জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)
অনুচ্ছেদ ১৫
কয়েকটি জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
২.
মেরিলিন মনরো (Marilyn Monroe)
জন্ম
বিবরণ : ১লা জুন, ১৯২৬ খৃষ্টাব্দ; সকাল ৯ - ৩০ মিঃ; স্থান
: Los Angeles, CA, USA; 34 N 04, 118 W 15; Time Zone :
PST 8-0-0 hr West। লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা (balance of
dashaa) : মঙ্গল ৫ বছর ৫মাস ১৬ দিন।
জীবনের কিছু ঘটনা:
জন্ম সময়ে তার নাম
ছিল Norma Jeane Mortenson। তিনি ছিলেন অভিনেত্রী, গায়িকা
এবং মডেল। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে Gladys Pearl Baker ( পারিবারিক
পদবী ছিল মনরো ) এর সঙ্গে Martin E. Mortenson এর বিবাহ
হয় এবং ২ বছর পরেই Gladys এর স্বামী Martin বিবাহ বিচ্ছেদের
জন্য আবেদন করেন। সমস্ত জীবনে মেরিলিন Motenson কে তার বাবা
বলে স্বীকার করেন নি। মা Gladys মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন
এবং আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যও ছিল না। এ অবস্থায় তিনি তার বাবা
মার কাছে মেরিলিনকে রেখে আসেন এবং ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মেরিলিন
সেখানেই ছিলেন। একদিন এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল। মেরিলিনের
কাছে হঠাৎ তার মা Gladys এসে হাজির, তিনি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে
যেতে চান। কিন্তু মেরিলিনের দিদিমা মেরিলিনকে ছাড়তে রাজি
নন, কারণ Gladys মানসিক ভাবে অসুস্থ। ঝগড়া ও তর্কাতর্কির
এক ফাঁকে Gladys মেরিলিনকে একটা বড় ব্যাগের মধ্যে ভরে ফেলেন
এবং চেন আটকে মেরিলিনকে বয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হন। ব্যাগের
মধ্যে ছোট্ট মেরিলিন তখন পরিত্রাহী চীৎকার করে চলেছে।
১৯৩৩ সালে Gladys একটি
বাড়ি কিনে মেরিলিনকে নিয়ে আসেন কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি
মানসিক রোগে আক্রান্ত হন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
মেরিলিন মা'র বন্ধু Grace McKee-র কাছে থাকতে শুরু করেন।
Grace মেরিলিনকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমায় যেতেন এবং বলতেন 'তুমি
একদিন অভিনেত্রী হবে'। পরবর্তী কালে মেরিলিন Grace-এর এই
ভালবাসার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। Grace-ই মেরিলিনের
মনে চলচ্চিত্র সম্বন্ধে কৌতূহল জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু ১৯৩৫
খৃষ্টাব্দে Grace বিয়ে করার পর মেরিলিনের স্থান হয় অনাথ
আশ্রমে। ১৯৩৭ সালে Grace আবার মেরিলিনকে নিজের কাছে ফিরিয়ে
আনেন কিন্তু সেখানে ১১ বছরের মেরিলিন Grace-এর এক আত্মীয়ের
যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নিরুপায় Grace মেরিলিনকে তার এক
পিসিমার কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সেখানেও পিসিমার ছেলে মেরিলিনের
উপর অত্যাচার করে - মেরিলিনের স্থান হয় আর এক কাকিমা Ana
Lower-এর কাছে। এখানেই ১২ বছরের মেরিলিন একটু শান্তি পায়।
১৯৪২ সালে Ana শারীরিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ হযে পড়লে আবার সমস্যার
সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে মেরিলিন প্রতিবেশীর ছেলে Jim-এর সঙ্গে
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক পরিবার মেরিলিনকে
দত্তক হিসাবে গ্রহণ করতে চাইলেও মেরিলিনের মা Gladys রাজী
হন নি। ১৯৪২ সালে ১৬ বছর বয়সে মেরিলিন Jim কে বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের
সময় সৈন্য বাহিনীর ফটোগ্রাফার David Conover একটা পত্রিকার
জন্য মেরিলিনের একটা ছবি তোলেন। ছবিটি প্রশংসিত হয়। এ ভাবেই
মেরিলিনের মডেল দুনিয়ায় প্রবেশ। একাধিক পত্রিকায় তার ছবি
ছাপা হতে থাকে। এদিকে Jim মেরিলিনকে জানিয়ে দেয় তার সঙ্গে
থাকতে হলে মডেলিং ছাড়তে হবে। কিন্তু মডেলিং পেশায় ভবিষ্যতের
সম্ভাবনার কথা ভেবে মেরিলিন Jim এর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের
পথেই হাঁটেন। মডেলিং এর মাধ্যমেই তিনি 20th Century Fox-এর
এক কর্তা ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ; এভাবেই তার চলচ্চিত্রের
জগতে আগমন ঘটে। প্রকৃত পক্ষে এখানেই তার নাম হয় Norma Jeane
থেকে Marilyn Monroe। মেরিলিন জীবনে খ্যাতি এবং স্বীকৃতি
হয় ত অনেক পেয়েছেন কিন্তু অল্প বয়সের বঞ্চনা এবং বিভীষিকাময়
পরিস্থিতি তার জীবনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।
চলচ্চিত্রে তার যাত্রা
শুরু হয় ১৯৫০ সালে The Ashphalt Jungle নামে ছবি দিয়ে। Gentlemen
Prefers Blondes (1953), How to Marry a Millionaire (1954)
ইত্যাদি চলচ্চিত্র তাকে যথেষ্ট সুনাম এনে দেয়। ১৯৫১ থেকে
১৯৬২ সালের মধ্যে অনেক পুরষ্কার তিনি পেয়েছেন। বহু গান তিনি
গেয়েছেন। মা'র মত তিনিও মানসিক বিষাদ ও হতাশায় ভুগতেন। এ
জন্য বেশ কয়েকজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ তার চিকিৎসা করেছেন।
তিনি তিন বার বিয়ে করেছেন। জীবনে তিনি কখনও শান্তি পান নি
এবং অসম্ভব অস্থিরতার মধ্যে তার সমস্ত জীবন অতিবাহিত হয়েছে।
বহু মানুষের সংস্পর্শে তিনি এসেছেন; বহু লোকের সঙ্গে তার
সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। শোনা যায় প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গেও
তার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। ১৯৬২ সালে ১৯শে মে প্রেসিডেন্ট
কেনেডির জন্ম দিনের অনুষ্ঠানে তাকে তাকে শেষ বারের মত জন
