প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

জ্যোতিষশাস্ত্র প্রবেশিকা (ন্যান্য অনুচ্ছেদ)

এই বিভাগ এখনও UNICODE ফণ্ট-এ অসম্পূর্ণ। বাংলা হরফ ফণ্টে দেখতে এইখানে ক্লিক করুন।


অনুচ্ছেদ ১৫
কয়েকটি জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণ


৬. আলবার্ট আইনস্টাইন
জন্ম বিবরণ : ১৪ই মার্চ, ১৮৭৯; সময় : সকাল ১১ - ৩০ মিঃ; স্থান : Ulm, Germany; 10 E 0; 48 N 24; Time zone : 0-40-0 East; Day light saving-nil। লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা (balance of dasha) : বুধ ৯ বছর ৮ মাস ২৮ দিন।

জীবনের কিছু ঘটনা
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন জার্মানীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম Herman Einstein এবং মা Paulin Einstein। আইনস্টাইনের জন্মের পরের বছরই তার বাবা মা মিউনিখে চলে যান। আট বছর বয়সে আইনস্টাইন Luitpold Gymnasium-এ ভর্তি হন। বাবার ইচ্ছে ছিল তার ছেলে electrical engineering নিয়ে পড়াশোনা করে, কিন্তু আইনস্টাইন স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে এতে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ হয় না। ১৯৮৫ সালে তিনি বাবা-মার কাছে Pavlia-তে ( বর্তমান ইতালী ) চলে যান। এই সময়েই তিনি প্রথম বিজ্ঞান বিষয়ে প্রবন্ধ লেখেন। অনেকের মতে ছেলেবেলায় আইনস্টাইনের কথা বলার ক্ষেত্রে উচ্চারণে কিছু আড়ষ্টতা ছিল, কিন্তু অনেকে আবার এটা মানতে চান না। Zurich-এ পড়াশোনা করার বাসনায় তিনি একটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন কিন্তু গণিত ও পদার্থ বিদ্যা বিষয়ে খুব ভাল নম্বর পেলেও সব মিলিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। এরপর তার বাবা মা তাকে উত্তর সুইজারল্যাণ্ডে Aarau-তে পাঠিয়ে দেন মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার জন্য। ১৭ বছর বয়সে সৈন্য বাহিনীতে আবশ্যিক ভাবে যোগদানের ফতোয়া এড়াতে তিনি জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি Zurich Polytechnic-এ গণিত ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে চার বছরের পাঠক্রমে ভর্তি হন। Mileva Maric নামে একটি মাত্র মেয়ে সেই পাঠক্রমে ভর্তি হয়েছিল। এই সহপাঠিনীর সঙ্গে তিনি ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পাঠক্রমের শেষে ১৯০০ সালে তিনি ডিপ্লোমা পান কিন্তু Mileva পাশ করতে পারেন নি।

১৯০২ সালের জানুয়ারী মাসে আইনস্টাইন ও Mileva Maric-এর একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ১৯০৩ সালের ১লা জানুয়ারী আইনস্টাইন আইনগত ভাবে Mileva-কে বিয়ে করেন। কিন্তু ১৯০৩ সালের পরেই তাদের সেই কন্যাটির সম্বন্ধে আর কিছু জানা যায় না। ১৯০৪ সালের মে মাসে এবং ১৯১০ সালের জুলাই মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয় । ৫ বছর আলাদা বাস করার পর ১৯১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী আইনস্টাইন ও Mileva-র বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর পর ঐ বছরই ২রা জুন আইনস্টাইন Elsa Lowenthal-কে বিয়ে করেন। ১৯৩৩ সালে হিটলারের নেতৃত্বে Nazi পার্টির ক্ষমতা দখলের সময়ে আইন করে জার্মানীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে Jew দের কোন পদ গ্রহণ নিষিদ্ধ হলে আইনস্টাইন ও তার স্ত্রী স্থায়ী ভাবে আমেরিকায় চলে যান। ১৯৩৫ সালে Elasa Einsteinএর হৃৎযন্ত্র ও মূত্রাশয়ের পীড়া ধরা পড়ে এবং ১৯৩৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর মাসে Elsa মারা যান।

