জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)
অনুচ্ছেদ - ১০
কেন্দ্র, কোণ দুঃস্থান, উপচয় ও রাজযোগ
কেন্দ্র ও কোণ
লগ্নকে ১ নং ধরলে, লগ্ন
(১ম), ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম ভাবকে কেন্দ্র (quadrangular or angular
houses) বলা হয়। ১ম, ৫ম ও ৯ম ভাবকে ত্রিকোণ (trinal or triangular
houses) বলে। অতএব দেখা যাচ্ছে লগ্নকে কেন্দ্র ও কোণ দুই বলা
যায়। এই দুইয়ের মধ্যে লগ্নকে কেন্দ্র হিসাবেই ধরা হয়। তা হলে
৫ম ও ৯ম শুধু ত্রিকোণ ভাব।
পরাশরের মতে কেন্দ্রের
অধিপতি যদি কোন নৈসর্গিক শুভগ্রহ ( অর্থাৎ বৃহস্পতি, শুক্র,
বুধ এবং শুক্ল পক্ষের চন্দ্র ) হয় তবে তা অশুভ। আবার কেন্দ্রের
অধিপতি যদি কোন অশুভ গ্রহ ( রবি, মঙ্গল ও শনি ) হয় তবে তা শুভফলপ্রদ।
এই হিসাবে, সিংহলগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র যেহেতু ১০ম কেন্দ্র বৃষ
রাশির অধিপতি অতএব অশুভ। একই ভাবে মিথুন ও কন্যা লগ্নের বৃহস্পতি
( যথাক্রমে ৭ম, ১০ম এবং ৪র্থ, ৭ম কেন্দ্রের অধিপতি ) ইত্যাদি
অশুভ। মেষলগ্নে চন্দ্র ৪র্থ স্থানের অধিপতি এবং যেহেতু কৃষ্ণপক্ষের
চন্দ্র অশুভ, অতএব কোনো ব্যক্তির কুণ্ডলীতে যদি লগ্ন মেষ হয়
এবং চন্দ্র কৃষ্ণপক্ষের হয় তবে সেই চন্দ্র অশুভ হয়ে ৪র্থ কেন্দ্রের
অধিপতি হওয়ার ফলে শুভ ফলদায়ক।
কেন্দ্রপতি ও কোণপতির যোগ
' লক্ষ্মীস্থানং ত্রিকোণঞ্চ
বিষ্ণুস্থানঞ্চ কেন্দ্রকম'। ও ১ম, ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম এই চারটি কেন্দ্র
সুখসংজ্ঞক (বিষ্ণুস্থানও বলা হয়) আবার ৫ম ও ৯ম স্থান ধনসংজ্ঞক
(লক্ষ্মীস্থানও বলা হয়)। কোন কোন লগ্নের পক্ষে কিছু গ্রহ একই
সঙ্গে কোণ ও কেন্দ্রের অধিপতি। যেমন, বৃষলগ্নের শনি (৯ম ও ১০ম
ভাবের অধিপতি); কর্কট ও সিংহ লগ্নের মঙ্গল (যথাক্রমে ৫ম ১০ম
ও ৪র্থ ৯ম ভাবের অধিপতি); তুলা লগ্নের শনি (৪র্থ ও ৫ম ভাবের
অধিপতি) এবং মকর ও কুম্ভ লগ্নের শুক্র (যথাক্রমে ৫ম ১০ম ও ৪র্থ
৯ম ভাবের অধিপতি) একই সঙ্গে কোণ ও কেন্দ্রের অধিপতি। অতএব ঐ
সব লগ্নের পক্ষে উক্ত গ্রহগুলি শুভ ফলদায়ক হবে যদি অন্য ভাবে
অশুভত্ব প্রাপ্ত না হয় বা দুর্বল না হয়। কেন্দ্র ও কোণের অধিপতির
এই সম্বন্ধকে রাজযোগ বলা যয়। এখানে রাজযোগ বলতে বুঝতে হবে এই
যোগ ধন সম্মান ইত্যাদি পার্থিব উন্নতির কারক; আধ্যাত্মিক অর্থে
রাজযোগ নয়।
এখানে মনে রাখা দরকার,
এই সব ভাবের অধিপতি যদি ৩য়, ৬ষ্ঠ বা ১১শ স্থানেরও অধিপতি হয়
তবে এই যোগ ভঙ্গ হয়। এই কারণে মেষলগ্নের ক্ষেত্রে বৃহস্পতি ও
