প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

জ্যোতিষশাস্ত্র প্রবেশিকা (অন্যান্য অনুচ্ছেদ)

১ম অনুচ্ছেদ
জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্বন্ধে কয়েকটি কথা

জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে মানুষের সন্দেহ, অবিশ্বাস ও একই সঙ্গে কৌতূহলও অপরিসীম। যে কোনো মানুষেরই তার নিজের বা আপনজনের ভবিষ্যৎ জীবনের ঘটনা জানবার ইচ্ছা স্বাভাবিক। বিশেষ করে বিপদ-আপদ ও সঙ্কটের সময়ে মানুষের এই ইচ্ছা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। যারা ক্খনই এই বিষয়ে জানতে ইচ্ছুক নন বা ঘোর অবিশ্বাসী তাদের জন্য এই আলোচনা নয়। কিন্তু যারা বাতিকগ্রস্ত নন বা ঘন ঘন জ্যোতিষের কাছে ছুটে যান না, তাদেরও একটা অংশ খোলা মন নিয়ে বিষয়টি জানতে চান এবং নিজেদের মত বিচার বিশ্লেষণ করে এর মূল্যায়নে আগ্রহী। তাদের জন্যই এই প্রয়াস। একজন মানুষের জীবনে অসংখ্য ঘটনা ঘটে। ধরা যাক, এর মধ্যে নির্দ্দিষ্ট্ভাবে সময় উল্লেখ করে ৫ টি ঘটনার কথা কেউ ভবিষ্যৎবাণী করলেন এবং দেখা গেল শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ৫ টির মধ্যে একটি দুটিও মিলে যাচ্ছে; তা হলেই কিন্তু বিষয়টি সম্বন্ধে কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক। সময় এবং সুযোগ থাকলে এই কৌতূহল মেটানোর চেষ্টার পিছনে কোনো অবৈজ্ঞানিক বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন কাজ করে বলে মানা যায় না। বরং কোন বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান ছাড়াই তা নিয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মন্তব্য করাটাই বিজ্ঞানমনস্কতার পরিপন্থী বলে মনে হয়।

জ্যোতিষ্শাস্ত্র হয়ত ঠিক গণিতশাস্ত্রের মত একক এবং নির্দ্দিষ্টভাবে লক্ষ্যে পৌঁছনর কথা বলে না। দীর্ঘকাল ধরে কিছু স্মৃতি ও শ্রুতির মাধ্যমে গৃহীত এবং কিছু লিপিবদ্ধ সূত্রের আকারে প্রাপ্ত এই শাস্ত্রের নীতিগুলি যে ভাবে আজ সামগ্রিকভাবে সংগৃহীত হয়ে ছাপার অক্ষরে পরিবেশিত, তার মধ্যে মতভেদ ও অস্পষ্টতা অনেক। তবে খুব সূক্ষ বিশ্লেষণের জটিলতার মধ্যে প্রবেশ না করেও কতকগুলি ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দ্দিষ্ট ফলাফলের আভাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে হয়।

মনে একটা প্রশ্নের উদয় হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। সেটা হ'ল, আকাশে আবর্তিত গ্রহমণ্ডলীর অব্স্থান কোটি কোটি লোকের প্রত্যেকের জীবনে কী ঘটনা ঘটবে তার সঙ্গে কী ভাবে সম্পর্কিত ? অনেকে জোয়ার ভাটার উপর চন্দ্রের প্রভাব ব্যাখ্যা করে এর উত্তর দিতে সচেষ্ট হন। কিন্তু দুটো এক জিনিষ নয়। কোন একজনের ভবিষ্যৎ জীবনের ঘটনা বহুদূরে অবস্থিত কোনো গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের তারতম্যের দ্বারা চালিত হচ্ছে এটা খুব কষ্টকল্পিত। তাও আবার রাহু ও কেতু কোনো গ্রহই নয়; তার আবার মাধ্যাকর্ষণ কি ? তা হলে এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কি ?

