প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ক্ষমা আর আশীর্বাদ করা – অহমিকা কি ?

আমার লেখা আগের সব প্রলাপে এতো মতামতের প্রশ্রয় পেয়ে পাগলামো করার সাহসটা আরও বেড়ে গেছে । মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি মনে হলে বিনা দ্বিধাতে জানাবেন। আশা করি তাতে এ অত্যাচার বন্ধ হবে । তবে নিজের পাগলামোতে আমার নিজেরই নিয়ন্ত্রণ নেই – তাই পুরোপুরি কথা দিতে পারছি না।

প্রথমেই বলি – এখানে যা বলছি সেটা আমার একান্ত নিজের ধারণা। আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ – তাই আমার এই ধারণা ভুল হতেও পারে। আপনাদের সাথে আলোচনা করে নিজের মতকে ভাল করে যাচাই করতে চাই।
আমার আগের লেখা “বন্ধু কে” উত্তরে অনেকের মতামত পড়ে মনে হয়েছিল আমি অকারণে বেশী চুলচেরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। অস্বীকার করতে পারছি না – কিন্তু এই বদ অভ্যাস থেকে বেরুতে পাচ্ছি না। তাই পাঠকদের এটা বরদাস্ত করা ছাড়া রাস্তা একটাই – বিজনের লেখা না পড়া ।

ক্ষমা করা আর আশীর্বাদ করা – এই দুটোতে আমার বেশ allergy আছে। কেন সেটা একে এক করে বলার চেষ্টা করছি।
প্রথমে ক্ষমা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। “ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু” তে আমার আপত্তি নেই। কেউ যখন বলে “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম” সেখানে ক্ষমা কথাটার প্রকৃত অর্থ হয়ে যায় “মাপ করা”। সেই মাপ করার মধ্যে আমি একটা অহমিকা আর যাকে মাপ করা হচ্ছে – তার প্রতি একটা দাক্ষিণ্য আর দয়া খুঁজে পাই। আমি তোমার থেকে অনেক বড় – এ রকম নিজের ঢাক নিজে পেটাবার একটা সুর আমার কানে বাজে।এটা নিজেকে মহান করার একটা প্রচেষ্টা বলে আমার মনে হয়। কে কাকে ক্ষমা করছে আর কি জন্যে করছে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেউ কোন ভাবে কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে বা কোন অপ্রিয় কথা বললে এবং তার পরে ভুল বুঝতে পেরে সেটা স্বীকার করলে, অনেকে “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম” কথাটা বলে। এটা কি নিজেকে broad minded বলে প্রচার করার একটা গুপ্ত চেষ্টা নয় ? মনের দিক থেকে কেউ যদি সেই দোষটা সত্যিই ভুলতে পারে বা সেটাকে মনের ওপর আঘাত না ভাবে – তার বলার প্রয়োজন হয় না “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। কেউ যদি নিজে থেকে কারো কাছে নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চায় - সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ক্ষমা চাওয়া যদি একটা বাহ্যিক আর অসত্য ভণিতা হয় বা অন্য কোন উদ্দেশ্যমুলক হয়, সেটা আমার কাছে আমার কাছে , খারাপ ভাষাতে ন্যাকামো বা চাতুরী ছাড়া কিছু না। কেউ ক্ষমা চাইলে আমি বলতে চাই – “ভুলটা যদি সত্যি বুঝে থাকো – সেটাই সব থেকে বড় লাভ” – “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম” নয় । বেশীর ভাগ সময় ক্ষমা করাটা একটা কপটতা (hypocricy) – অনেক সময় ই কথাটা মন থেকে বলা হয় না। “sorry” বলা আর তার উত্তরে “mention not” বলা যেমন বেশির ভাগ সময় শুধু একটা ভদ্রতার বেশী কিছু না, আমার মনে হয়, ক্ষমা করে দেওয়াটা অনেক ক্ষেত্রে প্রায় একই গোত্রে পড়ে।

