মতামতঃ
নার্সদের পোষাক
এই সময়’-এর
একটা সংবাদ থেকে জানলাম, স্বাস্থ্য দপ্তর নার্সদের পোষাক বদলানোর
কথা ভাবছে।
বেডের অভাবে অনেক
সরকারী হাসপাতালে রোগীর মেঝে শুয়ে থাকেন । সাদা গাউন (যা হাঁটুর
নীচে খুব একটা নামে না) পরে নার্সরা রোগীদের কাছে এলে তাঁদের
পায়ের অনেকটা অংশ চোখে পড়ে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । তাই রোগীদের
লোলুপ দৃষ্টি থেকে কম বয়সী নার্সদের শরীর আড়াল করতে গোড়ালি পর্যন্ত
নেমে আসা সালোয়ার পরানোর কথা ভাবছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
আমার ধারণা ছিল এদেশে নার্সরা চাইলে শাড়ী পরতে পারেন । তবে শাড়ী
পরার চল আজকাল উঠে যাচ্ছে, সেইজন্যেই মনে হয় সালোয়ার পরার ব্যাপারটা
বিবেচনা করা হচ্ছে । এই প্রসঙ্গে আমার বিনীত নিবেদন সালোয়ার
ছাড়াও এই সমস্যার সমাধান অন্য ভাবে করা যেতে পারে । যেমন,
(১) মেঝেতে শুয়ে থাকা রোগীদের চোখ বেঁধে রাখা, যাতে তাঁরা দেখতে
না পান,
(২) রোগীদের মাটিতে না শুইয়ে পা-লাগানো বেডে শোয়ানো - বেসরকারী
হাসপাতালে যে-ভাবে রোগীরা শোয়।
(৩) নার্সদের শরীর, মাথা থেকে পা পর্যন্ত যতটা সম্ভব ঢেকে রাখা।
যদ্দুর জানি, বোরখা পরানোর কথা এখনো স্বাস্থ্য দপ্তরের চিন্তা
ভাবনায় নেই। কিন্তু ওটাকেও রাখতে হবে। যেমন রোগ, তেমনই দাওয়াই।
আমার পছন্দ
হল ১ নম্বর । চোখ বাঁধা থাকলে নার্স বা ডাক্তার কাউকেই রোগীরা
দেখতে পাবেন না, পোষাক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সত্যিকথা বলতে
কি, নার্স বা ডাক্তার সময়মত আসছেন কি না বা ঠিকমত দেখভাল করছেন
কি না – তাও রোগীরা ঠাহর করতে পারবেন না। আত্মীয়বন্ধুরা দেখতে
এলে, চ্যাঁচামেঁচি করে তাঁদের কাছে কমপ্লেন করতে পারবেন না।
নার্স বা ডাক্তারদের ঠ্যাঙানি খাওয়ার সম্ভাবনা কমবে, হাসপাতালের
আবহাওয়াটা শান্তিপূর্ণ থাকবে। এই ১ নম্বর সমাধানটি মনে হয় ডাক্তার,
নার্স ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। রোগীরা
হয়তো এতে আপত্তি তুলবেন। তবে তাঁদের বোঝাতে হবে হাসপাতালগুলির
যা অবস্থা, তাতে আশে পাশে কি ঘটছে – সে ব্যাপারে অজ্ঞ থাকাটা
মন্দ নয় – ignorance is bliss। এগুলো বলছি ঠিকই, কিন্তু মন বলছে
এই দাওয়াই সরকার বা জনগণ – কারোরই অনুমোদন পাবে না।
অর্থাভাবে
২ নম্বরটি হয়তো করা হয়ে উঠবে না, করা গেলে সাদা গাউনকে রক্ষা
করা যেত। তবে মূল সমস্যার সমাধান হত না। । আমাদের দেশে পুরুষদের
যে রকম স্বভাব-চরিত্র, তাতে লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া শুধু
পা ঢেকে পাওয়া যাবে না। সত্যিকথা বলতে কি, এর সমাধান করতে গেলে
লাগবে জনশিক্ষা । পুরুষরা নিজেরা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে না
- সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। অর্থাৎ সমগ্র পুরুষজাতির চরিত্র-সংশোধনের
গুরুদায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। এই চরিত্র তো রাতারাতি গড়ে ওঠে
নি, জেনারেশন ধরে চলে আসছে। নারী-বিদ্বেষ ত্যাগ, নারীদের সেক্স-টয়
না মনে করা, জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি – এগুলো ক্লাসে কি ভাবে শেখানো
যাবে? কোর্স সিলেবাস না হয় বোদ্ধাদের দিয়ে তৈরী করা গেল, কিন্তু
কোটি কোটি পুরুষদের জন্যে অত ক্লাসরুম কোথায় পাওয়া যাবে? শিক্ষক
মিলবে কোথায়? কেন্দ্রের সাহায্য কি পাওয়া যাবে?
তাহলে কি
৩ নম্বরই আমাদের ভরসা? বাড়ির চার দেয়ালের গণ্ডী থেকে যদি বা
নার্সরা বেরোতে পারলেন, তাও সেই বস্ত্রের আড়ালে লুকিয়েই তাঁদের
কাজ করতে হবে? আর কি কোনও উপায়ই নেই?
আমার মনে
হয় উপায় একটা আছে, আর সেটাই মোক্ষম উপায় - নার্সিং ট্রেনিং-এ
করাটে বা মার্শাল আর্ট শেখানো । সেক্ষেত্রে কোনও কিছুরই দরকার
নেই । পুরুষ রোগী একটু বেচাল হলেই বোঁ করে ঘুরে গিয়ে একটা ফ্লাইং
কিক মারা, বা যুযুৎসু প্যাঁচে পটকে দেওয়া । শুধু নার্সিং কোর্সে
কেন, স্কুল কলেজে সব জায়গাতেই এই ধরণের কোর্স আবশ্যিক করা যেতে
পারে । পুরুষরা শক্তের ভক্ত । দু-একটা রদ্দা আর লাথি খেলেই শায়েস্তা
হয়ে যাবে । মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে এক জেনারেশানেই । কর্তৃপক্ষকে
অনুরোধ নার্সদের দিয়েই এই এক্সপেরিমেন্টটা শুরু করা হোক । এখানেই
সফলতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী, কারণ হাসপাতালে ঢুকলে পুরুষদের
তেজ একটু কমের দিকে থাকে।
বাপি
দে
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)