সমক্ষে গান গাইতে শোনা যায়। ১৯৬২ সালের ৫ই অগাষ্ট মাত্র
৩৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে অত্যধিক ঘুমের ওষুধ
সেবনই তার মৃত্যুর কারণ। অনেকে বলেন, এটা একটা হত্যাকাণ্ড
এবং প্রেসিডেন্ট কেনেডি, মাফিয়া চক্র এবং সি.আই.এ এই ঘটনার
সঙ্গে জড়িত। যাই হোক, সঠিক কারণ কখনই সন্দেহাতীত ভাবে জানা
যায় নি। অত্যন্ত দুঃখের মধ্য দিয়ে মানুষ হওয়া, হতাশাগ্রস্ত
এবং আকর্ষণীয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যু আজও রহস্যাবৃত।
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
মেরিলিন মনরোর রাশিচক্র ও নবাংশ যথাক্রমে চিত্র ১৫(২)ক এবং
১৫(২)খ তে দেখান হয়েছে।
(১) লগ্ন
কর্কট ও লগ্নপতি চন্দ্র ৭মে মকর রাশিতে অবস্থিত। কর্কট লগ্নের
জাতক জাতিকারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, কৌতূহলী ও চঞ্চল হয়।
স্নায়বিক দৌর্বল্যে আক্রান্ত হবার প্রবণতাও থাকে। আবার লগ্নপতি
৭মে অবস্থানের ফল - স্বামী ( বা স্ত্রীর ) মৃত্যু বা একাধিক
বিবাহ; বিদেশে অসংযত জীবন যাপন; বহু স্থানে গমন ইত্যাদি।
এ সবই সাধারণ ফল এবং অন্যান্য গ্রহের অবস্থানের উপর নির্ভর
করে এগুলির পরিবর্তন হতে পারে। আলোচ্য ছকে লগ্নপতি চন্দ্র
লগ্নকে দৃষ্টি দিলেও শত্রু ক্ষেত্রে শনির ঘরে স্থিত এবং
পাপ কর্তরী যোগের দ্বারা আক্রান্ত। স্বভাবতই শরীর খুব সবল
নয় এবং অল্পতেই অসুখ হবার সম্ভাবনা।
(২) লক্ষণীয় যে, ৯ম
পতি বৃহস্পতি ৯মের ১২শে অর্থাৎ ৮মে ( দুঃস্থানে ) অবস্থিত
হওয়ায় জাতিকার সঙ্গে তার পিতার কোনও সম্পর্কই ছিল না। পিতৃকারক
গ্রহ রবিও শত্রুক্ষেত্রে ৩য় ও ১২শ পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত।
(৩) ৪র্থ স্থান থেকে
মা, মন, গৃহসুখ, বাসস্থান ইত্যাদির বিচার হয়। ৪র্থে বক্রী
শনি অবস্থিত শুধু নয়, ৪র্থ পতি শুক্রকেও শনি দৃষ্টি দিচ্ছে।
শনির উপর বৃহস্পতির দৃষ্টি রয়েছে ঠিকই কিন্তু বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ
পতি এবং ৮ম ঘরে অবস্থিত হবার জন্য তার শুভত্ব খুবই কম। এর
জন্য ৪র্থ ভাব সম্বন্ধীয় বহু বিষয়ে থেকেই তিনি বঞ্চিত থেকেছেন।
মনের কারক গ্রহ চন্দ্র শনির ঘরে এবং ৪র্থ স্থানে শনি অবস্থিত
হওয়ায় তিনি সব সময়েই মানসিক ভাবে বিষাদগ্রস্ত ছিলেন। চন্দ্র
থেকে বিচার করলেও ৪র্থ স্থানে শনির দৃষ্টি রয়েছে এবং ৪র্থ
পতি মঙ্গল ৩য় ও ১২শ পতি বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত।
(৪) ৫ম স্থান থেকে
আবেগ (emotion) অনুভুতি (feeling) ইত্যাদি বিচার্য। মেরিলিনের
৫ম স্থানটির অশুভত্ব চোখে পড়ার মত। লগ্ন থেকে ৫ম স্থান বৃশ্চিক
রাশি শনি ও কেতুর দ্বারা পাপ কর্তরী যোগে ক্লীষ্ট; ৫ম পতি
মঙ্গলও নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ৮মে অবস্থিত। আবার চন্দ্র থেকে
