প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহবিদ্যামুপাসতে।
ততো ভূয় ইব তে তমো য উ বিদ্যায়াং রতাঃ।
।
অর্থাৎ
যারা অবিদ্যার উপাসনা করে তারা অন্ধকারে
প্রবেশ করে, আর যারা বিদ্যার উপাসনা করে
তারা আরো বেশী অন্ধকারে প্রবেশ করে। কথাটি
আপাতদৃষ্টিতে বিরুদ্ধ মনে হয়। বিদ্যার উপাসনা
আরো দোষের হবে কেন? এর তাৎপর্য বুঝতে গেলে
মনে রাখতে হবে 'বিদ্যা' ও 'অবিদ্যা' শব্দ
দুটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। 'অবিদ্যার'
অর্থ জ্ঞানরহিত কর্ম, আর 'বিদ্যার' অর্থ
কর্মরহিত শুধুই দেবতার উপাসনা। দেবতার অর্থও
এখানে পরমেশ্বর বা ব্রহ্ম নন। দেবতা বলতে
বিভিন্ন কর্মের ফলদাতা দেবতা বোঝান হয়েছে
যারা ঈশ্বরের সমান নন।
জ্ঞান ছাড়া কর্মের দ্বারা কামনা বাসনারই
তৃপ্তি হয়, তার ফলে দুঃখ শোক আসতে বাধ্য।
আত্মজ্ঞান তাদের হয় না। আর যারা কর্মত্যাগ
করে শুধুই বিভিন্ন দেবতার উপাসনায় রত হয়
তারাও কোন ফল পায় না। জীবন ধারণের জন্য
কর্ম করতেই হবে, কিন্তু সে কর্ম হবে নিষ্কাম
কর্ম।
শাস্ত্র বলে বিভিন্ন দেবতার উপাসনায় বা
বিদ্যার উপাসনায় দেবলোক প্রাপ্তি হয়, কিন্তু
আত্মজ্ঞানের ফল মোক্ষ প্রাপ্তি।
তাহলে সোজা কথায় বলা যায় নিষ্কাম কর্মের
সাথে সাথে আত্মজ্ঞান লাভেরও চেষ্টা করতে
হয়।
দশম
মন্ত্রে বলা হয়েছে বিদ্যা ও অবিদ্যাকে পরস্পর
হতে বিচ্ছিন্ন করে যদি কেবল বিদ্যা বা কেবল
অবিদ্যায় রত হওয়া যায় তার ফল কি হয় নবম
মন্ত্রে বলা হয়েছে-- কিন্তু এদেরকে পরস্পর
থেকে আলাদা না করে একত্রে অনুসরণ করলে ভিন্ন
ফল হয়। একাদশ মন্ত্রে সেই ফলের কথা বলা
হয়েছে।
একাদশ মন্ত্র--
বিদ্যাং
চাবিদ্যাং চ যস্ত্দ্বেদোভয়ং সহ।
অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়াহমৃতমশ্নুতে।
।
যিনি
দেবতাজ্ঞান ও অগ্নিহোত্রাদি কর্ম দুইকেই
একই ব্যক্তির একই সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বলে জানেন,
তিনি শাস্ত্রীয় কর্মের দ্বারা মৃত্যু (অজ্ঞানীর
অবিশুদ্ধ কর্ম) অতিক্রম করে দেবতাজ্ঞান
দ্বারা অমৃতত্ব (অর্থাৎ দেবত্বভাব) লাভ
করেন।
আসলে নবম থেকে একাদশ মন্ত্রগুলিতে সৃষ্টিতে
ঈশ্বরের যে প্রকাশ ও তার দুটি দিক-- বিদ্যা
(একত্বের জ্ঞান) ও অবিদ্যা (বহুত্বের জ্ঞান)
তার কথা বলা হয়েছে। এই বিদ্যা ও অবিদ্যা
অনাদি পরমপুরুষের আত্মজ্ঞানের দুটি দিক।
একত্বই চিরন্তন মৌলিক সত্য, একত্বের জ্ঞান
ছাড়া বহুত্বের জ্ঞান অবাস্তব একটি ভ্রম।
এই কারণেই একত্বের জ্ঞানকে বলা হয় বিদ্যা।
আর বহুত্ব একত্বেরই লীলা-- বহুরূপে একেরই
আত্মপ্রসারণ। বহুত্ব একত্বের মধ্যে স্পষ্ট
বা অস্পষ্ট ভাবে আছে। এই বহুত্বকে বাদ দিলে
একত্ব শূন্যগর্ভ, অসৎ। কিন্তু বহুত্বের
জ্ঞানকে যদি তার অন্ত্বঃস্থিত মৌলিক একত্বের
