প্রেম
ও দাম্পত্য – কিছু প্রশ্ন – কিছু চুটকি
“আমার ভাণ্ডার
আছে ভরে, তোমা সবাকার ঘরে ঘরে” র ভরসাতে অন্যর কথা দিয়ে শুরু
করে আগের সংখ্যাতে Generation gap নিয়ে জ্ঞান দেবার পরেও পচা
টম্যাটো বৃষ্টি না হওয়াতে আরও সাহসী হয়ে উঠেছি। তাই এবার আর
একটা আলোচনা শুরু করতে চেষ্টা করছি – বিষয় প্রেম ও দাম্পত্য।
সাথে খাবার পরে desert এর মত শেষে দাম্পত্য জীবনের কিছু চুটকি।
এবারও আপানদের বিশেষ অনুরোধ, এই আলোচনাতে যোগ দিতে।
১) প্রেম কথাটার অর্থ আমার
কাছে খুবই অস্বচ্ছ। এক দিকে “জীবে প্রেম করে যেই জন , সেই জন
সেবিছে ঈশ্বর” আর এক দিকে নারী আর পুরুষের প্রেম যেখানে শরীর
বিশেষ ভাবে উপস্থিত। সেটা খারাপ – এটা আমি একেবারেই বলছি না
– কিন্তু প্রেম কে যে স্বর্গীয় বলার চেষ্টা করি আমরা – তার সাথে
ঠিক মেলে না। আমাদের মত সাধারণ লোকের কাছে ২য় অর্থ টাই প্রথমে
মনে আসে। সত্যি বলতে “শেষের কবিতা"র মত প্রেম এর সাথে বকুল
ফুলের সুগন্ধ কম ই পাই – বেশির ভাগ সময়ই সাথে একটু আঁশটে গন্ধও
নাকে আসে। এখানে “আঁশটে” কথাটার মানে দুর্গন্ধ না – তা হলে আমিষের
সংখ্যা পৃথিবীতে এত বেশী হত না – আশা করি সেটা পাঠকরা বুঝবেন।
এ ছাড়া আর এক প্রকারের
প্রেম আছে – যেখানে দর্শনেই কুপকাত। রবীন্দ্রনাথ এর লেখা নিয়ে
কিছু বলা ধৃষ্টতা , তবু সাহস করে বলি – শ্যামা-তে বজ্রসেনকে
দেখে শ্যামার প্রেমকে আমার ইংরাজি তে crush বা বাংলাতে ঘোর এমনকি
কাম বলতে ইচ্ছা করে। একটা মানুষকে না চিনে – না জেনে তাকে নিয়ে
পাগল হলে সেটাকে প্রেম বলে আমি মানতে পারি না। তাই “প্রেমেরও
জোয়ারে ভাসাব দোঁহারে”-টা আমার কাছে প্রেমের অপমান। প্রেমে শরীর
থাকুক – কিন্তু মন যদি একেবারেই না থাকে তবে আমার তাকে প্রেম
বলে মানতে আপত্তি আছে।
২) প্রেম করে বিয়ে করা
কথাটা খুব বেশি বাজারে চলে। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করলেই আমরা
তাকে প্রেম করে বিয়ে করা বলি। এটা আমার ঠিক মনে হয় না। চলতি
অর্থে আমার এক বন্ধু প্রেম করে বিয়ে করেছে। কিন্তু আমি নিজে
মনে করি এটা negotiated marriage, শুধু selection-টা বন্ধু নিজে
করেছে ।একটু বুঝিয়ে বলি। এই বন্ধু যখন বিয়ের কথা ভাবল, তখন তার
মনে হল যে সব মেয়েদের সে দেখেছে বা চেনে , তাদের কথা প্রথমে
ভাববে। তার একটাই জরুরী চাহিদা ছিল। সে চেয়েছিল এমন এক মেয়ে
যে হবে Cactus flower-এর মত – যে ড্রয়িং রুম-এ আর মরুভুমিতে
একই ভাবে ফুটবে। তার চেনাদের মধ্যে যাকে এই গোত্রে পড়ে বলে মনে
হয়েছিলো, তাকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। রাজি করাতে একটু সময়
লেগেছিল – কারণটা পরে বলছি। শেষ অবধি অবশ্য রাজি হয়েছিল আর বিয়েটাও
হয়েছিলো। কিন্তু তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবার আগে তার সাথে
আমার বন্ধুর কোন প্রেম ছিল না। একে কি প্রেম করে বিয়ে বলা চলে
? আমার তো মনে হয় না। আমি সত্যি বুঝি না প্রেম করে বিয়ে করাটা
ঠিক কি – আপনারা আলোকপাত
করলে বাধিত হব।
আলোচনাটা এবার একটু ভারি
হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাকে যেটা বেশী মানায়ে – সেই রকম কিছু হাল্কা
কথা লিখছি। এগুলো কিছুটা কল্পনা – কিছুটা সত্যি। পাত্র আমার
সেই বন্ধু – কিন্তু মানহানির মামলাতে পড়তে পারি – এই ভয়ে নিজেকেই
পাত্র বলে দেখাচ্ছি।
ক) আমার এক বন্ধুর মতে
– আমি যে মেয়েকে বিয়ে করেছি তাকে ছাড়া আর কারুকে নিজে পছন্দ
করে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। নিজে পছন্দ করে বিয়ে করার শখ ছিল।
কিন্তু কলেজ লাইফ-এ যেখানেই লাইন দেবার চেষ্টা করতাম – দেখতাম
