জ্যোতিষশাস্ত্র
প্রবেশিকা (অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)
এই
বিভাগ এখনও
UNICODE ফণ্ট-এ অসম্পূর্ণ। বাংলা হরফ ফণ্টে দেখতে এইখানে
ক্লিক করুন।
অনুচ্ছেদ ১৫
কয়েকটি জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
১০. শচীন তেণ্ডুলকর
জন্ম
বিবরণ : তারিখ ২১ শে এপ্রিল, ১৯৭৩ ; সময় : বিকাল ৬ - ০১
মিঃ। স্থান : মুম্বই ( মহারাষ্ট্র ) , ভারতবর্ষ। অক্ষাংশ
: ১৮ ডিঃ ৫৮ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ : ৭২ ডিঃ ৫০ মিঃ পূর্ব।
লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা ( balance of dasha ) : বুধ :
১০ বছর ৮ মাস ১২ দিন।
[ শচীনের জন্ম তারিখ
ও সময় নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকেই তার জন্ম তারিখ ২৪ শে এপ্রিল
ধরেছেন। এটার একটা কারণও আছে, শচীনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান
পারিবারিক ভাবে ২৪ তারিখেই উদযাপিত হয়। কিন্তু প্রখ্যাত
জ্যোতিষী কে. এন. রাও নিম্নলিখিত ঘটনাটি জানিয়েছেন।
শচীনের খুব অল্প বয়সে
তার পিতা শচীন এবং বড় ছেলে অজিতকে সঙ্গে নিয়ে যোগী S. E.
Karve -এর সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রশ্ন করেন অজিত ক্রিকেটে
সুনাম অর্জন করবে কি না। অজিত তখন পুরো দমে ক্রিকেট খেলছে।
কিন্তু যোগী কার্ভে শচীনকে দেখিয়ে বলেন অজিত নয়, শচীনই ক্রিকেটে
বিশ্বখ্যাত হবে। যোগী কার্ভের মেয়ে Pinky Karve -এর ঈশ্বরদত্ত
ক্ষমতা ছিল কোন ব্যক্তির সঠিক জন্ম সময় নির্ধারণ করার। তারই
প্রদত্ত জন্ম তারিখ ও সময় এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে
বলা যেতে পারে যে অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে যে কোন খ্যাতনামা
ব্যক্তির ( বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেতাদের ) পরিবার থেকেই সঠিক
জন্ম সময় সঙ্গত কারণেই সব জ্যোতিষীকে দেওয়া হয় না। শোনা
যায় এই জন্ম সময়টিই শচীনের বাবা-মার কাছে ছিল। ]
জীবনের কিছু ঘটনা :
শচীনের খেলোয়াড় জীবনের কৃতিত্বের সম্পূর্ণ তালিকা তুলে ধরা
এখানে উদ্দেশ্য নয় । বর্তমান প্রসঙ্গে যেটুকু দরকার শুধু
সেটুকুই তুলে ধরা হয়েছে ।
মা রজনী বিমা কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং বাবা রমেশ তেণ্ডুলকর
ছিলেন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের মারাঠি সাহিত্যের অধ্যাপক।
অত্যন্ত প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেব বর্মনের নামানুসারে
বাবা ছেলের নাম রাখেন শচীন, একদিন ছেলে বিখ্যাত গায়ক হবে
এই সুপ্ত ইচ্ছায়। দাদা অজিত ক্রিকেট খেলতে শচীনকে উৎসাহ
দিত। শচীনের ছোট ভাই নীতিন ও বোন সবিতা।
ছোট বয়স থেকেই শচীন
রোজ কয়েক ঘণ্টা ধরে net practice করতেন। শচীনের ১৫ বছর বয়সে
বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় সুনীল গাভাস্কর তাকে এক জোড়া light
pad উপহার দেন। কে জানতো শচীন এক দিন গাভাস্করের ৩৪ টি সেঞ্চুরীর
রেকর্ড ভঙ্গ করবেন। ১৯৮৮ সালে যখন তার বয়স ১৬ বছরেরও কম,