৫ম রাশিতে ৮ম পতি রবি অবস্থিত এবং মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট।
৫ম পতি শুক্রের উপরেও শনির দৃষ্টি রয়েছে। নবাংশ চক্রেও লগ্ন
থেকে ৫ম বৃষ রাশি এবং অধিপতি শুক্র রাহুর সঙ্গে যুক্ত। নবাংশে
চন্দ্র থেকে ৫ম স্থান তিনটি অশুভ গ্রহ শনি, মঙ্গল ও রবির
দ্বারা দৃষ্ট; ৫ম পতি বৃহস্পতিও ৫মের ১২শে কেতুর সঙ্গে যুক্ত
ও রাহুর দ্বারা দৃষ্ট। ৫ম স্থান থেকে মনের নিম্ন স্তরের
অনুভূতিরও (lower human feelings) বিচার হয়। জাতিকার আবেগ
ও অনুভুতি বিভিন্ন ভাবে নানা দিক থেকে জর্জরিত হয়েছে। নবাংশে
মনের কারক গ্রহ চন্দ্র ৮মে বিচ্ছিন্ন ভাবে (in isolation)
অবস্থিত হওয়ায় একাকীত্ব বোধ ও সুখহীন ভাব আরও জোরালো হয়েছে।
(৫) উপরি উক্ত কারণে ৫ম স্থান অশুভ হওয়ায় এবং সন্তানের কারক
গ্রহ বৃহস্পতি ৮মে অবস্থিত হওয়ায় জাতিকা নিঃসন্তান ছিলেন।
তবে ১৯৫৭ সালের ১লা অগাষ্ট মেরিলিনের একটি সন্তান জন্মের
সময়েই মারা যায়। তার তখন বৃহস্পতির দশায় কেতুর অন্তর্দশা
চলছিল। সন্তান কারক বৃহস্পতি রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গলের সঙ্গে
যুক্ত থাকায় হয় ত সন্তান জন্মের কিছুটা সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু
সেটা অবশেষে কার্যকরী হয় নি। লগ্ন থেকে ৫ম স্থান ( সন্তান
স্থান ) বৃশ্চিক রাশির ২য়ে ( মারক স্থান ) কেতু অবস্থিত।
আবার চন্দ্র থেকে ৫ম স্থানের ৮মে ( আয়ু বা নিধন স্থান )
কেতুর অবস্থান। লক্ষণীয়, কারক গ্রহ বৃহস্পতিও নবাংশে কেতুর
সঙ্গে যুক্ত।
(৬) লগ্ন পতি চন্দ্র
( মনেরও কারক গ্রহ ) ৭মে ( জায়া, কাম সম্পর্কিত বিষয় ইত্যাদি
- অনুচ্ছেদ ৮ ) এবং ৭ম স্থানের রাশিপতি শনি ১০মে অবস্থিত
শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় ( ৭ম পতি শনি নিজেও ৪র্থে শুক্রের
ক্ষেত্রে অবস্থিত ) জাতিকার অত্যধিক যৌন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
(৭) মেরিলিনের জীবনে
এত দুখঃ ও বঞ্চনার প্রাথমিক কারণ তার ভাগ্যপতি ( ৯ম পতি
) বৃহস্পতির ৮মে অবস্থান। আবার বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ স্থানেরও অধিপতি
এবং ৬ষ্ঠ স্থান ধনু রাশি বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ( অনুচ্ছেদ
৭ ); অতএব বৃহস্পতির নৈসর্গিক শুভত্বের সঙ্গে অশুভত্বও বিদ্যমান।
এসব সত্বেও মেরিলিনের এত সফলতার কারণ কি ? প্রথমতঃ মঙ্গল
কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে রাজযোগকারী গ্রহ ( ৫ম ও ১০ম পতি -
অনুচ্ছেদ
১০ ), মঙ্গল ৯ম পতি বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সৌভাগ্য
যোগ আরও প্রবল হয়েছে। তবে দু'টি গ্রহই নিকৃষ্টতম দুঃস্থান
৮মে থাকায় শুভত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে ঠিকই কিন্তু নিঃশেষ
