প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

শূর্পণখা - একটা প্রশ্ন

শূর্পণখার কাহিনী আমরা সবাই জানি। রাবণের বোন, ঋষি বিশ্রভা ও তাঁর স্ত্রী কৈকেসীর কন্যাকে বাল্মীকি কুৎসিত বলে বর্ণনা করেছেন। যদ্দুর মনে পড়ে – ট্যারা চোখ, পেট মোটা, স্ফীত-স্তনা, বিরলকেশী – অর্থাৎ প্রীতি উৎপাদনকারী চেহারা নয় মোটেই। তামিল কবি কম্বানের কাছে অবশ্য শূর্পণখার অন্য এক চিত্র পাই। সেখানে তিনি সুন্দরী, তন্বী, মৎস্যের মত চোখ এবং মোহময়ী।

রাম ও রাবণের যুদ্ধের মূলে যে শূর্পণখা ছিলেন – সে বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। রাবণের হাতে শূর্পণখার স্বামীর মৃত্যু ঘটেছিল। তার প্রতিশোধ নিতে রাবণ-নিধনের এক সুদূর-প্রসারী পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, না নিতান্ত ঘটনাচক্রে এটা ঘটেছিল - কেউ কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাল্মিকীর রামায়ণে পূর্ব-পরিকল্পনার কোনও চিহ্ন চোখে পড়ে না।। সংক্ষেপে ঘটনাটা হলঃ

শূর্পণখা কাম-জর্জরিত হয়ে রামকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। রাম জানালেন, তিনি বিবাহিত, ওঁর বদলে লক্ষ্মণকে বিয়ে করতে। রামের ঠাট্টা না বুঝে শূর্পণখা লক্ষ্মণকে বিয়ে করতে চাইলেন। লক্ষণের কাছেও যখন সুবিধা হল না। তখন সীতাই এই প্রত্যাখ্যানের মূল কারণ ভেবে তাঁকে খেতে গেলেন। সেটাই তাঁর কাল হল। রামের আদেশে খড়গ দিয়ে লক্ষ্মণ শূর্পণখার নাক ও কান কাটলেন। । রক্তাক্ত শূর্পণখা প্রথমে তাঁর রক্ষক ভাই খরের কাছে গিয়ে এর প্রতিকার চাইলেন। রাম লক্ষ্মণের হাতে খর ও সসৈন্যে তার সেনাপতি দূষণের মৃত্যু ঘটলে সূর্পণখা রাবণকে সব বৃত্তান্ত জানিয়ে সুন্দরী সীতাকে অপহরণ করতে উত্তেজিত করলেন। এই সীতাহরণই হল রাম-রাবণের যুদ্ধের কারণ।

সাধারণ ভাবে রাক্ষসীদের আমরা অপছন্দ করি। নারী হওয়া সত্ত্বেও ওরা পুরুষদের থেকে বেশী শক্তিশালী। ওদের সঙ্গে লড়াই করা মানে সমূহ বিপদ - হামেশাই পুরুষদের ওরা খেয়ে ফেলে! রাক্ষসীর খপ্পরে একবার পড়া মানে – ওরে বাবা, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে! শূর্পণখাকে আমরা আবার বিশেষভাবে অপছন্দ করি। এদিকে নারী, কিন্তু যৌনকামনা প্রকাশের ব্যাপারে এতটুকু দ্বিধা নেই! কামাতুরা শূর্পণখার দুর্বিনীত অবৈধ আচরণের জন্যেই নাক কান কাটা গিয়েছিল। মানুষকে খাবার চেষ্টা করা অবশ্যই অবৈধ আচরণ আর সেটাই শূর্পণখা করেছিলেন। কিন্তু যদি ধরি, শূর্পণখা রামের প্রতি কোনও কামভাব প্রকাশ করেন নি - স্রেফ সীতাকেই খেতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাহলে কি হত? মনে হয়, ওঁর প্রাণটা যেত - নারী বলে কোনও ছাড় হত না! শূর্পণখার দিদিমা তাড়কারও পার পান নি। ঋষিদের উৎপাত করার জন্য রামের হাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল!