তখন তিনি গুজরাটের বিরুদ্ধে বম্বে দলে খেলতে নেমে আউট না
হয়ে শত রান করেন। Deodhar ও Duleep ট্রফিতে প্রথম আবির্ভাবেই
শত রান ছিনিয়ে নেন। সেই সীজ্নে তিনিই মুম্বইতে সব চেয়ে বেশী
রান সংগ্রহ করেন। প্রথমে খেলতে নেমেই Irani ও Ranji ট্রফিতে
শত রানে অপরাজিত থাকেন। তার প্রতিশ্রুতিপূর্ণ দক্ষতা দেখে
তাকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের
বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে খেলার জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু
এই খেলায় pace bowler ইউনুসের বলে খেলতে গিয়ে শরীরে আঘাত
পান এবং মাত্র ১৫ রান তুলতে পারেন। শিয়ালকোটের টেস্ট ম্যাচ
খেলার সময় তিনি নাকে আঘাত পান এবং রক্তক্ষরণ হয় কিন্তু তিনি
খেলা ছেড়ে যান নি। শচীনের দীর্ঘ খেলোয়াড় জীবনের মধ্যে অনেক
বার তাকে শারীরিক আঘাত পেতে হয়েছে। এর পর ১৯৯০ সালে ইংল্যাণ্ডে
Old Stafford-এ খেলতে গিয়ে শত রান করেন এবং তার শৃঙ্খলা
বোধ ও বল মারার ভঙ্গী খেলোয়াড়দের প্রশংসা অর্জন করে।
১৯৯১ - ৯২ সালে ১৮ বছর বয়সে সিডনীতে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে
খেলায় শচীন ১৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন এবং পার্থ-এ আবার শতরান
করেন। খেলোয়াড় হিসাবে শচীনের সব চেয়ে কৃতিত্বপূর্ণ সময় ১৯৯৪
থেকে ১৯৯৯ সাল। ১৯৯৬ সালের world cup-এ তিনি দুই শত রান
করেন। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার টিম খেলতে ভারতে এলে শচীন
পর পর তিনটি সেঞ্চুরী করেন। সে বছরেই অষ্ট্রেলিয়া যখন ৩১
ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ২০৩ রান করে মোট ৩২০ রানের পর জেতার
স্বপ্ন দেখছে; সেই সময়ে শচীন বল করতে নেমে ১০ ওভারে ৩২ রানের
পরিবর্তে Michael Bevan, Steve Waugh, Danen Lehmann, Tom
Moody এবং Damien Martyn-কে পর পর পরাজিত করে খেলার মোড়
ভারতের পক্ষে ফিরিয়ে আনেন।
১৯৯৫ সালে শচীন গুজরাটের শিল্পপতি আনন্দ মেহেতার মেয়ে অঞ্জলিকে
বিয়ে করেন। সারা ও অর্জুন তাদের দুই সন্তান।
১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ICC কোয়ার্টার ফাইনালে ১২৮ বলে
১৪১ রান তুলে এবং অস্ট্রেলিয়ার ৪টি উইকেট ফেলে দিয়ে সেমি
ফাইনালে ভারতের প্রবেশ সুনিশ্চিত করেন।
১৯৯৯ সালে চীপকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলায় শচীন শত রান
করা সত্বেও ভারতকে হার স্বীকার করতে হয়। সে বছরেই world
cup-এ খেলার সময়ে শচীনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা
যান এবং শেষকৃত্যে যোগদান করতে শচীনকে ভারতে চলে আসতে হয়।
কিন্তু ফিরে এসে ব্রিস্টলে কেনিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে
১০১ বলে অপরাজিত ১৪০ রান করেন এবং এই সেঞ্চুরীটি বাবার নামে
উৎসর্গ করেন।
Captain হিসাবেও শচীন
দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০০ সালে তিনি captaincy ছেড়ে দিলে
সৌরভ গাঙ্গুলী captain হিসাবে মনোনীত হন। ২০০৭ সালে BCCI
প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ার তাকে আবার দলকে নেতৃত্ব দেবার অনুরোধ