হয় নি। দ্বিতীয়তঃ চন্দ্র থেকে বিচার করলে মকর রাশির রাজযোগকারী
গ্রহ শুক্র ( ৫ম ও ১০ম ভাবের অধিপতি ) ৪র্থে কেন্দ্রে অবস্থিত
এবং চন্দ্র লগ্নের অধিপতি শনির দ্বারা দৃষ্ট। এটা খুবই ভাল
যোগ। এটাই তার অসামান্য জনপ্রিয়তার কারণ। চন্দ্র জনসাধারণের
কারক গ্রহ। কিছুটা শনিরও এই কারকত্ব রয়েছে, তবে শনি সাধারণতঃ
দলিত ও নিম্ন বর্গের লোক নির্দেশ করে। চন্দ্র লগ্নের অধিপতি
শনি ১০মে তুঙ্গী হয়ে ( অনেকে অবশ্য মনে করেন, বক্রী গ্রহ
তুঙ্গী হলে তার তুঙ্গত্ব নষ্ট হয় ) রাজযোগকারী গ্রহ ৪র্থে
অবস্থিত শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় জনপ্রিয়তা অবশ্যম্ভাবী।
৪র্থ স্থান জন সংযোগ নির্দেশ করে এবং কারক গ্রহ চন্দ্র।
এখানে আর একটি যোগের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। শনি লগ্ন (
এবং চন্দ্র থেকেও ) তুলা রাশিতে তুঙ্গী ক্ষেত্রে কেন্দ্রে
( লগ্ন থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে এবং চন্দ্র থেকে ১০ম কেন্দ্রে
) অবস্থিত হওয়ায় শশযোগ ( অনুচ্ছেদ ১৪ ) তৈরী হয়েছে। শনি
লগ্ন থেকে ৭ম পতি হয়ে ৪র্থে শুক্রের ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায়
এবং শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হয়ে শশ যোগ তৈরী করায় ও শনি বক্রী
হওয়ায় এই যোগের ফল মোটেই শুভ হয় নি। এখানে এই যোগ স্বেচ্ছাচার
ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন নির্দেশ করে। জনমানসে তার প্রভাব
তার যৌন আবেদনের জন্য যতটা, অভিনয় প্রতিভার জন্য ততটা নয়।
(৮) শুক্র নৃত্য গীত
ইত্যাদির কারক গ্রহ। ১০ম স্থান জীবিকা বা কর্ম ( house of
action ) নির্দেশ করে। শনি শৃঙ্খলা বোধের জন্ম দেয়। আবার
শনি কালপুরুষের অঙ্গ বিভাগের নিরীখে ( অনুচ্ছেদ ৮ ) পদদ্বয়ের
কর্তা। অতএব ১০মে শুক্রের উপর শনির দৃষ্টি নৃত্য নৈপুণ্য
নির্দেশ করে এবং এবং শোনা যায় মেরিলিন যথেষ্ট ধৈর্য্য ও
শৃঙ্খলার সঙ্গে নৃত্য অভ্যাস করতেন।
(৯) ৪র্থে শনি ৪র্থ পতির সঙ্গে যুক্ত হলে মা'র অকাল মৃত্যু
হতে পারে। এখানে শনি ৪র্থ পতির সঙ্গে যুক্ত নয় কিন্তু ৪র্থ
পতি শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। কিন্তু এখানে মা'র জীবন বিপন্ন
না হবার কারণ, চন্দ্র লগ্ন থেকে রাজযোগকারী গ্রহ শুক্রের
৪র্থে ( মাতৃস্থান ) অবস্থান। শুক্র নৈসর্গিক শুভ গ্রহও
বটে। এ ছাড়া বৃহস্পতির শুভত্ব অনেক কমে গেলেও ২৩ নং ধনিষ্ঠা
নক্ষত্রে ( অধিপতি রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গল ) অবস্থিত হওয়ায়
তার শুভত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। শনি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায়
শনির অশুভত্ব হ্রাস পেয়েছে। তবে মৃত্যু না হলেও বক্রী শনির
