প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ: অথ অহিফেন কথা

আজকাল আফিং এর কথা উঠলেই প্রথমে মনে পড়ে আফগানিস্তানের কথা, তারপর প্রাচ্যের Golden Crescent । কিন্তু গাজীপুরের নাম মনে আসে না। উত্তরপ্রদেশের গাজীপুর, কাশী এবং সারনাথের অনতিদূরে, প্রায় বিহারের সীমান্তে। ১৮৫৭ সালে এখান থেকেই মঙ্গল পাণ্ডের যাত্রা শুরু (সিপাহী বিদ্রোহ)। পৌরাণিক যুগে, এখানেই নাকি ছিল পরশুরামের পিতা জামদগ্নি মুনির আশ্রম। কারো কারো মতে এই গাজীপুরই রাজর্ষি বিশ্বামিত্রের রাজধানী। আর আজ, এখানে বিশ্বের বৃহত্তম আফিং এর কারখানা – অবশ্যই ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রাধিন এবং United Nation অনুমোদিত। ১৮২০ সালে এই কারখানার পত্তন – East India Company’র প্রধানতম আয়ের উৎস। ব্রিটিশ রাজের অনুমোদনের কথা উহ্য রাখাই ভালো। বিহার এবং বাংলার চাষের ফলন এই কারখানায় আসতো। এর পরিশোধিত পণ্য বিশ্বের বাজারে Bengal Opium নামে খ্যাত ছিল।

উনবিংশ শতাব্দীর আফিং ব্যবসায়ের কিছু তথ্য পরিবেশনই এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।

কবে থেকে ভারতে আফিং এর প্রচলন তা সঠিক ভাবে বলা কঠিন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আফিং এর উপস্থিতি প্রায় গোড়া থেকেই। উদরের পীড়া এবং শারীরিক বেদনা নিরাময়ে আফিং এর প্রয়োগের নিদর্শন প্রাচীন গ্রন্থে দেখা যায়। বেদ ও পুরাণের সোমরস আফিং কি না – তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সংস্কৃতে সোম মানে চাঁদ – রাতে কন্দ থেকে রস ক্ষরণের পরিপ্রেক্ষিতে আফিং এর এই নামকরণ। আবার অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, অ্যালেক্সান্ডারের ভারত আক্রমণের পর গ্রীকদের মারফৎ Anatolia থেকে ভারতে আফিং এর আমদানি।

মাদক দ্রব্য হিসেবেই আফিঙের প্রচলন বেশী চিরকালই। ভারতে নেশার জন্য আফিং খাওয়া, ধূমপান না। বাংলায় “ গুলিখোর” কথাটা আফিং সেবীকেই বোঝায় – অবশ্যই কটু অর্থে। বঙ্কিমের আনন্দমঠে আমরা পাই – “ বাংলার নবাব মীরজাফর গুলি খায় আর ঘুমায় “ – ‘৭৬’র মন্বন্তরের বর্ণনা প্রসঙ্গে। পাঠান ও মোগল আমলের লেখা থেকে সুরাপানের মতোই আফিং সেবনের বিবরণ সমাজের সব স্তরেই দেখা যায়। তবে বোধহয় ব্যাপক ছিল না। পর্তুগীজ ও ওলন্দাজদের আগমনের পর তামাক ধূমপান ভারতে চালু হয়। মোগল আমলে ওলন্দাজদের কাছ থেকেই নেশার জন্য আফিং মিশ্রিত তামাকের ধূমপান প্রথমে সম্ভ্রান্ত সম্প্রদায়ে, পরে সমাজের সব স্তরে ছড়িয়ে পরে। পুরনো আমলের তৈলচিত্রে যে আলবোলায় ধূমপানের ছবি দেখা যায়, তার বেশীরভাগই এই আফিং মিশ্রিত তামাক সেবন। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের এই দুর্বলতা সুবিদিত। মোগল আমলে ও তার পর থেকে সমাজের সম্ভ্রান্ত শ্রেণীতে এই আফিং মেশানো তামাকের ধূমপান পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই বেশ কায়েমি হয়ে ওঠে। সমাজের চোখে এটা নিন্দনীয় ছিল না ।