জ্ঞান থেকে আলাদা করা হয়, বিভিন্ন জীব যদি
এই বিভক্ত রূপ ও সীমাবদ্ধ কর্মের সঙ্গে
নিজেকে এক করে ফেলে তা হলে সেই জ্ঞানই হয়
ভ্রম বা মোহ। মানুষের মধ্যে বহুত্বের জ্ঞান
এরকমই রূপ গ্রহণ করে, যে কারণে এই বহুত্বের
জ্ঞানকে অবিদ্যা বলে।
জগতে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কেবল বিদ্যা বা কেবল
অবিদ্যার দ্বারা সিদ্ধ হয় না। ব্রহ্ম তাঁর
সৃষ্টিতে বিদ্যা ও অবিদ্যা উভয়কেই একসঙ্গে
গ্রহণ করেছিলেন। কারণ সৃষ্টিতে আত্মবিকাশের
জন্য, সৃষ্টিকার্য সম্পাদনের জন্য ও সৃষ্টির
উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দুইয়েরই প্রয়োজন আছে।
বিদ্যা অবিদ্যাকে ধারণ ও পোষণ করে বলেই
অবিদ্যা থাকতে পরে। আবার আত্মার পক্ষে সেই
মহান একত্বের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং সেই
দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য বিদ্যা অবিদ্যার
উপর নির্ভর করে। তাই একটি অপরটিকে ছাড়া
থাকতে পারে না। একটি লুপ্ত হলে এমন অবস্থা
হবে যা সমস্ত প্রকাশের অতীত, যা কল্পনাও
করা যায় না। অবিদ্যার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলে
মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পরে। বিদ্যা
অবিদ্যাকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করলে মানুষ
অমৃতত্ব লাভ করে।
'মৃত্যু'
বলতে এমন একটি অবস্থা বোঝায় যে অবস্থায়
জীব সুখ- দুঃখ, মঙ্গল- অমঙ্গল, হর্ষ- বিষাদ
প্রভৃতি দন্দ্বের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে সঙ্কীর্ণ
'আমি' রূপে বার বার জন্ম মৃত্যুর অধীন হয়।
এই দন্দ্বর অধীন অবস্থায়ই মৃত্যু। অমৃতত্ব
বলতে শুধু এটাই বোঝায় না যে দেহের ধ্বংসের
পর আত্মা থাকবে। আত্মা দেহ গ্রহণের আগেও
ছিল। অমৃতত্ব বলতে বোঝায় সেই চৈতন্য যা
জন্ম- মৃত্যুর অতীত, অধীনতা ও সীমাবন্ধনের
অতীত, কার্যকারণ শৃঙ্খলের অতীত স্বাধীন
আনন্দময় চৈতন্য। অমৃতত্ব হচ্ছে ঈশ্বর, সচ্চিদানন্দ
পরম পুরুষের পূর্ণ জ্ঞান।
অবিদ্যা যদি মৃত্যুর কারণ হয়, মৃত্যুকে
অতিক্রম করার উপায়ও এর মধ্যেই আছে। ব্যক্তিত্বের
সীমাবন্ধন এ জন্যই সৃষ্টি হয়েছে যেন ব্যক্তি
প্রকৃতির পরিবর্তনের মধ্যে স্বীয় ব্যক্তিত্বের
প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃতিকে অধিকার, অতিক্রম
ও পরিবর্তন সাধন করতে পারে। কাজেই মানুষের
প্রথম কাজ-- আমিত্বের সীমাকে অতিক্রম করে
জ্ঞানে, আনন্দে, শক্তিতে নিজের সত্তার বিস্তার
সাধন করা। এই আত্মপ্রসারণই মানুষকে শেখাবে
নিজের মধ্যে সকলকে দেখা ও সকলের মধ্যে নিজেকে
দেখা। তখন ব্যক্তি 'আমি' হয়ে উঠবে এক সার্বভৌম
বিশ্বব্যাপী আত্মা। নিজের প্রকৃতির মধ্যে