প্রথমেই বলা ভাল, এর ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে দু'টি জিনিস গ্রহণ করতে হবে। এক, আমরা প্রথাগত পাঠক্রম অনুসরণ করে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যা শিখেছি, তার বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু গ্রহণ করার মত মানসিক প্রসারতা ও প্রস্তুতি। দুই, বহু শতাব্দী পূর্বে যে সব মনীষী জন্মেছেন এবং ধ্যান, জ্ঞান ও মননশীলতার দ্বারা যে সত্যকে তারা উপলব্ধি করেছেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যথাযথ বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে কোনো বিষয়ের মর্মোদ্ধার করা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের দ্বারা সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে হোমিওপ্যাথি ওষুধের রোগ নিরাময়ের ক্ষমতার কথা মনে আসে। অনেকে হোমিওপ্যাথির দ্বারা রোগ আরোগ্যের কথা স্বীকারই করেন না। যদি কেউ উপকার পান তবে সেটা রোগীর মনের দৃঢ় বিশ্বাসের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন। বিশ্লেষণ বা যথাযথ জ্ঞান ছাড়াই এই অস্বীকার করার মানসিকতা কি অন্ধ বিরোধিতা নয় ? এই গোড়ামিও কি এক ধরণের কুসংস্কার নয় ? এর দ্বারা কি সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব ? বহু লোক হোমিওপ্যাথি ওষুধের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন। কি করে এই অণু পরিমাণ ওষুধের দ্বারা সেটা সম্ভব হচ্ছে এখনও তার সঠিক উত্তর নেই। তবে কারণ জানার চেষ্টা চলছে; সম্মিলিত প্রয়াসে এবং গবেষণার দ্বারা কোন দিন হয় ত উত্তর পাওয়া যাবে। এভাবেই বিজ্ঞান এগিয়ে চলে। অস্বীকার করার মানসিকতা নিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। এই দৃশ্যমান ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের পাশাপাশি বা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত অপর একটি অব্যক্ত ও সূক্ষ্ম নিয়মের দ্বারা চালিত জগতের অস্তিত্ব থাকতেই পারে। তাই বলে, প্রথাগত্ভাবে যে বিদ্যা বা জ্ঞান আমরা অর্জন করেছি তার গুরুত্ত্ব কিছু কম বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। দুটোই পাশাপাশি অবস্থান করতে পারে। সামগ্রিক জ্ঞানভাণ্ডারের প্রেক্ষিতে একটিকে অন্যটির পরিপূরক হিসাবেও ভাবা যায়।