করলে শচীন মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম প্রস্তাব করেন।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত world cup-এ শচীনের খেলার
মান নিশ্চয়ই খারাপ নয় তবে তার কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক
বেশী। তিনি এই খেলায় দ্বিতীয় বৃহত্তম রান করেন - ৯টি ম্যাচে
৫২ টি ৪ এবং ৮ টি ছয় মেরে মোট ৪৮২ রান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের
বিষয় তিনি সেমি ফাইনালে ৮৫ রানে আউট হন। সেঞ্চুরী করতে পারলে
তিনি ১০০ টি শত রান করতে পারতেন এবং ১০৩ রান করলে এই world
cup-এ সব চেয়ে বেশী রানের কৃতিত্ব অর্জন করতে পারতেন। ফাইনালে
তার খেলা খুব উল্লেখযোগ্য নয় তবে world cup-এর ইতিহাসে তিনিই
প্রথম ২০০০ রানের অধিকারী হন। এ ছাড়া শচীনের কৃতিত্বের মধ্যে
রয়েছে , একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় (ODI) প্রথম ২০০ রানের
অধিকারী হওয়া , টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ১৫০০০ রান তোলা , সর্বাধিক
সংখ্যক ম্যাচ খেলা , ২০১১ সালে IPL-এ ৬৬ বলে ১০০ রানে অপরাজিত
থাকা ইত্যাদি ।
খেলাধুলা সম্বন্ধে
আমার জ্ঞান সীমিত । যদিও শচীনের খেলোয়াড় জীবনের সম্পূর্ণ
তথ্য তুলে ধরা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়, তা হলেও পরিবেশিত তথ্যে
যদি কোন ভুল থাকে তবে কোন পাঠক সেটা জানালে অবশ্যই সংশোধনের
ব্যবস্থা করা হবে ।
ক্রিকেটে চোখ ধাঁধানো
সাফল্যের পাশে জনকল্যাণ মূলক কাজে শচীনের প্রয়াস অনায়াসেই
সবার অজানা থেকে যায়। মুম্বইতে NGO-এর ( শচীনের শাশুড়ি এর
সঙ্গে যুক্ত ) সাহায্যে প্রতি বছর শচীন ২০০ জন গরীব ছাত্র
ছাত্রীর ভার গ্রহণ করে থাকেন। টুইটারে শচীনের একটি আবেদনের
ভিত্তিতে ১ কোটিরও বেশী টাকা সংগৃহীত হয় ; এটা তিনি ক্যান্সার
রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যয় করেন।
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
(১) শচীনের কুণ্ডলীটি
পরীক্ষা করলে কতগুলি বিভ্রান্তিকর গ্রহ অবস্থানের বিষয় চোখে
পড়ে। সেগুলি হল -
(ক) লগ্নপতি ও ১০ম পতি বুধ নীচস্থ ( যদিও কেন্দ্রে অবস্থিত
)। এক্ষেত্রে কুণ্ডলীটি দুর্বল হয়ে যাবার কথা।
(খ) ১১শ পতি চন্দ্র নীচস্থ। লাভপতি ও আয়পতি নীচস্থ হলে জাতকের
আয় বা অন্য যে কোন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধা হবার কথা।
(গ) ৪র্থ ও ৭ম পতি বৃহস্পতি নীচস্থ ( যদিও ৫ম কোণে অবস্থিত
)। এতে ৪র্থ ও ৭ম ভাব সম্বন্ধীয় বিষয়ে ফল লাভের আশা সাধারণ
ভাবে কম হবার কথা।
(ঘ) ২য় ও ৯ম পতি শুক্র ৮মে ( নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ) অবস্থিত।
এতে ধন লাভের ক্ষেত্রে ও সামগ্রিক ভাবে দুর্ভাগ্যের শিকার
হবার কথা।
প্রশ্ন হল এতগুলি প্রতিকূল গ্রহ অবস্থান সত্বেও শচীন সফল
হলেন কি ভাবে ? দুর্ভাগ্যের বার্তা সহ জন্ম গ্রহণ করে নিশ্চয়ই
পৃথিবী বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড়ের পরিচিতি পাওয়া সম্ভব নয়।
তা হলে ?
