সেকাল
- একাল থেকে দূরবীণে (২)
(সূচী)
একদিন-প্রতিদিন (দুপুর গড়িয়ে বিকেল)
আগে লিখেছি যে ছাত্ররা
বেশীর ভাগ হাঁটা দূরত্বের মধ্যেই থাকত| আমি বা আমার দাদারা একসঙ্গে
বাসে করে গেলেও আমি ক্লাশ নাইন আর টেন পড়ার সময় আমরা উঠে গিয়েছিলাম
ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক রোডে, স্কুল পৌঁছাতে পাঁচ-ছয় মিনিটের
মত হাঁটতে হ'ত| আমরা যে বাড়ীতে থাকতাম সেখান থেকে পাঁচ মিনিট
হাঁটা দূরত্বে আমার ক্লাশের পাঁচ-ছয় জন ছিল; মাত্র দু'জন বাসে
আসত-- একজন যোধপুর পার্ক থেকে, আর জনা টালিগঞ্জ থেকে| একমাত্র
মেয়েদের স্কুল ছাড়া স্কুল বাস দেখি নি| খুব কচি-কাঁচারা পাড়ারই
কর্পোরেশন ফ্রী প্রাইমারী স্কুলে পড়ত| কেজি, নারশারী, মন্টেশ্বরী--
এসব নাম কানে আসত বটে তবে তারা নিতান্তই ধনী গৃহস্থের|
স্কুল ইউনিফর্মের বালাই
ছিল না, সবাই হাফশার্ট আর হাফ প্যান্ট প'রে আসত, পায়ে নটিবয়
শু (যা ছিঁড়তে নটিবয়রাও ফেল মারত)| তবে সপ্তাহে এক বা দুইদিন,
টিফিনের পরে শেষ একটি বা দু'টি পিরিয়ড থাকত ড্রিল ক্লাশের, যা
নীচের ক্লাশেই সীমাবদ্ধ থাকত, যাতে সাদা হাফশার্ট আর খাকি হাফপ্যান্ট
প'রতে হ'ত, পায়ে থাকত সাদা কেডস| পাশে ঝোলান খাকি বা নীল রং-এর
ব্যাগে থাকত বই, খাতা, পেনসিল, ইরেজার, টিফিন বক্স ইত্যাদি|
এখনকার ম'ত পিছনে বস্তা ঝোলানর প্রথা ছিল না; তবে ক্লাশ নাইন
ও টেনের ছাত্ররা হাতে করেই বই খাতা ইত্যাদি নিয়ে যেত, হাতটা
থাকত কাঁধে|
শিক্ষকরা আসতেন ধুতি পরে,
উপরের অঙ্গে থকত পুরোহাতা শার্ট (যে রকম পরতেন ছায়াছবির চরিত্ররা,
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য-- বা এখনও পরেন দ্বিজেন
মুখোপাধ্যায়)। বেশীর ভাগ স্কুলে হেড মাষ্টার পরতেন ফুল প্যান্ট
(যদিও আমাদের হেড মাষ্টার পড়তেন হাফ প্যান্ট)। হেড মাষ্টারকে
সব স্কুলেই 'হেডু' বলে উল্লেখ ক'রা হ'ত, অবশ্যই আড়ালে; হয়তো
সে প্রথা এখনও চালু আছে।
প্রথম চার পিরিয়ডের পর
টিফিনের ঘণ্টা প'ড়ত। যারা টিফিন বক্স আনত, তারা ক্লাশেই খেত,
বাকিরা ছুটত গেটের দিকে। সেখনে ফিরিয়ালারা আসত হরেক রকমের পশরা
নিয়ে-- ডালপুরি/আলুর দম, কাটা ফল (গ্রীষ্ম বা বর্ষায় তাদের উপর
নিষেধাজ্ঞা থাকত), বুড়ীর মাথার পাকা চুল (যাকে ক্যাণ্ডিফ্লশ
ব'লে পরে জেনেছিলাম), বরফগুঁড়োর (ছুতোর মিস্ত্রীর র্যাঁদার
মত জিনিষ দিয়ে বা কাপড়ে বেঁধে পিটিয়ে গুঁড়ো ক'রা হ'ত) উপরে সিরাপ,
কেক-প্যাটিস, সন্দেশ- রসগোল্লা- শনপাপড়ি, ঘুগনি, মশলামুড়ি ইত্যাদি।ছোটদের
কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিষটি আসত একটি বাঁশের ডগায়। বাঁশ বলছি
বটে, কিন্তু সেটা সত্যিই বাঁশ কিনা তখনও সন্দেহ ছিল, এখনও সন্দেহ
আছে। কারণ কলাগাছের থোড়ের ম'ত মোটা (তাও কলা গাছের একেবারে গোড়ার
