গান:
রবীন্দ্রসঙ্গীতে নতুন তাল
রবীন্দ্রসঙ্গীতে কাব্যে
গ্রথিত বাণী, সুর এবং তালের এক অপরূপ মেলবন্ধন দেখা যায়। তাঁর
সৃষ্ট সঙ্গীতে কাব্যের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে তিনি যে বিশেষ
যত্ন নিয়েছিলেন তা তাঁর সুর ও তালের ব্যবহারে লক্ষ করা যায়।
বাণীর গুরুত্বের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই সুর ও তাল ব্যবহার করা
হয়েছে প্রতিটি গানে। এটা করতে গিয়ে তিনি প্রয়োজনে প্রচলিত শাস্ত্রবিধির
গণ্ডী অতিক্রম করেছেন। এ বিষয়ে কবি স্বয়ং তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা
জনিয়েছেন 'সঙ্গীতের মুক্তি'প্রবন্ধে। তাই তাঁর সৃষ্ট গানের বাণীর
স্বাভাবিক ও অবিরত ছন্দের প্রযোজনে তিনি ছয়টি নতুন তাল রচনা
করেন।
এই ছয়টি নতুন তালের নাম, মাত্রা-বিভাগ এবং কয়েকটি গানের প্রথম
কয়টি কথা এখানে দেওয়া হয়েছে:
ক) ঝম্পক - ৫ মাত্রা (৩ + ২)
(প্রথম রচনা ইং ১৯১০ সাল)
১) আমারে যদি জাগালে আজি নাথ
২) বিপদে
মোরে রক্ষা করো
৩) যে
ধ্রুবপদ দিয়েছো বাঁধি
৪) শুভ্র নব শঙ্খ তব
খ) ষষ্ঠী - ৬ মাত্রা (২ + ৪)
(প্রথম রচনা ইং ১৯২৬ সাল)
১) জ্বলেনি আলো অন্ধকারে
২) স্বপ্নে আমার মনে হল
৩) নিদ্রাহারা রাতের এ গান
৪) জয়
করে তবু ভয় কেন তোর
গ) রূপকড়া - ৮ মাত্রা (৩ + ২ + ৩)
(প্রথম রচনা ইং ১৯০৩ সাল)
১) গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে
২) এই শরত্ আলোর কমল বনে
৩) জীবন
মরনের সীমানা ছাড়ায়ে
৪) কেন সারাদিন ধীরে ধীরে
ঘ) নবতাল - ৯ মাত্রা (৩ + ২ + ২
+ ২)
(প্রথম রচনা ইং ১৯০৩ সাল)
১) নিবিড় ঘন আঁধারে
২) প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে
ঙ) একাদশী - ১১ মাত্রা (৩ + ২ +
২ + ৪)
(প্রথম রচনা ইং ১৯০৩ সাল)
১) দুয়ারে দাও মোরে রাখিয়া
২) কাঁপিছে দেহলতা থরো থরো
চ) নবপঞ্চক - ১৮ মাত্রা (২ + ৪ +
৪ + ৪ +৪)
(প্রথম রচনা ইং ১৯০৮ সাল)
জননী তোমার করুণ চরণখানি
উপরোক্ত তথ্যগুলি শুভ গুহঠকুরতা
লিখিত রবীন্দ্র-সঙ্গীতের ধারা বইটি থেকে নিযেছি। এই রকম কয়েকটি
তাল অন্য গান রচয়িতারাও নিয়েছেন। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে রজনীকান্তের-'কবে
তৃষিত' এ মরু এবং সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের - 'জীবনে যদি দীপ'। দুটি
গান- ই রূপকড়া তালে নিবদ্ধ।
পুষ্পেন্দু সুন্দর মুখোপাধ্যায়