প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিশেষ সংখ্যাঃ রবি-স্মরণ - শ্রবণে, শ্রাবণে

'গান্ধারীর' চিরকালীন 'আবেদন'

ভাস্কর বসু

 

“ তারপর উদাসীন ভাবে বললেন, সবাই আমার কাছে এসে নানারকম প্রশ্ন করে। আমি কাউকে কোনো প্রশ্ন করি না। আমার কাজ শুধু উত্তর দেওয়া।
—এবং অধিকাংশই অবান্তর প্রশ্ন।
—প্রায়।
—আমার আর একটাই প্রশ্ন আছে। কী রকম লাগে জীবনটা? এর নাম কি সুখ?
—সুখ?
—হ্যাঁ।
—সুখের কথা চিন্তা করিনি। জীবনে যখনই কোনো সংকট এসেছে, তখনই ভেবেছি আমায় যেন কেউ হারাতে না পারে। কখনো তো হারিনি আমি। অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ আছে। কিন্তু হেরে যাইনি।
—আপনি বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের ‘গান্ধারীর আবেদন’ পড়েননি। সেখানে তিনি এ কথাই দুর্যোধনের মুখে বসিয়েছেন:

‘সুখ চাহি নাই মহারাজ—
জয়! জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ।
ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা—’

—তুমি আমার সঙ্গে দুর্যোধনের তুলনা করলে?
—এবার আপনি প্রশ্ন করছেন।
—এটা পাল্টা প্রশ্ন। উত্তরটাকেই পরিষ্কার করে নেওয়ার জন্য।
—না, তুলনা করিনি। কাব্যের সঙ্গে জীবনের তুলনা চলে না। তা ছাড়া, মহাভারতে দুর্যোধন আর রবীন্দ্রনাথের দুর্যোধন এক নয়। আমি বলতে চাইছিলাম, যাদের হাতে শাসনভার থাকে, তাদের কাছে জয়টাই প্রধান।

‘রাজধর্মে, ভ্রাতৃধর্ম, বন্ধুধর্ম নাই, শুধু জয়ধর্ম আছে-”

      উপরের অংশটি রচিত হয়েছে সত্তরের দশকে। লেখকের নাম শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, গল্পটির নাম ‘নদীতীরে’। এই কল্পিত আখ্যানটিতে এই সংলাপে পাত্রপাত্রী দুজন - একজন লেখক স্বয়ং, অন্যজন - শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে যে সুপ্রযুক্ত উদ্ধৃতিটি ব্যবহৃত হয়েছে তার লেখক রবীন্দ্রনাথ, আখ্যানটির নাম ‘গান্ধারীর আবেদন’- রচনাকাল - ১৮৯৭।

      একজন খুব আধুনিক লেখকের এরকম প্রয়োগ আমাদের বাধ্য করে ‘গান্ধারীর আবেদন’ কাব্যটিকে নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করতে। ওপরের অংশটিকেই ধরা যাক। ‘রবীন্দ্রনাথ’ কিন্তু দুর্যোধনের মুখে যে সংলাপ দিয়েছেন তাকে সুনীল সঠিক ভাবেই চিহ্নিত করেছেন সেইসব মানুষের মনের কথা হিসেবে যাদের হাতে শাসনভার থাকে। একভাবে দেখতে গেলে যুদ্ধ ‘দাবা’ বা ‘পাশা’ খেলা নয়। রাজা যখন যুদ্ধে অংশ নেন, তিনি তখন নিজের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে জনপ্রতিনিধি রূপে চিহ্নিত করতে চান। আর যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের উপর নির্ভর করে অজস্র মানুষের ভবিষ্যৎ, দেশের বা জাতির ভবিষ্যৎ। রাজাকে বা দলনায়ককে অনেক সময়ে বৃহৎ স্বার্থের সামনে নিজের মহত্বকে বিসর্জন দিতে হয়।

