জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)
এই
বিভাগ এখনও
UNICODE ফণ্ট-এ অসম্পূর্ণ। বাংলা হরফ ফণ্টে দেখতে এইখানে
ক্লিক করুন।
অনুচ্ছেদ ১৫
কয়েকটি জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
৪. ইন্দিরা গান্ধি
জন্ম
বিবরণ : ১৯১৭, ১৯শে নভেম্বর; সময় : রাত ১১ - ১১ মিঃ. স্থান
: এলাহাবাদ, ভারতবর্ষ; Time
zone
: ৫-৩০-০ East; অক্ষাংশ ২৫ ডিঃ ২৮ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ
৮১ ডিঃ ৫২ মিঃ পূর্ব। লাহিড়ী অয়নাংশ; ভোগ্য দশা (balance
of dasha) : রবি ১ বছর ১১ মাস ১৫ দিন।
সংক্ষিপ্ত ঘটনাবলী
পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও কমলা নেহেরুর একমাত্র সন্তান ইন্দিরা
গান্ধীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৯শে নভেম্বর এলাহাবাদে। মহাত্মা
গান্ধীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগদান করার জন্য জওহরলালকে
প্রায়ই বাড়ীর বাইরে কাটাতে হত বা জেল খাটতে হত। মা ছিলেন
যক্ষা রোগে শয্যাশায়ী। ছোটবেলা ইন্দিরা গান্ধী মানসিক ভাবে
খুবই একাকীত্বের শিকার হয়েছেন এবং স্কুলের পড়াশোনায় মাঝে
মাঝেই ছেদ পড়েছে। ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৩৫ অবধি তিনি শান্তিনিকেতনে
পড়াশোনা করেন; রবীন্দ্রনাথ তার নাম দেন প্রিয়দর্শিনী।
১৯৩৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী
সুইজারল্যাণ্ডে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে কমলা নেহেরুর মৃত্যু ঘটে।
জওহরলাল ইন্দিরাকে কোন বৃটিশ স্কুলে পড়াতে রাজী ছিলেন না।
১৯৩৭ সালে ইন্দিরা Oxford University-র
Somerville College-এ ভর্তি হন। বাবার সঙ্গে নানা
কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ছোটবেলা থেকেই ইন্দিরার রাজনৈতিক সচেতনতা
গড়ে ওঠে।
দুই পরিবারের আপত্তি
সত্বেও ১৯৪২ সালের ২৩শে মার্চ ইন্দিরার সঙ্গে গুজরাটের পার্শী
পরিবারের ফিরোজ গান্ধীর বিয়ে হয়। এর পর ফিরোজ গান্ধি জওহরলাল
প্রতিষ্ঠিত National Herald
পত্রিকার মুখ্য পরিচালক হন। কিন্তু এই বিয়ে খুব সুখের হয়
নি এবং প্রায় বিচ্ছেদেই পর্যবসিত হয়। পর পর দু'বার হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে ১৯৬০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর ফিরোজ গান্ধীর মৃত্যু
হয়।
স্বাধীনতা আন্দোলনে
যোগদান করার জন্য ইন্দিরা গান্ধি প্রথম কারাবরণ করেন ১৯৪২
সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। তার বড় ছেলে রাজীব গান্ধীর জন্ম হয়
১৯৪৪ সালের ২০শে অগাষ্ট এবং ছোট ছেলে সঞ্জয়ের জন্ম ১৯৪৬
সালের ১৪ই ডিসেম্বর।
ইন্দিরার বাবা জওহরলাল
নেহেরুর মৃত্যু ঘটে ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে। ১৯৬৪ সালের জুন
মাসে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী যখন প্রধান মন্ত্রী তখন ইন্দিরা
বেতার সম্প্রসারণ মন্ত্রী হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় যোগদান
করেন। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৬৬ সালের জানুয়ারী
মাসে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের ৩য় প্রধান মন্ত্রী হিসাবে দেশ
পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ১৯৬৫ সালের
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের অবসান হয়েছে। ১৯৬৭ সালের ৪র্থ সাধারণ
নির্বাচনে কংগ্রেস একক ভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে এবং
ইন্দিরা আবার প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু অনেক
রাজ্যেই তখন কংগ্রেসের পরাজয় ঘটেছে। ইন্দিরা গান্ধী দলকে
আরও গতিময় ও জনমুখী করার উদ্দেশ্যে দলে কিছু নীতিগত পরিবর্তন
আনেন; কিন্তু রক্ষণশীল অংশ এটা মেনে নিতে পারে নি। তারা
বিক্ষুব্বì হয়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে ১৪ টি প্রধান