জ্যোতিষ বিষয়ে বিদগ্ধ জনেরা মনে করেন, এই শাস্ত্রের ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে জন্মান্তর তত্ত্বে বিশ্বাস প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহণ করছে পূর্বসঞ্চিত কর্ম সংস্কারকে কার্যে পরিণত করবার জন্য। শাস্ত্রমতে কর্মের শক্তি অসীম। কোনো কাঙ্খিত কর্ম একবার আগ্রহের সঙ্গে করলে, সেটা আর একবার করবার ইচ্ছা জন্মায়। বারবার করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। এই অভ্যাসেরই গাঢ়তর অবস্থা হচ্ছে সংস্কার। সংস্কারের শক্তি হল আপাত ভাবে আমরা না চাইলেও অবশ করে আমাদের দিয়ে তা করিয়ে নেওয়া। এই সংস্কারই আমাদের কর্মে প্রবৃত্ত করে। কোন ধরনের কাজে আমাদের ইচ্ছা বা প্রবৃত্তি তা আমাদের পূর্ব পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্মফল বা সংস্কারের উপর নির্ভর করে। এটা প্রতিকূল হলে, অনেক চেষ্টাতেও অভীষ্ট ফললাভ হয় না। অনেকে যে অল্প আয়াসেই সফল হয়, তা তারই সঞ্চিত শুভ কর্মফলের সহায়তায়। এটাকেই সাধারণ ভাবে আমরা বলি অদৃষ্ট বা দৈব। কর্মফল তা শুভই হোক বা অশুভই হোক তা ভোগ করতেই হবে। "অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতকর্মং শুভাশুভম"। ভোগের দ্বারাই কর্মফলের ক্ষয় হয়-শাস্ত্রকারদের এই হল ব্যাখ্যা। তাঁরা আরও বলেন, নিঃস্বার্থ কর্মদ্বারা, পরহিতকর কর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে বা ঈশ্বরচিন্তায় রত হয়ে আমরা ক্রমশ: অশুভ কর্মফলের সঞ্চয় হ্রাস করতে পারি এবং তা একেবারে লীন করতে পারি। সকাম কর্ম বা কর্মফল প্রাপ্তির ইচ্ছা সহ কর্ম করলেই তা নূতন কর্মফলের জন্ম দেয়। এ ভাবেই মানুষ জন্ম থেকে জন্মান্তরে কর্মফল ভোগ করে চলে। মানুষই তার নিজের কর্মের দ্বারা নিজের ভাগ্য তৈরী করে। এই প্রেক্ষাপটে দেখলেও man is the architect of his own fate কথাটা বর্ণে বর্ণে সত্যি।

কর্মফল ছেড়ে মূল বিষয়ে প্রবেশ করা যাক। প্রত্যেকের জন্মমুহূর্তে গ্রহের অবস্থানসহ তার কোষ্ঠির নক্সাটি এই জন্মের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এর থেকে তার সমস্ত জীবনের ঘটনাবলী মোটামুটি বলা সম্ভব বলে জ্যোতিষীরা দাবী করেন। প্রত্যেকের পূর্ব পূর্ব জীবনের সঞ্চিত কর্মফল কী ভাবে এ জীবনে ফলদান করতে চলেছে তার একটা আগাম আভাস এই সমস্ত গ্রহের অবস্থান থেকে অনুমান করা যায়। গ্রহগুলি প্রতীক মাত্র; মূলে আছে জাতকের নিজের সঞ্চিত কর্মফল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই পূর্বাভাস কে জানাচ্ছে এবং কার স্বার্থে ? বলা যেতে পারে, পরম মঙ্গলময় ঈশ্বর এই পূর্বাভাসের মাধ্যমে প্রত্যেককে একটা সুযোগ দিচ্ছেন যাতে সে পূর্ব জন্মের কর্মফল সম্বন্ধে অবহিত হয়ে তার ইহ জীবনের কর্ম ঠিক পথে চালিত করে নিজেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালাতে পারে। এটা ঈশ্বরেরই একটি ইচ্ছা। জ্যোতিষশাস্ত্র প্রাচীন বেদেরই একটা অঙ্গ। এটা মূলতঃ ব্যবহৃত হতো শুভ মুহূর্তগুলো নির্ণয় করে, নির্দ্দিষ্ট সময়ে যজ্ঞানুষ্ঠান এবং অন্যান্য পূজা ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভীষ্ট ফল লাভ করার জন্য।

এখনও ফলিত জ্যোতিষের মূল সূত্র ব্যবহার করে অনেক চিকিৎসক রোগীর রোগ কতটা গভীর ও তার পীড়ার সূত্রপাত শরীরের কোন অঙ্গে সেটা জানার চেষ্টা করেন এবং তার ভিত্তিতে চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এর বহুল ব্যবহার দৃষ্ট হয়। এই চিকিৎসক্দের অনেকে medical astrology বিষয়ে বই লিখেছেন। কয়েক দশক আগে কোলকাতার সন্নিহিত স্থানে এক লব্ধপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক নিয়মিত এই শাস্ত্র চর্চা করতেন তার রোগীদের সাহায্য করবার জন্য।