আরব বণিকদের সুরাট বন্দর থেকে আফিং রপ্তানি, খৃস্টীয় নবম শতাব্দী থেকেই চালু ছিল। সেই রপ্তানি ছিল ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলিতে আর চীনে। ভারত থেকে ব্যাপক হারে আফিঙের রপ্তানি শুরু করে পর্তুগীজ আর ওলন্দাজরা, খৃস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে। ওলন্দাজদের প্রধান রপ্তানি ছিল ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলিতে। বাতাভিয়া ( বর্তমানের জাকার্তা) আফিঙের প্রধান কেন্দ্র। এখান থেকেই প্রাচ্যের অন্যান্য দেশে আফিং বিক্রয় হতো। ওলন্দাজরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আফিং কিনত। বাংলার চন্দননগর ওলন্দাজদের পূর্বাঞ্চলের ঘাটি – শুধু কাঁচামাল কেনার জন্য। রপ্তানি হতো ভারতের পশ্চিমাঞ্চল থেকে। কিছু কিছু নথিপত্রে বাতাভিয়া থেকে চীনে ওলন্দাজদের আফিং ব্যবসার কথার উল্লেখ আছে । চীনে যে আফিং ধূমপানের ব্যাপক প্রচলন, তা অনেকের মতেই এই ওলন্দাজদের অবদান। পলাশী যুদ্ধের পর বাংলায় ইংরেজ আধিপত্য কায়েমি হওয়ার পর থেকেই ওলন্দাজদের এই ব্যবসার অবসান।

ওলন্দাজের পর এলো পর্তুগীজরা। এরাই প্রথম ভারত থেকে আফিং চীনে রপ্তানি সুরু করে – সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে। পুবে চট্টগ্রাম আর পশ্চিমে দমন, পর্তুগীজদের প্রধান আফিং রপ্তানি কেন্দ্র। পর্তুগীজদের রপ্তানি কেন্দ্র ছিল Macao দ্বীপ – মুল চীন ভূখণ্ডে নয়। পর্তুগীজরা প্রথমে বাংলা ও বিহার থেকেই আফিং কিনত। পরে তা মধ্য ও পশ্চিম ভারত থেকেই যোগার হোতো।.

চীনে আফিং রপ্তানিতে সবথেকে বড় নাম East India Company। ভারতে আধিপত্যের আগে থেকেই তাদের এই ব্যবসা। মুল ব্যবসা – চীন থেকে চা ইংল্যান্ডে আমদানি ও ভারত থেকে আফিং চীনে রপ্তানি। এই ব্যবসা শুরু অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে। কোম্পানি আফিং কিনত বাংলা ও বিহার থেকে – রপ্তানি হত মাদ্রাজ থেকে।

আমেরিকানরাও চীনে আফিং রপ্তানিতে পিছিয়ে ছিল না। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে আমেরিকানদের আফিং ব্যবসায়ে প্রবেশ। এরা আফিং কিনত তুর্কী (Turkey) এবং গ্রীস (Greece) থেকে । অনেক বড় বড় লোকের নাম এই ব্যবসায়ে জড়িত। প্রথমেই নাম করতে হয় John Jacob Astor – নিউ ইয়র্কের জমিদার। ইনি অবশ্য মাত্র পাঁচ বছর এই ব্যবসায়ে ছিলেন। ১৮২০ সাল থেকে Russel & Co. আমেরিকান ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রধান। Connecticut এবং নিউ ইয়র্ক ছিল আমেরিকান ব্যবসার কেন্দ্র।
পলাশী যুদ্ধের পর Warren Hastingsএর আমলে বাংলা ও বিহারের আফিং চাষ ও
পরিশোধন পুরোপুরি East India Company’র দখলে চলে আসে। গোড়ার দিকে কোম্পানি নিজেই কলকাতা থেকে আফিং চালান করতো। চীনের বাজারে এই আফিং Bengal Opium নামে বিক্রি হত, যদিও এর উৎপত্তিস্থল গাজীপুর।

