উত্তর
আমেরিকার বাঙালী-প্রকাশিত সাময়িক পত্রাদি: কুত্র গচ্ছন্তি?
পঞ্চাশ বছর আগে প্রথম তরঙ্গটিতে
যে প্রবাসী বাঙালীরা উত্তর আমেরিকায় এসে পৌঁছলেন, তাঁরা সঙ্গে
করে নিয়ে এলেন তাঁদের সুখাদ্য-, সুসঙ্গ,- সুচারু সঙ্গীত- ও চলচ্চিত্র-
এবং সুখপাঠ্য বই- ও পত্রিকা- প্রীতি। যাঁরা আর্থিক স্বাচ্ছল্য
কিংবা বড়ো শহর বা শহরতলীতে আশ্রয় পেলেন না, উপকরণের অভাবে তাঁদের
মাছের ঝাল-ঝোল-চচ্চড়ি খাবার সাধ আশু বিসর্জন দিতে হোলো। সদ্য
প্রকাশিত বাংলা ছবি, রেকর্ড, খবরের কাগজ, বই বা পত্রিকাও তখন
তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। নতুন স্বদেশে প্রবাসজীবন শুরু করার
প্রভাতকালে ফেলে আসা এই সব আনন্দের জন্য তাঁদের আকিঞ্চন তাঁরা
মেটাতে বাধ্য হলেন যে সহজলভ্য এবং সাধ্যের নাগালে থাকা জিনিষটি
দিয়ে, সেটি বন্ধুবর্গের সৎসঙ্গ অর্থাৎ আড্ডা। উত্তর আমেরিকায়
বাঙালীর এই ঐতিহ্য সযত্নরোপিত হয়ে জন্ম নিলো কিছুসংখ্যক "সংস্কৃতি
সঙ্ঘ"। এইসব সঙ্ঘ বা ক্লাবগুলি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য
ছিলো এই প্রবাসী সমাজগুলির যা সাধ্য তারই প্রয়োগে বাঙালীর সংস্কৃতিটিকে
এদেশে জিইয়ে রাখা-- হোক সে কবিতাপাঠ, সঙ্গীত শিক্ষা, গ্রীষ্মের
পিকনিক এমন কী একাঙ্ক নাটক পরিবেশন।
উত্তর আমেরিকায় বাঙালীদের
এই সব গোষ্ঠীর যখন কলেবর বৃদ্ধি হতে আরম্ভ করলো, তখন তাঁরা বারোয়ারী
পূজা, যথা সরস্বতী, দুর্গা বা কালী পূজা করতে চেষ্টিত হলেন।
"দেশে"র পূজায় যেমনটি চল তেমনটি পূজা পত্রিকা বা স্মরণী
প্রকাশটাও চালু হোলো। তখন গোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাহিত্যপ্রীতির
বীজ বুনতে শুরু করাই ছিলো এই পত্রিকাগুলির প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য,
সে কারণে বাংলা আর ইংরেজীতে সৃজনশীল লেখা সব ছাপা হোতো। আজ উত্তর
আমেরিকার প্রায় সব বাঙালী গোষ্ঠীই একটা না একটা পূজা পত্রিকা
ছাপেন। এর মধ্যে কিছু পত্রিকাতে উত্কৃষ্ট সাহিত্যের নমুনা
পাওয়া যায়, কিছু আবার অর্থ সংগ্রহের যান মাত্র। কালে কালে কিছু
কিছু জায়গার বাঙালী সংস্থা বিবর্তনের এমন জায়গায় পৌঁছে গেলেন
যেখানে তাঁরা নিছক পূজা পত্রিকা ছাড়িয়ে সত্যকারের সাহিত্য পত্রিকা
প্রকাশ করতে পারেন।
আমার মনে হোলো যে বাঙালী
অভিবাসী সমাজ কী করে বছরের পর বছর বারবার চেষ্টা করে গেছেন সাহিত্য
পত্রিকা ও পূজা পত্রিকার মাধ্যমে বাঙালীর অধ্যয়ন্স্পৃহা ও রচনাপ্রীতি
বজায় রাখতে, তার এক সংক্ষিপ্তসার পড়তে অবসর.নেটের পাঠকবর্গ পছন্দ
করতে পারেন। আমি ঐতিহাসিক নই কাজেই পাণ্ডিত্যে ভরা সম্পূর্ণ
বিবরণ দেবার চেষ্টা করবো না। কিন্তু কিছু পুরনো (এবং কিছু চালু)
প্রচেষ্টার কথা আমি লিখতে চাই কেননা সেগুলি উত্তর আমেরিকার অভিবাসী
সমাজের বিবর্তনের বিশেষ অঙ্গ। এছাড়াও আমি বর্তমান সব বাংলা প্রকাশনের
আদ্যোপান্ত বিবরণও দেবো না, কেননা আমি যেখানকার বাসিন্দা, নিউ
জার্সি প্রদেশ, তার বাইরে বহু প্রচেষ্টার সম্বন্ধে আমি বিশেষ