(২) কিছু গ্রহের অবস্থান
জনিত উল্লিখিত দুর্বলতা রয়েছে ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি শুভ
দিক গুলিও দেখে নেওয়া যাক।
(ক) ৩য় ও ৮ম পতি মঙ্গল ৫ম কোণে প্রায় সুতুঙ্গী ( মঙ্গল সুতুঙ্গী
হয় মকর রাশির ২৮ ডিগ্রিতে ) অবস্থায় স্বনক্ষত্রে ( ২৩ নং
ধনিষ্ঠা নক্ষত্র - অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত হওয়ায় অত্যন্ত
বলবান।
(খ) বলবান মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বৃহস্পতির নীচভঙ্গ
হয়েছে। অতএব বৃহস্পতির দুর্বল ভাব বেশ কিছুটা কেটে গিয়েছে।
(গ) রবি ( যদিও ১২ শ পতি ) মেষ রাশিতে সুতুঙ্গী অবস্থানের
( রবি মেষে ১০ ডিগ্রিতে সুতুঙ্গী হয় ) খুব কাছে থাকায় খুবই
বলশালী। তুঙ্গী মঙ্গল তুঙ্গী রবিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
(ঘ) ২য় ও ৯ম পতি শুক্র ৮মে তুঙ্গী রবির সঙ্গে যুক্ত এবং
তুঙ্গী মঙ্গলের দ্বারাও দৃষ্ট। রবি ও মঙ্গলের বলে শুক্র
যথেষ্ট বল লাভ করেছে।
(ঙ) রবি শুক্র এবং মঙ্গল বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে রয়েছে।
মঙ্গল ছাড়া অন্য কোন গ্রহ রবি ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে না
ঠিকই; কিন্তু কেন্দ্রে অবস্থিত সব গ্রহই একে অন্যকে প্রভাবিত
করে।
(৩) ৩য় স্থান থেকে
উদ্যম, কোন কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা ( tenacity ) ইত্যাদি
বোঝা যায়। ৫ম উদ্ভাবনা শক্তির স্থান এবং ৮ম থেকে গুপ্ত বিষয়,
অন্তর্নিহিত শক্তি ( latent energy ) ইত্যাদি বিচার্য। আলোচ্য
কুণ্ডলীতে ৩য় পতি মঙ্গল তুঙ্গী অবস্থায় ৫মে বৃহস্পতির সঙ্গে
যুক্ত হয়ে ৮মে তুঙ্গী রবি যুক্ত ৯ম পতি শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
মঙ্গল খেলাধুলার ( sports ) কারক গ্রহ। শচীনের উদ্যম ও চেষ্টা
তাকে ক্রীড়া জগতে বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে এবং তার খেলার কিছু
বিশেষ ধরন ও বল মারার ভঙ্গী নতুনত্বের দাবী করে বলে ক্রিকেট
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
(৪) ২য় ও ৯ম পতির ৮মে
অবস্থান জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী খুব শুভ
নয়। কিন্তু আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এখানে দুটি তুঙ্গী
গ্রহের প্রভাব যুক্ত হওয়ায় ( একটির সঙ্গে যুক্ত ও অপরটির
দ্বারা দৃষ্ট ) শুক্র পূর্ণ মাত্রায় ফল দান করেছে। ২য় পতি
শুক্রের ২য়ে দৃষ্টিও রয়েছে। ১২শ ( বিদেশ ) পতি রবি ও ৯ম
( দূর দেশ ভ্রমণ ) পতি শুক্রকে ক্রীড়ার কারক গ্রহ তুঙ্গী
মঙ্গল দৃষ্টি দেওয়ায় খেলার মাধ্যমে বিদেশ যাত্রা, ভাগ্যোন্নতি
ও অর্থ লাভ সূচিত করে।
(৫) ১৫শ শতকে পণ্ডিত