১৯৩৩ সালে আইনস্টাইন আমেরিকায় প্রিন্সটনে Institute for Advanced Study তে অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন এবং আমৃত্যু তিনি সেখানেই ছিলেন। আপেক্ষিকতত্বের প্রবক্তা হিসাবে আইনস্টাইন জগদ্বিখ্যাত হলেও ১৯২১ সালে তিনি যখন নোবেল পুরষ্কার পান তখন তত্বটি নিয়ে বিতর্ক চলছিল; তিনি নোবেল পুরষ্কার পান photoelectric effect-এর কিছু নিয়মের আবিষ্কারক হিসাবে। নিয়মের জটিলতার জন্য ১৯২১ সালের নোবেল পুরষ্কার তিনি অবশ্য পান ১৯২২ সালে। ১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল abdominal aortic aneurysm রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন পরলোক গমন করেন।
বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর জীবন ও তার গবেষণার খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। তার জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই তুলে ধরা হয়েছে।

জন্ম কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ

আইনস্টাইনের রাশি চক্রটি ১৫(৬)ক এবং নবাংশটি ১৫(৬)খ চিত্রে দেখান হয়েছে।

বিঃ দ্রঃ : এ যাবৎ কোন নিয়ম ব্যবহার করবার সময়ে প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়েছে। এখন থেকে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সেটা আর করা হবে না। আশা করা যায় ইতিমধ্যে পাঠকবর্গের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিষয় বা জ্ঞাতব্য তথ্য যথাযথ ভাবে অধিগত হয়েছে।
আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে কোন জাতকের সঠিক জন্ম সময় পাওয়া খুবই শক্ত এবং সেই কারণেই নির্ভুল জন্ম কুণ্ডলী তৈরী করতে গিয়ে খুব অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। জন্মের যে সময় পাওয়া যায় সেই অনুযায়ী কুণ্ডলী তৈরী করে অতীতের কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার সময় নির্ভুল ভাবে জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী জন্ম সময় সংশোধন (rectification of birth time) করটাই সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে হয়। কিন্তু জন্ম সময় এবং জন্ম স্থান জানা থাকলেও অনেক জ্যোতিষী তাদের বইতে লগ্ন গণনা করে কি করে বিভিন্ন লগ্নস্ফূট ( বিভিন্ন ডিগ্রি-মিনিট ) প্রকাশ করেন সেটা বোঝা কষ্টকর। আইনস্টাইনের জন্ম কুণ্ডলী সে
রকম একটা দৃষ্টান্ত।

(১) অসাধারণ বুদ্ধি, উদ্ভাবনী শক্তি, লিখন, পঠন-পাঠন, চঞ্চলতা ইত্যাদি মিথুন লগ্নের জাতকের বৈশিষ্ট্য। লগ্নে অশুভ গ্রহের প্রভাব থাকলে ঠগ, প্রতারক ইত্যাদিও হতে পারে।
আইনস্টাইনের জন্ম কুণ্ডলীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তার অসাধারণ মনন শক্তি। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদের সম্মান লাভ করা সাধারণ গ্রহ সন্নিবেশের ফলে সম্ভব নয়। লগ্ন মিথুন; লগ্ন ও ৪র্থ পতি বুধ ১০ম কেন্দ্র মীন রাশিতে নীচস্থ। কিন্তু যেহেতু মীনে তুঙ্গী শুক্র লগ্নের কেন্দ্রে অবস্থিত, অতএব বুধের নীচভঙ্গ হয়েছে। চন্দ্র থেকে দেখলেও মীন রাশির অধিপতি বৃহস্পতি চন্দ্র থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে থাকাতেও এই যোগ হয়েছে। বুধ গ্রহের বৈশিষ্ট্য হল লেখাপড়া, বুদ্ধি, গণিতে পারদর্শিতা, দার্শনিক মনোভাব, লেখা প্রকাশ করা, ছেলেমানুষী ইত্যাদি। বুধকে বালক গ্রহ বলা হয়। বুধ সহজেই অন্য গ্রহ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বলে, যে সব গ্রহ বুধের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের প্রকৃতি ও বল নির্ণয় করা প্রয়োজন। আলোচ্য ক্ষেত্রে বুধ মীন রাশিতে রবি, শুক্র ও শনির সঙ্গে অবস্থিত। শুক্র ৫ম ও ১২শ পতি, মূলত্রিকোণ তুলা রাশিতে। মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র খুবই শুভ গ্রহ। শনি ৮ম ও ৯ম পতি শুভাশুভ মিশ্রিত। রবি ৩য় পতি; পরাক্রম, লেখা প্রকাশন, মর্যাদা, আত্মসম্মান ইত্যাদির কর্তা। ৪টি গ্রহ সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্র ১০মে অবস্থিত। ১০মে রবি দিকবলে বলী।