      প্রথমবার “গান্ধারীর আবেদন” পড়েছিলাম পাঠ্য রূপে একাদশ শ্রেণীতে। আমাদের যিনি পড়িয়েছিলেন সেই শিক্ষককে আমর বলতাম “অজয়দা”। আমাদের জানিয়েছিলেন এইভাবে এক সৃষ্টির পুনর্মূল্যায়নকে বলা যায় –“Creation Within a Creation”! অনবদ্য ভাবে প্রকাশ করেছিলেন যে দুর্যোধন হচ্ছেন সাফল্যের প্রতীক – যিনি আজকের নায়কের মতই বিশ্বাস করেন – “Nothing is wrong in Love and War” । অপরদিকে গান্ধারীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, Human Values – মানবিক মূল্যবোধ, তা হারজিতের ঊর্ধ্বে । এই দুইয়ের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র এমন এক চরিত্র যিনি দুই দিক কে চেষ্টা করছেন সামলানোর। তাঁর ন্যায় বোধ যথেষ্ট, কিন্তু পুত্রস্নেহের কাছে তিনি তা জলাঞ্জলি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সমালোচনায় বিদ্ধ করতে ছাড়েননি দুর্যোধনকে। যখন ধৃতরাষ্ট্র বলেন - “ক্ষুদ্র ঈর্ষা! বিষময়ী ভুজঙ্গিনী!” দুর্যোধন তার প্রতিবাদ করেন -

“ ক্ষুদ্র নহে , ঈর্ষা সুমহতী । ঈর্ষা বৃহতের ধর্ম ।
দুই বনস্পতি মধ্যে রাখে ব্যবধান ;
লক্ষ লক্ষ তৃণ একত্রে মিলিয়া থাকে বক্ষে বক্ষে লীন ;
নক্ষত্র অসংখ্য থাকে সৌভ্রাত্রবন্ধনে —
এক সূর্য , এক শশী । মলিন কিরণে
দূর বন-অন্তরালে পাণ্ডুচন্দ্রলেখা
আজি অস্ত গেল , আজি কুরুসূর্য একা —
আজি আমি জয়ী ! ”

      আমরা পরম বিস্ময়ে লক্ষ করি এই ঘটনা আজকের যুগে ঘটে চলেছে নিরন্তর, আমরা তার সাক্ষী। কি ছাত্রাবস্থায়, কি কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক অবস্থানে বা রাজনীতির মঞ্চে, আমরা এই চরিত্রকে বারংবার দেখেছি। “Killing the competition” বা ” Routing opponents” এই সব প্রাতিষ্ঠানিক বাগাড়ম্বরের (Corporate Verbiage) সঙ্গে একবিংশ শতাব্দীর মানুষ খুবই পরিচিত। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় কোন দলের অধিনায়ক বা দেশ বা রাজ্যের অধিপতি যদি এই মনোভাবগ্রস্ত হন তাতে তাঁর দলের বা তাঁর অধীনস্থ মানুষদেরও সুবিধা হয়। হতে পারে সে সুবিধা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু দুর্যোধনের মত মানুষরা বলবেন - জীবনই তো ক্ষণস্থায়ী। দুর্যোধনের কাছে ধৃতরাষ্ট্রর মূল্যবোধ প্রবল। কিন্তু দুর্যোধন ও পাল্টা যুক্তি দেখাতে ছাড়েন না । তাঁদের প্রশ্নোত্তরে বিতর্ক চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে !!

ধৃতরাষ্ট্র । আজি ধর্ম পরাজিত ।
দুর্যোধন । লোকধর্ম রাজধর্ম এক নহে পিতঃ!
লোকসমাজের মাঝে সমকক্ষ জন
সহায় সুহৃদ্‌-রূপে নির্ভর বন্ধন
কিন্তু রাজা একেশ্বর ; সমকক্ষ তার
মহাশত্রু , চিরবিঘ্ন , স্থান দুশ্চিন্তার ,
সম্মুখের অন্তরাল , পশ্চাতের ভয় ,
রহে বলী ; রাজদণ্ড যত খণ্ড হয়
তত তার দুর্বলতা , তত তার ক্ষয় ।

একা সকলের ঊর্ধ্বে মস্তক আপন
যদি না রাখিবে রাজা , যদি বহুজন
বহুদূর হতে তাঁর সমুদ্ধত শির
নিত্য না দেখিতে পায় অব্যাহত স্থির ,
তবে বহুজন — ' পরে বহুদূরে তাঁর
কেমনে শাসনদৃষ্টি রহিবে প্রচার ?

