প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

সুরে ঢাকা ‘কথা’

লেখাটি শুরু করার আগে কয়েকটি ছোট ছোট প্রশ্ন রেখেছিলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধুমহলে – “আচ্ছা, রাহুল দেব বর্মনের স্বকন্ঠে গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা গান কি?” সকলের একবাক্যে উত্তর –“নিঃসন্দেহে ‘মনে পড়ে রুবি রায়’ – আহা কি গান!” পরের প্রশ্ন – “ আচ্ছা, এই গানটির সুরকার কে?” তাৎক্ষনিক উত্তর –“কে আবার উনি নিজেই, আরে বাবা, এর একটা হিন্দী ও আছে না – মেরি ভিগি ভিগিসী-!” বাঃ চমৎকার। শেষ প্রশ্ন – “আচ্ছা, গীতিকার, মানে গানটা কার লেখা?”। ব্যস, বিপদে পড়ে গেলেন অনেকেই। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন, শ্যামল গুপ্ত – ? কে লিখেছিলেন ঐ বিখ্যাত পংক্তি গুলি –

"রোদ জ্বলা দুপুরে, সুর তুলে নুপুরে
বাস থেকে তুমি যবে নাবতে
একটি কিশোর ছেলে, একা কেন দাঁড়িয়ে
সে কথা কি কোন দিন ভাবতে! "

আর তার পরের স্তবকে -

"দীপ জালা সন্ধ্যায়, হৃদয়ের জানালায়
কান্নার খাঁচা শুধু রেখেছি
ও.. পাখি সে তো আসেনি, তুমি ভালবাসনি
স্বপ্নের জাল বৃথা বুনেছি !"

না না, এরা নন, তবে - আচ্ছা কোন সূত্র! ঠিক আছে, সূত্র ও না হয় দেওয়া গেল – মুম্বাইয়ের একজন বিখ্যাত বাঙ্গালী যিনি ফিল্ম লাইনেরই লোক। এবার বেশ প্রত্যয়ী উত্তর – “তবে নিশ্চই, মুকুল দত্ত”! নাঃ এবারেও হল না। আসলে গীতিকারের নাম হল শচীন ভৌমিক, যিনি কতিপয় গান ই লিখেছিলেন আর যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গানটি হল এইটি। যে সময়ে এই গানটি রচিত তখনকার আধুনিক বাংলা গানের ভাষার থেকে গানটির ভাষা ছিল বেশ স্বতন্ত্র। গানটি এখনো দারুণ জনপ্রিয়, এখনকার আর এক জনপ্রিয় শিল্পী রূপংকরের গানে তার স্মৃতিচারণ আছে (আজো মনে পড়ে) কিন্তু তার মৌলিক গীতিকার তলিয়ে গেছেন বিস্মৃতির স্রোতে। এমনকি উইকিপিডিয়াতে শচীন ভৌমিকের১ যে পরিচয়পত্র আছে সেখানে ও কিন্তু এর উল্লেখমাত্র নেই। আর গীতিকারদের এই রকম ‘তলিয়ে যাওয়া’ অবস্থা অনুধাবন করতে গিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করতে চাই এমন একজন স্মরণীয় স্রষ্টার সম্পর্কে যাঁর বরেণ্য সুরকার সত্ত্বার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে তাঁর নিজেরই এক অনন্য গীতিকার সত্তা– তিনি সুধীন দাশগুপ্ত।

সুধীন দাশগুপ্ত র কথা এলেই তো আমাদের মনে পড়ে যায় সেই বিখ্যাত গানগুলি – ছদ্মবেশী ছবিতে অনবদ্য মুখভঙ্গিমায়, খোঁড়ানো, উত্তমকুমারের লিপে মান্না দে র সেই জমাটি গান –

"সেই গলিতেই ঢুকতে গিয়ে হোচট খেয়ে দেখি
বন্ধু সেজে বিপদ আমার দাঁড়িয়ে আছে একি! "

অথবা আরেক কিংবদন্তি নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সদলবলে টুইস্ট নাচের সঙ্গে মান্না দের ই গাওয়া আর এক নতুন ধারার গান –

"জীবনে কি পাবনা
ভুলেছি সে ভাবনা
সামনে যা দেখি
জানিনা সে কি
আসল কি নকল সোনা! "

