প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

জ্যোতিষশাস্ত্র প্রবেশিকা (ন্যান্য অনুচ্ছেদ)

অনুচ্ছেদ - ১৩
ভাব বিচার ও কিছু বিশেষ নিয়ম
(ক) প্রথম অংশ

জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিভিন্ন বইতে শত শত নিয়ম লিপিবদ্ধ আছে। সেইগুলি মনে রেখে সাধারণভাবে ফল বিচার খুব সহজ নয়। তবে কতকগুলি ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটা সাধারণ নিয়ম কাজ করে, সেটা আয়ত্ব করাই শ্রেয়।
কোন ভাব বিচারের জন্য যেগুলি জানা প্রয়োজন তার অনেকগুলিই আগে প্রসঙ্গ অনুযায়ী বিক্ষিপ্তভাবে লেখা হয়েছে। সেগুলি আর একবার সঙঘবদ্ধভাবে দেখে নেবার দরকার আছে। গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলি ভাল করে আয়ত্ব করতে না পারলে ফল নির্ণয়ে সফলতা না ও আসতে পারে। এই নিয়মগুলি প্রথম পাঠের নিরীখে হয় ত একটু গোলমেলে মনে হতে পারে। স্থানে স্থানে যতটা সম্ভব উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়েছে। বার বার পড়লে নিশ্চয়ই অর্থ অনেক পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তবে নীচের লেখাগুলি পড়তে শুরু করার আগে, কাগজ ও পেন্সিল নিয়ে বসলে এবং যথাযথ স্থানে বর্ণিত গ্রহ সন্নিবেশ সঙ্গে সঙ্গে এঁকে নিয়ে বুঝতে পারলে খুবই কার্যকরী হবে।

১নং নিয়ম
জন্মকুণ্ডলীতে কোন গ্রহ ফলদান করে মুলতঃ যে বিষয় গুলিকে কেন্দ্র করে সেগুলি হ'ল (ক) গ্রহটি যে ভাবের অধিপতি তার ফল; (খ) যে ভাবে অবস্থিত তার ফল; (গ) নিজের কারকত্ব অনুযায়ী ফল; (ঘ) যে গ্রহদ্বারা দৃষ্ট হচ্ছে বা যে গ্রহের সঙ্গে যুক্ত আছে তার ফল; (ঙ) যে নক্ষত্রে অবস্থিত তার অধিপতির ফল; (চ) নবাংশ বা অন্যান্য বর্গে গ্রহটির অবস্থান বিচারের ফল।

৪র্থ অনুচ্ছেদে সংযোজিত চিত্র ২ক তে দেখান জন্মকুণ্ডলীটিকে উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যাক। ধরা যাক শনি গ্রহটি। শনি কি ফল দিতে পারে ? শনি এখানে ১১শ ও ১২শ ভাবের অধিপতি - অতএব ১১শ ও ১২শ ভাবের ফল; অবস্থিত ২য় ভাবে - অতএব ২য় ভাবের ফল। ৫ম অনুচ্ছেদে সব গ্রহের সঙ্গে শনিরও কারকত্ব সম্বন্ধে বলা হয়েছে - অতএব তার কিছু ফল; শনি দৃষ্ট হচ্ছে মঙ্গল ও শুক্র দ্বারা - অতএব এদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায় এদের সম্পর্কিত কিছু ফল; শনি ২নং ভরণী নক্ষত্রে অবস্থিত হওয়ায় এই নক্ষত্রের অধিপতি শুক্রের ফল এবং পরিশেষে শনির নবাংশগত ফল। এতগুলি সম্ভাব্য ফলের মধ্যে, সব দিক বিচার করে যেটি বা যেগুলি ঘটবার সম্ভাবনা সমধিক - সেই ফলই বলতে হবে। এখানেই জ্যোতিষীর মুন্সিয়ানা। কোন ফল কতটা ফলবে এবং কোন ঘটনা কোন সময়ে ঘটবে সেটা সঠিকভাবে নির্দেশ করা খুব কঠিন - অনেক পড়াশুনা এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা না থাকলে সফল হবার আশা কম। তবে সাধারণ কিছু ফল বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত সহজ।

২নং নিয়ম
বৃহস্পতি, শুক্র, পাপগ্রহের সংযোগহীন বুধ ও শুক্লপক্ষের চন্দ্র (রবি থেকে চন্দ্রের অবস্থান ৭২ ডিগ্রির বেশী হলে) নৈসর্গিক শুভ গ্রহ। পরাশরের মতে (যেটা বেশীর ভাগ জ্যোতিষীই মেনে চলেন) শুভগ্রহ কেন্দ্রের অধিপতি হলে অশুভ ফল দেয়, পক্ষান্তরে অশুভগ্রহ (এখানে শনি, রবি ও মঙ্গলকে ধরতে হবে) কেন্দ্রাধিপতি হলে শুভ। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সিংহ লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র ৩য় ও ১০ম পতি। শুক্র নৈসর্গিক শুভ গ্রহ হয়ে ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি হওয়ায়, সিংহ লগ্নের শুক্র সাধারণভাবে শুভ গ্রহ নয়। কোণপতি সব সময়েই শুভ। শুভগ্রহের কেন্দ্রাধিপত্য দোষ সম্বন্ধে পরে আরও বিশদভাবে বলা হবে। কোন ভাবে শুভগ্রহ অবস্থান করলে বা কোন ভাব শুভগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট হলে, সেই ভাবের ফল শুভ হয়।
তবে এখানে একটা বিশেষ নিয়ম রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্রের ৪র্থ পতি (এবং ১১শ পতি) হিসাবে কেন্দ্রাধিপত্য দোষ রয়েছে; কিন্তু শুক্র যদি জন্মকুণ্ডলীতে ৪র্থে অর্থাত্ তুলা রাশিতে অবস্থিত হয় তবে তার অশুভত্ব কেটে যাবে যেহেতু সেটা স্বক্ষেত্রে রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই এ রকম ধরতে হবে।

