প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

আমার জীবনের কিছু টুকরো কথা

৭০ এবার ছুঁলাম । কিন্তু কিছুতেই বুড়ো হতে পারছি না। অনেক সময় শুনতে হয় “বুড়ো বয়েসে ভীমরতি”। কিন্তু দুটো কথা আমাকে বুড়ো হতে দিচ্ছে না। প্রথমটা কার লেখা জানি না । “you are never too old to become young”. দ্বিতীয়টা আমার বিচারে সেরা লেখক সুকুমার রায়ের কথা। একটা বয়েসের পর বয়সটা “কমতির দিকে” ঘুরিয়ে দিতে হয় । তাই আমার ছেলেমানুষি মেনে নিলে তবেই এই লেখাটা পড়বেন। অনেক দিন কলম ধরিনি।তাই এই লেখাটা পাতে দেবার উপযুক্ত কিনা জানি না। তবু চেষ্টা করছি।

সুজন দাশগুপ্তের অবসরে প্রকাশিত “এই তো সেদিন” পড়ে মনে হয়েছিল, আমিও আমার জীবনের কিছু কথা লিখতে পারি। সাহস করে এই বিষয় নিয়ে কলম ধরতে অনেক দিন লেগে গেল কারণ সুজনবাবুর লেখার সাথে এটার তুলনা অনেকটা “সুভাষ বোস আর তক্তাবোশ” এর মতো। তবু লড়ে যাবার চেষ্টা করছি। স্বীকার করে নিচ্ছি – জীবনের সত্যি টুকরো কথাগুলোকে একটু রঙ দিয়ে রাঙিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি ।
আমি আগের মত এটাও bullet point form এ লিখছি কারণ তাতে ভাষার দারিদ্র অনেকটা ঢাকা পরে।

১)আমি এক অতি সাধারণ স্কুল থেকে পাস করেছিলাম – যেখানে first division পাওয়াটাই আশার শেষ সীমা ছিল। যদিও সেখানে অনেক ভাল শিক্ষক ছিলেন আর লেখা পড়াভালই হত। তবু আমাদের কাছে স্কুলের expectation খুবই কম ছিল।
এখন আমি সকলকে বেশ নামি স্কুলে পড়তে বলি শুধু একটাই কারণে – so that they can dream high.
আমাদের ইতিহাসের শিক্ষক সন্মন্ধে একটা গুজব ছিল – তিনি পরীক্ষার খাতার পাতা গুণে নম্বর দিতেন। আমার অনেকেই এর সুযোগ নিতাম। আমার মাথাতে আর একটা বদ বুদ্ধি খেলে গেল। তখন আমি ক্লাস ৮-এ পড়ি। মনে হল বিখ্যাত কোন বিদেশী ঐতিহাসিক এর নাম দিয়ে কিছু quotation দিলে স্যার কিরকম নম্বর দেবেন দেখব। তাই Vincent Smith এর কোন লেখা না পড়ে – শুধু তার নাম জেনে বেশী নম্বর পাবার একটা সস্তা রাস্তা চেষ্টা করলাম – কারণ এই শিক্ষকের ইতিহাসের জ্ঞান -এর ব্যাপারে আমার বিশেষ ভক্তি ছিল না – তা ছাড়া সাহেবদের নাম শুনলে তার একটা গদগদ ভাব হয় আমরা জানতাম। পরীক্ষাতে লেখার মাঝে জুড়ে দিলাম – “তাই তো Vincent Smith বলিয়াছেন” এর পরে নিজের ইংরাজিতে কিছু লাইন লাগিয়ে দিলাম। দারুণ ফল পেলাম – শুধু সব থেকে বেশী নম্বরই পেলাম না – আমার লেখার কথা তিনি সকলকে – এমনকি প্রধান শিক্ষককেও বল্লেন।

২) কোন এক গ্রহের কল্যাণে বা মায়ের পরানো পাথর বসান আংটির গুণে এই স্কুল থেকে school final পাস করে presidency college এ I.Sc পড়তে সুযোগ পেয়ে গেলাম। প্রথম কিছু দিন নিজেকে অন্য ছাত্রদের থেকে দূরে রাখতাম – মনে হত ওরা অন্য এক জগতের লোক – আমি ফাঁকি দিয়ে সেই দলে ঢুকে গেছি। তারা অনেকে school final এ প্রথম ১০ জনের মধ্যে stand করা তারকা।
জীবনে দূর থেকে অনেক কিছুই অনেক বড় করে দেখায় – কাছে এলে অত বড় থাকে না। শুনেছি নকশাল আমলে একজনের পরিচিত বন্ধু সপরিবারে দিল্লী থেকে কলকাতা তে আসছিল। ট্রেন সন্ধ্যার পরে পৌঁছবে – তাই তারা থুব চিন্তাতে ছিল। অনেক বার করে বলে দিয়েছিল station এ কেউ যেন নিশ্চয় তাদের নিতে আসে। পৌঁছে দেখল – তার বন্ধুর ১৫ বছরের মেয়ে তাদের নিতে এসেছ। এর পর কলকাতাতে ঘুরে বেড়াতে তাদের আর কোন দ্বিধা হয় নি।
ওই কথাকে মনে রেখে college এর অঙ্কের class e একদিন একটা দুঃসাহসী কাজ করে ফেললাম। Professor একটা বেশ শক্ত অঙ্ক দিয়ে সেটা করার জন্যে ৫ জনকে হাত তুলতে বল্লেন। আমার কি হল জানি না, ৪ জন stand করা তারকার সাথে আমিও হাত তুললাম । ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হল। সময় শেষ হলে দেখলাম, আমি ও ১ জন তারকা সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছি । এর পর থেকে কোনোদিন কলেজে inferiority complex এ ভুগিনি।

