রতের নাম তালনবমী। ঐ আর পাঁচটা ব্রতের মত‌ই এর সুফল হল সৌভাগ্য লাভ, সুখবৃদ্ধির মত‌ই। তবে এয়োস্ত্রীরাই কেবল করতে পারবেন কেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয়। জগত সংসারে কি তবে যত দুঃখ এদেরই থাকবে ? বাকী সব মেয়েরা মানে আইবুড়ো, বিধবা কিম্বা নিঃ সন্তান অথবা সিঙ্গল মাদার কি বানের জলে ভেসে এল না কি এদের সুখ, সৌভাগ্যের প্রয়োজন নেই? 

শ্রীকৃষ্ণের যে তাল ফলটির ওপর বিশেষ দুর্বলতা আছে তা এই ভাদ্রের জন্মাষ্টমীতেই টের পাওয়া যায়। ঐদিনে তালের বড়া তৈরী করে তাঁকে নিবেদন করা হয়। বৈষ্ণবদের নন্দোত্সব হয় পরেরদিন। আনন্দে সব ভক্তরা নাচতে থাকে আর গেয়ে ওঠে..."তালের বড়া খেয়ে নন্দ নাচিতে লাগিল'

এ যেন ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হয়ে তাঁর প্রিয় ফলটি নিবেদনের মধ্যে দিয়ে ভক্ত আর ভগবানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা। কৃষ্ণ যেন আমাদের ঘরের লোক। তাঁর জন্মদিন যেন আমাদের ঘরের ছেলেরই জন্মদিন। 

হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু
তালের বড়া দিতে পারি
যদি পার কর এই ভবসিন্ধু। 
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ! হ্যাপি বার্থডে অন্তর্যামী 
তালের বড়া সাজিয়ে দিলাম, এবার খাবেন আমআদমী ! 

এই তালের বড়া যে বাঙালির কি প্রিয় জিনিষ তা যিনি পছন্দ করেন তিনিই কেবল জানেন। ছোটবেলায় দেখতাম  একদিকে বিশাল বারকোশে নতুন ঝুড়ি দিয়ে তাল ছাঁকা চলছে। অন্যদিকে শিলে  ভেজানো চাল গুঁড়ো করছে কেউ। আর মা বিশাল পেতলের গামলায় এক ছড়া চাঁপা কলা নিয়ে চটকাচ্ছেন। আরেকজন নিঃশব্দে বিশাল কুরুনিতে নারকোল কুরছে কলাপাতার ওপর।  তালের রস সেই কলার ওপরে পড়ল। তরপর পরিমাণমত আটা আর চালের গুঁড়ো। এবার বেশ খানিকটা নারকোল কোরা। ঠিক কড়ায় ছাড়ার আগেই একটু বড় দানার চিনি ছড়ানো হল। কেন? বড়াগুলো ঝাঁঝরা বা porous হবে বলে। তারপর কালো লোহার কড়াইতে সর্ষের তেল গনগনে আঁচে গরম হতেই হাত দিয়ে সেই মাখা থেকে ছোট্ট ছোট্ট বড়া গরম তেলে ভেজে ভেজে তুলে নেওয়া হল। কতজনের সম্মিলিত হাতের ছোঁয়ায় তালের বড়া হল অমৃত।  গরম গরম একরকম। মুচমুচে, টোপাটোপা। আর বাসি হলেও অন্যস্বাদ। যদিও তখন ন্যাতন্যাতে আর তুলতুলে। চালের গুঁড়ি বেশী হলে বড়া মাটি কিন্তু। 

এই তালের বড়াকে অনেকে তালের ফুলুরিও বলেন। রসরাজ অমৃতলালের লেখায় পাই এই তালফুলুরির কথা।

তালফুলুরির তত্ত্বে করিয়া জমক
ধার্য হল লোক মাঝে লাগাবে চমক।

কুটুমবাড়িতে তালের তত্ত্ব যাবে বলে এই ঘটা। লোকলস্কর, ঝি-চাকর, পাইক বরকন্দাজ যাবে তাল ও তা বানানোর আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম নিয়ে।

কাঁধে তাল নিয়ে যাবে আটজন বাঁকি
আলগা তালের ঝুড়ি, কুড়ি ধরে রাখি।

কথায় বলে না ? ও তাল তুলনি বাপু! যার অর্থ হল তাল বাড়িতে এলে যা হ্যাপা সামলাতে হয় তার জন্য কুটুমবাড়িতে তাল তত্ত্বে পাঠাতে গেলেও সে কথা মাথায় রেখে দাস দাসী এমন কি বড়াভাজার রাঁধুনি পর্যন্ত পাঠাতে হত। যাতে না কুটুম চটে যায়।