এই গানগুলির সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত একথা সর্বজনবিদিত, কিন্তু এর গীতিকার ও যে সুধীন দাশগুপ্ত স্বয়ং তা আর কজনে মনে রেখেছেন! দুটি গানই কিন্তু আজও তুমুল জনপ্রিয়, এমনকি নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে ও এদের বেশ একটা অন্য আকর্ষণ রয়ে গেছে। আসলে একই স্রষ্টার হাতে সুর আর কথার সঠিক যুগলবন্দী সম্ভবতঃ এক অন্য মাত্রা নেয়। বিশেষ করে বাংলা ভাষাতে – এই ভাষার শ্রেষ্ঠ গীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ বোধহয় তাঁর পরবর্তী সংগীতকারদের এক নতুন পথ দেখিয়ে গেলেন যা অন্যদের থেকে আলাদা। তারপর সে পথে হাঁটলেন অনেকেই- দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, নজরুল, সলিল চৌধুরী থেকে শুরু করে আজকের সুমন, নচিকেতা প্রমুখ। সুধীন দাশগুপ্ত ও এই পথেরই এক অন্যতম পথিক, দুর্ভাগ্যের বিষয় গীতিকার রূপে আমাদের কাছে তিনি প্রায় অপরিচিতই। শুরুর গানটির মতই উপরে উল্লিখিত দুটি গানের ক্ষেত্রেও প্রশ্নোত্তর পর্বের ফলাফল একই।

তাঁর একটি গানে সুধীন দাশগুপ্ত তাঁর পূর্বসুরী বিখ্যাত কবি বা গীতিকারদের মতই ‘যখন রবনা আমি মর্ত্যকায়ায়’ ভাবনাতে মগ্ন হয়েছেন –

"কতদিন আর এ জীবন
কত আর এ মধু লগন
তবুও তো পেয়েছি তোমায়
জানি ভুলে যাবে যে আমায় ।"

আজকের প্রজন্মের কাছে সুরকার সুধীন দাশগুপ্তর স্মৃতি কিন্তু ভীষণভাবে অম্লান।

"এত সুর আর এত গান,
যদি কোন দিন থেমে যায়
সেই দিন তুমি ও তো ওগো
জানি ভুলে যাবে যে আমায় -"

যদিও গানের কথায় তাঁর এই আশংকা – কিন্তু গায়ক সুবীর সেনের স্মৃতিচারণ২ থেকে আমরা জানতে পারি তাঁর আশা ছিল এই গান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে, সে আশাকে সত্যি প্রমানিত করে দূরদর্শনে জনপ্রিয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের নাম হয়েছে – “এত সুর আর এত গান”। সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত বাংলা গানের সুরের আকাশে সত্যিই একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, বিশেষ ভাবে সমাদৃত। কিন্তু গান রচনাতে ও তাঁর প্রশ্নাতীত প্রতিভাকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা আমাদের এই লেখাটিতে। তবে আমাদের আলোচনা অবশ্যই সীমিত থাকবে গুণগ্রাহীর দৃষ্টি থেকে – স্বল্প পরিসরে তাঁর কাব্য প্রতিভার সম্পূর্ণ বিচার কখনোই সম্ভব নয়।

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর লেখা সেই বিখ্যাত কবিতাটিতে অনবদ্য সুরারোপ করেছিলেন –

"বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ঐ
মাগো আমার শোলোক বলা কাজলা দিদি কই ! "

কিংবা তারাশংকরের – “ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায় আশায় বসে আছি” বা “মধুর মধুর বংশী বাজে”। এমনকি - প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সাগর থেকে ফেরা’ ! হয়তো কবিতাকে সুর দেওয়ার এই ভালোবাসাই তাঁকে সফল গীতিকার করে তুলেছিল। এছাড়া ছিল পরম বন্ধু সলিল চৌধুরীর সান্নিধ্য, যিনিও তখনকার অনেক বিখ্যাত কবিতাকে সুরে রূপান্তরিত করে চলেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের উত্তীয় শ্যামার প্রেমে পাগল ছিল –

"ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে জানিনে
শুধু তোমারে জানি
ওগো সুন্দরী
চাও কি প্রেমের চরম মূল্য
দিব আনি!"

সুধীন দাশগপ্তর উদ্দাম প্রেমিক কিন্তু দাবি করেই বসে –

"আমি যে নিজেই মত্ত
জানিনা তোমার শর্ত
যদি বা ঘটে অনর্থ
তবু তোমাকে চাই । "

কিন্তু আবার তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেও কোন দ্বিধা নেই -

"যদি কখনো এ প্রান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
শুধু ছুটে গেছি তাই । "

কি অসাধারণ অন্তমিল বিভিন্ন পংক্তিগুলিতে, লক্ষনীয় অন্তমিলে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি প্রচলিত ক্রিয়াপদের মিলকে (উদাহরণ স্বরূপ, - চলবে-বলবে, ফুটবে-উঠবে, এলে-গেলে, দেখেছি-রেখেছি-বুনেছি ইত্যাদি) যথাসম্ভব পরিহার করেছেন। –

