বিবিধ
প্রসঙ্গ: ছোট ছেলেমেয়ে এবং ইণ্টারনেট
আমাদের দেশের
ছোটরা অনেকেই কম্পিউটারের ব্যবহার শিখছে। তাদের দাদু-দিদাদের
কথা ছেড়ে দিলাম, বাবা মায়েদের চেয়ে কম্পিউটারের সঙ্গে অনেকে
বেশী পরিচিত। এবার কলকাতায় এসে অনেক দাদু-দিদা এবং বাবা মাকে
গর্ব করতে শুনেছি আমার নাতি/নাতনী বা ছেলেমেয়েরা খুব ইণ্টারনেট
জানে । এতে আমাদের অখুশি হবার কারণ নেই - বিশেষ করে আমরা যারা
বাংলা তথ্যের ওয়েবসাইট চালাচ্ছি । ছোটদের কাছে ইণ্টারনেট জ্ঞানের
একটা মস্ত উৎস । এখানে এনসাইক্লোপেডিয়া আছে, জ্ঞানবিজ্ঞানের
বিভিন্ন সাইট আছে, ইণ্টার-অ্যাক্টিভ বুদ্ধির খেলায় অংশগ্রহণ
করার সুযোগ আছে আছে - কি এখানে নেই! কিন্তু সেই সব ভালো ভালো
সাইটগুলি খুঁজে বার করা এবং সেখানে তাদের ঢুকতে সাহায্য করার
ব্যাপারে বড়দের ভূমিকা আছে । ছোটদের হাতে সেসব খুঁজে বার করার
ভার ছেড়ে দিলে সমস্যা হতে পারে । ছোটরা যখন টাইপ করে সার্চ করতে
শেখে, তখন বড়দের সতর্ক হবার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে । kids টাইপ করতে
গিয়ে যদি ভুল বোতাম-টিপে kiss টাইপ করে ছবি সার্চ করে, সেক্ষেত্রে
ফিল্টার না থাকলে বহু পর্নোগ্রাফিক ছবি মনিটরে চলে আসতে পারে!
এইজন্যেই বাচ্চারা যখন ইণ্টারনেটে আছে - তখন তারা কি করছে, তা
নজরে রাখা প্রয়োজন। আর প্রয়োজন ছোটদের ইণ্টারনেটের ব্যাপারে
কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার সে ব্যাপারে অবহিত করা। এটা
বিরাট কোনও ব্যাপার নয় । ছোটদের বাবা মা-রা অনেক কিছুই শেখান,
যেমন, অপরিচিত লোক ডাকলে না যেতে, অচেনা বা অল্প চেনা লোকেদের
দেওয়া মিষ্টি বা খাবার না খেতে । বাড়িতে কাছাকাছি বড় কেউ না
থাকলে অচেনা লোককে দরজা না খুলে দিতে । সেই ভাবেই ইণ্টারনেট-এর
কতগুলি বিষয়ে ছোটদের বুঝিয়ে বলা দরকার ।
অনেক দেশে ইণ্টারনেট সেফটি
আইন চালু হয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ফেডারেল আইন সৃষ্টি
করা হয়েছে শিশুদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড় করার ব্যাপারে।
আইনটির নাম Children's
online Privacy Protection act (COPPA) । এই আইন
অনুসারে বাবা- মা'র সম্মতি ছাড়া ছোটদের কাছ থেকে কোনও ব্যক্তিগত
তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না । COPPA-র
নির্দেশে শিশুদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার আগে গোপনীয়তা রক্ষার
ব্যাপারে তাদের কি নীতি সেটা জানাতে হবে । ছোটদের নাম, ঠিকানা,
ফোন নম্বর, সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর ইত্যাদি চাইলে, বা-মা'র
অনুমতি নিতে হবে । এ ছাড়াও যে তথ্যটুকু না পেলেই নয় (খেলা বা
কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে), শুধু সেটুকুই ওয়েবসাইটের
চাইবার অধিকার থাকবে ।
আইন যাই থাক, ওয়েবসাইটের
নিয়মকানুন যাই থাকুক, ছোটদের ইণ্টারনেটের অশুভ দিকগুলি থেকে
রক্ষা করার দায়িত্ব বড়দেরই ।
অনলাইন প্রোটেকশন টুল
কিছু কিছু সফটওয়্যার আছে
যেগুলির কাজ প্রাপ্তবয়স্কদের সাইটগুলি থেকে ছোটদের রক্ষা করা
। কিন্তু সেগুলি সব সময় তা করতে সক্ষম হয় না। কিছু কিছু ইণ্টারনেট
সার্ভিস প্রোভাইডার পর্নোগ্রাফিক সাইট আটকানোর কতগুলি উপায় দেয়
। সেগুলিও সব সময়ে কাজ করে না । কিছু ফিল্টারিং প্রোগ্রাম আছে
- যেগুলি ব্যক্তিগত তথ্য আদান প্রদানে বাধা দেয় । কিন্তু কোনটার
উপরেই পুরোপুরি ভরসা করা যায় না।
ছোটদের কম্পিউটারের অশুভ
দিক থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে -
নিজে কম্পিউটারের ব্যবহার
শেখা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কোনও সাইট চলে এলে - সেটাকে কি করে বন্ধ
করা যায় তা জানা ।