(২) মঙ্গল মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতি, খুবই অশুভ গ্রহ। মঙ্গল ৮মে ( নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ) তুঙ্গী এবং রাহুর সঙ্গে যুক্ত। রাহুর সংযোগ মঙ্গলকে আরও জোরাল করে তুলেছে। তবে ১১শ স্থানকে অশুভ বলে চিহ্ণিত করা হলেও, ১১শ পতি শক্তিশালী মঙ্গলের ১১শে দৃষ্টি রয়েছে। সাধারণ ভাবে এরা জীবনে কৃতকার্য হয়, যদি অন্য গ্রহের বিরূপ প্রভাব না থাকে। ২য় স্থান থেকে পরিবার, কথাবার্তা, ধন সঞ্চয় ইত্যাদি বিচার্য। ২য়ে কেতু অবস্থিত এবং ২য় পতি চন্দ্র ৬ষ্ঠে বৃশ্চিক রাশিতে নীচস্থ। ৬ষ্ঠে চন্দ্র এমনিতেই শুভ বলে ধরা হয় না, নীচস্থ হলে ত কথাই নেই। তবে চন্দ্র কোন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট নয় ( কেতুর ৫ম দৃষ্টি না ধরলে )। বৃহস্পতি ৭ম ও ১০ম পতি, ৯ম কোণে অবস্থান করছে। বৃহস্পতির কেন্দ্রাধিপত্য দোষ রয়েছে। তবে বৃহস্পতির লগ্নে দৃষ্টি থাকায় লগ্নটি শক্তিশালী হয়েছে।

(৩) ১০ম কেন্দ্রে ৪টি শক্তিশালী গ্রহের অবস্থানের জন্য ১০ম ভাব অত্যন্ত জোরাল হয়েছে। ১০ম শুধু শক্তিশালী কেন্দ্র নয়, উপচয় স্থানও বটে; এখানে সব গ্রহই কিছু না কিছু শুভ ফল দেয়। ১০ম স্থান থেকে কর্ম, জীবিকা, নাম যশ, মান সম্মান ইত্যাদি বিচার্য। শুক্র তুঙ্গী। রবি মেষ রাশিতে তুঙ্গী হয়, রয়েছে ঠিক আগের রাশি মীনে, এ ধরণের গ্রহকে তুঙ্গাভিলাষী গ্রহ বলা হয়; তুঙ্গাভিলাষী রবি মিত্র ক্ষেত্র বৃহস্পতির ঘরে থাকায় যথেষ্ট বলবান। শনি বৃহস্পতির ঘরে সাধারণতঃ শুভ ফল দেয়। বুধের নীচভঙ্গ হওয়ায় বুধও বল সঞ্চয় করেছে। চন্দ্র বৃশ্চিক রাশিতে নীচস্থ, কিন্তু বৃশ্চিকের অধিপতি অর্থাৎ চন্দ্রের রাশিপতি (sign dispositor) মঙ্গল ৩য়ে ( উপচয় ) মকর রাশিতে তুঙ্গী হওয়ায় চন্দ্রের নীচভঙ্গ হয় নি ঠিকই, কিন্তু তার দুর্বলতা অনেকটাই কেটেছে।