"আমি যে দুরন্ত
দুচোখে অনন্ত
ঝড়ের দিগন্ত
জুড়েই স্বপ্ন চড়াই ।"

বা

"হয়তো তোমারি জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই ।"

আর সব শেষে –এক অস্থির উপরোধ আর আন্তরিক অনুনয়-

"তুমি তো বলনি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ
রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব
সব ছেড়ে চল যাই । "

এই গানটিকে সামগ্রিকভাবে দেখলে দেখা যাবে, প্রথমে প্রেমিকের বিনয় ও আশা, তারপরে তার উদ্যম - অনুপমা প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য যে অনেক পথ হাঁটতেই রাজী, এরপরে দুর্বিনয় - দুরন্তপনা, আর একেবারে শেষে এসে চূড়ান্ত আত্মসমর্পন। এই সব কিছুতেই দেখতে পাই সেই চিরন্তন, অবুঝ আর নবীন প্রেমিকটিকে, যে আশ্চর্যজনক ভাবে সমকালীন। এতদিন পরেও এই গানের প্রতি বিভিন্ন প্রজন্মের আকর্ষণের মূল কারণ কিন্তু এটাই।

প্রেমই তাদের চলার পাথেয়, এই গীতিকার খুব সুন্দরভাবে আজকের যুবক-যুবতীদের মনের ভাবটিকে ধরেছেন অন্য আর একটি গানে –

"চায় যে ওরা প্রেমকে ধরে চলতে এগিয়ে
কোন জীবনের স্বপ্ন এনে মনকে দেখিয়ে । "

আসলে “যৌবনেরই পরশমনির” দ্বারা স্পৃষ্ট প্রেমিকরা সর্বদাই – “অকারনে চঞ্চল”! তাই তাদের মনের ভাব টি যেন -

"কি হবে কাল তাই নিয়ে
আজ ওরা যেন চঞ্চল
নিঃস্বতার এই যন্ত্রনাতে
প্রেমটুকুই সম্বল!"

তারা খোলা হাওয়াতে উড়তেই ভালোবাসে কারণ –

"বন্ধ ঘরেতে বন্দী হলে যে
একই তো ভাবনা
কেউ তো জানে না
মনেরই ঠিকানা
একদিন দল বেঁধে
কজনে মিলে
যাই ছুটে খুশীতে হারাতে । "

অন্য একটি গানে দেখি, গীতিকারের প্রেমিকরা বন্ধ ঘরে বন্দী থাকতে চায়না – “দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ শহর” ভাবনাতে মন ব্যাথিত। মনটাকে যেন তারা ভাসিয়ে নিয়ে যায় দুরন্ত হাওয়াতে, তাই গেয়ে ওঠে-

"এই শহর থেকে
আরো অনেক দূরে
চলো কোথাও চলে যাই
এই আকাশটাকে শুধু চোখে রেখে
মনটাকে কোথাও হারাই ।"

আকাশের উচ্চতা, উদারতা যেন মনকে স্পর্শ করে –

"এই ফেরারী মন যদি খোঁজেই কিছু
ঢেউ কখন উঁচু আর কখন নীচু
সেই অন্তবিহীন সন্ধানেতে
এস না হৃদয় বাড়াই
কি চাইনি, কি পাইনি, সবই ভুলে যেতে চাই ।"

ঢেউ এর মতই যে প্রেমের ও উত্থান-পতন হতে পারে, তা সত্বেও অন্তবিহীন সন্ধানের অঙ্গীকার – আমাদের হৃদয়কে একেবারে না ছুঁয়ে পারে না। আর চারিপাশের প্রকৃতি ও অপসৃয়মান তটরেখা, সেই যাত্রার নীরব সাক্ষী -

"ঐ সারি সারি সব ছবির মত
তীর ছাড়িয়ে চলো দূরেই যত
স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকুক ওরাই ।"

খুব সহজ ভাষাতে কি এক অসাধারণ ছবি - খুব হাল্কা ভাবে উপস্থিত রবীন্দ্রনাথ ও - “কি পাইনি, তার হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী”!