ব্যাঙ্ক জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ আরও প্রবল হয়ে ওঠে
এবং কংগ্রেস বিভক্ত হয়ে যায়। ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রপতিকে
পার্লামেণ্ট ভেঙে দিতে অনুরোধ করেন। নির্ধারিত সময়ের ১ বছর
আগেই ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয় এবং ইন্দিরার
দল দুই তৃতীয়াংশ গড়িষ্ঠতা পেয়ে জয় লাভ করে। ১৯৭১ সালে পূর্ব
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ইন্দিরার দৃঢ় মনোভাব এবং অবশেষে
জয়লাভ অনেকেরই প্রশংসা অর্জন করে। কিন্তু তার বিরোধী পক্ষ
তিনি নির্বাচন বিধি লঙঘন করেছেন এই অভিযোগ তুলে মামলা করলে
হাইকোর্ট সেটা সমর্থন করে। দেশের আভ্যন্তরীন পরিস্থিতি সামাল
দিতে ১৯৭৫ সালের ২৬শে জুন ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরী অবস্থা
ঘোষণা করেন এবং নির্বাচন স্থগিত করে দেন।
১৯৭৭ সালের সাধারণ
নির্বাচনে ইন্দিরার দল শোচণীয় ভাবে পরাজিত হলে, ইন্দিরা
প্রধান মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। বিরোধী সরকার কিন্তু বেশীদিন
স্থায়ী হয় নি। মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করলে, চরণ সিং প্রধান
মন্ত্রী হন; কিন্তু মাত্র স্বল্প সময়ের জন্য। প্রেসিডেণ্ট
নীলম সঞ্জীব রে®ী পার্লামেণ্ট ভেঙে দিলে, পরবর্তী নির্বাচন
হয় এবং বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ১৯৭৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী পুনরায়
প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৮০ সালের ২৩শে জুন
ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায়
নিহত হন।
শিখ সম্প্রদায়ের বড় একটা অংশ বহুদিন থেকে আলাদা রাজ্য গঠনের
জন্য অন্দোলন করে চলেছিল। সেই আন্দোলন আরও প্রবল আকার নেয়
এবং শিখেরা অনেক অস্ত্র শস্ত্র অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে জড়
করে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়। ইন্দিরা সরকারী রক্ষী
বাহিনীকে স্বর্ণমন্দির আক্রমণ করে (operation
Blue Star) অস্ত্র উদ্ধারের আদেশ দিলে সংঘর্ষে অনেক শিখ
মারা যান। মনে করা হয় এরই পরিণতি হিসাবে নিজেরই বাস ভবনে
১৯৮৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তার শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে তিনি
নিহত হন।
ইন্দিরার জীবন ছিল
কর্মচঞ্চল ও সংগ্রামী। বহু বাধার সম্মুখীন তিনি হয়েছেন,
অনেক বিরূপ সমালোচনা তাকে সহ্য করতে হয়েছে এবং জীবনে স্বজন
বিয়োগের বহু শোক তাকে ধবস্ত করেছে; কিন্তু সাহসিকতার সঙ্গে
তিনি সেই সব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ
এই মহিলা প্রধান মন্ত্রী তার নেতৃত্বে ভারতকে নানা ভাবে
বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।
জন্মকুণ্ডলীর
বিশ্লেষণ
ইন্দিরা
গান্ধীর রাশি চক্রটি ১৫(৪)ক চিত্রে এবং নবাংশটি ১৫(৪)খ চিত্রে
দেখান হয়েছে।
(১) লগ্ন কর্কট এবং
লগ্নপতি চন্দ্র ৭মে মকর রাশিতে। কর্কট লগ্নের জাতক জাতিকারা
খুব আবেগপ্রবণ ও স্পর্শকাতর হন, কারণ এর অধিপতি চন্দ্র মনের
কারক। এখানে লগ্ন ৯নং অশ্লেষা নক্ষত্রে (অধিপতি বুধ) অবস্থিত।
শুভ ফলদাতা হিসাবে অশ্লেষা নক্ষত্রের খুব একটা খ্যাতি নেই।
কর্কট লগ্নে শনির অবস্থানের প্রভাবে মানসিক অশান্তি, কর্মক্ষেত্রে
বাধা, স্নায়বিক দৌর্বল্যের ইঙ্গিত দেয়। এরা যাদের ভালবাসেন
তাদের দ্বারা খুব প্রভাবিত হন। চন্দ্র লগ্নে দৃষ্টি দেওয়ায়
এবং শনির দৃষ্টি চন্দ্রের উপর থাকায়, ইন্দিরা গান্ধী মাকে
খুব পছন্দ করলেও শনির প্রভাবে মাতৃস্নেহ তিনি সেভাবে পান
নি।
৪র্থ স্থান থেকে মা, গৃহসুখ, পড়াশোনা ইত্যাদি বিচার্য। ৪র্থ
পতি শুক্র ৬ষ্ঠে (রোগ স্থান) রাহুর সঙ্গে যুক্ত থাকায় তিনি
মাতৃবিষয়ে সুখী হন নি (মূলতঃ মায়ের অসুখের জন্য)। গৃহসুখ
ত ছিলই না এবং পড়াশোনাও ঠিক সেভাবে হয় নি। শুধু ৬ষ্ঠ স্থানের