(৪) আইনস্টাইনের কুণ্ডলীতে কি কি যোগ রয়েছে দেখা যাক ( অনুচ্ছেদ ১৪ ) । (ক) সবচেয়ে শক্তিশালী যোগ হল ৯ম ( ও ৮ম ) পতি শনির সঙ্গে ১০ম পতি বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক। এটাকে ধর্মকর্মাধিপতি যোগও বলে। ৮ম স্থান থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গোপন বিষয়ও নির্দেশ করে। যে কারণে ৮ম থেকে অজানা জিনিষ আবিষ্কার বা গবেষণাও বিচার করা হয়। ৮ম পতি শনির ১০মে অবস্থান এবং ১০ম পতি বৃহস্পতির সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় এবং বুদ্ধি ও গণিতের কারক গ্রহ নীচভঙ্গ বুধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় গবেষণার মাধ্যমে পরিচিতি ও সম্মান লাভ বোঝায়। অপর একটি ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক হয়েছে চন্দ্র লগ্নের সাপেক্ষে; ৪র্থ পতি শনির সঙ্গে ৫ম পতি বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময়। (খ) লগ্ন পতি ও ৪র্থ পতি বুধের সঙ্গে ৫ম পতি তুঙ্গী শুক্রের ১০ম কেন্দ্রে অবস্থানও একটি শক্তিশালী রাজযোগ। (গ) তুঙ্গাভিলাষী রবির সঙ্গে নীচভঙ্গ বুধের ১০মে অবস্থানের জন্য শক্তিশালী বুধাদিত্য যোগ হয়েছে। এই যোগটিও এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর বুদ্ধির উৎকর্ষ বিকাশে কম সহায়ক হয় নি। (ঘ) লগ্নপতি ও ৪র্থ পতি বুধের সঙ্গে ৯ম পতি শনির যোগ - সেই ১০ম কেন্দ্রেই। এটাও একটা রাজযোগ। (ঙ) তুঙ্গী শুক্র লগ্ন থেকে ১০ম কেন্দ্রে থাকায় পঞ্চ মহাপুরুষ যোগের একটি - মালব্য যোগ হয়েছে। এর ফল - বিদ্বান, ঐশ্বর্যশালী, সুশ্রী ইত্যাদি গুণের অধিকারী হওয়া। (চ) বৃহস্পতি ও চন্দ্র পরস্পরের কেন্দ্রে থাকায় গজকেশরী যোগ হয়েছে; এর ফল ১৪ নং অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (ছ) বৃহস্পতি ৯ম কেন্দ্রে এবং বুধ ও শুক্র ১০ম কেন্দ্রে থাকায় সরস্বতী যোগ হয়েছে; ফল - লেখক, বহু বিষয়ে জ্ঞান, সম্মান লাভ ইত্যাদি। (জ) লগ্নপতি তুঙ্গে এবং বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হলে চামর যোগ হয়। চামর যোগের অন্য একটা সংজ্ঞা হল দুটি শুভ গ্রহ যদি লগ্ন, ৭ম, ৯ম বা ১০মে থাকে তা হলেও চামর যোগ হয়। এখানে বৃহস্পতি ৯মে এবং বুধ ও শুক্র ১০মে অবস্থিত, কাজেই চামর যোগ হয়েছে। ফল - ভাল বক্তা, দার্শনিক ইত্যাদি। ৫ম স্থান থেকে উদ্ভাবনী শক্তি বিচার্য। এখানে ৫ম পতি শুক্র গ্রহ হওয়ায় আইনস্টাইনের উদ্ভাবনী শক্তির (creative faculty) মধ্যে কল্পনার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। বস্তুতঃ আইনস্টাইন কখনই খুব ভাল গণিতজ্ঞ হিসাবে খ্যাত হন নি; তার উপলব্ধি জাত জ্ঞানই (intuition) গণিতের আকারে প্রাকাশিত হয়েছে - এরই ফলে আপেক্ষিকতাবাদ (theory of relativity) উদ্ভাবন। কল্পনা ও গণিত ( শুক্র এবং বুধ ), বুদ্ধি ( বুধ ও রবির বুধাদিত্য যোগ ), দার্শনিক দৃষ্টি ( বৃহস্পতি ও শনির ক্ষেত্র পরিবর্তন ) - এই গুণ গুলিই আইনস্টাইনের সৃজনী শক্তির চালক। তিনি বলতেন 'জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ' (imagination is more important than knowledge)। অনেক জ্যোতিষীর মতে ৬ষ্ঠ পতি ( একটি দুঃস্থানের অধিপতি ) যদি ৮মে ( অপর একটি দুঃস্থান ) অবস্থিত হয়, তা হলে বিপরীত রাজযোগ বা হর্ষ যোগ হয়। একটি দুঃস্থানের কর্তা অপর একটি দুঃস্থানে থাকলে দুঃস্থানের অশুভত্ব কেটে গিয়ে শুভ হয় এই হল মূল কারণ। ফল কিছুটা শুভ হতে পারে হয় ত; কিন্তু বাস্তবে অনেক সময়ে খুব অশুভ ফলও লক্ষ্য করা যায়।

(৫) চন্দ্র নীচস্থ ঠিকই কিন্তু শুক্ল পক্ষের চন্দ্র। লগ্ন থেকে ১০ম কেন্দ্রে যে ৪টি গ্রহ কুণ্ডলীটিকে বলিষ্ঠ করেছে, সেই ৪টি গ্রহ চন্দ্র লগ্ন থেকে ৫ম কোণে অবস্থিত হওয়ায় গ্রহ গুলির কাযকারিতা ও শুভত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। শনি মকর রাশির অধিপতি; মকর রাশিতে তুঙ্গী মঙ্গল ( ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতি ) রাহুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় মঙ্গলের কারকত্বের ( যুদ্ধ, সৈন্য, সাহসিকতা ইত্যাদি ) তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুই গ্রহের রাশিপতি শনি ১০ম কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় শনি, বৃহস্পতি ও শুক্রের মানবিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মঙ্গল ও রাহুর ধ্বংসাত্মক ও আগ্রাসি দিকটাও সমন্বিত হয়েছে। ফলে যিনি ভর (mass) থেকে শক্তির(energy) রূপান্তরের সূত্রের প্রবক্তা তিনিই আবার যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়েও সোচ্চার। এবার কুণ্ডলীতে বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান জীবনের কিছু বিশেষ ঘটনার সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কিত সেটা দেখা যাক।