এই দুরন্ত, দৃপ্ত, জীবনের অঙ্গীকার আর ভাবনা বেশ পরিস্কার “জীবনে কি পাবনা” গানটিতেও। অবশ্য সেটা বেশ জোরের সঙ্গেই বলা যা চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে যায় -

"ভাল আর মন্দের দ্বন্দ জানিনা
কে ভালো কে মন্দ যে তার খবর রাখিনা "

বা

"সামনে যা দেখি
জানিনা সে কি
আসল কি নকল সোনা! "

একেবারে দ্ব্যর্থহীন, দ্বিধাহীন স্বীকারোক্তি! কিন্তু তা সত্বেও যৌবনের ধর্ম তো এগিয়ে চলার। তাই শপথ -

"যদি সব ছাড়িয়ে, দুটি হাত বাড়িয়ে, হারাবার খুশীতে, যাই শুধু হারিয়ে
যেতে যেতে কারো ভয়ে, থমকে দাঁড়াবো না । "

অন্য তুমুল জনপ্রিয় গানটিতে সদ্য বিবাহিত নব্য যুবকের বিরহ বেদনা কে যে লঘু চাপল্যের সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন তাও রীতিমত মুন্সীয়ানার দাবি রাখে -

"হয়তো মনের দরজা খুলে তুমিও ছিলে বসে
ভেস্তে গেল সুন্দরীগো সবই কপাল দোষে
করেছি কি ভুল নিজেই নিজের দু কান মলি
তোমায় সামনে পেয়েও খুঁজে বেড়াই মনের চোরাগলি । "

আদ্যন্ত বাঙালী প্রেমিকের এই লাজুক, ভীত-সন্ত্রস্ত রূপটি আমাদের কাছে চির-পরিচিত - যে নাকি “ভয়ের এই খাঁড়াতে হয়ে গেলাম পাঁঠাবলি”!

গীতিকবিতার সহজ ভাষায় ছবি আঁকাতে তিনি ছিলেন রীতিমত সুপটু। উদাহরণ স্বরূপ ভাবা যেতে পারে এই গানটিকে –

"আকাশে আজ রং এর খেলা
মনে মেঘের মেলা
হারালো সুর, হারালো গান
ফুরালো যে বেলা
আমার মনে মেঘের মেলা ।

অনেক ব্যথার অনেক ঝরে
মনের আকাশ শুধুই ভরে
আসে না দিন
বাজে না বীন
নীরব অশ্রুখেলা
আমার মনে মেঘের মেলা । "

প্রকৃতি ঢেলে দিয়েছে তার অফুরান সৌন্দর্য্য- “আকাশে আজ রং এর খেলা ”। তা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়, মন ভরে উঠতে চায় – তবু কোথাও যেন অল্প একটু বাধা – কি এক বিষণ্ণতা

"আসে না দিন
বাজে না বীন
নীরব অশ্রুখেলা
আমার মনে মেঘের মেলা । "

আকাশে রঙের খেলা দেখে কখনো আমরা উৎসাহে ভাবি –

"আকাশ আমার ভরল আলোয়
আকাশ আমি ভরব গানে । "

আবার কখনো সে রঙ্গে ভরা আকাশ দেখেই ভাবনাতে আসে কোন বেদনাদায়ক স্মৃতি –

"চলার পথে চরণ থামে
অঝোর ধারায় বাদল নামে
কোথা যে দিন
ছিল রঙিন
মিলন স্বর্গ খেলা
আমার মনে মেঘের মেলা । "

মেঘ এখানে যেন আঁধারের প্রতীক, বাইরে আকাশ এর রঙের খেলাও কিছুতেই তাঁকে অনুপ্রেরণা দিতে পারছে না - “হারালো সুর, হারালো গান, মনে মেঘের মেলা”। আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হন রবীন্দ্রনাথ - তাঁর ‘উদাসীন’ কবিতার ছত্র -

"হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি , ছুটি নে কাহারো পিছুতে
মন নাহি মোর কিছুতেই, নাই কিছুতে!"

আর একটি গানে ও তিনি এমনই একটি ছবি এঁকেছেন, তবে এটি আগের গানের সম্পূর্ণ বিপরীত –

"কোন পাখি তার দুঃসাহসের ডানা মেলে
যায় হারিয়ে অন্ধ মনের আঁধার ঠেলে
এ মন সঙ্গী করে, আকাশের নীল নগরে
আমিও যাবো রে তারই পাখায় । "

পেছনের সব ভাবনাকে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ঈঙ্গিত -

"হয়তো ফিরেও দেখবে না এ ফেরারী মন
ঘর ছেড়ে ঐ শুন্যে ওড়া পাখির মতন
যাব দেশে-বিদেশে
যেখানে স্বপ্ন মেশে
সে যদি সামনে এসে দু'হাত বাড়ায় । "

অসাধারণ চিত্রকল্প – চোখের সামনে ভেসে ওঠে - দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশ - পাখির ঝাঁক - পাশে পাশেই মনে পড়ে সলিলের একটি অসামান্য গানের কথা -

"যা রে যারে উড়ে যা রে পাখি
ফুরালো গানের বেলা
শেষ হয়ে গেল মেলা
আর কেন মিছে তোরে বেধে রাখি ।"

