বেদ-
উপনিষদ ও সনাতন হিন্দুধর্ম - (৪)
(অন্যান্য
অনুচ্ছেদ)
শ্রী অরবিন্দের
বেদ গবেষণা:
শ্রী অরবিন্দ
বেদের পর্যালোচনা করেন সব রকমের দৃষ্টিকোণ থেকে।
তাঁর মতের পরিচয় পাঠকদের কাছে উপস্থিত করতে পারলে
বেদ আলোচনা আরও জ্ঞানমূলক ও আকর্ষক হয়ে উঠবে এই
আশা।
শ্রী অরবিন্দ
তাঁর বেদরহস্য গ্রন্থে ( মূল রচনা ইংরাজীতে-The
secret of the ved- বাংলায় অনুবাদ ১৯৭৪ খ্রীষ্টাব্দ-
প্রথম প্রকাশ- মূল অনুবাদক শ্রী শ্যামাচরণ চট্টোপধ্যায়)
বেদ ও তার বিষয়বস্তুর যে চুলচেরা বিচার করেছেন,
তার পূর্ণ বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বেদের সমস্যা ও তার
সমাধান, বেদ সম্বন্ধে পূর্বের মতবাদ নিরীক্ষা (আলোচনা),
আধুনিক মতবাদ, বেদের মনস্তাত্তিক ব্যাখ্যার ভিত্তি,
বেদের শব্দতাত্বিক পদ্ধতি (শব্দের ব্যবহার), বেদে
অগ্নি ও সত্যের সম্বন্ধ, বরুণ মিত্র ও সত্য, অশ্বিদ্বয়-
ইন্দ্র- বিশ্বদেব সমূহ, সরস্বতী ও তাঁর সহচরীবৃন্দ,
সমুদ্র ও নদীর চিত্র, সপ্তনদী, ঊষার গোযূথ,ঊষা ও
সত্য, গো ও আঙ্গিরস উপাখ্যান, হারানো সূর্য ও হারানো
গোরাজি, আঙ্গিরস ও ঋষিগণ, সপ্তশীর্ষ ধী, স্বর ও
দশগ্বগণ, মানুষী পিতৃগণ, পিতৃগণের জয়, স্বর্গশুনী,
অন্ধকারের পুত্রগণ, দস্যুদের উপর বিজয়, ইত্যাদি
ঋকবেদ সংহিতার সমস্ত বিষয়গুলির উপর তাঁর গবেষণাললব্ধì
ফসল ও ব্যাখ্যা ভারতবাসীকে উপহার দিয়েছেন তাঁর এই
গ্রন্থে, যা অত্যন্তই মূল্যবান ভারতীয় আদি সাহিত্য,
সংস্কৃতি কৃষ্টি ও সভ্যতাকে বুঝতে। এখানে সর্বাংশের
পূর্ণ আলোচনা সম্ভব নয়, তবুও কিছুটা চিত্র, যা তাঁর
গবেষণাললব্ধ জ্ঞানকে পরিচিত করবে আমাদের কাছে, তা
তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বেদ একটি পবিত্র জ্ঞানগ্রন্থ, অন্তর থেকে প্রকাশিত
কবিতাবলীর এক বিশাল সংগ্রহ, তত্ববিদ ঋষিদের দ্বারা
রচিত, এই ছিল বেদ বিষয়ে ভাবনা। ঋষিরা নিজেদের জ্ঞানের
আলোতে, মানসপটে (মনের আলোতে)এক সার্বভৌম, মহত্,
শাশ্বত অপৌরুষেয় সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন যা তাঁরা
মননের দ্বারা (যুক্তি, বুদ্ধির দ্বারা) তৈরী করেন
নি। এই সত্যকে তাঁরা রূপ দিলেন মন্ত্রে, স্বতঃ প্রকাশিত
(নিজ হতে প্রকাশিত) শক্তিময়ী কবিতায়, যার প্রেরণা
ও উত্স সাধারণ নয়, দিব্য। এই ঋষিরা কবি আখ্যা পেতেন
এবং সে যুগে কবি পদটিতে 'সত্যদ্রষ্টা' অর্থ বোঝাত।
