প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিশেষ সংখ্যাঃ রবি-স্মরণ - শ্রবণে, শ্রাবণে

গল্পগুচ্ছ – বাস্তবিক ও আধুনিক

শেখর বসু

      রবীন্দ্রনাথ ‘সোনার তরী’ কাব্যের অন্তর্গত ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় তাঁর মনোমত একটির পর একটি গল্প লেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কেমন গল্প লিখতে চান সেসব কথা জানিয়েছেন ছন্দোবদ্ধ কবিতায়।
      রবীন্দ্রনাথের যথার্থ গল্পের সংজ্ঞা ঐ কবিতাটি থেকে গদ্যে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ যে গল্প লিখতে চেয়েছিলেন তার বিষয় ছিল, ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট-ছোট দুঃখ কথা। যে ভাষায় গল্প লিখবেন তা হবে নিতান্তই সহজ-সরল। বর্ণনার ছটা থাকবে না সেখানে, ঘটনার ঘনঘটাও নয়। ভারী ভারী তত্ত্ব, উপদেশ ও থাকবে না গল্পে। বিষয় হবে দু-চারটি অশ্রুজলের কথা, অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল, অজ্ঞাত, অখ্যাত জীবনকথা। তার মধ্যে কোথাও বা অশ্রু, কোথাও বা হাসি। এইসব কাহিনীর পূর্ণ সমাপ্তির প্রয়োজন নেই। গল্প পড়ার পরে, মনে হবে শেষ হয়েও বুঝি শেষ হলনা। পাঠকের মনে একটি অতৃপ্তির ভাব রয়ে যাবে।
      আজ থেকে প্রায় সওয়া-শো বছর আগে ছোটগল্পের আদর্শ প্রকৃতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ যা ভেবেছিলেন, আজকের বিচারেও তা আধুনিক। গল্পগুচ্ছের বেশ কিছু গল্প শুধুমাত্র উচ্চস্তরেরই নয়, আজকের নিরিখেও সর্বাংশে আধুনিক।
      বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আলোচনার একটি অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’তে। ছোটগল্প সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনার অনেকখানি উঠে এসেছে এই আলোচনায়।
      রবীন্দ্রনাথ তরুণ লেখকদের উদ্দেশে বলছেন ’

... আমার অবাক লাগে তোমরা যখন বল যে আমার গল্পগুচ্ছ গীতধর্মী। একসময়ে ঘুরে বেড়িয়েছি বাংলার নদীতে নদীতে, দেখেছি বাংলার পল্লীর বিচিত্র জীবনযাত্রা। একটি মেয়ে নৌকো করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেল, তার বন্ধুরা ঘাটে নাইতে-নাইতে বলাবলি করতে লাগলো, আহা, যে পাগলাটে মেয়ে, শ্বশুরবাড়ী গিয়ে ওর কি না জানি দশা হবে। কিংবা ধর একটা খ্যাপাটে ছেলে সারা গ্রাম দুষ্টুমির চোটে মাতিয়ে বেড়ায়, তাকে একদিন হঠাৎ করে চলে যেতে শহরে তার মামার কাছে। এইটুকু চোখে দেখেছি, বাকীটা নিয়েছি কল্পনা করে। একে কি তোমরা গান জাতীয় পদার্থ বলবে? আমি বলব আমার গল্পে বাস্তবের অভাব কখনো ঘটেনি। যা কিছু লিখেছি, তাকে দেখেছি, তাকে মর্মে অনুভব করেছি, সে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, আমার নিজের দেখা। তাকে গীতধর্মী বললে ভুল করবে।’

      রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, বাংলা গদ্য তাঁকে নিজেই গড়তে হয়েছে। ভাষা ছিলনা, পর্বে পর্বে স্তরে স্তরে তৈরী করতে হয়েছে তাঁকে। গদ্যের ভাষা গড়তে হয়েছে গল্পপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে। বলেছেন মোপাসাঁর মত বিদেশী লেখকরা তৈরী ভাষা পেয়েছিলেন। লিখতে লিখতে ভাষা গড়তে হয়নি তাঁদের।
      তরুণ লেখকদের উদ্দেশে বলেছেন,