আমি too late। আমার এই বন্ধু – যার চেহারা বোধহয় শ্যামার বজ্রসেন-এর
মত মেয়েদের চুম্বকের মত টানত – সে আগেই পৌঁছে গেছে। তাই বার
বার নিরাশ হতে হত। আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র নই। তাই এমন মেয়ের
সাথে লাইন দিলাম আর বিয়ে করলাম যেখানে এই বন্ধু কোন ভাবেই আগে
পৌছবে না।
মাউসটা প্রশ্নের ওপরে নিয়ে
আসুন, উত্তর পাবেন।
খ) আমি খুব গর্ব বোধ করি
যখন দেখি আমার চেনা বেশির ভাগ লোক বউ-এর সাথে মাথা নিছু করে
কথা বলে - আর আমি কথা বলি মাথা উঁচু করে।
কারণটা এবার বলি। সত্যি বলতে এই কারণেই আমার বিয়ের প্রস্তাবে
তেনাকে রাজি করাতে সময় লেগেছিল। কথা বলার সময় বউএর মুখের দিকে
তাকানোটাই স্বাভাবিক। আমি শুধু তাই করি – কিন্তু তাতেই আমি মাথা
উঁচু রাখতে পারি।
কারণটা বলি – আমার
বউ আমার থেকে লম্বা।
গ) শুনেছি জয়দেব গীত গোবিন্দতে
লিখেছেন – দেহি পদপল্লবমুদারাম । আমি পড়িনি । শুনেছি যে এটা
নাকি জয়দেব নিজে লিখতে দ্বিধা করেছিলেন – তাই শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং
লিখে দেন।। আমার মত পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোকেরা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে
নিজেই লিখতে পারতেন – বেচারি কেষ্ট ঠাকু্রকে কষ্ট করতে হত না।
যে অভিজ্ঞতার কথা বলছি , নিজের বুকে হাত রাখলে আপনাদের কিছুকে
স্বীকার করতে হবে যে আপনারাও এটা করেছেন।
শীতের শুরুতে ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে অনেক দিনই দেখি – আমি জয়দেব
এর লেখার অনুসরণ করেছি – মানে স্ত্রীর পা মাথা দিয়ে শুয়ে আছি।
কারণ ঠিক পত্নী ভক্তি না (যদিও সত্যি বলতে আমি খুব বউ নেওটা
– বিশেষ করে এই বয়সে)। আমার স্ত্রীর শীত বেশি – আমার কম। শীতের
শুরুতে আমারা দুজন পাখার দিকে মাথা দিয়ে রাতে ঘুমতে যাই । ভোরের
দিকে আধো ঘুমে বউকে একটু আদর করতে ইচ্ছা করে। ঘুমের ঘোরে একটু
জড়িয়ে ধরি – চোখ তখন বন্ধ। ঘুম ভাঙলে দেখি বউ এর পা-তে মাথা
। কারণ হল শীত লাগাতে বউ মাথা কখন পাখার উলটো দিকে করে নিয়েছে
– টেরও পাই নি। সুতরাং ওর পা আমার মাথার দিকে চলে এসেছে - এটা
তারই ফল।
ঘ) আমি অকর্মার ঢেঁকি –
এ অপবাদ বউ এর কাছে অনেক সময় শুনতে হত। সত্যি বলতে আমি এই বিশেষ
ক্ষেত্রে ভারতরত্ন পাবার উপযুক্ত । একটা উদাহারণ দিচ্ছি।
আমি তখন চাকরী করছি কলকাতা থেকে দূরে। বউ আমার আণ্ডা বাচ্চা
নিয়ে কলকাতাতে । শীত শুরু হতে একটা খুব বড় বিপদে পড়লাম। আমার
গরম জামা একটাই । সেটা ধুতে দিয়ে দেখলাম ছোটো ছোটো টুকরো হয়ে
নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে গেল। অনেক চিন্তা করে শেষ অবধি কারনটা মনে
পড়ল। তার আগের শীতের শেষে একবার বউ দু তিন দিনের মেয়াদে আমার
কাছে এল । শীত তখন যাই যাই করছে। তেনার নজর পড়ল আমার গরম জামাটা
ওপর যাবার দিনে। সেটা খুবই নোংরা । তখন যাবার সময় হয়ে এসেছে
– কেচে দেওয়া সম্ভব না। তাই জামাটা সাবান জলে তাড়াতাড়ি ডুবিয়ে
দিয়ে বলে গেল “কিছুটা পরে ওটা ধুয়ে শুকতে দিও please।” বললাম
“চিন্তা করো না।"
বউ কে ট্রেন এ তুলে বাড়ি ফিরে দেখি দুই বন্ধু বিদেশী কারণবারি
নিয়ে আমার পথ চেয়ে দাড়িয়ে আছে। বউ ফিরে যাবার দুঃখে মাত্রাটা
একটু বেশীই হল। তখন গরম জামার কথা মনে রাখা কি সম্ভব – আপনারাইবলুন?
পরের শীতের শুরুতে সেই গরম জামাটাই ধুতে গিয়েছিলাম। মাত্র এক
বছর সাবান জলে থাকলে তার যে এই অবস্থা কবে – কি করে বুঝবো???
শেষে একটা দুঃসংবাদ দি
। আমার এই অত্যাচার চলবে – আপনাদের মেনে নিতে হবে। আজকের মত
আর অত্যাচার করছি না।
আসি।
বিজন
বন্দ্যোপাধ্যায়