প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

জ্যোতিষশাস্ত্র প্রবেশিকা (ন্যান্য অনুচ্ছেদ)

অনুচ্ছেদ ১৪
কয়েকটি বিশেষ যোগ

প্রথম অংশ

পাশ্চাত্য জ্যোতিষের সঙ্গে প্রাচ্য জ্যোতিষের যে কয়েকটি মূল বিষয়ে তফাৎ দেখা যায় তার মধ্যে একটি প্রধান হলো কোন জন্মকুণ্ডলীতে কিছু গ্রহ বিন্ন্যাসের জন্য বিশেষ যোগ। অর্থাৎ লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কোন কোন গ্রহের বা গ্রহ সমষ্টির কয়েকটি নির্দিষ্ট রাশিতে অবস্থান কিছু ফলের নির্দেশক হিসাবে কাজ করে। এই যোগ বহু ধরনের হতে পারে কিন্তু এখানে কয়েকটি মাত্র গুরুত্বপূর্ণ যোগের আলোচনাই করা হবে। বিশদ ভাবে জানার জন্য অন্যান্য গ্রন্থের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে; যেমন (Three hundred important combinations by B. V. Raman)। এই যোগ তিন রকমের হতে পারে। রাজযোগ - এতে সম্মান প্রভুত্ব ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়; ধনযোগ - এটা অর্থ ও ঐশ্বর্য বর্ধক এবং তৃতীয়টি হচ্ছে জ্ঞানযোগ - এতে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। কয়েকটি যোগকারক গ্রহের অবস্থান ও ফলাফল নীচে দেওয়া হলো। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা দরকার। বর্ণনা অনুযায়ী গ্রহের অবস্থান মিলে গেলেই বর্ণিত ফল সেভাবে নাও মিলতে পারে। এটা দেখতে হবে যে ফলদায়ক গ্রহ যেন যথেষ্ট বলশালী হয় এবং অন্য অশুভ গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত না হয়। যোগকারক গ্রহ ফলপ্রদ হবে তাদের বা তাদের সঙ্গে সম্বন্ধ যুক্ত গ্রহের দশা অন্তর্দশায়।

(১) গজকেশরী যোগ ( বা জীব যোগ ) - যদি বৃহস্পতি চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে থাকে তাকে গজকেশরী যোগ বলে।
ফল - সৌভাগ্যের অধিকারী, দীর্ঘস্থায়ী সম্মান, দীর্ঘ জীবন, আবেগ প্রবণ ও বুদ্ধিমান।
বৃহস্পতি ও চন্দ্রের বলের উপর ফলের হ্রাস বা আধিক্য নির্ভর করে। দুটি কুণ্ডলীর চন্দ্র ও বৃহস্পতির অবস্থান ধরা যাক। প্রথমটিতে চন্দ্র কর্কটে স্বক্ষেত্রে এবং বৃহস্পতি চন্দ্রের ১০ম কেন্দ্র মেষ রাশিতে অবস্থিত। দ্বিতীয়টিতে চন্দ্র বৃশ্চিকে নীচস্থ ও বৃহস্পতির অবস্থান বৃশ্চিক থেকে ৪র্থ কেন্দ্র কুম্ভে। স্পষ্টতই প্রথমটিতে গজকেশরী যোগের ফল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

এটা খুবই সহজবোধ্য যে, যেহেতু চন্দ্র ৩০ দিনে রাশিচক্রকে একবার ঘুরে আসে, অতএব বৃহস্পতি থেকে কেন্দ্রে ( অর্থাৎ বৃহস্পতির সঙ্গে, ৪র্থে, ৭মে বা ১০মে ) চন্দ্রের অবস্থানের সম্ভাবনা খুবই বেশী। তাই বহু লোকের জন্ম কুণ্ডলীতে গজকেশরী যোগ থাকতে পারে। সেই জন্য নিতান্ত আক্ষরিক অর্থে চালিত না হয়ে দেখতে হবে বৃহস্পতি ও চন্দ্রের বল কতটা এবং এই দুটি গ্রহ কোনো অশুভ গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট বা অশুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত কি না। ফল সেই ভাবেই ফলবে।