শূর্পণখার নাক-কান কাটা গিয়েছিল অন্য কারণে - একটা ঘৃণ্য কাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে। রাম স্বয়ং লক্ষ্মণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কামোন্মত্তা অসতীর রূপ বিকৃত করে দিতে। লক্ষ্মণ বুদ্ধি করে নাক কান দুটোই কেটেছিলেন, যাতে শূর্পণখা আর লজ্জায় মুখ দেখাতে না পারেন। কেউ দেখে ফেললেই হাসাহাসি করবে। তাতে যদি শূর্পণখার শিক্ষা হয়!

নারী হয়ে এগিয়ে এসে পুরুষকে কামনা করা অবশ্যই অমার্জনীয় অপরাধ। এটা তো পুরুষ নারীকে করে! সিনেমার বস্তা-পচা থিমের কথা ভাবুন! একটা ছেলে একটা মেয়েকে কাছে পাবার জন্যে তাকে নানা ভাবে উত্যক্ত করবে, গান গাইবে, টিটকিরি দেবে – সুযোগ পেলে হাত ধরে টানা টানি করবে। প্রথমে ‘না, না’ করেও শেষে মেয়েটা ধরা দিয়ে সেই পুরুষের বুকেই মুখ লুকোবে! সেটাই তো নারী-সুলভ আচরণ – পুরুষ তাকে যেমনটি দেখতে চায়, তেমনটি! সেই জন্যেই বাস্তব জগতে সিনেমার হিরো হতে গিয়ে যখন ছ্যাঁকা খেতে হয়, তখন রাগ হবে না! মেয়েরা স্বাধীন হয়ে কি তাদের নারী-সুলভ নম্র স্বভাবটা পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছে? নইলে এইভাবে পুরুষদের বিরুদ্ধাচারণ করার আর কি কারণ থাকতে পারে! এই জন্যেই তো ধর্ষণ, বলাৎকার, মুখে অ্যাসিড ছোঁড়া জাতিয় ব্যাপারগুলো ঘটছে। ‘অ্যাঁ, তুই একটা মেয়ে, আমি তোকে চাইছি - তাও ধরা দিবি না! ঠিক আছে – এমন ওষুধ দিচ্ছি যে কেউই তোকে আর ছোঁবে না!’

আসলে শূর্পণখার সমস্যা, তিনি রাক্ষসী-বুদ্ধি খাটিয়ে রামের আপত্তির root cause analysis করে ফেলেছিলেন। সীতাই এর মূল ভেবে – তাঁকে খেতে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। সেখানেই মস্ত ভুল। শূর্পণখার গায়ে তো জোর ছিল। অত analysis-এর মধ্যে না গিয়ে রাম যখন ইয়ার্কি মেরে আপত্তি জানাচ্ছেন, তখন বলাৎকার করলেন না কেন? ধরে নিচ্ছি, অ্যাসিড বাল্মিকীর যুগে আবিষ্কৃত হয় নি, আর ধর্ষণও প্রকৃতিগত কারণে সম্ভবপর ছিল না। আর কিছু না হোক, কপাৎ করে গিলে ফেললেও তো পারতেন - পেটের ভেতর রামের দেহের স্বাদ পেতেন! বেশীক্ষণ পেতেন না, কারণ রাম দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। পেট কেটে বেরিয়ে এসে ওঁকে বধ করতেন নিশ্চিত। হয়তো অদ্দুর পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়াতো না। গেলার আগেই লক্ষ্মণ বা রামের বাণে তাঁর মৃত্যু হত। তাতে ওঁর কার্যসিদ্ধি হত না ঠিকই, কিন্তু নাক-কানটা অক্ষত রেখে মরতে পারতেন! নারী হয়ে জন্মাবার কি গেরো দেখুন, পুরুষদের কামেচ্ছায় বাধা দিলেও বিপদ, আবার কামেচ্ছা জানাতে গেলেও বিপদ!

আপনারা নিশ্চয় এই অতি-সরলীকৃত আলোচনাকে উন্মাদের প্রলাপ বলে ভাবছেন। যদি আমি ভুল বলে থাকি একটু বুঝিয়ে বলুন, শূর্পণখাকে খতম না করে, তাঁর নাক কান কাটা হল কেন?

সুজন দাশগুপ্ত


(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।