ঢুঁণ্ডিরাজ রচিত জাতকভরনম গ্রন্থ অনুযায়ী বৃহস্পতি বৃষ রাশিস্থিত
শনিকে দৃষ্টি দিলে ঐশ্বর্য লাভ হয়। ভ-চক্রের (zodiac) ১০ম
ও ১১শ পতি শনি ২য়ে বৃষে অবস্থান করে ৯ম পতি ( ভাগ্য ) বৃহস্পতি
দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় হয় তো এটা বলা হয়েছে। এই যোগ আলোচ্য
কুণ্ডলীতে রয়েছে।
(৬) ৩য় একটি উপচয় স্থান
; এখান থেকে চেষ্টা, উদ্যম , কোন কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা
(tenacity) ইত্যাদি নির্দেশ করে। এখানে নীচস্থ চন্দ্র ধারাবাহিক
চেষ্টা ও বীরত্ব (heroism) নির্দেশ করে। ৩য় পতি মঙ্গল তুঙ্গী
হয়ে শক্তিশালী রবিকে দৃষ্টি দেওয়া শচীনের অসাধারণ পরাক্রমের
সূচক। চন্দ্র লগ্ন থেকে বিচার করলে লগ্নপতি মঙ্গল ২য় ও ৫ম
পতি বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৩য়ে তুঙ্গী। চন্দ্র লগ্ন
নীচস্থ হবার দুর্বলতা কিছুটা এতে কেটে গিয়েছে। ৩য় বা ৬ষ্ঠ
পতি নীচস্থ হওয়া বা এই সব স্থানে কোন নীচস্থ গ্রহের অবস্থান
সম্বন্ধে ১৩নং অনুচ্ছেদের ২১ নং নিয়মে বলা হয়েছে।
(৭) চন্দ্র লগ্নের
৬ষ্ঠে ( উপচয় ) রবি থাকায় তার শত্রুর উপর ( প্রতিপক্ষ বা
প্রতিযোগী খেলোয়াড় ) প্রভাব বিস্তার ও যুদ্ধে জয়লাভ নির্দেশ
করে। কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে ৩য় ও ৬ষ্ঠ স্থান এবং মঙ্গল শক্তিশালী
হওয়া খুবই শুভ। আলোচ্য কুণ্ডলীতে এটা যথাযথ ভাবে রয়েছে।
(৮) কুণ্ডলীতে যত ভাল
গ্রহ বা অন্যান্য যোগ থাকুক না কেন, সঠিক সময়ে সঠিক দশা
না পেলে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ সম্ভব নয়, এ কথা আগেও বলা হয়েছে।
শচীনের জন্ম বুধের দশায় , চলেছিল ১০ / ১১ বছর বয়স পর্যন্ত।
এর পর ৭ বছরের কেতুর দশা - ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত।
কেতু মঙ্গলের মত বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে ( 'কুজবৎ কেতু'
) । বুধের রাশিতে ( মিথুনে ) কেতু বুধের ফলও আংশিক দেবে।
বুধ লগ্নের সাপেক্ষে উল্লেখযোগ্য না হলেও চন্দ্র থেকে বিচার
করলে বুধ ১১শ পতি। কেতুর দশাতেই শচীনের উত্থান শুরু। এর
পর ২০ বছরের শুক্রের দশা - চলবে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শচীনের ধারাবাহিক খ্যাতি ও নৈপুণ্য এই দশাতেই। তার সব চেয়ে
ভাল সময় ১৯৯৮ সাল ধরা যেতে পারে। এই সময় তার শুক্র-মঙ্গল
ও শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশা চলছিল। উপরে যা যা বিশ্লেষণ
করা হয়েছে তাতে শুক্র-মঙ্গল যে অত্যন্ত শুভ সেটা খুবই স্পষ্ট।
রাহু ২০ নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে ( অধিপতি শুক্র ) এবং বৃহস্পতির
ক্ষেত্রে ( ধনু রাশিতে ) অবস্থানের জন্য রাহু বৃহস্পতি ও