      শেষ অংশে এসে আমরা কিন্তু দুর্যোধনের সঙ্গে সহমত না হয়ে পারিনা। ‘দুর্বল নেতৃত্ব’ যে পরিমাণ বিফলতার জন্ম দিতে পারে তা আমরা অবশ্যই প্রত্যক্ষ করেছি। “একা সকলের ঊর্ধ্বে মস্তক আপন / যদি না রাখিবে রাজা”, সত্যিই তো! দলনায়কের সমুদ্ধত মস্তক ই তো দলের অন্যান্য সভ্যদের অনুপ্রেরণা দেবে। ঠিক এই কথাটাই সুনীল তাঁর কাহিনীতে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। আর “কিন্তু রাজা একেশ্বর” - বর্তমানের সফল মানুষরা ও বিশ্বাস করে থাকেন -

“They say it's lonely at the top and whatever you do you always have to watch those around you, nobody is invincible, no plan is bulletproof, we always need to meet our Moment Of Truth.” -

      তবে এটাও ঠিক - “রাজদণ্ড যত খণ্ড হয় / তত তার দুর্বলতা, তত তার ক্ষয়” - একেবারে একনায়কদের মনের কথা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে তাঁদের সুতীব্র আপত্তি থাকারই কথা। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে অনেকেরই ধারণা, সুশাসন সম্ভব হয় “খণ্ডিত রাজদণ্ডের” মাধ্যমেই। বিশেষত: ভারতবর্ষের মত ভিন্ন ভাষা বা ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পন্ন দেশে। এই নিয়ে বিতর্ক চলবেই, কিন্তু এই বিতর্কের আঁচ আমরা পেয়েছি অনেক আগে। কিন্তু দুর্যোধনের বেশ কিছু যুক্তির যথার্থতা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। যখন তিনি বলেন-

যার যাহা বল
তাই তার অস্ত্র , পিতঃ , যুদ্ধের সম্বল ।
ব্যাঘ্রসনে নখে দন্তে নহিক সমান ,
তাই বলে ধনুঃশরে বধি তার প্রাণ
কোন্‌ নর লজ্জা পায় ?

      একথা তো খুবই সত্যি! বিবর্তন (Evolution) বা অভিযোজন (Adaptation) এবং তারই সঙ্গে “Survival of the Fittest” সব তত্বেই একথা বোঝানো হয়েছে। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার জোরে উন্নত পেশীশক্তিধারী জীবদের ওপর প্রভুত্ব করেছে। “কোন্‌ নর লজ্জা পায় ?” – লজ্জা দূরস্থান! আমরা তো রীতিমত গর্বিত।

      ধৃতরাষ্ট্রের পরিণত মস্তিষ্কের পরিচয় ও আমরা পাই, যখন তিনি সতর্ক করে দেন –যখন দুর্যোধন উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন –

নিন্দা! আর নাহি ডরি ,
নিন্দারে করিব ধ্বংস কণ্ঠরুদ্ধ করি ।

      তিনি উচ্চারণ করেন সেই সতর্কবার্তা –

ওরে বৎস , শোন্‌ ,
নিন্দারে রসনা হতে দিলে নির্বাসন
নিম্নমুখে অন্তরের গূঢ় অন্ধকারে
গভীর জটিল মূল সুদূরে প্রসারে ,
নিত্য বিষতিক্ত করি রাখে চিত্ততল ।
রসনায় নৃত্য করি চপল চঞ্চল
নিন্দা শ্রান্ত হয়ে পড়ে ; দিয়ো না তাহারে
নিঃশব্দে আপন শক্তি বৃদ্ধি করিবারে
গোপন হৃদয়দুর্গে । প্রীতিমন্ত্রবলে
শান্ত করো , বন্দী করো নিন্দাসর্পদলে
বংশীরবে হাস্যমুখে ।