আর কি সুন্দর প্রয়োগ ওই শব্দবন্ধটির – “ফেরারী মন”! এখনকার গানেও যে তার ঝংকার শুনি –

"আজও আছে গোপন
ফেরারী মন
বেজে গেছে কখন সে টেলিফোন । "

যৌবনের অস্থিরতা, উদ্দামতা-উদ্দীপনা বা প্রেমের গাঢ়তা এবং চাপল্য, জীবনের বিষন্নতা বা আনন্দ, সবকিছুই তিনি খুব সুন্দরভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন। একথা মনে রাখতে হবে এই সবই তিনি করে ফেলেছেন তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে যেখানে কিন্তু পরীক্ষা করার অবকাশ খুবই কম। কিন্তু সেখানে তিনি ভীষণভাবেই সার্থক, এমনকি একযোগে গীতিকার ও সুরকার রূপে বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁকে সবচেয়ে সফল স্রষ্টা বললে হয়তো অত্যুক্তি করা হবে না। আজকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেই গানগুলির জনপ্রিয়তা তাই প্রমাণ করে। প্রখ্যাত গীতিকার জাভেদ আখতার বলেছেন৩ যখন কোন গীতিকার কোন ছবির নায়কের জন্য গান লিখছেন, তখন তাঁকে সে নায়কের চরিত্র ও পরিবেশ দুটিকেই ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে। তথাকথিত বানিজ্যিক ছবিতে গানের সিচুয়েশন প্রায়শই গতানুগতিক, সেজন্য গানের শব্দচয়নে কিছু নতুনত্ব থাকার প্রয়োজন। আবার যেহেতু ছবি ও তার গানের একটি বানিজ্যিক জনপ্রিয়তার দিক আছে, গীতিকারকে মাথায় রাখতে হবে সংখ্যাগুরু দর্শকের কথা। ভাব ও ভাষার সারল্যকে মাথায় রেখেই ফোটাতে হবে কাব্যময়তা।

শেকস্পীয়ার বলে থাকতেই পারেন - “নামে কি আসে যায়”! আমরা বাঙ্গালীরা ভিন্নপথের যাত্রী। তাই বুঝি এক বাঙ্গালী সাহিত্যিক ইংরেজী ভাষাতে একটি বইতে (Namesake) বাঙালীদের নামচেতনাকে উজ্জ্বল করে তুললেন। ‘বনলতা সেন’ এই নামটি সব বাঙ্গালী যুবকের মনে কি যেন এক দোলা দেয় ! এই সেই প্রেমিকা যার জন্য সে হাজার বছর ধরে অনেক পথ হাঁটতে রাজী। তাই সুধীনের গানে আমরা শুনি -

"নাম রেখেছি বনলতা
যখন দেখেছি
হয়ত বা সে ক্ষণেই
তোমায় ভালবেসেছি ।"

নামের প্রেমে বাঙালীরা তো চিরকাল মশগুল, তা সন্তান সন্ততী হোক, পোষ্য বা বাড়ি যাই হোক না কেন, - আর প্রেমিকার নাম - বনলতা, সুচেতনা, নীরা, নীলাঞ্জনা, নিরুপমা - এরা সকলে বাঙ্গালী প্রেমিকের মানসজগত ঘিরে আছে। অন্য আরো একটি গানে তিনি আবার জানালেন -

"কি নামে ডেকে
বলবো তোমাকে
মন্দ করেছে আমাকে
ঐ দুটি চোখে । "

তাঁর পূর্বে আলোচিত অন্য একটি গানের “আমি যে নিজেই মত্ত / জানিনা তোমার শর্ত” ই ভিন্ন রূপ -

"আমি যে মাতাল
হাওয়ার ই মত হয়ে
যেতে যেতে পায়ে পায়ে গেছি জড়িয়ে
কি করি ভেবে যে মরি
বলবে কি লোকে
মন্দ করেছে আমাকে
ঐ দুটি চোখে -
ধরা পড়ে গেছি আমি নিজেরই কাছে
জানিনা তোমার মনেও কি এত প্রেম আছে! "

অপ্রাসঙ্গিক হবে না হয়তো উল্লেখ করা - এই গান দুটি গীত হয়েছিল শ্যামল মিত্রের কন্ঠে সেইসময় প্রেমের গানে যাঁর গলায় শোনা যেত এক অনির্বচনীয় তারুণ্যের বীণাবাদন!