দিকের থোড়) প্রায় চার ফুটের মত একটা বাঁশকে নিয়ে রাস্তায ঘুরে
বেড়ানো তো সোজা ব্যাপার নয়। আর তা ছাড়া যে খাবারটি সেই বাঁশের
ডগা থেকে নেমে আস'ত তার নাম তখনও জানতাম না, আর এখন তো পাওয়াই
যায় না। জিনিষটি চকোলেটের মতো নরম, ইংরাজিতে malleable ব'লতে
যা বোঝায় তাই, রং- বেরঙের ডোরা নেমে কাটা। সেটা দিয়ে ফিরিয়ালা
নানা রকম আকার বানাত-- যা'র যা ফরমাইশ লকেট, ঘড়ি, দেশলাই বাক্স
ইত্যাদি। অবশ্যই মিষ্টি ছিল। এ ছাড়া কুলফি ছিল।
সেই স্কুলে ক্লাশ থ্রী
থেকে টেন পর্যন্ত পড়ে 1954 সালে স্কুল ফাইনাল দিয়েছিলাম। স্কুল
ফাইনাল, যাকে আজকাল মাধ্যমিক বলে, পরীক্ষা চালু হয় 1952 সাল
থেকে West Bengal Board of Secondary Education-এর তত্ত্বাবধানে|1951
সাল পর্যন্ত ছিল ম্যাট্রিক পরীক্ষা যা ক্যালকাটা ইউনিভারসিটি
নিতেন ও সারটিফিকেট দিতেন। যে আট বছর সেই স্কুলে পড়েছি পড়ার
বই, সিলেবাস, শিক্ষক সব একই ছিল, খালি পরীক্ষার নামটা পালটিয়েছিল।
সাত পিরিয়াডের পর স্কুল ছুটি হ'ত; তবে ছোটদের ক্লাশ এক পিরিয়াড
কম হ'ত। এর পর কালীঘাট ট্রাম ডিপো থেকে ট্রামে ক'রে বাড়ী ফেরা
এবং যে পথ দিয়ে এসেছি, সেই পথ ধরেই ফিরে আসা।

কালীঘাটের কাছে খাল ছিল
যার নাম টালী নালা। সেখানে ব্রীজে ট্রামের পথ সরু ছিল, ফলে দুই
দিকের ট্রাম একসঙ্গে যেতে পারত না। ব্রীজে একজন ট্রামকর্মী একদিকের
জন্য ট্র্যাক সেট ক'রে দিত, তখন, সেই দিক থেকে ট্রাম উপরে উঠে
আসত। এখন সেই ব্রিজ চওড়া হয়েছে, ফলে দুই দিকের ট্রাম একসঙ্গে
চলার কোন বাধা নেই; কিন্তু দুঃখের বিষয়, ট্রাম তুলে দেওয়া হয়েছে।
স্কুল যাওয়া এবং ফেরার দুই সময়ের মধ্যে কোন ফারাক ছিল না এখনকার
মত। রাস্তায় এত ভিড় থাকত না যান বাহনের বা মানুষের এখন যেমন
দেখা যায়। তবে ভোরে বা রাত্রের সঙ্গে অফিস টাইমের ভিড়ের পার্থক্য
ছিল। ট্রামে নগদ পয়সা দিয়ে টিকিট কাটা ছাড়াও ছিল কুপন আর মান্থলি
টিকিট। শুনেছি আরও আগে অল ডে টিকিট ছিল, আমি দেখি নি। কাশ নাইনে
উঠে আমরা মোমিনপুরের ভাড়া বাড়ী ছেড়ে দিয়ে ভবানীপুরের প্রিয়নাথ
মল্লিক রোডের পুলিশ ব্যারাকে উঠে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে স্কুলে
হেঁটে যেতাম, আর ফিরতামও হেঁটেই|
বাড়ী ফিরেই বই খাতা ছুঁড়ে
দিয়ে (অবশ্যই মা'র কাছে বকুনি খেতে হ'ত এর জন্য, কিন্তু কোন
আনন্দই বা নিরুপদ্রব হ'য় এ জীবনে) হাত পা ধুয়ে এক প্রস্থ জলখাবার
(লুচি- তরকারি, মুরি যা হোক) খেয়ে কাছের পার্কের দিকে ছোটা খেলার
জন্য। সব পাড়াতেই একটি পার্ক ছিল গোধুলী পর্যন্ত খেলার অপ্রতিহত
অধিকার-সহ। সেখানে সীজ্ন অনুযায়ী খেলা হ'ত ফুটবল, ক্রিকেট, কবাডি,
হাডুডু, ব্যাডমিন্টন, ভলীবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি। আমাদের মোমিনপুরে