বেদের মধ্যেই এঁদের 'কবয়ঃ সত্যশ্রুতি', সত্যের দ্রষ্টা
ও শ্রোতারূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বেদকে বলা হত 'শ্রুতি'
যে পদটি ঈশ্বরপ্রেরিত ধর্মগ্রন্থের রূপ পেয়েছিল।
উপনিষদ- যুগের ঋষিদের বেদ সম্বন্ধে এই ধারণাই ছিল।
নিজেরা যে সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তার প্রমাণ
হিসেবে বারবার তাঁরা বেদকে সাক্ষী মেনেছেন। কালক্রমে
উপনিষদগুলিও 'শ্রুতি' বা ভগবদপ্রেরিত ধর্মগ্রন্থ
রূপে গণ্য হয়ে পূণ্যশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
বেদের যজ্ঞানুষ্ঠান পরায়ণ ভাষ্যকারেরা সব কিছুই
আখ্যায়িকা ও যজ্ঞক্রিয়া রূপে ব্যাখ্যা করেছেন। পণ্ডিতেরা
কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড এই দুটি ভাগ করেন। সূক্তগুলিকে
কর্মকাণ্ডের সাথে ও জ্ঞানকাণ্ডকে উপনিষদগুলির সঙ্গে
যুক্ত করেন। বেদ ও উপনিষদ দুইই অধ্যাত্মজ্ঞানে চরম
ও অভ্রান্ত বলে স্থান পেয়েছিল।
বেদ সত্যশ্রুত
ঋষিদের প্রাপ্ত জ্ঞান এ ধারণা- পরম্পরা, এই মত ব্রাহ্মণ
গ্রন্থে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও পরবত্র্তী যুগেও
অক্ষুন্ন ছিল। তবে এই ধারণা কি কেবল মাত্র অলীক
কল্পনা, আধারহীন বা সংস্কার মাত্র? অথবা পরবর্তী
যুগে কিছু বেদসুক্ত, উচ্চ বিচারের অল্প উপাদান মাত্র
যা এই ধারণা পরম্পরার সূত্রপাত সূচনা করে- এটাই
কি সত্য? উপনিষত্ রচয়িতারা তাঁদের কল্পনাবহুল ও
খেয়ালী ব্যাখ্যার সাহায্যে কী এমন অর্থ আরোপ করেছিলেন
যা বেদমন্ত্রে নাই? প্রশ্নগুলি স্বভাবতই বেদগবেষকের
মনে উঠে আসে। উত্তরে শ্রী অরবিন্দ বলেন, আধুনিক
ইউরোপীয় পণ্ডিতমণ্ডলী এ রকম তত্বই স্থাপন করেন এবং
কিছু ভারতীয় আধুনিক পণ্ডিতদেরও প্রভাবিত করেন। এই
তত্বের সমর্থনে এই যুক্তি যে বৈদিক ঋষিরা শুধুমাত্র
দ্রষ্টাই ছিলেন না, তাঁরা যজ্ঞক্রিয়ার পুরোহিত ও
গায়ক ছিলেন, গীত রচনা করতেন সার্বভৌম যজ্ঞের জন্য-
যার বিষয়বস্তু যজ্ঞের লক্ষ্য অনুযায়ী ক্রিয়াকলাপের
নির্দেশ ও ভোগ্যবস্তুর জন্য প্রার্থনা (যেমন ধন,
সমৃদ্ধি, শত্রুবিজয় ইত্যাদি)। ভাষ্যকার সায়ন ঋক
মন্ত্রগুলির কর্মকাণ্ডীয় ব্যাখ্যা, কোথাও পৌরাণিকী
আখ্যায়িকাত্মক বা ঐতিহাসিক অর্থের আভাস দিয়েছেন
প্রয়োজনবোধে। তিনি কোন প্রকার উদাত্ত বা ভাবগম্ভীর