৩নং নিয়ম
কোন ভাবের অধিপতি গ্রহ বন্ধìরাশিতে, স্বক্ষেত্রে, মূলত্রিকোণে বা তুঙ্গক্ষেত্রে বসে থাকলে সেই ভাবের শুভ হয়। কিন্তু কোন গ্রহ শুভই হোক বা অশুভই হোক (বিশেষ করে অশুভ গ্রহ) যদি নীচস্থ হয়ে বা শত্রুগৃহগত হয়ে কোনো ভাবে অবস্থিত হয় তবে সেই ভাবের হানি হয়। ধরা যাক, মকর লগ্নের শনি ৪র্থে মেষ রাশিতে বসে আছে। যেহেতু শনি মেষে নীচস্থ হয় তাই ৪র্থ ভাবের পক্ষেও অশুভ এবং যেহেতু মকর লগ্নের পক্ষে শনি লগ্নপতি (এবং ২য় পতি), অতএব শরীরের পক্ষেও খারাপ। এই জাতকের মা-এর শরীর( ৪র্থ ভাব থেকে মাতা ও গৃহসুখের বিচার হয়) নিয়েও দুঃশ্চিন্তা থাকতে পারে এবং গৃহসুখেরও হানি হতে পারে। এটা শুধু শনির অবস্থান থেকে বলা হ'ল, সামগ্রিকভাবে ফল নির্দেশের জন্য অন্যান্য গ্রহের অবস্থানও বিচার্য।

৪র্থ নিয়ম
যদি কোনও ভাবের অধিপতি শুভগ্রহ যুক্ত বা দৃষ্ট হয়ে সেই ভাবের কেন্দ্রে বা কোণে (অর্থাত্ লগ্নে, ৪র্থে, ৭মে, ১০মে বা ৫মে, ৯মে) অবস্থান করে, তবে সেই ভাবের পক্ষে শুভ।

৫ম নিয়ম
যদি কোনো ভাবের অধিপতি শুভগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট না হয়ে দুঃস্থানগত (৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ভাব) হয় অথবা ৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ভাবের অধিপতি যদি শুভদৃষ্ট না হয়ে কোনো ভাবে অবস্থিত হয়, তবে সেই ভাবের হানি হবে। এখানে একটা কথা মনে আসতেই পারে - সেটা হ'ল যদি ৬ষ্ঠ স্থানের অধিপতি ৬ষ্ঠ ভাবেই বসে থাকে তা'হলে কি হবে ? যেহেতু দুঃস্থানের অধিপতি যে ভাবে থাকবে সেই ভাবের অশুভ হয়, তাই ৬ষ্ঠ স্থানের অধিপতি ৬ষ্ঠে থাকলে ৬ষ্ঠ ভাবের হানি হবে। যেহেতু ৬ষ্ঠ ভাব থেকে ঋণ, রোগ, বাধা ইত্যাদি বিচার্য, অতএব ৬ষ্ঠপতি ৬ষ্ঠে থাকায় এগুলির হানি হলে জাতকের পক্ষে শুভই হবে। ধরা যাক কর্কট লগ্নের চন্দ্র কুম্ভে রয়েছে। কর্কট লগ্নের চন্দ্র লগ্নপতি বলে এবং কুম্ভ কর্কটের ৮ম স্থান বলে তনুভাবের (শরীর) পক্ষে মঙ্গলজনক হবে না। আবার ধরা যাক, কর্কট লগ্নের শনি ৩য় ভাব কন্যায় অবস্থিত। ৮ম পতি শনি ৩য় ভাবে থাকায় ৩য় ভাবের শুভ হবে না। তবে ৩য় উপচয় বলে, শনির অবস্থান সেখানে কিছুটা ভাল এবং যেহেতু কন্যা রাশি শনির মিত্র ক্ষেত্র, অতএব ৭ম ও ৮ম স্থানের কিছু শুভ হবারই কথা। অপর একটি উদাহরণ নেওয়া যাক। কোন জাতকের মেষ লগ্নে শনি রয়েছে। ফল কি হবে ? মেশ রাশিতে শনি নীচস্থ এবং শনি লগ্নে (তনুভাব) থাকার জন্য শরীর নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ১০ম ও ১১শ স্থানের থেকে ( মেষ লগ্নে শনি ১০ম ও ১১শের অধিপত) যথাক্রমে ৪র্থে ও ৩য়ে (কেন্দ্রে ও উপচয়ে) অবস্থানের জন্য ১০ম ও ১১শ ভাবদ্বয়ের পক্ষে শুভ। তাই কর্মক্ষেত্রে বা আয়ের ক্ষেত্রে ভাল ফল হবার কথা। তবে যেহেতু শনি দুর্বল (যদি নীচভঙ্গ না হয়) অতএব ফল খুব ধীরে ধীরে হবে। রাতারাতি কিছু হবার নয়।

এটা বলা হয়েছে যে কোন গ্রহ লগ্ন থেকে কেন্দ্রে বা কোণে অবস্থিত হলে সেটা বলশালী হয়। অশুভ গ্রহের বেলা কি হবে ? উদাহরণ দেওয়া যাক। বৃষ লগ্নের ক্ষেত্রে শনি ৯ম কোণ ও ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি বলে রাজযোগকারী গ্রহ। ধরা যাক সেটি ৭ম কেন্দ্র বৃশ্চিকে অবস্থান করছে। তা হলে উপরি উক্ত নিয়মে শনির বল বৃদ্ধি হল। তা হলে শনি ৯ম ও ১০ম ঘরের পক্ষে শুভ হবে। এটা হবার আর একটা কারণ হলো, শনি ৭মে থাকার জন্য ৯ম ঘর থেকে ১১শে (লাভস্থান) এবং ১০ম ঘর থেকে ১০ম কেন্দ্রে রয়েছে। এক্ষেত্রে কারকত্ব হিসাবে শনি আয়ুষ্কারক গ্রহ বলে জাতকের কিছুটা আয়ু বৃদ্ধিও হতে পারে। কিন্তু যে ঘরে শনি অবস্থিত, সে ঘরের পক্ষে শুভ নয়। এখানে শনি ৭মে থাকায় বিবাহিত জীবনের পক্ষে শুভ ফলদায়ক নয়। ঠিক একই ভাবে কোন ভাবের অধিপতি সেই ভাবে থাকলে ভাল বলা হয়েছে। তুলা লগ্নের শনি ৪র্থ ও ৫ম পতি। ৫মে অর্থাৎ কুম্ভে-মূলত্রিকোণে থাকলে ৫ম স্থানের পক্ষে শুভ অবশ্যই; কিন্তু শনির স্বভাবসিদ্ধ প্রকৃতি হিসাবে ৫ম স্থানের কিছু ক্ষতিও করবে। ৫ম যেহেতু সন্তানস্থান, একটি দুটি সন্তান দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