‘ভেবে দেখলে বুঝতে পারবে আমি যে ছোট ছোট গল্পগুলি লিখেছি, বাঙ্গালী সমাজের বাস্তবজীবনের ছবি তাতেই প্রথম ধরা পড়ে। বঙ্কিম যে ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুন্ডলা’ লিখেছিলেন, সে সব কি সত্যি ছিল?’

      তবে বঙ্কিমের সমালোচনা নয়, প্রশংসাই করেছিলেন তিনি। বলেছেন, বঙ্কিমের রচনায় যা পাওয়া যায় তা সামন্ততন্ত্র নয়, তাকে একটা নতুন পিপাসা বলে যেতে পারে। এ স্বাদ আমরা আগে কখনো পাইনি। নিন্দে করতে পারব না বঙ্কিমকে, নিশ্চয়ই বলব তিনি ও রসের যোগান দিয়েছিলেন বলেই বেঁচে গিয়েছিলুম।

      ১৯৪১ সালে বুদ্ধদেব বসুকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন,

‘আমি একদা যখন বাংলাদেশের নদী বেয়ে তার প্রাণের লীলা অনুভব করেছিলুম তখন আমার অন্তরাত্মা আপন আনন্দে সেই সকল সুখদুঃখের বিচিত্র আভাস অন্তঃকরণের মধ্যে সংগ্রহ করে মাসের পর মাস বাংলার যে পল্লীচিত্র রচনা করেছিল তার পূর্বে আর কেউ করেনি। ... সেদিন কবি যে পল্লীচিত্র দেখেছিল নিঃসন্দেহে তার মধ্যে রাষ্ট্রিক ইতিহাসের আঘাত-প্রতিঘাত ছিল। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিতে মানবজীবনের সেই সুখদুঃখের ইতিহাস, যা সকল ইতিহাসকে অতিক্রম করে বরাবর চলে এসেছে কৃষিক্ষেত্রের পল্লীপার্বনে আপন প্রাত্যহিক সুখদুঃখ নিয়ে। কখনো বা মোগল রাজত্বে কখনো বা ইংরেজ রাজত্বে তার অতি সরল মানবত্ব প্রকাশ নিত্য চলেছে, সেইটেই প্রতিবিম্বিত হয়েছিল গল্পগুচ্ছে, কোনো সামন্ততন্ত্র, কোন রাষ্ট্রতন্ত্র নয়...’।