সেই বিশ্বাত্মাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেই
বিশ্বাত্মাকে আত্মভূত করে তাঁর সমস্ত রূপ
ও গতির মধ্যে ভোগ করতে হবে। বুঝতে হবে এই
পরমাত্মা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণতাপ্রাপ্ত একমাত্র
সত্তা। এই বিশ্ব, এর সমস্ত রূপ, ক্রিয়া
এবং সমস্ত জীবাত্মা সেই সত্তারই ভবন বা
ভূতি। এই বিশ্ব সেই পরমাত্মার ভবন যিনি
দেশ ও কালের মধ্যে দেহ, মন ও প্রাণের ক্রমবিকাশ
দ্বারা আপনাকে প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন।
তিনি সমস্ত ভূতির অতীত, দেশ ও কালের অতীত,
দেহ- মন প্রাণের অতীত।
এভাবেই বিদ্যা ও অবিদ্যা একীভূত হয়। এক
আত্মা সৃষ্টিতে আত্মপ্রকাশের কালে বহুত্বের
সীমাবন্ধন ও বিভাগের মধ্যে প্রথমে যে মৃত্যু,
দুঃখ, অজ্ঞান, দুর্বলতার সম্মুখীন হয়, অবিদ্যার
দ্বারাই সে সকল অতিক্রম করে এবং বিদ্যা
দ্বারা এই প্রকাশের মধ্যেই সে অমৃতত্ব লাভ
করে।
দ্বাদশ মন্ত্র--
অন্ধ
তমঃ প্রবিশন্তি যেহসম্ভূতিমুপাসতে।
ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ।
।
অসম্ভূতিম--
যার উৎপত্তি আছে তার নাম সম্ভূতি। যার উৎপত্তি
নেই তার নাম অস্ম্ভূতি অর্থাৎ অব্যক্ত প্রকৃতি
যা নামরূপে ভাগ হয় নি। যারা এই অব্যক্ত
প্রকৃতির উপাসনা করে তারা দৃষ্টিহীন অন্ধকারে
প্রবেশ করে। যারা কেবল সম্ভূতি অর্থাৎ প্রকৃতি
থেকে জাত হিরণ্যগর্ভ বা কার্যব্রহ্মের উপাসনা
করে, তারা আরও বেশী অন্ধকারে প্রবেশ করে।
ত্রয়োদশ মন্ত্রে বলা হয়েছে-- পণ্ডিতেরা
সম্ভূতি ও অসম্ভূতির উপাসনার আলাদা আলাদা
ফলের কথা বলেছেন। বৈদিক ঋষি বা উপনিষদ ঋষিরা
তাই শুনে এসেছেন।
চতুর্দশ মন্ত্রে বলা হয়েছে-- যিনি অসম্ভূতি
(মূল প্রকৃতি) এবং বিনাশ (হিরণ্যগর্ভাদি)
উভয়কেই একযোগে জানেন, তিনি বিনাশ দ্বারা
(হিরণ্যগর্ভাদির উপাসনা দ্বারা) মৃত্যু
অতিক্রম করে অসম্ভূতির সাহায্যে (মূল প্রকৃতির
উপাসনা দ্বারা) অমৃত (প্রকৃতিতে লয়রূপ অমৃত)
লাভ করেন।
শ্রী অরবিন্দ দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ মন্ত্রের
ব্যাখ্যা এরূপ করেছেন।
প্রকৃতির বাইরে আত্মার চলনা বা ভূতি হয়
না। আত্মা অপরিবর্তনীয় ও সনাতন। প্রকৃতির
মধ্যে আত্মা বিভিন্ন নামরূপে ও বিভিন্ন
অবস্থায় প্রকাশিত হয়। আত্মার দুটি অবস্থা--
একটি সর্বগত, অপরটি সর্বাতীত; একটি প্রকৃতিতে
গতিশীল, অপরটি প্রকৃতির ঊর্ধে স্থিত। আত্মার
এই দুটি অবস্থার জন্যই মানবীয় চেতন সত্তার
দুটি ভাব দেখা যায়। একটি জন্ম বা 'সম্ভূতি',
অপরটি অজন্ম বা 'অসম্ভূতি'। মানুষ জন্মের
বিক্ষুব্ধ অবস্থা থেকে যাত্রা করে এবং ক্রমে
এই গতি থেকে মুক্ত হয়ে চেতনসত্তার যে নিষ্ক্রিয়
শান্ত অবস্থা তাতে পৌঁছায়-- এটাই 'অসম্ভূতি'।
প্রকৃতিতে জন্মের গ্রন্থি হচ্ছে অহং জ্ঞান।
