%20karak%20bhabanashya.jpg)
%20karak%20bhabanashya.jpg)
চিত্র ১৩(৫) ও ১৩(৬)-এ দুটি
উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে। ১৩(৫) নং ছকে লগ্ন কুম্ভ এবং ৭ম পতি
রবি ৬ষ্ঠে। ৭ম পতি দুঃস্থানে রয়েছে ঠিকই কিন্তু ১০মে অবস্থিত
বৃহস্পতি দ্বারা দৃষ্ট। এবং শুক্র ৭মে অবস্থিত হলেও কুম্ভ
লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র রাজযোগকারী গ্রহ (৫ম পতি ও ১০ম পতি),
তার ৭ম স্থিতি অবশ্যই ভাল। এছাড়াও শুক্র স্থির রাশিতে (
সিংহ স্থির রাশি - ৩য় অনুচ্ছেদ ) অবস্থিত হওয়ায় স্নেহ ও
ভালবাসার স্থিরত্ব নির্দেশ করে। চন্দ্র থেকে বিচার করলে
দেখা যাবে ৭ম পতি মঙ্গল ৪র্থ কেন্দ্র সিংহ রাশিতে লগ্নপতি
( চন্দ্র লগ্নের অধিপতি ) শুক্রের সঙ্গে অবস্থান করছে -
এটা খুবই ভাল। এ ছাড়া ৭ম পতি মঙ্গল ৭ম ঘরে দৃষ্টি দেওয়ায়
৭ম ভাবটি শক্তিশালী হয়েছে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে ছকটিতে
কারক গ্রহ শুক্র ৭মে শত্রুগৃহে এবং রবি ও কেতুর মধ্যে অবস্থান
করা ( পাপকর্তরী যোগ ) সত্বেও এক্ষেত্রে জাতকের বিবাহ খুব
সুখের হয়েছে।
চিত্র ১৩(৬)-এ দেখান ছকটিতে
কারক গ্রহ শুক্র ৭মে মঙ্গলের ঘরে অবস্থিত এবং তুঙ্গী বৃহস্পতি
( ৮ম পতি ও ১১শ পতি ) দ্বারা দৃষ্ট। আগের কুণ্ডলীতে শুক্র
রাজযোগকারী গ্রহ ছিল; কিন্তু এখানে শুক্র লগ্নপতি ঠিকই কিন্তু
৬ষ্ঠ পতিও বটে এবং ৬ষ্ঠ স্থান তুলা রাশি মূলত্রিকোণ হওয়ায়
শুক্রর অশুভত্ব যথেষ্ট রয়েছে। এ ছাড়াও শুক্র পাপকর্তরী যোগের
দ্বারা ক্লীষ্ট। ৭ম পতি মঙ্গলের ৮মে অবস্থান মোটেই ভাল নয়,
রাহুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় মঙ্গলের অশুভত্ব আরও বৃদ্ধি
পেয়েছে। চন্দ্র লগ্ন থেকে দেখলেও চন্দ্র লগ্নের ৭মে অবস্থিত
বৃহস্পতি ৩য় ও ১২শ পতি। এ ছাড়াও চন্দ্রের ৭ম স্থান শনির
১০ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট। এর কোনটিই ভাল নয়। সব মিলিয়ে
ফল হল মূলতঃ মঙ্গল রাহুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৮মে থাকায় এই জাতিকার
স্বামী বিয়ের ১ বছরের মধ্যেই মারা যান। আলোচ্য দুটি জন্মকুণ্ডলীতেই
শুক্র ৭মে অবস্থিত ; কিন্তু ‘কারকো ভাবনাশকঃ’ সূত্রটি ঠিক
আক্ষরিক অর্থে দুটি ছকে সমান ভাবে ফলপ্রদ হল না।
(খ) অপরটি ‘ভাবৎ ভাবম’। এর অর্থ
কোন ভাব বিচারের সময় সেই ভাব এবং একই সঙ্গে সেই ভাব থেকে
আরও তত রাশি পরে যে ভাব সেটাও বিচার্য। উদাহরণ স্বরূপ, সন্তান
স্থান বিচার করতে হলে লগ্ন থেকে ( বা চন্দ্র থেকে ) ৫ম ঘর
দেখাই নিয়ম। কিন্তু এই নিয়ম অনুসারে ৫ম ঘর থেকে আরও ৫ম এগিয়ে
৯ম ঘরও বিচার্য। ঠিক একই ভাবে পিতৃস্থান বিচার করতে হলে,
৯ম ভাব এবং ৯ম থেকে ৯ম অর্থাৎ ৫ম ভাবও বিবেচ্য। এই কারণে
আয়ু বিচারের জন্য ৮ম স্থান বিচার করা হয় এবং ৮ম থেকে ৮ম
অর্থাৎ ৩য় ভাবও বিচার করে দেখা হয়।
এই নিয়মগুলির সারবত্তা আছে নিশ্চয়ই, তবে অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর
করে সঠিক ভাবে প্রয়োগ না করলে অনেক সময়ে ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে
পৌঁছানর সম্ভাবনা থাকে।