৬নং নিয়ম
কোনো ভাবের অধিপতি সেই ভাব থেকে বা লগ্ন থেকে দুঃস্থানে (৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শে) থাকলে উক্ত ভাবের হানি হয়। যেমন বৃষলগ্নের বৃহ্রপতি ৮ম পতি এবং ৮ম স্থান থেকে আয়ু বিচার হয়; অতএব এই বৃহস্পতি ৮মের ১২শে অর্থাত্ বৃশ্চিকে বসলে, আয়ুর পক্ষে শুভ নয়। মেষলগ্নের ২য়পতি শুক্র এবং ২য় স্থান সঞ্চয়ের নির্দেশক। এই শুক্র যদি লগ্নের ১২শে অর্থাত্ মীনে থাকে তবে কি ধন সঞ্চয়ের পক্ষে অশুভ ? ভাবার্থ রত্নাকরে বলা হয়েছে এই শুক্র ধনস্থানের পক্ষে শুভ। কারণটা সোজা। শুক্র মীন রাশিতে তুঙ্গী হয়। তাই শুভ ফল দেবে। আবার ২য় পতি ১২শে থাকার অর্থ - ২য় পতি ২য় স্থান থেকে ১১শে আছে। ১১শ থেকে আয় বা লাভ বোঝায়। তাই ২য় পতি ২য় স্থান থেকে ১১শে থাকায় ২য় স্থানের পক্ষে শুভ। তবে এটা শুধু মেষ লগ্নের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই ভাবে ফল বিচার প্রয়োজন। কোন কোন গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, যেহেতু শুক্র এখানে লগ্ন থেকে ১২শে আছে, অতএব ধন সঞ্চয় হবে ঠিকই তবে সঞ্চিত ধন জাতকের ভোগে আসবে না।

৭নং নিয়ম
যে সব গ্রহ দু'টি করে ভাবের অধিপতি, সেই গ্রহ ঐ লগ্নের পক্ষে শুভ না অশুভ সেটা নির্ভর করবে, ঐ দু'টি ভাবের মূলত্রিকোণ দুঃস্থানগত কি না তার উপর। উদাহরণ দেওয়া যাক। মেষলগ্নের বৃহস্পতি ৯ম ও ১২শ ভাবের অধিপতি। কিন্তু বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ধনু অর্থাত্ ৯ম ভাব। ৯ম যেহেতু ভাগ্যস্থান ও বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ, তাই মেষ লগ্নের পক্ষে বৃহস্পতি শুভ গ্রহ। আবার বৃষ লগ্নের বৃহস্পতি ৮ম ও ১১শ স্থানের অধিপতি; কিন্তু বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ধনু ৮ম ভাবে হওয়ায় এবং ৮ম একটি দুঃস্থান হওয়ায়, বৃষলগ্নের বৃহস্পতি শুভ নয়। একই কারণে কন্যালগ্নের মঙ্গল শুভ নয়, কারণ মঙ্গলের (৩য় ও ৮ম ভাবের অধিপতি) মূলত্রিকোণ মেষরাশিতে এবং মেষ কন্যা লগ্নের ৮ম স্থান। এখানে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রথমতঃ লগ্নপতিকে শুভ বলা হয় , কারণ লগ্ন একই সঙ্গে কেন্দ্র এবং কোণ হওয়াতে এর অধিপতি শুভ। এবার, লগ্নপতির মূলত্রিকোণ যদি দুঃস্থান হয় তবে কি হবে ? যেমন বৃশ্চিক লগ্নের মঙ্গল লগ্নপতি ও ৬ষ্ঠ পতি। বৃশ্চিকের ৬ষ্ঠ স্থান মেষ এবং মেষরাশি মঙ্গলের মূলত্রিকোণ। এখানে মঙ্গল একই সঙ্গে শুভ ও অশুভ হওয়ায় মঙ্গলকে সমভাবাপন্ন (neutral) হিসাবে ধরা হয়। তবে যদি মঙ্গল শুভ ভাবে অবস্থান করে ও শুভ গ্রহযুক্ত বা শুভদৃষ্ট হয়, তবে নিশ্চয়ই মঙ্গল শুভ হবে। যেমন, যদি বৃশ্চিকলগ্নের লগ্নপতি মঙ্গল লগ্নের ৫মে মীনে থাকে এবং লগ্নে বৃহস্পতি বসে মীন রাশিতে অবস্থিত মঙ্গলকে দৃষ্টি দেয়, তবে অবশ্যই শুভ। এখানে অন্য একটি সম্ভাব্য প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়া দরকার। আগেই জানা আছে যে নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ যদি কেন্দ্রের অধিপতি হয় তবে শুভ। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি গ্রহটির মূলত্রিকোণ দুঃস্থানগত হয় তবে কি হবে ? যেমন, কর্কট লগ্নের শনি। শনি ৭ম ও ৮ম স্থানের অধিপতি। কর্কটের ৮ম স্থান কুম্ভ রাশি শনির মূলত্রিকোণ, অতএব এই হিসাবে কর্কট লগ্নের শনি অশুভ। কিন্তু শনি আবার ৭ম (কেন্দ্র) ভাবের অধিপতি হওয়ার জন্য শুভ। তা হলে ? এক্ষেত্রে অনেক জ্যোতিষী কর্কট লগ্নের শনিকে সম (neutral) হিসবে গণ্য করেন। তবে জন্মকুণ্ডলীতে শনির অবস্থান ও অন্যান্য গ্রহের পারস্পরিক সম্বন্ধের উপর সামগ্রিকভাবে ফল নির্ভর করবে।