- কম্পিউটারকে এমন একটি
জায়গায়ে রাখা যেখানে সবাই যাতায়াত করছে । কিছু বাজে জিনিস
মনিটারে এলে - সেটা বড়দের চোখে পড়বে ।
- ছোটদের ইমেল-অ্যাকাউণ্ট
শেয়ার করা - যাতে কোন বাজে ইমেল এলে সেটাকে নষ্ট করা এবং কি
ধরণের ইমেল চালাচালি হচ্ছে সেটা নজর রাখা ।
- ছোটদের প্রিয় এবং উপযুক্ত
সাইটগুলি বুকমার্ক করা বা ফেভারিটে রাখা, যাতে চট করে ক্লিক
করে তারা সেই সাইটে যেতে পারে ।
- ছোটদের প্রাইভেট চ্যাটরুমে
ঢোকা নিষিদ্ধ করা। ইণ্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের দেওয়া সেফটি
ফিচার ব্যবহার করে সেই সাইটগুলি ব্লক করা। মনে রাখবেন কোন
মেসেজ চ্যাটরুমে দেওয়া মানে ইমেলে অ্যাড্রেস অন্যেরা জানবে
।
- কমবয়সী বাচ্চাদের সোশ্যাল
ওয়েবসাইটে ঢুকতে বারণ করা । (সোশ্যাল ওয়েবসাইটগুলিতে যোগদান
করতে বয়সের একটা নিম্নসীমা থাকে (যেমন ফেসবুক-এ ১৩ বছর), কিন্তু
সেখানে মিথ্যে কথা বলে যোগদান করা সম্ভব। অনেক কমবয়সী ছেলেমেয়েরা
সেটা করে। হয় বাবা মা'র অজ্ঞাতে, অথবা বাবা মা'র এ ব্যাপারে
অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে। এগুলো ছোটদের কাছে একটা নেশার মত - প্রচুর
সময় নষ্ট হওয়া ছাড়াও আজেবাজে লোকদের খপ্পরে পড়ার একটা সম্ভাবনা
থাকে ।)
এ ছাড়া -
- আপনার ক্রেডিট কার্ড
স্টেটমেণ্ট মন দিয়ে দেখবেন, সেখানে অসঙ্গতি দেখতে পান কিনা
।
- আপনার ছেলেমেয়েরা অন্য
জায়গায় গিয়েও কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে, সুতরাং এর কুফল
সম্পর্কে নিজে ভালো করে জানুন, এবং বাচ্চাদের বোঝান ।
- বাচ্চারা যদি ইণ্টারনেটে
কিছু ঘটেছে বলে আপনাকে জানান, মন দিয়ে শুনুন - ব্যাপারটা শঙ্কাজনক
হতে পারে ।
.
কতগুলো
প্রয়োজনীয় বিধি -
- ছোটদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত
ছবি ইণ্টারনেটে না তোলাই যুক্তিযুক্ত ।
- ব্যক্তিগত তথ্য - ঠিকানা,
ফোন নম্বর, স্কুলের নাম ঠিকানা ইত্যাদি ইণ্টারনেটে কাউকে না
জানানো । নিজের নামের বদলে অন্য একটা নাম ব্যবহার করা ।
- চ্যাটরুমে না ঢোকা ।
কেউ যদি একান্তই ঢোকে তাকে বলা চ্যাটরুমের বাইরে কারোর সঙ্গে
দেখা না করা ।
- কোন ভয়াবহ কথা চ্যাটরুমে
বা ইমেল-এর পেলে সেটা বাবা- মাকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো ।
.
চ্যাটরুম বা আড্ডাঘরের সাবধানতা -
চ্যাটরুম হল অনলাইন আড্ডাখানা।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারণত চ্যাটরুম সৃষ্টি করা হয় - যেমন,
সিনেমা, খেলা, ফ্যাশন, ইত্যাদি নিয়ে। এই আড্ডায় অনলাইনে অপরিচিত
নানা জনের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যায়। চ্যাট রুম কম বয়সীছেলে মেয়েদের
আড্ডা দেবার একটা বড় গন্তব্যস্থল ।
এই চ্যাটরুম আবার বাচ্চাদের
পক্ষে বিপদজনক জায়গা। অনেক পেডফাইল বা বিকৃতমনা বয়স্ক লোক
যারা ছোটদের যৌনভাবে কামনা করে - তারা এতে যোগ দেয়। এইসব খারাপ
লোক চ্যাটরুমে আড্ডা দেবার সুযোগে ছোটদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ
করে - যার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। এইসব লোকেরা আবার নিজেদের
ছোট বলে পরিচয় দেয় । সরল বিশ্বাসী ছেলেমেয়েদের মনে তাদের প্রতি
কোনো সন্দেহ জাগে না ।
যদি কোন বাচ্চাকে অনলাইনে
অনেক সময় কাটাতে দেখা যায়, বা অচেনা লোকের থেকে তাদের কাছ
ফোন আসে বা কোন উপহার আসে, তাহলে চিন্তার কথা । চিন্তার কথা,
যদি বড়দের দেখলেই ছোটরা কম্পিউটার চট করে বন্ধ করে দেয়। এরকম
কিছু ঘটে থাকলে সতর্ক হোন। বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন। দরকার
হলে সাইবার ক্রাইমের অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
.