জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)
এই
বিভাগ এখনও
UNICODE ফণ্ট-এ অসম্পূর্ণ। বাংলা হরফ ফণ্টে দেখতে এইখানে
ক্লিক করুন।
অনুচ্ছেদ ১৫
কয়েকটি জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
৯.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম
বিবরণ
: ১৮৬১ খৃষ্টাব্দ, ৭ই মে; সময় : রাত্রি ২ - ৫১ মিঃ
; স্থান : কোলকাতা, ভারতবর্ষ; অক্ষাংশ ২২ ডিঃ ৪০ মিঃ উত্তর;
দ্রাঘিমাংশ ৮৮ ডিঃ ৩০ মিঃ পূর্ব। লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা
(balance of dasha) : বুধ ১২ বছর ১ মাস ২৮ দিন।
জীবনের
কিছু ঘটনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮৬১ খৃষ্টাব্দের ৭ই মে মঙ্গলবার কলকাতায় ৬নং দ্বারকানাথ
ঠাকুর লেনে জোড়াসাঁকোর এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম
গ্রহণ করেন। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা
দেবীর তিনি ছিলেন চতুর্দশ সন্তান। ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুর
ছিলেন ধনী জমিদার ও সমাজ সংস্কারক। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে Oriental
Seminary School-এ ভর্তি হন, কিন্তু গতানুগতিক ধারায় শিক্ষা
লাভের পদ্ধতি তাকে আকৃষ্ট করতে পারে নি। বিদ্যালয় ছেড়ে তিনি
বাড়িতেই শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনে ব্রতী
হন। পরে তিনি Normal School, Bengal Academy এবং St Xaviers
School-এ প্রবেশ করলেও বেশীদিন তা স্থায়ী হয় নি।
১৩ বছর বয়সে তত্ববোধিনী
পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ছদ্মনামে।
১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ হয়। মৃত্যুর সঙ্গে
চিরতরে বিচ্ছেদের বেদনাময় দিকটি যে জড়িত সেটা তখনও রবীন্দ্রনাথের
অজানা। তার হঠাৎ মনে হল, মা আর কোনদিন ফিরে এসে তার আসনে
বসবেন না। সমস্ত জীবন ধরে মৃত্যু মিছিল যেন তাকে তাড়া করে
ফিরেছে; কিন্তু তিনি ছিলেন স্থৈর্যের প্রতিমূর্তি। আঘাত
পেয়েছেন কিন্তু অসামান্য দার্শনিকতার সঙ্গে মৃত্যুকে গ্রহণ
করেছেন।
১৮৮৩ সালের ডিসেম্বর
মাসে যশোর নিবাসী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিনী দেবীর
সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ হয়। ভবতারিনী নামটিতে একটু প্রাচীনত্বের
ছোঁয়া থাকায় বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাবনায় স্ত্রীর
নাম হয় মৃণালিনী দেবী। দিদি সৌদামিনী দেবীর স্বামী সারদাপ্রসাদ
গঙ্গোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের বিয়ের দিনই পরলোক গমন করেন।
রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর তিন কন্যা ও দুই পুত্র জন্মগ্রহণ
করে। বড় মেয়ে মাধুরীলতার ( বেলা ) জন্ম ১৮৮৬ সালে। ১৮৮৮
সালে রথীন্দ্রনাথ ( রথী ), ১৯৮১ সালে রেণুকা দেবী ( রাণী
), ১৮৯৪ সালে মীরাদেবী ( অতসী )এবং ১৮৯৬ সালে ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ
( শমী ) জন্মগ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য
সৃষ্টি কোন নির্দিষ্ট কালের মধ্যে সীমবদ্ধ নয় । ছোট বয়স
থেকে শুরু করে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিনি লিখেছেন।