এই অহং জ্ঞান বিনষ্ট হলে মানুষ অসম্ভূতির
অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই কারণেই অসম্ভূতিকে
বলা হয়েছে বিনাশ। সম্ভূতি ও অসম্ভূতি দৈহিক
অবস্থা নয়, আত্মিক অবস্থা। অহং জ্ঞানের
গ্রন্থি ছেদ করেও কোন লোক জড় দেহে থাকতে
পারে। কিন্তু সে যদি অহং জ্ঞানের বিনাশের
উপর চিত্তকে সমাহিত করতে পারে তবে তার আর
জড় দেহে জন্ম হয় না। প্রকৃতির প্রেরণায়
গঠিত বর্তমান দেহ শেষ হলে সে মুক্ত হয়ে
যায়। অন্যদিকে সে যদি সম্ভূতিতেই আসক্ত
হয় তবে তার অহং- সত্তা সর্বদাই নতুন নতুন
দৈহিক ও মানসিক রূপে প্রকাশ পাবার চেষ্টা
করে। সম্ভূতি বা জন্মের অবস্থার উপর আসক্তির
অর্থ আত্মাকে ক্রমাগত সীমাবদ্ধ করা এবং
আমিত্ব বোধের নিম্ন থেকে নিম্নস্তরে জন্মগ্রহণ।
এই অবস্থা থেকে উন্নততর অবস্থা লাভ বা মুক্তিলাভের
কোন সম্ভাবনা থাকে না। এই অবস্থা অজ্ঞানের
অন্ধকার থেকেও গভীর। কারণ এই অবস্থায় মুক্তির
যে প্রেরণা তাও নষ্ট হয়ে যায়। সম্ভূতিকে
(জন্মকে) তাই উন্নতি ও আত্মপ্রসারণের উপায়
রূপে গ্রহণ করে মহত্তর পূর্ণতর জীবন লাভের
পথে চলা ও ক্রমে তাই চরম লক্ষ্য সাধনের
সিঁড়ি হয়ে উঠে।
ব্রহ্ম
একদিকে বিদ্যা-- অপরদিকে অবিদ্যা; একদিকে
সম্ভূতি, অন্যদিকে অসম্ভূতি। প্রকৃতির মধ্যে
মুক্ত দিব্যজীবন লাভ করতে হলে আত্মাকে জন্মহীন
মৃত্যুহীন উপলব্ধি করে অনন্ত সর্বাতীত সত্তার
মধ্যে জন্মমৃত্যুর দ্বন্দ্বাতীত যে সাম্যাবস্থা
তাই লাভ করতে হবে। অক্ষর ব্রহ্মের যে শুদ্ধ
একত্ব তাতে স্থিতি লাভ করতে পারলেই এই চলমান
প্রকৃতির স্রোতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে
না। এই ভাবেই মানুষ মুক্ত হয়ে ব্রহ্মের
সঙ্গে এক বোধ করে। তার কাছে সম্ভূতি- অসম্ভূতি
ব্রহ্মের সত্তার বিভিন্ন অবস্থা মাত্র।
সাধক তখন প্রকৃতির মোহতে আবদ্ধ হন না এবং
প্রকৃতির মধ্যেই অমৃতত্ব লাভ করেন। জন্মের
আর প্রয়োজন থাকে না তখন, কারণ তার ব্যক্তিগত
উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে। কিন্তু সম্ভূতি বা
জন্মের স্বাধীনতা তার বর্ত্তমান থাকে। কারণ
পরমপুরুষ তাঁর চিরন্তন সত্তার স্বাধীনতা
ও সম্ভূতির স্বাধীনতা উভয়ই তিনি একসঙ্গে
এবং সমানভাবে ভোগ করেন।
এই
রকমই আমিত্বের আসক্তি বিনাশ দ্বারা আত্মা
মৃত্যুকে অতিক্রম করে এবং সব রকম দ্বন্দ্বের
সীমাবন্ধন থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিলাভের পর
জীব সম্ভূতিকে আত্মার অধীন ক্রিয়ারূপে গ্রহণ
করে, আত্মাকে প্রকৃতির অধীন করে না এবং
এই মুক্ত দিব্য সম্ভূতি দ্বারা অমৃতত্ব
ভোগ করে।
পঞ্চদশ
মন্ত্র--
হিরণ্ময়েন
পাত্রেন সত্যস্যাপিহিতং মুখম্।
তৎ ত্বং পূষন্ন পাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।
।
হে