      এইপ্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্পটি খুবই উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্পটির মধ্যে কেউ কেউ ‘চোখে দেখা বাস্তব’ দেখেছেন, যা উঠে এসেছে ‘দারিদ্র্য, বঞ্চনা, ঘাম ও চোখের জল থেকে।’ কেউ কেউ আবার আক্ষেপ করে বলেছেন – রবীন্দ্রনাথ এমন গল্প লিখলেই পারতেন, তাহলে তিনি মাটির কাছাকাছি থাকতে পারতেন!
      ‘শাস্তি’ গল্পে দুখীরাম রুই ও ছিদাম রুই জনমজুর। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী এই দুই ভাই গ্রামের একটি জীর্ণ কুটীরে থাকে। তাদের দুই স্ত্রীর মধ্যে সব সময় ঝগড়া চলে। ছোট বউ চন্দরা বিশেষ কিছু বলত না, শুধু মৃদু স্বরে দুই একটা তীক্ষ্ণ দংশন করত আর তাতেই বড়বউ ‘হাউ হাউ দাউ দাউ করিয়া রাগিয়া মাগিয়া বকিয়া ঝকিয়া সারা হইত এবং পাড়া সুদ্ধ অস্থির করিয়া তুলিত।’
এই ঝগড়া শোনামাত্র নিকট প্রতিবেশীদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তীব্র কণ্ঠস্বর শুনিবামাত্র লোকে পরস্পরকে বলত- “ওই রে বাধিয়া গিয়াছে ।”
      দুই ভাই এই ঝগড়াটিতে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু সেদিনের ঝগড়া ছিল অন্যরকম। সারাদিন প্রচন্ড পরিশ্রম করে প্রাপ্য মজুরী না পেয়ে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত ক্ষুধার্ত দুই ভাই ফিরে এসে দেখে চারপাশ থমথম করছে। -‘ছোটো জা চন্দরা ভূমিতে অঞ্চল পাতিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া আছে— আজিকার এই মেঘলা দিনের মতো সেও মধ্যাহ্নে প্রচুর অশ্রু-বর্ষণপূর্বক সায়াহ্নের কাছাকাছি ক্ষান্ত দিয়া অত্যন্ত গুমট করিয়া আছে; আর বড়ো জা রাধা মুখটা মস্ত করিয়া দাওয়ায় বসিয়া ছিল- তাহার দেড় বৎসরের ছোটো ছেলেটি কাঁদিতেছিল, দুই ভাই যখন প্রবেশ করিল, দেখিল উলঙ্গ শিশু প্রাঙ্গণের এক পার্শ্বে চিৎ হইয়া পড়িয়া ঘুমাইয়া আছে।’
      ক্ষুধিত দুখীরাম কালবিলম্ব না করে বলেছিল – ‘ভাত দে।’
      অমনি – “বড়ো বউ বারুদের বস্তায় স্ফুলিঙ্গপাতের মতো একমুহূর্তেই তীব্র কণ্ঠস্বর আকাশ-পরিমাণ করিয়া বলিয়া উঠিল, ‘ভাত কোথায় যে ভাত দিব। তুই কি চাল দিয়া গিয়াছিলি। আমি কি নিজে রোজগার করিয়া আনিব।’
      গিন্নির রুক্ষবচন অসহ্য হয়ে উঠেছিল দুখিরামের কাছে। “ক্রুদ্ধ ব্যাঘ্রের ন্যায় গম্ভীর গর্জনে বলিয়া উঠিল, “কী বললি!” বলেই হাতের দা স্ত্রীর মাথায় বসিয়ে দিয়েছিল।
      মারা গেল বড় বউ এবং একটু বাদে ওখানে গাঁয়ের রামলোচন খুড়ো হাজির হলে ছোটভাই আচমকাই বলে ফেলেছিল –“ঝগড়া করিয়া ছোটোবউ বড়ো বউয়ের মাথায় এক দায়ের কোপ বসাইয়া দিয়াছে।”