তার প্রথম কবিতার বই 'কবি কাহিনী' প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে
১৭ বছর বয়সে। ঐ বছরেই তিনি দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে
ইংল্যাণ্ডে যান এবং সেখানে University College-এ ভর্তি হন।
তিনি একবার আইন নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন কিন্তু সেটা বেশীদূর
এগোয় নি।
রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী
মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হয় ১৯০২ সালের ২৩শে নভেম্বর মাত্র
২৯ বছর বয়সে । তার মৃত্যুর কারণ ঠিক জানা যায় নি ; অনেকের
সন্দেহ তিনি এপেণ্ডিসাইটিসে ভুগছিলেন । যক্ষা রোগে আক্রান্ত
হয়ে দ্বিতীয় কন্যা রেনুকা দেবীর ( রাণী ) মৃত্যু হয় ১৯০৩
সালে । ১৯০৫ সালে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ১৯০৭ সালে
অত্যন্ত আদরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ( শমী ) পরলোক গমন করেন।
রবীন্দ্রনাথের স্থৈর্যের অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায় শমীর মৃত্যুর
প্রসঙ্গে যখন ছোট মেয়ে মীরাকে তিনি লেখেন " শমী যে
রাত্রে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায়
আকাশ ভেসে যাচ্ছে, কিছু কম পড়েছে তার লক্ষণ নেই। মন বললে
কম পড়েনি - সমস্তর মধ্যেই সব রয়ে গেছে, আমিও তারই মধ্যে
....... "।
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ
২য় বারের জন্য ইউরোপ যাত্রা করেন। যাত্রা পথেই তিনি গীতাঞ্জলীর
বেশ কিছু কবিতা ইংরাজিতে অনুবাদ করেন। লণ্ডনে তিনি বিখ্যাত
চিত্রশিল্পী Rothenstein-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। Rothenstein
রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ করা কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং তিনি বিখ্যাত
কবি Yeats এবং অন্যান্যদের রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে বলেন।
Rothesntein তার নিজের বাস ভবনে Yeats, Ezra Pound প্রভৃতি
বিখ্যাত কবি ও বিদগ্ধ জনদের আমন্ত্রণ করে রবীন্দ্রনাথের
কবিতা পড়ে শোনানোর ব্যবস্থা করেন। রবীন্দ্রনাথ ইউরোপ থেকে
আমেরিকায় পাড়ি দেন। ইতিমধ্যে India Society of London রবীন্দ্রনাথের
১০৩ টি অনুবাদ করা কবিতা নিয়ে একটি পুস্তক প্রকাশ করেন।
বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন Yeats এবং প্রচ্ছদ চিত্র অঙ্কন করেন
Rothenstein. ১৯১৩ সালের ১৩ই নভেম্বর ভারতবাসী রবীন্দ্রনাথের
নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির কথা জানতে পারে।
১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ জাপান যাত্রা করেন। পথে রেঙুন, সিঙ্গাপুর,
হংকং ইত্যাদি স্থানে আমন্ত্রিত বক্তৃতা দান করেন। আমেরিকার
বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর আমন্ত্রণ
আসতে শুরু করে।
১৯১৫ সালে তিনি Knighthood
পান। বড় মেয়ে মাধুরিলতার (বেলা) যক্ষা রোগে মৃত্যু হয় ১৯১৮
সালে। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের
প্রতিবাদে Knighthood ত্যাগ করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ
শিলাইদহ থেকে ফিরে এসে শান্তিনিকেতনে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য
দর্শনের মেল বন্ধন ঘটাতে এবং প্রকৃতির কোলে মুক্ত পরিবেশে
শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে একটি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। ১৯২১ সালে
সেটাই বিশ্বভারতীর রূপ নেয়। নোবেল পুরষ্কারের এবং পুস্তক
বিক্রির টাকা সবটাই তিনি বিশ্বভারতী গড়ে তুলতে কাজে লাগান।
১৯৪০ সালে Oxford University শান্তিনিকেতনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে রবীন্দ্রনাথকে Doctor of Literature উপাধি প্রদান
করে। মৃত্যুর কিছু আগে রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতন থেকে
কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর শরীরে অস্ত্রপ্রচার করা হয় কিন্তু
তাঁকে বাঁচান যায় নি।
পরমহংস যোগানন্দের
'যোগীকথামৃত' গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথকে ভারতের 'ঋষি কবি' নামে
উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবিকিই তিনি সংসারের সবার মধ্যে থেকেও
যেন নিরলস ও নিরাসক্ত ভাবে কর্তব্য করে গেছেন। বহু আঘাতে,
বাধা বিপত্তিতে এবং একের পর এক শোকে তিনি ছিলেন ভগবদ্গীতার
'দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনাঃ', স্থিতধী। শুধু উপনিষদ পাঠে এটা
হয় না; উপনিষদের চিন্তাধারা ও ভাবাদর্শ তাঁর ছিল জন্মগত
ভাবেই আত্মস্থ। উত্তারাধিকার সূত্রেই যেন তিনি এটা লাভ করেছিলেন।
বহু রবীন্দ্রসঙ্গীতের এটাই মূল সুর। এর ভাবের গভীরতা, কথা
ও সুরের একাত্মতা এবং আত্মনিবেদনের নতি তাই শ্রোতার মনে
অসীমের স্পর্শ বয়ে আনে। এ প্রসঙ্গে ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর
বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগের সময়ে একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ
করা যেতে পারে।
“ প্রভাতে উঠিয়া যখন মার মৃত্যু সংবাদ শুনিলাম তখনো সে-কথাটার
অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায়
আসিয়া দেখিলাম, তাঁহার সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে খাটের উপর
শয়ান। কিন্তু, মৃত্যু যে ভয়ঙ্কর সে-দেহে তার কোনো প্রমাণ
ছিল না; সেদিন প্রভাতের আলোকে মৃত্যুর যে-রূপ দেখিলাম তাহা
সুখসুপ্তির মতোই প্রশান্ত ও মনোহর। জীবন হইতে জীবনান্তের
বিচ্ছেদ স্পষ্ট করিয়া চোখে পড়িল না। কেবল যখন তাঁহার দেহ
বহন করিয়া বাড়ির সদর-দরজার বাহিরে লইয়া গেল এবং আমরা তাঁহার
পশ্চাৎ পশ্চাৎ শ্মশানে চলিলাম তখনই শোকের সমস্ত ঝড় যেন একেবারে
এক দমকায় আসিয়া মনের ভিতরটাতে এই একটা হাহাকার তুলিয়া দিল
যে, এই বাড়ির দরজা দিয়া মা আর-একদিনও তাঁহার নিজের এই চিরজীবনের
ঘরকরনার মধ্যে আপনার আসনটিতে আসিয়া বসিবেন না। বেলা হইল,
শ্মশান হইতে ফিরিয়া আসিলাম; গলির মোড়ে আসিয়া তেতালায় পিতার
ঘরের দিকে চাহিয়া দেখিলাম - তিনি তখনও তাঁহার ঘরের সম্মুখের
বারান্দায় স্তব্ধ হইয়া উপাসনায় বসিয়া আছেন।”
অধুনালুপ্ত প্রবাসী
পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের
সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ । ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৯
সালের মধ্যে অনেকটা সময় তিনি শান্তিনিকেতনে কাটান । এ সময়ের
কথায় তিনি প্রবাসী পত্রিকার ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যায়