প্রতি বছর সেখানকার পার্কে, নাম ছিল হোসেন সাহ্ পার্ক, দুর্গাপুজোর
আগে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট হ'ত। খেলাটি হ'ত এক এক দলে সাতজন
ক'রে খেলোয়াড় নিয়ে যারা স্কুলে পড়ে এবং উচ্চতায় ৪ ফুট ১০ ইন্চির
বেশী নয়। গেঞ্জির নীচে কাঁধ থেকে কোমড় পর্যন্ত গ্যালিশের মত
বেলট কষে বেঁধে হাইট কমিয়ে আনা যেত, তবে মাঝে মাঝে এটা ধরা পরে
যেত। সেই টুর্নামেণ্টে চেতলার একটি ক্লাবের হ'য়ে চুণী গোস্বামীকে
খেলতে দেখেছি। তখনই তার প্রতিভা টের পাওয়া গিয়েছিল এবং চেতলার
সেই ক্লাবটি বেশীর ভাগ বছরই চাম্পিয়ন হ'ত। ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন
ইত্যাদি এই সব খেলার সময় ছিল শীতকাল। কোন কোন ছেলেরা স্থানীয়
ব্যায়ামাগারে ব্যাম ক'রতে যেত। এ ছাড়া ড্রিল, প্যারেড-- এসবও
ছিল; আর ছিল বয়স্কাউট|
মেয়েদের জন্য বরাদ্দ ছিল
ব্রতচারী, সব পেয়েছির আসর, গাদী, এক্কা-দোক্কা, এল-ও-এন-ড-ও-এন
লণ্ডন ইত্যাদি।খেলার জায়গা ছিল বাড়ীর উঠান, গলি ইত্যাদি| তবে
এ ছাড়াও মেয়ে তথা মহিলাদের বিনোদনের আর একটি উপায় ছিল বাড়ীর
বারান্দা বা ছাদের উপর থেকে দেখা| তখন লম্বা টানা বারান্দা,
রেলিং দেওয়া, অল্পবিস্তর সব বাড়ীতেই ছিল| আর ছাদের আয়তন, পরিমাণ
ও ব্যবহার আজকালের তুলনায় অনেক বেশী মাত্রায় ছিল| এ ছাড়াও ছিল
টানা লম্বা রোয়াক, যা আজকাল নেইই; যা অল্প কিছু আছে তা পুরানো
পাড়াগুলিতে, সে উত্তর কলকাতাই হোক আর
দক্ষিণ
কলকাতাই হোক, দেখা যায়| এই রোয়াকগুলি দখল করে রাখতেন, বিশেষ
ক'রে বিকেল বেলায়, অপেক্ষাকৃত বয়স্করা, এবং তাঁরা সবাই পুরুষ|
তবে একটু সন্ধ্যা হ'লে, এমন কি ছুটির দিন সকালবেলায়, তরুণ আর
যুবারা আসর জমাত| বৈকালিক ভ্রমণ বা সান্ধ্যভ্রমণের রেওয়াজ, যেটুকু
ছিল, ছিল বয়স্কদের মধ্যে| তবে যখন ক্লাশ নাইন-টেন- এ পড়েছি,
সেটা ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সনের মধ্যে যখন আমরা ভবানীপুরে চলে এসেছি,
কিছু তরুণী ও যুবতীদের দেখেছি নিয়মিত একটি বাঁধা সময়ে পাড়ায়
বেড়াতে|
এ সব খেলাই ছিল মোটামুটি
একান্ত মধ্যবিত্ত গৃহস্থদের পাড়ায়, যে রকম পাড়ায় স্কুল জীবন
কেটে গেছে| সম্পন্ন গৃহস্থদের পাড়ায় কি ধরণের খেলা হ'ত সে সম্বন্ধে
কোন ধারণা ছিল না| পরে যখন ইন্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ছি (ততদিনে
বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে) তখন থেকে একটু উঁচু মহলে এসে দেখেছি--
খেলাধুলার ধরণ-- ব্যাডমিন্টন, টেনিস, সাঁতার ইত্যাদি|
তবে খেলার মাঠে যাবার
আগে আরও একটা ব্যাপার ঘটত| সেটা হ'ল হরেক রকমের ফিরিওয়ালা| এদের
দেখতে পাওয়া যেত সচরাচর বিকেল তিনটে থেকে| (এর একটা সম্ভাব্য