৮নং নিয়ম
কোনো গ্রহ রবির খুব কাছে এলে ( কোন গ্রহ কত কাছে এলে এটা হবে তা ৭ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ) অস্তগত (combust) হয় এবং সেই গ্রহ সাধারণতঃ শুভ ফলদায়ক হয় না। বুধ গ্রহকে এর কিছুটা ব্যতিক্রম বলে কোন কোন জ্যোতিষী মনে করেন। এই সঙ্গে কোন গ্রহ রাশি সন্ধি বা ভাব সন্ধিতে অবস্থান করলে যে দুর্বল হয় ( ৮ম অনুচ্ছেদ ) সেটাও মনে রাখতে হবে।

৯নং নিয়ম
শুভ গ্রহ যে ভাবে অবস্থান করে সেই ভাবের বৃদ্ধি বা শুভ হয়। কিন্তু ৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ভাবের বেলা নিয়মটা একটু আলাদা। ৬ষ্ঠে শুভগ্রহ ৬ষ্ঠ ভাবের বৃদ্ধি করে না অর্থাৎ শত্রু বৃদ্ধি করে না বরং শত্রু হ্রাস করে। ৮মে শুভগ্রহ রোগ ও বাধা-বিপত্তির হানি করে এবং ১২শে শুভগ্রহ ব্যয় হ্রাস করে। তবে শুভ গ্রহ যদি নীচস্থ বা বলহীন হয় বা অশুভ গ্রহ দৃষ্ট হয় তা হলে ফল অন্য রকম হতে পারে। ৬ষ্ঠে পাপগ্রহ রোগ বৃদ্ধি করে। ৬ষ্ঠে একাধিক পাপগ্রহ জাতককে একেবারে শয্যাশায়ী করে ফেলতে পারে। শনি পাপগ্রহ হলেও যেহেতু আয়ুষ্কারক গ্রহ, ৮মে শনি শক্তিশালী হলে আয়ুবৃদ্ধি হয় বলে বলা হয়েছে। দুঃস্থানে (৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শে) পাপগ্রহ জীবনে নানা ভাবে অশান্তি ডেকে আনে। রাহু পাপগ্রহ হলেও ৬ষ্ঠে রাহুর অবস্থানকে ভাল বলা হয়েছে। ৬ষ্ঠে রাহু শত্রুজয়ী করে ও জাতককে দীর্ঘজীবী করে। তবে রাহু পাপগ্রহ হয়ে ৬ষ্ঠে থাকায় কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। ৬ষ্ঠ (৯মের ১০ম স্থান) দুঃস্থান হলেও একটি উপচয় স্থান একথা মনে রাখতে হবে। উপচয়ে সব গ্রহই কিছু শুভ ফল দান করে। দুঃস্থান সম্বন্ধে পরে আরও বিশদ ভাবে বলা হবে।

১০নং নিয়ম
কোন ভাবের অধিপতি যে রাশিতে অবস্থান করবে সেই রাশির অধিপতি যদি দুঃস্থানে থাকে বা পাপগ্রহ যুক্ত হয় তবে সেই ভাবের হানি হয়। উদাহরণ স্বরূপ, যদি মেষলগ্নের চন্দ্র (৪র্থ স্থানের অধিপতি ) সিংহ রাশিতে থাকে এবং সিংহের অধিপতি রবি তুলা রাশিতে (তুলা রাশিতে রবি নীচস্থ হয়) থাকে তা হ'লে ৪র্থ ভাবের হানি হবে। এ ক্ষেত্রে মঙ্গল সিংহ রাশিতে রয়েছে বলে, সিংহ রাশির অধিপতি রবি তার রাশি অধিপতি (sign dispoitor)। ঠিক একই ভাবে রাশি অধিপতির অবস্থান শুভ হলে রাশিতে স্থিত গ্রহটি শক্তিশালী হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রে কোন গ্রহের রাশির অধিপতি অনেক সময়েই গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়কের ভূমিকা নেয়।

১১নং নিয়ম
কোন ভাবের অধিপতি কোন ভাবে বা রাশিতে অবস্থিত সেটার উপর অনেক ফলাফল নির্ভর করে। ধরা যাক লগ্নপতি দুর্বল হয়ে দুঃস্থানগত (৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ) এবং শত্রুগৃহগত হয়ে পাপগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট, এ ক্ষেত্রে জাতকের নানা শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে এবং সে একজন সাধারণ ব্যক্তি হবে - খ্যাতির কোনো সম্ভাবনা থাকে না। ৫ম পতি ৭মে থাকলে ফল কি হবে ? ৫ম স্থান সূক্ষ্মবুদ্ধি নির্দেশ করে; ৭ম স্থান জায়াস্থান। অতএব ৫ম পতি ৭মে থাকলে স্ত্রী (বা স্বামী) বুদ্ধিমান ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন হবারই কথা। আবার ৫ম স্থান থেকে যেহেতু আবেগ ইত্যাদি বিচার্য, ৫ম পতির ৭মে অবস্থান তাই প্রণয় ঘটিত কোন ব্যাপারকেও বোঝাতে পারে। আবার ৫ম স্থান উচ্চ পদে আসীন কোনও ব্যক্তির অনুগ্রহও নির্দেশ করে এবং ৭ম ভাব থেকে (১০ম স্থানের ১০ম স্থান) কর্ম্মে উন্নতিও বিচার করা যায়। অতএব ৫ম পতি ৭মে থাকলে উপরওয়ালার অনুগ্রহে কর্ম্মে উন্নতিও হতে পারে। তবে এই সব ফলই কোন ব্যক্তির একই সঙ্গে না হতেই পারে। এ গুলি সবই সম্ভাবনাময় দিক। ঠিক কি হবে সেটার জন্য অন্যান্য গ্রহের অবস্থান, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কারকত্ব বিচার্য।