৪র্থে অবস্থান এবং ৪র্থ পতি শুক্রকে দৃষ্টি দেবার ফলে মা
মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়েছেন।
(১০) মেরিলিনের জন্ম
মঙ্গলের দশায়, চলেছে প্রায় ১৯৩১ সাল অবধি। এর পর ১৮ বছরের
রাহুর দশা। রাহু মিথুনে তুঙ্গী ( অধিকাংশ জ্যোতিষীর মত )
কিন্তু ১২শে বুধের ক্ষেত্রে এবং বৃহস্পতির নক্ষত্রে অবস্থিত।
অতএব রাহু কিছুটা বুধের এবং কিছুটা বৃহস্পতির ফল দেবে। বুধ
এবং রবি একত্রে থাকায় ( ১১শে ) বুধাদিত্য যোগ তৈরী হয়েছে
( অনুচ্ছেদ ১৪ )। অবশ্য এই যোগের বল খুব বেশী নয় ( রবি শত্রু
ক্ষেত্রে এবং বুধ রবির মাত্র ৪ ডিগ্রির ব্যবধানে থাকায় )।
তবে ১১শ স্থানে শুক্রের ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায় এবং রাজযোগকারী
গ্রহ মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় রাহুর দশাতেই ধীরে ধীরে মডেল
হিসাবে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। শনিবৎ রাহু শ্লোক অনুসারে
রাহুর বৈশিষ্ট্যও শনির মত। তুঙ্গী শনি বৃহস্পতির দ্বারা
দৃষ্ট হওয়াতেও মেরিলিনকে মডেল হিসাবে পরিচিত হতে সাহায্য
করেছে। ১৯৫০ সাল থেকে মেরিলিনের বৃহস্পতির দশা শুরু হয়।
এখানে অন্য একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মঙ্গল ও বৃহস্পতির নক্ষত্র
বিনিময় হয়েছে। বৃহস্পতি মঙ্গলের ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে
এবং মঙ্গল বৃহস্পতির ২৫ নং পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রে অবস্থান
করছে। এই নক্ষত্র বিনিময় সাধারণ ভাব বিচারে খুব একটা বিবেচিত
না হলেও নক্ষত্র জ্যোতিষে (stellar astrology) ( অনুচ্ছেদ
৯ ) এটা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য করার বিষয় ১৯৫০ সালে বৃহস্পতির
দশা শুরু হতেই তার ছবি Ashphalt Jungle জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তার সমস্ত পুরষ্কার ও স্বীকৃতি তিনি পান ১৯৫১ থেকে ১৯৬২
সালের মধ্যে - বৃহস্পতির দশায়। তবে মঙ্গল ও বৃহস্পতি ৮মে
অবস্থিত হওয়ায় তাকে বহু বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে
নিশ্চয়ই। অনেকের মতে ৬ষ্ঠ পতি ( দুঃস্থানের অধিপতি ) ৮মে
( অন্য একটি দুঃস্থান ) থাকায় বিপরীত রাজযোগ হয়েছে। তবে
এতে কিছু ভাল ফল ফললেও অশুভ ফলও যথেষ্ট হবার সম্ভাবনা।
(১১) বৃহস্পতি-চন্দ্রের
দশা-অন্তর্দশায় মেরিলিনের gall bladder ও বস্তি প্রদেশে
অস্ত্রোপচার করা হয়। শরীরের এই দুই স্থান ৬ষ্ঠ ও ৭ম ভাব
থেকে বিচার হয়। লগ্নপতি চন্দ্র ৭মে শত্রু ক্ষেত্রে অবস্থিত
এবং ৬ষ্ঠ পতি ( রোগ স্থানের অধিপতি ) বৃহস্পতি ৮মে মঙ্গলের
( অস্ত্রোপচার, রক্তপাত ইত্যাদির কারক গ্রহ ) সঙ্গে থাকায়
এবং ৬ষ্ঠ স্থানে কেতু অবস্থিত হওয়ায় ঘটনাটি ঘটা খুব স্বাভাবিক।
(১২) কুণ্ডলীতে ৭ম