১৭৯৯ সালে চীনের কিং সম্রাট সারা দেশে আফিং উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আফিং এর চালান পুরোপুরি বে আইনি বলে ঘোষিত হয়। কিন্তু শাসনতন্ত্রের ব্যাপক অসাধুতায় এই আইন কার্যকরী করা যায়নি। এই আইনের জন্য বা অন্য কোনও কারণে কি না, উনবিংশ শতাব্দীতে, চাহিদা কমার বদলে বেরে যায়। অভিজাতদের (Mandarin) এক শ্রেণী আফিঙের বেআইনি ব্যবসায়ে নেমে পরে। এই সূত্রে বলে রাখা দরকার যে, যদিও চীনে বহুকাল ধরে বিদেশী জিনিশের আমদানি ছিল, কিন্তু দেশের সব নৌ বন্দরে বিদেশি জাহাজ ঢোকার অনুমতি ছিল না। Hong নামে এক Middleman ব্যবসায়ীরা পণ্য বিদেশি জাহাজ থেকে কিনে দেশের অভ্যন্তরে চালান করত। এই Hong সম্প্রদায়ের সবাই Mandarin – প্রচুর লোকবল আর ক্ষমতার অধিকারী। চীনের দক্ষিণের Canton বিদেশি পণ্যের বর কেন্দ্র। বেশির ভাগ বিদেশি জাহাজের মাল এই Canton বন্দরে বিক্রি হত। আর একটা বড় বিক্রয় কেন্দ্র ছিল পর্তুগীজদের Macao.। আফিঙের সব জাহাজের কেনা – বেচা তাই এই Canton আর Macao বন্দরে হতো – Hong ব্যবসায়ী মারফৎ আফিং দেশের মধ্যে চালান – প্রকাশ্য smuggling।

এই কারণে East India Company চীনে সরাসরি আফিং রপ্তানির ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসে। ১৮১০ সাল থেকে কোম্পানির আফিং কলকাতায় নিলাম হতো – ব্যবসায়ীরা কিনে, নিজেদের জাহাজে বা ভারা করা জাহাজে চিনে চালান দিতো। কোম্পানির লাভের অংশ বিন্দুমাত্র কমলো না – অথচ বেআইনি ব্যবসায়ের ঝুঁকিও রইল না। বিলেতে shareholder রা খুশী। এই আফিং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম – Dent & Co আর Jardine, Matheson & co.। Thomas Dent, ১৮২০ সালে Canton শহরে হাজির হন আর দুবছরের মধ্যে নিজের কোম্পানি চালু করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই এই কোম্পানি প্রভূত ঐশ্বর্যের মালিক হয়। এর প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি Jardine Matheson। William Jardine আর James Matheson এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানি সুরু হয় আফিং ব্যবসা দিয়ে – পরে অবশ্য নানা দিকে ছড়িয়ে পরে। প্রথমে Canton, পরে Hongkong আর Singapore ব্যবসার কেন্দ্র।
এই আফিং ব্যবসা যদিও বিদেশীদের দিয়ে সুরু, ভারতীয়রাও কিছুদিনের মধ্যেই এই খেলার মাঠে নেবে পরে। আফিং ব্যবসার গোরার দিকে East India Company আর ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরাই ভারতে উৎপাদিত আফিঙের একচেটিয়া চালানদার ছিল। ১৮০৫/১৮১০ সাল নাগাদ চিনের বাজারে ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের সুরাত, গোয়া, দমন ও বোম্বাই থেকে আফিং আমদানি দেখা যায়। এই পণ্য Malwa Opium নামে পরিচিত আর চাহিদা Bengal Opium থেকে কিছু অংশে কম নয়। পশ্চিম মধ্য প্রদেশ আর দক্ষিণপূর্ব রাজস্থান নিয়ে পুরনো দিনের মালব অঞ্চল। এখানেই ছিল অবন্তী জনপদ, আর উজ্জয়িনি – কালিদাস, আরজ্যভত্ত ও বরাহ মিহিরের বাস। আর পরের যুগে, এখানেই বাংলা আর বিহারের মতই ব্যাপক আফিং চাস। ইংরেজ আমলে বাংলার আফিঙের নাগাল যখন পর্তুগীজদের হাত থেকে বেরিয়ে গেল, তখন তারা এই মালব অঞ্চল থেকে আফিং সংগ্রহ সুরু করে। গোয়া, দমন আর সুরাট থেকে চালান হত নিজেদের Macao ঘাঁটিতে আর সেখান থেকে স্থানীয় Mandarin মারফৎ চীনের অভ্যন্তরে পৌঁছুত। পর্তুগীজদের Roger de Faria এই Malwa Opium চালানের পথিকৃৎ। পরে নামকরে Pereira & Co।