জন্যই নয়; রাহু ধনু রাশিতে নীচস্থ (অধিকাংশ জ্যোতিষীর মত)
হয়ে ৪র্থ পতি শুক্রের
সঙ্গে অবস্থান করায় তার লেখাপড়াতে যথেষ্ট ছেদ পড়েছে।
(২) মাতৃকারক গ্রহ
চন্দ্র শনির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় এবং ৬ষ্ঠ পতি (রোগ, অসুস্থতা
ইত্যাদি) বৃহ্রপতি চন্দ্রকে দৃষ্টি দেওয়ায় মা খুবই অসুস্থ
ছিলেন। আবার বৃহ্রপতি ৪নং নক্ষত্র রোহিণীতে (অধিপতি চন্দ্র)
অবস্থিত হওযায় এই সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়েছে। ৯ম স্থানের
(পিতৃস্থান) অধিপতি বৃহ্রপতি ইন্দিরা গান্ধীর কুণ্ডলীতে
১১শে অবস্থিত। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৯ম পতি বুধ ১১শে (লাভ স্থানে)
পিতৃকারক গ্রহ রবির সঙ্গে রয়েছে। এতে তার নিজের গড়ে ওঠার
পেছনে বিশেষ করে তার ভবিষ্যত্ রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি গঠন
করার ক্ষেত্রে তার পিতা জওহরলাল নেহেরুর অবদান অনস্বীকার্য।
চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৯ম পতি বুধ ১১শে (লাভ স্থান) পিতৃকারক
গ্রহ রবির সঙ্গে অবস্থিত। চন্দ্র শনিদৃষ্ট হওয়ায় এবং শনি
লগ্নে থাকায় মনের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অনেকটা একা কিন্তু
শনির প্রভাবে তার শৃÍলা বোধ ছিল অসাধারণ।
(৩) শনি জনসাধারণের
কারক গ্রহ কিন্তু শনি সাধারণতঃ সমাজের দলিত ও নীচু তলার
মানুষকে নির্দেশ করে। ৯ম পতি (ভাগ্য পতি) বৃহ্রপতি চন্দ্রকে
দৃষ্টি দিচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধীর, বিশেষ করে দরিদ্র ও অবহেলিত
শ্রেণীর উপর, একটা জনমোহিনী প্রভাব কাজ করত; তবে শনির দৃষ্টি
চন্দ্রের উপরে থাকায় এবং শনির ৮ম পতিত্ব হেতু এটা মাঝে মাঝে
তার অনুকূলে ফল দেয় নি।
(৪) ইন্দিরা গান্ধীর
২য় পতি রবি মঙ্গলের ক্ষেত্র বৃশ্চিকে অবস্থিত। মঙ্গল রুক্ষ,
কর্কশতা ইত্যাদির কারক। মঙ্গল লগ্নের ২য়ে (বাকস্থান) অবস্থিত
হয়ে রাশি অধিপতি (sign dispositor) রবিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
ইন্দিরা গান্ধী কথা বলতেন খুব দৃঢ় ভাবে এবং প্রায় আদেশের
ভঙ্গীতে। ৩য় স্থান ও কারক গ্রহ বুধ থেকে লিখন (writing)
এর বিচার করা হয়। এখানে ৩য় পতি বুধ নিজেই এবং বুধ রবির সঙ্গে
যুক্ত হয়ে মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ২য়
পতি রবির সঙ্গে ৫ম ও ১০ম পতি মঙ্গলের স্থান বিনিময় হয়েছে।
১০ম অর্থাত্ কর্মক্ষেত্রেও তার এই বৈশিষ্ট্য কাজ করত। তার
লেখার মধ্যেও এক ধরণের আবেগহীনতা ও নির্মমত্ব প্রকাশ পেত।
শোনা যায় তিনি তার বাবা, স্বামী এবং ছেলেদেরও এই ভঙ্গীতে
চিঠি লিখতেন।
রবি রাজনীতিরও কারক
গ্রহ এবং রবি ৫ম কোণে মঙ্গলের ক্ষেত্রে মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট।
রবি ১৭নং অনুরাধা নক্ষত্রে (অধিপতি শনি) অবস্থিত। রাজনীতির
ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দৃঢ়, আপোষহীন ও অসহিষুÎ। ৯ম (ও ৬ষ্ঠ)
পতি বৃহস্পতি ১১শে থেকে রবিকে দৃষ্টি দেওয়ায় তার মধ্যে আকর্ষণীয়
ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয়েছে। মঙ্গলের ক্ষেত্রে রবির অবস্থান,
মঙ্গলের উপর বৃহ্রপতির দৃষ্টি সম্ভবতঃ তার মধ্যে একটা অহং
বোধের (ego) সৃষ্টি করেছিল। তিনিই যেন সব কিছুর শেষ কথা।
বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ পতিত্ব হেতু তাকে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন
হতে হয়েছে।
(৫) ইন্দিরা গান্ধীর
মা কমলা নেহেরুর মৃত্যু হয় ১৯৩৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী।
ইন্দিরার তখন দশা-অন্তর্দশা চলছিল মঙ্গল-রবি। প্রত্যন্তর্দশা
দশা ছিল রবির। কর্কট লগ্নের ৪র্থ (মাতৃস্থান) রাশি তুলা।
তুলা থেকে ২য় ( মারক স্থান ) স্থানের অধিপতি মঙ্গল এবং সেখানে
রবি অবস্থিত। আবার চন্দ্র থেকে ৪র্থ স্থান মেষ রাশির ৮ম