ওয়াকিবহাল নই।
দুটো প্রাসঙ্গিক কথা এইখানে
বলে রাখা যাক। ১) বেশীর ভাগ "বাংলা" পত্রিকাই বস্তুত
দুই ভাষার (বাংলা এবং ইংরেজী) পত্রিকা কেননা এ পত্রিকাগুলির
মুখ্য উদ্দেশ্যই হোলো সমাজের লেখকদের সাহিত্যসৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ
করা, তা যে ভাষাতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করুন না কেন। ২)
আমি উত্তর অমেরিকার বাংলাদেশী সমাজ প্রকাশিত কোনো প্রকাশনেরই
উল্লেখ করলাম না। আমার আশা রইলো যে এখানকার বৃহত্ এবং প্রাণোচ্ছল
বাংলাদেশী সমাজের সাহিত্যকৃতি নিয়ে বলবার জন্য ভবিষ্যতে কয়েকজন
লেখক এগিয়ে আসবেন।
নিউজার্সিতে অনেক বাঙালী
থাকেন আর নিউ জার্সির সঙ্গে আমার পরিচয়ও বেশী, কাজেই সেখানকার
বাঙালী সংস্থাগুলিকে দিযেই শুরু করি। ১৯৭০ সালে সেখানে নিউ জার্সি
পুজা অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম। জন্মের কিছু পরেই এই সঙ্ঘটি "পাঠশালা"
নামের এক হাতে-লেখা পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন আর সেই সঙ্গে
ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখাবার একটা স্কুলও চালু হয়। বছর
দুই পরে পত্রিকাটি উঠে যায় কিন্তু তারই ভিত্তির ওপর এক বৃহত্তর
প্রচেষ্টায় ব্রতী হন কল্লোল অফ নিউ জার্সি। কল্লোল সংস্থা "কল্লোল
সাহিত্য পত্রিকা" প্রকাশ করতে শুরু করেন ১৯৭৬ সালে। গোড়ায়
কিছুদিন কল্লোল সাহিত্য পত্রিকার (এখন কল্লোল পত্রিকা) রূপ "পাঠশালা"
পত্রিকার মতোই হাতে-লেখা। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে কল্লোলের এক
সদস্যের তৈরী বাংলা ফণ্ট ব্যবহার করে পত্রিকাটির পুরো ছাপার
অক্ষরে প্রকাশ। তখন কল্লোলের সভ্যরা পাড়ার "স্টেপল্স্
" দোকানে গিয়ে মূল পাতাগুলি কপি করতেন, তারপর সেই সব কপির
পাতা হাতে স্টেপ্ল্ করে হোতো পত্রিকার বাঁধাই। আস্তে আস্তে
এই পত্রিকা একটি পুরোপুরি সাহিত্য পত্রিকার রূপ নিয়ে নিউ জার্সি
এবং অন্যান্য জায়গা থেকে পাঠক ও লেখকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে
সক্ষম হয়। নিউ জার্সির আর একটি বাঙালী সংস্থা আনন্দ মন্দির,
তাঁরাও ২০০৫ সালে কল্লোল সাহিত্য পত্রিকা ধাঁচের একটি পত্রিকা
প্রকাশ করতে আরম্ভ করেন-- বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষার পত্রিকা,
নাম "আনন্দলিপি"। কল্লোল পত্রিকার মতো এটিও নিউ জার্সি
ও তার বাইরে এক অনুরাগী পাঠকগোষ্ঠী তৈরী করে নিতে পেরেছে। এগুলি,
এবং এগুলির মতোই উত্তর আমেরিকায় বাঙালী-প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকাগুলি,
সবেরই প্রকাশ মোটামুটি বার্ষিক হিসাবে।
গোড়ার দিকে আবার ফিরে গেলে
দেখি যে শুরুতে এই বাঙালী অভিবাসীদের জীবনে এক বিশাল শূন্যতার
কারণ ছিলো দেশ থেকে হাতে গরম খবরের অভাব। তখন কোনো ইন্টারনেট
ছিলো না, দেশে ফোন করাটাও ছিলো না সহজসাধ্য। এই ফাঁকটি ভরাট
করার জন্য এখানকার বাঙালী সংস্থাগুলি তখন "খবরের কাগজ",--যথা