তাঁর গীতিকার সত্বাকে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আর এক স্রষ্টা জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় একটি গানের বাণীর গভীর আলোচনা করেছেন৪ –

"এক ঝাঁক পাখিদের মত কিছু রোদ্দুর
বাধা ভেঙে জানলার শার্সি-সমুদ্দুর
এলো আঁধারের শত্তুর"

এই শার্সি-সমুদ্দুর কথাটা একটা বাঁধভাঙা আলোর ছবি এঁকে দিয়ে যায়। একটি শব্দে এক পরিপূর্ণ আবহের সৃষ্টি হয়েছে। আবার গানের সঞ্চারীর লাইনদুটি –

"পায়ে পায়ে সন্ধ্যার ক্লান্তি নিয়ে
যারা যায় ফিরে ঘরে শহরে নগরে
পায় কি মনে সূর্যের গতিবেগ
অস্তরাগের ছোঁয়া অন্তরে "

‘বন্ধ ঘরের কোণ ছাড়িয়ে’ এসে যে মানুষরা সূর্যের সঙ্গে সারাদিন থেকে সন্ধ্যার ক্লান্তি পায়ে পায়ে নিয়ে ফিরল তারা কি ‘সূর্যের গতিবেগ’ মনে রাখতে পারল বা ‘অস্তরাগের ছোঁয়া’য় অন্তর স্নিগ্ধতর হল! এই রাস্তায় পা বাড়ানো মানুষের মনের অন্ধকার আলোর ছোঁয়ায় কতটা ঘুচল – এমন ভাবনা, এমন চিত্রকল্প খুব বেশী মেলে না”। আর একজন স্রষ্টার একটি সৃষ্টির প্রতি এই রকম উঁচু মানের আলোচনা আর এক স্রষ্টার পক্ষেই সম্ভব। এই প্রসঙ্গে আমরা আরো মনে করতে পারি জীবনানন্দের সেই বিখ্যাত লাইনটি –

"সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে
ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল!"

সন্ধ্যা যেন কর্মক্লান্ত, ঘর্মাক্ত মানুষ ও রৌদ্রস্নাত চিলকে একই সঙ্গে ঘরে ফেরার আহ্বান জানায়।

তাঁর গানে জীবনদর্শনটিও ফুটে ওঠে খুব সহজভাবে -

"হীরা ফেলে কাঁচ
আগুন ফেলে আঁচ
বাঁচতে যদি চাস রে তবে
প্রাণটা ফেলেই বাঁচ । "

গানের প্রথম পংক্তিতেই জীবন থেকে দূরে থেকে জীবনকে ভোগ করার স্পৃহার প্রতি শ্লেষ - “আগুন ফেলে আঁচ!!”। অন্তরের সৌন্দর্য্যের থেকে তার মোড়কের প্রতি অধিক আকর্ষণকে ধিক্কার - “হীরা ফেলে কাঁচ!!” - ছিঃ- এই অনুচ্চারিত শব্দটি আমাদের কানে ঝংকারের মত বেজে ওঠে। পরবর্তী পংক্তিটিতে তিনি কিন্তু একদম ঋজু -“বাঁচতে যদি চাসরে তবে প্রাণটা ফেলেই বাঁচ”। তারপরে ই একদম পরিষ্কার আহ্বান -

"আলো রেখে অন্ধকার
কাছে আসার বন্ধ দ্বার
হৃদয়টাকে শূন্য করেই আনন্দেতে নাচ ।"

হৃদয়টাকে শূন্য করার কথা বলা হচ্ছে তার কারণ তা ভীতি (আগুনের) ও মোহে (কাঁচের) পরিপূর্ণ। তা থেকে মুক্ত না হলে তো অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথের সন্ধান করা যাবেনা, তা না হলে - “কাছে আসার বন্ধ দ্বার”। দ্বিতীয় স্তবকে কিন্তু প্রকৃত অর্থেই আলোর সন্ধান -

"সময় ছেড়ে সব, বিপথ ছেড়ে পথ
পরখ করেই দেখ না কেন
নিজের ভবিষ্যৎ
বন্ধু ছেড়ে বন্দরে
ভীড়লে কি আর মন্দরে
মনকে তুলে রাখ না তুলে
ভালোবাসার ছাঁচ -"

কি এক দুর্দান্ত পথনির্দেশ। কি অসাধারণ অন্ত্যমিল - “কাঁচ, আঁচ, বাঁচ, ছাঁচ”। সুখে লালিত জীবন ছেড়ে অন্য কোথাও জীবনকে খুঁজে নেয়ার আহ্বান খুব অল্প কথায় -“বন্ধু ছেড়ে বন্দরে / ভীড়লে কি আর মন্দরে” । বন্ধু ও বন্দরের মধ্যে এক হালকা অনুপ্রাসের ছোঁয়া। এ যেন তাঁর অন্যতম সুহৃদ সলিল চৌধুরীর নতুন পথ খোঁজার ভাষার অন্য রূপ। সলিল লিখেছিলেন -