লিখেছেন ,-"প্রায় ২৩ বৎসর পূর্ব্বে আমি শান্তিনিকেতনে
অনেক সময় থাকতাম - তাঁর বাড়ির সামনেই একটা বাড়িতে থাকতাম
মধ্যখানে ছিল একটা মাঠ । তিনি তখন এমন পরিশ্রমী ছিলেন যে
একদিনও রাত্রে তাঁর লিখবার পড়বার ঘরের আলো আমরা শুতে যাবার
আগে নিবতে দেখিনি । প্রত্যুষে বেড়াতে গিয়ে দেখেছি হয় তিনি
বারান্দায় উপাসনায় বসেছেন নতুবা উপাসনা সেরে লেখা বা পড়ার
কাজে গেছেন । সেকালে দুপুরে খাবার পরও তাঁকে কখনও শুতে বা
হেলান দিতে দেখিনি ; গ্রীষ্মে কাউকে তাঁকে পাখার বাতাস দিতে
বা তাঁকে নিজে হাতপাখা চালাতে দেখিনি । তখন শান্তিনিকেতনে
বৈদ্যুতিক আলো বা পাখা ছিল না ।"
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
(১) মীন লগ্ন, মীন
রাশি। লগ্নপতি ও ১০ম পতি বৃহস্পতি ৫মে কর্কটে তুঙ্গী। লগ্নপতি
লগ্নকে দৃষ্টি দেওয়ায় এবং লগ্ন কোন অশুভ গ্রহের সঙ্গ বা
দৃষ্টি বর্জিত হওয়ায় লগ্ন যথেষ্ট শক্তিশালী। চন্দ্র যদিও
শুক্ল পক্ষের চন্দ্র নয় তা হলেও মীন রাশিতে মিত্র ক্ষেত্রে
এবং স্বক্ষেত্র কর্কট রাশি থেকে ৯মে অবস্থিত হওয়ায় শুভত্ব
প্রাপ্ত হয়েছে। লগ্ন পতি বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপ কর্তরী
যোগে আক্রান্ত হওয়ায়, ৫ম স্থান এবং বৃহস্পতি দুইই পীড়িত।
মনের কারক গ্রহ ও ৫ম পতি চন্দ্রকে এই বৃহস্পতি দৃষ্টি দেওয়ায়
রবীন্দ্রনাথকে যথেষ্ট মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। চন্দ্র
উত্তরভাদ্রপদ ( অধিপতি দুঃখ কারক গ্রহ শনি ) নক্ষত্রে অবস্থিত
হওয়ায় এটা আরও জোরাল হয়েছে।
(২) লিখন (writing)
ও বুদ্ধির কারক গ্রহ বুধ ২য়ে এবং নবাংশে মিথুন রাশিতে স্বক্ষেত্রে
অবস্থিত। ২য় বাকস্থান। অনেক জ্যোতিষী ২য় স্থানকে উদ্ভাবনী
শক্তির পরিচায়ক বলেও চিহ্ণিত করেছেন। রবি মেষে তুঙ্গী হয়ে
বুধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শক্তিশালী বুধাদিত্য যোগ হয়েছে।
রবি আত্মার প্রকাশক ও আত্নসম্মান, প্রতিষ্ঠা ও যশ ইত্যাদির
কারক গ্রহ। শুক্র সঙ্গীত, শিল্প, চারুকলা ইত্যাদির কারক।
রবি ও শুক্র উভয়েই শুক্রের ভরণী নক্ষত্রে অবস্থিত। রবি,
বুধ ও শুক্রের ২য়ে অবস্থান এবং অন্য কোন অশুভ গ্রহের দ্বারা
প্রভাবিত না হওয়ায় বুদ্ধি ও চারুকলার অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে
লেখনীর মাধ্যমে। এই তিনটি গ্রহের কেন্দ্রে বৃহস্পতি অবস্থিত।
রবীন্দ্রনাথের রচনা যিনিই পড়েছেন, তিনি এই সব গ্রহের কারকত্বের
প্রকাশ তার রচনার মধ্যে অনুভব করতে পারবেন। ২য় বাকস্থান
হওয়ায় রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা এবং কণ্ঠ মাধুর্য ছিল আকর্ষণীয়।
(৩) ৪র্থ স্থান থেকে
গৃহ, গৃহসুখ, মাতা, বিদ্যালাভ ইত্যাদি বিবেচ্য। রবীন্দ্রনাথের
কুণ্ডলীতে ৪র্থ স্থান নিঃসন্দেহে অশুভ। দুটি নৈসর্গিক অশুভ
গ্রহ মঙ্গল এবং কেতু ( রাহুর দ্বারা দৃষ্ট ) অবস্থিত; ৪র্থ
পতি বুধ ৬ষ্ঠ পতি রবি এবং ৩য় ও ৮ম পতি শুক্রের সঙ্গে যুক্ত।
কোন শুভ গ্রহের দৃষ্টিও বুধের উপর না থাকায় ৪র্থ স্থান সম্বন্ধীয়
বহু বিষয় থেকেই রবীন্দ্রনাথ বঞ্চিত। পড়াশোনা ( প্রথাগত বিদ্যা
) হয় নি, খুব অল্প বয়সেই মাতৃ বিয়োগ হয়েছে, গৃহসুখ (domestic
peace) তিনি সে ভাবে কখনই পান নি এবং তিনি অধিকাংশ সময়ে