১২ নং নিয়ম
কোনো কোষ্ঠীতে দুটি গ্রহের মধ্যে চার রকম সম্পর্ক হতে পারে। (ক) সবচেয়ে ভাল বা শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক হ'ল পরস্পর ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক। ধরা যাক, মেষলগ্নে রবি (৫ম পতি) ধনুরাশিতে আছে এবং বৃহস্পতি (৯ম পতি ও ১২শ পতি) সিংহরাশিতে আছে। তা হ'লে রবি বৃহস্পতির ক্ষেত্রে ও বৃহস্পতি রবির ক্ষেত্রে অবস্থান করছে। অথবা বলা যায়, রবি ও বৃহস্পতি স্থান বা ক্ষেত্র বিনিময় করেছে। ৫ম ভক্তিস্থান ও ৯ম ধর্মস্থান ব'লে এই যোগ অন্যান্য ফলের সঙ্গে নিঃসন্দেহে আধ্যাত্মিক উন্নতিও নির্দেশ করে। (খ) দুটি গ্রহ পরস্পরকে পূর্ণদৃষ্টিতে দেখলে ২য় সম্বন্ধ হয়। যদি মঙ্গলের ৪র্থে শনি থাকে তবে শনির ১০মে মঙ্গল থাকবেই। মঙ্গল ৪র্থ দৃষ্টিতে শনিকে এবং শনি ১০ম দৃষ্টিতে মঙ্গলকে দেখবে। শনি ও মঙ্গল ছাড়া অন্য যে কোনো দুটি গ্রহ পরস্পরের ৭মে বসে না থাকলে এই যোগ হবে না। উদাহরণস্বরূপ কর্কট রাশিতে শনি এবং মেষ রাশিতে মঙ্গল থাকলে অথবা কন্যা রাশিতে রবি এবং মীন রাশিতে চন্দ্র থাকলে পরস্পরের দৃষ্টি বিনিময়ের এই ২য় রকমের সম্পর্ক হতে পারে। (গ) দুটি গ্রহ যখন একটি অপরটির ক্ষেত্রে অবস্থান করে এবং একটি অপরটিকে দৃষ্টি দেয় কিন্তু অন্যটি অপরটিকে দৃষ্টি দেয় না তখন ৩য় সম্বন্ধ হয়। যেমন, মঙ্গল সিংহরাশিতে রবির ক্ষেত্রে এবং রবি বৃশ্চিক রাশিতে মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবস্থান করছে। এ ক্ষেত্রে মঙ্গল ৪র্থ দৃষ্টিতে রবিকে দেখছে কিন্তু রবি মঙ্গলকে দেখছে না। এখানে মঙ্গল ও রবি ৩য় সম্বন্ধের দ্বারা আবদ্ধ। অথবা শনি বৃহ্রপতির ক্ষেত্র ধনুতে এবং বৃহ্রপতি শনির ক্ষেত্র কুম্ভতে রয়েছে। শনি ৩য় দৃষ্টিতে বৃহস্পতিকে দেখছে কিন্তু বৃহস্পতি শনিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না। অতএব এখানে শনি ও বৃহস্পতির ৩য় সম্বন্ধ হল। (ঘ) দুটি গ্রহ একই রাশিতে যুক্ত হলে ৪র্থ সম্বন্ধ হয়। যেমন, মেষ রাশিতে শনি ও বৃহস্পতি থাকলে, শনি ও বৃহস্পতির মধ্যে এই ৪র্থ সম্বন্ধ হয়েছে বলা যায়।

১৩নং নিয়ম
একটি গ্রহ কোন রাশিতে নীচস্থ হ'লে, সেই রাশির অধিপতি অথবা সেই রাশিতে যে গ্রহ তুঙ্গী হয় সেটি যদি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে অবস্থিত হয় তবে প্রথমোক্ত গ্রহের নীচভঙ্গ হয়। একে নীচভঙ্গ রাজযোগ বলে। এতে ঐ নীচস্থ গ্রহের নীচ ভাব কেটে যায় এবং সেটা শুভ ফল প্রদান করে। উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক কোন জাতকের লগ্ন মেষ ও রাশি ধনু এবং বুধ মীন রাশিতে নীচস্থ হয়ে অবস্থান করছে। এখন যে রাশিতে বুধ নীচস্থ হয়ে রয়েছে তার অধিপতি বৃহস্পতি; এই বৃহস্পতি যদি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে থাকে (যেমন বৃহস্পতি যদি লগ্নের ৭ম তুলা রাশিতে থাকে) অথবা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে থাকে (যেমন ৪র্থ কেন্দ্র মীনে থাকে) তবে বুধের নীচভঙ্গ হবে। স্পষ্টতই ২য় ক্ষেত্রে নীচভঙ্গ অনেক জোরালো ফল দেবে কারণ বৃহস্পতি মীনে স্বক্ষেত্রে বসে নীচভঙ্গ যোগ তৈরী করেছে। আবার মীন রাশিতে শুক্র তুঙ্গী হয় ; এই শুক্রও যদি লগ্ন বা চন্দ্রের কেন্দ্রে অবস্থিত হয় তা হলেও বুধের নীচভঙ্গ হবে। জ্যোতিষগ্রন্থে নীচভঙ্গের আরও অনেক নিয়ম দেওয়া আছে। এখানে একটি মুখ্য নিয়ম বলা হল।

১৪নং নিয়ম
কোন রাশিতে স্থিত গ্রহের সন্নিহিত দুই রাশিতে (অর্থাত্ ঐ রাশির ২য়ে ও ১২শে) যদি পাপগ্রহ (নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ - রবি, মঙ্গল, শনি, রাহু ও কেতু) অবস্থিত হয় তবে পূর্বোক্ত রাশিস্থিত গ্রহের শুভত্বের হানি হয়। একে বলে পাপ-কর্তরী যোগ। ঠিক একই ভাবে পাশের দুই রাশিতে অবস্থিত শুভ গ্রহের (নৈসর্গিক শুভ গ্রহ - বৃহ্রপতি, শুক্র, বুধ ও শুক্ল পক্ষের চন্দ্র) প্রভাবে মধ্যস্থিত গ্রহের শুভত্ব বৃদ্ধি পায়। এর নাম শুভ-কর্তরী যোগ। ধরা যাক মেষ লগ্নের রবি যদি কর্কটে থাকে এবং কর্কটের দুই পাশের রাশিতে (মিথুন ও সিংহ রাশিতে) যথাক্রমে রাহু ও শনি অবস্থিত হয় তবে রবি ৫ম পতি হওয়া সত্বেও পাপমধ্যগত হওয়াতে রবির শুভত্বের হ্রাস হবে। তেমনি, কুম্ভ লগ্নের শনি (লগ্ন ও ১২শ পতি) যদি সিংহে শত্রু গৃহগত হয় কিন্তু কর্কটে শক্তিশালী চন্দ্র ও কন্যায় বুধ অবস্থিত হয়, তবে শুভ-কর্তরী যোগের জন্য শনির অশুভত্ব অনেক কমে যাবে।