"সোজা পথের ধাঁধায় আমি অনেক ধেঁধেছি
পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি । "

দুটি গান এর মধ্যেই গতানুগতিকতা (সোজা পথের ধাঁধা) বা সংখ্যাগরিষ্ঠের পথ (বন্ধু ছেড়ে বন্দরে / ভীড়লে কি আর মন্দরে) ছেড়ে নতুন পথের সন্ধানের ডাক।

সলিল চৌধুরী ও সুধীন দাশগুপ্তের পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধাশীলতার গল্প খুবই প্রচলিত। সুধীন দাশগুপ্তের গণনাট্যের ধাঁচে রচিত একটি বিখ্যাত গান -

"ঐ উজ্জ্বল দিন
ডাকে স্বপ্ন রঙ্গীন
ছুটে আয়রে লগন
বয়ে যায় রে মিলন বিন
শোনো আহবান । "

এই গানটির স্রষ্টা রূপে একাধিকবার সলিল চৌধুরীর নাম শুনেছি। সলিল চৌধুরীর তাঁর অনেক বিখ্যাত গানেই মিলনের আহ্বান জানিয়ে আলোড়ন তুলেছেন। সেই জন্যই এই বিভ্রান্তি,- আর গীতিকার রূপে সলিল, সুধীন দাশগুপ্তের চেয়ে অনেক বেশী পরিচিত। ১৯৭৩-৭৪ সালে ‘সিস্টার’ ছবির জন্য সলিল লিখছেন প্রার্থনাসঙ্গীত -

"সত্যের দীপ চোখে জ্বালিয়ে
আঁধারের পথ যাব পেরিয়ে ।"

প্রায় একই সময়ে ‘এপার ওপার’ ছবির জন্য সুধীন দাশগুপ্তর রচিত প্রার্থনাসঙ্গীত -

"আমি অন্ধকারের যাত্রী
প্রভু আলোর দৃষ্টি দাও । "

দুটি গানেই প্রার্থনা সঙ্গীতের আবহটি চমৎকার পরিস্ফুট, দুঃখের বিষয় সলিলের তুলনায় সুধীনের গানটি সেরকম জনপ্রিয় হয়নি।

আর একটি গান –“চার দেয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে” সম্পর্কে ও জটিলেশ্বর বলেছেন৫ – “আমার বিশ্বাস শুধু কবিতা হিসেবেই রচনাটিকে ওপরের সারিতে রাখা যায়”! আমরা সম্পূর্ণ একমত। তাই এই গানটি প্রসঙ্গে আমরা আমাদের আলোচনা কে আর একটু বিস্তৃত করতে চাই।

যতই বাস্তব ভিত্তি থাকনা কেন, যে কোন শিল্প কে সার্থক সৃষ্টি হয়ে উঠতে হলে, তাকে গড়ে উঠতে হবে সৃষ্টিকর্তার কল্পনাশক্তির সহায়তায়। এই প্রসঙ্গে শরৎচন্দ্রের একটি প্রবন্ধের কয়েকটি লাইনকে মনে করতে পারি৬ – “তাঁহাদের (বিভিন্ন সমালোচকের) মতে যাহা ঘটিয়াছে তাহাই সত্য, কিন্তু যাহা হয়ত ঘটিলে ঘটিতে পারিত কিন্তু ঘটে নাই, তাহা মিথ্যা। কিন্তু বস্তুতঃ তাই কি? এইখানে কবির অমর উক্তি উদ্ধৃত করি -

"ঘটে যা তা সব সত্য নয়, কবি তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো' ।"

বস্তুতঃ ইহাই সত্য এবং বড়রকমের সত্য। ইংরাজেরা যাহাকে ‘এ হায়ার কাইন্ড অফ ট্রুথ’ বলেন, ইহা তাহাই।”! আর তাই সার্থক স্রষ্টার প্রবল উচ্চাকাংখা -

"চার দেয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে
সাজিয়ে নিয়ে দেখি বাহির বিশ্বকে
আকাশ করে ছাদটাকে
বাড়াই যদি হাতটাকে
মুঠোয় ধরি দিনের সূর্য তারার রাতটাকে
বিশ্বরূপের দৃশ্য দেখাই, চোখের অবিশ্বাস্যকে- "