গজকেশরী যোগ যে শুভ ফল দেয় সেটা আমরা পরে দেখব ( মহাত্মা গান্ধীর জন্ম কুণ্ডলী )। কিন্তু এই যোগ আক্ষরিক অর্থে ঘটলেই, অর্থাৎ চন্দ্র ও বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে থাকলেই যে শুভ ফল হবে সেটা মোটেই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট অশুভ ঘটতে পারে। উদাহরণ হিসাবে Charles Mansion -এর জন্ম ছকটি বিচার করা যেতে পারে। এই ব্যক্তিটি Tate-LaBianca খুনী নামে কুখ্যাত। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দের অগাষ্ট মাসে ( বিশদ ভাবে জানার জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে )। লোকটি বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে এখনও কারাগারে বন্দী। ১৯৩৪ সালের ১২ ই নভেম্বর বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে Charles Mansion-এর জন্ম। জন্মস্থান Cincinnati, Ohio, USA. Time Zone : 5-0-0 W; Day Light Saving : Nil. চিত্র ১৪(১) তে জন্ম কুণ্ডলীটি দেখান হয়েছে।

চিত্র ১৪(১)


এখানে শুধু গজকেশরী যোগের অংশ টুকু আলোচনা করা হচ্ছে। এখানে স্পষ্টতই চন্দ্র ও বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে রয়েছে; অতএব নিয়ম অনুযায়ী গজকেশরী যোগ হয়েছে। অথচ জাতকের জীবনের কি মর্মান্তিক পরণতি ! একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, চন্দ্র রাহুর সঙ্গে প্রায় একই ডিগ্রিতে রয়েছে এবং শনির সঙ্গে শত্রু ক্ষেত্রে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিও শনির দ্বারা দৃষ্ট ও রাহুর নক্ষত্রে স্থিত। ছকটিতে একমাত্র মঙ্গল ছাড়া সব কটি গ্রহ শনির দ্বারা হয় দৃষ্ট না হয় শনির সঙ্গে একই ঘরে রয়েছে। অতএব গজকেশরী যোগ হলেই ফল শুভ হয় না। এখানে অন্য একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, মঙ্গল ছাড়া সব গ্রহই লগ্নের কেন্দ্রে রয়েছে। সাধারণ ভাবে বলা হয় যে, কেন্দ্রস্থিত গ্রহ ( বিশেষ করে শুভ গ্রহ ) কুণ্ডলীকে শক্তিশালী করে। অবশ্য শক্তিশালী সব সময় শুভ অর্থে হবে তা ঠিক নয়, অশুভ ভাবও শক্তিশালী হয়ে জন্ম কুণ্ডলীতে থাকতে পারে।

(২) সুনফা যোগ - চন্দ্রের ২য় ঘরে রবি ছাড়া অন্য গ্রহ ( অবশ্যই রাহু ও কেতু বাদ ) থাকলে এই যোগ হয়।
ফল - স্ব-অর্জ্জিত সম্পত্তি, বুদ্ধিমান, সুনাম ও সম্মানের অধিকারী। সুনফা যোগ সাধারণতঃ কোন ব্যক্তির আর্থিক দিকই বেশী নির্দেশ করে।
এখানেও চন্দ্রের ও তার ২য় ঘরে অবস্থিত গ্রহের বলের উপর ফলের হ্রাস বা আধিক্য নির্ভর করবে। চন্দ্রের ২য় ঘরে অনেক গ্রহ থাকলেও তার ফল শুভ হবে তার কোন অর্থ নেই। দৃষ্টান্তস্বরূপ চিত্র ১৪(২) ও চিত্র ১৪(৩) কুণ্ডলী দু’টি নেওয়া যাক।

চিত্র ১৪(২)

চিত্র ১৪(৩)

