Generation
gap কি কমানো যায়??
এর আগের দুটো
লেখাতে পরের ধনে পোদ্দারি করে কিছু কথা লিখেছিলাম । ঝুলির সেই
রসদ আপাতত শেষ । তাই এবার নিজের কিছু ধারণা নিয়ে লিখবার চেষ্টা
করছি । দেখা যাক , আপনাদের কেমন লাগে। এই পর্বে আমি একটা বিষয়ে
আলোচনা শুরু করতে চাই।
আমার নিজের কিছু ধারণা
আছে – বেশী বয়সে ছোট দের মনের থেকে দূরে সরে না যাবার । সাদা
কথাতে “জেনারেশন গ্যাপ” কমাবার । আমার বুদ্ধিটা এতই সূক্ষ্ম
যে প্রায় নেই বললেই চলে । তাই আপনারা এতে যোগ দিয়ে আপনাদের মতামত
না জানালে এই আলোচনাটা একবারেই মাঠে মারা যাবে । তাই বিশেষ অনুরোধ
– আপনারা এটাতে যোগ দিন । বিশ্বাস করুন - আমার আপনাদের কোনও
জ্ঞান দেবার কুমতলব নেই। শুধু আমার মত বয়স্কদের (যারা জীবনের
অনেক বছর পার করেছেন)আর তরুণদের অভিমত জেনে নিজে ছোটদের মনের
কাছে থাকার চেষ্টা করবো – কারণ আমি ওদের থেকে কোন ভাবেই দূরে
যেতে চাই না। তা হলে শরীরের সাথে সাথে মনেও বুড়ো হয়ে যাব- যেটা
আমি একেবারেই মানতে পারব না।
একটা কথা আছে – “some bring
happiness wherever they go – others whenever they go” আমার
মত যারা ৬০ পার করেছেন (আমি নিজে ৭০ ছুঁই ছুঁই)- তাদের অনেকেই
এই বয়সে ছোট দের কাছে ২য় দলের সদস্য । প্রথম দলে না পড়লেও অন্তত
পরের দলে যেন না পরি – তার কিছু ধারনা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা
করতে শুরু করছি। আমি শিং ভেঙ্গে বাছুরের দলে যোগ দিতে বিশেষ
আগ্রহী – কিন্তু আপনাদের সবার থেকে সাহায্য না পেলে শিঙটা ভাঙব
কি করে আর শিঙ না ভাঙ্গতে না পারলে ওরা আমাকে দলে নেবে কেন?
এবার আমার ধারণার শুরু।
ক) একদিন এক পার্কে বসে
ছিলাম একা। একটু দূরে কিছু স্কুল এর ছেলে বসে স্কুল এর পরে কোন
লাইন এ যাবে – সেই নিয়ে আলোচনা করছিল। এক আমার মত বয়সের ভদ্রলোক
ওদের পাশে এসে বসলেন। তিনি তার পরে নিজে থেকেই শুরু করলেন ওদের
কি নিয়ে পড়া উচিৎ। তার কথার সুরে আর ভাষাতে যে সুরটা ছিল তাতে
মনে হচ্ছিল উনি সর্বজ্ঞ। আমি শুনলাম একটি ছেলে পাশের ছেলেটিকে
বলল "বুড়ো কে ফোটা"। শেষ অবধি সেটা না করে তারা কোন
কথা না বলে আর একটা জায়গাতে গিয়ে বসলো। এই ঘটনা থেকে আমার মনে
হয় একটা বয়সের পরে আমরা অনেকেই কথা বলতে বেশী ভালবাসি – কথা
শোনার ইচ্ছা আর ধৈর্য হারিয়ে ফেলি । ভেবে দেখুন – আমরা অনেকে
ছোটদের জ্ঞান দিতে থাকি – ওদের কথা বলার সুযোগই দিই না। এতে
বয়স্করা ওদের কাছে শুধুই “ফোটাবার” পাত্র হয়ে উঠি।
খ) আমার নিজের অভিজ্ঞতা
থেকে বলতে পারি, ওদের কথা বলার সুযোগ দিয়ে আলোচনা করলে অনেক
সময় দেখা যায় যে ওরাই ঠিক । তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের সেটা মেনে
নিতে হবে – নিজের মিথ্যা অহংকার নিয়ে স্বীকার না করলে চলবে না।
ছোটোদের সাথে কথা
বলবার সুরটা একটু হাল্কা রাখলে আর কিছু রসিকতা যোগ করলে ওদের
অনেক কাছের লোক হওয়া যায় বলে আমার মনে হয়। এতে ওরা অনেক সহজ