      এ গল্পের পাঠকরা জানেন যে, বজ্রাহত চন্দরা স্বামীর অনুরোধে খুনের মিথ্যে দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। এবং পরে সবাই মিলে হাজার বোঝানো সত্ত্বেও মিথ্যে ওই দায়কে এক মুহূর্তের জন্যেও অস্বীকার করেনি চন্দরা। খুনের অপরাধে ফাঁসির হুকুম হয়ে গেল তার। জেলখানায় দয়ালু সিভিল সার্জন ফাঁসির আগে চন্দরাকে জিজ্ঞাসা করল – “তোমার স্বামী তোমাকে দেখিতে চায়, তাহাকে কি ডাকিয়া আনিব।”
      উত্তরে চন্দরা কহিল, “মরণ!—”
      গল্পের এই শেষ লাইনটিও প্রবাদপ্রতিম। সুতীব্র এক অভিমান থেকে চন্দরা ফাঁসিকাঠের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। এমন গল্পের কথা অসীম প্রতিভাধর রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কারও পক্ষে বুঝি ভাবা সম্ভব ছিল না।
      এই গল্পের চোখে দেখা বাস্তবচিত্রটি নিখুঁত। জমিদারি সূত্রে রবীন্দ্রনাথ বছর দশ-বারো পল্লীগ্রামে কাটিয়েছিলেন। ওই সব অঞ্চলের অপরূপ প্রকৃতি দেখে তিনি শুধু মুগ্ধই হননি, গাঁয়ের সব শ্রেণীর মানুষদের সঙ্গে তিনি মেলা মেশা করতেন। তাঁদের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ, বোঝার ব্যাপারে মহানুভব জমিদারবাবুর বিন্দুমাত্র শৈথিল্য ছিল না। এই গ্রামজীবন সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল সম্পূর্ণ ও নিবিড়। কিন্তু সাহিত্য বাদ দিয়ে ‘ সখের দারিদ্র্যের’ জীবনকথা তিনি একবারও রচনা করতে যাননি।
      শাস্তি গল্পটিতে চূড়ান্ত দারিদ্র্যের কথা আছে। একজন লাঞ্ছিত ও ক্ষুধার্ত মানুষ প্রচন্ড খিদের মুখে ভাত না পেয়ে কঠিন কথার জবাবেদায়ের কোপ মেরেছে বউয়ের মাথায়। কিন্তু গল্পটি দুঃখী জীবনের বারোমাস্যা হয়নি। গল্পে প্রধান হয়ে উঠেছে অপমানিত, অভিমানী, এক রমণীর দুঃসহ হৃদয়াবেগের কথা – যে মুক্তি চেয়েছে আত্মবলিদানের ভেতর দিয়ে।
      ‘শাস্তি’তে দারিদ্র্য আছে, কিন্তু সেটা একেবারেই বাইরের বিষয়, মূল গল্প অন্যত্র। গত শতকের তিনের দশকে বাংলা সাহিত্যে ‘গরিবিয়ানা’ দেখাবার বেশ একটা হুজুগ পড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ সেই আমলের তরুণদের এই হুজুগকে সমর্থন করতে পারেননি।
‘সাহিত্যসমালোচনা’য় তরুণ লেখকদের উদ্দেশে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন –

“অভিজ্ঞতাকে অতিক্রম করে কেউ লিখতে পারে না। তোমরা বলতে পার, দরিদ্রের মনোবৃত্তি আমি বুঝি না, এ কথা মেনে নিতে আমার আপত্তি নেই। তোমরা যদি বল, তোমাদের সাহিত্যের বিশেষত্ব দারিদ্র্যের অনুভূতি, আমি বলব সেটা গৌণ। । ...... আমরা অর্থশাস্ত্র শেখবার জন্য গল্প পড়ি না। গল্পের জন্য গল্প পড়ি। ‘গরিবিয়ানা’ ‘দরিদ্রিয়ানা’কে সাহিত্যের অলংকার করে তুলো না। ভঙ্গি মাত্রেরই অসুবিধা এই যে, অতি সহজেই তার অনুকরণ করা যায়— অল্পবুদ্ধি লেখকের সেটা আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। যখন তোমাদের লেখা পড়ব তখন এই বলে পড়ব না যে, এইবার গরিবের কথা পড়া যাক। .... .. প্রত্যেকের নিজের ভিতর অভিমান থাকা উচিত যে, আমি যা লিখছি ‘গরিবিয়ানা’ বা ‘যুগ’ প্রচার করবার জন্য নয়, একমাত্র আমি যেটা বলতে পারি সেটাই আমি লিখছি।”

      ‘সাহিত্যের পথে’ রবীন্দ্রনাথ বাস্তবকে বিস্তৃততর করেছেন। লিখেছেন, -

“রামায়ণ মহাভারত দেশের সকল লোকে পড়ে তাহার কারণ এ নয় যে, তাহা কৃষাণের ভাষায় লেখা বা তাহাতে দুঃখী-কাঙালের ঘরকরনার কথা বর্ণিত। তাহাতে বড়ো বড়ো রাজা, বড়ো বড়ো রাক্ষস, বড়ো বড়ো বীর এবং বড়ো বড়ো বানরের বড়ো বড়ো লেজের কথাই আছে। আগাগোড়া সমস্তই অসাধারণ। সাধারণ লোক আপনার গরজে এই সাহিত্যকে পড়িতে শিখিয়াছে“।