উপক্রমণিকায় জ্যোতিষ সম্বন্ধে গতানুগতিকতা ও প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে কিছু যুক্তি ও তত্ত্বের অবতারণা করতে হলো; না হলে, এই শাস্ত্রের কোন সম্ভাব্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ছাড়াই এর নিয়মনীতি বিশ্লেষণ করতে হতো। বহু শতাব্দী পূর্বে যখন কোনো দূরবীক্ষণ যন্ত্র ( telescope ) বা গণকযন্ত্র ( computer ) ছিল না , তখন আকাশে আবর্তিত গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ প্রায় নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা এবং তাদের অবস্থান থেকে মানুষের জীবনের ঘটনাবলীর পূর্বাভাস সংক্রান্ত নিয়ম কানুন বর্ণনা করা কি করে সম্ভব হয়েছিল তা সাধারণ বুদ্ধির অগম্য।

যারা এই শাস্ত্রটিকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চান তাদের কথা আলাদা। কিন্তু সাধারণ অনুসন্ধিৎসা ও কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে যারা বিষয়টি জানতে চান এবং এর জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে ইচ্ছুক তাদের শাস্ত্র বর্ণিত প্রতিটি শ্লোক ও সূত্র মনে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই - সেটা সম্ভব বলেও মনে হয় না। যে মূল নীতির উপর ভিত্তি করে নানা নিয়ম সূত্রাকরে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সেটা বুঝতে পারলেই হল। এর কিছু ব্যতিক্রম আছে ঠিকই কিন্তু প্রথম শিক্ষার্থীর পক্ষে সেটা জানার প্রয়োজনীয়তা নেই। যারা দ্রুত বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখেন এবং বিষয়ের মূল কিছু নীতি সম্বন্ধে অবহিত, ফলাফল সম্বন্ধে তাদের বক্তব্য অনেক সময়েই মিলে যায়। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। কোন বিষয় সম্বন্ধে অনুসন্ধিৎসু হয়ে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা এক জিনিস এবং মানুষের দুর্বলতা বা অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ও সীমিত জ্ঞান দ্বারা চালিত হয়ে অর্থোপার্জনের চেষ্টা অন্য জিনিস।

এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন ব্যক্তির জন্মসময়ের গ্রহদের অবস্থান থেকেই তার কোষ্ঠি ইহ জীবনের জন্য নিদ্দির্ষ্ট। অতএব বলা যায় তার জীবনের সমস্ত ঘটনা শাস্ত্রানুসারে ৭ টি গ্রহ, ২ টি ছায়াগ্রহ ( রাহু ও কেতু ) ও লগ্ন দ্বারা চালিত (এখানে ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটোকে আলোচনার মধ্যে রাখা হয় নি)। সাধারণ ভাবেই বোঝা যায় যে, মাত্র এই কয়টি গ্রহের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তির জীবনের প্রতিটি ঘটনাবলী সম্বন্ধে পূর্বাভাস দেওয়া প্রায় অসম্ভব বললেও চলে। তবে জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনা ও তার সময় সম্বন্ধে অনেক সময়েই নির্দ্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছন যায়। জাতক পারিজাত গ্রন্থে একটি শ্লোক আছে যার অর্থ : গ্রহগুলির একের অন্যের উপর প্রভাব এবং তা থেকে উদ্ভূত ফলাফল একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তির পক্ষেই কিছুটা অনুমান করা সম্ভব। প্রকৃত ঘটনা কি ঘটবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্ত্তা ঈশ্বরই জানেন। একটি বিদগ্ধ লোকের দ্বারা রচিত বইতেই যদি এই মতামত ব্যক্ত হয়, তবে আজকের অবিশ্বাসের আবহে চঞ্চলমতি ও ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে এই জটিল বিষযের মর্ম্মোদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন এতে সন্দেহ নেই।