ক্ষমার(forgiveness) Oxford dictionary র সংজ্ঞা 'forgiveness as 'to grant free pardon and to give up all claim on account of an offence or debt'। human and divine forgiveness মনে হয় এক না – আমার তাই মনে হয়। যিশুর জীবনের শেষ সময় ক্ষমা করাটা আমি কোন ভাবেই ছোট করতে চাই না। আমি শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে আমার আলোচনা সীমিত রেখেছি। এই কথাগুলো বলার কারণ আগে যা লিখেছি সেটা থেকে আপনারা যেন ভুল না বোঝেন – তারই প্রচেষ্টা।

এবার আশীর্বাদ নিয়ে কিছু বলতে চাই। শুধু বয়সে বড় হলেই আশীর্বাদ করার অধিকার হয় – এটা মনে হয় আমার মত অনেকেই মানবেন না। যে আশীর্বাদ করবে তাকে আশীর্বাদ করার উপযুক্ত হতে হবে। আত্মবিশ্লেষণ না করে আশীর্বাদ করা বিরাট একটা আত্মগরিমা প্রকাশের রূপ ছাড়া কিছু নয় বলে আমার মনে হয় না। অনেকে যে ভাবে আশীর্বাদ করে যে মনে হয় তাদের মাথার চারিদিকে একটা জ্যোতির্বলয় আছে। যাকে আশীর্বাদ করছে তার থেকে নিজেকে অনেক বড় মনে ধরে নেওয়া হচ্ছে না কি? ক্ষমার চাওয়া তে আমার আপত্তি নেই – আপত্তি ক্ষমা করে উদারতা দেখানোতে । কিন্তু আশীর্বাদ এর বেলা আমার দুটোতেই আপত্তি। যার কাছে আশীর্বাদ চাওয়া হচ্ছে সে আশীর্বাদ করার উপযুক্ত কিনা বিচার না করে সামাজিক নিয়ম হিসাবে আশীর্বাদ চাওয়া একটা তঞ্চকতা। আমি শুধু সেই সব মানুষের কাছেই আশীর্বাদ চাই যাদের আমি আশীর্বাদ করার উপযুক্ত বলে মন থেকে মেনে নিতে পারি। উলটো দিকে আমি কখন কারুকে আশীর্বাদ করি না – আন্তরিক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা জানাই। আমি জানি আমি নিজে আশীর্বাদ করার মত মহান না । আমার মনে হয়, আশীর্বাদকেরা যদি আগে নিজে আরশির সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভিতরটা আন্তরিক ভাবে দেখে যে তাদের সেই যোগ্যতা আছে কিনা এবং তার পরে নিজেকে আশীর্বাদ করার উপযুক্ত মনে হলে তবেই আশীর্বাদ করে – আশীর্বাদ কথাটার প্রকৃত অর্থের প্রতি তাহলে সম্মান জানান হবে।

বিয়ের আসরে বেচারি নববধূকে বহু লোককে প্রণাম করান হয় আর তাদের বলা হয় “আশীর্বাদ কর ওরা যেন সুখে আর শান্তিতে থাকে”। তার মধ্যে এমন অনেকে থাকে যার প্রতি পাত্র পক্ষের বাড়ির কোন শ্রদ্ধা ত নেইই বরং যথেষ্ট অশ্রদ্ধা আছে। এটা যদি সামাজিকতার অঙ্গ হয় , তা হলে তার থেকে দুঃখের কিছু নেই। কেন আমার শুভেচ্ছা না চেয়ে পাইকারি রেটে আশীর্বাদ চাইব – বলতে পারেন?

আশা করি এবার অনেক অনেক অমত পাবো পাঠকদের থেকে। আমি সবজান্তা নই (যদিও লেখাতে সেরকম একটা ভনিতা করার চেষ্টা করি)। আমি জানি আমার মাথাতে অসংখ্য পোকা আর তারা যখন খুব বেশী নড়াচড়া করে তখন আমার হাত দিয়ে এরকম লেখা বের হয়। আলোচনা থেকে নিজের অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস ঠিক করা সম্ভব। তাই অনেক আশা নিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে আপনাদের মতামতের দিকে। আশা করি নিরাশ করবেন না।

বিজন বন্দ্যোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।