জগতের পোষক সূর্য, তোমার জ্যোতির্ময় মণ্ডলরূপ
পাত্র দ্বারা সত্যস্বরূপ আদিত্যমণ্ডলস্থ
পুরুষের মুখ আচ্ছাদিত রহিয়াছে। সত্যস্বরূপ
তোমার উপাসনার ফলে সত্যধর্ম। আমার উপলব্ধির
জন্য তুমি উক্ত আবরণ অপসারিত কর।
শংকর এই মন্ত্রের ব্যাখ্যা করেছেন এই ভাবে--
মানুষবিত্ত ও দৈববিত্ত এই উভয়প্রকার বিত্তের
সাহায্যে শাস্ত্রকর্ম সম্পাদন করলে সর্ব
উৎকৃষ্ট ফল হবে প্রকৃতিতে লয়। মানুষবিত্ত
বলতে বোঝান হচ্ছে পশু, ভূমি, স্বর্ণ ইত্যাদি
আর দৈববিত্তের অর্থ দেবতাচিন্তা প্রভৃতি।
কিন্তু এই দুই বিত্তের সাহায্যে লব্ধ ফল
সবই সংসার সম্বন্ধীয়, তাই তা ধ্বংসশীল।
মোক্ষলাভ এর দ্বারা হয় না। সব রকম কামনা
ত্যাগ করে সন্ন্যাস বা জ্ঞান নিষ্ঠার সাহায্যেই
সর্বাত্মভাব পাওয়া যায়। এই ব্যাখ্যায় প্রবৃত্তি
ও নিবৃত্তি এই দুপ্রকার বেদলক্ষণই প্রকাশ
পায়। যে সকল লোক অপর ব্রহ্ম বা হিরণ্যগর্ভাদির
উপাসনার সাথে মৃত্যু পর্যন্ত করণীয় সব কাজ
সম্পূর্ণ করে জীবন ধারণ করতে ইচ্ছ করেন
তাদের জন্য দশম মন্ত্রে অবিদ্যা (অগ্নিহোত্রাদি)
দ্বারা মৃত্যু অতিক্রম করে বিদ্যা (দেবতা
জ্ঞান) দ্বারা অমৃত লাভের উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই অমৃত লাভ আপেক্ষিক, এই পঞ্চদশ
মন্ত্রে প্রকৃত অমৃত লাভের কথাই বলা হয়েছে।
অন্য উপনিষদে আছে-- 'এই আদিত্যই সত্যপুরুষ;
সূর্যমণ্ডলস্থিত পুরুষ এবং দক্ষিণ চক্ষুতে
সন্নিহিত পুরুষ-- এই উভয়ই সত্যস্বরূপ ব্রহ্ম'।
যে লোক এই ব্রহ্মপুরুষের উপাসনা এবং শাস্ত্রসম্মত
কর্মের অনুষ্ঠান করেন, তিনিই মৃত্যুকালে
সত্যাত্মা ব্রহ্ম প্রাপ্তির জন্য 'হিরণ্ময়েন
পাত্রেন' ইত্যাদি মন্ত্রে প্রার্থনা করেন।
অন্য
ভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়-- সত্যের মুখ যেন
একটি স্বর্ণ পাত্র দ্বারা আবৃত আছে। 'আবৃত'
অর্থ-- মানুষের চেতনা থেকে লুকানো। আমরা
মনোময় রাজ্যের জীব। আমাদের সর্বোচ্চ জ্ঞান
'নাম' ও রূপ- (concept ও precept) এর মধ্যেই
আবদ্ধ। এরাও জ্ঞান লাভের উপায়। কিন্তু এরা
কেবল নামরূপেরই জ্ঞান দেয়। তার অন্তর্নিহিত
যে সত্য তার সন্ধান দেয় না। সেই সত্য আমরা
অনুমান করে নিই। নামরূপের জ্ঞান প্রকৃত
জ্ঞান নয়, সত্তার জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান।
প্রকৃত সত্যে পৌঁছনর জন্য চাই সত্যদ্রষ্টার
কৃপা (সূর্য) যিনি আমাদের চেতনা থেকে নাম
ও রূপের জ্ঞান (হিরণ্ময় পাত্র) দূর করে
আত্মদৃষ্টি ও সমগ্রের দৃষ্টি দান করেন।
এই আত্মজ্ঞান ও দৃষ্টি লাভের জন্য আমাদের
মধ্যে সত্যের ধর্ম ও ক্রিয়া প্রকাশিত হওয়া
দরকার। আমরা যে সব কাজ করি তাতে আমাদের
আত্মজ্ঞান খণ্ডিত হয়ে দেখা দেয়। আমরা শুরুতেই
একটি মিথ্যা জ্ঞান নিয়ে ভাবি যে অন্য সকল