পতি (নিধন স্থান) মঙ্গল এবং ৮মে রবি অবস্থিত। অতএব মঙ্গল-রবি-রবিতে
মায়ের মৃত্যু খুব স্বাভাবিক।
(৬) ইন্দিরার রাহুর
দশা চলেছিল ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল অবধি। তার বিয়ে হয় ১৯৪২
সালের ২৩শে মার্চ, ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে। ইন্দিরার তখন রাহু-শনি-শনি
চলছিল। ৭ম পতির লগ্নে অবস্থান নির্দেশ করে যে জাতক বা জাতিকা
যাকে বিয়ে করবে তার সঙ্গে পূর্ব পরিচয় ছিল। আবার ৭ম পতি
শনি লগ্ন পতি চন্দ্রের সঙ্গে স্থান বিনিময় করেছে। ৭মে শনির
অবস্থানের জন্য সাধারণতঃ স্বামীর বয়স অনেকটা বেশী হয় অথবা
স্বামী ভিন্ন শ্রেণীর হয়। এখানে ফিরোজ গান্ধী পার্শী ছিলেন।
লগ্ন পতি ও ৭ম পতির স্থান বিনিময়ের জন্য বিয়ের ব্যাপারে
শনির যোগ থাকবেই। কিন্তু রাহুর দশায় বিয়েটা হল কেন ? "
শনিবত্ রাহু " ( অনুচ্ছেদ ৫ ) অনুসারে রাহু অনেক বিষয়ে
শনির মতই কাজ করে। রাহু পরতন্ত্রী গ্রহ হিসাবে বৃহস্পতির
ঘরে এবং শুক্রের সঙ্গে থাকার জন্য শনি ছাড়াও রাহু বৃহ্রপতি
ও শুক্রের ফলও আংশিক ভাবে দেবে। বৃহস্পতি শুক্রের ঘরে ১১শে
( ইচ্ছা পূরণ ) থেকে লগ্নের ৭মে (জায়া স্থান) দৃষ্টি দেওয়ায়
রাহুর মহাদশায় বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মঙ্গল লগ্নের ২য়ে অবস্থিত
হয়ে ৮মে দৃষ্টি দেওয়ায় এবং চন্দ্র থেকেও মঙ্গল ৮মে থাকায়
আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ না ঘটলেও (২য়ে মঙ্গল সাধারণতঃ
বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় না) ভুল বোঝাবুঝি প্রকৃতপক্ষে বিচ্ছেদেই
পর্যবসিত হয়েছিল।
(৭) ১৯৪২ সালের ১১ই
সেপ্টেম্বর ইন্দিরার যখন রাহু-শনি-বুধের দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা
চলছিল তখন তিনি গ্রেপ্তার বরণ করেন এবং এবং ৮ মাস তাকে জেলে
কাটাতে হয়। শনি দশাপতি রাহু থেকে ৮মে এবং অন্তর্দশাপতি বুধ
থেকে ১২শে অবস্থিত। নীচস্থ রাহু চন্দ্রের ১২শে ও লগ্নের
৬ষ্ঠে অবস্থিত। লগ্নের ৪র্থ পতি (বাসস্থান) শুক্রের সঙ্গে
রাহু যুক্ত এবং চন্দ্রের ৪র্থে মেষ রাশিতেও শনির দৃষ্টি
রয়েছে। কারকত্ব হিসাবে শনি এবং রাহুর একটা বিচ্ছিন্ন করার
(separative
planets)
শক্তি আছে। অতএব উক্ত দশা-অন্তর্দশায় ইন্দিরা বাসস্থান থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে জেলে কাটান।
(৮) ইন্দিরার প্রথম
পুত্র রাজীব গান্ধীর জন্ম হয় ১৯৪৪ সালের ২০শে অগাষ্ট। ইন্দিরার
তখন রাহু-শনি-বৃহস্পতি চলছিল। রাহু ও কেতুর বৈশিষ্ট্য হল,
যার ক্ষেত্রে তারা অবস্থান করবে সেই অধিপতির বা যার সঙ্গে
যুক্ত অথবা যার দ্বারা দৃষ্ট তাদের ফল প্রদান করে। রাহু
বৃহস্পতির রাশি ধনুতে থাকায় বৃহ্রপতির ফল দিতে পারে। বৃহ্রপতি
বর্গোত্তম হওয়ায় যথেষ্ট শক্তিশালী। বৃহস্পতি পুত্রকারক গ্রহ
হয়ে লগ্নের ১১শে (ইচ্ছাপূরণ, লাভ, আয় ইত্যাদি) অবস্থিত হয়ে
লগ্নের ৫মে ( সন্তান স্থান ) দৃষ্টি দেওয়ায় সন্তান জন্মের
সঙ্গে সম্পর্কিত হয়েছে। আবার শনি বুধের নক্ষত্রে (অশ্লেষা
নক্ষত্র) অবস্থিত এবং বুধ লগ্নের ৫মে রয়েছে। পুত্রকারক বৃহস্পতি
থেকে ৫মের অধিপতি (এ ভাবেও বিচার করা হয়) অর্থাত্ কন্যা
রাশির অধিপতি, বুধ চন্দ্র থেকে ১১শে অবস্থিত। অতএব সন্তান
লাভের সঙ্গে শনিও যুক্ত। দ্বিতীয় পুত্র সঞ্জয়ের জন্ম হয়
১৯৪৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর, ইন্দিরার রাহু-বুধ-বৃহস্পতি দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশায়।
পূর্বোক্ত কারণে রাহু সন্তানকারক বৃহস্পতির ফল দেবে। বুধ
৫মে সন্তান স্থানে অবস্থিত। অতএব দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম
সঠিক সময়েই হয়েছে।
(৯) ইন্দিরার বৃহস্পতির
দশা চলেছিল ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৬০ সালের
৮ই সেপ্টেম্বর ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী মারা
