হিতোপদেশ
(১)
[এক
কালে হিতোপদেশের খুব চল ছিল, আজকাল বইপত্রে বেশী দেখা যায় না।
মাঝেমধ্যে ইমেইলে এখনও এগুলো পাওয়া যায়। নীচের তিনটি হয়তো কেউ
কেউ তাঁদের মেলবক্সে পেয়ে থাকবেন। ]
একটি কচ্ছপ
পরিবার ঠিক করেছিল পিকনিক করতে যাবে। কচ্ছপদের যা হয় - সব কিছুই
ধীরেসুস্থে। বেশ কয়েকবছর গেল প্ল্যান করতে। তারপর তারা খাবার-দাবার
নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। প্রায় এক বছর হেঁটে একটা পছন্দসই জায়গা পেল।
সেখানে আরাম করে বসে যখন তারা খেতে যাবে, দেখা গেল নুন আনা হয়
নি। নুন ছাড়া খাবার খাওয়া যায়? কিন্তু কে আনবে? শেষে ঠিক হল
সবচেয়ে যে ছোট সে বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে। ছোট প্রবল প্রতিবাদ করল,
শেষমেশ তাকে যেতেই হল। কিন্তু যাবার আগে সবাইকে কথা দিতে হল
যে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত কেউ খাবার ছোঁবে না। এক বছর দুবছর
তিন বছর গেল ছোট কচ্ছপের আর ফেরার নাম নেই। তখন বাবা কচ্ছপ বলল,
আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে আমি আর অপেক্ষা করব না, বলে যেই স্যাণ্ডউইচের
বাক্সটা খুলেছে, একটা গাছের পেছন থেকে সরু গলায় কে চেঁচিয়ে বলল,
আমি ঠিক জানতাম - তোমরা আমার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না,
আমি কখনোই নুন আনতে যাবো না।
ছোট কচ্ছপ বাড়িতে না গিয়ে
এতক্ষণ গাছের পেছনে লুকিয়ে ছিল।
[অন্যেরা
তাদের কর্তব্য পালন কিনা দেখতে - আমরা নিজেদের কর্তব্য পালন
করতেই ভুলে যাই]
ফরাসী দেশের এক কৃষক একটা
রেস্টুরেণ্টে এসে জানতে চাইল, তারা ব্যাং-এর ঠ্যাং চায় কিনা
- চাইলে লাখ দুয়েক ঠ্যাং নামমাত্র দামে কৃষক তাদের এনে দিতে
পারে।
রেস্টুরেণ্টের মালিক কথাটা শুনে অবাক। নিশ্চয় এক বছরে তাদের
তাদের অতগুলোই লাগে, কিন্তু এই কৃষক কোত্থেকে এতগুলো ব্যাং পাবে!
এতগুলো ঠ্যাং তুমি সাপ্লাই করতে পারবে?
সেটা তুমি ভেবো না, কৃষকটি বলল। আমার বাড়ির পুকুরে কম সে কম
লাখ দুয়েক ব্যাং আছে - তাদের আওয়াজে আমি অতিষ্ঠ।
ঠিক আছে, প্রতিদিন তুমি দুশোটা করে নিয়ে এসো, আমি কিনে নেবো।
কিন্তু বাজার দামের অর্ধেক পাবে।
কৃষক তাতে রাজি হল।
পর দিন কৃষক মাত্র দুটো
রোগা ব্যাং হাতে করে নিয়ে এলো।
বাকি একশো আটানব্বইটা কোথায়?|
আমার ভুল হয়েছে, কৃষক, বলল। এই দুটোই এত চ্যাঁচাতো , আমার মনে
হত লাখ দুয়েক ব্যাং আছে।
[এরপর
কেউ যদি আপনাকে গালিগালাজ করে হেনস্থা করে, আপনার কাজের কঠোর
সমালোচনা করে, আপনি বিচলিত হবেন না। সম্ভবত সে ঐ গোটা দুই ব্যাং-এর
একটি। আসলে অন্ধকারে ছোটোখাটো সমস্যাও ভীষণ বড় হয়ে দেখা দেয়।
তার জেরে রাত্রে আমরা চিন্তায় চিন্তায় ঘুমোতে পারি না। সকলে
উঠে দেখি অত চিন্তা না করলেও বোধহয় চলত।]
হিমালয়ের পথে এক গুরু
তাঁর চ্যালাকে নিয়ে হাঁটছিলেন। পথে একটা পাহাড়ি নদী - যার ব্রিজটা
ভেঙ্গে গেছে। একটি সুন্দরী মহিলা পারে আটকা পড়ে আছেন। গুরু সেই
মহিলাকে বললেন যে, তিনি ওঁকে কাঁধে নিয়ে পার করে দিতে পারেন।
মহিলা রাজি হলেন। গুরু তখন তাঁকে কাঁধে নিয়ে নদী পার করে দিলেন।
সমস্ত ব্যাপারটা শিষ্যের পছন্দ হল না। তিনি গুরুকে বললেন, এটা
কি করলেন আপনি, আমাদের স্ত্রীলোকের সংস্পর্শ ত্যাগ করা উচিত,
আর আপনি ঐ সুন্দরী মহিলাকে স্পর্শ করলেন!
গুরুদেব উত্তর দিলেন না, কিন্তু শিষ্য মনে মনে গজগজ করতে থাকলেন।
মাইল দুয়েক চলার পর ওঁরা দুজনে যখন একটা গাছতলায় বসে বিশ্রাম
করছেন, শিষ্য আবার ওই সুন্দরী মহিলার প্রসঙ্গ তুলে গুরুকে বললেন,
তিনি যদি এইভাবে সুন্দরী মহিলাকে স্পর্শ করেন, তাহলে ওঁর শিষ্যদের
কি শিক্ষা দেবেন?
গুরু একটু চুপ করে থেকে বললেন, বৎস, আমি দুমাইল দূরে মহিলাকে
ফেলে রেখে দিয়ে এসেছি, কিন্তু তুমি এখনো তাঁকে বয়ে বেড়াচ্ছ।
[জীবনে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
অসন্তোষজনক ঘটনা ঘটে সেগুলো ভুলতে পারা একটা ক্ষমতা। জিয়িয়ে
রাখলে শুধু শুধুই কষ্ট পেতে হয় - অকারণে। ]