(৬) লগ্নের ২য়ে ( বাকস্থান ) কেতু অবস্থিত এবং ২য় পতি চন্দ্র নীচস্থ। ৬ষ্ঠ পতি ( রোগ, বাধা ইত্যাদি ) মঙ্গল ২য় স্থানকে দৃষ্টি দিচ্ছে; কারক গ্রহ বুধও ( নীচভঙ্গ হলেও সম্পূর্ণ দোষমুক্ত হয় না ) শনি ও রবির সঙ্গে যুক্ত। অতএব ছোটবেলায় আইনস্টাইনের কথা বলার সময় উচ্চারণগত কিছু সমস্যা থাকা অসম্ভব নয়। শোনা যায় ৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি একটি বাক্য সম্পূর্ণ বলতে পারতেন না। বুধ তথ্য, সংবাদ (communication and information) ইত্যাদির আদান প্রদানের কারক গ্রহ। স্কুলে তাকে অনেকে নির্বোধ বলেও অভিহিত করেছে। আইনস্টাইনের বুধের দশায় জন্ম এবং বুধের দশা স্থায়ী হয়েছে প্রায় ৯ বছর ৯ মাস অবধি। বুধ ৪র্থ পতি হিসাবে বাসস্থানেরও অধিপতি। স্কুলের পড়াশোনার সময় তিনি একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করেছেন। বুধের পরে কেতুর দশাতেও এটা হয়েছে। নবাংশেও বুধ ৪র্থ পতি এবং শনি ও কেতুর সঙ্গে ৮ম স্থানে যুক্ত।

(৭) ১৮৯৬ সাল থেকে আইনস্টাইনের শুক্রের দশা শুরু। ১৮৯৬ সালেই তিনি ৪ বছরের পাঠক্রমে ভর্তি হন এবং ১৯০০ সালে ডিপ্লোমা পান। শোনা যায় ১৯০২ সালে আইনস্টাইন ও Milevaa-র একটি কন্যা জন্ম গ্রহণ করেছিল; কিন্তু বছর খানেক পরেই তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। হয় তাকে কেউ দত্তক নিয়েছে অথবা সে আর বেঁচে ছিল না। আইনস্টাইনের তখন শুক্র-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশা চলছিল। শুক্র ৫ম পতি অবস্থিত ১০মে এবং চন্দ্র থেকে ৫মে। শুক্রের দশায় সন্তান হতেই পারে কিন্তু মঙ্গলের অন্তর্দশায় সেটা কি করে সম্ভব আপাত দৃষ্টিতে সেটা বোঝা কঠিন। বৃহস্পতি সন্তান কারক গ্রহ হয়ে ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত হয়ে মঙ্গলকে প্রভাবিত করেছে এবং বৃহস্পতির ৫মে দৃষ্টিও রয়েছে। অনেক সময় শুধু রাশিচক্র বা নবাংশ থেকে সব কিছু পরিষ্কার হয় না; তার জন্য বর্গ বিভাগ (divisional chart) দরকার। তবে সন্তানের জন্ম হলেও তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম; লগ্ন থেকে ৫ম স্থান তুলা রাশি। তুলা রাশির ২য় ও ৭ম স্থানের অধিপতি মঙ্গল ৫মের ( সন্তান স্থান ) পক্ষে মারক। অতএব মঙ্গলের অন্তর্দশাতেই তার মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া অসম্ভব নয়। অপর দুই সন্তানের জন্ম হয় ১৯০৪ সালের মে মাসে এবং ১৯১০ সালের জুলাই মাসে যথাক্রমে শুক্র-রাহু ও শুক্র-রবির দশা-অন্তর্দশায়। শুক্র পুত্রকারক বৃহস্পতির সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্কে আবদ্ধ এবং চন্দ্রের ৫মে অবস্থিত। রাহুর বৈশিষ্ট্য শনির মতই ( শনিবৎ রাহু ); রাহু অবস্থিত শনির ঘরে, মকরে। অতএব শুক্র-রাহু, শুক্র-শনির দশা-অন্তর্দশায় সন্তানের জন্ম সম্ভব। তবে তৃতীয় সন্তান Eduard মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল। এটা অসম্ভব নয়; কারণ পুত্র কারক গ্রহ বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপকর্তরী যোগে আক্রান্ত - একদিকে মঙ্গল, রাহু অপর দিকে শনি, রবির মধ্যে পিষ্ট।