যান। তখন ইন্দিরার বৃহস্পতি-বুধ-চন্দ্রের দশা। শুক্র প্রেম,
প্রীতি, ভালবাসার সূচক ঠিকই কিন্তু মহিলার ক্ষেত্রে স্বামীর
কারক গ্রহ বৃহস্পতি। পুরুষের ক্ষেত্রে স্ত্রীর কারক গ্রহ
শুক্র। এখানে স্বামীর কারক গ্রহ বৃহস্পতির ৭মে (মারক স্থান)
বুধ অবস্থান করছে এবং বৃহস্পতির ২য় অপর একটি মারক স্থান)
স্থানের (মিথুনের) অধিপতিও বুধ। এ ছাড়া লগ্নের ৭মে চন্দ্র
অবস্থিত হওয়ায় এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় বৃহস্পতি-বুধ-চন্দ্রের
দশায় ইন্দিরা স্বামীকে হারিয়েছেন।
(১০) ১৯৫৯ সালে বৃহস্পতি-শনির
দশা-অন্তর্দশায় ইন্দিরা গান্ধী Indian National Congress-এর
সভাপতি নির্বাচিত হন। ৯ম পতি (ভাগ্য পতি) বৃহস্পতির
১১শে অবস্থান খুবই শুভ। আবার চন্দ্র লগ্নের অধিপতি শনির
৯মে (কন্যা রাশিতে) দৃষ্টি রয়েছে। অতএব বৃহস্পতি-শনিতে এই
পদ প্রাপ্তি ঘটতে পারে। শনি শৃÍলা ও দায়িত্ব বোধের কর্তা;
শনির অন্তর্দশায় জনসাধারণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ নির্দেশ
করে। তবে একই সঙ্গে বৃহস্পতি যে ৬ষ্ঠ পতি এবং শনি ৮ম পতি
এ কথা ভুললে চলবে না। ইন্দিরার এই পদ গ্রহণকে কেন্দ্র করে
নিশ্চয়ই কিছু বিরুদ্ধ মত এবং শত্রুতা তৈরী হয়েছিল।
জওহরলালের মৃত্যুর পর লালবাহাদুর শাস্ত্রী প্রধান মন্ত্রী
হন ১৯৬৪ সালের জুন মাসে এবং ঐ সালেই ইন্দিরা বেতার সম্প্রসারণ
মন্ত্রী হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় যোগদান করেন। তখন তার
বৃহস্পতি-শুক্রের দশা-অন্তর্দশা চলছিল। বর্গোত্তম বৃহস্পতি
৯ম পতি হয়ে ১১শে অবস্থিত এবং শুক্র চন্দ্র লগ্ন থেকে ৫ম
ও ১০ম পতি হিসাবে রাজযোগকারী গ্রহ।
(১১) ইন্দিরার পিতা
জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে। তখন ইন্দিরার
বৃহস্পতি-শুক্র-বৃহ্রপতি চলছিল। লগ্নের ৯ম (পিতৃস্থান) স্থানের
অধিপতি বৃহস্পতি; শুক্র বৃহস্পতি থেকে ৮মে (নিধন স্থানে)
এবং পিতৃকারক গ্রহ রবি থেকে ২য়ে (মারক স্থানে) অবস্থিত।
চন্দ্র থেকে দেখলে চন্দ্র লগ্নের ৯ম স্থানের ৭মের অধিপতি
বৃহ্রপতি এবং ২য় স্থানের অধিপতি শুক্র। কারক গ্রহ রবি থেকে
বৃহস্পতি ৭মে অবস্থিত। অতএব এখানে ৯ম পতি বৃহ্রপতি নিজেই
পিতার মারক হিসাবে কাজ করেছে।
(১২) প্রথম দফায় ইন্দিরা
গান্ধী প্রধান মন্ত্রী হন ১৯৬৬ সালের ১৯শে জানুয়ারী। তখন
তার বৃহস্পতি-রবির দশা-অন্তর্দশা চলছিল। বৃহস্পতি ৯ম পতি
( ভাগ্য স্থানাধিপতি ) হয়ে ১১শে (লাভ স্থান) রয়েছে। রবি
( রাজনীতির কারক গ্রহ ) রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গলের (৪র্থ ও
৯ম পতি) সঙ্গে স্থান বিনিময় করায় রবি মঙ্গলের শুভ ফল দিতে
পারে। নবাংশে রবি স্বক্ষেত্রে এবং মঙ্গল বর্গোত্তম হওয়ায়
যথেষ্ট শক্তিশালী। চন্দ্র থেকে বিচার করলেও ১১শ পতি মঙ্গল
১১শে অবস্থিত রবিকে দৃষ্টি দেওয়ায় ১১শ স্থান (ইচ্ছা পূরণ)
সম্পর্কিত ফলের সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে। অতএব বৃহস্পতি-রবিতে
তার একটি বড় ধরণের প্রাপ্তিযোগ নির্দেশ করে।
ইন্দিরার শনির দশা
শুরু হয় ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে
তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তখন তার শনি-শনি চলছিল। শনি
চন্দ্র লগ্নের অধিপতি, ৭মে বুধের ক্ষেত্রে অবস্থিত। বুধ
চন্দ্র থেকে ৯ম পতি, রয়েছে চন্দ্রের ১১শে। জয়লাভ তিনি করেছিলেন
ঠিকই, কিন্তু প্রতিটি গ্রহের অশুভত্বের দিকটা ভুললে চলবে
না। শনি লগ্ন থেকে ৮ম স্থানের অধিপতি, বুধ ৩য় ও ১২শ পতি;
বৃহস্পতির ৬ষ্ঠ পতিত্ব দোষও রয়েছে। বৃহস্পতি ১১শে অবস্থিত
বুধকে দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র লগ্ন থেকে বুধ ৯ম পতি হলেও
৬ষ্ঠ পতিত্ব দোষও রয়েছে। নির্বাচনে জয়ের পর বিরোধীরা নির্বাচন
বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আইনের সাহায্য নিলে, ১৯৭৫ সালের