অর্থ সূক্তগুলির বিশেষ করেন নি। যেখানে পৌরাণিক
বা ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা সম্ভব হয় নি, সেখানে বিকল্প
হিসেবে উচ্চ অর্থের আভাস দিয়েছেন স্বল্প, একান্তই
বাধ্য হয়ে। অবশ্য তিনি বেদের আধ্যাত্মিক প্রামাণ্যতাকে
অস্বীকার করতে পারেন নি। সে কাজটি সুসম্পন্ন করেন
আধুনিক মতাবলম্বী পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের দ্বারা প্রভাবিত
ভারতীয় বিদ্বজ্জনেরা।
ইউরোপীয় পণ্ডিতরা
সায়নের কর্মকাণ্ডীয় সিদ্ধান্তটিই নিলেন এবং বেদে
ব্যবহৃত শব্দের ব্যুত্পত্তিগত অর্থের নিজ নিজ মত
বা আনুমানিক ভাবার্থের আরোপ সহ বেদমন্ত্রের এমন
একটা রূপ দিলেন যা বহু স্থলে স্বৈরাচারী ও কল্পনাপ্রসূত।
এই পণ্ডিতরা বেদের মধ্যে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস,
সমাজ- গঠন, সংস্থা, প্রথা, রীতিনীতি ও তত্কালীন
সভ্যতার চিত্র ও নিদর্শন খুঁজলেন। ভাষাভেদের সূত্র
ধরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে আর্য জাতি উত্তরদেশ
থেকে এসে দ্রাবিড় ভারতকে আক্রমণ ও জয় করে। এ রকম
উল্লেখ কিন্তু ভারতের কোন মহাকাব্যে বা অভিজাত সাহিত্যে
নেই। যা হোক, পাশ্চাত্তের এই সব পণ্ডিতদের মতানুসারে
বৈদিক ধর্ম, প্রকৃতি দেবতার পূজা, সৌর আখ্যায়িকা
পূর্ণ, যজ্ঞানুষ্ঠানের গাথাপূর্ণ, যেগুলির ভাব,
বিষয়বস্তু আদিম সভ্যতাসুলভ এবং বর্বরোচিত এই প্রার্থনাগুলিই
হল বেদ যা নিয়ে ভারতীয়দের দর্প ও যাতে ভারতীয়রা
দিব্যত্ব আরোপ করে।
সন্দেহ নেই
যে আদিম যুগে দেবদেবী রূপে পূজা পেতেন প্রাকৃতিক
শক্তিরাই- যেমন সূর্য, চন্দ্র, দ্যাবা- পৃথিবী,
বায়ু, বর্ষা ইত্যাদি। রোমে, গ্রীসে, ভারতবর্ষে এবং
অন্য বহু পুরানো জাতির মধ্যে পূজার এই ছিল সামান্য
রূপ। কালক্রমে সব দেশেই এই দেবতারাই আধ্যাত্মিক
ব্যাপারে উচ্চতর অবস্থানে উপনীত হলেন। তবে ভারতবর্ষে
এই পরিবর্তনের ফলে বৈদিক দেবতারা আধ্যাত্মিক উন্নত
ভাবের পূর্ণতার বিকাশের উচ্চমার্গে উপনীত হয়েও তাঁদের
বাইরের স্বরূপ ধরে রেখেছিলেন। উচ্চতর আধ্যাত্মিক
প্রয়োজনে নতুন পৌরাণিক এক দেবগোষ্ঠী স্থান পেয়েছিল,
যদিও তাঁরা সৃষ্ট হয়েছিলেন পূর্বের বৈদিক দেবতা
পরম্পরা থেকেই। যেমন বৈদিক বৃহ্রপতি বা ব্রহ্মণস্পতি
থেকে এসেছিলেন পৌরাণিক রুদ্র, ব্রহ্মা, বিষুÎ, শিব,
লক্ষ্মী ও দুর্গা- (পাঠক ২য় ও ৩য় ভাগ স্মরণ করুন)|