১৫নং নিয়ম
(ক) দশা বিচার কালে ২য় ও ১২শ ভাবের শুভাশুভত্ব কিছুই ধরা হয় না। তারা শুভ গ্রহের সংযোগে শুভ ফল এবং অশুভ গ্রহের সংযোগে অশুভ ফল প্রদান করে। এরা কোন গ্রহের সঙ্গে যদি যুক্ত না থাকে, তবে যে স্থানে থাকে সেই ভাবাধিপতির গুণানুক্রমে ফল দান করে। ২য় ও ১২শ ভাবাধিপতিকে সেই জন্য ‘পরতন্ত্রী’ বলা হয়। (খ) ২য় ব ৭ম পতি অথবা তাদের সঙ্গে যুক্ত যে কোন গ্রহই মারক হতে পরে। মারক অর্থে এদের দশা-অন্তর্দশায় মৃত্যু হবে তা সব সময়ে নয়। তবে এদের দশা-অন্তর্দশায় জাতক-জাতিকার নানা ঝঞ্ঝাট ও দুঃখের মধ্যে কাটে। (গ) রাহু বা কেতু কেন্দ্রে থেকে কোণপতির (৫ম বা ৯ম) সঙ্গে সম্বন্ধ করলে যোগকারক হয় এবং শুভ ফল দান করে। রাহু বা কেতু যে গ্রহের সঙ্গে যুক্ত থাকে বা যে গ্রহের ৭মে অবস্থান করে তার সঙ্গেই সম্বন্ধযুক্ত হয়। কোন গ্রহের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে, যে রাশিতে বসে থাকে তার ভাবাধিপতির ফল দেয়। (ঘ) জন্মকুণ্ডলীতে ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতির যথেষ্ট প্রভাব দেখা যায়। ৩য় পতি অনেক সময়ে খুব দুঃসাহস, গোয়ার্তুমি বা গা-জোয়ারির কারণ হতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ অসুখ করাও অসম্ভব নয়। ৬ষ্ঠ পতি নানা বাধা বিপত্তি, রোগ, দুর্ঘটনা, মামলা-মোকদ্দমা ঘটাতে পারে, ঋণগ্রস্তও করতে পারে। ১১শ পতি অনেক সময় মনে অতিরিক্ত চাহিদা বা উচ্চাশা জাগিয়ে তুলতে পারে বা স্বৈরাচারী মনোবৃত্তির কারণ হতে পারে। জাতক ও জাতিকার পক্ষে ভাল হবে যদি এই সব ভাবাধিপতি জন্মকুণ্ডলীতে অন্য কোন গ্রহের সঙ্গে সম্বন্ধহীন হয়ে অবস্থান করে। অর্থাত্ এইসব স্থানের অধিপতি অন্য কোনো গ্রহের উপর প্রভাব না ফেললেই ভাল।

১৬নং নিয়ম
এতক্ষণ লগ্ন থেকেই সমস্ত ভাব বিচারের কথা বলা হয়েছে| কিন্তু জ্যোতিষীরা চন্দ্র এবং রবি থেকেও ভাব বিচার করতে বলেন| অর্থাৎ চন্দ্র ও রবি যে রাশিতে অবস্থিত সেই রাশিকে লগ্ন ধরে আলাদা করে বিচার করতে হবে| জ্যোতিষীরা বলেন, যদি লগ্ন, চন্দ্র ও রবি থেকে বিচারের ফল একই হয় তবে ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা সমধিক| এই নিয়মকে ঐসুদর্শন঑ বলা হয়| ১৩(১) নং চিত্রে একটি উদাহরণ দেখান হল| এটি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মকুণ্ডলী| অনেকেরই জানা আছে শ্রীবাজপেয়ী হাঁটুর সমস্যায় ভুগতেন এবং এক সময়ে তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রপ্রচারও করা হয়| জন্ম ছকের ১০ম স্থান থেকে হাঁটুর বিচার হয় (৯ম অনুচ্ছেদ)| লগ্ন থেকে বিচার করলে বৃশ্চিক লগ্নের ১০ম ঘর সিংহ রাশির অধিপতি রবি ২য়ে ধনু রাশিতে অবস্থিত| ১০মে বৃহস্পতির দৃষ্টি আছে| চন্দ্র বৃশ্চিকে নীচস্থ ও পাপ কর্তরী যোগে দুষ্ট ( শনি ও রবি ২টি পাপ গ্রহের মধ্যে অবস্থিত বলে )| আবার চন্দ্রকে লগ্ন ভেবে বিচার করলেও একই ফল হবে, যেহেতু চন্দ্র ও লগ্ন একই রাশিতে অবস্থিত| ১০ম পতি রবি শনির ৩য় দৃষ্টি দ্বারা ক্লিষ্ট| শনিকে আবার মঙ্গল দৃষ্টি দেওয়ায় শনির অশুভত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে| একই ভাবে রবি থেকে দেখলে, ১০ম পতি বুধও শনিদৃষ্ট| আবার কালপুরুষের অঙ্গবিভাগ (৯ম অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী মকর রাশি হাঁটুর নির্দেশক| মকর রাশিতে কেতুর অবস্থান অশুভ এবং মকরের অধিপতি শনিও মঙ্গলের ৮ম দৃষ্টি দ্বারা পীড়িত| অতএব সব দিক থেকে বিচার করে একই ফলে পৌঁছান গেল| এখানে এই ঘটনাটি ঘটবেই বলা চলে এবং সুস্থ হবার আশা প্রায় নেই| অবশ্য ১০মে বৃহস্পতির দৃষ্টি অস্ত্র প্রচারের পর সাময়িক সুস্থতা দিতে পারে| তবে তত্বগত ভাবে লগ্ন, চন্দ্র ও রবি থেকে বিচারের কথা বলা হলেও, সাধারণতঃ লগ্ন ও চন্দ্র থেকেই বিশ্লেষণ করা হয়; রবিকে ধরা হয় না|