ফলিত জ্যোতিষ শাস্ত্রটির যথাযথ প্রয়োগ শুধুমাত্র পুস্তকে লিপিবদ্ধ কিছু নিয়মাবলীর জ্ঞানের ভিত্তিতে করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে বহুদিনের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। বহু কোষ্ঠি পরীক্ষা করতে করতে একটা সূক্ষ্মদৃষ্টি বা intution তৈরী হয় - যা নির্দ্দিষ্টভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। সবার শেষে বলা যায় যে, কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জ্জন করতে হলে চাই অদম্য কৌতূহল ও গভীর শ্রদ্ধা। অন্য কোনো মাধ্যম এই প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করতে সাময়িকভাবে কিছুটা সাহায্য করে মাত্র।

এই লেখার উদ্দেশ্য
জ্যোতিষশাস্ত্রে ( astrology ) অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে। এর কিছু জিনিস অত্যন্ত জটিল। অনেক কৌতূহলী পাঠক আগ্রহ নিয়ে কিছু বই কিনে পড়তে শুরু করেন এবং অনেক সময়েই আলোচ্য বিষয়ে ব্যবহৃত নানা শব্দ ও তার অর্থ ঠিকমত বুঝতে না পেরে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে কিন্তু প্রথম পাঠকেরা শুরুতেই যাতে এই আবর্তে না পড়ে , কিছু মূল নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে জন্মকুণ্ডলী ( horoscope ) নিজেরাই তৈরী ক'রে, ব্যক্তিজীবনের কিছু পূর্বাভাস পেতে পারেন, তার জন্যই এই প্রচেষ্টা। এতে তারা প্রাথমিকভাবে কিছুটা উৎসাহিত হবেন। পরবর্তী পর্যায়ে কেউ বিষয়বস্তুর আরও গভীরে প্রবেশ করবার ইচ্ছা নিয়ে ধীরে ধীরে জটিল জিনিসগুলি জানতে চেষ্টা করতে পারেন। যে সমস্ত পাঠক ইংরাজী বই বা মূল সংস্কৃত শ্লোক পড়তে চান তাদের সুবিধার্থে যথাযথ স্থানে কিছু প্রতিশব্দও দেওয়া হলো।

জ্যোতিষশাস্ত্রে অনেক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে অধিকাংশ জ্যোতিষী পরাশর বর্ণিত মতেরই অনুসরণ করেন। এ ছাড়া জৈমিনী, কৃষ্ণমূর্তি ইত্যাদি পদ্ধতিও ব্যবহৃত হয়। অনেকে বিভিন্ন পদ্ধতির সংমিশ্রণের দ্বারাও ফলাফল নির্ণয় করেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রের দুটি অংশ। একটির দ্বারা কোন ব্যক্তির জন্মসময়ের গ্রহের অবস্থান এবং পরবর্তী সময়ে তাদের অবস্থান ও গতিপথ নির্ণয় করা হয় - এটা হল জ্যোতির্বিজ্ঞান (astronomy)। অন্যটির দ্বারা গ্রহ সংস্থান থেকে ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ করা হয় - এটা ফলিত জ্যোতিষ (applied astrology)। প্রথমটি নিছক গণিতশাস্ত্র। এটা নিয়ে কারো কোন সংশয় নেই। কিন্তু দ্বিতীয়টির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কিছু লোক দ্বিধাগ্রস্ত।

পরিশেষে একটা কথা। পরবর্তী আলোচনায় যে ভাষা ব্যবহৃত হবে তা অত্যন্ত সহজ সরল এবং অনেক জায়গায় কথ্যভাষা। জ্যোতিষশাস্ত্রের অনেক বইতে যে সাধু ভাষা ব্যবহৃত হয় সেটা পরিহার করা হয়েছে, বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করার প্রয়োজনে।

দীপক সেনগুপ্ত
জানুয়ারী ৭, ২০১১

(চলবে)

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।