(৮) ১৯০৩ সালের ৬ই জানুয়ারী শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইন তার একদা সহপাঠিনী Mileva কে বিয়ে করেন। শুক্র জায়াকারক গ্রহ; চন্দ্রলগ্ন থেকে ৭ম স্থানেরও অধিপতি। ৫ম স্থান থেকে আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি বিচার্য, এ কথা আগে বলা হয়েছে। এখানে ৫ম পতি শুক্র নিজেই জায়াকারক গ্রহ। আবার লগ্ন থেকে ৭ম পতি ( জায়া স্থানের অধিপতি ) বৃহস্পতি লগ্নের ৫মে দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৭ম পতি শুক্র চন্দ্রের ৫মে মীন রাশিতে তুঙ্গী। এই যোগ প্রণয় ঘটিত বিবাহ নির্দেশ করে।
১৯০৫ সালে শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশাতেই আইনস্টাইন তার সাড়া জাগান ৪ খানি গবেষণা মূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন; special theory of relativity এরই অন্তর্গত। রাহু শনির ক্ষেত্রে অবস্থিত এবং মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত। রাহুর নিজের বৈশিষ্ট্যও শনির মত; অতএব রাহু মঙ্গল ও শনির ফল দেবে। শনি চন্দ্র থেকে ৩য় স্থানের ( লেখালেখি, ছাপার অক্ষরে প্রকাশ ইত্যাদি ) অধিপতি, বুধের ( লিখন ও প্রকাশনার কারক গ্রহ ) সঙ্গে ৫ম ঘরে যুক্ত। লগ্ন থেকেও ৩য় পতি রবি বুধের সঙ্গে বুধাদিত্য যোগ তৈরী করে ১০মে অবস্থান করছে। মঙ্গল ১১শ পতি ( লাভ পতি ) ১১শ স্থানের ১০মে তুঙ্গী এবং মঙ্গলের ১১শে দৃষ্টিও রয়েছে, এটা বিশেষ কোন প্রাপ্তি যোগ নির্দেশ করে। ১০মে শক্তিশালী রবি পরিচিতি ও সম্মান প্রদান করে। বুধ ও শনি ১০মে শুক্রের সঙ্গে যুক্ত এবং শুক্র ২৭নং রেবতী নক্ষত্রে ( অধিপতি বুধ ) অবস্থিত।

(৯) ২য় ( পরিবার ) স্থানের অধিপতি চন্দ্র ৬ষ্ঠে ( শত্রু স্থান ) নীচস্থ এবং ৬ষ্ঠ পতি মঙ্গল রাহুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৬ষ্ঠে দৃষ্টি দিছে। ৮মে মঙ্গলের অবস্থান সাধারণতঃ বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামী ( বা স্ত্রীর ) মৃত্যু নির্দেশ করে। তবে মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে মঙ্গল ৮মে তুঙ্গী হওয়ায় এই দোষ কেটে যায় বলে জ্যোতিষীরা মনে করেন। কিন্তু এখানে মঙ্গল রাহুর সঙ্গে যুক্ত এবং মঙ্গলের উপর কোন শুভ গ্রহের দৃষ্টিও নেই। মনের দিক থেকে অনেক আগেই দূরত্ব তৈরী হলেও আইনগত ভাবে Mileva-র সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ১৯১৯ সালের ২রা জুন, রবি-শনির দশা-অন্তর্দশায়। ৮মে অবস্থিত মঙ্গল ২১নং উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে ( অধিপতি রবি ) অবস্থিত এবং রাহুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শনির অন্তর্দশায় ( শনিিবৎ রাহু ) ঘটনাটি ঘটেছে। আইনস্টাইন Mileva র সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করেন নি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ৭ম ( জায়া স্থান ) পতি বৃহস্পতি একদিকে রাহু-মঙ্গল এবং অন্য দিকে শনি-রবি এই অশুভ গ্রহদের দ্বারা পাপ কর্তরী যোগে আক্রান্ত। বৃহস্পতি নিজেও রয়েছে ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল )। Mileva বহু চেষ্টা করেও আইনস্টাইনকে তার দিকে ফেরাতে পারেন নি।