এই পর্তুগীজদের দেখেই ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের বনিক শ্রেণী এই ব্যবসায় নেমে পরে। পার্শি, মাড়ওয়ারি, গুজরাটি বানিয়া ও কঙ্কণী মুসলিমরাই ভারতীয় আফিং কারবারি। বোম্বাই থেকে প্রথম তাদের সুরু। বোম্বাই বন্দর ইংরেজ কোম্পানির অধিকারে থাকায়, কিছুদিনের মধ্যেই বোম্বাই থেকে ভারতীয়দের আফিঙের জাহাজ চলচল বন্ধ হয়ে জায়। তখন আফিং রপ্তানি হত সুরাত আর দমন থেকে। মধ্য প্রদেশ আর রাজস্থান থেকে আফিং পৌঁছুত করাচী বন্দরে, সেখান থেকে অন্য পণ্যের সাথে জলপথে আসত সুরাট বা দমনে। সেখান থেকে Canton । উনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই ভারতীয়দের এই ব্যবসায়ে দেখা যায়। ইংরেজ কোম্পানি এই প্রচেষ্টা বন্ধের জন্য উঠেপড়ে লেগে পরে। প্রথমেই Malwa Opium এর চাষ বন্ধ করার চেষ্টা। কিন্তু বেশির ভাগ চাষ হতো দেশীও রাজ্যের এলাকায়, যা তখনও ইংরেজ অধিকারে আসে নি। রাজারা আয়ের পথ বন্ধ করতে কিছুতেই রাজি না আর কোম্পানিও ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্কে রাজাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে নি। তাই চাষ অব্যাহত রইল। এদিকে বোম্বাই থেকে জাহাজ চলাচল কমতে থাকায় কোম্পানির মাসুলও কমতে থাকে। ফলে ভারতীয়দের আফিং বোঝাই জাহাজ আবার বোম্বাই থেকে চলার অনুমতি পায়। ভারতীয়দের এই ব্যবসা থেকে না হাটাতে পারায়, ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা এবার ভারতীয়দের সাথে হাত মেলায়। ১৮২০ সাল নাগাদ Malwa Opium কলকাতার নিলামে বিক্রি হওয়া আরম্ভ হয়।

ভারতীয়দের মধ্যে কে এই ব্যবসায়ে পথিকৃৎ বলা মুশকিল। প্রধানদের মধ্যে প্রথমেই নাম করতে হয় Sir Jamshedji JeeJeebhoy.। ১৮০৫ / ১৮১০ সালের নথিপত্রে এর নাম আছে। পরে ইনি Jardine কোম্পানির সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসা চালান। এর পর নাম আসে – Morichand Aminchand, Hormasji Dorabji, Nagrdass Mody, Madowdass Ransordass, Cursetji Bomanji, Cursetji Ardaseer, Framjee Cowasjee, Mohammed Ali Rogay.। Wadia, যিনি বোম্বাই জাহাজ নির্মাণ কারখানা চালু করেন, তার বংশধররা এই ব্যবসায়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করে। (এই সূত্রে, আমেরিকান জাতিয় সঙ্গীত Star Sprangled Banner, Wadia নির্মিত এক ব্রিটিশ জাহাজে লেখা হয়। ) আর একটা বড় নাম David Sassoon –যার নামে আজ বোম্বাই শহরে David Sassoon Library আর Sassoon Dock। ইনি ইহুদি, ইরাক থেকে বোম্বাই আসেন। এর আট পুত্র – সবাই আফিং ব্যবসায়ে যুক্ত। এই পরিবারের সবাই পরে ইংল্যান্ডে বসবাসী হয়। টাটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা Jamshedji Tataও এই কুখ্যাত ব্যবসায়ে লিপ্ত ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, টাটার ষ্টীল কোম্পানি গড়ার মূলধন এই আফিং ব্যবসা থেকে রোজগার। প্রথম Opium War এর আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮৪০ সাল অবধি নথিপত্রে ১২০ জন ভারতীয় ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া যায়, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই পার্শি সম্প্রদায়ের।