      ‘শাস্তি’ গল্পের পটভূমিকা প্রচলিত অর্থে বাস্তব, বাস্তব ওই পরিবারটির দারিদ্র্য; কিন্তু গল্প ওই তথাকথিত বাস্তব জগৎকে অতিক্রম করে মনোজগতে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। গল্পের প্রকৃত বাস্তবতা সেখানেই।

      রবীন্দ্রনাথের আশ্চর্য-সুন্দর গল্পগুলির মধ্যে কোমলতা দুর্বলতাময়, সকরুণ আশঙ্কা ভরা অপরিণত বেশ কিছু মানুষ উঠে এসেছে। এদের প্রেক্ষাপট অতিমাত্রায় বাস্তব, তারপরেই তাদের আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনায় এমন দ্যুতি দেখা গিয়েছে যা তাদের চেনা প্রেক্ষিত থেকে তুলে এনে চিরকালের সাহিত্যে জায়গা করে দিয়েছে। বিষয়ের ভার খসে পড়েছে। গল্প থেকে গিয়েছে পাঠকের অনুভবের জগতে। প্রতিভাবান গল্পলেখকের অনবদ্য গঠনশৈলী, ভাষা ব্যবহারে বিরল দক্ষতা ও সচেতনতা না থাকলে এটি কিছুতেই সম্ভব হত না।
      বিশ্বসাহিত্যে ছোটগল্প নবীনতম শাখা। বাংলা সাহিত্যে প্রকৃত অর্থে ছোটগল্পের জন্ম রবীন্দ্রনাথের হাতেই। শুধু জন্মই নয়, তার উজ্জ্বল বিকাশ ও সর্বাঙ্গসুন্দর পরিণতিও তাঁর কলমেই। তাঁর আগে গল্পের নামে যা লেখা হয়েছিল তা রাজারাজড়ার বিচিত্র ঘটনাবিশিষ্ট আখ্যানমালা।
      সাহিত্য সমাজের কিছু সমালোচক রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একজন বুর্জোয়া লেখককে আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন । একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছিল বারবার। বলা হয়েছিল তিনি মাটির কাছাকাছি নন।
      কথাগুলি একেবারেই ভুল। আসলে চারপাশের বাস্তবতা থেকে শিল্পসম্মত উত্তরণকে ওই সব সমালোচক ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। সম্পূর্ণ ভাবে দেখতে গেলে কিছুটা দূরত্বও সৃজন করতে হয়। রবীন্দ্রনাথ তা করেছিলেন। লেখকের তৈরী ওই দূরত্ব গল্পগুলিকে বাস্তবের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক ওপরে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।
      প্রকৃতি ও মানুষের কাছ থেকে যতটুকু যা গ্রহণ করার ততটুকুই গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাকিটুকু শিল্পবোধের ব্যাঞ্জনা- যা পাঠকহৃদয়কে আলোড়িত করে বিশেষ স্থান ও কালের বহু দূরে নিয়ে এসেছে। আজ তাই, একুশ শতকের গোড়াতেও, তাঁর বেশ কিছু গল্প সর্বাংশে আধুনিক।

ু্


      লেখক পরিচিতি - শেখর বসু (http://sekharbasu.com/) – প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও ছোটগল্পকার। বর্তমান প্রবন্ধটি ‘এবং মুশায়েরা’( Tel -033- 2510 0787, 9433216121, Email: mushayera@gmail.com ) থেকে প্রকাশিত লেখক সম্পাদিত ‘আধুনিক রবীন্দ্রনাথের ২১টি ছোট গল্প’ গ্রন্থের ভূমিকা থেকে লেখক ও প্রকাশকের অনুমতি পূর্বক প্রাপ্ত ও সংক্ষেপিত।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।