"সংবাদ বিচিত্রা" বা "উদয়ন"-- প্রকাশ করতে
শুরু করলেন।
১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ কর্তৃক বাংলা পত্রপত্রিকার
থেকে খবর কেটে-সেঁটে "সংবাদ বিচিত্রা"র প্রকাশ, উদ্দেশ্য
এখানকার বাঙালীদের দেশের খবরের ক্ষুধা নিবারণ। এই বিন্যাসটি
আজ অবধি মোটামুটি অপরিবর্তিতই আছে, যদিও সাম্প্রতিক কালে কিছু
নতুন উপাদানও যোগ করা হয়েছে-- যথা "সংবাদ বিচিত্রা"র
জন্যই বিশেষ করে লেখা রচনাসমূহ। এটি বর্তমানে পাক্ষিক হিসাবে
প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা
মাসিক হিসাবে প্রকাশ করতে শুরু করেন আর একটি দীর্ঘজীবী পত্রিকা,
নাম "উদয়ন", বিন্যাস ওই "সংবাদ বিচিত্রা"রই
মতো। উদয়ন পত্রিকায় খবর থাকে, কিছু মৌলিক রচনাও পাওয়া যায়, আর
থাকে একটি ইংরেজী বিভাগ, সেটি মুখ্যত আমাদের কিশোর ও তরুণদের
জন্য। ২০০৫ সাল থেকে আনন্দ মন্দির প্রকাশিত "আনন্দ সংবাদ
"পুরো ইংরেজীতে গ্রথিত একটি খবরের ত্রৈমাসিক, সেদিক দিয়ে
সংবাদ বিচিত্রা বা উদয়নের থেকে ভিন্ন।
এর থেকে আমাদের পাঠকেরা
মনে করতে পারেন যে উত্তর আমেরিকায় বাঙালীদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা
বেশ বহাল তবিয়তেই চলছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি ঠিক নয়। এই
ছাপাছাপির জগতে এখন অনেক টানা পোড়েন চলেছে, ভবিষ্যতে কী হবে
তা নির্ভর করবে এদের মধ্যে যে টানটি প্রবল হবে তারই ওপরে।
উত্তর
আমেরিকার বাংলা সাহিত্যপত্রিকাগুলি কিন্তু অনেক উত্থানপতনের
সম্মুখীন হয়েছে, পূজা পত্রিকাগুলোয় যা হয় নি। বহু বছর বেশ ভালোভাবে
চলার পর বেশ কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশ হঠাত্ বন্ধ হয়ে গেছে--
হয় অগ্রণী উদ্যোক্তারা বদলি হয়ে ( বা পরলোকে) গেছেন বলে বা অর্থানুকূল্যের
উত্স শুকিয়ে যাবার কারণে। এগুলির মধ্যে "অতলান্তিক",
"আন্তরিক" ও "উত্সব"-এর কথা প্রথম মনে
আসে। পঁয়ত্রিশ বছর একনাগাড়ে প্রকাশিত হবার পর সম্প্রতি অকস্মাত্
কল্লোল সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশে একটি ছেদ পড়েছে। (আমরা আশা
করছি যে শীঘ্রই আবার নতুন উত্সাহ ও পূর্ণ উদ্যমে এটির পুনর্প্রকাশের
কাজ শুরু হবে)। ১৯৮৫ সাল থেকে ক্যানাডায় প্রকাশিত "আমরা"
পত্রিকা সম্প্রতি ছাপার বদলে ওয়েবজিন হিসাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
আনন্দিত হবার খবর এই যে গত বছর থেকে ওহায়োর সিনসিনাটি শহর থেকে
"দুকূল " নামে একটি নতুন পত্রিকা চালু হয়েছে, বিষয়ের
উত্কর্ষে আর গঠনসৌষ্ঠবে তা এর মধ্যেই প্রশংসা পাচ্ছে।
জল এতো ঘোলা হবার একটি
কারণ হোলো গত পনেরো বছর ধরে আর একটি প্রকাশমাধ্যমের দ্রুত প্রসার--
সেটি হোলো ইন্টারনেট। এই নতুন মাধ্যমটি চিরাচরিত কাগজে ছাপানো
মাধ্যমের প্রতিযোগী, আবার সহযোগীও বটে। ইন্টারনেটে পত্রিকা
প্রকাশ সস্তা এবং পদ্ধতি সহজতর, এ কারণে আজকাল বহু লোক এবং সংস্থা
এই পদ্ধতি পছন্দ করেন। এছাড়া ইন্টারনেটের কৃপায় আর এক সম্পূর্ণ