১৭নং নিয়ম
জ্যোতিষ শাস্ত্রে বেশ কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে; যেমন উত্তর কালামৃত গ্রন্থে ৬ষ্ঠ ভাবস্থ শুক্রকে, মকর লগ্নের বৃহস্পতিকে (৩য় ও ১২শ ভাবাধিপতি ), লগ্নের ৮মস্থ বৃহস্পতিকে এবং লগ্নের ৮মে বুধের অবস্থানকে শুভ বলা হয়েছে। কিন্তু লগ্নের ৮মে স্থিত বৃহস্পতিকে অনেক জ্যোতিষীই শুভ বলে মানতে রাজি নন যদি না ঐ বৃহস্পতি ৮ম ভাবে থেকে স্বক্ষেত্রে বা তুঙ্গীক্ষেত্রে অবস্থিত হয়। এভাবে দেখলে বৃষলগ্নের ধনুরাশিতে স্থিত বৃহস্পতি হয় ত শুভ ফল দান করতে পারে যেহেতু ধনুরাশি বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ক্ষেত্র। জ্যোতিষীদের এই ভিন্নমত নিশ্চয়ই তাদের অভিজ্ঞতা লব্বì। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অনুশীলনের জন্য শুধু গ্রহ-অবস্থানের বিবরণ দেওয়া হচ্ছে। কুণ্ডলীটি অনায়াসে এঁকে নেওয়া যায়। লগ্ন বৃশ্চিক, মকরে কেতু, কুম্ভে শনি, মিথুনে বৃহস্পতি, কর্কটে রাহু, সিংহে বুধ, মঙ্গল, চন্দ্র, কন্যায় রবি ও তুলায় শুক্র। এখানে বৃহস্পতি ( ২য় ও ৫ম ভাবের অধিপতি হওয়ায় যথেষ্ট শুভ ) লগ্নের ৮মে মিথুনে অবস্থিত। কিন্তু বৃহস্পতির দশায় ও মঙ্গলের অন্তদ্র্দশায় জাতকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহ্রপতির দশায় ও লগ্নপতির অন্তদ্র্দশায় মৃত্যু হ'লে বৃহস্পতিকে শুভ বলে মেনে নেওয়া শক্ত। এখানে লক্ষণীয় যে মঙ্গল লগ্নপতি হলেও ৬ষ্ঠ পতি এবং ৬ষ্ঠ স্থান মঙ্গলের মূলত্রিকোণ। অতএব মঙ্গলের ৬ষ্ঠপতিত্ব দোষ ভালই থাকবে। আবার মঙ্গল ৮ম পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একপাশে রাহু ও অন্যপাশে রবির মধ্যবর্তী; অতএব পাপ কর্তরী যোগে পীড়িত হওয়ায় যথেষ্টই অশুভ। এই মঙ্গল লগ্ন পতি হলেও মৃত্যুকারক হতেই পারে। বৃহ্রপতি যে রাশিতে (মিথুনে) রয়েছে সেই রাশির অধিপতি (sign dispositor) বুধ মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বৃহস্পতিও পরোক্ষে মৃত্যুকারক হয়েছে। বৃহস্পতি ২য় পতি (নিধন স্থান) হয়ে ৮মে থাকায় মারক হিসাবে কাজ করেছে। অতএব সব ক্ষেত্রে ৮মে স্থিত বৃহস্পতিকে সব দিক থেকে শুভ বলা যায় না।

১৮নং নিয়ম
(ক) জন্মকুণ্ডলীতে নৈসর্গিক অশুভ বা পাপগ্রহের পক্ষে সব চেয়ে ভাল হচ্ছে ৩য়, ৬ষ্ঠ, ১০ম ও ১১শ ভাবে অবস্থিত হওয়া। এই ভাব গুলিকে উপচয় বলা হয় এ কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। এখানে শুভ অশুভ সব গ্রহই কিছু না কিছু ভাল ফল দান করে।
(খ) ১২শ একটা দুঃস্থান হলেও এখানে শুক্রের অবস্থান শুভ যদি ঐ শুক্র রাশিচক্রে বা নবাংশে শনির ঘরে অবস্থিত না হয় বা অশুভ গ্রহ দ্বারা পীড়িত না হয়। তবে ‘ভাবার্থ রত্নাকর’-এর মতে মেষ লগ্নের ক্ষেত্রেই ১২শে শুক্র শুভ ফলপ্রদ, যেহেতু মেষের ১২শে মীন লগ্নে শুক্র তুঙ্গী হয়।
(গ) শনি স্বক্ষেত্রস্থ বা তুঙ্গী হলে অথবা বৃহস্পতির ঘরে থাকলে শুভ ফল প্রদান করে বলে জ্যোতিষীরা মনে করেন।
(ঘ) ২য় ও ৭ম স্থানকে মারক স্থান বলা হয়। রবি ও চন্দ্র ২য় বা ৭ম ভাবাধিপতি হলেও মারক হয় না বলা হয়েছে। তবে রবি ও চন্দ্র দুর্বল হলে এটা কতটা খাটবে বলা শক্ত। ৭ম এর থেকে ২য় পতির মারকত্ব অনেক বেশী। ২য় ও ৭ম পতি ছাড়াও যে সব গ্রহ ২য় বা ৭ম-এ (বিশেষতঃ ২য়ে) অবস্থিত হয় বা যে সব গ্রহ এই সব গ্রহের সঙ্গে সম্বন্ধ যুক্ত হয়, তাদের দশা বা অন্তর্দশা মারক হতে পারে। ২য় ও ৭ম স্থান যেহেতু মারক স্থান, ৭ম এর ৭ম বা ২য়ের ২য় বোঝাবে মারকের মারক স্থান অর্থাৎ আয়ু স্থান। এই নিয়মে অনেক সময়েই কোন ভাবের কারকত্ব বোঝা যায়। ৯ম ভাগ্যস্থান। ৯ম এর ১২শ (৮ম স্থান) ভাবের অর্থ ভাগ্য স্থানের ব্যয় স্থান অর্থাৎ দুর্ভাগ্য স্থান। এই জন্যই ৮ম স্থান দুঃস্থান গুলির মধ্যে সব চেয়ে খারাপ।
(ঙ) কোন ভাবে অবস্থিত গ্রহ, শুভ বা অশুভ যাই হোক, সেই ভাবের ফল সব চেয়ে বেশী দেয়। সেই ভাবে দৃষ্টিদান কারী গ্রহ তার চেয়ে কম ফল দেয় এবং সেই ভাবের অধিপতি ফল দেয় সবচেয়ে কম। সব ভাব সম্বন্ধেই এই নিয়ম খাটে।