      মনে হয় একদা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর কোন শুভাকাঙ্খী যদি এই সাবধানবাণীটি স্মরণ করিয়ে দিতেন, তাহলে জরুরী অবস্থা আর তজ্জনিত বিপদ থেকে তিনি হয়তো রক্ষা পেতেন। এখানে ‘রসনা’ কথাটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। “রসনায় নৃত্য করি চপল চঞ্চল” – আমরা ভেবে অবাক হই শতাব্দীপূর্বে তিনি কি করে জানতে পেরেছিলেন এই একবিংশ শতাব্দীর চ্যানেলে, কাগজে, বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে “নিন্দা রসনা”র এমন অসাধারণ “চপল, চঞ্চল, নৃত্য” হবে!!

      ধৃতরাষ্ট্র কিন্তু স্বকন্ঠে দুর্যোধনের কাছে স্বীকার করেছেন নিজের দুর্বলতাকে, তাঁর পুত্রস্নেহে বশীভূত বিচারক্ষমতার অভাবকে, কি সর্বনাশের পথে তিনি ধাবমান এই দুর্বলতার ফলস্বরূপ -

“অন্ধ আমি অন্তরে বাহিরে
চিরদিন — তোরে লয়ে প্রলয়তিমিরে
চলিয়াছি — বন্ধুগণ হাহাকাররবে
করিছে নিষেধ , নিশাচর গৃধ্র-সবে
করিতেছে অশুভ চীৎকার , পদে পদে
সংকীর্ণ হতেছে পথ, আসন্ন বিপদে
কণ্টকিত কলেবর, তবু দৃঢ়করে
ভয়ংকর স্নেহে বক্ষে বাঁধি লয়ে তোরে
বায়ুবলে অন্ধবেগে বিনাশের গ্রাসে
ছুটিয়া চলেছি মূঢ় মত্ত অট্টহাসে।”

      বস্তুত: অপত্য স্নেহ যে যে অনেক, সুস্থ বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকেও চরম বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারে তা আমরা বারংবার দেখেছি। তাঁরা নিজেরাও সচেতন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বন্ধুরাও তখন হয়ে যান বাধাস্বরূপ – “ বন্ধুগণ হাহাকাররবে / করিছে নিষেধ , নিশাচর গৃধ্র-সবে / করিতেছে অশুভ চীৎকার “!! কিন্তু অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র যেন গীতরত - “আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান”!!

      কিন্তু এই ধৃতরাষ্ট্র কেই দেখি গান্ধারীর সামনে সম্পূর্ণ অন্য রূপে – তিনি সবলে নিজের কুকর্মকে সমর্থন করেন –– যাকে আজকের ভাষায় বলা যেতে পারে – “ Double Standard”। গান্ধারী যখন বলেন,

“ত্যাগ করো , ত্যাগ করো তারে —
কৌরবকল্যাণলক্ষ্মী যার অত্যাচারে
অশ্রুমুখী প্রতীক্ষিছে বিদায়ের ক্ষণ
রাত্রিদিন।”

      তখন ধৃতরাষ্ট্র বলেন -

“ধর্ম তারে করিবে শাসন
ধর্মেরে যে লঙ্ঘন করেছে — আমি পিতা” —

      এই কথাগুলি আমাদের কি খুব পরিচিত মনে হয় না!! - আজকের রাজনীতিবিদরা তো কথায় কথায় বলে থাকেন - “আইন আইনের পথে চলবে। সেখানে ‘পুত্র, মিত্র, ‘স্নেহধন্য,’ - কাউকে দেখা হবে না” !! কিন্তু আমরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জানি, বাস্তব পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম, তখনও আর এখনও। গান্ধারী এখানে ন্যায়ের প্রতীক, - যখন ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করেন - “কি দিবে তোমারে ধর্ম”- গান্ধারীর নিষ্কম্প, অবিচল উত্তর -