৩) আবোলতাবোল-এ আছে গঙ্গারামের “১৯ টি বার ম্যাট্রিক“ দেবার কথা। আমি তা করিনি – কিন্তু ১৩ বার চাকরি বদল করেছি । তাই মনে হয় নিজেকে গঙ্গারামের ছোট ভাই বলে দাবী করতে পারি। প্রতি বার চাকরি বদলের পরে নতুন বস আর নতুন সহকর্মী । আমার কাজ ছিল project planning অর্থাৎ project এর কোন কাজ কার পরে বা কার আগে করলে কম সময় project শেষ করা যাবে – তার প্ল্যান। করাটা যত না কঠিন, management কে সেটা মানানো আসল সমস্যা । ম্যানেজমেন্ট-এর nature বুজতে পারলে এটা কিছুটা সহজ হয় । তার এক রাস্তা বার করলাম।
নতুন কাজে যোগ দেবার পরে ম্যানেজমেন্ট দের ঘরে গিয়ে নিজেকে introduce করতে হয় আর তাদের সাথে আলাপ করতে হয় । আমি এই আলাপের সময় তাদের ঘরে একটা সস্তা ball pen ফেলে আসতাম। পরে তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইতাম, আমি কোন পেন ফেলে গেছি কিনা। ৩ রকম reaction আর উত্তর পেতাম।
ক) কিছু না দেখেই বলতেন – “না আমার ঘরে ফেলে যাও নি।“
খ) নিজের কাজ বন্ধ করে আমার পেন খুজতে শুরু করতেন
গ) বলতেন – আমি এখন একটা কাজ করছি – একটু পরে check করে তোমাকে জানাব।
এতে আমার লোক চেনার কাজ হয়ে যেত ।
ক) এই লোকটি নিজের court এ কথনই বল রাখতে দেন না। বল নিজের কোর্ট এ রেখে একে manage করতে হবে
খ) ইনি “LIFO” (last in first out) পদ্ধতিতে চলেন। তাড়াতাড়ি কোন decision meeting চাইতে হলে, সবার শেষে problem টা বলতে হবে।
গ) ইনি matured . ঠিক মত logical যুক্তি দিয়ে একে convince করতে হবে।
অনেক উপকার পেয়েছি এই experiment থেকে ।

৪) অনেক নামকরা company তে group discussion হল selection process এর একটা অঙ্গ। আমি একবার আমার এক বন্ধুর পরামর্শে বিশেষ একটা technique follow করে চাকরী পেয়েছিলাম। group discussion এর বিষয় আমার প্রায় কিছুই জানা ছিল না। তাই বন্ধুর পরামর্শ মত আমি চুপ করে ছিলাম প্রথম দিকে। আমাদের পলিটিকাল leader দের মত এই আলোচনতেও সবাই এক সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিল – কারো কথাই panel এর member রা ঠিক শুনতে পারছিল না – বিশেষ করে কোনটা কার কথা সেটা বোঝা দুস্কর হয়ে উঠেছিল। আমি এই সুযোগে ভাল point গুলো note করছিলাম। আলোচনার সময় যখন মাত্র ৫-৬ মিনিট বাকি তখন আমি মাঠে নাবলাম । panel এর চেয়ারম্যান কে বললাম “ আমি কারুকে কোন বাধা না দিয়ে এতক্ষণ চুপ করে ছিলাম। can I now request you for uninterrupted last 5 mins.” চেয়ারম্যান সকলকে বললেন “This person has shown wonderful patience and did not interrupt you so long. Please let him have last 5 mins as he requested”. আমি এবার তাদের বলা আর আমার নোট করা ভাল point গুলো sum up করলাম । এটাই ছিল আমার বন্ধুর পরামর্শ । কাজ হল – চাকরীটা আমিই পেলাম।

মধুরেন সমাপয়েত ।

২৯ এ মার্চ , আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সে দিন একটা আলোচনা চক্রে গিয়ে নানা বক্তা নারীর নানান রূপের এর কথা খুব গম্ভীর স্বরে আলোচনা করলেন। আমার মত লোকের কাছে হাওয়াটা খুব ভারী হয়ে উঠল। তাই আমাকে যখন বলতে বলা হল – তখন আমি বিশেষ এক শ্রেণীর নারীদের একটা নতুন রূপের এই কথা বললাম।
“আমি সেই সব মায়ের কথা বলছি যাদের পুত্র ও কন্যা দুই আছে এবং তারা সব বিবাহিত। Einstein “theory of relativity” আমার মাথার অনেক ওপর দিয়ে যায়ে। সব কিছুই যে relative আর nothing is absolute এটা কিছুতেই বুঝতে পারিনি। কিন্তু একটা ছড়া পড়ে বুজলাম , এই শ্রেণীর নারীরা theory of relativity না পড়েই তার সার মর্ম বুজতে পেরেছেন। ছড়াটা এই রকম।

“জামাই ওঠেন জামাই বসেন মেয়ের কথায়ে
জামাই বড় লক্ষ্মী
বউয়ের কথা শুনলে পরে
তখনই হয় ঝক্কি
ছেলে বউয়ের ভেড়া
জামাই কিন্তু খুব তেজস্বী
হীরের টুকরা হীরা“
নারীর এই রূপের কথা কেঊ বলে না কেন?????

আজ আর না – থামছি ।

বিজন বন্দ্যোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।