চিত্র ১৪(২) - এর ছকটিতে লগ্ন-কুম্ভ; মেষে শনি, রাহু; কন্যায় চন্দ্র; তুলায় বৃহস্পতি, কেতু, বুধ, রবি, শুক্র ও মঙ্গল। অর্থাৎ চন্দ্রের ২য় ঘরে ৫ টি গ্রহ ( কেতু বাদ দিয়ে ) অবস্থিত। এটা দেখে আশান্বিত হবার কারণ নেই। একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে চন্দ্রের ২য় ঘর তুলায় অনেক অশুভ শক্তির সমাবেশ হয়েছে। কারণ এখানে বৃহস্পতি কেতুর সঙ্গে যুক্ত এবং শনি ও রাহুর দ্বারা দৃষ্ট। রবি নীচস্থ। শুক্র মূলত্রিকোণ তুলায় থাকলেও অন্যান্য অশুভ শক্তির প্রভাবে ক্লীষ্ট। বুধ ৮ম পতি হয়ে ৯মে এবং অশুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত ও অশুভ গ্রহদৃষ্ট। ফলে জাতক একটি অতি সাধারণ লোক এবং সুনফা যোগের কোন ফলই ফলে নি। চিত্র ১৪(৩) এ দেখান কুণ্ডলীতে চন্দ্রের ২য়ে বুধ ১১শে অবস্থিত এবং কোন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট নয়। বুধ ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি হওয়া সত্বেও জাতকের বুধের দশায় সুনফা যোগের প্রায় সব ফলই ফলেছে। শুধু আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে যে ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে এই ছক দুটি তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

(৩) অনফা যোগ - চন্দ্রের ১২শে রবি ছাড়া অন্য গ্রহ থাকলে ( রাহু কেতু বাদে ) অনফা যোগ হয়।
ফল - সুন্দর শারীরিক গঠন, ভদ্র, নম্র, সৌখিন, শেষ জীবনে নিরাসক্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি।
এখানেও একই ভাবে গ্রহদের প্রকৃতি ও বল বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ধরা যাক, লগ্ন তুলা; চন্দ্র কুম্ভ রাশিতে এবং বৃহস্পতি ও শনি মকরে। এখানেও যোগের ফল সে ভাবে ফলবে না কারণ বৃহস্পতি নীচস্থ। বৃহস্পতির যদিও নীচভঙ্গ হয়েছে কারণ বৃহস্পতি যে রাশিতে রয়েছে তার অধিপতি অর্থাৎ শনি লগ্ন থেকে কেন্দ্রে অবস্থিত। তা হলেও বৃহস্পতি সে ভাবে ফল দেবে না। তবে শনি এখানে রাজযোগকারী গ্রহ হয়ে স্বক্ষেত্রে থাকায় জাতকের শনির দশা ভাল যাবার কথা।

(৪) কেমদ্রুম যোগ - জন্মকুণ্ডলীতে চন্দ্রের দুই পাশের ঘরে কোন গ্রহ না থাকলে এই যোগ হয়।
ফল - নিম্নমতির লোক, ঠক ও প্রতারক, মানসিক শান্তির অভাব, দুঃখী ইত্যাদি। এক্ষেত্রে অবশ্য লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কোন গ্রহ কেন্দ্রে অবস্থান করলেই এই যোগের অশুভত্ব কেটে যায়। আক্ষরিক অর্থে এই ফল কোন লোককে বলে ফেলা ঠিক না; গ্রহের শুভত্ব, অশুভত্ব, কারকত্ব তার বল ইত্যাদি বিচার করে নিশ্চিত হয়ে তবেই বলা যেতে পারে।

(৫) পঞ্চ মহাপুরুষ যোগ - মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি এই ৫টি গ্রহের কোন একটি জন্মকুণ্ডলীতে লগ্ন থেকে ( অথবা চন্দ্র থেকে ) কেন্দ্রে অবস্থান করে যদি স্বক্ষেত্রে বা তুঙ্গী ক্ষেত্রে অবস্থান করে তবে ঐ প্রত্যেকটি গ্রহের জন্য আলাদা আলাদা যোগ হয়। এই ৫টি যোগ কি কি দেখা যাক।

