জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)

২য়
অনুচ্ছেদ
জ্যোতিষশাস্ত্রের কয়েকটি প্রাচীন গ্রন্থ
১। শ্রীশ্রীভৃগুসংহিতা
- মহর্ষি ভৃগু রচিত। এই গ্রন্থ পরাশরের পূর্বেই রচিত বলে
মনে করা হয়। এতে বর্ণিত এই শাস্ত্রের নিয়মাবলী ভারতের বাইরেও
ছড়িয়ে পড়ে মূলতঃ বণিকদের মাধ্যমে।
২। বৃহৎ পারাশরি হোরাশাস্ত্র
- গ্রন্থটির রচয়িতা মহর্ষি পরাশর। এতে বর্ণিত নিয়ম নীতি
গুলিই অধিকাংশ জ্যোতিষী অনুসরণ করেন। পরাশরের আবির্ভাবের
কাল সম্বন্ধে য্থেষ্ট মতভেদ আছে। পরাশরকে বলা হয় মহাভারত
রচয়িতা ব্যাসদেবের পিতা। পরাশর রচিত পরাশর সংহিতাই বৃহৎ
পারাশরি হোরাশাস্ত্র নামে প্রচলিত। অনেকের মতে এর বহু শ্লোক
লুপ্ত। এখন যে গ্রন্থটি পাওয়া যায় তা মূলগ্রন্থের পরিবর্তিত
সংস্করণ।
৩। লঘু পারাশরি - লেখকের
পরিচয় ও রচনাকাল অজ্ঞাত। মনে করা হয় জ্যোতিষ বিষয়ে বিদগ্ধ
কোনো ব্যক্তি "বৃহৎ পারাশরি" গ্রন্থ অবলম্বনে
মূল ৪২ টি শ্লোক আহরণ করে এই গ্রন্থটি রচনা করেন। ৪২ টি
শ্লোকের সংযোজনের জন্য এটিকে কেরলবিয়াল্লিশও বলা হয়। অনেকে
মনে করেন লেখক কেরলবাসী। কিন্তু এটা সর্বসম্মত নয়। এই গ্রন্থটির
অন্য নাম "উড়ুদায়প্রদীপম"।
৪। বৃহৎ জাতক - বরাহমিহিরাচার্যের
রচনা। পিতা আদিত্যদশা ও মাতা সত্যবতীর ( অন্য নাম ইন্দুমতী
) সন্তান বরাহমিহির খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতকে মহারাজা বিক্রমাদিত্যর
সভায় নবরত্নের অন্যতম ছিলেন। বৃহৎ জাতক ছাড়াও বরাহমিহির
বৃহৎসংহিতা, লঘুজাতক, পঞ্চসিদ্ধান্তিকা ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা
করেন। বৃহৎ জাতক ৪০০-র বেশী অনুচ্ছেদ নিয়ে রচিত। ভট্টপাল
এই গ্রন্থের ৮৫০০-রও বেশী শ্লোক সম্বলিত টিকা রচনা করেন।
অনেকের মতে বরাহমিহির এক ব্যক্তি নন। এরা দু'জন জ্যোতিষী।
বরাহ ও তার পুত্র মিহির। মিহিরের স্ত্রীর নাম ছিল খনা -
যার কিছু প্রবচন এখনও অনেক লোকের মুখে মুখে ফেরে।
৫। সত্যজাতকম - ঋষি
সত্যাচার্যের রচনা। ধ্রুবনাড়ী ও সত্যসংহিতা নাড়ী নামক জ্যোতিষগ্রন্থের
মূল নীতিগুলি এই সত্যজাতকমে আলোচিত হয়েছে। এক মতে আছে, ধ্রুব
জৈমিনীকে মূল বিষয় সম্বন্ধে অবহিত করেন। সে যুগের রীতি অনুযায়ী
জৈমিনী গর্গকে, গর্গ ব্যাসদেবকে এবং ব্যাসদেব সত্যাচার্যকে
এই জ্ঞান দান করেন।
৬। উত্তরকালামৃত -
এই বিখ্যাত গ্রন্থটির রচয়িতা কালিদাস। কিন্তু ইনি কুমারসম্ভব
