সংলাপ
৩৮ বি মহানির্বাণ রোড
কলকাতা ৭০০০২৯
ইমেইল
sanlaap@rediffmail.com ওয়েবসাইট
www.sanlaapindia.org


পরিমার্জনা, প্রকাশন
ও সংরক্ষণ -
অবসর
তথ্য ও বিনোদনের
বাংলা ওয়েবসাইট
)

 


 


 

নারী ও শিশু পাচার ব্যবসা:

পাচার একটি সংগঠিত অপরাধ (Organized Crime)| সাধারণভাবে এতে অনেকে জড়িত থাকে| খুব অল্প টাকায় এই ব্যবসা শুরু করে প্রচুর রোজগার করা সম্ভবপর হয়, কারণ এর সঙ্গে জড়িত হল মানুষের শোষণ| বিনা পারশ্রমিক বা নামমাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করানো, মানুষকে বিক্রি করে পয়সা উপার্জন, মেয়েদের ক্ষেত্রে একই মেয়েকে বহুবার বেচাকেনা করে লাভবান হওয়া, যৌনব্যবসায় মেয়েদের নিয়োজিত করে তার উপার্জনের টাকা সংগ্রহ করা, ইত্যাদি পাচার ব্যবসায়ে আয়ের বিভিন্ন উত্‌স|

পাচারকারীদের অনেকেই শ্রমিক ঠিকাদার - যারা শ্রমিকদের কাজে বা পেশায় যুক্ত হবার প্রতিশ্রুতি দেয় বা দায়িত্ব নেয়| কাজ দেবার নামে মেয়েদের ভুলিয়ে নিয়ে এসে বেশ্যাবৃত্তির জন্য দালালদের কাছে বা বেশ্যালয়ের মালিকিনদের কাছে বিক্রি করে দেয়| শিশুদের বা নারীদের চাকরির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেওয়া হয়, সেখানে তাদের বিনা মজুরীতে বা অতি অল্প মজুরীতে খাটতে বাধ্য করা হয়| ছোটদের অনেককে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়, বয়স্কদের বিকৃত যৌনলালসা মেটাতে বাধ্য করা হয়| পাচারাকারীরা মূলতঃ শ্রমিক ঠিকাদার হলেও অনেক সময়ে দু-চার পয়সার লোভে অন্যরাও এই কাজে যুক্ত হয়| যেমন, বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োজিত মেয়েদেরও পাচারকারীর ভূমিকায় দেখা যায়| তারা শহর ও পেশার চাকচিক্যময় জীবনের কথা বলে মেয়েদের প্রলুব্ধ করে দালাল বা মালিকিনদের কাছে নিয়ে আসে উপরি রোজগারের লোভে|

মোটামুটিভাবে পাচার ব্যবসায়ের প্রধান অঙ্গ তিনটি: নিয়োজন-স্থান বা source, পরিবহন বা transportation এবং গন্তব্যস্থল বা end point| পাচারকারীরা যে জায়গায় নারী বা শিশুদের পাচারের জন্য সংগ্রহ করা সবচেয়ে সুবিধাজনক সেখানে সক্রিয় হয়| সেগুলি হল নিয়োজনের জায়গা| সেখান থেকে নারী ও শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয় গন্তব্যস্থলে - যেখানে তাদের কেনবেচা করা সহজ এবং যেখানে তাদেরে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে|

পাচারকারীরা সাধারনতঃ সক্রিয় হয় যেসব জায়গায় দারিদ্র বেশী| ভৌগলিক সুবিধা (সীমান্তবর্তী অঞ্চল) বা সমাজের ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, ইত্যাদি, স্থান নির্বাচনে সহায়তা করে| দরিদ্র পরিবার, যে পরিবারে শিশু কন্যারা সংখ্যায় বেশী, বা যে পরিবারে পুরুষরা রোজগার করতে বা অন্য কোনও কাজে যুক্ত হতে অক্ষম - সেইসব পরিবার পাচারকারীদের লক্ষ্য| অবিবাহিত বা বিধবা মহিলা, ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের নাবালিকারা, ধর্ষণ, বিশ্বাসঘাতকতা, যৌন নিপীড়নের যারা শিকার বা যাদের সমাজ এক ঘরে করে দিয়েছে - সেই সব মেয়েদের প্রতি পাচারকারীদের বিশেষ লক্ষ্য থাকে| সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ এবং যেসব সম্প্রদায়ে প্রথাগত ভাবে মেয়েদের দেহ ব্যবসায়ে নিয়োজিত করা হয় - সেইসব সমাজে পাচারকারীরা সক্রিয় থাকে|

নারীদের ক্ষেত্রে গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে পড়ে পতিতালয়, সস্তা হোটেল বা ভাড়াবাড়ি যেগুলি খদ্দেরদের যৌন-ইচ্ছা পরিতৃপ্তির জন্য ব্যবহার করা হয়| নারীদের যৌনশোষণ সম্ভব হয় কারণ বহুলোক নারীসঙ্গ করার জন্য অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত| এইসব খদ্দের (customer) বা গ্রাহকদের (clientele) চাহিদার জন্য যৌনব্যবসা রমরম করে চলছে এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য নারী পাচারের পরিমান বাড়ছে| তবে পাচারের এই বৃদ্ধির মূলে বিনিয়োগকারীদের (financiers) ভূমিকা অশেষ| বিনিয়োগকারীরা পাচারের বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থ বিনিয়োগ করে মুনাফা লোটে| এই তালিকাভুক্ত লোকেরা হল যারা নারী ও শিশু সংগ্রহ করার (recruitment) ও তাদের পরিবহন করার (transportation) কাজে অর্থ দান করে এবং যাদের অর্থে পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন থাকার ব্যবস্থা হয় (stay and accommodation) | এছাড়া যারা পতিতালয়ের ব্যবসার সঙ্গে আর্থিক ভাবে যুক্ত - তারাও পাচার ব্যবসায়ে বিনিয়োগকারীর দলে পড়বে| এছাড়া এই ব্যবসায়ে রয়েছে একদল সহযোগী (Abettors) যারা নানা ভাবে এই শোষণ বা পাচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা বা সাহায্য করে|

Copyright © 2007 Abasar.net. All rights reserved.