অবশ্য এই পরিবর্তনক্রম ভারতবর্ষে অপেক্ষাকৃত অসম্পূর্ণ;
কারণ, পূর্ব দেবতারা পৌরাণিক গোষ্ঠীতে ক্ষুদ্র পর্যায়ে
গণিত। কারণ, শুরু থেকেই ঋকবেদের দেবতাদের উপর বাহ্যিক
ও মনস্তাত্বিক সামর্থ বৃহত্ ভাবেই আরোপিত হয়েছিল।
প্রাচীন জাতিদের মধ্যে এই পরিবর্তনের কারণ সাংস্কৃতিক
ও কৃষ্টিগত বিকাশ। সভ্যতার ক্রমোন্নতিতে যেমন যেমন
মানুষ মন প্রধান হয়ে ওঠে ও দেহপ্রধান জীবন ব্যাপারের
প্রতি আসক্তি কম হতে থাকে, ততই মানুষ কর্মবিধান
ও দেবস্বরূপ কল্পনাতে সুচারুতর সূক্ষতর তত্বের অনুসন্ধান
করতে অনুপ্রাণিত হয়। প্রয়োজন হয় এমন এক উচ্চ সত্বার
বা দেববিগ্রহের যা এই সব উচ্চ ভাবধারার ধারক ও বাহক
হতে পারে । চিন্তার অগ্রগতিতে অন্তর্মুখী প্রবৃত্তির
প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পায় ও দৃঢ় হয় এবং তার কৃতিত্ব
সব দেশেই অতীন্দ্রিয় তত্বানুসন্ধানী রহস্যবিদদের
প্রাপ্য। প্রায় সর্বত্রই এমন একটি রহস্য যুগ এসেছিলো
যখন গভীর ধী সম্পন্ন আত্মজ্ঞানীরা নিজ সাধন অনুযায়ী
কৃত্য- কর্ম ও বিধিবিধান সমূহকে এক প্রতীকাত্মক
গূঢ় বিদ্যায় পরিণত করে আদিম বাহ্যিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের
অভ্যন্তরে যোগ করেছিলেন। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে
এই ব্যাপারটি প্রকাশ পেয়েছিল। গ্রীসে ছিলো অর্ফিক
এবং ইলিউসীয় রহস্যবাদীরা ; মিশর ও ক্যলডিয়া দেশে
ছিল গুহ্য ও যাদুবিদ্যার পুরোহিতরা, পারস্য দেশে
মাগিরা এবং ভারতবর্ষে ঋষিবৃন্দ। রহস্যবাদীরা (Mystics
) আত্মজ্ঞান ও গভীর বিশ্বজ্ঞানের চর্চায় মগ্ন থাকতেন।
তাঁরা জানতে পেরেছিলেন যে উপরভাসা দেহগত মানুষের
পিছনে এক গভীরতর আত্মা ও অন্তঃসত্বা আছে যার অন্বেষন
ও অবগতি মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। 'আত্মানং বিদ্ধি'-'নিজেকে
জানো'- এই ছিল তাঁদের শিক্ষা বাণী।
ভারতবর্ষে আত্মজ্ঞান ও আত্ম উপলব্বিìর সাধনা হয়ে
উঠেছিল মানব সাধারণের কাম্য বস্তু। তাঁরা সন্ধান
পেয়েছিলেন আরো একটি সত্যের- বিশ্বের বাইরের রূপের
পিছনে এক পরমার্থ তত্বের- যার গবেষণা , অনুসরণ ,
ও সাক্ষাতকার লাভ ছিল তাঁদের অন্তিম লক্ষ্য। তাঁরা
আরও আবিষ্কার করেছিলেন প্রকৃতির সেই সব শক্তি রহস্য
যা ভৌতিক জগতের অন্তর্ভুক্ত না হয়েও ভৌতিক জগত ও