গৃহের বাইরেই ছিলেন। বিদ্যার বিচার ৪র্থ না ৫ম স্থান থেকে
হবে এ নিয়ে জ্যোতিষীদের মধ্যে বিতর্ক এখনও বর্তমান। রবীন্দ্রনাথের
জন্মকুণ্ডলী এ বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে পারে বলে মনে হয়।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথাগত ডিগ্রী লাভ ৪র্থ
স্থান থেকে বিচার্য কিন্তু জ্ঞান, প্রজ্ঞা বা সূক্ষবুদ্ধির
জন্য ৫ম স্থানই বিবেচ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী হলেই
তিনি প্রকৃত জ্ঞানী না হতেই পারেন, এ রকম উদাহরন অজস্র রয়েছে
( সম্ভতঃ এ যুগে আরও বেশী )। প্রকৃত জ্ঞান ও শিক্ষালাভের
জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অত্যাবশ্যক নয় রবীন্দ্রনাথের
অসাধারণ মনীষা ও প্রজ্ঞা সেটাই প্রমাণ করে।
(৪) বৃহস্পতি জ্ঞান
ও প্রজ্ঞার কারক গ্রহ। ৫ম স্থান থেকে সূক্ষবুদ্ধি, ভক্তি,
উপলব্ধি ইত্যাদি বিচার্য। বৃহস্পতি লগ্ন ও ১০ম পতি হয়ে ৫ম
কোণে তুঙ্গী হয়ে অবস্থানের জন্য উচ্চ আদর্শ ও সৃষ্টির প্রেরণা
রবীন্দ্রনাথের সহজাত। তবে সন্তানের কারক গ্রহ বৃহস্পতি ৫মে
( সন্তান স্থানে ) অবস্থিত হওয়ায় ' কারকো ভাবনাশকঃ ' সূত্র
অনুযায়ী ( অনুচ্ছেদ ১৪, ২৩ ক ) সন্তানের পক্ষে অশুভ। রবীন্দ্রনাথের
৫ জন সন্তানের ৩ জনই অল্প বয়সে মারা যান। অবশ্য ৫ম স্থান
পাপকর্তরী যোগে পীড়িত হওয়াটাও এর একটা কারণ।
(৫) ৬ষ্ঠে শনির অবস্থানের
জন্য তার শত্রু সৃষ্টি হয়েছে যথেষ্ট, কিন্তু তারা তার সে
রকম কোনও ক্ষতি করতে পারে নি। ৬ষ্ঠ পতি এবং নৈসর্গিক অশুভ
গ্রহ রবি ২য়ে ( পরিবার ) অবস্থিত বলে পারিবারিক ক্ষেত্রে
রাবীন্দ্রনাথ অসুখী ছিলেন।
(৬) ১০মে ( উপচয় )
রাহুর অবস্থান শুভ। সাধারণতঃ এতা সৃষ্টিধর্মী (innovative)
কোন কাজে প্রেরণা জোগায়। এখানে রাহু বৃহস্পতির ক্ষেত্রে
এবং শুক্রের নক্ষত্রে অবস্থানের জন্য রাহুর দশায় রবীন্দ্রনাথের
সাহিত্য সৃষ্টি অক্ষুণ্ণ ছিল। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ৮০ বছরের
জীবনে যে কয়টি গ্রহের দশা পেয়েছিলেন সেগুলি হল বুধ, কেতু,
শুক্র, রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, রাহু এবং বৃহস্পতির শুরুটা।
এদের মধ্যে কেতু বৃহস্পতির পুনর্বসু নক্ষত্রে এবং বুধের
ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে কোন বাধা
হয় নি এবং অন্য সব গ্রহ গুলি সাহিত্য সৃষ্টির পক্ষে স্পষ্টতই
শুভ। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। ৯ম পতি মঙ্গল ১০মে দৃষ্টি
দিচ্ছে এবং ১০ম পতি বৃহস্পতির ৯মে দৃষ্টি রয়েছে। উভয় গ্রহই
আবার ১১শে ( আয়, লাভ, ইচ্ছা পূরণ ইত্যাদি ) দৃষ্টি দিচ্ছে।
(৭) রবীন্দ্রনাথের
কুণ্ডলীতে বুধ ও শুক্র ২য়ে এবং বৃহস্পতি ৫মে থাকার জন্য
সরস্বতী যোগ হয়েছে। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ হল লগ্নপতি
( এবং ১০ম পতি ) বৃহস্পতির সঙ্গে ৫ম পতি চন্দ্রের ক্ষেত্র
বিনিময় এবং বৃহস্পতির দৃষ্টি চন্দ্রের উপর থাকা। এটি অত্যন্ত
শক্তিশালী যোগ এবং এটাই বিশ্বকবির অসামান্য সাফল্যকে বহুলাংশে
সম্ভব করেছে।
(৮) ১৮৭৫ সালের ১১ই মার্চ রবীন্দ্রনাথের
মাতৃবিয়োগ হয় কেতু-রবির দশা-অন্তর্দশায় | কেতু লগ্নের ৪র্থে
, মাতৃস্থানে অবস্থিত | মাতৃকারক গ্রহ চন্দ্র থেকে কেতু
এবং রবি ২য়ে মারক স্থানে অবস্থিত | শুক্র চন্দ্র লগ্ন থেকে