সম্পূর্ন অচিন্ত্যনীয়! কত সহজেই গানের কথাতেই তিনি ধরে ফেলেছেন সৃষ্টির একেবারে প্রকৃত সত্যটিকে। সার্থক স্রষ্টার অসীম ক্ষমতা। অর্জুনকে বিশ্বস্রষ্টা কৃষ্ণ বিশ্বরূপের দৃশ্য দর্শন করিয়েছিলেন তাঁর বিশাল মুখের মধ্যে- শিষ্য অর্জুনের চোখে তা তো ছিল অবিশ্বাস্যই! এই চোখের অবিশ্বাস্যকেই শরৎচন্দ্র বললেন - “এ হায়ার কাইন্ড অফ ট্রুথ”।

"কলম ঘিরে ছায়ার মত সঙ্গিনীরা আসে
কাব্য করে সঙ্গী খুঁজে মেলাই
সঙ্গহীনা, স্বর্গহীনা, মৃত্যুহীনার পাশে ।"

কি এক অসাধারণ উপমা, গীতিকারের কাছে তাঁর ভাবনাটিকে প্রকাশ করার জন্য সঠিক শব্দের সন্ধান ও চয়ন সঙ্গিনী বা প্রেমিকা সন্ধানের চেয়ে কম কিছু নয়।

"আমার মনের দরজাতে
খিল দিয়ে মন আটকাতে
সঙ্গিনী কেউ আসেনি তো প্রেমের প্রদীপ হাতে
কবে যে তার পড়বে মনে
আমার মত নিঃস্বকে । "

কবি তো নিজের সৃষ্টির আনন্দে মত্ত, তাঁর সৃষ্টিশীল মন - ‘উড়ে চলে দিক - দিগন্তের পানে, নিঃসীম শূন্যে’- কোথাও তার ‘হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’। কিন্তু সেই নিজের সৃষ্টির আনন্দে মত্ত শিল্পীর মনেও সুপ্ত বাস্তব প্রেমের বাসনা। প্রেমিক কবির জীবনে হয়তো প্রেমিকার দেখা মেলেনি, কিন্তু তিনি প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন -

"কবে যে তার পড়বে মনে
আমার মত নিঃস্বকে । "

কিন্তু সেই যে কথা – “কবি কহে কে লইবে আনন্দ আমার” – তাই বন্ধ ঘরের চার দেয়ালের বেড়ার মধ্যেও স্বপ্নসন্ধান –

"আকাশ করে ছাদটাকে
বাড়াই যদি হাতটাকে ।"

এখানে এক ঈঙ্গিতপূর্ন ভাবনা আছে, বাস্তবে প্রেম নেই বলেই কি তাঁর সৃষ্টিশীলতার সাধনা, বিরহই কি সৃষ্টির সহায়ক! এই রহস্যময়তাই গানটির সৌন্দর্য্য কে আলাদা মাত্রা দিয়েছে।

উপরোক্ত গানটি সম্পর্কে আরো মনে রাখতে হবে এই গানটি যে সময়ের সৃষ্টি সেই সময়ে চলতি বাংলা গানের ভাষা বা আঙ্গিক একেবারে অন্যরকম ছিল - শিল্পসৃষ্টির দার্শনিকতাকে বানিজ্যিক গানের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার ভাবনা ছিল একেবারেই স্বপ্নাতীত। একটাই সুবিধে ছিল, গানটি ছবির নয়, পুজোর গান। সুতরাং সিনেমার গন্ডীর বাধ্যবাধ্যকতা থেকে তা ছিল মুক্ত। কিন্তু জনপ্রিয় শিল্পীর কন্ঠে গানটিকে সাফল্য দেওয়ার চাপ তো ছিলই। এই সব প্রতিবন্ধকতার মধ্য থেকেও যে উচ্চতায় গানটিকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন গীতিকার, তা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। বস্তুতঃ আমাদের ধারনা, এই কথা বললে অত্যুক্তি করা হবেনা যে গীতিকার সুধীন দাশগুপ্তর শ্রেষ্ঠ কীর্তি রূপে তো বটেই, বাংলা গীতিকাব্যের সুবিশাল আকাশেও গানটি একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে চিরকালীন আসনের দাবিদার থাকবে।

ভাস্কর বসু

তথ্যপঞ্জী -
১ http://en.wikipedia.org/wiki/Sachin_Bhowmick
২ সুধীন দাশগুপ্ত - আজকাল - পৃঃ – ৭৯-৮০
৩ Talking Songs –Oxford - Page – Page -26-27
৪ সুধীন দাশগুপ্ত - আজকাল - পৃঃ - – ৫৪-৫৫
৫ সুধীন দাশগুপ্ত - আজকাল - পৃঃ – ৫৩-৫৪
৬ শরৎচন্দ্র - মাতৃভাষা ও সাহিত্য - ইন্টারনেট সংস্করণ - http://sarat-rachanabali.becs.ac.in/content.jsp?005072001005

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।