২২শে জুন তারিখে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় ইন্দিরার বিপক্ষেই
যায়। ১৯৭৫ সালের ২৬শে জুন emergency জারি করে তিনি সাময়িক
ভাবে রক্ষা পেতে চেষ্টা করেন।
(১৩) ১৯৭৭ সালের ২২শে
মার্চ সাধারণ নির্বাচনে শনি-কেতুর দশায় ইন্দিরার শোচণীয়
পরাজয় ঘটে। দশাপতি শনি থেকে অন্তর্দশাপতি কেতু ১২শে অবস্থিত।
এটা শুভ নয়। ১২শে বুধের ঘরে কেতুর অবস্থানের জন্য কেতু মূলতঃ
বুধের ফলই দেবে। ১২শ থেকে ক্ষতি, ব্যয় ইত্যাদি বিচার্য।
শনি লগ্নের ৭ম ও ৮ম পতি। ৮ম স্থান মৃত্যু ছাড়াও অবমাননা,
অপদস্থতা, সম্মানহীনতারও দ্যোতক। ৩য় ও ১২শ পতি বুধ কর্কট
লগ্নের পক্ষে অশুভ গ্রহ। কাজেই শনি-কেতুতে ইন্দিরা গান্ধীর
শোচনীয় পরাজয়। ১৯৮০ সালের ১৪ই জানুয়ারীতে শনি-শুক্রের দশা-অন্তর্দশায়
সাধারণ নির্বাচনে জিতে তিনি আবার প্রধান মন্ত্রী হন। চন্দ্র
লগ্নের অধিপতি হিসাবে শনির কিছুটা শুভত্ব আছে। মকর লগ্নের
ক্ষেত্রে শুক্র ৫ম ও ১০ম পতি হওয়ায় রাজযোগকারী গ্রহ, অবস্থিত
২০নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে যার অধিপতি শুক্র নিজেই। অতএব
শুক্র যথেষ্ট জোরাল। এ ছাড়া শুক্রের রাশি অধিপতি (sign dispositor)
বৃহ্রপতি (অনুচ্ছেদ ১৩, ১০নং নিয়ম) ৯ম পতি (ভাগ্য
পতি) হয়ে ১১শে (আয়, লাভ, ইচ্ছপূরণ ইত্যাদি) অবস্থিত হওয়ায়,
শুক্রের দশা-অন্তর্দশায় তিনি দ্বিতীয়বার প্রধান মন্ত্রী
হন। শনি ও শুক্র পরস্পরের ৬ষ্ঠ ৮মে অবস্থান করায় শনি-শুক্রর
দশা শুভ ফলদায়ক হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১৩, ১৯নং নিয়ম)।
(১৪) ১৯৮০ সালের ২৩শে জুন ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে সঞ্জয়
বিমান দুর্ঘটানায় মারা যান। ইন্দিরার তখন শনি-শুক্র-বুধের
দশা। শনি স্বাভাবিক দুঃখদায়ক ও মৃত্যুকারক গ্রহ। শনি লগ্নে
বুধের অশ্লেষা নক্ষত্রে অবস্থিত। বুধ রয়েছে লগ্নের ৫মে (সন্তান
স্থান) মঙ্গলের রাশি বৃশ্চিকে এবং পুত্রকারক গ্রহ বৃহস্পতি
থেকে মারক স্থানে (৭মে)। বুধ লগ্নের ৫ম স্থান থেকে ৮মেরও
অধিপতি। চন্দ্র লগ্ন থেকে বিচার করলেও ৫ম (সন্তান স্থান)
স্থানের ৭মে রয়েছে বুধ এবং ৮মে ( নিধন স্থান ) শুক্র। লগ্ন
থেকে ৫ম স্থান বৃশ্চিক রাশি থেকে ৭মের অধিপতি শুক্র এবং
শুক্রের অবস্থান লগ্ন থেকে ৫ম স্থানের ২য়ে। কোন স্থানের
২য়ে কোন গ্রহ থাকলে সেটাই সেই স্থানের মুখ্য মারক হিসাবে
গণ্য হয়। অতএব নানা দিক থেকে বিচার করলে শনি-শুক্র-বুধের
দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
বুধ শনির নক্ষত্রে থাকায় এবং মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায়
দুর্ঘটনায় মৃত্যু অসম্ভব নয়। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়।
রাহু আকাশ পথ নির্দেশ করে (অনুচ্ছেদ ৫)। রাহু সন্তান স্থান
(৫ম) থেকে ২য়ে (মারক স্থান) এবং সন্তানের কারক গ্রহ বৃহ্রপতি
থেকে ৮মে (মৃত্যু স্থান) অবস্থিত। নবাংশেও রাহু বৃহস্পতির
২য়ে রয়েছে। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারন হিসাবে এটা ধরা
যেতে পারে।
(১৫) ইন্দিরা গান্ধীর
নিজের মৃত্যু ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর, শনি-রাহু-রাহুর দশায়।
লগ্নের ৭ম ও ৮ম পতি শনি লগ্নপতি চন্দ্রের সঙ্গে স্থান বিনিময়
করে চন্দ্র লগ্নের ৭মে থাকায় জাতিকার মৃত্যুর বিষয়ে শনির
ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃহস্পতি ধর্মভাবের কারক গ্রহ। ভ-চক্রের
(natural zodiac) ৯ম
স্থান (৯ম ভাব থেকে ধর্মের বিচার হয় - ৫ম ও ৮ম অনুচ্ছেদ
দ্রষ্টব্য) ধনু রাশি ধর্মভাবের দ্যোতক। ধনুতে নীচস্থ রাহুর
অবস্থান বিধর্মীদের সঙ্গে মনোমালিন্য বা তাদের থেকে আঘাত
বা প্রত্যাঘাত বোঝাতে পারে। লক্ষ্য করার বিষয় হল, যখন ইন্দিরার
বিধর্মীর সঙ্গে (ফিরোজ গান্ধী পার্শী ছিলেন) বিয়ে হয় তখন
তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এবং তখন তার দশা চলছিল