থেকে আমাদের একটি পৃথক সত্তা আছে এবং ভিন্ন
ভিন্ন বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করে একটি পারস্পরিক
সম্বন্ধ স্থাপনের চেষ্টা করি। এরকম জ্ঞানই
খণ্ডিত জ্ঞান এবং এর উপর ভিত্তি করেই আমরা
ব্যক্তিগত (খণ্ডিত আমির) সুবিধা লাভের জন্য
কর্ম করি। কিন্তু প্রকৃত সত্য তখনই আমাদের
মধ্যে কাজ করবে যখন আমরা অন্য সব পৃথক সত্তাকে
আমাদের অন্তরেই দেখতে পাব, সমগ্র বোধের
দ্বারা বিভিন্ন বস্তুর প্রকৃত রূপ নির্ধারণ
করতে পারব ও বুঝতে পারব সমগ্রের কাজের মধ্যেই
বিভিন্ন বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়াও অন্তর্ভূক্ত।
এই অবস্থায় আমাদের বাইরের ও ভিতরের সব কাজই
স্বাভাবিক ভাবে আমাদের আত্মসত্তা থেকেই
নিঃসৃত হবে। কোন ভ্রমই তখন আমাদেরকে বিপথে
চালিত করতে পারবে না।
ষোড়শ
মন্ত্রে ঋষি বলছেন-- 'হে জগতের সূর্য, হে
একর্ষি (একাকী গমনশীল), হে যম (সংযমনকর্তা),
হে সূর্য, হে প্রজাপতি তনয়, তোমার রশ্মি
সংযত কর, তোমার তেজ সঙ্কুচিত কর, তোমার
যে কল্যাণতম অতি শোভন রূপ তাহাই আমি দর্শন
করিতেছি; ঐ যে সূর্যমণ্ডলস্থ পুরুষ আমিই
তিনি'।
'পূষন্নেকর্ষে যম সূর্য প্রাজপত্য ব্যুহ
রশ্মীন সমূহ তেজো
যৎ তে রূপং কল্যাণতমং তৎ তে পশ্যামি।
যোহসাবসৌ পুরুষঃ সোহহমস্মি। ।
পূষম্--
পোষক বা বর্ধক। সূর্য পৃথিবীকে পোষণ ও বর্ধন
করে, তাই সূর্যের
নাম পূষন্। সূর্য আলো বা জ্ঞানের প্রতীক।
এই অর্থে সূর্য আমাদের প্রকৃত জ্ঞান,
সমগ্রের জ্ঞান দান করে।
একর্ষি--
যিনি একা গমন করেন বা 'এককে' দেখতে পান।
আকাশে সূর্য একা গমনশীল, তাই তিনি একর্ষি।
আবার প্রকৃত জ্ঞান তিনিই দান করেন। এই বহুর
মধ্যে যে একের প্রকাশ, সেই একত্বের দৃষ্টি
তিনিই দিতে পারেন।
প্রাজপত্য--
প্রজাপতির শক্তি। প্রকৃত জ্ঞানের দ্বারাই
বোধগম্য হয় যে এই জগতের সৃষ্টিপ্রবাহ এক
সচ্চিদানন্দ পুরুষ পরমেশ্বরেরই আত্মপ্রকাশ।
ব্যূহ
রশ্মীন্ সমূহ তেজঃ-- প্রকৃত জ্ঞান লাভ
হয় সূর্যের দৃষ্টি আমাদের অন্তরে প্রকাশিত
হলে। এই জ্ঞান লাভে পরপর দুটি ক্রিয়া দেখতে
পাওয়া যায়। প্রথম সূর্যের কিরণমালার 'ব্যূহ'
বা বিন্যাস। এর দ্বারা নামরূপের জ্ঞানের
পিছনে লুক্কায়িত সত্য সমূহ আলাদা ভাবে প্রকাশ
হয় ও তাদের প্রকৃত সম্বন্ধ বিন্যস্থ হয়।
এ ভাবে আমরা বোধিজাত সমগ্রের জ্ঞান লাভ
করি। তার পরে সমগ্রকে অতিক্রম করে একত্বে
পৌঁছতে পারি। এইই হচ্ছে সূর্যের তেজের সমূহ
বা একত্রীকরণ। মানবমনের প্রকৃতির জন্যই
এই দুই ক্রিয়ার প্রয়োজন, কারণ মানবমন প্রথমেই
সমগ্রকে গ্রহণ করে তার অন্তর্ভূক্ত বস্তুুসম্ভারকে
বুঝতে পারে না।
যৎ
তে রূপং . . . সোহহমস্মি-- এভাবে সূর্যের
ক্রিয়ার সাহায্যে আমরা পরম জ্ঞানের আলো
পাই। আমাদের এই বোধিজাত সমগ্রের জ্ঞান সৎপুরুষের