২৪নং নিয়ম
এটিকে আলাদা ভাবে একটি নিয়ম হিসাবে চিহ্ণিত করতে হয় ত অনেকের
আপত্তি হতে পারে; তবে যেহেতু কুণ্ডলী বিচারে অনেক সময়েই
এটা প্রয়োগ করা হয়, সেই জন্য আলাদা ভাবে এর উল্লেখ করা হল।
৮ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে এক একটি ভাব থেকে এক এক আত্মীয়
স্বজন বা জ্ঞাতিবর্গের বিচার হয়। যেমন লগ্ন থেকে নিজের,
২য় থেকে বিবাহিত সূত্রে প্রাপ্ত আত্মীয় বর্গের, ৩য় থেকে
কনিষ্ঠ ভ্রাতা বা ভগিনীর, ৪র্থ থেকে মাতার, ৫ম থেকে সন্তানের
ইত্যাদি। এইবার ধরা যাক, শ্যালক বা শ্যালিকার বিচার কোন
ঘর থেকে হবে ? যেহেতু ৭ম জায়া ভাব, অতএব ৭ম থেকে ৩য় অর্থাৎ
৯ম স্থান থেকে শ্যালক বা শ্যালিকার বিষয়টি বোঝা যাবে। ৪র্থ
ভাব ( মাতৃস্থান ) থেকে ৩য় অর্থাৎ ৬ষ্ঠ ভাব থেকে, মাতার
ভ্রাতা বা ভগিনী নির্দেশ করে। সে জন্য ৬ষ্ঠ স্থান থেকে মাসী
বা মামা বাড়ির বিচার হয়। এই নিয়ম প্রয়োগ একটু সতর্ক ভাবে
করতে হবে। যেমন ৪র্থ ভাব মাতাকে নির্দেশ করে, তা হলে ৪র্থের
৭ম অর্থাৎ ১০ম ভাব পিতাকে নির্দেশ করা উচিৎ। কিন্তু আমরা
জানি যে পিতার বিচার ১০ম নয়, ৯ম ভাব থেকে হয়। কিছু মূল বিষয়
ধরে নিয়ে বাকী গুলির বিচার করতে হবে, না হলে ভুল হবার সম্ভাবনা।
৩য় ভাব যেমন ছোট ভাই বা বোনকে নির্দেশ করে, ১১শ ভাব তেমনি
বড় ভাই বা দিদিকে বোঝায়।
%20mamato%20bonke%20biye.jpg)
১৩(৭) নং চিত্রে দেখান কুণ্ডলীটি
উদাহরণ হিসাবে নেওয়া হল। এটি নেওয়া হয়েছে ঐসপ্ত ঋষি নাড়ীঐ
নামক গ্রন্থ থেকে। তামিল ভাষায় রচিত গ্রন্থটি ছাপা হয়েছে
মাদ্রাজ ( বর্তমানে চেন্নাই ) সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আলোচ্য কুণ্ডলীর জাতকটি তার
মামাত বোনকে বিয়ে করেছিল ( তখন হয় ত প্রচলিত ছিল )। কি করে
এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে ? ৪র্থ স্থান মাতাকে নির্দেশ করে;
অতএব ৪র্থ স্থানের ৩য় স্থান ( ৬ষ্ঠ স্থান )মা’র ভাই বা মামাকে
বোঝায়। সেখান থেকে ৫ম ( পুত্র বা কন্যা স্থান ) অর্থাৎ ১০ম
স্থান মামাত বোনকে নির্দেশ করে। ছকটিতে বৃষ লগ্ন থেকে ১০ম
স্থান কুম্ভ রাশিতে পড়েছে। অধিপতি গ্রহ শনি কুম্ভ রাশিতেই
অবস্থিত। আবার জাতকের ৭ম স্থান ( জায়া স্থান ) বৃশ্চিক রাশি।
তার অধিপতি মঙ্গল বৃশ্চিকেই অবস্থিত। শনি ( মামাত বোন )
১০ম দৃষ্টিতে ৭ম স্থান এবং ৭ম পতি মঙ্গলকে দৃষ্টি দিচ্ছে
এবং ৭মে অবস্থিত মঙ্গল ৭ম পতি হয়ে শনিকে দৃষ্টি দিচ্ছে (
মঙ্গলের ৪র্থ দৃষ্টি )। লক্ষ্যণীয় যে বিবাহের কারক গ্রহ
শুক্র যে রাশিতে রয়েছে ( মেষ রাশি ) তার অধিপতি গ্রহ (sign
dispositor) হল মঙ্গল, যেটি জাতকের ৭ম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়াও
শনি ৩য় দৃষ্টিতে জায়া কারক গ্রহ শুক্রকে দেখছে। এর ফলে স্পষ্টতই
জাতকের ৭ম ভাব, ৭ম পতি, ১০ম ভাব, ১০ম পতি এবং জায়া কারক
গ্রহ শুক্র এদের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
চন্দ্র লগ্নের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের ফলটাও খুব কৌতূহলোদ্দীপক।
চন্দ্র লগ্ন থেকে ১০ম ভাবের অধিপতি গ্রহ ( কর্কট রাশির অধিপতি