নতুন প্রকাশরীতিরও সৃষ্টি হয়েছে,-- তার নাম ওয়েব-লগ, ব্লগ।
উত্তর
আমেরিকার বাঙালীরা কি বছর বছর ওয়েব-ভিত্তিক পত্রিকার সংখ্যা
বাড়তির দিকে আর ছাপা পত্রিকার সংখ্যা কমতির দিকে দেখবেন? হ্যাঁ,
তাই তো মনে হয়। আমাদের কোনো ছাপা পত্রিকাই তো না প্রচারে, না
বিস্তারে সারা আমেরিকা ছুঁতে পারে বলে মনে হয়। এসব পত্রিকার
প্রচার সাধারণত প্রকাশক সংস্থার সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, প্রসূতি
প্রদেশের গণ্ডী তারা খুব কমই ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ওয়েব-ভিত্তিক
প্রকাশনার প্রচারে কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই, এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই
উত্সাহী পাঠক ও লেখকবৃন্দ বিনামূল্যে সেগুলি ছুঁতে পারেন।
খুসীর খবর এই যে বেশ কয়েকটি ওয়েব-ভিত্তিক বাংলা পত্রিকা এর মধ্যেই
সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে বহু অনুরাগী সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে
এধরণের পত্রিকার সংখ্যা আরো বাড়বে আশা করা যায়।
উত্তর আমেরিকায় বাংলায়
প্রকাশিত ওয়েব-ভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকার, ওয়েবজিন, তালিকা দেখলে
বোধহয় parabaas.com-ই (বানান লক্ষ্যণীয়) সবচেয়ে পুরনো। ১৯৯৭
সালে পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ এবং এখন পর্যন্ত পঞ্চাশটি নতুন
সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে-- প্রতিটি সংখ্যাতেই পাওয়া যায় সাহিত্যকৃতির
এক পুরো ভোজ। এছাড়া খ্যাতনামা বাঙালী লেখকদের লেখার ইংরেজী অনুবাদও
এখানে পাওয়া যায়, এবং একটি অনলাইন বইয়ের দোকানও আছে। শুধু উত্তর
আমেরিকাই নয়, ভারতবর্ষ এবং পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকেও পাঠক
ও লেখক গোষ্ঠী এই পূর্ণবিকশিত ওয়েবজিনটিতে এসে থাকেন।
parabaas.com যদি প্রবীণতম
ওয়েবজিন হয় তাহলে সবচেয়ে ডাকাবুকো প্রকাশন হোলো abasar.net ।
২০০২ সালে প্রথম প্রকাশ (যদিও প্রথম উদ্যোগের খবর ২০০০ সালে
বলে জানা যাচ্ছে), এর লক্ষ্যটি কিন্তু সচরাচর যেমনটি দেখা যায়
তার বহির্ভূত : বাঙালী পাঠকদের কাছে বিশ্বকোষ মাপের তত্ত্ব ও
তথ্যের সম্ভার পৌঁছে দেওয়া-- সবই পুরোপুরি বাংলা ভাষায়। উদাহরণ,
এই সাইটটিতে পাওয়া যাচ্ছে কোলকাতা ও ঢাকা শহর সম্পর্কে প্রয়োজনীয
তথ্য, ভারত ও বাংলাদেশে সদ্যোঘটিত সংবাদের লিঙ্ক, বিশ্রাম ও
বিনোদন, আইন ও প্রশাসন, সমাজ ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ
ও নারী সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে রচনা বা লিঙ্ক। এই ওয়েবসাইট
থেকে সরাসরি অনেক প্রয়োজনীয় এবং বিশিষ্ট অনলাইন পৃষ্ঠায় যাওয়া
যায়, যথা gitabitan.net -- সব রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিধিতে বহু
টিকা এবং অজানা তথ্য সম্বলিত এক রত্নভাণ্ডার!