৩য় ও ৮ম পতি - দুইই অশুভ | রবি এবং শুক্র প্রায় একই ডিগ্রিতে
অবস্থিত থাকায় রবির মারকত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে | নবাংশেও লগ্নের
৪র্থে রবি অবস্থিত এবং চন্দ্র থেকে রবি ৮ম পতি |
(৯) রবীন্দ্রনাথের
বিয়ে হয় ১৮৮৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর শুক্র-রবির দশা অন্তর্দশায়।
৭ম ( জায়া স্থান ) পতি বুধ ২য়ে ( পরিবার - house of family
) রবি ও শুক্রের সঙ্গে অবস্থিত। রবি ও শুক্র দুটি গ্রহই
শুক্রের ( জায়া কারক ) নক্ষত্রে অবস্থিত।
(১০) রবীন্দ্রনাথের
৫ সন্তানই জন্ম গ্রহণ করে শুক্রের দশায়। শুক্র-মঙ্গল, শুক্র-রাহু,
শুক্র-বৃহস্পতি, শুক্র-শনি ও শুক্র-বুধের দশা অন্তর্দশায়।
রাশিচক্র থেকে শুক্রের দশায় কেন সন্তানের জন্ম হবে সেটা
স্পষ্ট নয়। বস্তুতঃ কেবল রাশিচক্র থেকে সব কিছু পরিষ্কার
করে বোঝা যায় না, এ জন্য বিভিন্ন বর্গ ও অন্যান্য পদ্ধতির
সাহায্য নিতে হয়। তবে ৫ম স্থান থেকে সন্তান বিচার্য এবং
কুণ্ডলীতে চন্দ্র ( ৫ম পতি ) ও বৃহস্পতি ( ৫মে অবস্থিত )
খুবই শক্তিশালী হওয়ায় এদের দশা অন্তর্দশায় সন্তানের জন্ম
সম্ভব। অবশ্য নবাংশ থেকে কিন্তু ছবিটা অনেক পরিষ্কার। বৃহস্পতি
পুত্রকারক হয়ে মঙ্গল, রাহু ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে । আবার
রাশিচক্রের ৫ম পতি চন্দ্রের সঙ্গে নবাংশে শনির ক্ষেত্র বিনিময়
সম্পর্কে আবদ্ধ। নবাংশে শুক্র তুলা রাশিতে মূলত্রিকোণে অবস্থিত
হওয়ায় শক্তিশালী। অতএব উপরি উক্ত দশা অন্তর্দশায় সন্তানের
জন্ম অসম্ভব নয়।
(১১) রবীন্দ্রনাথের
পিতৃবিয়োগ হয় ১৯০৫ সালের ১৯শে জানুয়ারী রবি-কেতুর দশা-অন্তর্দশায়।
রাশিচক্রের ৯ম ( পিতৃস্থান ) থেকে ৮মে ( নিধন স্থান ) কেতুর
অবস্থান এবং ৯ম পতি মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত। শুক্র ৯ম স্থান
থেকে ৭ম ( মারক ) স্থানের অধিপতি হয়ে পিতৃকারক রবির সঙ্গে
যুক্ত থাকায় রবির দশা মারক হয়েছে।
(১২) রবীন্দ্রনাথের
৫ সন্তানের অনেকেই রবীন্দ্রনাথের জীবিত কালেই মৃত্যুমুখে
পতিত হয়। যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে বড় মেয়ে মাধুরিলতার মৃত্যু
হয় ১৯১৮ সালের ১৬ই মে, মঙ্গল-বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশায়।
পুত্র রথীন্দ্রনাথ প্রায় ৭৩ বছর বেঁচেছিলেন। কিন্তু রেণুকার
মৃত্যু হয় মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
, রবি-শনির দশা-অন্তর্দশায়। ছোট মেয়ে মীরা প্রায় ৭৫ বছর
বেঁচেছিলেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আদরের ছোট ছেলে শমীর মৃত্যু
হয় মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯০৭ সালের ২৩ শে নভেম্বর, চন্দ্র-মঙ্গলের
দশা-অন্তর্দশায়। শুধু বড় মেয়ে মাধুরীলতার মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ
করে বাকীটা পাঠকের উপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মাধুরীলতার মৃত্যু
মঙ্গল-বৃহস্পতিতে। লগ্নের ৫ম স্থান কর্কট রাশি, এই রাশির
ক্ষেত্রে মঙ্গল রাজযোগকারী গ্রহ। তা হলে মঙ্গল কি করে মৃত্যুর
কারণ হয় ? তবে এখানে মঙ্গল ৫ম স্থানের ১২শে ( ব্যয়, ক্ষতি
) কেতুর সঙ্গে একই রাশিতে যুক্ত। ৫মে বৃহস্পতি শক্তিশালী