এই একই দশা অন্তর্দশাতেই ১৯১৯ সালের ২রা জুন আইনস্টাইনের সঙ্গে Elsa Lowenthal এর বিয়ে হয়। এটা আশ্চর্য জনক মনে হতে পারে যে একই দশা অন্তর্দশায় কি করে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিবাহের ঘটনা ঘটতে পারে। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল অনেক গ্রহেরই দুটি দিক আছে। শনি ৮ম পতি হিসাবে অশুভ কিন্তু ৯ম পতি হিসাবে শুভ। রবি লগ্ন থেকে ৩য় পতি হিসাবে ১০মে শুক্রের সঙ্গে থাকায় বিয়ের ব্যাপারে শুভ নয় কিন্তু চন্দ্র লগ্নের সাপেক্ষে রবি ১০ম পতি হয়ে চন্দ্রের ৫মে শুক্রের সঙ্গে থাকায় ততটা অশুভ নয়। শনির সঙ্গে ৭ম পতি বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময় হওয়ায় শনি পরোক্ষে বিবাহের কারক হয়েছে। অনেক সময়েই দেখা যায় ৮মে পাপ গ্রহ এবং কারক গ্রহ শুক্র দ্যত্মক রাশিতে ( অনুচ্ছেদ - ৩ ) বা দ্বিস্বভাব রাশিতে অবস্থিত হলে দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছে।
একই দশা-অন্তর্দশায় বিবাহ বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিবাহ সম্বন্ধে একটা কথা বলা যায়। অনেক সময়ে দেখা যায় কোন বিশেষ দশা-অন্তর্দশায় জাতক হয় ত প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছে বা অন্য ভাবে সম্পদ লাভ করেছে এবং সেই একই দশা-মন্তর্দশায় সে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে। অনেক জ্যোতিষী এটাকে যোগমারক নামে অভিহিত করেছেন। প্রাপ্তি এবং মৃত্যু একই গ্রহদের দ্বারা হচ্ছে।

(১০) ১৯১৬ সালের রবি-রবির দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইন তার general theory of relativity প্রকাশ করেন। রবি ৩য় পতি ( লেখা প্রকাশ ) হয়ে বুধের ( প্রকাশনার কারক গ্রহ ) ৫ম পতি শুক্র ( উদ্ভাবনা শক্তি ) ও ৯ম পতি ( ভাগ্য স্থানাধিপতি ) শনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১০ম কেন্দ্রে দিকবল যুক্ত রবির সঙ্গে ( রবি ১০মে দিকবলে বলী হয় - অনুচ্ছেদ ৭ ) অবস্থিত হওয়ায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশনার মাধ্যমে সম্মান ও পরিচিতি লাভ ঘটেছে।

(১১) ১৯২২ সালের ডিসেম্বর মাসে চন্দ্র-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইন নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন। দশা-অন্তর্দশা পতিদ্বয় পরস্পরের ৩য়-১১শে অবস্থিত - এটা শুভ। চন্দ্র নীচস্থ হলেও ১৮নং জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি বুধ ) অবস্থিত হওয়ায় বুধের ফল দিতে পারে। চন্দ্র লগ্নের ১১শ পতি নীচভঙ্গ বুধের এবং লগ্নের ১১শ পতি তুঙ্গী মঙ্গলের ( চন্দ্রের রাশিপতিও মঙ্গল ) ১১শে দৃষ্টি থাকায় কোন একটা বিরাট প্রাপ্তির ঘটনা নির্দেশ করে। সর্বোপরি শনি ও বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময় হয়েছে এবং বুধ ও রবির শনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১০মে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে মীন রাশিতে অবস্থিত হওয়ায় ঘটনাটি ঘটতে সাহায্য করেছে। শোনা যায় আইনস্টাইনকে তার নোবেল পুরষ্কারের সম্পূর্ণ টাকাটাই প্রথম পত্নীকে দিতে হয়েছে তাকে পরিত্যাগ করার ক্ষতি পূরণ হিসাবে। লগ্নের ২য় ( ধন স্থান ) পতি চন্দ্র ৭ম স্থানের ( জায়া স্থান ) ১২শে ( ব্যয় স্থান ) অবস্থিত। অতএব সঞ্চয় করা অর্থ স্ত্রীর জন্য ব্যয় বোঝায়। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ২য় পতি বৃহস্পতি স্ত্রী কারক গ্রহ শুক্রের ১২শে রয়েছে।

(১২) শুক্র শিল্প, সঙ্গীত, চারুকলা বিষযের কারক গ্রহ; শুক্র ১০ম কেন্দ্রে তুঙ্গী হয়ে লগ্নপতি বুধের সঙ্গে অবস্থিত হওয়ায় আইনস্টাইনের সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি নিজেও যে ভাল বেহালা বাজাতেন সেটা সুবিদিত।