কারণ হয়তো আমরা অন্য সময়ে রুটিন ব্যস্ততায় ওদের নজর ক'রতে পারতাম
না; আর একটা কারণ, এবং সেটাই হয়ত যুক্তিযুক্ত, অন্য সময়ে খদ্দেরের
অভাব|) রঙ্গমঞ্চে প্রথম ঢুকত 'হরিসাধনের টিফিন'| কোমরে ঝোলান
একটি ধামা, গায়ে যাত্রাদলের জুরির বা 'হ-জ-ব-র-ল'- র গাইয়ে ন্যাড়ার
ম'ত জামা, খানিকটা আচকান টাইপ| তাতে যে খাবার থাকত এবং সরু চুঁচলো
ঠোঙাতে বিক্রী হ'ত সেটা একধরণের চানাচুর| আমি কখনও জিনিষটি খাই
নি, আর এখন তো জিনিষটা আর পাওয়াই যায় না| একটি মাত্র লোককে জিনিষটি
বিক্রী ক'রতে দেখেছি; সম্ভবতঃ সেই একটি লোকই বিক্রী ক'রত বিভিন্ন
পাড়ায়, অবশ্যই দক্ষিণ কলকাতায় | সবচেয়ে রহস্যময় ছিল তার ডাক--
'হরিসা-আ-আ-ধনের টিফিন খানেং| কা-আ-শী থেকে মসলা আনেং..' ইত্যাদি,
ইত্যাদি| আমার কানে যেমনটি বেজেছে ঠিক তেমনটিই লিখে দিলাম| (অনেকটা
রবীন্দ্রনাথের লেখা 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থে পাওয়া 'কলোকী পুলোকী
সিংগিল মেলালিং মেলালিং মেলালিং|)| সুর ক'রে ডাক পাড়ত, প্রথম
পদটি মোটামুটি একই থাকত; পরের পদগুলি স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী
পালটাত, এমন কি তাত্ক্ষণিকও থাকত|
এ
ছাড়াও আসত 'আ-আ--আ--ইসক্রী ম্যাংগোলিয়াইসকিরিম' (অর্থাত্ ম্যাগনোলিয়া),
ঘুগনি, মসলামুড়ি, ফুচকা, নকুলদানা, চানা--ছোলা-বাদাম, ইত্যাদি
যা এখনও পাওয়া যায়, কেবল ম্যাগনোলিয়া বাদে| আর দুটি জিনিষ ছিল
ছোটদের কাছে আকর্ষণীয় যা আজকাল দেখি না| সে দুটি হ'ল ম্যাজিক
বাক্স আর কেলিডিওস্কোপ| ম্যাজিক বাক্স ছিল একটি হারমোনিয়াম সাইজের
বাক্স যার সামনে গোটা চারেক পিতল বা টিনের ঢাকনা দেওয়া কাঁচের
লেন্স বসান চার-পাঁচ ইন্চি ব্যাসের গর্ত| সেটা দিয়ে নানান রকম
দৃশ্য দেখা যেত-- 'দিল্লীকা লাল কিল্লা দেখো, আগ্রেকা তাজ মহল
দেখো, জংগল কা শের দেখো, কলকাত্তাকা টিরম দেখো' ইত্যাদি| বাঁদর
নাচ, ভালুকের নাচ, জাগলারী এসবও ছিল, যেমনটি দেখান হ'য়েছে সন্দীপ
রায়ের 'ফটিকচাঁদ ছায়াছবিতে, তবে শুধু গড়ের মাঠে নয়, অল্পবিস্তর
সব পাড়াতেই|
খেলা ভাঙার সময় হয়েছে বুঝতে পারতাম যখন দেখতাম বয়স্করা একটি-দুটি
করে পার্কে ঢুকছে সান্ধ্যভ্রমণ তথা তাঁদের বয়সোচিত আড্ডা দিতে|
তখনও কলকাতাতে আকাশ-খোঁচামারা বাড়ী চালু হয় নি, অফিসপাড়ায় একটি
বা দুটি ছিল| কাজেই সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দু-ই দেখা যেত কলকাতায়--
বিশেষ ক'রে যে সব রাস্তা পুব থেকে পশ্চিমে গেছে| সারি বেঁধে
'সাঁঝের পাখিরা ফিরিল কুলায়' দেখা যেত, এবং দেখা যেত বাদুড়দের
ঝটপটানি| "সন্ধ্যাবেলায় ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে চলো"|
পুষ্পেন্দু
সুন্দর মুখোপাধ্যায়
(চলবে)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।