১৯নং নিয়ম
শুক্র ও শনি যদিও পরস্পরের মিত্র তবু একের দশা ও অন্যের অন্তদ্র্দশায় ফল খুব অদ্ভুত রকমের হয়। যদি জন্মকুণ্ডলীতে শনি ও শুক্র খুব ভালো ঘরে অবস্থান করে ও তাদের বল বেশী হয়, তবে দশা-অন্তর্দশার ফল খুব খারাপ হবে বলে জ্যোতিষীরা বলেন। এ নিয়মটা সাধারণ নিয়মের ঠিক বিপরীত। তবে এই নিয়ম সতর্কতার সঙ্গে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রয়োগ করা উচিত।

২০নং নিয়ম
গ্রহ দুর্বল হলে কার্যতা ফল দিতে পারেনা বলে বলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আলোচিত সব কটি কারণকে একসঙ্গে দেখলে বলা যায় একটি গ্রহ দুর্বল হয় গ্রহটি - (ক) নীচস্থ হলে, (খ) শত্রুর ঘরে অবস্থান করলে, (গ) দুঃস্থানে অবস্থান করলে, (ঘ) অশুভ গ্রহ দ্বারা দৃষ্ট হলে, (ঙ) অশুভ গ্রহের সঙ্গে অবস্থান করলে, (চ) অস্তগত হলে, (ছ) নবাংশে নীচস্থ, শত্রুগৃহগত বা দুঃস্থানে থাকলে, (জ) পাপকর্তরী যোগ দ্বারা পীড়িত হলে, (ঝ) রাশিসন্ধি বা ভাবসন্ধিতে অবস্থান করলে, (ঞ) গ্রহটি যে রাশিতে অবস্থিত তার অধিপতি দুর্বল বা দুঃস্থানগত হলে, (ট) গ্রহটি অশুভ নক্ষত্রে অবস্থান করলে। স্পষ্টতই এগুলির বিপরীত কারণে কোন গ্রহ বলশালী হয়।

 

গ্রহ শক্তিশালী হলে যে কার্যত ফল দিতে সাহায্য করে, চিত্র ১৩(২) এবং ১৩(৩) তে দেখান দুটি কুণ্ডলীর মাধ্যমে সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হবে। প্রথমটিতে জাতকের জন্ম সময় ১৯১০ খৃষ্টাব্দের ১৫ ই অক্টোবর সকাল ১০টা নেবং ২য় টির জন্ম সময় ১৯৩৫ খৃষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল রাত ৯ টায় দিল্লির কাছে। প্রশ্ন হল, এই দুই জাতকের কি সন্তান হবে ? প্রথমটির ৫ম ভাবের ( সন্তান স্থান ) অধিপতি বৃহ্রপতি লগ্নের ১২শে (দুঃস্থানে) শত্রুর ঘরে কেতুর সঙ্গে অবস্থিত এবং শনি ও রাহুর দ্বারা দৃষ্ট। ৫ম স্থানটি রবি, মঙ্গল, বুধ (৮ম পতি) ও শুক্র (৭ম ও ১২শ পতি) দ্বারাও দৃষ্ট। চন্দ্র থেকে বিচার করলেও দেখা যাবে ৫ম পতি বুধ নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ( যদিও স্বক্ষেত্রে ) ৮মে অবস্থিত। খুব স্বাভাবিক কারণেই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে এই জাতকের কোন সন্তান হবে না। এবং বাস্তব ক্ষেত্রেও একাধিক বিবাহ যোগে আবদ্ধ হলেও তার কোন সন্তান হয় নি। ১৩(৩) নং কুণ্ডলীতে বৃহস্পতি বক্রী হয়ে ১২শে অবস্থিত এবং রবির দ্বারা দৃষ্ট। তবে চন্দ্র থেকে দেখলে ৫ম পতি শুক্র (মকর রাশির ক্ষেত্রে রাজযোগকারী গ্রহ) ৫মে স্বক্ষেত্রে অবস্থিত, এটা নিশ্চয়ই একটি সম্ভাবনাময় দিক। এই জাতকের দুটি সন্তান হয়েছে। এর অন্য একটি গুরুত্ব পূর্ণ কারণ আছে যেটা এখনও বিশ্লেষণ করা হয় নি। ১৩(২) নং চিত্রে বৃহ্রপতি (সন্তান কারক গ্রহ) পূর্বে আলোচিত কারণ ছাড়াও দুর্বল তার কারণ বৃহস্পতি রবির খুব কাছে হওয়ায় দ্রুতগামি (accelerated motion) হয়েছে (৫ম অনুচ্ছেদ) এবং এতে বৃহ্রপতি অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় কারক গ্রহ হিসাবে ফল দান করতে পারে নি। কিন্তু ১৩(৩) কুণ্ডলীতে বৃহ্রপতি বক্রী হওয়ায় চেষ্টাবল (৭ম অনুচ্ছেদ) যুক্ত হয়েছে এবং শক্তি সঞ্চয় করেছে। এখানে বৃহ্রপতি রবি থেকে দূরে থাকায় দ্রুতগামীও নয়। ফলে কারক গ্রহ তুলনামূলক ভাবে অনেক শক্তিশালী এবং এই সব কারণেই ফলদায়ক হয়েছে। এখান থেকে অপর একটি শিক্ষণীয় বিষয় হল, চন্দ্র থেকে কুণ্ডলীর বিচার খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং শুধু একটিমাত্র কারণের উপর নির্ভর করে ফল বলা ঠিক নয়। এখানে বৃহ্রপতি দুই ক্ষেত্রেই ১২শে (দুঃস্থানে) অবস্থিত এবং শুধু এ কারণেই বলা উচিত নয় যে দু ক্ষেত্রেই কোন সন্তান হবে না।

 

দীপক সেনগুপ্ত
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১১

(চলবে)

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।