বা রঘুবংশের কালিদাস নন। প্রথমে এই গ্রন্থ্টি তেলেগু ভাষায়
ছাপা হয় এবং পরে অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়। এর রচনাকাল আনুমানিক
১৬-শ বা ১৭-শ খৃষ্টাব্দ।
৭। ভাবার্থ রত্নাকর
- ভাষ্যম জগন্নাথাচার্যের পুত্র রামানুজাচার্য প্রণীত ভাবার্থ
রত্নাকর আকারে ছোট হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ।
অনেকের মতে লঘু পারাশরী ( উড়ুদায়প্রদীপম ) ও ভাবার্থ রত্নাকর
বর্ণিত পদ্ধতি ঠিকমত আয়ত্ত্ব হলে যে কোন কোষ্ঠিতে বহু ফল
মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব।
এ ছাড়াও কল্যান বর্মা
রচিত সারাবলী , বরাহমিহিরের পুত্র পৃথ্যুয়াসাস রচিত হোরাসারা,
বৈদ্যনাথ দীক্ষিত প্রণীত জাতক পারিজাত, ভেঙ্কটেশ দৈবজ্ঞ
রচিত সর্ব্বার্থ চিন্তামণি, নারায়ণ ভট্ট প্রণীত চমৎকার চিন্তামনি
প্রভৃতি গ্রন্থ গুলি উল্লেখ্য। অনেক নাড়ীগ্রন্থও এখন বিভিন্ন
ভাষায় লভ্য।
এই গ্রন্থগুলির ইংরাজী
ও হিন্দি অনুবাদ সহজলভ্য। জিজ্ঞাসু পাঠকেরা "অবসরে"
ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই লেখার বাইরেও এই বই পড়ে তাদের
কৌতূহল মেটাতে পারেন। তবে কোনো বই থেকেই জ্যোতিষশাস্ত্রের
মূল বিষয়গুলি সম্বন্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞান লাভ করা প্রথম
পাঠকের পক্ষে একটু অসুবিধাজনক হতে পারে। এই ধরণের পাঠককে
সাহায্য করবার জন্যই অবসরের এই প্রয়াস। সম্পূর্ণ রচনার শেষে
পাঠকদের সাহায্যার্থে আরও কিছু বইয়ের নাম দেওয়া হবে।
মনে রাখা প্রয়োজন যে,
বহুপূর্বে জ্যোতিষশাস্ত্র আজকের মত গ্রন্থাকারে সাধারণের
সহজলভ্য ছিল না। এর শ্লোকগুলি শ্রুতি ও স্মৃতির সাহায্যে
একটি অংশের মধ্যে প্রচলিত ছিল। অপব্যবহারের ভয়ে বা অন্য
কোনও কারণে এই শাস্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা হতো। এর বহু
শ্লোক কালক্রমে হারিয়ে যায়। বহুসূত্রের ব্যাখ্যাও স্পষ্ট
নয়। কিছু প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যাও নেই। হয় ত দেশের কোনও
অংশে কিছু লোকের কাছে এর অনেক সূত্র ও ব্যাখ্যা গোপনে সংরক্ষিত
আছে। সে কারণেই অধুনা লভ্য এই শাস্ত্র অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ।
পরবর্তী পর্যায়ে কিছু
সাধারণ নিয়ম খুব বেশী ব্যাখ্যা বা জটিলতার মধ্যে না গিয়ে
পরিবেশিত হবে। এ গুলি না জানলে প্রথম শিক্ষার্থীর পক্ষে
এই শাস্ত্রের অন্দরমহলে প্রবেশ দুঃসাধ্য।