(১৩) ১৯৩৩ সালে মঙ্গল-রাহুর দশা-অন্তর্দশা চলছিল। এই সময়ে জার্মানীতে হিটলারের উত্থান এবং তার Jew বিরোধী কার্য কলাপের জন্য আইনস্টাইন চিরদিনের জন্য দেশ ত্যাগ করেন এবং নিউ জার্সিতে Institute of Advanced Study in Princeton -এ অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ৬ষ্ঠ পতি মঙ্গল রাহুর সঙ্গে ৮মে রয়েছে। মঙ্গল ও রাহুর রাশি অধিপতি (sign dispositor) শনি শুক্র ও বুধের সঙ্গে যুক্ত। বুধ ৪র্থ ( বাসস্থান ) স্থানের অধিপতি ; শনি বিচ্ছেদ কারক গ্রহ। এবং রাহুর বৈশিষ্ট্য শনির মত। অতএব মঙ্গল-রাহুর দশা-অন্তর্দশায় তার দেশত্যাগ। ৮ম নিধন স্থান; ৮মে অবস্থিত মঙ্গল-রাহুর দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইনকে প্রায় মৃত্যু তুল্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। তার মাতৃ ভূমি জার্মানীতেই একজন Jew হবার অপরাধে তার নাম হত্যা তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তার মাথার দাম ধার্য হয় ৫ হাজার ডলার।

(১৪) ১৯৩৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর আইনস্টাইনের দ্বিতীয় পত্নী Elsa মারা যান। আইনস্টাইনের তখন মঙ্গল-শুক্রের দশা। মঙ্গল লগ্নের ৮ম অর্থাৎ ২য় ( পরিবার ) স্থানের ৭মে ( মারক স্থান ) এবং ৭ম ( জায়া স্থান ) স্থানের ২য়ে ( মারক স্থান ) অবস্থিত। শুক্র স্ত্রীর কারক গ্রহ। অতএব পত্নী বিয়োগ। ৮মে মঙ্গল বহু কুণ্ডলীতেই স্ত্রী বা স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সময় ও সুযোগ হলে এ সম্বন্ধে পরে বিস্তৃত আলোচনার ইচ্ছা রইল।

(১৫) আইনস্টাইনের নিজের মৃত্যু হয় ১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল রাহু-চন্দ্রের দশা-অন্তর্দশায়। চন্দ্র ২য় পতি ( মারক ) ৬ষ্ঠে নীচস্থ; রাহু ৮মে ( নিধন স্থান ) ২২নং শ্রবনা নক্ষত্রে ( অধিপতি চন্দ্র ) অবস্থিত। ৮মে ২ টি শক্তিশালী পাপগ্রহ মঙ্গল ও রাহুর অবস্থিত হওয়ায় আইনস্টাইন মৃত্যুর সময়ে খুবই যন্ত্রণা পেয়েছেন ধরে নেওয়া যায়।

(১৬) আইনস্টাইন এত অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন বৈজ্ঞানিক ছিলেন যে তার চরিত্রের অন্যান্য দিক সহজেই দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। আইনস্টাইনের চরিত্রে অনেক পরস্পর বিপরীত ধর্মী গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। ৫ম ও ১২শ পতি তুঙ্গী শুক্রের ১০মে অবস্থান তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, চারুকলার দিকে তার আকর্ষণও তৈরী করেছে ঠিকই কিন্তু একাধিক মহিলার সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও তৈরী হয়েছে একই কারণে। ২য় পতি চন্দ্র নীচস্থ হওয়াটাকে বিখ্যাত জ্যোতিষী বি. ভি. রমন তার Notable Horoscopes বইতে ব্যাখ্যা করেছেন অর্থের প্রতি তার নিরাসক্তি হিসাবে। কিন্তু চন্দ্র ত মনেরও কারক; নীচস্থ চন্দ্রের রাশি অধিপতি মঙ্গল ৩য়ে ( পরাক্রম স্থান ) তুঙ্গী এবং রাহুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তার অসাধারণ জেদ এবং প্রভুত্ব করার প্রবৃত্তি থাকাটাও সম্ভব। আবার একই সঙ্গে কুম্ভ রাশিতে ( philosophic sign) বৃহস্পতির অবস্থান এবং লগ্নকে দৃষ্টিদান অবশ্যই তার অন্তর্নিহিত দার্শনিক মনোভাবের প্রকাশক। ৯ম পতি ( ধর্ম স্থান ) শনির সঙ্গে বৃহস্পতির স্থান বিনিময় এই দার্শনিক মনোভাবকে আরও সুসংহত করেছে। যাই হোক, এই জন্ম কুণ্ডলীটির মূল দিকটা হল ১০ম স্থানে গ্রহদের কেন্দ্রীভূত শক্তি এবং তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজযোগের সম্মিলন। অসামান্য মনীষা ও প্রতিভার অধিকারী এই বৈজ্ঞানিক ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

দীপক সেনগুপ্ত
ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১১

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।