) চন্দ্র নিজেই এবং সেটা চন্দ্র লগ্নে অবস্থিত। চন্দ্র লগ্নের
অধিপতি শুক্র (জায়া কারকও বটে) ৭মে ( জায়া স্থান ) এবং ৭ম
পতি মঙ্গল ২য়ে ( বিবাহ সূত্রে প্রাপ্ত আত্মীয় ) অবস্থিত।
অতএব ঘটনাটি বাস্তবায়িত হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
২৫নং নিয়ম
কোন কুণ্ডলী বিচারের সময় প্রথমেই লগ্ন, রবি ও চন্দ্রের অবস্থান
এবং বল নির্ণয় প্রয়োজন; কারণ এই তিনটির বলই কুষ্ঠীটিকে সাধারণ
ভাবে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কেন্দ্র স্থানে ( লগ্ন,
৪র্থ, ৭ম ও ১০ম ) গ্রহের অবস্থান, বিশেষ করে শুভ গ্রহের
অবস্থান, ছকটিকে আরও জোরাল করে। পরস্পরের কেন্দ্রে অবস্থিত
সব গ্রহই একে অন্যকে প্রভাবিত করে।
২৬নং নিয়ম
একটা কথা বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে। জ্যোতিষশাস্ত্র গণিতের
মত একই নিয়মে একক ফল নির্দেশ করে না। এই শাস্ত্র সৃষ্টির
কিছু অব্যক্ত বিধান এবং কালের গতির উপর নির্ভরশীল। আমরা
জানি এই যুগে সাধারণ ভাবেই মানুষের গড় আয়ু অনেক বেশি। এটা
এ কালের নিয়ম। এর মানে এই নয় যে গ্রহের গুণাগুণ বা কারকত্ব
একালে বদলে গিয়েছে। জ্যোতিষে সবচেয়ে বেশি যেটা বিচার্য সেটা
হল দেশ, কাল ও পাত্র। ১০০ বছর আগে লটারিতে ১০০০ টাকা পেলে
সেটা বড় ধরণের প্রাপ্তি ছিল, কিন্তু এখন ১০০০ টাকা তেমন
কোনো প্রাপ্তি নয়। যে গ্রহ সংস্থানে এখানে কোন ব্যক্তির
রং ফর্সা হয়, বিদেশে একই গ্রহের অবস্থানে কোন ব্যক্তির গাত্রবর্ণ
অনেক বেশি ফর্সা হতে পারে। এই নিয়ম অনেকে স্বীকার করেন না।
কিন্তু দেশ কাল পাত্র বাদ দিয়ে এই শাস্ত্রের বিচার সম্পূর্ণ
হয় বলে মনে হয় না।
২৭নং নিয়ম
পরিশেষে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। শাস্ত্র বাক্য
আক্ষরিক অর্থে মেনে চললে, অনেক সময়েই ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছতে
হতে পারে এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ
একটা শ্লোকের উল্লেখ করা হচ্ছে। ‘উড়ুদায়প্রদীপম’ জ্যোতিষশাস্ত্রে
একটি অতি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। সেই গ্রন্থে ‘দারিদ্রযোগপ্রকরণম’
অধ্যায়ে বলা আছে -
রবিণা সহিতো মন্দঃ শুক্রেণ চ
যুতোপি বা।
এষ দারিদ্রযোগো বৈ সমুদ্রমপি শোষয়েৎ। ।
অর্থাৎ শুক্র, শনি ও রবি এই
তিন গ্রহ একত্রে যুক্ত থাকলে এমন দারিদ্র যোগ হয় যে সমুদ্রও
শুষ্ক হয়ে যায়। ১৩(৮) নং চিত্রে একটি জন্ম ছক দেখান হল।
লগ্ন মেষ এবং সঙ্গে মঙ্গল ও বুধ; ২য়ে বৃষ রাশিতে কেতু; ৮মে
বৃশ্চিক রাশিতে রাহু; ১০মে মকর রাশিতে বৃহস্পতি; ১১শে কুম্ভে
চন্দ্র এবং ১২শে মীন রাশিতে শুক্র, শনি ও রবি। এখানে শুক্র,
শনি ও রবি শুধু একত্রে নয় ১২শে ( দুঃস্থানে ) অবস্থিত। অতএব
এই জাতকের অসহনীয় দারিদ্রে কষ্ট পাওয়ার কথা। বাস্তবে জাতক
একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, যথেষ্ট স্বচ্ছল ও বিত্তবান। তবে
কি শাস্ত্র বাক্য ভুল ? তা ঠিক নয়। এখানে দারিদ্রযোগ হয়
নি তার কারণ অন্য। আলোচ্য কুণ্ডলীতে দারিদ্র যোগের সঙ্গে
অন্য অনেক ভাগ্য যোগও থাকায় দারিদ্র যোগের ফল ফলে নি।