বার্ধক্য
কাউকে ক্ষমা করে না
সুচিত্রা
সেন তাঁর অভিনেত্রীজীবনের শীর্ষ থেকে নামার মুখে রূপালী পর্দা
থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর অগুনতি ভক্তদের তাঁকে আবার দেখার ইচ্ছে
থাকলেও ক্যামেরায় তিনি আর ধরা দেন নি। সাংবাদিক আর ফটোগ্রাফারদের
বহু বছর ধরে সযত্নে এড়িয়ে চলেছেন।
আমাদের অনেকের
মনে, সুচিত্রা সেনের সত্তর দশকে যে চেহারা ছিল, সেটাই রয়ে গেছে।
সত্তর দশকের পরেও কিছু ছবি তিনি করেছিলেন (যেমন, প্রণয়পাশা,
প্রিয়বান্ধবী, ইত্যাদি)। তখন তাঁর চেহারার জৌলুস কমতে শুরু করেছে।
ছবিগুলি জনপ্রিয় হয় নি। তাঁর সে সময়ের চেহারাও আমরা মনে রাখি
নি।
মহারানী গায়েত্রীদেবীকে
কেউ কেউ বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দরী বলে আখ্যা
দিয়েছেন। কি ভাবে সেটার বিচার হয়েছে – সেটা অবশ্য এই লেখকের
অজ্ঞাত। তবে যৌবনকালে তিনি নিঃসন্দেহে সুন্দরী ছিলেন। সেই গায়েত্রীদেবীর
বৃদ্ধবয়সের ছবি আমাদের পাড়ার আর দশজন বুড়ি পিসিমাসির মতই।
শোনা যায়
বিখ্যাত চিত্রপরিচালক গুরু দত্ত নাকি ওঁর ছবির নায়িকা ওয়াহীদা
রহমানের প্রেমে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ওয়াহীদা রহমানকে ছবির
পর্দায় যাতে আরও মোহময় দেখায় তারজন্য ক্যামেরার লেন্সে একবার
ভেজলিন ব্যবহার করেছিলেন। এসবের সত্যতা যাচাই করা কঠিন। তবে
ভেজলিন ব্যবহারের কথা যদি সত্যি হয় - মনে হয় তার খুব একটা দরকার
ছিলো না, পরিস্কার লেন্সেই ওয়াহীদা ছিলেন অপরূপ সুন্দরী। এখন
কোনও লেন্সেই সেই সৌন্দর্য ফেরৎ পাওয়া যাবে না।
আরেকজন বিখ্যাত সুন্দরী
ছিলেন হিন্দির ছবির জগতে, তিনি হলেন লীলা নাইডু। মা ছিলেন একজন
ফ্রেঞ্চ মহিলা, বাবা ছিলেন নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের একজন বড় গবেষক।
১৯৫৪ সালে মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন। সেই বছরই Vogue ম্যাগাজিন ওঁকে
বিশ্বের প্রথম দশজন সুন্দরীর মধ্যে একজন বলে ঘোষণা করেছিল। লীলা
নাইডু শেষ জীবনে একাকিত্বের মধ্যে কাটান। খুব কম লোকের সঙ্গেই
যোগাযোগ রেখেছিলেন।
১৯৬১ সালে নাসিমবানুর কন্যা
সায়রাবানু যখন শাম্মিকাপুরের বিপরীতে ‘জংলি’ ছবিতে প্রথম নামেন,
তখন যুবসমাজে একটা আলোড়ন হয়েছিল। সে সময়ে বিদেশ খুব একটা কাছের
জায়গা ছিল না। তাই সায়রাবানু সুইৎজারল্যাণ্ডে পড়াশুনো (?) করতে
করতে সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছেন – এই খবরটা ওঁর গ্ল্যামারকে
আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
সম্প্রতি সাধনার নাম পত্রিকায়
বেরিয়েছে ওঁর ছবির ব্যাপারে নয়, ওঁকে বাড়ি থেকে উৎখাত করার চেষ্টা
করা হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে। উনি পুলিশের কাছে এফআইআর করেছিলেন,
একজন বিল্ডার জোর করে ওঁর বাড়িতে ঢুকে ওঁকে প্রাণের ভয় (?) দেখিয়েছেন।
পুলিশ নাকি প্রথমে অনুসন্ধান করতে গড়িমসি করছিল। পরে অভিনেতা
সলমান খান টুইটারে সাধনা আণ্টিকে বিল্ডার হয়রানি করছে বলে হৈচৈ
করায় পুলিশ নড়ে চড়ে বসে। ৪০/৪৫ বছর আগে সুন্দরী সাধনা কোনো অভিযোগ
করলে পুলিশের বড় বড় কর্তারাও ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। এই কেস এখন চলছে।
এরমধ্যে আবার সেই বিল্ডার সাধনার বিরুদ্ধে মানহানির মোকদ্দমা
এনেছেন।
তিরিশ ও চল্লিশ দশকের বিখ্যাত
নায়িকা দেবিকারানি শুধু বড় অভিনেত্রী ছিলেন তাই নয়, স্বামী হিমানশু
রাইকে তিনি পরিচালনা ও ছবি তৈরির অন্যান্য কাজেও সাহায্য করতেন।
‘জীবন নয়া’ ছবিতে দেবিকারানির সঙ্গে ছবির হিরো নাজমুল-উল-হাসানের
বাস্তবজীবনের রোমান্স নিয়ে এক সময়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছিল।
ফলে হিমাংশু রাই তাঁর পরের ছবি ‘অছ্যুৎকন্যা’তে নাজমুল-উল-হাসানা-কে
বাদ দিয়ে বোম্বে টকিজের কর্মচারী অশোককুমারকে প্রধান ভূমিকায়
নামান। দিলীপকুমারও সিনামায় সুযোগ পান দেবিকারানির ইচ্ছায়। হিমাংশু
রাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর দেবিকারানি রাশিয়ান শিল্পী রোরিককে
বিয়ে করেন।
বৈজয়ন্তিমালা
৫০ দশকে হিন্দি সিনেমায় আসেন। ষাট দশকের শেষে চিত্রজগত থেকে
বিদায় নেন। উনি ভারতনাট্যমে পারদর্শী ছিলেন। মাত্র পাঁচ বছর
বয়সে ভ্যাটিক্যান সিটি-তে স্বয়ং পোপ-এর সামনে বৈজয়ন্তিমালা নৃত্যপ্রদর্শন
করেন ! চমনলাল বালিকে বিয়ে করার পর উনি অভিনয় জগৎ থেকে বিদায়
নেন। এরপর বহুবছর উনি নাচ শিখিয়েছেন। ৮০ দশকে উনি রাজনীতিতে
যোগ দেন। বার্ধক্য বৈজয়ন্তিমালাকেও ক্ষমা করে নি।
আমাদের মত
সাধারণ লোকের কাছে অবশ্য এই বার্ধক্যের একটা ইতিবাচক দিক আছে।
যৌবনের রূপ ঝরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের আসল মানুষটি ধীরে
ধীরে আত্মপ্রকাশ করে। যে সব সুন্দরীর ধারে কাছে আগে যাওয়া যেত
না, বার্ধক্যে পৌঁছে আমজনতার সঙ্গে সহজে মিশতে তাঁদের তেমন অসুবিধা
হয় না। আর সে মেশার সুযোগ আমাদের মত লোকের যখন আসে, তখন মনে
হয় - হায়, দেখা কেন পাই নি সেই প্রত্থম বয়সে!
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)