এরপরের কাহিনী আজকের যুগে খুবই লজ্জাজনক। আফিঙের নেশায় বুঁদ হয়ে যখন সারা দেশ রসাতলে যেতে বসেছে, তখন চীন সম্রাট Dao Guang এই ব্যবসা সমূলে উচ্ছেদের প্রচেষ্টায় নামেন। Lin Zexu নামে এক Manadarin এই কাজে নিযুক্ত হয়। ঘটনার কাল ১৮৩৯ সাল। Lin প্রথমে এক সাবধান বার্তা Canton এর সব বিদেশিদের পাঠায় আর অবিলম্বে বন্দরের সব বিদেশি জাহাজের আফিং সরকারের হাতে জমা দিতে বলে। বিদেশি বনিক সম্প্রদায় Lin এর হুমকিতে গুরুত্ব না দিয়ে নিশ্চেষ্ট থাকে। প্রথমে যে যে Mandarin এই আফিং ব্যবসায় জড়িত, সবাই গ্রেপ্তার হয়। তারপর Canton বন্দরের সমস্ত গুদাম তল্লাশি হয় ও সঞ্চিত আফিং বাজেয়াপ্ত হয়। যে যে বিদেশি ব্যবসায়ীরা Canton শহরে ছিল, সকলকে গৃহবন্দী করা হয়। বন্দরের সমস্ত জাহাজের আফিং বাজেয়াপ্ত করা হয়।
“চীনে আর কোনদিন আফিং বেচতে আসব না” – এই মুচলেকা দিয়ে বিদেশিরা ছাড়া পায়। ব্রিটিশ সরকারের মধ্যস্থতায়ই এই আপোষ। এতে স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করে। ব্রিটিশ সরকার এই বিপুল অর্থ ভার বহনে অসমর্থ আর তার পরিণাম যুদ্ধ ঘোষণা। চীন সরকার বেআইনি ভাবে Free Trade বন্ধ করেছে – এই অজুহাতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, এই নাটকের যিনি নাটের গুরু – East India Company, তার গায়ে কিন্তু আঁচড় মাত্র লাগলো না। কোম্পানির আফিং কোলকাতাতেই বিক্রি আর হাত বদল হয়ে গেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা অনেকেই আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৮৩৯ সালের অক্টোবর মাসে ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশ নৌবাহিনী Canton আক্রমণ করে। বন্দর ও শহর প্রায় ধ্বংস হয়। এই যুদ্ধের সূচনা –চলে প্রায় এক বছরের ওপর। পরিশেষে ১৮৪১ সালে চীনের আত্মসমর্পণ ও অপমানজনক Nanking Treaty। এই চুক্তির সর্ত - যুদ্ধের সমস্ত খরচ বহন, আগের বাজেয়াপ্ত আফিঙের ক্ষতিপূরণ, আফিং ব্যবসা রদ আইনের প্রত্যাহার, দেশের আরও পাঁচটি বন্দরে বিদেশি জাহাজ প্রবেশের অনুমতি ও ব্রিটিশ সরকারকে Hongkong প্রদান। এই গেল প্রথম Opium War। এর পরে আবার আফিঙের জন্য অবারিত দ্বার।

এর পরে ১৮৫৬ সালে দ্বিতীয় Opium War। প্রধান কারণ Nanking Treaty’র সমস্ত সর্ত না পূরণ হওয়া। দ্বিতীয় যুদ্ধে আমেরিকান এবং ফরাসীরাও যোগ দেয়। ফরাসী এবং আমেরিকানদের জগ দানের কারণ অবশ্য আফিং ঘটিত নয় – রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক চুক্তি ভঙ্গের কারণ।

১৮৮০ সাল নাগাদ চীনে আফিং চাষ ও দেশজ পরিশোধন শুরু হয়। আস্তে আস্তে শতাব্দীর শেষ নাগাদ দেশে আফিং আমদানি প্রায় বন্ধ হয়। কিন্তু আফিঙের নেশা যায় নি। আফিঙের পুরপুরি উচ্ছেদ হয় মাও সে তুঙ্গের আমলে।

ভারতীয়রা প্রথম Opium Warএর পর থেকেই মোটামুটি বেরিয়ে আসে। আগের অর্জিত অর্থের মূলধনে অন্য ব্যবসা আরম্ভ করে। যদিও তখন ভারতীয় নয়, David Sassoon এর বংশধররা দ্বিতীয় যুদ্ধের পরও এই ব্যবসায় ছিল।

শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।