স্বপ্রকাশ আত্মজ্ঞানে পরিণত হয়-- যে পুরুষ
তাঁর আত্মবোধের অনন্ত জটিলতার মধ্যেও তাঁর
একত্ব বা আত্মজ্যোতি হারায় না।
সূর্যের
এটিই কল্যাণতম রূপ, কারণ তিনিই পরম জ্যোতি,
পরম সঙ্কল্প এবং পরম আনন্দ। ইনিই ঈশ্বর,
পুরুষ, আত্মজ্ঞ সত্তা।
এই বোধ জন্মালে মানবের অখণ্ড আত্মবোধ জন্মায়।
এই দৃষ্টি বা বোধ উপনিষদের 'সঃ - অহম্'
তিনিই আমি-- এই মহাবাক্য দ্বারা ব্যক্ত
হয়েছে। ঈশ্বর বহুর মধ্যে বাস করছেন আপনাকে
প্রকাশ করে। কিন্তু সমস্ত বহুর মধ্যে যিনি
বাস করছেন তিনি এক। আত্মজ্ঞ পুরুষ নিজের
মনের ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধ 'আমি'- কে অতিক্রম
করে, নিজেকে সেই পরম পুরুষের সঙ্গে এক ও
অভিন্ন বলে বুঝতে পারেন।
সপ্তদশ
মন্ত্র--
বায়ুর
নিলম মৃতম্থেদং ভস্মান্তং শরীরম্।
ওঁ ক্রতো স্মর কৃতং স্মর ক্রতো স্মর কৃতং
স্মর। ।
আমার
প্রাণবায়ু নিত্যকালস্থায়ী মহাবায়ুতে মিলিত
হউক, তারপর প্রাণহীন এই দেহ ভস্মে পরিণত
হউক। ওঁ (ব্রহ্ম স্মরণে) হে সঙ্কল্পাত্মক
মন, তোমার স্মরণীয় সকল বিষয় স্মরণ কর, তোমার
পূর্বানুষ্ঠিত কর্মসকলও স্মরণ কর।
মৃত্যুকালে মানুষের মনে যে ভাব প্রবল থাকে
তার দ্বারা তার পারলৌকিক গতি নিয়ন্ত্রিত
হয়। মনে যদি সদ্ভাব প্রবল থাকে তবে তার
সদ্গতি হয়। এই কারণেই মৃত্যুকালীন প্রার্থনা--
হে সঙ্কল্পাত্মক মন, যে সকল বিষয় স্মরণ
করা কর্তব্য তাহাই এখন স্মরণ কর, বিষয়চিন্তার
পরিবর্তে আত্মচিন্তা জাগ্রত হোক। তুমি যে
সকল সৎকার্য সম্পাদন করেছ তাও স্মরণ কর,
আত্মার স্বরূপ চিন্তা কর, পরমেশ্বরকে চিন্তা
কর যেন শোভন পথে (দেবযানে) তোমার আত্মার
গতি হতে পারে।
যাঁরা সগুণ ব্রহ্মের উপাসক ও পূণ্যকর্ম
অনুষ্ঠান করেন তাঁদের মৃত্যুকালীন প্রার্থনা
এই মন্ত্রটি ও অষ্টাদশ মন্ত্রটি।
অষ্টাদশ
মন্ত্র--
অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অস্মান্ বিশ্বানি
দেব বয়ুনানি বিদ্বান্।
যুযোধ্যস্ম্জ্জুহুরাণমেনো- ভুয়িষ্ঠাং তে
নমঃ উক্তিং বিধেম্। ।
হে
অগ্নি সম্পৎলাভের জন্য, কর্মফল ভোগের নিমিত্ত,
আমাদিগকে শোভন পথে অর্থাৎ উত্তরমার্গে লইয়া
যাও, দেব আমাদের সমস্ত কর্মের চিন্তার জ্ঞাতা
তুমি; আমাদের দ্বারা কৃত কুটিল পাপ নাশ
কর। আমরা বার বার নমস্কার বচন দ্বারা তোমার
অর্চনা করিতেছি।
প্রার্থনাকারী সাধক অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞের
অনুষ্ঠান করেছেন সারা জীবন। অগ্নিই তাঁর
প্রধান দেবতা। এই কারণে পারলৌকিক সদ্গতি
লাভের জন্য তিনি অগ্নির নিকট প্রার্থনা
করছেন।
মৃত্যুর
পর পরলোকে জীবের গতির দুটি প্রধান পথের
কথা শাস্ত্রে বলা আছে। (১) দেবযান বা উত্তরমার্গ,
(২) পিতৃযান বা দক্ষিণমার্গ। সগুণ ব্রহ্মের
উপাসক, নিষ্ঠাবান ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থী