ভৌতিক বস্তুর উপর গুহ্য প্রভাব বিস্তার ও প্রভুত্ব
করে । এই গুহ্য বিদ্যা ও গুহ্যশক্তির একটা সু প্রয়োগ
বিধান রচনা করাও তাঁদের মহত্ কাজের অন্যতম। এটি
তাঁরা করতে সমর্থ হয়েছিলেন কঠিন ও সযত্ন প্রশিক্ষণ,
নিয়মানুবর্তিতা ও প্রকৃতি শোধনের দ্বারা। সাধারণ
মানুষের পক্ষে এটি অসাধ্য। কারণ, কঠোর পরীক্ষা ও
প্রশিক্ষণ ছাড়া এ সব ব্যাপারের মধ্যে মানুষের প্রবেশ
বিপজ্জনক, নিজের ও অপরের জন্যও। এই বিদ্যা ও শক্তিসমূহের
অপব্যাখ্যা, দুস্প্রয়োগ সম্ভব- সত্যকে মিথ্যার দিকে,
শিবকে অশিবের দিকে নিয়ে যাওয়া। অতএব গোপনতার একটা
কঠিন পরিবেশ সৃষ্টি করে তার অন্তরালে গুরু- শিষ্য
পরম্পরায় গুপ্ত বিদ্যাটি হস্তান্তরিত হত। প্রতীকের
আবরণে, রহস্যে ঘিরে বিদ্যাটিকে রেখে এমন সব সংলাপ
ও সূত্র রচিত হয়েছিল যার অর্থ দীক্ষিত শিষ্যদেরই
বোধগম্য। অন্যের কাছে অবোধ্য বা কেবলমাত্র বাইরের
অর্থটিই বোধগম্য। সর্বত্রই রহস্যবাদের এটিই সার
কথা।
বেদ রচয়িতা ঋষিরা ছিলেন ক্রান্তদর্শী অর্থাত্ কবি
ও মহত্ আধ্যাত্মিক ও লোকোত্তর জ্ঞানের অধিকারী।
তবে ভাষার সুপ্রাচীনত্ব , অপ্রচলিত শব্দসমষ্টির
প্রয়োগ ( যাস্কের গণনায় চার শতেরও অধিক শব্দের অর্থ
অজানা) এবং বহু জায়গায় কঠিন ও পুরান রচনা শৈলী-
বেদ মন্ত্রের অর্থকে অস্পষ্ট বা গোপন রাখতে সাহায্য
করেছিল। বৈদিক প্রতীকগুলির অর্থ- সংকেতের কোষও কালক্রমে
লুপ্ত হওয়ায় পরবর্তী যুগীয়দের কাছে বেদ দুর্বোধ্য
হয়ে উঠেছিল। এমনকি গুহ্য বিদ্যায় প্রবেশ করার জন্য
উপনিষদ যুগের আত্মজিজ্ঞাসুদেরও দীক্ষা ও ধ্যানের
আশ্রয় নিতে হয়েছিল। আরও পরবর্তী যুগে অনেক পণ্ডিত
নিছক অনুমান বা বৌদ্ধিক ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন।
কখনও পৌরাণিক আখ্যায়িকা বা ব্রাহ্মণ গ্রন্থের শরণ
নিতে হয়েছিল , যদিও বহুস্থলে সেগুলিও অস্পষ্ট ও
প্রতীকি।
তবুও বেদের
প্রকৃত অর্থ আবিষ্কার সাধনকারীদের কাছে যাস্কের
সংকেত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে বেদ , ক্রান্তদর্শী
কবিদের প্রজ্ঞায় উদ্ভুত স্বতস্ফূর্ত বাক। তাই ব্যাকরণ
বিশারদ বা ব্যুত্পত্তিবিদদের বা পণ্ডিতদের অনুমান
নির্ভর তর্ক বিতর্কের সাহায্যে এই জ্ঞনগৃহের দরজা
খোলা যাবে না, যাস্কের সূত্র অনুসরণই শ্রেয়।
(চলবে)
কমলা
রায়
সাহায্যকারী
গ্রন্থ: 'বেদ রহস্য'- শ্রী অরবিন্দ