রাহু-শনি-শনি। শনি-রাহু-রাহুতে বিধর্মী শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে
তার নিজের মৃত্যু হয়। চন্দ্র লগ্নের ২য় পতি শনি চন্দ্র লগ্নের
৭মে অবস্থিত হওয়ায় এবং লগ্নের ৭ম ও ৮ম পতি শনি লগ্নপতি চন্দ্রের
সঙ্গে স্থান বিনিময় করায় শনি মুখ্য মারক হয়েছে (শনি অশ্লেষা
নক্ষত্রেও অবস্থিত)। "শনিবত্ রাহু" অনুসারে নীচস্থ
রাহু লগ্নের ৬ষ্ঠে এবং চন্দ্র লগ্নের ১২শে অবস্থিত হওয়ায়
রাহুর দশা ও প্রত্যন্তর্দশা মারক হয়েছে। লগ্নের ৮মে (মৃত্যু
বা নিধন স্থান) শনির ক্ষেত্রে মঙ্গলের দৃষ্টি অস্ত্রের আঘাতে
(বা দুর্ঘটনায়) মৃত্যু নির্দেশ করে।
(১৬) ইন্দিরা গান্ধীর
কুণ্ডলীতে লগ্ন থেকে ৫মে বৃশ্চিক রাশিতে বুধাদিত্য যোগ ছাড়াও
আরও দুটি বিশেষ যোগের কথা উল্লেখ করা হয় নি। একটি হল মহাভাগ্য
যোগ; কোন মহিলার ক্ষেত্রে জন্ম যদি রাত্রি বেলা হয় এবং লগ্ন,
রবি ও চন্দ্র যদি জোড় বা স্ত্রী রাশিতে (অনুচ্ছেদ ৩) অবস্থান
করে তবে এই যোগ হয়। ইন্দিরার রাত্রিবেলা জন্ম এবং লগ্ন,
রবি ও চন্দ্র যথাক্রমে কর্কট, বৃশ্চিক ও মকর রাশিতে অবস্থিত;
তিনটিই স্ত্রী রাশি। এই যোগের নামকরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে,
জাতিকার ভাগ্য জীবনে তার খুবই সহায়ক হবে। ইন্দিরার ক্ষেত্রে
সেটা অবশ্যই ফলপ্রসূ হয়েছে; তবে এই যোগের অর্থ এই নয় যে
তাকে জীবনে কোনও কষ্ট সহ্য করতে হবে না। দ্বিতীয় যোগটি হল
বসুমতী যোগ। উপচয় স্থানে (অনুচ্ছেদ ১০) শুভ গ্রহ (চন্দ্র,
বুধ, বৃহ্রপতি ও শুক্র) অবস্থিত হলে এই যোগ হয়। সব কটি গ্রহই
উপচয়ে থাকতে হবে তা নয়; দুই একটিও থাকতে পারে, তবে ফল অনুরূপ
হবে। এখানে ৬ষ্ঠে শুক্র এবং ১১শে বৃহস্পতি রয়েছে। যদিও রাহু
শুক্রের সঙ্গে যুক্ত তবে দুই-এর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১২ ডিগ্রি।
বসুমতি যোগের ফলে মূলতঃ সম্পদ বৃদ্ধি হয়, ক্ষমতা বিষয়ে খুব
কিছু বলা নেই।
(১৭) কিছু জ্যোতিষীর
মতে ইন্দিরা গান্ধীর লগ্ন কর্কট না হয়ে সিংহ হবে। কারণ,
কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে শনি ৭ম ও ৮ম পতি হয়ে লগ্নপতি চন্দ্রের
সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় করায় এবং এবং শনি চন্দ্রকে দৃষ্টি
দেওয়ায় ফল খুবই খারাপ হবে এবং সেক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী
যে সাফল্য পেয়েছেন সেটা পাবার কথা নয়। এটা একটু খুঁটিয়ে
দেখা যাক। শনি কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে ৭ম ও ৮ম স্থানের অধিপতি।
নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ হয়ে ৭ম কেন্দ্রের অধিপতি হওয়ায় পরাশরের
মতে শুভফলদায়ক (অনুচ্ছেদ ১০) কিন্তু একই সঙ্গে ৮মের (দুঃস্থান)
অধিপতি হওয়ায় পরিশেষে অশুভই (অনেকের মতে সম ভাবাপন্ন)। কিন্তু
শনির অশুভত্ব অনেক হ্রাস পেয়েছে, কারণ (ক) শনি ৮ম দুঃস্থানের
৬ষ্ঠে (অপর একটি দুঃস্থান) অবস্থিত হওয়ায় ৮মের অশুভত্ব অনেক
কমে গিয়েছে (খ) মঙ্গল ও কেতুর মধ্যবর্তী হয়ে পাপ কর্তরী
যোগে দুষ্ট হওয়ায় শনির অশুভ ফল দেবার তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে
এবং (গ) মঙ্গল কর্কট লগ্নের রাজযোগকারী (৫ম কোণ ও ১০ম কেন্দ্রের
অধিপতি) গ্রহ হলেও মঙ্গলের নৈসর্গিক অশুভত্ব ত রয়েছে এবং
তার ৮মে দৃষ্টি থাকায় ৮মের কিছু অশুভত্ব কমে গিয়েছে; অবশ্য
নিধন স্থানের (৮ম স্থান) সাপেক্ষে এর ফল ভাল হয় নি - এতে
আয়ু হ্রাস পেয়েছে এবং মৃত্যুও হয়েছে হিংসাত্মক ঘটনার মাধ্যমে।
অতএব ইন্দিরা গান্ধীর কর্কট লগ্ন হওয়াতে কোন সমস্যা আছে
বলে মনে হয় না। তবে এই বিশ্লেষণ কিছু জ্যোতিষী করলেও অনেকের
কাছে এটা গ্রহণ যোগ্য নাও হতে পারে। ভারতের প্রধান মন্ত্রী
তিনি হয়েছেন ঠিকই কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তাকে অনেক প্রতিকূল
পরিস্থিতি, শোক, তাপ ইত্যাদি সহ্য করতে হয়েছে।
(১৮) ইন্দিরার কুণ্ডলীতে
একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক
(অনুচ্ছেদ - ১৩, ১২ নং নিয়ম)। প্রথমতঃ লগ্নপতি চন্দ্রের
সঙ্গে ৭ম ও ৮ম পতি শনির; দ্বিতীয়তঃ দ্বিতীয় পতি রবির সঙ্গে
৫ম ও ১০ম পতি মঙ্গলের; তৃতীয়তঃ ৬ষ্ঠ ও ৯ম পতি বৃহ্রপতির
সঙ্গে ৪র্থ ও ১১শ পতি শুক্রের। প্রথমটির ফল বহু বাধা বিপত্তি
ভোগ ও বৈবাহিক গোলযোগ; দ্বিতীয়টির ফল বাক ক্ষমতা, তীক্ষ্ণ
বুদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে সাহসিকতা এবং তৃতীয়টির ফল বাধা ও
প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ভাগ্যোন্নতি।
(১৯) ইন্দিরা গান্ধীর
কুণ্ডলীতে একটি মুখ্য বিষয় হল তার পরাক্রম, কূটনৈতিক বুদ্ধি
ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। পরাক্রমের কর্তা (৩য় স্থান ও অধিপতি
থেকে পরাক্রম বিচার্য) ৩য় পতি বুধ রবির (রাজনীতি, জীবনী
শক্তি, আত্মসম্মান বোধ, অহঙ্কার ইত্যাদির কারক) সঙ্গে যুক্ত
হয়ে এবং মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবস্থিত হয়ে মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট
হওয়ায় পরাক্রম ত আছেই; তার সঙ্গে একটা দৃঢ় ও সংগ্রামী মনোভাব
রয়েছে। বুদ্ধির কারক গ্রহ বুধ লগ্নের ৫মে (সূক্ষবুদ্ধি)
রবির সঙ্গে বুধাদিত্য যোগ তৈরী করেছে এবং এই দুটি গ্রহ আবার
১১শ স্থান থেকে ৯ম পতি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় ব্যক্তিত্ব
ও আত্মসম্মান বোধ পূর্ণ মাত্রায় লক্ষিত হয়েছে।
বাস্তবে অসম্ভব বলে
মনে হলেও মানুষের চরিত্রে পরস্পরের বিপরীত ধর্মী দুই ভাবের
একই সঙ্গে সমাবেশ ঘটতে পারে। জ্যোতিষ মতে গ্রহের কারকত্ব
ও গুণাগুণ দিয়ে এর ব্যাখ্যা অপেক্ষাকৃত সহজ। কুণ্ডলীতে ৫ম
পতি মঙ্গলের এবং ৯ম পতি বৃহ্রপতির ৫মে দৃষ্টি থাকায় ইন্দিরা
গান্ধীর মধ্যে একটা ধর্মভাব সুপ্ত ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই তাকে
অনেক মহাপুরুষ ও ধর্মগুরুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেখা গেছে।
(২০) জাতক পারিজাত
এবং সর্বার্থ চিন্তামণি গ্রন্থে বর্ণিত কিছু গ্রহ সন্নিবেশ
অনুযায়ী ইন্দিরার কুণ্ডলীতে কিছু রাজযোগ তৈরী হয়েছে। যেমন
(ক) যদি বুধ কেন্দ্রে বা কোণে অবস্থিত হয়ে ৯ম পতি দ্বারা
দৃষ্ট হয় তবে জাতক রাজার মত শক্তিশালী হয়। ইন্দিরার ছকে
বুধ লগ্ন থেকে ৫ম কোণে অবস্থিত হয়ে ৯ম পতি বৃহস্পতির দ্বারা
দৃষ্ট। (খ) যদি বৃহস্পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত থাকে বা বুধ
দ্বারা দৃষ্ট হয় তবে রাজ্য লাভ হয়। এটিও ছকে রয়েছে। (গ)
চন্দ্রের রাশিপতি নবাংশে যে রাশিতে থাকবে তার অধিপতি যদি
রাশিতে লগ্ন থেকে বা বুধের থেকে কেন্দ্রে বা কোণে অবস্থিত
হয় তা হলে জাতক রাজাধিপতি হবে। ইন্দিরার ছকে চন্দ্রের রাশিপতি
শনি এবং শনি নবাংশে নিজের ক্ষেত্রেই অবস্থিত। শনি রাশিতে
লগ্ন কেন্দ্রে এবং বুধের থেকে ৯ম কোণে রয়েছে; অতএব এই যোগ
হয়েছে। শ্লোকের অর্থ আক্ষরিক অর্থে না ধরে জাতক বা জাতিকার
রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি লাভ হয় এই ভাবেই ধরতে হবে।
১৯৭৭ সালে ইন্দিরা
গান্ধীর পতন কেন হল ? জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে দুটি গ্রহ যদি
একে অপরের ৬ষ্ঠ-৮ম রাশিতে থাকে (এটাকে ষষ্ঠাষ্টক অবস্থানও
বলে) তবে তাদের দশা-অন্তর্দশার ফল শুভ হয় না। ইন্দিরার নবাংশ
চক্রে বুধ ও শুক্র বৃহ্রপতি থেকে ৮মে ; শনি-রবি এবং শনি-মঙ্গলও
পরস্পরের ষষ্ঠে-অষ্টমে রয়েছে। সত্যাচার্যের সূত্র অনুযায়ী
এটাই ইন্দিরা গান্ধীর অন্তর্বর্তী কালে পতনের কারণ।
শাস্ত্রে এ রকম কয়েক হাজার শ্লোক ও নিয়ম রয়েছে। এ গুলি সাধারণের
পক্ষে আয়ত্ব করা বা মনে রেখে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব
নয়। এই কারণেই বর্তমান ধারাবাহিকে কিছু সাধারণ নিয়ম ও যুক্তির
উপর নির্ভর করে কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।