১৯৬৮
সালে মধ্যপ্রদেশের উমরাঁও জেলায় পূর্বতন
রেওয়ারাজের শিকার ভূমিতে ‘বান্ধবগড় জাতীয়
উদ্যান’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে এই উদ্যান
বাঘ্র প্রকল্প (Tiger Reserve)-এর আওতায়
আনা হয়। প্রাথমিক ভাবে মোট আয়তন ৪৩৭ বর্গ
কিমি. যার মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশ, ১০৫
বর্গ কিমি., কোর (Core) অঞ্চল। ভারতের মধ্যে
এখানেই বাঘের সংখ্যা অন্যতম সর্বাধিক। বলা
হয় বাঘ দেখতে পাওয়া যে কোনও উদ্যানে ভাগ্যের
কথা কিন্তু বান্ধবগড়ে বাঘ দেখতে না পাওয়া
নিতান্ত দুর্ভাগ্যের কথা। ১৯৫১ সালে এখানেই
তৎকালীন রেওয়ারাজ, মার্তণ্ড সিং সাদা বাঘ
ধরেছিল।
পশু-পাখি
দেখার জন্যে সূর্যোদয়ের আগে আর সূর্যাস্তের
কিছু আগে উদ্যানে গেলে তাদের দেখা পাবার
সব থেকে বেশি সম্ভাবনা থাকে তাই আমরা ভোর
বেলা এবং বিকালে, দুই সময়েই প্রবেশ করেছিলাম
উদ্যানে।
অন্তত
২০০০ বছরের পুরানো ভগ্নাবস্থায় এক দুর্গ
আছে এই উদ্যানে। এই দুর্গের নামেই এই স্থানের
নাম। অবশ্য দুর্গের মধ্যে এক মন্দিরের অবস্থা
বেশ ভাল, যদিও সেখানে যাবার ব্যবস্থা ভাল
নয়। অনেকগুলো প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম গুহাও
আছে এখানে ।
আর
আছে এক ছোট পাহাড়ের মাথায় অনন্ত শয্যায়
শায়িত পাথরে নির্মিত গাছ-পালায় ঘেরা ৩৯ফিট
দৈর্ঘ্যের বিষ্ণু মূর্তি। মূর্তির পদ যুগল
স্পর্শ করে এক ছোট ঝর্ণা নিচে নেমে এসে
উদ্যান হয়ে শীর্ণকায়া নদী চরণ-গঙ্গা নামে
বয়ে যাচ্ছে।
এই
চরণ-গঙ্গার ধারেই এক চারণ-ভূমিতে আমরা খোলা
জিপ থেকে বাঘ দেখেছিলাম। দুপুরে ঘুমন্ত
আর বিকালে এক বাঘিনি বৈকালিক ভ্রমণ রত অবস্থায়
।
দুপুরে
অবশ্য জিপ থেকে নেমে হাতি চেপে বড় বড় ঘাসে
ভরা কিছুটা জলা ভূমি পার করে ঘুমন্ত বাঘের
৯/১০মিটারের মধ্যে আমাদের নিয়ে গিয়েছিল
মাহুত। হাতির দর্শনি লাগে তখনই যখন হাতির
পিঠে চেপে বাঘের দর্শনে সফল হয় দর্শক। উদ্যানে
ঘোরার জন্যে খোলা জিপ ও আলাদা করে হাতি
দুইই পাওয়া যায়। অবশ্য হাতির সংখ্যা কম
থাকার কারণে হাতির জন্যে প্রচুর আগে থেকে
ব্যবস্থা করতে হয় এবং খরচ অনেক। এক্ষেত্রে
বাঘের দর্শন না পেলেও দর্শনির কোনও হের-ফের
হয় না। আর যে কোনও জাতীয় উদ্যানের মতোই
এখানেও বিশেষ করে চিতল বা স্পটেড ডিয়ার
প্রচুর পাওয়া যায়। আমরাও উদ্যানের বিভিন্ন
জায়গায় তাদের দেখেছি ।
এলাহাবাদ-জবলপুর
রেল লাইনের কাটনি জংশন স্টেশন থেকে পূর্ব
দিকে অথবা বিলাসপুর-কাটনি রেল লাইনে, বিলাসপুরের
দিক থেকে পশ্চিমে উমারিয়া রেল স্টেশন এসে
সেখান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে টালা, বান্ধবগড়ের
প্রবেশ দ্বারে পৌঁছাতে পারেন। টালায় অনেক
বিভিন্ন মানের ও দামের হোটেল আছে। হোটেল
থেকেই ব্যবস্থা হয় জঙ্গলে ঢোকার বাহন, খোলা
জিপের। ভোর ও দুপুরে জঙ্গলে পারমিশন নিয়ে
ও দর্শনি দিয়ে ঢুকতে হয়। অবশ্য সব কিছুর
হোটেল থেকেই ব্যবস্থা হতে পারে।