(ক) মঙ্গল - মঙ্গল যদি যোগকারক হয় অর্থাৎ মঙ্গল যদি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে অবস্থান ক’রে স্বক্ষেত্রস্থ বা তুঙ্গী হয় তবে রুচক যোগ হয়।
ফল - সুন্দর সবল স্বাস্থ্য, সাহসী, বিখ্যাত, পুলিশ বা সেনা বাহিনীর নেতা, দীর্ঘায়ু। মঙ্গল যদি পাপ গ্রহ যুক্ত বা দৃষ্ট হয় তবে মঙ্গল অশুভত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় ঐ মঙ্গল হিংসা ও ঔদ্ধত্যের কারণ হতে পারে।

(খ) বুধ - বুধ যদি একই ভাবে যোগকারক হয় তবে ভদ্র যোগ হয়।
ফল - সুন্দর গড়ন, দীর্ঘায়ু, ধীর ও সংযত বাক।

(গ) বৃহস্পতি - বৃহস্পতি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে স্বক্ষেত্রস্থ বা তুঙ্গী হলে হংস যোগ হয়।
ফল - পবিত্রতা প্রিয়, আভিজাত্যপূর্ণ চেহারা, লোকপ্রিয়।

(ঘ) শুক্র - শুক্র যখন উক্ত ভাবে যোগকারক হয় তখন মালব্য যোগ হয়।
ফল - পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখী, বিদ্বান, ঐশ্বর্য্যশালী, বাহনের মালিক, সুশ্রী।

(ঙ) শনি - শনি যোগকারক হলে শশযোগ হয়।
ফল - দাসদাসী থাকবে, স্বভাব ভাল না হলেও সম্মানের অধিকারী হতে পারে, তবে শুভ গ্রহ বৃহস্পতি বা শুক্রের সঙ্গে যুক্ত হলে ফল খুব ভাল হতে পারে। শনি জাতককে শিল্পপতিও করতে পারে।
সব ক্ষেত্রেই একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। ১০ম হল সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্র। কেন্দ্রে অবস্থানের ক্ষেত্রে এই ১০ম কেন্দ্রে গ্রহ থাকলে যোগ অনেক শক্তিশালী হয়।

চিত্র ১৪(৪)


একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অ্যাডল্ফ্ হিটলারের জন্ম কুণ্ডলী ১৪(৪) নং চিত্রে দেখান হয়েছে। এখানে মঙ্গল কেন্দ্রের ৭মে মূলত্রিকোণে অবস্থিত হওয়ায় প্রবল রুচক যোগ হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলের উপর অশুভ ছায়া স্পষ্ট। মঙ্গল তুঙ্গী রবির ( ১১শ পতি ) সঙ্গে যুক্ত এবং শনির ১০ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট। আগেই বলা হয়েছে ১১শ ভাব থেকে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে দুঃসাহস, গোয়ার্তুমি ইত্যাদিও বোঝায়। এখানে মঙ্গল অশুভ হওয়ায় রুচক যোগ জাতককে তার পরাক্রমের জন্য বিখ্যাত করেছে ঠিকই কিন্তু ইতিহাসে তার স্থান হয়েছে স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী হিসাবে। স্পষ্টতই ফল বিচারের সময় গ্রহের কারকত্ব ও তার উপর অন্যান্য গ্রহের প্রভাব সম্বন্ধেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। এই কুণ্ডলীটি পরে বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।

চিত্র ১৪(৫)