“দুঃখ নব নব । ---
ধর্ম নহে সম্পদের হেতু, মহারাজ, নহে সে সুখের ক্ষুদ্র সেতু —
ধর্মেই ধর্মের শেষ । মূঢ়-নারী আমি,
ধর্মকথা তোমারে কী বুঝাইব স্বামী,
জান তো সকলই। "

      তিনি সেই সনাতন বিশ্বাসে অটুট -
      “Ipsa quidem pretium virtus sibi” - অর্থাৎ “Virtue is its own reward.” গান্ধারী একেবারে চলে যান বিচার ব্যবস্থার চূড়ান্ত উত্তরণে - মহত্তম বিচার ব্যবস্থা কি হতে পারে, তাই তিনি তুলে ধরেন সাশ্রু নয়নে -

“প্রভু, দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমানে আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার । যার তরে প্রাণ
কোনো ব্যথা নাহি পায় তার দণ্ডদান
প্রবলের অত্যাচার।”

      এই উদাহরণ আমরা কিছুদিন আগেই দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক সম্মানীয় ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে গিয়ে কান্নায় বেঙে পড়েছিলেন জুরিদল - “আমরা বারংবার বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম যে উনি নির্দোষ কিন্তু প্রমাণগুলো অন্যকথা বলছিল”! কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁকে দণ্ডিত করতে তাঁরা কুণ্ঠিত হননি। আবার নিজেদের সমব্যথা প্রকাশেও তাঁরা লজ্জিত নন। এই সমবেদনার ভাবনা থেকেই আজকের সভ্য সমাজ গড়ে তুলেছে কারাগারের পরিবর্তে সংশোধনাগার যা দণ্ডিত অপরাধীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। কিছুদিন আগেই, পশ্চিমবঙ্গে, পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে যে এই অপরাধীরা পরীক্ষায় সাফল্যের মুখ দেখেছে। এই মানবিক বিচারব্যবস্থা যা অতি উচ্চস্তরের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম, তার আবেদনই গান্ধারী করে গিয়েছেন বহুযুগ পূর্বে।

      বস্তুত: পুনর্পঠনে আমরা দেখতে পাই, “গান্ধারীর আবেদনে” রবীন্দ্রনাথ একেবারে চলে গেছেন রাষ্ট্রব্যবস্থার ভালো আর মন্দ দুই দিকের আলোচনায়। দিক নির্দেশ করেছেন, কিভাবে হতে পারে উত্তরণ আর সাবধান করেছেন একনায়কত্বের বিরুদ্ধে। তিনি হয়তো সচেতন ছিলেনই - “Power corrupts, absolute power corrupts absolutely”! আগামী প্রজন্মের কাছে এই ছিল তাঁর বিশেষ আবেদন। কর্ণ কুন্তী সংবাদেও তিনি কর্ণের মুখে বলেছেন –

“জয়লোভে, যশলোভে, রাজ্য লোভে অয়ি / বীরের সদ্গতি থেকে ভ্রষ্ট নাহি হই”!!

      আমরা শেষ করতে চাই দুর্যোধনের প্রারম্ভিক সম্ভাষণ দিয়ে – তফাৎ দুর্যোধনের সম্বোধনটি ছিল শুধুই আলংকারিক – আমাদের সমাপ্তিটি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাভরে সেই সৃষ্টিকর্তাকে যিনি এক সৃষ্টির মধ্য থেকে আর এক সৃষ্টির উজ্জ্বল উদ্ধার করেছেন –

      “প্রণমি চরণে তাত”!!

     লেখক পরিচিতি - ভাস্কর বসু - জন্ম কলকাতায়, বেড়ে ওঠা দক্ষিন চব্বিশ-পরগনার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলে। ১৯৮৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং পাস করে কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে। শখের মধ্যে অল্প-বিস্তর বাংলাতে লেখা - অল্প কিছু লেখা রবিবাসরীয় আনন্দবাজার, উনিশ-কুড়ি, নির্ণয়, দেশ, ইত্যাদি পত্রিকায় এবং বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিন (সৃষ্টি, অবসর, ইত্যাদিতে) প্রকাশিত।


(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।