ও পঞ্চাগ্নির জ্ঞানসম্পন্ন গৃহস্থরা মৃত্যুর
পর দেবযান বা উত্তরমার্গে যান। প্রথমে এঁরা
অগ্নিলোকে যান, তার পরে শুক্ল পক্ষ, ছয়
মাস উত্তরায়ণ, দেবতা, বায়ু, সূর্য প্রভৃতি
বিভিন্ন লোক ভ্রমণ করে সব শেষে ব্রহ্মলোকে
বা সত্যলোকে উপস্থিত হন। সেখানে আত্মজ্ঞান
পেয়ে মুক্তি লাভ করেন। তাঁদেরকে আর সংসারে
ফিরে আসতে হয় না। এর নাম ক্রমমুক্তি।
আর যে সব গৃহস্থ সংসারে থেকে অগ্নিহোত্রাদি
যজ্ঞ এবং ঈষ্ট পূজা ও অন্যান্য পূণ্যকর্মের
অনুষ্ঠান করেন তাঁরা পিতৃযান বা দক্ষিণমার্গে
যান এবং পরে চন্দ্রলোকে উপস্থিত হন। সেখানে
তাঁরা পূর্বজন্মের পূণ্যকর্মের ফল ভোগ করেন।
ভোগশেষে সমস্ত পূণ্যকর্ম শেষ হলে আবার এই
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই ভাবে তাঁরা
সংসারে বার বার যাতায়াত করেন।
এই শেষ মন্ত্রটি মানুষের অন্তিম কালের শেষ
প্রার্থনা। পৃথিবীতে তার জীবনকাল শেষ হয়েছে।
এখন সে পরপারের যাত্রী। শেষ মুহূর্তের প্রার্থনা
তাই--
হে
অগ্নি, হে অন্তর্যামী, হে পরমেশ্বর, তুমি
তো আমার ভাল মন্দ সবই জান। তুমি আমার সব
অপরাধ ক্ষমা কর, আমার সব মলিনতা দূর কর।
তুমি আমাকে আলোর পথে লইয়া চল, আমাকে মুক্তির
পথে লইয়া চল, আমাকে আনন্দময় লোকে লইয়া চল।
হে বিশ্বদেব, আমার এই শেষ মুহূর্তে আর আমি
কি করিতে পারি? আমি একান্তভাবে শুধু তোমাকে
নমস্কার করি, তোমাকে নমস্কার করি, তোমাকে
নমস্কার করি--
টীকা--
এই ঈশ উপনিষদটি ছাড়া অন্যান্য সব উপনিষদই
বেদের ব্রাহ্মণ বা আরণ্যকের অংশ। 'ঈশা '
এই উপনিষদের প্রথম শব্দ; সেজন্য একে ঈশোপনিষদ
বলা হয়। এই উপনিষদটি ভাবগৌরবে সর্বোত্তম।
মাত্র আঠারটি মন্ত্রে উপনিষদের মূল তত্ত্বের
অবতারণা এবং আপাতবিরুদ্ধ বিষয়সমূহের (যথা--
এক ও বহু, জ্ঞান ও কর্ম, বিদ্যা ও অবিদ্যা
প্রভৃতি) সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। ঈশ উপনিষদ
সম্বন্ধে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন-- 'আমি
এই চরম সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, যদি
সমস্ত উপনিষদাবলী ও সমস্ত শাস্ত্রাদি অকস্মাৎ
ভস্মীভূত হয়ে যায়, আর শুধু এই মন্ত্রটি
রক্ষা পায়, তা হলে এই মন্ত্রটির জন্য হিন্দুধর্ম
হিন্দুদের মনে চিরদিন সজীব হয়ে থাকবে। '
এই উপনিষদটির স্থান বৈদান্তিক সাহিত্যেও
খুব উঁচুতে।
এটি
তাই একটু বিস্তৃত করেই বলা হল। আর পাঠকের
কাছে অনুরোধ সম্পূর্ণ মন দিয়ে পড়তে হবে,
তবেই এর মন্ত্রগুলির অর্থ হৃদয়ঙ্গম হবে,
অন্যথায় দ্বন্দের অবকাশ থাকবে।
হৃদয়
ও বুদ্ধি দুইয়ের সঙ্গমেই এর সারার্থ উপলব্ধ
হবে।
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|

অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|