১৪(৫) নং চিত্রে দেখান ছকটি জোসেফ স্ট্যালিনের ( ১৮৭৮ - ১৯৫৩ )। বলশেভিক বিপ্লবী ও সোভিয়েত রাশিয়ার এই রাজনৈতিক নেতা ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন ছিলেন। তার কিছু সংস্কার মূলক নীতির রূপায়নে রাশিয়া অর্থনৈতিক শক্তিতে পৃথিবীর ২য় স্থানে উঠে এলেও পরবর্তী কালে তিনি অনেক বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হন। একদল তাকে নিষ্ঠুর প্রশাসক ও অত্যাচারী হিসাবে চিহ্ণিত করলেও অনেকের কাছে তিনি একজন সফল জননেতা হিসাবে স্বীকৃত। জন্মকুণ্ডলীটিতে মঙ্গল ও শুক্র যথাক্রমে লগ্নের ৭মে তুঙ্গস্থানে এবং লগ্ন কেন্দ্রে স্বক্ষেত্রে অবস্থিত হয়ে যথাক্রমে রুচক যোগ ও মালব্য যোগের সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে মঙ্গল ও শুক্রের যোগকারক হিসাবে এই অবস্থান ( দুই গ্রহের বৈশিষ্ট্য গত পার্থক্যের জন্য ) তাকে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি দিয়েছে। ৩য় স্থান থেকে সাহস, পরাক্রম ইত্যাদির বিচার হয়। এখানে ৩য় ধনু রাশিতে ( অগ্নি রাশি ) রবি ( ১১শ পতি ও অপর একটি অগ্নি রাশি সিংহের অধিপতি ) রাহুর সঙ্গে যুক্ত এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট হয়ে অবস্থিত হওয়ায় এবং শক্তিশালী রুচক যোগের প্রভাবে তার অত্যাচারী মনোভাব থাকতে পারে।
৪র্থ স্থান ও কারক গ্রহ চন্দ্র থেকে মনের বিচার হয়। এখানে ৪র্থ পতি শনি চন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৬ষ্ঠে অবস্থিত এবং কোন শুভ গ্রহের দ্বারাও দৃষ্ট নয়। কোন জন্ম কুণ্ডলীতে চন্দ্রের অবস্থান লগ্ন থেকে ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শে হওয়া এমনিতেই অশুভ; তার উপর শনির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এবং শনির ( ৪র্থ ও ৫ম পতি ) সঙ্গে বৃহস্পতির ( ৩য় পতি ও ৬ষ্ঠ পতি ) স্থান বিনিময় হওয়ায় জাতকের মনকে সংশয়াচ্ছন্ন, বাতিকগ্রস্ত ও অত্যাচারী করে তুলেছে।

(৬) বুধাদিত্য যোগ - রবির সঙ্গে বুধের যোগ হলেই এই যোগ হয়। ৭ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে কোন গ্রহ রবির ১৫ ডিগ্রির মধ্যে এলে অস্তগত (combust) হয় এবং গ্রহটি দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু বুধের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম রয়েছে। রবির থেকে বুধের দূরত্ব ১০ ডিগ্রির কম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যেহেতু বুধ রবির খুব কাছে থেকেই আবর্তিত হয় তাই এই যোগ খুবই সহজ লভ্য।
ফল - অত্যন্ত বুদ্ধিমান, সম্মানিত ও সুনামের অধিকারী। বুধ এবং রবি একই সঙ্গে অবস্থিত হলেই যে ফল ভাল হবে তা নয়। এই যোগ যথাযথ ফল দেবে যদি রবি ও বুধের বল যথেষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে বুধ অগ্নি ও বায়ু রাশিতে সব চেয়ে বেশী নিজেকে প্রকাশ করে। অনেকের মতে এই যোগ বেশী ফলদায়ক হবে যদি বুধ ও রবি মেষ, মিথুন, সিংহ বা কন্যা রাশিতে সংযুক্ত হয়। মেষ রবির তুঙ্গী ক্ষেত্র, মিথুন বুধের স্ব্ক্ষেত্র, সিংহ রবির স্বক্ষেত্র এবং কন্যা বুধের স্বক্ষেত্র ও তুঙ্গীক্ষেত্র। কন্যা যদিও পৃথ্বীরাশি, তবুও বুধের স্বক্ষেত্র ও মূলত্রিকোন বলে এই রাশিতে ভাল ফল দিতে পারে। তবে অধিকাংশই নির্ভর করবে বুধের শক্তির উপর। সেই জন্যই গ্রহের বল নির্ণয় খুব প্রয়োজন। নির্দ্দিষ্ট জন্মকুণ্ডলী বিশ্লেষণের সময় এ সম্বন্ধে আরও আলোকপাত করা যাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই যোগ মেষ রাশিতে, বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রে এই যোগ যথাক্রমে মিথুন ও কন্যা রাশিতে ছিল।

 

দীপক সেনগুপ্ত
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১১

(চলবে)

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।