পাপ কর্তরী যোগে আক্রান্ত। অতএব বৃহস্পতি পরোক্ষে মারক হয়েছে।
বৃহস্পতি রবীন্দ্রনাথকে যেমন সৃষ্টির প্রেরণা দিয়েছে ঠিক
একই সঙ্গে বহু দুঃখ ও কষ্টের কারণ হয়েছে।
(১৩) ১৮৭৮ সালের অক্টোবর
মাসে কেতু-শনির দশা-অন্তর্দশায় রবীন্দ্রনাথ ইংল্যাণ্ড যাত্রা
করেন। বিদেশ যাত্রা কোন স্থান থেকে বিচার্য সেটা নিয়ে জ্যোতিষীদের
মধ্যে মত পার্থক্য দেখা যায়। তবে ৭ম, ৯ম ও ১২শ স্থান দূর
ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বেশীর ভাগ জ্যোতিষীর মত। কেতু
বুধের ক্ষেত্রে অবস্থিত বলে বুধের ফল দেবে , বুধ ৭ম পতি।
কেতু বৃহস্পতির নক্ষত্রে অবস্থিত বৃহস্পতি লগ্ন ও রাশিপতি
এবং মীন রাশির ( জল রাশি ) অধিপতি। রবীন্দ্রনাথের সময়ে বিদেশ
যাত্রার সঙ্গে জল রাশির সম্পর্ক থাকাটা স্বাভাবিক। শনি কেতুর
নক্ষত্রে অবস্থিত এবং ১২শ স্থানের অধিপতি।
(১৪) ১৯১৩ সালের ১৪ই
নভেম্বর ভারতবাসী জানতে পারে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে
নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তখন রবীন্দ্রনাথের শনি-কেতুর দশা-অন্তর্দশা।
আগেই বলা হয়েছে কেতু বুধের ক্ষেত্রে এবং বৃহস্পতির নক্ষত্রে
মূলতঃ বুধ ও বৃহস্পতির ফল দেবে। বৃহস্পতি লগ্নপতি ও ১০ম
পতি হয়ে তুঙ্গী ও বুধের নক্ষত্রে অবস্থিত এবং ১১শে ( আয়,
লাভ, ইচ্ছা পূরণ ইত্যাদি ) দৃষ্টি রয়েছে। ১১শ পতি শনি কেতুর
নক্ষত্রে থাকার জন্য শনি-কেতু সম্মিলিত ভাবে এই ফল দিয়েছে।
(১৫) রবীন্দ্রনাথের
নিজের মৃত্যু হয় ১৯৪১ খৃষ্টাব্দের ৭ই আগষ্ট বৃহস্পতি-বৃহস্পতির
দশা-অন্তর্দশায়। বৃহস্পতি লগ্ন ও রাশি পতি তুঙ্গী হয়ে ৫ম
কোণে অবস্থিত হওয়ায় এবং ৫ম পতি চন্দ্রের সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময়
হওয়ায় যথেষ্ট শুভ। লগ্নপতি বৃহস্পতি লগ্নকেও দৃষ্টি দিচ্ছে।
এই বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশায় মৃত্যু হওয়া একটু অস্বাভাবিক
মনে হতে পারে। বুধ ৭ম-এর ( মারক স্থান ) অধিপতি হয়ে ২য়ে
( মারক স্থান ) অবস্থানের জন্য শক্তিশালী মারক হিসাবে পরিণত
হয়েছে। বৃহস্পতি বুধের অশ্লেষা নক্ষত্রে অবস্থানের জন্যও
মারকত্ব লাভ করেছে। নবাংশেও বৃহস্পতি লগ্নের ৭মে ( মারক
স্থান ) এবং চন্দ্র থেকে ২য়ে ( অপর একটি মারক স্থান ) অবস্থিত।
এ ছাড়াও বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপকর্তরী যোগে আক্রান্ত। এ
জন্যই বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশা রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ডেকে
এনেছে। ৬ষ্ঠ ( রোগ স্থান ) পতি রবি ৮ম ( প্রস্ট্রেট গ্ল্যাণ্ড
) পতি শুক্রের সঙ্গে প্রায় একই ডিগ্রীতে অবস্থিত হওয়ায় এবং
১২শ পতি শনি ৬ষ্ঠে অবস্থিত হয়ে ৮মে দৃষ্টি দেওয়ায় তিনি প্রস্ট্রেট
গ্ল্যাণ্ড সংক্রান্ত জটিলতার জন্য মৃত্যু মুখে পতিত হন।
(১৬) রবীন্দ্রনাথের
অসামান্য সাফল্য ও তাঁর বহুমুখী প্রতিভা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে
সরস্বতী যোগ, বুধাদিত্য যোগ এবং লগ্ন ও ১০ম পতি বৃহস্পতির
সঙ্গে ৫ম পতি চন্দ্রের ক্ষেত্র বিনিময় - মূলতঃ এই কারণ গুলিকেই
তুলে ধরতে হয়। বুধাদিত্য যোগ এ ক্ষেত্রে খুব শক্তিশালী হলেও
এই যোগ এবং সরস্বতী যোগ খুব বিরল নয়। তুঙ্গী লগ্নপতি ও ১০ম