বাঙালী অভিবাসী সমাজের
সাহিত্যানুরাগীদের ছুপে রুস্তম বলা যায় যাঁদের, তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্র
ও ক্যানাডার লেখকগোষ্ঠী, writers' groups। শিকাগো অঞ্চলের "উন্মেষ"
আর বৃহত্ বস্টনের "লেখনী" হোলো এমনই দুই গোষ্ঠী।
এঁদের আলোচনাসভাগুলি ডাকা হয় সাধারণত মাসে একবার, নতুন এবং প্রতিষ্ঠিত
লেখকদের রচনা পাঠের সুযোগ করে দেবার উদ্দেশ্যে। প্রতিটি সভায়
অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককেই তাঁদের অন্তত একটি অধুনাতম রচনা পাঠ
করতে হয়। তারপর সেই রচনা নিয়ে এক সৌহার্দ্যময় পরিবেশে খোলাখুলি
আলোচনা হয়, এসব সভার সাফল্যের মূল এখানেই। এবং এই সাহিত্যগতপ্রাণ
বাঙালীদের প্রচেষ্টার সাফল্যের ওপরেই যে উত্তর আমেরিকার বাঙালীদের
সাহিত্যসৃষ্টি ও সাহিত্যচর্চার ভবিষ্যত্ নির্ভর করছে, একথা
বলা যেতে পারে। চিন্তার কথা এই যে এখনও চালু আছে, এমন লেখকগোষ্ঠীর
সংখ্যা মুষ্টিমেয়।
উত্তর আমেরিকার বাঙালীদের
সাহিত্য পত্রিকার ভবিষ্যত্ নিয়ে যে দুশ্চিন্তার কারণ আছে.
আমাকে একথা মানতেই হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে ছাপা পত্রিকাসমূহের
উত্তরোত্তর শ্রীবর্ধনের বিরুদ্ধে অনেকগুলি বৈরী শক্তি কাজ করে
চলেছে। পত্রিকা ছাপা এবং বিতরণের খরচ জোগাতে আগ্রহী লেখক, পাঠক
ও পৃষ্ঠপোষকের সংখ্যা স্বল্প থেকে স্বল্পতর হয়ে যাচ্ছে। বাংলা
সাময়িক পত্রপত্রিকা চালাবার সাধ বা সাধ্য কোনোটাই আমাদের দ্বিতীয়
প্রজন্মের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। যদিও প্রায় সব অভিবাসীই ঝুম্পা
লাহিড়ী, ভারতী মুখার্জি বা চিত্রা দিবাকরুনির সাহিত্যিক ও বাণিজ্যিক
সাফল্যে প্রভূত গর্ব বোধ করি, এঁরা কিন্তু আমাদের গরীব পত্রপত্রিকায়
রচনা দিয়ে আমাদের গৌরবান্বিত করেন নি। এঁদের চেয়ে কম যশের অথচ
যথেষ্ট প্রতিভাবান যেসব অভিবাসী বাঙালী লেখকেরা আছেন তাঁরা উত্তর
আমেরিকার পূজা- বা সাহিত্য-পত্রিকায় লেখা প্রকাশের থেকে কোলকাতার
পত্রপত্রিকায় রচনা প্রকাশ করে বেশী খুসী থাকেন। এরকম অন্ধকার
পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান ভাবে জনপ্রিয় ওয়েবজিন বা ব্লগগুলি কিছু
আশার আলোক ছড়াতে পেরেছে। এই আধুনিক, সহজলভ্য, সহজবোধ্য বৈদ্যুতিন
প্রকাশনাগুলির কাছ থেকে পাঠক ও লেখকরা যা চান, যথা প্রয়োগের
সুবিধা, বিতরণের দ্রুততা, ব্যাপ্তি এবং কম খরচ, সবই পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ওয়েব-ভিত্তিক সাময়িক পত্রাদি বা অন্যান্য
তথ্যসমাহার যথেষ্ট ও দীর্ঘজীবী অনুরাগীগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারবে
কিনা সেটি এখনো প্রমাণসাপেক্ষ।
দেবজ্যোতি
চট্টোপাধ্যায়
(সুমিত
রায়ের সৌজন্যে)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)