শুক্রের ফল দেবে। বৃহস্পতি ( নীচ ভঙ্গ হয়েছে ) তুঙ্গী মঙ্গলের
সঙ্গে যুক্ত থাকায় এবং মঙ্গল শুক্রকে দৃষ্টি দেওয়ায় শুক্র-মঙ্গল
শচীনের পক্ষে শুভ হয়েছে।
(৯) ১৯৯৫ সালের ২৫
শে মে শচীন গুজরাটের শিল্পপতি আনন্দ মেহেতার মেয়ে শিশুরোগ
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অঞ্জলি মেহেতাকে বিয়ে করেন। অঞ্জলি শচীনের
চেয়ে ৫ বছরের বড়। বিয়ের সময়ে শচীনের শুক্র-চন্দ্র-চন্দ্র
দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা চলছিল। শুক্র স্বাভাবিক জায়াকারক
এবং কুণ্ডলীতে ২য় পতি ( পরিবার )। ৭ম পতি বৃহস্পতি চন্দ্রের
নক্ষত্রে অবস্থিত এবং নবাংশেও শুক্র ও চন্দ্র পরস্পরের বিপরীতে
অবস্থিত। ৭ম পতি ( জায়া স্থান ) বৃহস্পতি ও ৫ম পতি ( আবেগ,
অনুভূতি ইত্যাদি ) শনিকে দৃষ্টি দেওয়ায় বিয়েটা নিজেদের পছন্দ
অনুযায়ী হয়েছে। অপর একটি বিষয় লক্ষণীয়। চন্দ্রের বিপরীতে
শনির অবস্থান সাধারণতঃ বয়সে বড় পাত্রী বা নিম্ন বর্ণের সঙ্গে
বিবাহ নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে অঞ্জলি শচীনের চেয়ে ৫ বছরের
বড়।
(১০) শচীনের বাবা রমেশ
তেণ্ডুলকর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৯৯৯ সালের ১৯শে
মে - শচীনের শুক্র-রাহু-শনি-তে। সব বিষয়েরই ভল মন্দ দুটি
দিক আছে। যে শুক্র শচীনকে অর্থ ও জয় এনে দিয়েছে, সেই শুক্রের
দশাতেই তার পিতৃবিয়োগ। শুক্র ৯ম ( পিতৃস্থান ) পতি হয়ে ৮মে
অবস্থান করে ১২শ পতি রবি ও ৩য় / ৮ম পতি মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট
হওয়ায় শুক্রের দশাতে পিতার মৃত্যু হয়েছে। পিতৃ কারক গ্রহ
রবি থেকে ৭ম ও ২য় পতিও ( মারক ) শুক্র। শনি ৯মে এবং রবির
২য়ে অবস্থিত। রাহুর অবস্থান ৯ম স্থানের ৮মে ( নিধন স্থান
)।
বিয়ে ও পিতার মৃত্যুর সময় নির্ভুল ভাবে মিলে যাওয়ায় জন্ম
সময় সঠিক বলেই মনে হয়।
(১১) (ক) ১২শ পতি রবি
৮মে অবস্থিত। একটি দুঃস্থানের অধিপতি অপর একটি দুঃস্থানে
থাকায় বিপরীত রাজযোগ হয়েছে। এর ফল শুভ।
(খ) চন্দ্র থেকে শুক্র ৬ষ্ঠে থাকায় অধিযোগ ( অনুচ্ছেদ ১৪
) হয়েছে, এর ফল শুক্রের দশায় ভালই ফলেছে।
(গ) লগ্ন থেকে দেখলে ৪র্থ পতি বৃহস্পতি ৫ম পতি শনিকে দৃষ্টি
দিচ্ছে। চন্দ্র থেকেও ৪র্থ পতি শনি ৫ম পতি বৃহস্পতির দ্বারা
দৃষ্ট। কেন্দ্র ও কোণ পতির এই সম্বন্ধ শুভ।
(১২) অনেক শুভ ফল সত্বেও
৮মে শুক্রের অবস্থান ( ১২শ পতি রবির সঙ্গে ) ও ৮ম পতি মঙ্গলের
দৃষ্টির জন্য শচীনের শরীরে খেলতে গিয়ে আঘাত লেগেছে কয়েক
বার।
(১৩) শুক্রের দশা ২০১০
সালের সঙ্গেই শেষ। এর পর ৬ বছরের রবির দশা। রবি ৯ম পতি শুক্রের
সঙ্গে যুক্ত ঠিকই কিন্তু রবি নিজে ১২শ পতি হওয়ায় রবির দশা
একেবারে নিরাশ না করলেও তেমন প্রাপ্তি যোগ ঘটাবে বলে মনে
হয় না।