রাঁধুনি কাপড় পাবে বড়া ভাজিবার
গামছা তোয়ালে তার হাত মুছিবার।  

এমনকি রসরাজ বলছেন, তালফুলুরি খেলে যদি পেটের ব্যামো হয় তাহলে সাথে ওষুধ হিসেবে পেপারমিন্টও র‌ইল।

ফুলুরি খাইলে যদি পেটে ধরে ব্যথা
পেপারমেন্টো দিতে হবে নাহিক অন্যথা। 

এর থেকে বোঝা যায় বাঙালির সেযুগে তালবিলাসের কথা। তাল এমন কিছু মহার্ঘ্য বস্তু নয় কিন্তু তাকে ঠিকমত পরিবেশন করে সময়ের ফল সময়ে কুটুম বাড়িতে পাঠানোর রেওয়াজটাও ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। এমন তত্ত্বতালাস পেলে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে সকলেই খুশি থাকবে। মেয়ের তালে তাল দেবে শ্বশুরঘরের লোকজন। 

অনেকে তালের রস দিয়ে গোলারুটি বানায়। ময়দা, আটার সঙ্গে মেখে নিয়ে পরোটা বানায়। আমার এক বন্ধুর বাড়িতে খেয়েছিলাম তালের সরুচাকলি। তাওয়ার ওপরে রেখে বানানো মসলিন কাপড়ের মত ফিনফিনে দোসা। সত্যি সত্যি ইউরোপে যাকে বলে ক্রেপ। আমাদের ক্রেপ শাড়ির মত‌ই পাতলা সে সরুচাকলি। তবে এ একদম তালের রস আর চালের গুঁড়ি দিয়ে বানানো চুনে-হলুদ রংয়ের দোসা। ক্ষীরে ডুবিয়ে খাওয়ার নিয়ম।  
কাম্বোডিয়ায় দেখেছিলাম প্রচুর তালগাছ। তালপাতার হ্যান্ডিক্রাফটও আছে প্রচুর। আর তারা খায় তালগাছের কান্ড থেকে বেরুনো, ফার্মেন্টেড টোডি বা তাড়ি বলি আমরা যাকে। কৌতুহল বশে জিগেস করি আমাদের গাইডকে। আমি তালগাছ দেখিয়ে বলি, আচ্ছা বলোতো এই গাছের ফল কিভাবে খাওয়া হয়? জবরদোস্ত ইংরেজীতে সে সপ্রতিভভাবে জবাব দেয়,  তালের ফোঁপলের কাঁচা অবস্থায় খাওয়া, পাকা অবস্থায় হলুদ রস দিয়ে আমাদের তালের পিঠে বানানোর সমতুল্য কিছু একটা রেসিপির কথা। বুঝি কাম্বোডিয়ায় ভারতের প্রভাব‌ও আছে কিছুটা।  

সবশেষে বলি, আমি বাপু বড় তালকানা। তালকাহন নিয়ে টালবাহানা না করে লিখে দিলাম। আমি তেমন কোনও তালেবর নই। যে কথা জানিনা আর শুনিনি তা নিয়ে তিল থেকে তাল বানাতে পারিনা তাই মাফ চেয়ে নিলাম পাঠকের কাছে। আকাশ পাতাল ভেবে তালের গন্ধে মাতাল হয়ে তাল নিয়ে সাতকাহন লিখলাম। এবার দাঁতাল কোনও পাঠক যদি নিন্দে মন্দ করেন তাকে নাহয় রেঁধে খাওয়াতে পারি এই তাল। আমার হেঁশেলে আজ হরতাল। দিনেরাতে সকলেই খাবে শুধু তাল।

যাই দেখি আমার চাতালে তাল ছাঁকার সুগন্ধে বুঝি হরিতাল পাখিটা এয়েচে! বেতালে ডাকছে যদিও তবুও আমি তাল দিয়ে চলি ওর সাথে।



লেখক পরিচিতি - বেথুন কলেজ ও পরে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর। লেখালেখিতে ঝোঁক বহুদিনের। ২০০৭ থেকে বাংলায় ব্লগ লেখার শুরু। ২০১১ তে দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশ। তারপর আনন্দমেলা, এবেলায় ছোটগল্প এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় অনেক ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত। আনন্দবাজার ইন্টারনেটের শুরু থেকেই লিখে চলেছেন পাঠক কলমে ও হাওয়াবদলে। প্রথম উপন্যাস "কলাবতী কথা" সানন্দা পুজোসংখ্যায় ( ২০১৫ ) প্রকাশিত। এছাড়াও বহু প্রিন্ট পত্রিকা ও ওয়েব পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এযাবত প্রকাশিত ব‌ই চারটি।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।