পতি শনি ৪র্থে তুঙ্গী হয়ে শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় এবং
৭মে লগ্নপতি চন্দ্র মঙ্গলের নক্ষত্রে অবস্থিত হওয়ায়, মেরিলিনের
বিয়ে হয়েছিল দুই বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে (Joe DiMaggio এবং
Arthur Miller) , এক জন ক্রীড়া জগতের ( মঙ্গলের প্রভাব )
এবং অন্য জন শিল্প জগতের ( চিত্র নাট্য লেখক ) ( ৭ম পতির
উপর শুক্রের প্রভাব )। মঙ্গল যতই রাজযোগকারী গ্রহ হোক, তার
৮মে অবস্থান , বিশেষতঃ শনির ঘরে, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।
(১৩) মেরিলিনের মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালের ৫ই অগাষ্ট, মাত্র ৩৬
বছর বয়সে। তখন তার বৃহস্পতির দশা এবং মঙ্গলের অন্তর্দশা
চলছিল। দুটি গ্রহই লগ্নের ৮মে ( নিধন বা আয়ু স্থান ) এবং
চন্দ্রের ২য়ে ( মারক স্থান ) অবস্থিত। অতি সাধারণ দৃষ্টিতেই
ধরা পড়ে জাতিকার বৃহস্পতি-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশায় কোন গুরুতর
দুর্ঘটনা বা মৃত্যু ঘটতে পারে।
(১৪) মেরিলিনের মৃত্যুর
কারণ কি ? বলা হয় তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে
আত্মহত্যা করেছেন। ১২শ রাশিতে ( শয্যাসুখ, নিদ্রা ইত্যাদি
বোঝায় ) রাহুর অবস্থান এবং ১২শ পতি বুধের রবির খুব কাছে
থেকে অস্তমিত (combust) ( অনুচ্ছেদ ৭ ) হওয়ায় জাতিকার ঘুমের
ব্যাঘাত ঘটতেই পারে। এর জন্য ওষুধ খাওয়াও অসম্ভব নয় । কিন্তু
অনেক জ্যোতিষীর মতে আত্মহত্যার জন্য ৩য় পতির সঙ্গে লগ্ন
বা লগ্নপতির যোগ এবং অশুভ গ্রহের দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু
কুণ্ডলীতে সে রকম কিছু নেই। তাই এটা আত্মহত্যার ঘটনা নাও
হতে পারে। তবে এটা প্রশ্নাতীত নয়।
কর্কট লগ্নের একটি
বৈশিষ্ট্য হল, লগ্ন পতি চন্দ্র মনেরও কারক গ্রহ; অর্থাৎ
শরীর এবং মন পরস্পরকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করে। এখানে চন্দ্র
মঙ্গলের নক্ষত্রে অবস্থিত এবং মঙ্গলের অবস্থান ৮মে। চন্দ্র
রয়েছে লগ্নের ৭মে ( জায়াস্থান )। অতএব ৭ম স্থান, মঙ্গল,
৮ম ( মৃত্যু বা আয়ু ) স্থান অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। এই কারণে
সম্পর্ক জনিত কোন জটিলতায় হঠাৎ রাগ বা ক্ষোভের বশে ( ৫ম
পতি মঙ্গল ) কিছু করে বসা এবং সেটা মৃত্যুর কারণ হওয়া অসম্ভব
নয়। শোনা যায় মেরিলিন আগে তিন বার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন,
হয় ত ৮মে বৃহস্পতি তাকে অনেক বার রক্ষা করেছে। কিন্তু শেষ
বারে গ্রহদের গোচরে অবস্থান হয় ত খুবই অশুভ ছিল। অতএব আত্মহত্যা
একেবারে অসম্ভব নয়। এখানে আত্মহত্যা হলেও সেটা আত্মহত্যার
মানসিকতা নিয়ে করা নয়; হঠাৎ ঘটে যাওয়া (impulsive) কোন ঘটনা।
দীপক
সেনগুপ্ত
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১১