শনি ৯ম ও ১০ম পতি হওয়া সত্বেও তাদের সম্বন্ধ রাজযোগকারক হয় না
- যেহেতু মেষ লগ্নের ক্ষেত্রে শনি ১০ম ভাব ছাড়াও ১১শ ভাবেরও
অধিপতি। তবে অন্য শুভ গ্রহের সংস্পর্শে এই দোষ কেটে যেতে পারে
বলে বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শনি বৃহস্পতি সম্পূর্ণ রাজযোগকারক
না হলেও আংশিক রাজযোগ কারক হতেই পারে। এই গ্রহ সংস্থানে অর্থ
ও সম্মান দুয়েরই বৃদ্ধি হয় ব'লে একে রাজযোগ বলা হয় এবং এই গ্রহদের
বলা হয় যোগকারক গ্রহ। একই ভাবে ৪র্থ-৭ম, ৫ম-৭ম, ৭ম-৯ম ভাবের
অধিপতির যোগাযোগও শুভ ফলদায়ক হয়, তবে ৪র্থ-৫ম, ৯ম-১০ম এর মত
নয়।
দুঃস্থান
লগ্ন থেকে ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শ
ভাবকে দুঃস্থান বলা হয়। এদের মধ্যে ৮ম নিকৃষ্টতম। কোন জন্মকুণ্ডলীতে
এই সমস্ত ভাবে বেশীসংখ্যক গ্রহ থাকলে জীবনে তার সুখী হবার সম্ভাবনা
কম এবং পরমায়ুও সাধারণতঃ বেশী হবার কথা নয়। দুঃস্থানস্থ গ্রহ
বা ভাবাধিপতি রোগ, শত্রুতা, অর্থব্যয় ও জীবনে নানা ধরণের বাধাবিপত্তি
ও ঝঞ্ঝাট সৃষ্টি করে। ফল বিচারের সময় এইগুলি দৃষ্টিতে রাখতে
হবে। দুঃস্থান সম্বন্ধে পরে বিশদ ভাবে বলা হবে।
উপচয়
৩য়, ৬ষ্ঠ, ১০ম ও ১১শ ভাবকে
উপচয় বলে। এ সব ভাবে সব গ্রহই কিছু না কিছু ভাল ফল দেয়। বিশেষ
করে ১১শে সব গ্রহই শুভ ফল প্রদান করে। তবে ফল শুধুই শুভ হবে
এটা ঠিক নয়। এদের মধ্যে ৬ষ্ঠ একই সঙ্গে দুঃস্থান এবং উপচয়। অর্থাৎ
৬ষ্ঠ স্থান কোন ব্যক্তির পক্ষে শুভ অশুভ দুইই হতে পারে। তবে
সাধারণভাবে ৬ষ্ঠ স্থান শুভর থেকে অশুভ ফলই বেশী প্রদান করে।
১ম, ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম ভাবকে
যেমন কেন্দ্র এবং ৫ম ও ৯ম ভাবকে কোণ বলে অভিহিত করা হয়, তেমনি
২য়, ৫ম, ৮ম ও ১১শ ভাবকে পণফর (cadent houses) এবং ৩য়, ৬ষ্ঠ,
৯ম ও ১২শ ভাবকে অপক্লিম (succeedent houses) বলা হয়। এদের মধ্যে
৫ম ও ৯ম যেহেতু কোণ, অতএব এই দুই ভাবকে পণফর ও অপক্লিম থেকে
বাদ দেওয়া হয়। তবে এই সব নাম শুধু শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা হিসাবেই
গুরুত্বপূর্ণ; ফল বিচারে এদের খুব প্রয়োজন নেই।
৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ স্থানকে
এক সঙ্গে 'ত্রিষড়ায়া' বলে। এদের দোষযুক্ত বলে অভিহিত করা হয়।
৩য় স্থানকে ঠিক দুঃস্থান বলা না হলেও স্থান হিসাবে খুব শুভ ফলদায়ক
বলে ধরা হয় না। অনেকে এই স্থানকে কিছুটা দুঃস্থান হিসাবেই গণ্য
করেন।
দীপক
সেনগুপ্ত
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১১
(চলবে)