হতে পারে আর মন খুলে কথা বলতে পারে। আমি সব জানি – আমি সর্বজ্ঞ
– এই দিয়ে শুরু করলে ওরা মনে মনে হাসবে আর কথা শুনছে ভান করবে
– কিন্তু আসলে শুনবে না। কিছু সাহসী ছেলে উঠে চলেও যেতে পারে।
সব থেকে বড় দরকার ওদের adult মেনে নিয়ে আলোচনা করতে হবে ।
গ ) আমাদের কথাই শেষ কথা
– এই ভ্রান্ত ধারণা আমাদের অনেক সময় থাকে। নতুন প্রজন্ম অনেক
ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক বেশি জানে। বুকে হাত দিয়ে সত্যি বলার
সাহস থাকলে আমরা অনেকেই এটা জানি – কিন্তু নিজের অহম থেকে মেনে
নিতে পারি না। মেনে না নিলে আমরা নতুন প্রজন্ম থেকে আরও আরও
দূরে সরে যাব আর generation gap আর বেড়ে যাবে। এ ছাড়া ছোটদের
মতামত প্রথমে জানতে চেয়ে আলোচনা শুরু করে আমি অনেক সময় সুফল
পেয়েছি। আমরা আগে বলতে শুরু করলে অনেক সময় তারা গুটিয়ে যায় –
বা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
এই ব্যাপারে আমার আর একটা
ঘটনা কথা মনে পড়ছে। একদিন আমি একটা পার্কে একা বসেছিলাম – কিছু
করার ছিল না। একবারে অপ্রত্যাশিত ভাবে একদল কলেজ-এর ছেলে আমার
পাশে এসে বসলো। একজন আমাকে বলল যে ওরা পাশ করে বিদেশে পড়তে যাবার
ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চায়। মনে মনে জ্ঞান দেবার এই সুযোগ
পেয়ে খুব খুসি হলাম । কিন্তু লেকের ধারে শোনা 'বুড়ো কে ফোটা'
র অভিজ্ঞতার কথাটা মনে পড়ে গেল। তাই আমি বললাম "আমার নিজেরই
এই ব্যাপারটা জানা দরকার। কিন্তু আমার এই ব্যাপারে যে টুকু জ্ঞান
আছে সেটা অনেক দিন আগের – এখন সেটা ঠিক কিনা জানি না। তাই ভাল
হবে তোমরা আগে শুরু করলে।" বিশ্বাস করুন এর পর আমরা এই
বিষয়ে অনেক আলোচনা করলাম – সম বয়সীদের মত।
এগুলো আমার নিজের ব্যক্তিগত ধারণা – আমি আপনাদের ধারণা জানতে
খুব আগ্রহী – সুকুমার রায়ের কথাতে “আমার বয়স এখন কমতির দিকে”
আর মনে বুড়ো হতে আমার ভীষণ অনীহা। তাই আপনাদের সাহায্য আমার
বিশেষ ভাবে চাই ।
এবার আর একটা বিষয়ে আপনাদের
সাথে আলোচনা করতে চাই । বিদেশের মত আজকাল বৃদ্ধাশ্রম আমাদের
দেশেও ভাল ভাবে শুরু হয়ে গেছে। অনেকেরই এখন ছেলে মেয়ে বিদেশে
– বুড়ো আর বুড়ি শুধু একা। অন্তত যতদিন দুজন আছে – কোন ভাবে চলে।
কিন্তু একজনকে আগে যেতেই হবে । তার ওপর যদি শরীর সুস্থ না থাকে
– তা হলে একা পথ চলা খুবই শক্ত হয়ে পড়ে। আমি এই সব কথা ভেবে
অনেক বৃদ্ধাশ্রম দেখতে গেছি। কিন্তু যেটা আমি একেবারেই হজম করতে
পারি নি – সেটা হল শুধু মনের দিক থেকে বৃদ্ধ মানুষের সাথে থাকার
ভয়। আমার মনে হয় – বৃদ্ধাশ্রম এর সাথে যদি ছোটদের অনাথ আশ্রম
যোগ করা হলে বয়স্কদের সেই সব সঙ্গী মেলে – যাদের তারা নিজের
নাতি বা নাতনির মত ভাবতে পারে আর মনের দিক থেকে তাড়াতাড়ি বুড়ো
না হয়।
শেষ করার আগে আবার বলি
– আপনাদের মতামত জানালে এই বুড়োর অনেক উপকার হবে।
আজ এই অবধি। আসি।
বিজন
বন্দ্যোপাধ্যায়