পতির সঙ্গে ৫ম পতি চন্দ্রের ক্ষেত্র বিনিময় সেই সঙ্গে বৃহস্পতির
লগ্ন ও চন্দ্রকে দৃষ্টি দেওয়া অবশ্যই একটি অতি শক্তিশালী
যোগ। এ সত্বেও শুধু এই কয়টি গ্রহের অবস্থান ও যোগ রবীন্দ্রনাথের
মত অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন ও উচ্চ মানসিকতার অধিকারী কোন
মহাপুরুষের সমস্ত জীবনের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য যেন
যথেষ্ট নয়।
এ সব ছাড়াও একটি বিষয় লক্ষণীয়। ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গল রাশি,
দ্রেক্কোণ, চতুর্থাংশ, সপ্তাংশ, দশাংশ ও দ্বাদশাংশ বর্গ
বিভাগের এই ছয় ক্ষেত্রে ( অনুচ্ছেদ ৬ ) মিথুন রাশিতে বুধের
ক্ষেত্রে অবস্থিত। এই ক্ষেত্রবলের জন্য ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গল
যথেষ্ট জোরাল হয়েছে এবং বুধের ( লিখন, বুদ্ধি ও প্রকাশনার
কারক গ্রহ ) বৈশিষ্ট্য প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক বেশী সহায়ক
হয়েছে। মঙ্গলের এই বর্গবলের জন্য ২য় স্থানে মঙ্গলের ক্ষেত্রে
অবস্থিত তিনটি গ্রহই অনেক শক্তিশালী হয়েছে এবং ৯ম স্থানের
কারকত্ব অনেক সুপ্সষ্ট ভাবে প্রকাশ করেছে। তবে নবাংশ একটি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বর্গ ; নবাংশতেও মঙ্গল মিথুন রাশিতে
থাকলে এটা আরও শক্তিশালী হত এতে কোনও সন্দেহ নেই । মঙ্গল
রাশিচক্রেও স্বনক্ষত্রে ( মৃগশিরা ) অবস্থিত। এই সূক্ষ বর্গ
বিভাগ না করলে শুধু রাশিচক্রে মঙ্গলের এই বৈশিষ্ট্য কিন্তু
চোখে পড়ে না। মঙ্গল ও তুঙ্গী রবি রবীন্দ্রনাথকে অসাধারণ
কর্মক্ষমতা ও সৃজনী শক্তি দিয়েছে। তিনি মঙ্গলের কর্মক্ষমতা
পেয়েছেন কিন্তু উগ্রতা পান নি। মঙ্গল ৯ম পতি ( ভাগ্য, ধর্ম
ইত্যাদি ) ও বর্গবলে বলী হওয়াতে মঙ্গলের ধনাত্মক দিকটির
প্রকাশ ঘটেছে বিশেষ ভাবে। রবীন্দ্রনাথ সংসারে সবার মধ্যে
থেকেই কাজ করে গেছেন কিন্তু তাঁর চিন্তা ও কাজের মধ্যে একটা
আদর্শ বোধ ও ধর্মভাব প্রচ্ছন্ন ছিল। তার ধর্মবোধ তাঁকে সংসার
ত্যাগে উৎসাহিত করে নি ( শনির আনুকূল্য ছাড়া এটা হয় না )
, সংসারে বহু কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেও তিনি সবার থেকে
আলাদা ছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল ৫মে মেষ রাশিতে
মূলত্রিকোণে অবস্থিত এবং রবি, বুধ ও শুক্র রবীন্দ্রনাথের
মতই লগ্নের ২য়ে যুক্ত। বিবেকানন্দ মাত্র ১৬ বছরের কর্মজীবনে
যা কাজ করে গিয়েছেন তা আমাদের বিস্ময়ের উদ্রেক করে; তাঁর
কবিত্ব শক্তিও সুবিদিত। রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের কুণ্ডলী
দুটি বিশ্লেষণ করলে কতগুলি লক্ষণীয় বিষয় চোখে পড়ে। দু জনেরই
মঙ্গল শক্তিশালী। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে মঙ্গল প্রচ্ছন্ন
ভাবে তাঁর লেখনীকে গতিময় রেখেছে, নিরলস ভাবে সৃষ্টির ধারাবাহিকতা
অক্ষুণ্ণ রাখতে সহায়ক হয়েছে। বিবেকানন্দের মঙ্গল স্বয়ং ৫ম
পতি ৫মে মেষ রাশিতে মূলত্রোকোণে অবস্থিত। এখানে মঙ্গল অত্যন্ত
কর্মচঞ্চল, মাঝে মাঝে ধৈর্যহীন; সীমিত সময়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে
পৌঁছোনর মানসিকতায় সে দৃঢ়। একই গ্রহ স্ব-বৈশিষ্ট্য বজায়
রেখেও বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে অবস্থানের তারতম্য অনুসারে
প্রকাশময়তায় বিভিন্ন।